নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বেলাশেষে ক্লান্ত-তৃষ্ণার্ত পথিকের ন্যায় আসলাম সামুর তীরে, রেখে যেতে চাই কিছু অবিস্মরণীয় কীর্তি । পারি না আর না পারি, চেষ্ঠার ত্রুটি রাখবো না, এই ওয়াদা করছি ।

মোশারফ হোসেন ০০৭

একজন শৌখিন লেখক আমি, আবার কবিও বলা যেতে পারে । যখন যা ভালো লাগে তাই লিখি ।

মোশারফ হোসেন ০০৭ › বিস্তারিত পোস্টঃ

।। সায়েন্স ফিকশন ।। স্প্লাটুজেনাস গ্রহের একজন কেন্টর – সেরিনা :|| B:-/

২৭ শে এপ্রিল, ২০১৮ বিকাল ৩:৪৬



সাল ৩৪৮৩

স্প্লাটুজেনাস গ্রহে ভোটের আবহ চলছে । আর কয়েকদিন পরেই নির্বাচন । কে হবে হনুমিনাসদের রাজা । এই হনুমিনাস জাতি যুগ যুগ ধরে তাদের সাম্রাজ্য টিকিয়ে রেখেছে ভালোভাবেই । এদের প্রতিযোগিতা আজ শুধু সাপার্ট-দের সাথে । বলা হয়ে থাকে, ২৯০০ সাল পর্যন্ত এই হনুমিনাস জাতির পূর্বপুরুষ অর্থাৎ হোমো সাপিয়েন্স নামক জাতি সৌরজগতের পৃথিবী নামক ছোট্ট একটি গ্রহে বাস করতো । হোমো সাপিয়েন্সদের যেমন মানুষ বলা হতো, হনুমিনাসদের বলা হয় কেন্টর ।

সাপার্ট-দের পূর্বপুরুষদের সৃষ্টি এই হোমো সাপিয়েন্সদের কাছ থেকেই । কেন্টররা হনুমিনাস জাতি হলেও সাপার্ট-রা কোন জাতি নয়, তাদের জন্ম হয়না । তাদেরকে সৃষ্টি করা হয় । মানুষদের কাছ থেকেই সর্বপ্রথম সাপার্ট-রা সৃষ্ট হয় । আর এখন তারা নিজেরাই নিজেদের সৃষ্টি করে । তাদের মৃত্যু নেই, ধ্বংস আছে । তাদের অবশ্য সৃষ্ট হওয়ার একটাই লক্ষ্য, কেন্টরদের সাথে লড়াই করা তথা যুদ্ধ করা । মানুষরা অবশ্য এই সাপার্ট-দের সৃষ্টির শুরুতে অর্থাৎ সাপার্ট-দের প্রথম দিকে নামকরণ করেছিল রিতুরিক নামে, যারা আদৌ প্রাণী ছিল না, তারা ছিল রবোটিক । কালের বিবর্তনে প্রোটোকল ভেঙ্গে অনেকবার বিবর্তনের মাধ্যমেই এই রিতুরিক জাতি থেকেই সাপার্ট-দের আত্মপ্রকাশ । অবশ্য এই প্রোটোকল ভাঙ্গার কারণেই মানুষরা তাদেরকে নিজেদের থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয় । (প্রধান প্রোটোকলই ছিল রিতুরিক-রা কোন ক্রমেই কোন মানুষকে আক্রমণ করতে পারবে না) । এই সাপার্ট-রা কয়েক শতাব্দি ধরে তারা তাদেরই পূর্বপুরুষদের (রিতুরিকদের) সৃষ্টিকারী জাতির সাথে অস্তিত্ব লড়াইয়ের যুদ্ধে অবতীর্ণ । সাপার্ট-রা অবশ্য এই স্প্লাটুজেনাস গ্রহে থাকে না, তাদের বসবাস পার্শ্ববর্তী নক্ষত্র জেমহেইনাসের অন্তর্গত একটি গ্রহ রালটেইটিকে । আর স্প্লাটুজেনাস গ্রহটি সেনচারমেন নক্ষত্রের অন্তর্গত । হনুমিনাস ও সাপার্ট-দের মধ্যেকার যুদ্ধ বাধে মহাকাশের আধিপত্য বিস্তার করা নিয়ে ।

সেনিরা তার ফ্ল্যাটের করিডরে দাড়িয়ে আছে বেশ অনেকক্ষণ ধরেই । আশপাশ দিয়ে ফ্লায়িং সসারগুলো সাই সাই করে উড়ে যাচ্ছে । সেনিরা এই গ্রহের সবচেয়ে নিচু বিল্ডিঙটাতে বসবাস করছে আজ প্রায় পঁচিশ বছর । সে এই বিল্ডিঙয়ের ১২৬ তলায় থাকে । সেনিরা এই ফ্ল্যাটে একাই থাকে । ওর দুইটা পারসোনাল রবোটিক হেল্পার আছে । জেনা ও ব্লাটনিস । যদিও রবোটিক ব্যাপারটিতে লিঙ্গ স্পেসেফিক থাকে না । তবে সেরিনা মনে করে জেনা মেয়ে আর ব্লাটনিস ছেলে । রবোটিক হেল্পার হিসেবে যেগুলো ব্যাবহার করা হয়, এগুলোও অনেকটা সাপার্টদের মত । তবে এদেরকে সর্বপ্রথম সৃষ্টি করে কেন্টর-রাই । সাপার্টদের সাথে নিত্য যুদ্ধে লিপ্ত হওয়া কেন্টর-রা যখন বুঝতে পারে, আসলেই রবোটিক কোন উপাদান তাদের দৈনন্দিন জীবন অনেক সহজ করতে পারে, তখন থেকেই এই রবোটিক হেল্পার তৈরি করার চিন্তা-ভাবনা শুরু হয় । এরপর কেন্টরদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানীরা একমত হয়েই সর্বপ্রথম রবোটিক হেল্পার তৈরি করে । সে বহুকাল আগের কথা । আর এখন তো স্প্লাটুজেনাস গ্রহে বসবাসকারী সকলেরই এই রবোটিক হেল্পার আছে । কারও কারও একের অনেক বেশি রবোটিক হেল্পারও আছে । অবশ্য এই রবোটিক হেল্পার গৃহস্থালি কাজে যেমন ব্যবহৃত হয়, ঠিক তেমনি কর্মক্ষেত্রেও সমান হারে ব্যবহৃত হয় ।

সেরিনা দনারাল হাউজের ফিফথ লেভেলের এক্সকিউটিভ হেডের পারসোনাল সেক্রেটারি । ফিফথ লেভেলের হেড জনাব লাইকিন সেজুয়াল এই পদে আছেন আজ প্রায় দশ বছর । সেরিনা অবশ্য বিশ বছর ধরে এখানে আছে । লাইকিন সেজুয়ালের আগে জনাবা ইরিনা জেন্টুলের অধীনে কাজ করতো সে । এরপর ইরিনা জেন্টুল প্রমোশন পেয়ে থার্ড লেভেলে চলে গেলেও সেরিনা ফিফথ লেভেলেই থেকে যায় ।

