নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পুরো নাম মাহমুদুল হাসান ইমরোজ, ঢাকায় একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের প্রভাষক, ছোটবেলা থেকে খুব অল্পতেই তুষ্ট,কারো উপর অনধিকার চর্চা থেকে নিজেকে গুটিয়ে রাখতাম এখনও তেমনই আছি, কবিতা ভালোবাসি, কবিতার উপর প্রচণ্ড আবেগ ভালোবাসা......কবিতার সাথেই থাকতে চাই

মাহমুদ আল ইমরোজ

সাধারণ মানুষ তাই ভাবনাগুলো সাধারণ

মাহমুদ আল ইমরোজ › বিস্তারিত পোস্টঃ

সাবমেরিনে ভ্রমণ

০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ২:৩৪



(গল্পটি কল্প-না, শিল্পহীন রম্যরচনা)

সবেমাত্র তিড়িংবিড়িং বয়সে পৌঁছলাম। নতুন কিছু শেখার আনন্দে অনেকেই না কি খেই ধরে রাখতে পারে না। যেমন এক বড় ভাই ছোটবেলায় নানাবাড়ি গিয়ে সাইকেল চালানো শিখে, দাদাবাড়িতে তো এটি করে দেখাতে হবে-না হলে যে এই চালানো শিখাটা পুরোই মাটি হয়ে যাবে।

একদিন কোনো এক আত্মীয় ছোট সাইকেলে করে দাদাবাড়িতে এলো। বড়ভাইকে ঠেকায় কে? মনে হয় এই সুযোগের অপেক্ষায়ই তিনি ছিলেন। আজকালের কারো জন্য যেমন অপেক্ষা করছেন,তখনও এটির জন্য তেমন ই অপেক্ষা করতেন। এবার প্রদর্শনী সাইকেল চালানোর। ভাই আমার “চল চল চল ঊর্ধ্ব গগণে বাজে মাদল, নিম্নে উতলা ধরণী তল” লাইনগুলো প্রচণ্ড ভালোবাসেন। সেখান থেকেই আত্মবিশ্বাসের মাত্রাটা বলতে গেলে প্রায় পাকাপাকি। তিনি সাইকেলে উঠলেন, তাকে চালিয়ে দেখাতেই হবে। আসলে তাই, আমরাও এরকম ছোটবেলার কিছু কিছু অর্জনের স্বীকৃতি চাইতে প্রত্যক্ষদর্শীর দিকে তাকিয়ে থাকতাম। হাততালি অথবা বাহবাতেই মন পুরে যেত, রসগোল্লার দিকে আর হাত বাড়াতাম না। নানাবাড়ির অর্জন দাদাবাড়িতে অথবা দাদাবাড়ির অর্জন নানাবাড়িতে এসে প্রদর্শনীর চেষ্টা করতাম, মুখে হোক বা কাজে। ভাইয়ের পদযুগল এবার সাইকেলের প্যাডেলে। বাইক স্টার্ট দেওয়ার মতোই “চল চল চল” গতিতে সম্মুখপানে নিরন্তর এগিয়ে চলছেন। হ্যাঁ, তিনি চলছেন ই। কিন্তু এই ‘চলনে’ কে কা-কে চালায়, সেটাই মূখ্য বিষয় ছিল। তিনি কি সত্যি সাইকেল চালাচ্ছিলেন, না-কি সাইকেল তাকে চালাচ্ছিল, এটা নিয়ে এখনও প্রত্যক্ষদর্শী বিশ্লেষকদের যেকোনো চা এর আড্ডা উষ্ণতার স্কেলে তুঙ্গে উঠে যায়। পরিসমাপ্তিটাও বেশ ভালোই হয়, চা য়ের সাথে শরবত ফ্রি। দু চুমুক চা, বাকি দু চুমুক শরবত, মন্দ কী! আসলে ‘কথা বৃক্ষের মতো অনেক ডাল পালা বিশিষ্ট’, বাড়তে দিলেই বাড়ে। আবার বলা যায় সিরিয়াল দেখার নেশার মতো, সিকোয়েন্স এ আটকে পড়ে আমাদের কারো কারো অন্যসব বিষয় গৌণ হয়ে যায়। জেন্ডার ডিসক্রিমিনেশন আর না-ই করলাম।

