![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
হেটে চলছি রেল লাইন ধরে সোজা উত্তর দিকে। দেবী চৌধুরানী স্টেশন এর প্লাটফর্ম পেরিয়ে লাইনের ধার ঘেষে কিছু পায়ে চলার রাস্তা ধরে হাটছি আমি। ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পরছে। দুপুর পার হয়ে গেছে কিন্তু চার পাশ মেঘলা হয়ে একটু সন্ধ্যা র ভাব নিয়ে আছে।
এখানে সকালে একটা খেলা ছিল। খেলা শেষ করতে করতে ট্রেন মিস করেছি। সবাই রিকশা নিয়ে চলে গেলেও কি কারনে আমি হেটেই রওয়ানা দিলাম। মোটে ৭ কি.মি. রাস্তা হবে , খুব কম না কিন্তু মনের মাঝে কোথাও হারিয়ে যাওয়ার তাগিদ অনুভব করছিলাম তাই আমার এই পদযাত্রা।
স্টেশন এর আউট সিগনাল এর পর থেকে লাইনের দু ধারে ফসলের ক্ষেত। ক্ষেত গুলোর ওপারে কালো সবুজে ঢাকা গ্রাম গুলো রেখার মত। এর মাঝ থেকে কয়েকটি বড় গাছ মাথা উচুঁ করে দাড়িয়ে দারুন এক ল্যান্ডসকেপ তৈরি করেছে।
ধান কাটা হয়ে গেছে , বর্ষা শুরু হয়েছে। সকালের দিকে আকাশ একটু ভালো থাকলেও এখন যেন সব প্রস্তুতি নিয়ে নেমেছে। মাঠে কাজ না থাকায় লাইনের দু ধারে ফসলের ক্ষেতে মানুষ নেই। আর দুপুর বেলা এমন মেঘলা আকাশ সাথে ঝুম বৃষ্টি তে কেই বা বেড়তে চায়?
আমি প্রায় আধা কি.মি. রাস্তা চলে এসেছি। বৃষ্টি ও যেন আরো গাড়ো হচ্ছে। কালো মেঘ এ ভরদুপুর কে বানিয়ে রেখেছে সন্ধ্যা র মত। মাঝে মাঝে বিজলি চমকে ঝলসে দিচ্ছে দৃষ্টি। কান ফাটানো শব্দে বাজ পরছে হয়ত আসেপাশেই। খোলা মাঠে বৃষ্টি র আলাদা এক শব্দ তৈরি হয় , এ শব্দ লোকালয়ে অন্য শব্দের সাথে বুঝা যায়না। একটানা সে শব্দে মাথার ভেতর নেশা ধরে যায়। এমন নেশা তে আমি হাটছি , এর মাঝে বৃষ্টি কখন একটু কমছে কখনো বাড়ছে। রেললাইন সমতল থেকে একটু উচুতে। এ বিশাল খোলা প্রান্তর কে যেন দুভাগে ভাগ করে যেন চলে গেছে দিগন্তে। আর আমি এ দিগন্ত কে লক্ষ করে হেটে চলেছি একা।
বৃষ্টির পানিতে ফসলের ক্ষেত গুলো ভরে উঠছে আর অসঙ্খ আইল যেন এই ধুসর হয়ে যাওয়া ক্ষেতের বুকে আকিবুকি খেলেছে। দু একটি জমিতে তরুণ পাট গাছ গুলো ভিজছে আমার মতই। আর অসঙ্খ্য আইল কে স্টেজ বানিয়ে এক টানা ব্যাং ডেকে চলেছে। বৃষ্টি র নেশা ধরা শব্দের সাথে ব্যাং এর একটানা শব্দ পরিবেশ কে মাতাল করে তুলছে।
আমি হেটে যাচ্ছি রেললাইন এর মাঝ দিয়ে স্লিপার এর উপর দিয়ে। ভিজে চুপসে গেছি। চুলগুলো কপালে লেপ্টে আছে আর নাক মুখ বেয়ে বৃষ্টি র পানি পরছে। কখন বৃষ্টি র প্রবল ঝাপটায় চোখ বন্ধ হয়ে আসছে আবার আপনাতেই খুলে যাচ্ছে এ অপার সৌন্দর্য দেখবে বলে। পুরো মাঠে আমি একা আর একটি কাক ভিজে জবুথবু হয়ে বসে আছে রেললাইন এর পাশে একটি গাছে। আমার দিকে সে কাকচক্ষু দিয়ে অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখছে। কতদুর এসেছি বুঝতে পারছি না। পেছনের দৃষ্টি সীমা থেকে অনেক আগেই স্টেশন কে হারিয়েছি। সামনে বেশ দুরে একটি রাস্তা দেখতে পারছি যেটা লাইন কে আড়াআড়ি ভাবে ক্রস করে