নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সোজা কথা , সহজ করে বলি, সোজা পথে চলি

আবু মান্নাফ খান

সরল, সহজ, চিন্তার মানুষ

আবু মান্নাফ খান › বিস্তারিত পোস্টঃ

রক্তের ছবি মুছে দেয়া এক প্রেমের গল্প

১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ৩:২৬

সবে ২৫ বছর পার করছি। খামখেয়ালির নানা রাস্তা ঘুরে জাহাজ এর জীবনে এসে পরলাম। বন্ধুবান্ধব, আড্ডা কে যে এত মিস করব আগে জানলে আসতাম কি না সন্দেহ। তার পরও সময় সব কিছু মানিয়ে দিল। কোন মত মানানো না একে বারে ভালভাবেই মানিয়ে দিয়েছে। এইত বাবা মারা যাওয়ার দুই বছর হতে যাচ্ছে। ঐ সময় নিজে কে খুব অসহায় মনে হত। এক সময় সময় সেটাও মানিয়ে দিল।

আমার বন্ধুদের মাঝে কাছের যারা, তাদের মাঝে হাতে গোনা কয়েকজন বিয়ে করেছে, তাও সম্প্রতি। প্রেম ভালোবাসা যে মনে আসে নি এমন না। এসেছে হারিয়ে গেছে, কোন স্মৃতি রয়ে গেছে। কিন্তু জাহাজ এর জীবনে এসে প্রচণ্ড পেশাদারিত্বের মাঝে এসব নিয়ে চিন্তার থেকে অবসর সময় টাতে একটু ঘুম দিতে পারলে ভাল লাগে। কিন্তু মানুষ ত আর যন্ত্র না। বললাম আর ঘুম এসে আমার সাথে কোলাকুলি করল। যন্ত্র না বলেই সেইসব বিবাহিত বন্ধুদের কথা মনে করে মাঝে মাঝে একটু আফসোস হয়, ইস আমি একা শুয়ে আছি আর সে এই শীতের রাতে বৌ এর গলা জড়িয়ে শুয়ে আছে। তার উপর জাহাজ এসেছে এমন এক বন্দরে যেখান থেকে অন্যান্য নাবিকদের বাড়ি কাছে। তাই তাদের স্ত্রী সন্তান রা এসে জাহাজ কে বাড়ি বানিয়ে ফেলেছে। ভালই লাগে। মাঝে মাঝে ছোট বাচ্চা গুলো ছুটোছুটি করে, চিল্লাচিল্লি করে। আমার সাথে দেখা হলে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। আমরা বিদেশী মানুষ দেখার জন্য যেমন ভীর করতাম ছোট বেলায় এমন করে এরা আমার দিকে তাকিয়ে থাকে। দু একটা দুষ্টু আছে, আমার কোন মজার নাম দিয়েছে মনে হয়। আমাকে দেখলেই কি যেন বলে আর হাসিতে ফেটে পরে। মজাই লাগে এসব দেখতে। কিন্তু এই বাচ্চা দের নিয়ে সমস্যা হয় রাতে, এদের বাবা মা র। কেবিন মোটামুটি বড়। কিন্তু বিছানা একজনের জন্য ঠিক আছে, স্বামী স্ত্রী দুইজন হলেও মানিয়ে যাবে কিন্তু তিন জন অসম্ভব। তাই সন্তান কে বিছানায় রেখে তারা নিচে বিছা না করে ঘুমান। তার পরও স্বামী স্ত্রীর সংসার ধর্ম বলে কথা আছে, সেটা ত আর বাচ্চা কাচ্চার সামনে করা যায় না। তাই তাদের রাতে ঘুমানোর জন্য অপেক্ষা করতে হয়। আর নতুন যায়গায় এসে বাচ্চাও কি ঘুমায়? মহা ক্যাচাল তখন। আমার সিনিয়র অফিসার বিশাল ক্যাচালে পরছে। সারাদিন ডিউটি করে রাতে গিয়ে আবার বাচ্চার ঘুমানোর জন্য তাকে জেগে থাকতে হয়। এই করে দুই দিনে তার মুখ শুকিয়ে আমসি গেছে। পরিস্থিতি কিছুটা আঁচ করতে পেরে বললাম, “স্যার পিচ্চি কে আমার ঘরে পাঠিয়ে দিন”। স্যার এর শুকনো মুখ তখন চকচক করে উঠল। কিন্তু সমস্যা হল বাচ্চা আমার কাছে থাকবে কি না? যা হোক সেটা আমি ম্যানেজ করে নিব তাকে আশ্বাস দিলাম। কথা না বুঝলেও একটা পিচ্চি কে ম্যানেজ করা ব্যাপার হল না। কোলে করে এনে টম অ্যান্ড জেরি কম্পিউটারে দিয়ে সামনে বসিয়ে দিলাম, ব্যাস। বেশ শান্ত। কিন্তু মাঝে মাঝে আমাকে ঘোড়া হতে হল। মুখ ভেংচিয়ে না না অংগভঙ্গি করতে হল। সে যা হোক স্যার আমার ভীষণ খুশি। আমাকে এক মাসের ইন্টারনেট খরচও দিয়ে দিল।