দনারাল হাউজ স্প্লাটুজেনাস গ্রহের মেইন অপারেটিং বিল্ডিং । বিল্ডিঙটি মোট ৮৬০ তলা । এই বিল্ডিঙটিতে কাজ করার জন্য মোট বারোটি লেভেলে ভাগ করা হয়েছে । এর মধ্যে প্রথম ২২০ তলা পর্যন্ত বারোতম লেভেল, তার উপরের ১৫০ তলা পর্যন্ত এগারোতম লেভেল, এর উপরের ৯০ তলা পর্যন্ত দশতম লেভেল, এর উপরের ৮০ তলা পর্যন্ত নবমতম লেভেল, এর উপরের ৭০ তলা পর্যন্ত অষ্টমতম লেভেল, এর উপরের ৬০ তলা পর্যন্ত সপ্তমতম লেভেল, এর উপরের ৫০ তলা পর্যন্ত ষষ্ঠতম লেভেল, এর উপরের ৪০ তলা পর্যন্ত পঞ্চমতম লেভেল, এর উপরের ৩০ তলা পর্যন্ত চতুর্থতম লেভেল, এর উপরের ২০ তলা পর্যন্ত তৃতীয়তম লেভেল, এর উপরের ১৫ তলা পর্যন্ত দ্বিতীয়তম লেভেল, এর উপরের ১০ তলা প্রথমতম লেভেল । এর উপরের বাকী ২৫ তলা এই গ্রহের সকল সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী এক্সকিউটিভ হনুমিনাসদের জন্য । সেখানেই তাদের কার্যালয় । সেই অনুযায়ী সেরিনা এই দনারাল হাউজের ৭২০ তলা থেকে ৭৬০ নং তলা পর্যন্তই কাজ করে ।

সেরিনা আগে থেকেই ভেবে রেখেছে এবার সে ভোট দিতে যাবে না । এই ভোটের সিস্টেমটাই তার কাছে খুব জঘন্য লাগে । তার জন্মদাতা, পিশযিক কানাহন (যাকে সে ড্যাডি বলে ডাকতো), গতবার সেও এই ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল কিন্তু বেলায়েক হিউয়ানের কাছে হেরে যায় । সেরিনার এই স্প্লাটুজেনাসে আপন বলতে একমাত্র ড্যাডি-ই ছিল । তার মাম্মি অনেক আগেই তার জন্মের সময় মৃত্যুবরণ করে । আর তার কোন ভাই-বোনও নেই । এরপর বেলায়েক হিউয়ান কেন্টর-দের রাজা হয় । পিশযিক কানাহনের ভোটে দাঁড়ানোর ব্যাপারটাকেই যেন বেলায়েক হিউয়ান অপমান হিসেবে নিয়ে নেয় এবং তাকে সাপার্ট-দের সাথে যুদ্ধে একজন সাধারণ সৈনিক হিসেবে রালটেইটিক গ্রহে যেতে বাধ্য করা হয় । সেখানে পিশযিক কানাহনের মৃত্যু হয় । আসলে কিভাবে তার মৃত্যু হয়েছে, এই ব্যাপারটিতে ধোঁয়াশা থেকে যায় । সেরিনার ড্যাডির একজন সহ-সৈনিক নাম না বলার শর্তে সেরিনাকে যুদ্ধের পরপর ফিরে এসে ফোন করে বলেছিল, তার ড্যাডিকে নাকি এমনিতেই মেরে ফেলার নির্দেশ ছিল, এমনকি যুদ্ধে মারা না গেলেও । সেই থেকে সেরিনা বেলায়েক হিউয়ানের উপর প্রতিশোধ নেওয়ার অপেক্ষায় আছে । আর এরপর থেকে ভোটের কথা এক প্রকার শুনতেই পারে না সে ।
কেন্টরদের রাজা হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে মোট তিনজন প্রার্থী । তারা হলেন বেলায়েক হিউয়ান, ফিউমোরাস জেনিনি ও রুইনি সেজার্ট । এদের মধ্যে বেলায়েক হিউয়ান হচ্ছেন সাবেক রাজা (যার কথাই একটু আগে বলা হলো) এবং বর্তমানে দনারাল হাউজের প্রথম লেভেলের হেড হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন । সাবেক রাজা হওয়া সত্ত্বেও বেলায়েক হিউয়ান বেশ জনপ্রিয় । ফিউমোরাস জেনিনি তিনি এই স্প্লাটুজেনাস গ্রহের সিকিউরিটি হেড । অর্থাৎ গ্রহের সকল সামরিক বাহিনী তার নির্দেশেই পরিচালিত হয় । তার এইবার জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি । রুইনি সেজার্ট অবশ্য একমাত্র নারী প্রার্থী এবং এবারই তিনি প্রথম ভোটে দাঁড়িয়েছেন ।

বেলায়েক হিউয়ান গতবার তিন বছরের জন্য পদে ছিলেন । তার নেওয়া মহাকাশ আপোষনীতির কারণে তিনি বেশ সমালোচিত হয়েছিলেন । অর্থাৎ তিনি সাপার্ট-দের সাথে সন্ধি করেছিলেন । অবশ্য তার বেশ কয়েকটি যুক্তিও ছিল । সাপার্ট জাতির মৃত্যু নেই, শুধু ধ্বংস আছে । কিন্তু কেন্টর-দের সকলেরই মৃত্যু আছে । সাপার্ট-রা কেন্টরদের এই দুর্বলতাকেই কাজে লাগিয়েছে আগের বেশ কয়েকটি যুদ্ধে । এতে করে স্প্লাটুজেনাস গ্রহের বেশ কয়েকজন সাহসী সামরিক জেনারেল যুদ্ধে মৃত্যুবরণ করেছে, যেটি আসলে কাম্য ছিল না । কিন্তু বেলায়েক হিউয়ান তার এই নীতি সাধারণের কাছে বুঝাতে সক্ষম হননি । ফলশ্রুতিতে এবার তার জয়ের সম্ভাবনা খুবই কম ।
ফিউমোরাস জেনিনি খুবই শক্ত ব্যক্তিত্বের একজন । তিনি স্প্লাটুজেনাস গ্রহের সিকিউরিটি প্রধানের দায়িত্বটি পেয়েছেন অনেক বছরে সাধনা করে । এই জন্য তাকে বেশ কয়েকটি ধাপ পার করতে হয়েছে । কর্মজীবনের শুরুতে তিনি সেনচারমেনীয় প্যানেল (সেনচারমেন নক্ষত্র থেকে যে বিকিরণ আসে, তা এই প্যানেলের মাধ্যমে কার্যপ্রবাহের মাধ্যমে সম্পূর্ণ স্প্লাটুজেনাস গ্রহে সকল ধরণের প্রয়োজনীয় শক্তি সরবরাহ করা হয় । সেনচারমেন নক্ষত্রই এই স্প্লাটুজেনাস গ্রহের সকল শক্তির আধার) কারখানায় প্রথম কাজ নেন । সেখান থেকে তার রাজনীতিক ক্যারিয়ার শুরু । এরপর তিনি দনারাল হাউজের সপ্তম লেভেলের এক্সকিউটিভ হেড হন । তারও বেশ কয়েক বছর পর তিনি স্প্লাটুজেনাস গ্রহের প্রধান সামরিক বাহিনী টেকনো-এর হেড হন । (এই টেকনো বাহিনী-ই সাপার্টদের সাথে সরাসরি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে) সেখান থেকে তিনি আজ এই অবস্থানে । তার সাপার্ট জাতির বিরুদ্ধে নেওয়া বেশ কয়েকটি সাহসী যুদ্ধনীতির কারণে তিনি কেন্টরদের প্রায় সকলের কাছে খুব প্রিয় একজন মুখ । তার সবচেয়ে ভালো যে দিক, সেটি হলো, তিনি খুব কমই আপোষ করেন । এই কারণেই এইবার তার জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা খুবই বেশি ।

