নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সোজা কথা , সহজ করে বলি, সোজা পথে চলি

আবু মান্নাফ খান

সরল, সহজ, চিন্তার মানুষ

আবু মান্নাফ খান › বিস্তারিত পোস্টঃ

কিছু স্বপ্ন কিছু কথা

০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ১১:৪৪

লেখাটা কোন আত্ম প্রচার মূলক লেখা নয়, এটি লিখছি সমমনা বা সমভাবনার মানুষদের সাথে যোগাযোগ বাড়ানো, আইডিয়া শেয়ার আর আলোচনার মাধ্যমে আমাদের কাজগুলো কে আরো বেগবান করার অভিপ্রায়ে।

প্রথমেই বলি আমি কোন যায়গার কোন হরিদাস পাল নই যে আমার একার কথায় একদিনে সবকিছু ঠিকঠাক হয়ে যাবে। দেশের একজন নাগরিক হিসেবে আমি মনে করি আমাদের সবারই নিজ নিজ অবস্থান থেকে সবারই কিছু দায়িত্ব্য আছে। সেখান থেকেই আমাদের কিছু প্রচেষ্টা।



শুরুর কথাঃ

আমরা কজন বন্ধু প্রায়ই সন্ধ্যার পরে আড্ডা দেই আমাদের এলাকার মোটামুটি কিছুটা নির্জন স্থানে। এ বয়সে সবাই টুকটাক সিগারেট খায় কিন্তু লুকিয়ে, তাই একটু আড়াল খোজার চেষ্টা। আড্ডার প্রসঙ্গ হয় সমকালিন কোন ঘটনা , রাজনীতি, খেলা বা যে কোন কিছু। মাঝে মাঝে আমাদের স্বপ্নের ডাল পালা ছড়িয়ে দেই আমাদের দেশকে নিয়ে। কিন্তু স্বপ্ন তার ডাল বিস্তার করতেই অসহায়ত্ব গ্রাস করে। কি করব আমরা? এক সময় পহেলা বৈশাখ বা বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবসে এলাকায় নানা আয়োজন থাকত। মাঠে ফুটবল, ক্রিকেট সহ ছোট ছোট মাঠে পর্যন্ত খেলার অন্ত ছিল না। অথচ চোখের সামনে সবকিছু যেন ফাকা হয়ে গেল। মাঠে খেলা নেই, থাকলেও তা না থাকার মত। ছেলেপেলে রা নেশায় আশক্ত। অবস্থা এমন পর্যায়ে যে কে কি খেয়ে আসল তাও প্রকাশ করে অবলিলায়। শক্তিশালী রাজনৈতিক দলের নেতারা সেই সমস্ত ছেলেদের আরও আপন করে নিচ্ছে তাদের উদ্দেশ্য হাসিল করার জন্য। সমস্যা গুলো আশা করি আর বিষদ বর্ণনা দেয়ার প্রয়োজন নেই।

আমাদের এমন একদিনের আড্ডার কয়েকদিন পরেই ছিল পহেলা বৈশাখ। একজন প্রস্তাব করল এখানে পহেলা বৈশাখে ত কিছুই হয় না, চল কিছু একটা করি। এই থেকেই শুরু। আমরা চিন্তা করলাম একটা বাউল গানের কনসার্ট আর সকালে একটা পান্থা উৎসব করব। ব্যাপারটা যত ভালোভাবে আমরা করতে পারি সেই চেষ্টায় আমরা লেগে পরলাম। একটা নাম দিলাম আমাদের সদ্য জন্ম নেয়া সঙ্গঠনের। THE ALTERNATIVE YOUTH FORUM, SONATOLA , BOGRA. নামের অর্থ আমরা বিকল্প যূব সমাজ বা এইটাইপ কিছু চিন্তা করেছি। সে যাইহোক ফাকা পকেটে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে নেমে হাত পাতলাম আমাদের পরিচিত অনেকের কাছে। কেউ সাড়া দিল উতসাহ দিল কেউবা নানা কথা শুনিয়ে দিল। কিন্তু আমাদের উতসাহ তখন তুঙ্গে। দমানোর মত কিছু ছিল না আমাদের। সব কিছু রেডি করে আমরা সফল ভাবে অনুষ্ঠান টি করতে সক্ষম হলাম। অনেকদিন পর বাড়ির মেয়েরাও স্বস্তিতে কিছুটা আনন্দ করার যায়গা পেয়েছিল। এটাই আমাদের বড় পাওয়া।