আমার আশে পাশের কেবিনের সবার এমন সুখের সংসার দেখে মনের মাঝে হালকা মোচর দিল। কিন্তু কি করা কিছুই করার নাই। কাকে বিয়া করব? আর বয়সও ত হয় নাই বিয়ে করার। ফেসবুকে আমার চাচাত বোন মামাত বোন বা পাড়াত বোন অনেকের সাথে চ্যাট হয়। তারা তাদের মত করে তাদের সঙ্গী খুজে নিয়ে সুখে আছে। তাদের সুখের কথা শুনি আর দীর্ঘশ্বাস ফেলি। লজ্জা শরম না করে এমন এক বোন কে বলেই ফেললাম আমার জন্য একটা মেয়ে খুজতে। সে সাফ জানিয়ে দিল নিজের টা নিজে খুজে নেন। সাগরে এখন মেয়ে খুজে কই পাই? মৎস্য কন্যা বলে অনেক গল্প শুনেছি তারও দেখা পাওয়া যাচ্ছে না। মন তখন এমন যে, যে মেয়েরই ছবি দেখি ফেসবুকে, মনে হয় এর সাথে প্রেম করি। পরে নিজের এমন মনের অবেস্থা দেখে নিজে নিজেই হাসি।



এমন ভাবেই দিন কেটে যাচ্ছিল। হঠাৎ ফেসবুকে আমার কাজিনের দেয়া এক ছবিতে আমার চোখ আটকে গেল। কেন আটকাল বুঝতে একটু সময় লাগলো। পাঁচ টা মেয়ে রেস্টুরেন্ট এ খেতে গিয়ে ছবি উঠিয়েছে। সব বাঁ পাশের মেয়েটা কে দেখে কেমন জানি উদাস হয়ে গেলাম। ফর্সা গোলগাল মুখ। পুতুল পুতুল একটা ভাব আছে কিন্তু জীবন্ত চোখ দুটো সে পুতুলে জীবন এর অস্তিত্ব খুব ভালকরে জানান দিচ্ছে। কি এক টানে চোখ সরিয়ে নিলে আবার চোখ সেদিকে চলে যায়। ঠোটের কোনে এক চিলতে হাসি তার সৌন্দর্য কে কি এক মায়ায় বেধে ফেলেছে। সবমিলিয়ে আমি পুরাই উদাস। প্রথম প্রেম এর মত করে মনে দখিনা বাতাস দোলা দিতে লাগলো।



কিছুক্ষন শুয়ে শুয়ে কল্পনার রাজ্যে পায়চারী করে বোন কে বললাম,

“মেয়ে টা কে”?

বোন আমার এক কথা তেই জানিয়ে দিল ও আফগান ছেলে ছাড়া বিয়ে করবে না। কথা শুনে আমিত পুরাই বে আক্কেল। “আফগান পোলারে বিয়া করব, ত বাংলার পোলারা কিদোষ করল”? পরে শুনলাম সে আফগান। বাংলাদেশে পড়ছে। সবই আমার কপাল। একটু প্রেমিক ভাব এনে আগায়া গেলাম সে দূরে চলে গেল। যে সে দূরে না একেবারে আফগানিস্তান। ছ্যাকা খেয়ে একটু ধাতস্থ হলাম। পৈতৃক প্রাণটা তালেবান এর বাড়িতে কে পাঠাইতে চায়?



কয়েক মুহূর্তের এক ভালোবাসা হয়ত। শুধুই কি কয়েক মুহূর্তের? মনে হয় না। আফগানিস্তান নামেই মনের মাঝে এক ছবি গেথে গিয়েছিল। রাইফেল, ধূসর পাহাড়, ধ্বংস হয়ে যাওয়া জনপদের পর জনপদ। রক্ত, লাশ আর জীবন থেকে জীবন কেড়ে নেয়া মানুষ এর নির্লিপ্ত চোখ। ছোট বেলায় কাবুল এর বাদশাহ দের যে রাজকীয় বর্ননা বা বর্নীল নগর এর যে গল্প শুনতাম তা সভ্য মানুষদের অসভ্য চিন্তায় রক্ত দিয়ে মুছে দিয়েছিল। কিন্তু এ মেয়ে বুঝিয়ে দিল রক্ত দিয়ে সব কিছু মুছে দেয়া যায় না। সব রক্ত ধ্বংস আর ভয়ংকর সব দুঃস্বপ্ন সরিয়ে আফগানিস্তান নামে আমার এ ক্ষুদ্র মনে গেথে গেল সুন্দর এ মায়াময় মুখখানি।

