![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লেখালেখির ছোট্ট প্রয়াস..
অনেকের কাছেই প্রিয় লাগামহীন উদ্বেল স্বাধীনতা, অবাধ স্বেচ্ছাচারিতা... আবার অনেকেই নিজের এই স্বাধীনতার মাঝেও নির্দিষ্ট কিছু সীমারেখা টেনে দিয়ে নিজেকে অবাধ অপরিণামদর্শিতা থেকে আগলে রেখে চলতে চায়।
_ আপনারা আস্তিক। কিন্তু কখনো কি ভেবে দেখেছেন, সেই আস্তিকতা কি অভ্যাসবশত কিনা? বুঝেন নি? দাঁড়ান খুব সিম্পল একটা উদাহরণ দিয়ে ক্লিয়ার করি, ধরেন আপনি কারও সাথে দেখা হলেই তাকে সালাম দেন, বা আদাব দেন, বা যে যেই ধর্মের সেই ধর্মের রীতি পালন করেন। কিন্তু ক'জন মাথায় রাখেন সেই শব্দের আসল অর্থগুলো? আমি মুসলিম, তাই সালাম সম্পর্কেই বলি? আমরা ক'জন মুসলিম সালাম দেওয়ার সময় মাথায় রাখি যে "আসসালামু আলাইকুম" বলতে আমরা অপর ব্যাক্তির উপর যেনো শান্তি বর্ষিত হয় সে কামনাই করছি? এবং এর সাথেই আমরা পবিত্র কোরআনে সালাম দেওয়া সম্পর্কে আল্লাহর যে নির্দেশ সেটাই পালন করছি। অর্থাৎ কাজটা আমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে এবং তাঁর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে করছি। কিন্তু কখনও কি ভেবে দেখেছেন, আপনি কি এটা কেবলমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায়ই করছেন? নাকি ছোটকালে মা বাবা, শিক্ষকরা শিষ্টাচার শিখাতে গিয়ে শিখিয়েছিলেন বলে অথবা এই রীতি পালনে ত্রুটি হলে মা বাবা অভদ্র বলে গালমন্দ করতেন বলে, অথবা অন্য মুসলিমরা পালন করে তাই আপনিও না করলে মান আর থাকছে না ভেবে অভ্যাস বশত পালন করছেন?? যদি তাই হয় তাহলে এক্ষেত্রে আপনি আল্লাহর ভয় অথবা তাঁর সন্তুষ্টি লাভকে প্রাধান্য না দিয়েও দিব্যি ইসলামের রীতি মেনে চলছেন। আর এটার স্পষ্ট প্রমাণ হল স্মার্টনেস প্রদর্শন পূর্বক ভুল উচ্চারণে "স্লামালেকুম" বলা। ঠিক তেমনি নামাযে দাঁড়িয়েও কজন অর্থ বুঝে নামায পড়ছেন? নাকি অভ্যাসবশত কিছু মুখস্থ আরবি লাইন পাঠ করেই ক্ষান্তি দিচ্ছেন? তারমানে আপনি "অভ্যাসবশত আস্তিক" পর্যায়ে আছেন। কিন্তু সমস্যাটা হল, আমরা যারা এই অভ্যাসবশত আস্তিক, তারা আল্লাহর ভয় অথবা সন্তুষ্টি লাভের চেয়ে মানুষের ভয় আর সন্তুষ্টি নিয়েই ব্যস্ত থাকি বেশি। ফলস্বরূপ, গোপনে, লোকচক্ষুর আড়ালে, বা সম্মুখেও আমরা এমন সব কাজ করি যা পুরোপুরি ধর্ম কর্তৃক অস্বীকৃত। যা অন্য ধর্মের মানুষের নিকট আমাদের ধর্মকে উপহাস্য করে তুলে। এবং যা আসলে ধর্ম ব্যাপারটাতেই "কোনো কাজের না" নামক একটা ট্যাগ লাগিয়ে দেয়। আর এই ট্যাগকে পুঁজি করেই নাস্তিকতার ডাল-পালা বিস্তার লাভ করতে থাকে।
আবার এই অভ্যাসবশত আস্তিকদের আরেকটা সমস্যা হল, তারা যখন কোনো উপায়ে উপলব্ধি করতে পারে "অনেক তো পাপ তাপ হল, এবার একটু ধর্মের দিকে তাকাই। দেখি শেষ রক্ষা হয় কিনা!" তখন তারা ধর্মকে পুরোপুরি অনুধাবন করার আগেই বেহেশত লাভের লোভে শর্টকাট ম্যাথড ফলো করতেই বেশি আগ্রহী হয়ে ওঠে। কিন্তু তারা এইটা বুঝে না, ধর্ম মোটেও অত সহজ ব্যাপার নয়! একে তিন সপ্তাহেই হেফজ করে জান্নাতুল ফিরদাউসে নিজের নাম বুকিং দিয়ে ফেলার চিন্তা একেবারেই অবান্তর। আর যেখানে কুরআনই নাযিল হয়েছে দীর্ঘ ২৩ বছর সময় নিয়ে সেখানে কি করে তিন সপ্তাহের ব্রেইন ওয়াশ একজনকে বেহেশত লাভের শর্টকাট রাস্তা দেখিয়ে দেয় সেটা অভ্যাসবশত আস্তিক ভাইরা একটু চিন্তা করে দেখা দরকার নয় কি?