রুইনি সেজার্ট এই তিনজনের মধ্যে সবচেয়ে নিরীহ ও অনেকটাই নতুন মুখ । তার বয়সও বেশি না, তরুণীই বলা চলে তাকে । রুইনি সেজার্টের প্রধান নীতি পরিবর্তন । পরিবর্তন সবকিছুর । যুদ্ধের পরিবর্তে শান্তি, ক্ষুদার পরিবর্তে খাদ্য, হিংস্রতার পরিবর্তে শিক্ষা ইত্যাদি । অনেকটাই নমনীয় ও দীর্ঘমেয়াদি নীতি । আশ্চর্যজনক ব্যাপার হলেও সত্য, তার নতুন রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের এই নীতি কেন্টর-দের মধ্যে এক ধরণের চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে । এই তিনজনের মধ্যে সেই একমাত্র পরিবর্তনের পক্ষে । সে বর্তমানে একজন সমাজ কর্মী । এতটুকু বয়সেই সে ইতিমধ্যে বেশ কয়েকবার ক্যালিয়াস ইউনিভার্সিটি, যেটি কিনা এই স্প্লাটুজেনাস সবচেয়ে বড় ও বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়, সেখানে অতিথি হিসেবে পরিবর্তন নিয়ে বক্তব্য দিয়ে বেশ সুনাম কুড়িয়েছে । তার পক্ষে কেন্টর-দের অধিকাংশ তারণ্যের সমর্থন রয়েছে । তবে এইবার তার জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা পারতপক্ষে কম অর্থাৎ খুব আশ্চর্যজনক কিছু না ঘটলে জেতার কোন সম্ভাবনা নেই, আর এই কথাটি রুইনি সেজার্ট নিজেও জানে । তাই তো সে বর্তমান এই নির্বাচনের বাইরে দীর্ঘমেয়াদি ব্যাপারগুলো নিয়েই বেশি ভাবছে ।

এই কেন্টর ও পূর্বের মানুষদের মধ্যে বিবর্তনজনিত পরিবর্তন রয়েছে । স্প্লাটুজেনাস গ্রহটি পৃথিবী নামক গ্রহ থেকে বেশ বড় কিন্তু পৃথিবীতে যেমন তিন ভাগ পানি, আর এক ভাগ স্থল ছিল, আর সেই স্থল অংশেই মানুষের বসবাস ছিল । তেমনি স্প্লাটুজেনাস গ্রহটিতে সেনচারমেনের সরাসরি রেডিয়েশনের প্রভাবে প্রায় অর্ধেকের বেশি অংশ প্রায় উত্তপ্ত অবস্থায় আছে । সেখানে কারও বসবাস সম্ভব নয় । এই কেন্টরদের বুদ্ধিমত্তা লেভেল মানুষদের মত তত বেশি না হলেও, এরা উন্নতিতে মানুষের চেয়ে ঢের এগিয়ে । স্প্লাটুজেনাস গ্রহটি কোন মহাদেশ, দেশ অর্থাৎ সোজা কথায় অঞ্চলভেদে বিভক্ত নয় । এখানে তাই হয়, যা দনারাল হাউজের প্রতিটি লেভেলের হেড ও কেন্টরদের রাজা মিলে সিদ্ধান্ত নেয় । এই গ্রহে মোট পনেরোটির মত বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে, এগুলোতে সব ধরণের বিষয় পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে ব্যবহারিকের সাথে শিক্ষা দেওয়া হয় । অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে তত্ত্বীয় বিষয়াবলীর থেকে ব্যবহারিক বিষয়াবলীর উপর জোর বেশি । তবে এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রধানদেরও দনারাল হাউজের প্রতিটি লেভেলের হেডের সমমর্যাদা দেওয়া হয়, যদিও তাদের বিশ্ববিদ্যালয় চালানো ছাড়া অন্য কোন গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে হয় না । তাছাড়া কেন্টর-রা প্রযুক্তিগতভাবে বেশ উন্নত । এই স্প্লাটুজেনাস গ্রহের অধিকাংশ কাজই প্রযুক্তিনির্ভর এবং সকল তথ্য দনারাল হাউজের প্রধান সুপার কম্পিউটার “ডেলনা” দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় । এই ডেলনা-এর নিয়ন্ত্রন করার অধিকারও দেওয়া হয়েছে দনারাল হাউজের প্রতিটি লেভেলের হেড ও কেন্টরদের রাজাকে । এই তো গেলো, স্প্লাটুজেনাস গ্রহের বিস্তারিত ।

