![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
তখনও আমি স্কুলে ভর্তি হইনি। আমার সর্বক্ষনের সাথী আমার ফুপাত বোন যার কথা আগের পর্বে একটু লিখেছিলাম সে আমার থেকে প্রায় ১ বছর এর বড়। সে আমার আগেই স্কুলে ভর্তি হল। স্কুল আমার বাসার পাশেই। বাসার পাশে বলতে একেবারে আমার বাসার দেয়াল ঘেঁষে। আর আমার জন্মের পর নাকি নাড়ি কেটে এই স্কুল প্রাঙ্গনেই পুতে রেখেছিল, তাই বুঝি নাড়ির টান অনুভব করি স্কুলের প্রতি।
স্কুলে ভর্তি না হলেও সব শিক্ষক ই ছিল আমার পরিচিত। তারা সবাই বিকালে আমার বাবা র চেম্বারে বসে আড্ডা দিতেন। সকালে স্কুল শুরুর সময় অ্যাসেম্বেলি তে সবাই লাইনে দাঁড়িয়ে জাতীয় পতাকা উঠাত, গলা ছেড়ে জাতীয় সঙ্গীত গাইত আর শপথ পড়ত হাত মুঠি করে সামনে দিয়ে। সাদা শার্ট আর নেভি ব্লু প্যান্ট আর মেয়ে রা নেভি ব্লু স্কার্ট সাথে সাদা জুত সাদা মোজা পরে যখন সবাই স্কুলে যেত বা স্কুল শেষে হই হই করে বাড়ি ফিরত তা দেখে খুব ইচ্ছে হত, কবে যাব এ রকম উইনিফর্ম পরে স্কুলে?
আমার আপুটির সাথে আমার প্রায় সমবয়সী আর এক প্রতিবেশী খেলার বন্ধুও ভর্তি হল স্কুলে। শুধু আমাকে ভর্তি করাল না, কারন তখনও আমার বয়স ৬ হয়নি। তাই নিয়ে আমার মনটা একটু খারাপ। ওদের ক্লাশ এখন শুরু হয় নি কিন্তু ওদের জন্য ঘটা করে উইনিফর্ম বানাতে দেয়া হয়েছে, সেদিন গিয়ে বাটা কোম্পানির দোকান থেকে সাদা কেডস কিনে এনেছে, এ সবই দেখছি আর আমার মনটা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। মনে মনে রাগ করছি কেন আমাকে ভর্তি করে দেয়া হলন না? তখন স্কুলে গিয়ে লেখা পড়া কি করব না করব সেটা ভাবিনি, ইউনিফর্ম পরে স্কুলে যাব এ টাতেই আমার বেশি আগ্রহ ছিল। মন এতটাই খারাপ হয়ে গিয়েছিল যে আমি খেলাধুলাতেও আর উৎসাহ পেতাম না। রাতে বাবা র সাথে খেতে বসে একটিই কথা আমাকে ভর্তি করে দাও। বাবা আমাকে সান্তনা দিয়ে বলেন ,
“ আগামী বছর তোমাকে ভর্তি করে দেব বাপজান”।
তার এ কথা র পর চুপ করে থাকি কিন্তু মনে হয়, হায় আগামী বছর কত দূর।
আমার আপুর কথা বলি। ও আমার মেজফুপু মানে ফুপু আম্মার মেয়ে। ওর যখন বয়স ৬মাস তখন ওর বাবা মারা যান। ফুপা মারা যাওয়ার পর তার শ্বশুর বাড়ির লোক জনের কথায় বাবা সেখানে তাকে রাখতে ভরসা পাননি। সেখান থেকে নিয়ে আসেন। ফুপু তারপর থেকে ঐ আপুকে নিয়েই আজ পর্যন্ত আছেন। নিজে সেলাই এর কাজ শিখে রাত দিন খেটেছেন, তার আত্মমর্যাদা বোধ প্রবল, বাবার সংসারে সে বোঝা না হয়ে সাবলম্বি হয়ে ওঠে। সেই সাথে আশে পাশের মেয়েদের কাজ শিখিয়ে তাদেরও সাবলম্বনের পথ দেখায়। সেই কথা লিখতে গেলে আর এক আক্ষান হয়ে যাবে। আর একদিন লিখব সে কথা। ফুপা মারা যাওয়ার চার মাস পর আমার জন্ম হয়। মা চাকরি করেন, আমি থাকি ফুপু আম্মার কাছে। এভাবেই সময় কাটে, দিন কাটে বছর কাটে। একসাথে আমরা দুজন বড় হই। আমাদের এলাকার অনেকেই জানত আমরা আপন দু ভাইবোন। এখনও সে ভুল অনেকের ভাঙ্গেনি।
যা হোক, ওদের স্কুল শুরু হল। প্রথম দিন স্কুলে যাওয়ার আগে উইনিফর্ম পরে আমাদের বাসা হয়ে স্কুলে গেল, আর আমি লুকিয়ে লুকিয়ে দেখলাম সামনে গেলাম না। আমার শুধু কান্না পাচ্ছিল। ওরা স্কুলে যাওয়ার পর আমি বাসার পেছনের জানালা খুলে ওদের অ্যাসেম্বেলি দেখলাম। অ্যাসেম্বেলি শেষ হলে সবাই লাইন ধরে যার যার ক্লাশের দিকে যেতে থাকল। আমিও জানালা থেকে নেমে স্কুলের পেছনে যেখানে ক্লাশ ওয়ানের ক্লাশ হয় তার পেছনের জানালার কাছে চলে আসলাম। জানালা ছিল একটু উঁচুতে, একটা গাছ ধরে সেই জানালার গ্রিল ধরে চেয়ে থাকলাম। আমার প্রতিবেশী বন্ধুটি দেখলাম অনেক নতুন বন্ধু পেয়েছে ও ওদের সাথে আমার পরিচয় করিয়ে দিল। তারাও আমার বন্ধুর মত হয়ে গেল। আর আপুও দেখলাম কয়েক জন বান্ধবি পেয়ে গেছে। আমি শুধু চেয়ে দেখছি। কি যে খারাপ লাগছে বোঝানো যাবে না।
একটু পর ঢং ঢং ঘন্টা বেজে উঠল। তার একটু পর ঋষিকেশ স্যার হাতে রোল কলের খাতা নিয়ে ক্লাশে ঢুকলেন। আমি চেয়েই রইলাম। স্যার আমাকে চিনতেন তাই ভয় করছিল না। কিন্তু স্যার একটু পর আমাকে ধমক দিয়ে নামিয়ে দিলেন। আমি নেমে আবার উঠলাম গোয়াড় এর মত। এবার স্যার আমার দিকে চেয়ে থাকলেন, কিছু বললেন না। স্যার আসার পর সব চিল্লাচিল্লি থেমে গেছে। স্যার চেয়ারে বসে সবার দিকে তাকিয়ে প্রথমেই জিজ্ঞেস করলেন “কেমন আছ তোমরা”?
প্রথমে ভয়ে সবাই চুপ করেছিল। পরে স্যার বললেন কেউ জিজ্ঞেস করলে তার উত্ত দিতে হয়। আবার বললেন কেমন আছ তোমরা?
সবাই এক সাথে চিৎকার করে বলল, “ ভাল আছি স্যার”।
স্যার এবার খাতা খুলে এক এক করে নাম ধরে ডাকছিলেন আর দাড় করিয়ে ডাক নাম, বাবা র নাম, বাড়ি কোথায় এ সব জিজ্ঞেস করছিলেন। আমি এ সব দেখছিলাম মুগ্ধ হয়ে। কল্পনায় নিজেকে ক্লাশের একজন মনে করছিলাম। হঠাৎ আপুর ভাল নাম ধরে স্যার ডাক দিল তখন আমার ঘোর কেটে গিয়ে তাকালাম আপুর দিকে। মাথায় চুল ঝুটি করে বাধা আর ইউনিফর্ম পরে খুব সুন্দর লাগছিল ওকে। স্যার ওকেও জিজ্ঞেস করলেন সব কিছু। বাবার কথাও জিজ্ঞেস করলেন যে তিনি ওর কে হন? ও বলল, বড় মামা। সবই ঠিক ছিল কিন্তু যখন স্যার জিজ্ঞেস করলেন
“তোমরা ক ভাই বোন”?
