নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সোজা কথা , সহজ করে বলি, সোজা পথে চলি

আবু মান্নাফ খান

সরল, সহজ, চিন্তার মানুষ

আবু মান্নাফ খান › বিস্তারিত পোস্টঃ

মালগাড়ি

১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:৪৯

আমরা তিন জন ছুটছি রেল লাইনের ঠিক বরাবর্। যেখানে রেলের পাথর গুলো শেষ হয়েছে ঠিক তার পাশেই সরু পায়ে হাটার রাস্তা। যদিও সেখানে দু একটি পাথর আছে তার পরও খালি পায়ে দৌড়তে সমস্যা হচ্ছে না। একটি মাল গাড়ি চলছে ঠিক আমাদের সামনে সামনেই। প্রায় শখানেক বগি নিয়ে ইঞ্জিন যেন মৃদু তালে চলছে। তার পরও সামনে স্টেশন থাকায় গতি কিছুটা কম। কিন্তু আমাদের কজন বালকের কাছে তা যেন বেশি মনে হচ্ছে। সেটা কোন ব্যাপার না। প্রায়ই আমরা এ কাজ করি।



লাল রঙ্গের বগি গুলো র দরজা লাগানো , সেগুলোতে ওঠা যায় না। কিন্তু একে বারে শেষে রথের মত কিন্তু নিচে খোলা পাটাতন দেয়া গার্ড এর বগিটি আমাদের লক্ষ। ওটাতে উঠে সামনের স্টেশনে নেমে যাওয়া , এই আমাদের একটা খেলা। মৃদু গতিতে পাটাতনে পা ঝুলিয়ে বসে আশপাশের চেনা ঘর বাড়ি, মাঠ, ফসলের ক্ষেত গুলো যেনো সিনেমার রিলের মত এক এক করে পার হয়ে যায়। আর যদি হঠাৎ আমাদের বয়সী চেনা কাউকে চোখে পরে ত চিতকার করে উঠি সবাই মিলে। আর সে আমাদের দিকে তাকিয়ে মন মরা হয়ে হাত নাড়ে।

অনেক রিস্কি কাজ এটি। চলন্ত গাড়িতে যেখানে উপরে ওঠার মত কোন হ্যান্ডেল নেই , শুধু খোলা পাটাতনে কোন রকমে লাফিয়ে উঠে বুক ঠেকিয়ে হাতের উপর ভর দিয়ে হাচরে পাচরে উঠে পরা। গার্ড আমাদের না ওঠার জন্য হম্বি তম্বি করে। লাঠি নিয়ে তেড়ে আসে কিন্তু আমাদের তাতে আরও উতসাহ বেড়ে যায়। আমরা জানি সে মার বে না।

আজকের ট্রেন টা একটু বেশি বড় মনে হচ্ছে। অনেক দূরে ইঞ্জিন হুইসেল দিচ্ছে আর আমরা দৌড়াচ্ছি , ঐ অবস্থায় সামনে তাকালে দেখা যায় যেন মস্ত এক লাল ঘর গুলো আশেপাশের ঘর বাড়ি মাঠ ফুড়ে এগিয়ে যাচ্ছে। প্রথমে রনি উঠে পরল। উঠেই আমার জন্য হাত বাড়িয়ে দিল। ওকে সরে যেতে বলে আমিও ওর পাশে যায়গা করে নিয়ে উঠে পরলাম। পিছনে ছিল লিমন। লম্বা লিকলিকে ও আমার পরপরেই উঠে এল। তিন জনইহাপাচ্ছি। আর ওদিকে ট্রেনের গার্ড বকে চলেছে।

- মরবি তোরা। আর বাপ মায়ের বুক খালি করবি। আর যদি কোন দিন দেখি তাইলে মেরে পিঠের চামরা ছিলে নেব।