সাপার্টদের ক্ষেত্রে অবশ্য ব্যাপারগুলো পুরোই আলাদা । ওদের জন্ম নেই, মৃত্যু নেই । তাই ওদের ক্ষুদাও নেই, তৃষ্ণাও নেই, বাড়তি কিছুর আকাঙ্ক্ষাও নেই । ওদের প্রধান কাজই হলো যুদ্ধ করা, তাও শুধুমাত্র কেন্টর-দের সাথে । ওদের সৃষ্টি হয় কৃত্রিমভাবে । কেন্টর-রা অবশ্য যুদ্ধক্ষেত্রে টেকনো বাহিনীর সাথে কখনও কখনও যুদ্ধক্ষেত্রে পারদর্শী করে মোড ঠিক করা রবোটিক হেল্পার সাপার্টদের সাথে যুদ্ধ করতে পাঠায় । এইসব রবোটিক হেল্পাররা কেন্টর-দের চেয়েও ভালো যুদ্ধ করে । এই বুদ্ধিটাও ছিল ফিউমোরাস জেনিনির । তবে রবোটিক হেল্পারদের এরকম সাপার্ট-দের বিপক্ষে যুদ্ধ করার অনুমতির আইনটি পাশ করতে তাকে বেশ ভুগতে হয় । কেন্টর-রা মনেপ্রাণেই এই কথা বিশ্বাস করে, একদিন সাপার্টদের হারিয়ে তারা ঠিকই এই মহাকাশে রাজত্ব করবে । তবে তারা এই কথাটি তখন ভুলে যায়, সাপার্টদের পুরোপুরি পরাজিত করলে তাদের বেচে থাকার উদ্দেশ্যগুলো অনেকটাই সংকুচিত হয়ে যাবে এবং অর্ধেকের চেয়েও বেশি কেন্টর তখন কর্মহীন হয়ে যাবে । কারণ পারতপক্ষে স্প্লাটুজেনাস গ্রহে কর্মক্ষেত্রগুলো বেশ বিস্তৃত নয় । এখানে কাজের সুযোগ খুব কম । কারণ কেন্টরদের রোজ রোজ খাওয়ার কোন ঝামেলা নেই । একটি বায়োলজিক্যাল ট্যাবলেট মুখে দিয়ে হজম করে ফেললেই দশ থেকে পনেরো দিনের জন্য আর কিছুই খাওয়া লাগে না । এই বায়োলজিক্যাল ট্যাবলেটও কেন্টরদের মহান আবিস্কারদের মধ্যে একটি ।
সেরিনা এই কথাগুলো জানে । সে বেশ উচ্চশিক্ষিত । সে টেনার্ল ইউনিভার্সিটিতে (এটিও বেশ নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়) থেকে গ্রাজুয়েশন ও পোস্ট-গ্রাজুয়েশন করা । সেরিনার পছন্দের বিষয় ইতিহাস নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করা । সে তার রেনালয়েড (কম্পিউটারের মতই যন্ত্র । তবে সুপার কম্পিউটারেরও মতই শক্তিশালী । আকৃতি অনেকটা বর্তমান ট্যাব মোবাইলের মত) দিয়ে প্রায় সময়ই ঘেঁটে দেখে বিভিন্ন জিনিসের ইতিহাস । পৃথিবীর আদি ইতিহাস, মানব জাতির উদ্ভাবন, বেড়ে উঠা, পৃথিবী রাজত্ব করা, একসময় নিজেদের মধ্যে প্রাধান্য বিস্তার নিয়ে হানাহানি করা, শক্তির উৎসগুলো নিঃশেষ হয়ে যাওয়া, আস্তে আস্তে খাদ্যের অভাব দেখা যাওয়া, আস্তে আস্তে অস্তিত্ব লড়াইয়ে মানুষ মানুষকে শেষ করে দেওয়া, ধীরে ধীরে মানব জাতিই ধ্বংস হয়ে যাওয়া - সকল বিবর্তনই সে রেনালয়েড দিয়ে ঘেঁটে দেখেছে । এমনকি কেন্টর-দের উদ্ভাবন, সাপার্ট-দের উদ্ভাবন, পৃথিবী থেকে স্প্লাটুজেনাস গ্রহে মানুষ থেকে কেন্টরদের আগমন, কেন্টরদের ও সাপার্টদের মধ্যেকার যুদ্ধের কাহিনী, সাপার্ট-দের দৈনন্দিন প্রুযুক্তিবিদ্যায় কেন্টরদের সহায়তা চাওয়া এবং কেন্টরদের নিষেধ করা, কেন্টরদের বিবর্তন ইত্যাদি সবই সে জানে । সেরিনা এই বিষয়গুলো নিয়ে প্রায়ই জেনিলির সাথে আলোচনা করে । স্প্লাটুজেনাসে সেরিনার আপন বলতে এই একজন বান্ধবীই আছে মাত্র । সেরিনার সাথে জেনিলির পরিচয় টেনার্লে পড়ার সময় থেকে । জেনিলির অবশ্য বাবা-মা ও দুই ছোট ভাই আছে । তবে জেনিলি এখন কার্লের সাথে থাকে । কার্ল জেনিলির ছেলে লাইফ পার্টনার । তবে ওরা বিয়ে করেনি । স্প্লাটুজেনাসে বিয়ে প্রায় হয় না বললেই চলে । এখানে যে যার প্রয়োজনে যাকে ইচ্ছা তার সাথেই থাকে । আর তখন তাদেরকে ছেলে অথবা মেয়ে পার্টনারই বলা হয়ে থাকে ।

তবে কার্লের সাথে জেনিলির পরিচয় বেশ আশ্চর্যজনকভাবে । অনলাইনভিত্তিক একটি গেমিং কনটেস্টের মাধ্যমে । অনলাইনভিত্তিক এই গেমিং কনটেস্ট খুবই মারাত্মক এবং এখানে জিতে গেলে প্রচুর সম্পদ দেওয়া হয় আর হেরে গেলে মেরে ফেলা হয় । সেখানেই জেনিলি প্রায় হারতে হারতে জিতে যায় কার্লের সাহায্যে । কার্ল জেনিলিকে দেখে পছন্দ করে ফেলে আর সে ছিল অপারেটর । তাই সূক্ষ্ম কারচুপি ঘটিয়ে জেনিলিকে জয়ী করতে তার কোনই সমস্যা হয়নি । পরবর্তীতে জেনিলিও কার্লকে মন দেয় এবং এখন তো তারা এক সাথেই । সে যাই হোক, কার্ল খুব হাসিখুশি এবং প্রাণবন্ত একজন কেন্টর । সেরিনাও কার্লকে পছন্দ করে । কার্ল দেখতে এমনিতে বোকাসোকা হলেও ভীষণ চালাক একজন কেন্টর । কয়েকদিন আগে থেকেই সে বলে রেখেছে এবারের নির্বাচনে বেশ ধরণের একটি ঝামেলা হতে যাচ্ছে । জেনিলি ব্যাপারটিকে তেমন আমলে নেয়নি কিন্তু সেরিনা এই কথাকে বিশ্বাস করেছে, । তাই তো সে বেশ চিন্তার মধ্যে পড়েছে । কি এমন ঝামেলা হতে পারে - সেরিনা খুব চিন্তা করেও কূল-কিনারা উদ্ধার করতে পারলো না ।

সকাল সকাল সেরিনা তার স্লিপিং প্লেসে ঘুমাচ্ছিল তারই ফ্ল্যাটে । হঠাৎ বিকট আওয়াজে সাইরেন বেজে উঠলো আর চারপাশ লাল আলোয় আলোকিত হয়ে গেলো । সাইরেনের আওয়াজে সেরিনার ঘুম ভেঙ্গে গেলো । ঘুম থেকে উঠেই সে দেখলো তার দুইটি রবোটিক হেল্পার জিনা ও ব্লাটনিস তার পাশে এসে দাড়িয়ে তাকে তার রেনালয়েড-টাকে দেখতে বলছে । স্প্লাটুজেনাস গ্রহে যখনই লাল আলোয় চারপাশ আলোকিত হয়, তার মানে হচ্ছে খুব ভয়াবহ কিছু ঘটেছে । সেরিনা তাদের কথামত রেনালয়েড-টা হাতে নিলো । সেটা দিয়ে ওয়াল ভিজুয়াল টিভি অন করলো । টিভি অন করেই সে নিউজ চ্যানেল দেখতে লাগলো । টিভি থেকেই সে জানতে পারলো, আজ সকালে ফিউমোরাস জেনিনি তার নিজ ফ্ল্যাটে মৃত্যুবরণ করেছেন । তার পাশেই তার মেয়ে পার্টনার ছিল তবে তাকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করেও কিছু জানা যায়নি । প্রথমে ধারনা করা হয়েছিল, হয়তো ফিউমোরাস জেনিনির মৃত্যুর পিছনে সাপার্টদের হাত থাকতে পারে । সন্দেহবশত ফিউমোরাস জেনিনির সবকয়টি রবোটিক হেল্পারদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এবং সার্কিট পরীক্ষা করার জন্য ল্যাবরেটরিতে নেয়া হয়েছে (সন্দেহ অনেকটা এরকম যে হয়তো সাপার্ট-রা ঐ রবোটিক হেল্পারদের সার্কিটে কোন সমস্যা করে এরকমটা ঘটাতে পারে) । এই পর্যন্ত শুনেই টিভি অফ করে দিলো সেরিনা । আধো ঘুম ঘুম চোখেই ফ্ল্যাটের করিডরে এসে দাঁড়িয়েছে সেরিনা । তার মাথায় এখন ব্যাপক চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে । বেশ অনেকক্ষণ ভেবেও কিছু না বুঝতে পেরে অবশেষে সে কার্লকে ফোন করার সিদ্ধান্ত নিলো ।