সাইকেল থেকে চা য়ের রাজ্যে চলে এসেছি। যাহোক ফিরে যেহেতু যেতেই হবে সাইকেলে যাবো না, আমি সাবমেরিনে যাব। সমস্যা কী! কথার রাজ্যে সব কিছুতেই চড়া যায়, আলোর গতিতেও সব জায়গায় যাওয়া যায়। আমি সাবমেরিনেই যাবো, কেউ পাশে থাকুক আর না ই থাকুক। তবে ভাইয়ের সাইকেলটা মেরামত করে যাই, ভাইয়ের সাইকেলটা এখন খুব দরকার হবে। ইয়ে টিয়ে হইছে তো একটু আধটু না নিয়ে ঘুরলে কী হয়! তবে কিছু বারণ আছে, ঐ দিন যেমন গভীর পিপাসার্ত সাইকেল আধাজল খাওয়া আরোহীকে নিয়ে পুকুরের পুরো জলে নিজেদের সিক্ত করেছিল, আজকে কিন্তু সেটার রিহার্সালের সুযোগ নেই। আজকালের সাইকেল কিন্তু শুধু প্যাডেল ঘুরিয়েই চলে না, রিমোট কন্ট্রোলার দিয়েও চালানো যায়। এতে সাইকেল কথা না শুনলেও আরোহীর কিন্তু খুব কিছু একটা করার সুযোগ কম। কারণ, জনাব ভাবি। ভাই-যে জলের উপর দিয়ে সাইকেল চালানোর চেষ্টা করেছিল, এটা আমরা ভাবিকে যেমন করেই হোক বুঝানোর চেষ্টা করবো। আরে ভাই, সাইকেল কি শুধু মাটিতেই চলবে, সাঁতরানোর অধিকার কি সাইকেলের নেই? অবশ্যই আছে। না হলে সাইকেল কেন পুকুরে যাবে?

তারপর, প্রত্যক্ষদর্শী মুরুব্বীরা এবার চিকিৎসকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হলেন। টাওয়েল, গামছা, স্যাভলন, ব্যান্ডেজ ইত্যাদি ইত্যাদি যে যেভাবে পারে ভাইয়ের মাথায় প্যাচিয়ে দিতে লাগল। কী হয়েছে, সেটা বোধহয় আর বলার দরকার হবে না; সিরিয়ালের সিকোয়েন্স এর মতো বুঝে নিতে পারেন। কারণ আমার হাতে সময় খুবই কম। বলতে গিয়ে সাবমেরিন ফেল করতে পারি, তখন কী হবে? ভাইয়ের সাইকেল দিয়ে কি আর সাবমেরিনে চড়ার মজা পাওয়া যাবে?

তিড়িংবিড়িং বয়স দিয়েই কিন্তু গল্পটা শুরু করেছিলাম। আরেকটু সহজ করে বলি, কারণ শৈশবের শব্দগুলো অনেকটা মোলায়েম বা সুমিষ্ট হতে হয়। ‘হাঁটিহাঁটি পা পা, যেথা খুশি সেথা যা’ আমার মনে হয় অযথার্থ হবে না। হাঁটতে হাঁটতে দিল্লী জয় করে ফেলতাম, এখানে সেখানে, এটির উপরে সেটির উপরে, শুধুই হাঁটাহাঁটি। দিল্লী, আগ্রা যতদূরেই যেতাম মায়ের চোখের আড়াল হওয়ার সাধ্য ছিলো না। মা খুব বেশি টেনসনে থাকতেন ওই সময়, যেটা সবার বেলায়ই হয়।