তখন ও স্বাভাবিক ভাবেই উত্তর দিল, ও একা। ওর কোন ভাই বোন নেই।
কিন্তু এটা শুনে আমার যেন মাথা ঘুরে গেল। ভাই বোন নেই মানে? আমি তাহলে কে? আমার রাগটা একটু বেশিই আগে থেকে। আর ছোট বেলায় রাগ বেশি হলে কাঁদতাম। কারন করার কিছু ছিল না। কয়েক বার এটা ওটা চুড়ে মেরে শোকেস ড্রেসিংটেবিল এসবের কাচ ভেঙ্গেছি। কিন্তু এ কথা শোনার পর মনে হচ্ছিল যেন আমি জানালার শক্ত লোহার গ্রিল ই ভেঙ্গে ফেলি।
রাগে ফোস ফোস করতে করতে জানালা থেকে নেমে স্কুলের গেটের সামনে গিয়ে দাড়ালাম। আর মনে মনে ভাবছিলাম বের হোক আগে আপু স্কুল থেকে, তার পর মজা দেখাব। ভাই বোন নাই না? আমি তাহলে কে? মনে মনে একটু সন্দেহও হতে থাকল আমার ছোট চাচা প্রায়ই আমাকে ক্ষেপায় যে, বাবা না কি আমাকে রেল লাইনে কুড়িয়ে পেয়েছে। তাহলে সেটাই সত্যি কি না? তখন আমার ছোট্ট মনে মামাত চাচাত ভাই বোন এ বিষয়ে কোন ধারনা ছিল না। স্কুলের গেটের সামনে বাদাম ওয়ালা, ঝাল মুড়ি ওয়ালারা বসে থাকে। ওদের সাথে আমিও অপেক্ষা করতে থাকলাম স্কুল ছুটির।
অপেক্ষা করতে করতে রাগে গাছে ঢিল ছুড়লাম, পা দিয়ে মাটি খুটলাম আর রাজ্যের চিন্তা করতে লাগলাম। এক সময় ছুটির ঘন্টা বাজল। সবাই হই হই করে বেড়িয়ে আসতে থাকে। আমি চেয়ে থাকি কোথায় আপু? এক সময় ওকে দেখি, নতুন বান্ধবিদের সাথে বেশ হাসি হাসি মুখ করে আসছে। আমার দিকে একবার দেখেছেও। যখন ও গেটের কাছা কাছি এসে পরেছে তখন আমি রাগে প্রায় অন্ধ। আশে পাশের পরিবেশ পরিস্থিতি মানুষ জন সব যেন বিস্মৃত হয়ে গেছে। আমি শুধু রাগী মুখ করে আপুর দিকে চেয়ে আছি। ও আমার কাছে আসতেই আমি কয়েক পা এগিয়ে গিয়ে চিৎকার করে বলতে থাকি “ তুমি কেন বললা স্যার কে যে তোমার ভাই বোন নাই? আমি তোমার ভাই না?” এটা বলেই আমার এতক্ষনের রাগ কান্না হয়ে বেড়িয়ে আসে। আপু আমার চিৎকারে হতভম্ব ত হয়েছেই সাথে ওর বান্ধবিরাও। আর ঐ বয়সে সবার ই হাসি রোগ থাকে মনে হয়। আমার কান্না দেখে ওর বান্ধবি রা হাসতে শুরু করল। ততক্ষনে আমার রাগ কিছুটা কমেছে। এত গুলো মেয়ে আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে আর আশে পাশের সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে সেটা মনে হতেই আমি উল্টো ঘুরে সোজা বাড়ির দিকে দৌড়।
আমার চাচা, ফুপু, মা, বাবা সবাই এটা নিয়ে অনেক হাসাহাসি করেছে আমাকে নিয়ে। যখন বুঝেছি তখন আমারও বেশ হাসি পেত। কিন্তু পৃথিবীর সব আপন পর নিয়ম কানুন আমি বুঝতে চাই না। ও আমার বোন ব্যাস এটাই আমি বুঝি।
০২ রা জানুয়ারি, ২০১৩ ভোর ৫:১৬
আবু মান্নাফ খান বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই।
সত্যিই তাই ভাই।
২| ০২ রা জানুয়ারি, ২০১৩ ভোর ৫:৪০
ঝটিকা বলেছেন: ভালো লাগলো আপনার স্মৃতি কথা। আপনার ফুপুকে হাজার সালাম। বোনটা এখন কি করেন? জানতে ইচ্ছা করছে ফুপুটার কষ্ট সার্থক হয়েছে কিনা।
০২ রা জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৯:১৪
আবু মান্নাফ খান বলেছেন: বোনটা এখন সিঙ্গাপুর থাকে স্বামী সন্তান সহ। এবার সে গ্রাজুএশন এর শেষ বর্ষ পরীক্ষা দিচ্ছে।
দুলাভাই ইউ কে থেকে মাস্টার মেরিনার। আলহামদুলিল্লাহ সবাই ভাল আছে
ধন্যবাদ
৩| ০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১১:০৯
অপূর্ণ রায়হান বলেছেন: অনেক ভালো লাগলো ভাই ++++++++
শুভকামনা সবসময়
০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৩ ভোর ৪:০৩
আবু মান্নাফ খান বলেছেন: শুভকামনা সবসময়
ধন্যবাদ ভাই
©somewhere in net ltd.
১|
০২ রা জানুয়ারি, ২০১৩ ভোর ৫:০৬
অগ্নির বলেছেন: অনেক বিরক্তকর পোস্টের মাঝে আপনার স্মৃতিকথা পড়ে খুব ভাল লাগল । সুন্দর একটা লেখার জন্য ধন্যবাদ । ছোটরা ছোট হলেও তাদের আবেগ কিন্তু কম থাকেনা । আপনার আবেগটাও যৌক্তিকই ছিল । শুভকামনা ।