এক থেকে দুইবার ফোন রিং হতেই ফোন রিসিভ করলো কার্ল । খুব সম্ভবত ফোনের কাছাকাছিই ছিল সে । কার্ল ফোন ধরতেই সেরিনা তাকে জিজ্ঞেস করলো, নিউজ দেখেছ ? কার্ল উত্তর করলো, হ্যাঁ, দেখেছি । একটু আগে আমি আর জেনিলি একসাথেই দেখছিলাম নিউজ । আজ সকাল ধরেই সবকয়টা চ্যানেলের নিউজ ঘুরে ঘুরে দেখছি আর বুঝার চেষ্ঠা করছি, আসলে হয়েছেটা কি । তবে এখন আমার মনে হচ্ছে...... কার্ল ও সেরিনা দুইজনই কিছুক্ষণ চুপ থাকলো । এরপর সেরিনাই আগে বললো, তবে তুমিও কি তাই ভাবছ যা আমি ভাবছি ? কার্ল উত্তর করলো, হ্যাঁ, ঠিক তাই । তুমি জলদি বেরিয়ে পড়ো । আমি আর জেনিলিও রুইনি সেজার্টের বাসভবনে পোঁছাচ্ছি । তোমার সাথে তাহলে ওখানেই দেখা হবে আমাদের । ঠিক আছে, বাই । এই বলেই ফোন রেখে দিলো কার্ল । সেরিনা ফোন রেখে দেওয়ার পরও ভাবছে, আসলে কি হতে পারে । রুইনি সেজার্ট কি এই ব্যাপারটি নিজে থেকে টের পেয়েছেন ? নাকি তিনি এখনও এই সম্পর্কে উদাসিন । তবে যাই হোক না কেন, এখানে বড় কোন ষড়যন্ত্র হচ্ছে । ব্যাপারটির ভিতরে না ঢুকলে বুঝা যাবে না কিছুই ।

সেরিনার সাথে কার্ল এবং জেনিলির দেখা হলো রুইনি সেজার্টের বাসভবনেই । একজন কেন্টর কতটা অস্বাভাবিক ভালো হলে, এই অবস্থাতেও এরকম দিব্যি হেসে যেতে পারে !! হ্যাঁ, রুইনি সেজার্টের কথাই বলছিলাম । ভদ্রমহিলা নাকি এখনও কোন উত্তাপ টের পাননি । কার্ল ও জেনিলি এখানে এসে পৌঁছেছে সেরিনাও প্রায় দশ মিনিট আগে । তারা এর মধ্যে রুইনি সেজার্টকে বারবার অনুরোধ করা সত্ত্বেও, ভদ্রমহিলা এখান থেকে নড়তে নারাজ । নির্বাচনের জন্য যে তার প্রাণ ঝুঁকিতে আছে, এই কথাটি যেন তিনি বিশ্বাসই করছেন না । তার একটাই কথা, কেন্টররা মনুষ্য জাতির মত এত খারাপ না, যে তারা ক্ষমতার লোভে পড়ে এমন কিছু করবে । কিন্তু সেরিনা ভাবছে অন্য কথা । রুইনি সেজার্টের মত একজন কিভাবে ভুলে গেলো, কেন্টররা এই মনুষ্য জাতি থেকেই বিবর্তনের মাধ্যমেই সৃষ্টি হয়েছে । নিশ্চয়ই এখানে বড় ধরণের কোন ঝামেলা রয়েছে । সেরিনা অনেকক্ষণ চুপ করে থেকে এবার কথা বলার সিদ্ধান্ত নিলো ।

ম্যাডাম, কিছু মনে করবেন না, কিন্তু আপনি কি আজকের সবচেয়ে অবাক করা নিউজটা দেখেননি ? সেরিনা প্রশ্ন করলো রুইনি সেজার্টকে । হ্যাঁ, দেখেছি তো । রুইনি সেজার্ট স্বাভাবিক অবস্থাতেই প্রশ্নটার উত্তর দিলো । আপনি কি ভাবছেন এই বিষয়টাতে ? সেরিনা আবারও কৌতূহলী হয়ে জিজ্ঞেস করলো রুইনি সেজার্টকে । এইবার সে উত্তরে বেশি কিছুই আশা করছে । প্রশ্নটা করার পরপর তার চোখ দুইটি চকচক করতে লাগলো । রুইনি সেজার্ট এতক্ষণ সেরিনার মুখের দিকেই তাকিয়ে ছিলেন । তিনি সেরিনার মুখের এমন অস্বাভাবিক পরিবর্তন লক্ষ্য করলেন । অনেকক্ষণ চুপ থেকে ভেবেচিন্তেই জবাব দিতে লাগলেন, দেখো, এখানে কয়েকটি বিষয় আছে । প্রথম কথা হলো, ফিউমোরাস জেনিনির সাথে সাপার্টদের সরাসরি ঝামেলা ছিল । এখানে এই কাজটি করার সম্ভাবনা তাই তাদেরই বেশি । যদি সরাসরি তারা এই কাজের জন্য স্প্লাটুজেনাসে নাও আসতে পারে, তবে তারা কিছু একটা করেছে ফিউমোরাস জেনিনির রবোটিক কোন একটি হেল্পারকে বা একের বেশি হেল্পার-দের । হয়তো সার্কিটে পরিবর্তন করে দিয়েছে বা এমন কিছু । দ্বিতীয় কথা, এতদিন কেন্টর-দের যতগুলো নির্বাচন হয়েছে, এমন কোন রেকর্ড নেই, যে নির্বাচনের জন্য কেউ কাউকে হত্যা করতে পারে । তাহলে সন্দেহের তীর তো আমার দিকেও আসতে পারে, তাই না ?

