![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বসে আছি চার তলা দালানের ছাদে। রেলিং নেই। চারদিকে খোলা। এক দিকে বয়ে যাওয়া বিল আর পশ্চিমমে একটি বড় নিম গাছ। এত বড় যে চারতলা দালানে এসে এর ডাল গুলো গড়াগড়ি খাচ্ছে। আমি যে পাশে বসে আছি সেখান থেকে বিল আর বিল ছাড়িয়ে গ্রাম গুলো দেখা যায়। আর পেছনে একটা জংলা ঘেড়া পোর বাড়ি। ছাদের প্রায় কিনারা ঘেষে বসে আছি একটি ছাদ ফুরে বেরিয়ে আসা কলামে পিঠ ঠেকিয়ে, দুরে দৃষ্টি মেললে তেমন সমস্যা হয় না কিন্তু নিচে তাকালে মাথা ঝিম ঝিম করে। প্রায়ই স্বপ্ন দেখি উচুঁ কোথাও থেকে পরে যাচ্ছি। সে স্বপ্ন যেন ফিরে আসে সে সময়। বুক ধরফর করে। তখনই দৃষ্টি সরিয়ে দিগন্তে চোখ মেলি। সূর্য ডুবছে তার মিষ্টি কিরন ছড়িয়ে। সে আভা পানিতে পরে ঝিকিমিকি করছে তার পাশে গ্রামের গাছ গুলো তে ঘরে ফেরা পাখিদের যেন মেলা বসেছে। ওদের কিচিরমিচির পানিতে তরঙ্গ তুলে মিলিয়ে যাওয়ার ঠিক আগমুহূর্তে যেন আমার কানে আসছে। অসম্ভব ভালোলাগায় আচ্ছন্ন হয়ে যায় মন। মনের মাঝে অজান্তেই বেজে ওঠে কোন বাশি র সুর্। ঝিরিঝিরি বাতাসে নিম গাছের ছোট ছোট পাতায় দোল লাগে, আর শুকিয়ে ঝড়ে যাওয়া পাতা গুলো ছাদের কঙ্ক্রীট এ শব্দ তুলে আমাকে ছুয়ে যায়। এ বাতাস শুধু শরীর না মন কে ছুয়ে যায় , আবেশে চোখ বন্ধ হয়ে আসে। কিছু সময় চোখ বন্ধ করে থেকে চোখ মেলেই মনে হয় ঝুপ করে অন্ধকার নেমেছে। সে এক অদ্ভুত আলো আধাঁরি। পেছনে পোড়া বাড়িটি যেন একটু বেশিই অন্ধকার আর রহস্যময় হয়ে উঠেছে। ওটার পাশে এক তাল গাছ অন্ধকারের অবয়ব হয়ে কেমন এক ভঙ্গিতে দাড়িয়ে আছে। ওটার দিকে ভাল করে তাকাতেই বুকে ছ্যাত্ করে ওঠে। এক প্যাচা অপলক দৃষ্টি তে যেন আমাকেই দেখছে।
ভয় আর ভালোলাগা র অদ্ভুত মিশেল আমি যেন তন্ময় হয়ে গেছি। তখনই দূর থেকে ভেসে আসে মাগরিবের আজানের সুর্। এ সুর পরিবেশ টা কে আরো যেন ঘনিয়ে আনে। এখন বাড়ি ফিরতে হবে কিন্তু মন যেতে চাইছে না।
বিকেলে প্রায় প্রতিদিনই মাঠে খেলাধূলা করে সময় কাটে। মাঝে মাঝে কয়েকজন না থাকায় খেলা হয় না। সেসব দিনে আমি একা একা বসি এ দালানের ছাদে। এটি প্রাইমারি শিক্ষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের পুরুষ হস্টেল। ছাদে খুব একটা কেউ আসে না। আমার বাড়ি এর পাশে হওয়ায় প্রায়ই আসি এখানে। যদিও এখানে আসা মানা কিন্তু নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি টান আর উপর থেকে পাখির চোখে অদ্ভুত সুন্দর কিছু দৃশ্য দেখার লোভে লুকিয়ে আসি। মফস্বল শহর হলেও এ যায়গায় যান্ত্রিকতা নেই। এ চুপচাপ প্রকৃতি মন কে যেন কোথায় নিয়ে যায়। বুঝার বয়স না হলেও আমি যেন অনুভব করতাম সে ভাললাগা।
যখন পুর্নিমা হত বাড়ি তখন সন্ধ্যায় লাল হয়ে থাকা চাদ টাকে দেখতাম দূর থেকে মনে হত যেন এ দালানের ছাদের ঠিক উপরেই তা ঝুলে আছে। মনে হত যদি ঐ সময় আমি ঐ ছাদের যেতে পারতাম ত টুক করে চাদটা ছুয়ে দেখতে পারতাম। আর এ আশাতেই আজ যেতে ইচ্ছে করছেনা ছাদ থেকে। এদিকে অন্ধকার ঘনিয়ে আসছে। ঐ পোড়া বাড়ির ঝোপের ভেতরের গাছ থেকে বাদুড় গুলো সশব্দে ডানা ঝাপটিয়ে উড়ে যাচ্ছে। কতগুলো আমার মাথার উপর দিয়ে উড়ে গেলো ঐ গ্রামের দিকে। ভয় পাওয়ার কথা কিন্তু কেন যেন ভয় লাগছে না। বাড়িতে দেরি করে গেলে যে মার খাব সেটাও ভুলে বসে আছি। সন্ধ্যায় আমি হারিকেন পরিষ্কার করি সেটাও আজ করিনি , মার খেলে খাব কিন্তু আজ আমি