গার্ড এর কথা গুলো যেন , ট্রেনের শব্দের সাথেই মিলিয়ে যায়। বিপদের কোন চিন্তাই আমাদের মাথায় থাকে না। বিপদ যে কখনো হয়নি এমন না। কখনো দৌড়তে গিয়ে পাথরে লেগে পায়ের নখ ফেটে গেছে, কখনো বা পরে গিয়ে হাত পা ছড়ে গেছে। এতে আমাদের কিছু মনে হয় না। কারন একটু আধটু কাটা ছেড়া তখন আমাদের প্রতিদিন ভাত খাওয়ার মতই ঘটনা। আবার ছড়ে গেলে কেউ যদি ব্যান্ডেজ করে স্কুলে যায় মেয়েরা কেমন এক মায়ার দৃষ্টি তে তাকায়। সেটাতে যে ব্যান্ডেজ করে গেছে সে যেন গর্ব অনুভব করে আর যাদের কাটা ছেড়া নেই তারা মনে মনে বলে তার যেন একটু এমন হয়।



সে যাই হোক। আমরা কিছুটা শান্ত হয়ে আশপাশ দেখছি। আর সবাই ট্রেনের ছন্দময় দুলুনির সাথে দুলছি। একটু পরেই দুপাশের গ্রাম শেষ করে একটি বিলের উপর চলে আসে ট্রেন টি। দুপাশে বিল মাঝদিয়ে উচুঁ বাধের মত লাইন। বিলের পানি তখন প্রায় শুকিয়ে এসেছে। উচুঁ জমির ধান গাছগুলো সবুজ হয়ে আছে নীল হয়ে থাকা বিলের পানির মাঝে। আমরা ট্রেনের একেবারে শেষে। তাই দৃশ্য গুলো যখন শুরু হয় তখন অনেক সময় নিয়ে চোখের সামনে থাকে। আর খোলা পাটাতনের কারনে দৃষ্টি প্রসারিত হয় দৃষ্টির শেষ সীমা পর্যন্ত। বিলের মাঝামাঝিতে একটা লোহার বৃজ। বেশ বড় সেতু এটি। লম্বা ট্রেন হওয়ায় ট্রেনের সামনের অংশ সেতুর উপর অনেক আগেই উঠেছে। ট্রেনের ছন্দময় শব্দ গুলো যেনো সেতুর নিচে পানিতে প্রতিধ্বনি হয়ে আলাদা এক সুর দেয়। আর প্রায় সন্ধ্যা হয়ে আসায় অস্তগামী সূর্য লাল হয়ে বিলের পানিকে নীল থেকে লাল আভা দিয়ে দেয়। তার মাঝে সবুজ ধানের ক্ষেত অসাধারন এক দৃশ্যে রূপ দেয়। আমরা তিনজন বন্ধু মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে দেখি। আর সেতু টি আসলে প্রতিবারই আমরা আলোচনা করি বন্যার সময় চলন্ত ট্রেন থেকে কি করে এই সেতুর নিচে লাফ দেয়া যায়। এমনি পানি বাড়লে সেতুর উপর থেকে লাফ দিলেও ট্রেন থেকে কখন লাফ দেয়া হয়নি।



বিল পার হয়ে আবার গ্রাম শুরু হয়। লাইনের পাশদিয়ে বুনো কিছু গাছ। চলন্ত ট্রেন থেকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে আমরা ওগুলো ধরতে থাকি। সপাং সপাং করে হাতে বেতের মত বাড়ি বসালেও যেন সেটা আমাদের ভালই লাগে। আর বেশিক্ষন নেই আমাদের সামনের স্টেশনের্। স্টেশনের আউট সিগনাল ইতমধ্যে পার হয়ে এসেছি। ইঞ্জিন মনে হয় স্টেশনের কাছাকাছি , হুইসেল দিচ্ছে বার বার্।