কিন্তু হত্যার বিষয়টি তো আমরা কেউ উল্লেখও করিনি, তাহলে আপনি কেন...... ? সেরিনা সহসা অনেকটা ঝুকে গিয়ে প্রশ্নটা করলো । এই কথা শুনে রুইনি সেজার্ট থতমত খেয়ে গেলেন । হঠাৎ করেই তিনি ঘামতে শুরু করেছেন । ঘরে এখন যে তাপমাত্রা তাতে কারোর ঘামার কথা না । তবে দ্রুতই নিজেকে সামলে নিয়ে রুইনি সেজার্ট সেরিনার দিকে তাকিয়েই উত্তর দিলো, তোমার কথার দিকটা ঐ দিকেই ছিল, এটা আমি বুঝতে পেরেছি । পরিস্থিতি ঠাণ্ডা করতেই যেন হঠাৎ জেনিলি এর মধ্যেই প্রশ্ন করে বসলো, আচ্ছা, তাহলে বেলায়েক হিউয়ানের ব্যাপারে আপনি কি ভাবছেন ? এই জঘন্য কাজটি কি তিনি করতে পারেন না ? এইবার তার জয়ের সম্ভাবনা ধীরে ধীরে কমছিল এই ফিউমোরাস জেনিনির কারণেই । তাহলে তো সন্দেহ তার দিকেও অনেকক্ষেত্রেই ঝুকে পড়ছে, তাই নয় কি ? এই প্রশ্ন শুনে রুইনি সেজার্ট কেমন জানি একটু অপ্রস্তুত হয়ে গেলেন । বেশ খানিকক্ষণ পর এবারও নিজেকে সামলে নিয়ে উত্তর করলেন, দেখো, বেলায়েক হিউয়ান সদ্য বিদায়ী রাজা । তিনি বেশ অনেকদিনই ক্ষমতায় ছিলেন । আমার মনে হয় তিনি এই ঝুকি নেবেন না । কারণ যদি তিনি এটা করেও থাকেন, আর যদি এটা ধরা পড়ে, তাহলে তার অবস্থা কি হতে পারে, একবার ভেবে দেখো তো । এবার সেরিনাই প্রশ্ন করলো, তাহলে আপনার কি কিছুই বলার নেই বা কিছুই করার নেই ? রুইনি সেজার্ট উত্তর করলো, আমি আমার বাসভবন থেকে সবকয়টি রবোটিক হেল্পার সরিয়ে দিয়েছি । তাছাড়া এখানে নিরাপত্তার বিষয়টিও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে জানিয়েছি । তারা এখানের নিরাপত্তা বাড়িয়ে দিয়েছে । হয়তো দুই-একদিনের মধ্যেই আরও বাড়িয়ে দেবে এবং নির্বাচনের সময় পর্যন্তই এই অবস্থা চলবে ।
সেরিনা, কার্ল ও জেনিলি তিনজনই বুঝতে পারলো, রুইনি সেজার্ট কিছু একটা গোপন করছেন আর নিজেকেও সেইফ সাইডেই রাখছেন । তাই কথাবার্তাও তিনি অত্যন্ত হিসাব করেই বলছেন । এই অবস্থায় তার সাথে আর কথা বলে লাভ হবে না । তাই তারা তিনজনই এখান থেকে প্রস্থান করার সিদ্ধান্ত নিলো । তাই তারা রুইনি সেজার্ট এর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে সেখান থেকে বেরিয়ে এলো । তাদের বিদায় নেওয়ার সময় রুইনি সেজার্ট যেন আরও ফুরফুরা হয়ে গেলেন । কেমন জানি রহস্যময়, তবে ব্যাপারটি কারোরই চোখ এড়ালো না ।

রুইনি সেজার্টের বাসভবন থেকে বের হওয়ার পর পথে কার্ল ও সেরিনা দুইজনকেই চিন্তিতগ্রস্থ দেখালো । তবে ব্যাপারটির আঁচ জেনিলিকে তেমন স্পর্শ করতে পারেনি । তাকে তেমন চিন্তিতগ্রস্থ দেখালো না । যদিও বিষয়টি সে বুঝতে পেরেছে । তাই কেউই কারো সাথে কথা বললো না আর । এর কিছুক্ষণ পরেই সেরিনা, কার্ল ও জেনিলির কাছ থেকে বিদায় নিয়ে নিজের ফ্লায়িং সসারটিতে উঠে পড়লো । সেরিনা ফ্লায়িং সসারটি চালু করে চোখের সামনে থেকে পুরোপুরি গায়েব হয়ে যাওয়া পর্যন্ত কার্ল ও জেনিলি দুইজনেই তাকিয়ে থাকলো ।

এর বেশ কিছুদিন পর -

সেরিনা তার লেখার টেবিলে বসে কিছু একটা লিখছিল । তার যখন অবসর থাকে, তখন সে টুকটাক লিখতে পছন্দ করে । এই শখটা সে পেয়েছে মনুষ্য জাতির ইতিহাস ঘেঁটে । হঠাৎ-ই সেরিনার ফ্ল্যাটের দরজায় নকের আওয়াজ হলো । এই নকের আওয়াজ শুনে জিনা ও ব্লাটনিস দরজার দিকে এগিয়ে গেলো । তবে সেরিনা তাদেরকে দরজা খুলতে নিষেধ করলো । আগে সে নিশ্চিত হতে চায়, কারা এসেছে । তাই সে তার রেনালয়েড অন করলো । রেনালয়েড দিয়ে সে তার দরজার সামনের ভিজুয়াল সিকিউরিটি ক্যামেরা অন করলো । সেখানে কিছু রবোটিক হেল্পার দাড়িয়ে আছে । তাদের বডির মেশিনারি কালার দেখেই সহজে বুঝা যাচ্ছে তারা গৃহস্থালি রবোটিক হেল্পার নয় । সেরিনা জুম করে দেখতে পেলো, ওদের হাতে কোন অস্ত্র আছে কিনা । কিন্তু অস্ত্র নেই দেখে আশ্বস্ত হলো একটু পরেই । সেরিনা ক্যামেরার পাশের সেন্সরের অডিও মোড চালু করলো । এরপর সে তাদেরকে জিজ্ঞেস করলো, তারা কেন এসেছে ? তাদের মধ্যেই একজন জবাব দিলো, তার জন্য দনারাল হাউজ থেকে একটি জরুরী বার্তা নিয়ে এসেছে তারা । আর সকলেই দনারাল হাউজের কর্পোরেট হেল্পার । সেরিনা পুরোপুরি আশ্বস্ত হয়েই দরজা খুলালো ব্লাটনিস-কে দিয়ে । মোট তিনজন রবোটিক হেল্পার সেরিনার ঘরে ঢুকলো । তারা ব্লাটনিসের হাতেই একটি চিপ দিলো । একটি মাইক্রো-চিপ । স্প্লাটুজেনাস গ্রহের কোন বার্তা আদান-প্রদান হয় মাইক্রো-চিপের মাধ্যমেই । সেরিনা ব্লাটনিসের কাছ থেকে চিপটি নিয়ে তার রেনালয়েডে প্রবেশ করলো । হ্যাঁ, সেটিই হয়েছে, যা সম্পর্কে তার কোন ধারনাই ছিল না । তাকে দনারাল হাউজের পঞ্চম লেভেলের হেডের সেক্রেটারি পদ থেকে ডিমোশন দিয়ে অষ্টম লেভেলের হেডের সেক্রেটারি করে দেওয়া হয়েছে । সেরিনা ভেবেই পেলো না, তার দোষ কি । কিন্তু সে কাকে জিজ্ঞেস করবে ? তাকে এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ারও তো কেউ নেই । সে এমন কেউ না, যে উচ্চপর্যায়ে গিয়ে কৈফিয়ত চাইতে পারে । রবোটিক হেল্পারগুলো আবার সেই মাইক্রো-চিপ ফেরত নিয়ে বেরিয়ে গেলো । সেরিনা হতাশ হয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো । এই খবরটি যদি সে দুঃস্বপ্ন ভেবে উড়িয়ে দিতে পারতো, তবে কতই না ভালো হতো !!!