গেছে। রাস্তাটি লাইনের দুধারে ক্ষেতের মাঝ দিয়ে একেবেকে চলে গেছে দুরের কোন. গ্রামে। রাস্তায় একটি মানুষ অ চোখে পরছে না। হঠাৎ করেই মনে হতে লাগল এ পৃথিবী তে আমি একা। আর এ বৃষ্টি কখনো থামবে না আমার এ পথচলাও শেষ হবে না। হালকা এক বাতাসে শরীর এ কাপন ধরিয়ে দিয়ে গেল। ভয় নয় একাকিত্বের অন্যরকম এক অনুভূতি মন কে গ্রাস করে ফেলছে। এ অনুভূতি ভালো মন্দের অনেক উপরে। আমি যেন হারিয়ে গেছি অন্য এক জগতে , কখন গলা ফাটিয়ে চিতকার করছি আবোলতাবোল যা মনে আসছে। পা দুটো চলছে আপনাতেই। হাত দুটো আকাশ পানে বারিয়ে বৃষ্টি কে আলিঙ্গন করছি পরম মমতায়। গলা থেকে যে আওয়ায আসছে মনে হচ্ছে তা যেন হৃদয় এর কোন বন্ধ থাকা কুঠুরি খুলে সেই বন্ধ কুঠুরি থেকে উঠে আসছে সেসব আওয়াজ। নিজেকে নিজের সত্তা কে হারিয়ে ফেলছি প্রকৃতির মাঝে।
আরো কিছু সময় পর কিছুটা ক্লান্তি ভর করল শরীর এ। সময় মনে হচ্ছিল স্থির গন্তব্য যেন অসীম। রেলের স্লিপার এর মাঝে হাত পা ছড়িয়ে আকাশের দিকে দৃষ্টি দিয়ে শুয়ে পরলাম। বৃষ্টি র ঝাপটায় চোখ বন্ধ কিন্তু অন্য এক দৃষ্টি যেন মনের সব জানালা খুলে দিচ্ছিল।
এক বাজ পরার শব্দে চমকে উঠে দাড়ালা। আমার সচেতন আর অবচেতন মনের দ্বন্দে আবার চলতে শুরু করলাম। হাটছি আবার কিন্তু বৃষ্টির পানি যেন মন কে এক ঘোরের মাঝে আচ্ছন্ন রেখেছে। এমন ভাবে হাটতে গিয়ে পাথরে একবার পা ঠুকে গেল। বা পায়ের বুড়ো আঙ্গুলের নখ ফেটে রক্ত বেরিয়েছে কিন্তু কি আশ্চর্য ব্যাথার কোন অনুভূতি ই আমার মাঝে নেই। বরং রক্ত বৃষ্টির পানিতে মিশে যখন পাথরের ফাকে গজে ওঠা নতুন কচি ঘাসে পরছিল তখন মনে হচ্ছিল এ ধুসর প্রকৃতিতে কোন শিল্পী যেন রঙ্গের আচড় দিচ্ছে।
একটু পর বৃষ্টি ধরে এল। আমার সামনের স্টেশন এর সিগনাল দেখতে পেলাম। ধীরে ধীরে লোকালয়ে মানুষ চোখে পরতে লাগল। আর সেই সাথে আদিম বৃষ্টির শব্দ হারিয়ে দখল করতে লাগল সভ্যতার কিছু কর্কশ শব্দ। হঠাৎই থমকে দাড়ালাম। পেছনের সেই ফেলে আসা পথের দিকে তাকিয়ে মনে হতে লাগলো আমি যেন আলাদা হয়ে যাচ্ছি আমার আমি থেকে। এতক্ষণ যে আমি টা আমার সাথে ছিলো সে যেন আমাকে পেছনে ফিরে চলতে শুরু করেছে সেই পথের দিকে। আমি অপলক দৃষ্টি তে তাকিয়ে আছি আর ধিরে ধিরে ক্লান্তি অবশাদ আমার দেহ কে ধরে ফেলছে। আর আমার মন সেই আমার আমিকে ধরবে বলে চিতকার করে চলেছে।
২| ২৮ শে জুলাই, ২০১৩ বিকাল ৪:৩৬
আবু মান্নাফ খান বলেছেন: ধন্যবাদ
৩| ২৮ শে জুলাই, ২০১৩ রাত ১১:১৮
মোঃ আব্দুস সালাম বলেছেন: এটা মনে হয় সবারই গল্প। আমিও এভাবে কত হারানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু সভ্যতার টানে আবার রোবট হয়ে গেছি।
আচ্ছা সাধারন কথাগুলো এমন ভাবে লেখেন কেমন করে?
অফটপিকঃ আপনার “স্টেশন” কি শেষ। শেষ হলে পড়া শুরু করব। আর শেষ না করা হলে প্লিজ তারাতারি শেষ করেন।
©somewhere in net ltd.
১|
২৮ শে জুলাই, ২০১৩ বিকাল ৩:৪৭
আজ আমি কোথাও যাবো না বলেছেন: ২য়ভালো লাগা।
সুন্দর!