ব্লাড গ্রুপিং ঃ

এ অনুষ্ঠান সফল করার পর আমরা চিন্তা করলাম যেহেতু একটা প্রতিষ্ঠান আমরা গড়েতুলেছি সেহেতু আমাদের বসে থাকলে চলবে না। আরো কিছু করা দরকার। এক বন্ধু পড়ে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এ। ও বলল যে কম খরচে আমরা ছাত্র ছাত্রীদের রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা করতে পারি। আমাদের কয়েকজন শীক্ষানবিশ ডাঃ আর মেডিকেল টেকনলজির বন্ধুদের সহায়তায় আমরা

“ KNOW YOUR BLOOD GROUP, BE SAFE” স্লোগানে শুরু করলাম রক্তের গ্রুপ সনাক্তকরন প্রোগ্রাম। শুরুতে বাধনের বগুড়া ইউনিট আমাদের সহযোগিতা করে। পরে আমরা নিজেরাই আমাদের এলাকার এ পর্যন্ত চারটি বিদ্যালয়ে প্রায় ২৫০০ ছাত্র ছাত্রীর রক্তের গ্রুপ সফল ভাবে সনাক্তকরি। এবং সেখানে প্রায় ৫০ জন নেগেটিভ ব্লাড গ্রুপ আমরা পাই।

এ ব্লাড গ্রুপিং করতে গিয়ে আমাদের এলাকার সূর্যের হাসি ক্লিনিকের বাধার মুখে পরতে হয়। তারা নানা ভাবে আমাদের কে বিপদে ফেলার চেষ্টা করে কিন্তু আমাদের সৎ উদ্দেশ্যের কাছে তারা টিকতে পারেনি। আমাদের এ প্রোগ্রামটি এখনও চালু আছে। আমাদের লক্ষ থানার সবগুলো বিদ্যালয়ে বিশেষ করে সুবিধা বঞ্চিত গ্রাম এলাকায় ছাত্র ছাত্রী দের রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা করা ও রক্তদানে সক্ষম এমন মানুষদের রক্তদানে উৎসাহী করা।

বৃক্ষ রোপণ ও সৌন্দর্য বর্ধনঃ

আমার এক বন্ধু একদিন ঢাকা শহরের এক রাস্তায় হাটতে হাটতে বলেছিল “ দোস্ত ঢাকা শহরের প্রতিটা রাস্তার পাশে যদি কৃষ্ণচূড়া র গাছ লাগানো হয় তাহলে কেমন হবে বলত?” কথাটা অনেক কথার মাঝে আমার মনে বসে গিয়েছিল। আমি আমার সঙ্গঠনের সদস্যদের সাথে ব্যাপারটা শেয়ার করার পর সবাই রাজি হয়েগেল যে আমাদের এলাকার একটা রাস্তার দু পাশে শুধু কৃষ্ণচূড়ার গাছ লাগানো হবে। এক নার্সারির মালিকের সাথে কথা বলার পর সে আমাদের ১০০ গাছ দেয়ার কথা জানালো বিনা পয়সায়। আমরা নিজেরা গাছের জন্য খোড়া তৈরি করলাম। এলাকার অনেক পরিচিত মানুষ আমাদের রাস্তার পাশে এমন খোঁড়াখুঁড়ি করতে দেখে অবাক হয়ে চেয়ে থাকত। কিন্তু এ কাজের মজা অন্যরকম। অবশেষে আমরা ৬০টি কৃষ্ণচূড়া প্রায় ১.৫ কিমি রাস্তার দুশারে লাগাই। এখন সব মিলিয়ে টিকে আছে ৪০ টির মত। আমরা অপেক্ষায় আছি বসন্তের। লালে লাল হবে এ রাস্তা টি। আর আমাদের লক্ষ আগামী বছর আরো কয়েকটি রাস্তার পাশে শুধু কৃষ্ণচূড়া লাগানো। কেমন হবে সে রাস্তা গুলো তা ভাবনার দায়িত্ব্য আপনাদের কল্পনার উপর ছেড়ে দিলাম।