ঠিক কতক্ষণ ঘুমানোর পর টের পেলো, তাৎক্ষনিকভাবে সেরিনা এইটা বুঝতে পারলো না । এরপর ঘড়ি দেখেই আশ্বস্ত হলো, ওহ, বেশ অনেকক্ষণই ঘুমিয়েছে সে । ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়েই সে জেনিলিকে ফোন করলো । জেনিলিই তাকে জানালো, কার্লেরও ডিমোশন হয়েছে । তবে কার্ল নাকি তাকে জানিয়েছে দনারাল হাউজ থেকে নাকি আজকে পুরো গ্রহে ডিমোশন অর্ডার পাশ হয়েছে । আর এর ভুক্তভোগী হয়েছে হাজার হাজার কেন্টর । কিন্তু সেরিনা মনে মনে ভাবতে লাগলো, যেখানে এখনও নির্বাচন হয়ই-নি, সেখানে এতগুলো ডিমোশন অর্ডারের অর্ডিন্যান্স তাহলে পাশ করলো কে ? সেরিনা আর কিছু না বলেই ফোন রেখে দিলো । তাহলে তো কেউ একজন নির্বাচনের আগেই নিজের ক্ষমতা জাহির করছে । কারণ নির্বাচনের আগে তো দানারাল হাউজের সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা কিন্তু এমন কোন জরুরী অর্ডিন্যান্স পাশ করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা তো তারাও রাখেন না । তবে কি নির্বাচন প্রক্রিয়াটি সাজানো কোন ঘটনা ? কেন্টর-দের রাজা কি তবে গোপনে ঠিক হয়ে গেলো ? তবে কি নির্বাচন নিয়ে কোন ষড়যন্ত্র চলছে ? আর দনারাল হাউজের প্রতিটি লেভেলের হেড-রাও কি এই ষড়যন্ত্রে নাম লেখালো ? যদি সত্যি এমনটা হয়ে থাকে, তাহলে কেন্টর-দের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত কোন হুমকির মুখে । সেরিনা ভেবেই চলছে, কিন্তু এত বড় একটি ষড়যন্ত্রের জট তার একার পক্ষে খুলা সম্ভব নয়, এটা সেও জানে ।

সকলের জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে বেলায়েক হিউয়ান-ই হলো কেন্টর-দের রাজা । তার একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে তিনি কয়েক লক্ষ ভোট বেশি পেয়ে জিতে গেছেন । অবশ্য বেলায়েক হিউয়ানের বিজয় অত্যন্ত সহজভাবেই হয়েছে । কারণ তার এই একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী রুইনি সেজার্ট নির্বাচনের দুইদিন আগেই বেলায়েক হিউয়ানের সাথে জোট বেধে ফেলে । তাই বেলায়েক হিউয়ানের বিজয়ে পরেও তিনি পরাজিত হননি । তাকে দনারাল হাউজের সেকেন্ড লেভেলের হেডের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, অর্থাৎ তার অবিশ্বাস্য প্রমোশন হয়েছে । সেরিনা, কার্ল ও জেনিলি একসাথেই নিউজ দেখছিল কার্ল ও জেনিলির ফ্ল্যাটে বসে । নিউজের রুইনি সেজার্ট-এর যে ইন্টার্ভিউ-টি দেখালো, সেখানে রুইনি সেজার্ট অতিরিক্ত মাত্রায় খুশি । এখন তাদের তিনজনের কাছে পরিস্কার কেন, তিনি ফিউমোরাস জেনিনির মৃত্যুর পরেও বিচলিত ছিলেন না । তবে তিনি যে এমন কিছু করতে পারেন, তা এই তিনজনের কারোরই ধারণা ছিল না ।

আচ্ছা, রুইনি সেজার্ট যে পরিবর্তনের পক্ষে ছিলেন, তিনি কি এই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী থেকে জোট বাধার এমন অবিশ্বাস্য একটি সিদ্ধান্তের পক্ষেও পরিবর্তনের সাফাই গাইবেন ? জেনিলির কৌতূহলী প্রশ্ন, সেরিনা ও কার্ল দুইজনকেই উদ্দেশ্য করে । সেরিনা ও কার্ল দুইজনই জানে, জেনিলি এই প্রশ্নটি অত্যন্ত বিরক্ত ও রাগ হয়েই করেছে । তবে কার্ল একটি যুক্তিযুক্ত উত্তর দেবার চেষ্ঠা করলো । দেখো, রুইনি সেজার্ট নিজেও জানতো যদি সে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতো, তবে তার মৃত্যুর অনেক সম্ভাবনা ছিল । ফিউমোরাস জেনিনির এমন অস্বাভাবিক মৃত্যু, হঠাৎ-ই ডিমোশন অর্ডিন্যান্স পাশ ইত্যাদি সবই ইঙ্গিত ছিল বেলায়েক হিউয়ান নির্বাচনে পুনরায় জয়ের জন্য কতটুকু মরিয়া ছিল । তাছাড়া রুইনি সেজার্ট নিজেও একজন তরুণী, তাই তার মধ্যে এত অভিজ্ঞতাও ছিল না যে রাজনৈতিক জীবনে এত ঝামেলার মাঝেও কিভাবে সামনে এগোতে হয় অথবা পিছিয়ে যেতে হয়, যদিও এই দুইটারই সুযোগ তার কাছে ছিল না । তাই আমার তো মনে হয়, সে নিজেকে ও নিজের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিরাপদ রাখার জন্য এমন একটি সিদ্ধান্ত নিতে একরকম বাধ্য হয়েছে । কার্ল-এর এমন উত্তর সেরিনা ও জেনিলি দুইজনের কাছেই বেশ পছন্দ হলো । তবে এখন বেলায়েক হিউয়ানের রাজত্বে সকল কেন্টর-রা যে অনিরাপদ হয়ে গেলো, তার পরিস্কার উপলব্ধিই হলো এই তিন কেন্টরের ।

বেলায়েক হিউয়ান অবশ্য পরেরদিনই ঘোষণা করলেন, তার নির্বাচনে জয়ের খুশিতে তিনি সকল কেন্টরদের সাথে তার রাজকীয় বাসভবনে দেখা করবেন । অর্থাৎ এই একদিন রাজকীয় বাসভবনের নিরাপত্তা শিথিল করা হবে । এই রাজকীয় বাসভবন কেন্টর-দের সকল রাজাদের জন্য বরাদ্দ থাকে । বেলায়েক হিউয়ানের দুইটি মেয়ে আছে । বেলায়েক হিউয়ান নিজে, তার স্ত্রী ও দুই মেয়েকে নিয়ে এই রাজকীয় বাসভবনে উঠে গেলেন জয়ী হওয়ার পরেরদিনই । বেলায়েক হিউয়ান অবশ্য তার নিরাপত্তার জন্য কোন কেন্টর-দের উপর ভরসা করেন না । তিনি তার নিরাপত্তার জন্য বেশ কয়েকটি রবোটিক হেল্পারদের রেখেছেন । তাদের কাজই তাকে পাহাড়া দেওয়া । এই রবোটিক হেল্পারগুলো অবশ্য দনারাল হাউজের স্পেশাল । এই নিরাপত্তার জন্য ব্যবহৃত রবোটিক হেল্পারগুলো শুধু স্প্লাটুজেনাস গ্রহের অতীব গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদেরকেই দেওয়া হয় । বেলায়েক হিউয়ান অবশ্য দনারাল হাউজের প্রথম লেভেলের হেড হিসেবেই এগুলো আগেই পেয়েছিলেন ।