মন্তব্য ১৮ টি রেটিং +৭/-০

মন্তব্য (১৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৩ ভোর ৪:১১

তিতুন বলেছেন: পড়ে ভাল লাগল। আপনার লেখার হাত ভাল। আচ্ছা, এটা কি সত্যি ঘটনা নাকি কল্পণা। গল্প পড়ে সত্যি বলেই মনে হচ্ছে।

১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৩ ভোর ৪:১৭

আবু মান্নাফ খান বলেছেন: ঘটনা সত্যি ১০০%। সময় এর হিসাবে ৭ ঘন্টা আগের।

ধন্যবাদ। লেখার হাত ভাল কি না জানি না কিন্তু লিখতে ভাললাগে,

২| ১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৩ ভোর ৪:১৩

সুলাইমান হাসান বলেছেন: আপনার লেখা পড়ে উদাস হয়ে গেলাম

:|| :|| :||

১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৩ ভোর ৪:১৭

আবু মান্নাফ খান বলেছেন: :P :P :P :P
উদাস হওয়া খারাপ কিছু ত না

৩| ১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৮:২৭

মাক্স বলেছেন: ++++

১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১০:৩৬

আবু মান্নাফ খান বলেছেন: ধন্যবা্দ
:D :D :D

৪| ১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৮:৪৮

পড়শী বলেছেন: খুব ভাল লাগল। আপনি লেখা চালিয়ে যাবেন আশা করি।

১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১০:৩৮

আবু মান্নাফ খান বলেছেন: লেখা লেখিতেই ত বেচে আছি।
চেষ্টা থাকবে চালিয়ে যাওয়ার।
ধন্যবাদ

৫| ১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৯:২৩

ঝটিকা বলেছেন: লেখাটা খুব ভালো হয়েছে। জাহাজীদের জীননের আরো কথা শুনতে চাই।

১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১০:৩৯

আবু মান্নাফ খান বলেছেন: ধন্যবাদ। কিন্তু এটা ত জাহাজী দের জীবন লক্ষ করে লিখিনি ভাই।

৬| ১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ৯:৩৪

শহিদুল কাদের বলেছেন: 'রক্তের ছবি মুছে দেয়া এক প্রেমের গল্প' নাম দেখে একটু ভয় পেয়ে গেলাম।কিন্তু গল্পটা পড়ে এক অবিমিশ্র অনুভূতি চলে আসল ...........নামকরনের সার্থকতা খোঁজার চিন্তাটা অতলে হারিয়ে গেল.

১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ৯:৫৮

আবু মান্নাফ খান বলেছেন: নামে কি বা আসে যায়

৭| ১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১০:০৯

আধখানা চাঁদ বলেছেন: ভাই, আপনি জাহাজেই থাকেন! কারণ , এত অসাধারণ লেখা বাসায় মনে হয় বের হবেনা!!

আমার অনেক ভাল লেগেছে আপনার লেখা। পরের লেখার অপেক্ষায় থাকলাম।

আর বিয়ে যখন হবার তখন ঠিকই হবে। so, নো চিন্তা, ডু লেখালেখি। :)

১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১০:১৭

আবু মান্নাফ খান বলেছেন: so, নো চিন্তা, ডু লেখালেখি। :
ভাল বলেছেন ভাই। কিন্তু দেশটা রে ত দেখতে ইচ্ছা করে। যাব যাব করতেছি হইতেছে না।
ধন্যবাদ

৮| ১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৩ ভোর ৬:০৯

অপূর্ণ রায়হান বলেছেন: ++++++++++++ দারুন !

ভ্রাতা , আফগান শ্যালিকা টালিকা থাকলে একটু আওয়াজ দিয়েন ;)

ভালো থাকবেন সবসময় :)

১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৯:০৭

আবু মান্নাফ খান বলেছেন: ভাই, বৌ ই ত পাইলাম না, শালিকা কোথায় পাই?
ধন্যবাদ

৯| ১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৮:১৫

মোঃ আব্দুস সালাম বলেছেন: কি আর করার? যখন সময় হবে তখন বিবাহ হবে।
আচ্ছা আপনারা সাগবে ইন্টারনেট ব্যাবহার করেন কেমন করে?

১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৯:১২

আবু মান্নাফ খান বলেছেন: সেটাই ভাই।
যখন কোন পোর্ট এ যাই অর্থাৎ মোবাইল নেটয়ার্ক এর মাঝে যাই তখন ব্যাবহার করি। আর সাগরে থাকলে যাখানে মোবাই নেট নাই সেখানে স্যাটেলাইট নেট ব্যাবহার করা হয়। সেটা সাধারনত অফিশিয়াল কাজেই ব্যাবহার হয়, কারন সেটা খুব এক্সপেন্সিভ। আমার ভাগ্য টা একটু ভালই বলতে হয় কারন আমার যে অপারেশনাল এরিয়া তাতে আমাকে বেশিদিন নেট এর বাইরে থাকতে হয় না।
ধন্যবাদ
http://www.facebook.com/saikat.khan.581
এটা আমার ফেসবুক ঠিকানা।
ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.