দেখব চাদ টা কে এখান থেকে। ছুতে না পারলেও হয়ত কাছথেকে দেখতে পাব। এসব ভাবছি আর আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি চাদের আশায়। অবশ্য জানিনা যে আজ পুর্নিমা কি না। অন্ধকার আরও গারো হচ্ছে কিন্তু চাদের দেখা নেই। হঠাৎ করেই আকাশে যেন জলে উঠতে শুরু করল অনেক গুলো তারা। একটি দুটি করে অনেক। হাজার লক্ষ কোটি। মুগ্ধ আমি। মনে হচ্ছে অন্ধকার মঞ্চে আমি নির্বাক হয়ে তাকিয়ে আছি আর তারারা সব দর্শক হয়ে আমাকে দেখছে। তারার জোসনায় বিলের পানি কেমন যেন লাগছে আর দুরের গ্রামটি কালো এক অবয়ব ধারন করে আছে। মশা গুলো যেন কানে বিউগল বাজাচ্ছে কয়েক টি হাতে পায়ে ধরেছে , হাত দিতেই রক্ত খেয়ে ঢোল হয়ে থাকা মশা গুলোর কয়েকটি মারা পরল। মশার যন্ত্রনা টা তেমন কিছু মনে হচ্ছে না শুধু এ দৃশ্য গুলোকে দেখছি।
এক সময় দুর থেকে কিছু শুনতে পেলাম। কে যেন আমাকে ডাকছে। ভাল করে কান পাততেই বুঝতে পারলাম আমাকে খুজতে এসেছে বাবা। হঠাৎ করেই ভয়ে আমি জমে যেতে শুরু করছি। কি হবে এখন? আমি বাবার ডাকের উত্তর না দিয়ে সিড়ি র ঘর পেরিয়ে অন্ধকার সিড়ি বেয়ে নামতে শুরু করলাম। দ্রুত নিচে নেমে সিড়ির সামনেই বাবার সাথে দেখা হল। আমার এক স্যার এর সাথে কথা বলছেন। আমাকে দেখে কিছু বললেন না। শুধু বললেন রাত হয়ে গেছে বাড়ি যাওনি কেন। আমি মাথা নিচু করে আছি। ঝাড়ি খাওয়ার সম্পুর্ন প্রস্তুতি নিয়ে আছি মনে মনে। কিন্তু কেন যেন আমাকে কিছু বললেন না। আমাকে সাথে নিয়ে স্যার এর কাছথেকে বিদায় নিয়ে হাটতে শুরু করলেন। শিক্ষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের মাঠ ধরে আমরা হাটছি. আমি চুপ। বাবা হঠাৎ করেই আকাশের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন
- বাজান তারা চেন?
আমি হতভম্ব। ভাবছি নিশ্চয়ই আমার পড়ার মাঝে আছে আর তাই বাবা জিজ্ঞেস করছেন।
আমি ভয়ে ভয়ে বললাম,
- না ত।
উনি মাঠের মাঝে দাড়িয়ে অসঙ্খ তারার মাঝে আমাকে কয়েকটি বুঝানোর চেষ্টা করলেন কিন্তু ভয়ে আমার সব তারা কে একই মনে হল। তারপর্। আবার হাটা শুরু। আমার মন তখন বুঝে গেছে আজ কোন কারনে হোক আমি মার খাচ্ছি না। সেই আনন্দ আর একটু আগে দেখে আসা দৃশ্য গুলো শুধু ভাসছে মনের ভেতর্। বাবা কে খুব ভয় পেলেও এখন মনে হচ্ছে ভয় পাই না।
২| ১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:২৬
সুমন কর বলেছেন: বানান ভুল আছে। আর লেখার মাঝে গ্যাপ বা প্যারা দিবেন। না হলে পড়তে অসুবিধা হয়। কিছুটা পড়ে আর পড়তে পাড়লাম না।
১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:১৪
আবু মান্নাফ খান বলেছেন: খুবই দুখিঃত ভাই। আমি ফোনে লেখার ট্রাই করেছি তাই এমন হয়েছে , আমার আগের পোস্ট গুলো দেখলে হয়ত বুঝতে পারবেন।
৩| ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১:২২
উৎকৃষ্টতম বন্ধু বলেছেন: ভাই লেখার মাঝে কি গোপন জিনিস ছিল জানি না। কিন্তু হলফ করে বলতে পারি একজন বাঙ্গালীকে একেবারে নস্টালজিক করে দেওয়ার মত সবকিছু ছিল। যতক্ষন পড়েছি, মনে হচ্ছিল, আমিই এই লেখার চরিত্রটি। কোনো প্যারা দিয়ে না লিখে ভালো করেছেন। পুরোপুরি ঘোরের মাঝে ছিলাম। অসাধারণ।
১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:৪৮
আবু মান্নাফ খান বলেছেন: ধন্যবাদ .
©somewhere in net ltd.
১|
১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:২২
মোঃ আব্দুস সালাম বলেছেন: মন খারাপ হয়ে গেল।