একদিন সুযোগ এসে গেলো, বেরিয়ে পড়লাম ঘর ছেড়ে। ‘হাট্টিমা টিম টিম, তারা মাঠে পাড়ে ডিম’। পুরো উঠোন-মাঠ পেরিয়ে এলাম কিন্তু ডিম পেলাম না। সাবমেরিনে ক্ষিধে পেলে কী খাবো! মনে হয় একটু খারাপই লেগেছিল। মাঠ পেরিয়েই জলরাশির আস্তানা, বর্ষা জলদানে একটুও কার্পণ্য করেনি। থইথই চারিদিক। টইটুম্বুর জলের কোলে সাবমেরিন আমাকে ডাকছে, তার আকর্ষণে মনটা আপ্লুত হয়ে উঠল। আমার জন্যই মনে হয় এইটা রয়ে গেছে। সাবমেরিনটা বাঁশের কঞ্চি দিয়ে আটকানো। তারপরেই শুকনো সুপারি পাতা দিয়ে ভিন্নরকমে সাজানো গেইট সদৃশ বেষ্টনী, আগেকার দিনে ঘাটগুলো এভাবেই ঘোমটা দিয়ে রাখা হতো। মেঘ আর রোদের লুকোচুরি খেলায় বর্তমানের বিজলী বাতির মতোই আলোসব গেইটের উপর চমকে উঠত। দুপুরের নির্জীব প্রকৃতি, সুনসান নিরবতায় আমি যাত্রা শুরু করলাম। সাবমেরিনে যাত্রা, বিশেষ যানে করে যাব তাই সর্তকতার মাত্রাটা একটু আলাদা ছিল। এক পা-দু’পা-তিন পা করে উঠে পড়লাম সাবমেরিনে। যেই যান শুধু আমার জন্যই অপেক্ষায় ছিল সেটা আমাকে পেলে আর দেরি করবে কেন? একটুও দেরি করলোনা, ছেড়ে দিল। সাবমেরিনে আমি জলের গহীনে যেতে লাগলাম, জলরাশি ভেদ করে সাবমেরিন এগিয়ে চলছে। অভ্যন্তরে প্রচণ্ড আলোড়ন সুনসান নীরবতাকে উত্তেজিত করে তুলল।
জীবনের শুরুতেই সাবমেরিনে চড়ে ভ্রমণে গিয়েছিলাম। তাই অতি আপ্লুত হয়ে আর বলতে পারছি না, বাকিটা আমার মায়ের মুখেই শোনা যাক,বরং এতে আমি বেশ তৃপ্তি পাই।

বাঁছাধনকে না পেয়ে আঁতকে উঠেন মা। কোনো প্রত্যুত্তর না পেয়ে উঠোন পেরিয়ে পুকুর ঘাটের দিকে এক দৌঁড়। ধুরুধুরু মনে বারবার খোদাকে ডাকছেন। ঘাটে বিছানো কাঠের লম্বা টুকরোগুলো গেলো কই! এসব হিসাব নিকাশের আগেই মায়ের নজরে এলো জলের অভ্যন্তরে কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে। লেশহীন ভাবনা রেখে মুহূর্তেই মা নেমে পড়লেন পুকুরে, একটানেই উঠিয়ে আনলেন সাবমেরিন বিজয়ীকে। সাবমেরিন থেকে ফিরে এলাম মায়ের কোলে। অভিযানে মন কতটুকু ভরেছে জানি না, তবে পেট যে আর খালি ছিলো না, একথা চোখবুজে যে কেউ আন্দাজ করতে পারে। সাবমেরিন ডুবে থাকলেও মায়ের আলাপে মাঝে মাঝে ভেসে ওঠে স্মৃতির সাবমেরিন……

(মাহমুদুল হাসান ইমরোজ) ০৮/০৯/১৬

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ৩:০৮

তাজবীর আহােমদ খান বলেছেন: শৈশব কাল,আহা সেতো ছিলো অম্রিত।ভালো লাগলো ভাই

০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ৩:১৬

মাহমুদ আল ইমরোজ বলেছেন: সত্যি শৈশবে যদি ফিরে যাওয়া যতো....ধন্যবাদ তাজবীর ভাই, অনুপ্রাণিত.....

২| ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৫:৫১

মোঃ আক্তারুজ্জামান ভূঞা বলেছেন: ভাগ্যিস! ডুবে মরার আগেই মা টের পেয়েছিল।

১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১২:০২

মাহমুদ আল ইমরোজ বলেছেন: মায়ের মন বলে কথা....

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.