![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
১
পাকিস্তান নেভি র চার জন বাঙ্গালী নাবিক মনে মনে খুব অস্থির হয়ে আছেন। সময় ১৯৭১ এর মার্চ মাস। ২৫মার্চ এর কাল রাতের কিছু খবর তারা পেয়েছেন , কিন্তু সবই অস্পষ্ট। তবে এ ব্যাপারে তারা নিশ্চিত হয়েছেন যে ঢাকায় বেশ বড় ধরনের গনহত্যা হয়েছে। স্বাধীনতা ঘোষণার ব্যাপারে তারা নিশ্চিত হতে চেষ্টা করছেন। কিন্তু ইতমধ্যেই তাদের কে নজর বন্দী করা হয়েছে। তাদের সাধারণ কাজে বাধা বা গ্রেফতার না করলেও তারা বুঝতে পারছেন হয়ত খুব তারাতারি এমন কিছু ঘটতে যাচ্ছে। পাঞ্জাবি অফিসার বা পশ্চিম পাকিস্তানী অফিসার রা তাদের দিকে রহস্যময় দৃষ্টি তে তাকায় আর তাদের মাঝে লুকিয়ে কিছু নিয়ে আলাপ করে। এমন এক পরিস্তিতি তে তারা একটা খবর পেলেন রেডিওতে যে স্বাধীন বাংলা সরকার সঙ্গঠিত হয়েছে এবং ভারতে অস্থায়ী ভাবে তারা কাজ শুরু করেছে এ ছাড়া ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট সহ কিছু আর্মি অফিসার স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু করেছে। লক্ষ লক্ষ মানুষ শরনার্থী হয়ে ভারতে আশ্রয় নিচ্ছে। ঠিক এ সময়ই তারা আগে থেকে ঠিক করে রাখা এক যায়গায় মিলিত হলেন খাবার জন্য। খাবার টেবিলে তারা সেখান থেকে পালিয়ে দেশের জন্য যুদ্ধে যোগ দেয়ার কথা পাকাপাকি ভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেন। কিন্তু কাজ টা মোটেও সহজ ছিলনা। কারন তারা ছিলেন ফ্রান্স এ। পাকিস্তান নৌ বাহিনীর জন্য কেনা সাবমেরিন এর জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ আর সাবমেরিন নিয়ে আসার মিশনে ছিলেন। সেখান থেকে নানা ঘাত প্রতিঘাত পেরিয়ে ইউরোপ থেকে ইন্ডিয়ান কন্সুলেট এর সাহায্যে ভারতে আসতে সক্ষম হন। অবশেষে তারা মুক্তি যুদ্ধে অপারেশন জ্যাকপট এ অংশ নিয়ে খুবই বীরত্ব প্রদর্শন করেন, যার ফলে মুক্তি যুদ্ধের হিসাব নিকাশ পাল্টে স্বাধীনতা তরান্বিত হয়।
২.
আমরা চার জন মার্চেন্ট শিপের নাবিক বসে আছি মেস রুমে। জাহাজ এখন ইন্দোনেশিয়ার দক্ষিন সুমাত্রা দ্বীপ এর প্লাজু বন্দরে। আমি ইঞ্জিন ক্যাডেট , আমার পাশে ডেক ক্যাডেট আতিক , আর এক পাশে ইঞ্জিন ফিটার নাইম আর পাম্প ম্যান সাইফুদ্দীন খান। পাম্প ম্যান আমাকে বললেন , স্বার দেশের খবর শোনান। সবাই তখন জিজ্ঞাসু দৃষ্টি তে আমার দিকে তাকিয়ে। আমি ফোন থেকে অনলাইন এ বিভিন্ন পত্রিকার খবর পড়ে শোনাতে লাগলাম। কাদের মোল্লা র ফাসিঁ হয়েছে শুনে সবাই বেশ খুশি কিন্তু সবার কপালেই চিন্তার ভাজ। পরবর্তীতে যেসব অস্থিরতা হচ্ছে সেসব নিয়ে আমরা বেশ সঙ্কিত। পাম্প ম্যান আয়েশ করে করে একটা সিগারেট ধরিয়ে আবার আবার বললেন ,
- ছেলেটা আমার তিন মাস থেকে বাড়িতে। ফাইনাল পরীক্ষা টা হচ্ছে না। ওর পরীক্ষা হয়ে গেলে ও কিছু একটা করলে দেশে গিয়া বুড়া বুড়ি একটু আরাম করতাম।
সবাই একটু মজা করল তাকে নিয়ে। বুড়ির কথা মনে থাকে আপনার?
সে চুপ করেই কেমন যেন মন মরা হয়ে গেল। ফিটার নাইম ভাই বলল ,
- কি যে হবে ভাই আমাদের দেশের? আর ভাললাগে না। কি করা যায় বলত?