দেখতে দেখতে আমরা একনম্বর রেল গেট পেরিয়ে এসেছি। কিন্তু হঠাৎ করেই আমাদের তিনজন চমকে উঠি। ট্রেনের গতি কমছে না কেন? ট্রেন কি থামবে না স্টেশনে? প্রায় মৃতু্য হতে পারে এমন রিস্ক নিয়ে ট্রেন এ উঠতে আমাদের যে ভয় না লাগে তার থেকে বেশি ভয় লাগছে ট্রেন যদি না থামে ত আমরা কি করব? এদিকে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে। একটু পর মাগরিবের আজান দেবে। মাগরিবের আজানের পরপর বাড়িতে যেতে না পারলে খবর আছে। মার ত মার তার সাথে ঝাড়ি হবে ফ্রি। কেউ কিছু বুঝতে পারছি না। কি করব? কৈ থামবে এ ট্রেন জানিনা। ভয়ে আর বাতাসে শীত করতে শুরু করেছে। আমাদের পরনে হাফ প্যান্ট আর গেঞ্জি। কোন টাকাও নেই। মনে হচ্ছে ভয়ে কেদে দেব। কিন্তু কান্নাও আসছে না। এর মাঝে সামনে তাকিয়ে দেখছি ট্রেনের ইঞ্জিন স্টেশন পেরিয়ে একই গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। একই সাথে মাগরিবের আজান ভেসে এল অনেক গুলো মসজিদ থেকে। ইঞ্জিনের হেড লাইটের আলো সামনের ঘনিয়ে আসা অন্ধকার কে সরিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে আর আমাদের মনে হচ্ছে আমরা অন্ধকারে ঢুকে যাচ্ছি। ট্রেনের গার্ড এর গার্ড এর বগি মানে আমরা যেখানে আছি সেটি যখন স্টেশন ছাড়িয়ে যেতে শুরু করল তখন মনে হল যেন ট্রেনের শব্দের থেকে আমাদের বুকের দুম দুম আওয়াজ বেশি জোরে বাজছে।



স্টেশন ছাড়িয়ে একটু সামনে একটা খোলা যায়গা। লাইনের ঠিক নিচের যায়গাটি বেশ সমতল আর পাথরও কম মনে হচ্ছিল। কিছু বুঝে ওঠার আগেই দেখি লিমন লাফ দিয়ে চিল্লায়ে উঠল,

- লাফ দে ...

দেখলাম ও হুমড়ি খেয়ে পরল। আর কিছু চিন্তা করলাম না। লাফিয়ে পরলাম। আমার দেখাদেখি রনিও লাফ দিয়েছে। আমি উঠে হাত পা ঝারতে ঝারতে দেখি ওরাও উঠে হাত পা ঝারছে। তখন আর সময় নেই। আমাদের এই মাগরিবের নামাজ শেষ হতে হতেই বাড়িতে পৌছাতে হবে। হাত পা ঝেড়ে তিন জনই ছুটতে শুরু করলাম।



বাড়িতে গিয়ে হাত মুখ ধোয়ার সময় বুঝতে পারলাম হাটু আর হাতের তালু ছড়ে গেছে। তা যাক তাও ভালো বাড়িতে পৌছাতে পেরেছি।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:২৪

বাক স্বাধীনতা বলেছেন: এটাই ছিল?

১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:২৯

আবু মান্নাফ খান বলেছেন: কি ছিল?

২| ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ৭:৫৬

মোঃ আব্দুস সালাম বলেছেন: কোন কমেন্ট নাই। যাদের বাড়ির পাশে রেললাইন আছে তাদের সবার কমন ঘটনা। যদিও আমার না। আমি কল্পনায় অনেক উঠলেও বাস্তবে কখনও এমন করিনি।

১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ৯:৫৩

আবু মান্নাফ খান বলেছেন: কমেন্ট এ কি বা আসে যায় ভাই? হাটু ভাঙ্গা লেখা দিয়ে আপনাদের যে ভালবাসা পেয়েছি তা দিয়েই ত একজীবন পার হয়ে যাবে

৩| ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:০৮

মোঃ আব্দুস সালাম বলেছেন: কিন্তু আপনার লেখার ধার কমে যাচ্ছে। মনে হয় কাজের চাপে আর এই দিকে সময় দিতে পারছেন না। তাইনা?

১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:৩৯

আবু মান্নাফ খান বলেছেন: কথা সত্য। তবে আরো একটা কারন আছে। বলব এক সময়

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.