নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মনযূরুল হক

ভালো আছি

মনযূরুল হক

ভালো আছি

মনযূরুল হক › বিস্তারিত পোস্টঃ

নামাজ : দাসের মহিমা

০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ৯:১৩


নামাজ পড়া খুব সহজ একটি কাজ । গ্রেপ্তারের ঝুঁকি নেই, অর্থ ব্যয়ের ভয় নেই । একজনের নামাজের জন্য মাত্র কয়েকফুট জায়গার দরকার হয়, জায়নামাজেরও দরকার নেই । দরকার পবিত্র জায়গা, তবে অপবিত্র জায়গার চেয়ে পবিত্র জায়গাই আমাদের থাকে বেশি ।

নামাজ ইসলামের একেবারেই প্রাথমিক একটি ইবাদত । ইবাদত অর্থ বন্দেগি, মানের বান্দার কাজ । বান্দা মানে গোলাম, দাস । নিজেকে মুসলমান মেনে নেবার অর্থ হলো, আল্লাহর বান্দা হিসেবে স্বীকার করে নেওয়া । নিজেকে আল্লাহর দাস ভাবা । নামাজ পড়া মানে এই দাসত্বকে দৈহিক বিভিন্ন ভঙ্গিমায় প্রকাশ করা ।

মুজিব পরদেশীর গানে আছে—‘হইতাম যদি দেশেরও দেশি, ওই চরণে হইতাম দাসী গো । আমি দাসী হইয়া সঙ্গে যাইতাম গো, বন্ধু, শুনতাম না কারও মানা ।’ এমন বহু গান-কবিতায় এবং বহুবাস্তব ও পরাবস্তব গল্পেও আমরা প্রিয়জন-প্রেয়সীর দাসানুদাস হবার আকুতির কথা শুনি । তো প্রেমের মোহে মানুষ যেখানে তুচ্ছ মানুষের দাসী হতে রাজি, সেখানে মহান প্রভু, যাকে ভালোবাসা শুধু বিবেকের দাবি বলে জটিল করা যায় না, বরং ভালোবাসাটা স্বভাবতই এসে থাকে, তার দাসত্ব বললে কঠিন মনে হবে কেনো?

এই যে ধরুন, দুপুরে মসজিদে নামাজে দাঁড়িয়েছি, জানালা গলে রোদ আসছে, শীতের রোদ । আরামে উষ্ণতায় ভালোলাগা ছড়িয়ে পড়ছে সারা দেহে । কী মনে হয়, ভালোবাসা জাগছে না? হৃদয়ের অন্দর থেকে উথলে উঠছে না প্রেম? প্রভুর সাথে এই প্রেমের অনুভূতি কাউকে শেয়ার করা যায় না । নামাজ মুমিনের মিরাজ । প্রভুর সাথে কথা বলার, দেখা-সাক্ষাৎ করে আর্জি পেশ করার মওকা । উপরন্তু নামাজের পার্থিব উপকারিতাও আছে অযুত । স্বাস্থ্যের ও মনের উপকারিতা ছাড়াও অলৌকিক বহুকিছু লাভ করার প্রতিশ্রুতি আছে ।

তারপরও যারা নামাজকে হেলা করেন, অল্প একটু ‘অসুবিধা’, ধরুন, গাড়িতে উঠতে পাঁচ মিনিট দেরি হবে, কাঁচা ঘুম ভেঙে যাবে, ভাল্লাগছে না এখন ইত্যকার নানান অজুহাতে নামাজ ছেড়ে দেন অহরহ এবং নিজেকে ভালো মুসলিম দাবি করেন, ইসলামের বড় বড় খেদমতের জন্য হাপিত্যেশ করেন, গলাবাজি করেন রাস্তায়, মিছিলে, টেলিভিশনে, তারা কি প্রকারন্তরে হাস্যকর দাবিটাই করছেন না?

এতো সহজ, এতো ভালো, এতো নিষ্কণ্টক একেবারে প্রাথমিক কাজটা আপনি করছেন না, আবার আফগান-ফিলিস্তিন টাইপের বিরাট বিরাট শিখরসম ঝুঁকির কথা বলেন, অর্থসঙ্কটের কারণে বিরাট ইসলামিক সেবা আঞ্জাম দিতে পারছেন না বলে আফসোস করেন—আপনাকে কেনো ভণ্ড বলবো না, বলুন?