লাইব্রেরিঃ

আমরা প্রথমে একটি অফিস নেই আমাদেরে এক সদস্যের একটি দোকান ভাড়ায় নিয়ে। যদিয় ভাড়া নাম মাত্র। কিন্তু আমাদের একটু কৌশলী হতে হল। কারন এসমস্ত প্রতিষ্ঠানের অফিস খুব অল্পদিনেই আমরা নেশার আখড়া হতে দেখেছি। আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম অফিস না করে সেখানে আমরা একটা লাইব্রেরী করব। ব্যাপারটা সবাই পছন্দ করল। কিন্তু সমস্যা হল লাইব্রেরী র র‍্যাক বই টেবিল এসব কৈ পাব? সব সদস্যই এগিয়ে আসল। কেউ র‍্যাক , কেউ বাড়ির পুরানা বই কেউ টেবিল দিয়ে মোটামুটি একটা লাইব্রেরী দাড় করালাম। এলাকার গুনীজন দের দিয়ে উদ্বোধন করিয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে লাইব্রেরির কার্যক্রম শুরু করলাম। এখন অনেকেই আসে সকালের পেপার পড়ার জন্য বা বই খুলে একটু পড়ার জন্য। লাইব্রেরির সদস্য এখন ২০ জনের মত। আমাদের কে সহযোগিতা করতে আমাদের এক আঙ্কেল বেশ কিছু টাকা দিলেন । তা দিয়ে নতুন র‍্যাক বানানো হল। টেবিল বানানো হল। এখন বেশ সুন্দর একটা পরিবেশ তৈরি করতে আমরা সক্ষম হয়েছি। আমরা হাত পাতছি অনেকের কাছে আমাদের কিছু বই দেয়ার জন্য। প্রায় ৩০০ বই সংরহ করতে আমরা সক্ষম হয়েছি। কিন্তু এটা খুবই কম। চেষ্টা করছি বই এর সংখ্যা বাড়ানোর।



শীতবস্ত্রঃ

আমরা শীতার্তদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য মানুষের পুরোন কাপড় সংগ্রহ শুরু করলাম। আর কয়েকদিন আগে সেসব কিছু মানুষের মাঝে আমরা দিয়েছি। আমরা কোন অনুষ্ঠান করে নয় , চেষ্টা করেছি তাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাদের মাঝে পৌছে দিতে।

আমাদের এসব কাজে অনেক বাধার মুখে পড়তে হয়েছে অনেক সময়। সাহায্যের জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে একদিন আমরা যাই খুব ভয়ে ভয়ে। কিন্তু সব শুনে তিনি আমাদের খুব উৎসাহিত করেন। উনি কথা দেন সোনাতলা উপজেলা প্রশাসন আমাদের পাশে থাকবে। এটা আমাদের উৎসাহ আরো বাড়িয়ে দেয়।

এছাড়াও আমরা আরও কিছু কাজ হাতে নিয়েছি,

১। প্রতি মাসে উন্মুক্ত বিজ্ঞান বক্তৃতার।

২। সামাজিক কাজে তরুণ প্রজন্ম কে সংশ্লিষ্ট করতে কিছু ক্যাম্পেইন।

৩। খেলাধুলা র একটি প্রাতিষ্ঠানিক প্লাটফর্ম তৈরি।

৪। সুস্থ বিনোদন এর ব্যাবস্থা।

৫। ছাত্র ছাত্রীদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করতে কাউন্সিলিং।

৬। সাধারন মানুষদের সচেতনতা তৈরি।

ইত্যাদি।



আমার পর্যালোচনাঃ

আমরা কাজ গুলো শুরু করেছি খুবই সাধারন ভাবে। সিরিয়াসলি করেছি কিন্তু কখন চাপ নেইনি। আমরা চেষ্টা করেছি শুধু নিজেরা নয় আশেপাশের মানুষদের সাথে নিয়ে কাজ গুলো করতে। আর এভাবেই আমরা কাজ গুলো এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। আমরা সবার সাথে সহনশীল আচরণ এর মাধ্যমে কৌশলী হতে চেষ্টা করেছি। আমরা বাংলাদেশ কে বুকে ধারন করে এগিয়ে যাওয়ার সাহস করেছি। ব্যাক্তিগত ভাবে বিভিন্ন দেশ ঘুরে দেখে আমার সবসময়ই মনে হয় সবাই পারলে আমরা কেন পারব না? এ সুন্দর দেশটা কে সমৃদ্ধ করতে ত অন্য কেউ এগিয়ে আসবে না। আমাদেরকেই এগিয়ে আসতে হবে। নিজ নিজ অবস্থান থেকে ছোট ছোট কাজের মাধ্যমে সব অন্যায়, অসুন্দর আর হিংসা কে জয় করতে হবে।

আমি আশা করব যারা এসব কাজের সাথে জড়িত আছেন তারা তাদের আইডিয়া গুলো শেয়ার করবেন। সমালোচোনা আলোচনার মাধ্যমে আমরা একটা নেট ওয়ার্ক তৈরি করতে পারলে আমাদের কাজ গুলো আরও সহজে এগিয়ে নিতে পারব।



আমাদের ফেসবুক গ্রুপ লিঙ্ক

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১০:০৪

হায়দার সুমন বলেছেন: egie zak tomader songothon notun alor pothe

২| ০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১০:০৪

হায়দার সুমন বলেছেন: egie zak tomader songothon notun alor pothe

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.