আমার ব্যাক্তিগত মতামত, এই অভ্যাসবশত আস্তিকরা নাস্তিকদের চেয়েও বেশি ঘৃণ্য। কারণ তারা জেনে অথবা না জেনে ধর্মের বিকৃতি ঘটাচ্ছে!
আমার এই লেখা মোটেও "অভ্যাসবশত আস্তিক" ভাইদের ব্যাক্তিগতভাবে হেয় করার উদ্দেশ্যে নয়। কারণ আমরা বেশির ভাগই একই দলভুক্ত। স্বীকার করতে আপত্তি নেই, আমি নিজেও। তাইলে তো আমাদের কোনই উপায় নেই আর! আমরা কি তাইলে ধর্ম ছেড়ে দিব? উত্তর: অবশ্যই না।
আমাদের যা করণীয়: কোনো একটা আমল করার আগে সেই আমলের তাৎপর্যটা খুব ভালো ভাবে বুঝার চেষ্টা করতে হবে। দু চারটা হাদিসের বই বা ব্যাখ্যার বই পরে কখনই জ্ঞানী হয়ে যাওয়া যায় না। দরকার কোরআনের নিহীত তাৎপর্য উদ্ধার করা। আবার হাদিস এবং ইতিহাস ছাড়া কোরআন বুঝতে যাওয়ার চেষ্টাও খড়ের গাদায় সুঁচ খোঁজার সামিল। আবার হাদিস নিয়ে বসলেও সেখানে নানান মত পার্থক্য, নানান বিরুদ্ধবাদ। তাইলে ধর্ম বুঝা টা যে মোটেও অত সহজ ব্যাপার নয় তা নিশ্চয়ই বোধগম্য হচ্ছে! এজন্যে ধৈর্য ধরে উৎস্যের সঠিক ব্যাখ্যা অনুসন্ধান করে যেতে হবে। আর অবশ্যই আগে নিজের নৈতিকতার ঝালাই দিয়ে নেওয়া উচিৎ। লক্ষ্য যদি হয় "বেহেশত লাভের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন" তাইলেই আপনি ধরা খেয়ে গেলেন! কারণ তাইলেই আপনি শর্টকাটে রাস্তা পার হওয়ার চেষ্টাটাই আগে করবেন! লক্ষ্য হতে হবে "আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের মধ্য দিয়ে বেহেশত লাভ"। আর এর জন্যে প্রথমেই তাকওয়া (আল্লাহ ভীতি) ঠিক করতে হবে। এই একটা জিনিস আপনাকে সকল পাপের আগেই বিবেকে চিমটি মেরে মেরে হুঁশিয়ারি দিবে, "যা করছিস, পাপ করছিস কিন্তু!" অথবা "যা ঠিক ভাবছিস তা আসলেই ঠিক তো?একদম শিওর তো?!" তখন একটুও যদি দ্বিধা থাকে তো আরও ভালভাবে জানার চেষ্টা করুন। আর একলাফে নিজেকে সংশোধন করে ফেলা সম্ভব সেটা ভাবতে যাওয়াও বাড়াবাড়ি। কেউ বেশি খেয়ে অভ্যস্ত না হলে হঠাৎ বেশি খেয়ে ফেললে বদহজম হয়, এটাই স্বাভাবিক। তাই আস্তে আস্তে করে একের পর এক ভুলগুলো বুঝে বুঝে একটা একটা করে সংশোধন করার চেষ্টা করুন। আর অবশ্যই সেগুলো কেবলমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্যে, কোনো মাখলুকাতের সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে নয়। অথবা অন্যের চোখে প্রশংসিত বা নায়ক সাজার উদ্দেশ্যেও নয়।
আমি মুসলিম। তাই কোরআন অস্বীকারের উপায় আমার নেই। আর কোরআন অস্বীকার না করলে জিহাদ অস্বীকারের উপায়ও আমার নেই। কিন্তু জিহাদে নামার আগে আমাকে অবশ্যই অবশ্যই জিহাদের আগাগোড়া "এ টু যেড" জানতে হবে। কোরআনে যেমন মানুষ হত্যার উল্লেখ আছে, তেমনি মানুষ হত্যায় লানতের কথাও উল্লেখ আছে। তাই বেছে বেছে শুধু হত্যা করা জায়েজ সেইটুকু পড়লে তো হবে না! মানুষ হত্যা (সে মুশরিক, কাফির, নাস্তিক বা যে ধর্মেরই হোক না কেন) কেনো নাজায়েজ সেটাও তো ভালোভাবে জানতে হবে তাই না? আর সবচেয়ে বড় জিহাদ অর্থাৎ জিহাদে আকবর "নিজের কুপ্রবৃত্তির বিরুদ্ধে জিহাদ" এটা ঠিকঠাক ভাবে মেনে চলেন তো? নাকি ছোট জিহাদ বা জিহাদে আসগর অর্থাৎ "অস্ত্র সহকারে জিহাদ" কেবল এটাই মানেন? এম্নি এম্নি ইসলাম শান্তির ধর্ম হয়ে যায় নি ভাই!