তেমন অর্থসুবিধা পেলেও আপনি দাসত্বের কাজ করবেন না, করবেন পেটপোরার ধান্দা । কঠিন পরিস্থিতি এলে আপনি কাপড় চাগিয়ে পালাবেন আর বলবেন জান বাঁচানো ফরজ । অর্থাৎ আর যাই হোক, পার্থিব কিংবা পারলৌকিক যে কাজই আপনি করেন, ওটা আল্লাহর জন্যে করছেন না, এটা নিশ্চিত ।

শেখ সাদি বলেছেন, যে নামাজ পড়ে না, তাকে ঋণ দিয়ো না । যে আল্লাহর সহজতম হক আদায়ে যত্নবান নয়, সে তোমার হক আদায়ের প্রতি মোটেও ভ্রুক্ষেপ করবে না ।

ড. আয়েয আল কারনি ‘আসআদু ইমরাআতিন ফিল আলাম’ গ্রন্থে লিখেছেন, যে ফজর নামাজ পড়ে নি, তার তো দিনের সূচনাই হয়েছে ব্যর্থতা দিয়ে, সে কী করে সফলতার আশা করতে পারে? অথচ শুধু ওঠবস করাই তো যথেষ্ট নয়—নামাজে নিমগ্নতা জরুরি । কদ আফলাহার মু’মিনূন...সেই মুমিনরা সফল হয়ে গেছে, যারা তাদের নামাজে বিনয়-নম্র । (কুরআন ২৩ : ১-২)

আমার মনে হয়, যিনি নামাজ পড়েন, তিনি নিমগ্ন হয়েই পড়েন । যিনি নামাজে নিমগ্ন থাকেন না, বিনয় ও যত্ন যার নামাজে নেই, তিনি আসলে কেবল অভ্যাসের চর্চা করেন, নামাজ পড়েন না । কাকের মতো ঠোকর দেওয়া নামাজের কথা না-হয় বাদই দিলাম । ফাওয়াইলুল্লিল মুসল্লিন...দুর্ভোগ সেসব নামাজির, যারা তাদের নামাজ সম্পর্কে বেখবর । (কুরআন ১০৭ : ৪-৫)

আশ্চর্যের বিষয় হলো, একজন সাধারণ মুসলিম নামাজের প্রতি যতোটা যত্নবান, মাদরাসা পড়ুয়াদের আকছারই ততটা নয় । পাশে মসজিদ থাকা সত্ত্বেও অনেক আলেম বাসা-বাড়িতে কিংবা নিজের কর্মস্থলে মুসল্লা বিছিয়ে নামাজ আদায় করেন । জামাত তরক করেন অহরহ । কিন্তু একজন সাধারণ মুসলিম দোকানি তখনো জামাত ত্যাগ করেন না ।

সাধারণ একটি কাজ, যা করতে মোটেই কষ্ট নেই, এমনকি অফিসে যেতে বাসে চড়তে যতটুকু হাঙ্গামা তা-ও নেই, কাজের মধ্যে একটু বিরতি, অবসাদে একটু বিশ্রাম, পার্থিব ঝঞ্ঝাট ছেড়ে মনন-মানসকে অপার্থিব আলোয় স্নাত করার আনন্দ, কোনোকিছুরই কমতি নেই এখানে । বাতাসের মতো মুফত পাওয়া একটা বিশাল নেয়ামতই বটে । সম্ভবত একারণেই এতকিছুর পরেও যারা নামাজ পড়ে না, তাদের জন্য কঠোরসব হুঁশিয়ারি বার্তা এসেছে ।

সাহাবিরা তো নামাজ হেলাকারীকে মুনাফিক ভাবতেন । হাদিসে মুসলিম-অমুসলিমের পার্থক্যই করা হয়েছে নামাজকে কেন্দ্র করে । ওমর রা. বলেছেন, যার নামাজ নেই, তার ধর্মই নেই । ইসলামে তার কোনো স্থান নেই । নবীজি স. জীবন সায়াহ্নে খুশি হয়েছিলেন সাহাবিদের সারিবদ্ধ নামাজ দেখে । শেষ উক্তিও ছিলো তার—নামাজ নামাজ...।

যুদ্ধকালেও বিশেষ পদ্ধতিতে নামাজ পড়তে হয় । সাগরে হাবুডুবু খেতে থাকলেও নামাজ পড়া যায় । যতক্ষণ বিবেক-বুদ্ধি ঠিক আছে, ততক্ষণ নামাজ পরিত্যাগ করা যায় না । এতে কি প্রকারন্তরে এটাই ফুটে ওঠে না যে, নিয়মিত নামাজ ত্যাগ করার ফলে ধীরে ধীরে বুদ্ধির সুস্থতা হারিয়ে ফেলে মানুষ? নামাজ ত্যাগকারীকে আকাশ-মাটি-পৃথিবীর সমস্ত প্রাণী অভিশাপ দেয় । তার চোখের দৃষ্টিও হয় অন্যের জন্য ক্ষতিকর ।

নামাজির জন্য আরশের দুয়ার খুলে যায় । যার হৃদয়ে নামাজের ব্যাকুলতা থাকে, সে আল্লাহর প্রতিবেশিত্ব অর্জন করে, তাঁর পরিজনে পরিণত হয় । আকাশের বারাকাহ তার জন্য উন্মোচিত হয়ে আসে । প্রভু খুশি হন । তার সাথে সংলাপ করেন নামাজেই । একেবারে কাছে এসে সাড়া দেন তার প্রতিটি প্রশ্নে ।