সবাই চুপ। কি করার আছে আমাদের? আমাদের মত সাগরের কজন মানুষ নিজের জীবনের মায়া না করে দেশের টানে চলে গিয়েছিল অথচ স্বাধীন দেশে আজ যে অরাজকতা সেটা সমাধানে আমাদের কোন কিছুই যেন করার নেই। জাহাজের ক্যাপ্টেন স্যার ও বাংলাদেশী , অফিসের বড় অফিসার ও বাংলাদেশী যারা খুব সুনামের সাথে দেশের বাইরে নিজেদের যোগ্যতায় বিশ্বের শিপিং ইন্ডাস্ট্রি অবদান রেখে চলেছেন। অথচ অন্যান্য দেশের খবরে যখন আমাদের দেশের এসব নোংরা খবর প্রকাশিত হয় সেসব দেশের মানুষের কাছে আমরা কোন জবাব দিতে পারি না। লজ্জায় ক্ষোভে মাথা নিচু হয়ে যায়।
ডেকে ক্যাডেট আতিক বলছিল , ভাই কিছুই কি করার নেই আমাদের?
ওর কথায় আমরা সবাই চুপ। প্রতিদিন প্রচন্ড পরিশ্রম করে আমরা বাঙ্গালী রা মাঝে মাঝেই অনেক কিছু রান্না করে মেস রুমে বাংলা গান ছেড়ে মায়ের কথা দেশের কথা ভাবি। না না স্বপ্ন দেখি দেশ কে নিয়ে , কিন্তু সব কিছু যেন কেমন অনিশ্চিত মনে হয়। আতিকের কথার উত্তরে বললাম ,
তোমার যে প্রশ্ন তা মনে হয় সব দেশপ্রেমিক মানুষের মনেই আছে। কিন্তু আমরা দিশেহারা, কোথায় কিভাবে কি করব আর কি হবে আমরা জানি না। আমরা যে কাজ করছি সেটাও দেশের জন্যই। আমরা আশাবাদি মানুষ বিশ্বাস করি সকল দেশের রানি এ দেশ। সমস্যার সমাধান একদিন হবেই। ততদিন দেশের অর্থনীতি কে আমরাই চালু রাখতে পারি , এও এক যুদ্ধ।
তার পরও আমাদের মন টা সান্তনা খুজেঁ পায় না।
বিক্ষুব্ধ সাগরে আমরা আমাদের মেধা , সামর্থ্য দিয়ে জাহাজ কে ভাসিয়ে নিয়ে যাই। অথচ মাঝ সাগরে যখন জোসনায় ভরে যায় মনের মাঝে বাজে "বাশ বাগানের মাথার উপর চাদঁ উঠেছে ঐ,
মা গো আমার শোলক বলা কাজলা দিদি কৈ?"
কম্পিউটার বা ডিভিডি প্লেয়ারে যখন গান বাজাই অজানতেই প্লে করি " সব কটা জানালা খুলে দাও না ....." তখন কেউ বিরক্ত হয়ে বলে না যে , আরে এ স্লো গান পাল্টাও। সবার চোখে উকি দেয় বাংলাদেশ।
খুব এলোমেলো লিখে ফেলছি আবেগে। আর আবেগ আসবেই না কেন? সারা পৃথিবীর সাগর মহাসাগর এর বুকে আমরা বাংলাদেশ বাংলা ভাষা কে সাথে নিয়ে ঘুরি। গহিন সাগরে বাজাই বাংলা কোন গান , কোন বন্দরে নেমে গর্বে বলি আমি বাংলাদেশী। সেই স্বাধীন দেশটার পবিত্র মাটিতে যখন দেখি কোন নরপশু আগুন দিয়ে মানুষ মারছে , যখন দেখি নিস্পাপ শিশু গুলি খেয়ে রাস্তায় নিথর হয়ে পরে আছে , শত শত মায়ের আহাজারির ছবি পত্রিকায় নির্বাক করে ছাপা হয় যা আমাদের কাছে নির্বাকই থেকে যায়। এত কিছু দেখে আবেগ কি আসবে না?
ঐ চার জন নাবিকের একমুহুর্তও লাগেনি দেশের জন্য সর্বোচ্চ ঝুকির সিদ্ধান্ত নিতে। লাগেনি কোন মুক্তিযোদ্ধার ও। কিন্তু আমাদের লাগছে। যাদের দেশ নিয়ে বেশি ভাবার কথা তাদের সময় লাগছে। কারন একটাই, তারা দেশ কে ভালোবাসে না।
২| ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:২৫
কালীদাস বলেছেন: কেমন আছেন? এখন কোথায়??
১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:৫৩
আবু মান্নাফ খান বলেছেন: এখন আছি দক্ষিন চীন সাগরে। আছি ভাই ভালই। অনেক দিন থেকে ব্যাস্ততার জন্য লিখতে পারিনি।
©somewhere in net ltd.
১|
১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ৮:১৪
মোঃ আব্দুস সালাম বলেছেন: ভাই ঐ চারজন বাঙ্গালীর কাছে অপশন ছিলই দুইটা। হয় পাকিস্থানের জেলে পচে মর। আর নাহয়। দেশে গিয়ে নিজের দেশের জন্য যুদ্ধ কর। তাই তাদের সিদ্ধান্ত নিতে একটু সহজ হয়ে ছিল। নিজ দেশে কিছু রাজাকার আল বদর ছারা সবাই ছিল তাদের আপন জন। কিন্তু আমাদের অবস্থাটা এখন ভিন্ন। আমরা মুক্তির কোন পথই খুজে পাচ্ছিনা। সে কারনেই ঝাপিয়ে পড়তে পারিনা(একান্তই আমার মত)।