_ আপনারা নাস্তিক। নিজেদের নাস্তিকতা নিজেরা শান্তিপ্রিয় ভাবেই মেনে চলুন। যতক্ষণ আপনি খোঁচাচ্ছেন না, ততক্ষণ আপনিও পাল্টা খোঁচা থেকে সম্পূর্ণ নিরাপদ। খামাখা ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়াবার দরকার কি? আরেকজন যা বিশ্বাস করে তা আসলে নেই, তা কেবলই বোকামি, ভন্ডামি এসব বলে বলে নিজের অগাধ পান্ডিত্য জাহির করতে যাওয়া থেকে বিরত থাকুন। আরেকজন আপনার মত অত বেশি পন্ডিত হতে নাও চাইতে পারে। হতে পারে সে তার অল্প পান্ডিত্য নিয়েই সুখী থাকতে চায়। আর আপনাদের উদ্দেশ্যে আরেকটা কথা, খালি জোব্বা আর টুপি পড়া মানুষদের কীর্তিকলাপ দিয়ে ধর্ম বিচার করা থেকে বিরত থাকুন। মানুষ দিয়ে ধর্মের বিচার হয়না। ধর্ম বিচার করতে সেই ধর্মটাই বুঝার চেষ্টা করুন আগে! আবার সব টুপি, দাড়ি, জোব্বার নীচে যে "অভ্যাসবশত আস্তিক" রাই থাকেন এটা ভাবলেও ভুল করবেন। তাই তাকে শুধু শুধু নিজের লিমিটলেস জ্ঞান বিতরণ করে নিজের মত জ্ঞানী বানাতে যাবার আগে একবার আপনার অফুরন্ত জ্ঞান ভান্ডার থেকে নিজের জন্যে অল্প ইট্টু জ্ঞান খরচা করে ভেবে নিয়েন তো, সে মূর্খ হোক, মদন হোক, আবাল হোক, ভন্ড হোক আর যাই হোক, ধর্মে যেহেতু বিশ্বাস করে তাইলে সে নিশ্চয়ই সেই ধর্মের হুকুমেও বিশ্বাস করে! তাকে ইট ছুঁড়তে গেলে তো নিজেও পাটকেলের জন্যে প্রস্তুত থাকা উচিৎ। নয় কি? কি দরকার?
২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৩:৫২
সিলেক্টিভলি সোশ্যাল বলেছেন: ব্যাপারটা আমাকে ভাবায় খুব। তাই দু এক লাইন লিখা। ধৈর্য নিয়ে পড়া এবং মন্তব্য করার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।
©somewhere in net ltd.
১|
২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সকাল ৭:৫৪
খায়রুল আহসান বলেছেন: একটা কঠিন বিষয় নিয়ে লিখেছেন। তবে চিন্তায় গভীরতা আছে বলে লেখাটি সুপাঠ্য হয়েছে।
কিন্তু সমস্যাটা হল, আমরা যারা এই অভ্যাসবশত আস্তিক, তারা আল্লাহর ভয় অথবা সন্তুষ্টি লাভের চেয়ে মানুষের ভয় আর সন্তুষ্টি নিয়েই ব্যস্ত থাকি বেশি। ফলস্বরূপ, গোপনে, লোকচক্ষুর আড়ালে, বা সম্মুখেও আমরা এমন সব কাজ করি যা পুরোপুরি ধর্ম কর্তৃক অস্বীকৃত। যা অন্য ধর্মের মানুষের নিকট আমাদের ধর্মকে উপহাস্য করে তুলে -- ঠিক বলেছেন।