নামাজ আলো । অন্ধকার ঘরে যেমন আলো জ্বাললে ভেতরের সবকিছু স্পষ্ট হয়ে যায় । তেমনি নামাজের আলোয় পেছনের সকল ভুল-ভালো পরিষ্কার হয়ে ধরা দেয় । ভুলে অনুশোচনা তৈরি হয় এবং ভালো কাজের প্রেরণা দেয় । এইভাবে শুদ্ধতার দিকে এগিয়ে চলে নামাজি । ইন্নাস সালাতা তানহা...নামাজ অশোভন ও অনুচিত কাজ থেকে ফিরিয়ে রাখে তাকে । আত্মার প্রাচুর্য ও প্রশান্তিময় জীবন পেয়ে সে বিত্তবান মানুষেরও ঈর্ষণীয় ব্যক্তিত্বে পরিণত হয় ।

বন্দরে, স্টিমারে, হাটে-বাজারে, যানবাহনে কাউকে নামাজের জন্য জায়গা ছেড়ে দিতে বললে কখনো না করে না কেউ । লোকজনের মধ্যে কেমন যেন কৌতূহল ও শ্রদ্ধাভীতি উপচে পড়ে । নামাজ না পড়েও এক ধরনের ‘মুসল্লি’ ভাব তাদের মধ্যে বিরাজ করে । এতে করে প্রভুর প্রতি সম্মান বোঝা গেলেও প্রভুর দাসত্ব আদায় হয় না । নামাজ তো স্বর্গ-নরকেরও তোয়াক্কা করে না, সে শুধু প্রভুর সাথে দাসের আলিম্পন হতে চায় । স্রষ্টার সাথে সৃষ্টির প্রেম রচনা করতে চায় । নইলে নামাজ কেবল দৈহিক ব্যয়াম ছাড়া আর কোনো অর্থ বয়ে আনবে না ।

আমাদের নিত্যদিনের যন্ত্রণাবিধুর জীবনে নামাজ আসুক শ্রাবণের মতো ঝর ঝর বর্ষা হয়ে, যেন সকল ক্লেদ-পঙ্কিলতা ধুয়ে নিতে পারে । আসুক শীতের কুয়াশা ভেদ করা সূর্যের মতো রঙধনু হয়ে, যেন ব্যথার উপশমে উষ্ণতার উপাদান হয়, আসুক শরতের পেঁজামেঘ আর কাশফুলের মুগ্ধতা নিয়ে, হেমন্তের মিষ্টি-মিঠাই আর বসন্তের ফুলেল উৎসব হয়ে । যেন গ্রীষ্মের প্রখরতার চেয়েও তেজস্বী হয় আমাদের নামাজ । সারাবছরের প্রতিটি দিন যেন আমরা নামাজের আস্বাদ নিয়ে বাঁচতে পারি । সময়ের মতো নামাজও হোক আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ । আমিন ।।

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ১০:০২

বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: চমৎকার প্রশান্তির লেখা। আর ছবিগুলোও ভালো...

০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ১০:০৬

মনযূরুল হক বলেছেন: নামাজ তো প্রশান্তিরই.. হয়তো তাই..
অশেষ ধন্যবাদ...

২| ০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ১১:২১

রিদওয়ান হাসান বলেছেন: শেখ সাদি বলেছেন, যে নামাজ পড়ে না, তাকে ঋণ দিয়ো না। যে আল্লাহর সহজতম হক আদায়ে যত্নবান নয়, সে তোমার হক আদায়ের প্রতি মোটেও ভ্রুক্ষেপ করবে না।

আমার কিছু ঋণ লাগত। অর্থ নয়, শিষ্যত্ব। আশা করি, আমি আপনার গুরুভাবত্বের হক আদায়ে যত্নবান থাকতে পারব।

০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ১১:৪৮

মনযূরুল হক বলেছেন: প্যারাসিটামল দুই বেলা...

৩| ০৯ ই জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ১১:১৯

মোস্তফা সোহেল বলেছেন: খুব ভাল লিখেছেন।
আল্লাহ আমাদের সকল মুসলিমকে নামায পড়ার তৌফিক দান করুন।

০৯ ই জানুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৪:০০

মনযূরুল হক বলেছেন: আমিন !!
মন্তব্যের জন্য অশেষ ধন্যবাদ...

৪| ০৯ ই জানুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৩:৩৭

বেয়াদপ কাক বলেছেন: খুব ভালো লাগল

০৯ ই জানুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৪:০১

মনযূরুল হক বলেছেন: অশেষ ধন্যবাদ...।

৫| ০৯ ই জানুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৫:০৯

এম. হাবীব বলেছেন: নামায কে বলবেনা আমার কাজ আছে,
কাজকে বল আমার নামায আছে।

অসাধারণ...........

০৯ ই জানুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৫:৪৪

মনযূরুল হক বলেছেন: ধন্যবাদ...
আপনার মন্তব্যটি ডিজিটাল ব্যানারে ফকিরেরপুল মসজিদে লাগানো আছে :)

ভালো থাকবেন..

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.