সেরিনা নিউজে এই খবরটি দেখার পর থেকেই তার ফ্ল্যাটের করিডরে দাড়িয়ে এটা নিয়ে ভাবতে লাগলো । বেলায়েক হিউয়ানকে হাতের কাছে পাওয়ার এই শেষ সুযোগ । এরপর তিনি সকল কেন্টর-দের ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যাবেন । আর হনুমিনাসদের ইতিহাসে এরকম কেউ পরপর দুইবার রাজা হতে পারেনি । তাই স্বভাবতই বেলায়েক হিউয়ানকে আজীবনই একরকম নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা দেওয়া হবে । তাই যদি কিছু করতে হয় তাহলে সেটা আজই । কিন্তু এই কাজটি তো তার একার পক্ষে করা সম্ভব নয় । আবার সে যে কারও কাছে সাহায্য চাবে, সেটাও তো একটু কষ্টকর । কারণ যদি তার এই পরিকল্পনার কথা কেউ জেনে ফেলে আর সেটি যদি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কানে চলে যায় তবে নির্ঘাত তাকে মেরে ফেলা হবে । তবুও সে অনেক সাহস সঞ্চার করে, জেনিলিকে ফোন করে তার পরিকল্পনার কথা বললো । জেনিলি যে একটুও অবাক হয়নি কথাগুলো শুনে, সেটা বুঝতে পেরে সেরিনা অবাক হলো । ভালো কাজ করেছিস, আমাকে বলে, জেনিলি বললো সেরিনাকে । আর কাউকে বলিসনি তো ? না, আর কারও সাথে বলার সাহস নেই আমার । সেরিনা উত্তর দিলো জেনিলিকে । গতকাল কার্ল এই ব্যাপারটি নিয়ে আমার সাথে কথা বলছিল । কার্ল নিজেও নাকি বেলায়েক হিউয়ানের মৃত্যু চায় । আমিও ওর সাথে সহমত পোষণ করেছিলাম । তবে এই কাজটি কার্ল, তোর আর আমার পক্ষে করা সম্ভব নয় । এর জন্য প্রয়োজন একটি সংঘবদ্ধ একটি গ্রুপ । আচ্ছা, তুই এখনই পারলে আমার ফ্ল্যাটে চলে আয় । এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করি । জেনিলি এই কথাগুলো বলেই ফোন রেখে দিলো । সেরিনা একচোট ভেবেই তৈরি হয়ে নিলো । আর কিছুক্ষণ পরেই সে জেনিলি ও কার্ল-এর ফ্ল্যাটে গিয়ে পোঁছালো ।

সেখানে সে দেখতে পেলো, কার্ল ও জেনিলি দুইজনই আছে । কার্ল-ই বললো আগে । দেখো, সেরিনা তুমি যে কাজটি করার কথা ভাবছ সেটি অত্যন্ত বিপদজনক ও মারাত্মক ঝুঁকির কাজ । হতে পারে এই কাজটি করতে যেয়ে তুমি সফল না হলে কিন্তু পরবর্তীতে এতে সম্পৃক্ততার অভিযোগে তোমাকে মেরে ফেলার আদেশ হতে পারে । সেরিনা বললো, কিন্তু এই কাজটি তো আমার একার পক্ষে করা সম্ভব নয় । হ্যাঁ, সেটা আমিও জানি । তাই আমি পেরিসিকের সাথে কথা বলেছি একটু আগে । কার্ল উত্তর দিলো । পেরিসিক কে ? সেরিনা কৌতূহলী হয়ে কার্ল-কে জিজ্ঞাসা করলো । পেরিসিক আমার বন্ধু । ও দনারাল হাউজে স্পেশাল সিকিউরিটি রবোটিক হেল্পার সেকশনের হেডের সহকারী । ওর সাথে নির্বাচনের আগেও আমার কথা হয়েছিল । সেও জানতো বেলায়েক হিউয়ান এইবার ক্ষমতায় আসলে কেন্টরদের ভবিষ্যৎ মারাত্মক হুমকির মধ্যে পড়ে যাবে । হয়তো সাপার্ট-রা এই গ্রহ পুরোপুরি দখলও করে ফেলতে পারে তার সহায়তায় । তাই বেলায়েক হিউয়ানকে মেরে ফেলার যে কোন পরিকল্পনায় সে সাহায্য করতে প্রস্তুত । তাহলে এখন কি আমাদের এই পেরিসিকের সাথে দেখা করতে হবে ? সেরিনা জিজ্ঞেস করলো কার্ল-কে । হ্যাঁ, আমি অবশ্য প্রথমে ভেবেছিলাম ওকে এখানেই ডেকে নেবো কিন্তু তাহলে অনেকেই সন্দেহ করতে পারে । তাই এখন আমরা তিনজনই পেরিসিকের ফ্ল্যাটে যাবো । পেরিসিক অবশ্য ওর ফ্ল্যাটে একা থাকে না । ওর মেয়ে পার্টনারও থাকে । আমার পেরিসিকের সাথে কথা হয়েছে । সে তার মেয়ে পার্টনারকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে বাইরে পাঠিয়ে দেবে আমাদের জন্য । এরপর ওর সাথে আমরা পরিকল্পনার যাবতীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো । সেরিনা, কার্ল ও জেনিলি তখনই পেরিসিকের ফ্ল্যাটের উদ্দেশ্যে রওনা দিলো । খুব অল্প সময়ের মধ্যেই তারা পেরিসিকের ফ্ল্যাটে পোঁছালো । কার্ল-এর কথামতই দেখা গেলো, পেরিসিকের মেয়ে পার্টনার এখন ফ্ল্যাটে নেই । সে বাইরে গেছে । পেরিসিক হাসিমুখেই তাদেরকে অভ্যর্থনা জানালো ।

কার্ল, জেনিলি ও সেরিনাকে পেরিসিকের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো । কার্ল এবার তার পরিকল্পনার বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা শুরু করলো । পেরিসিকের কাজ হচ্ছে, সে আগামীকাল বেলায়েক হিউয়ানের নিরাপত্তার জন্য যে যে রবোটিক হেল্পারদের নিয়োগ করা হয়েছে বা ঠিক করা হয়েছে, তাদের সার্কিটে সমস্যা সৃষ্টি করবে । এই রবোটিক হেল্পারগুলোই বেলায়েক হিউয়ানকে হত্যা করবে । তবে এতে পেরিসিকের উপর যাতে কারও সন্দেহ না আসে, এই জন্য সেরিনার কাজ হবে বেলায়েক হিউয়ানের কাছে খবর পৌঁছানো যে তার আগামীকাল মৃত্যুর একটা ঝুকি আছে । ফোন না করাই ভালো, তাহলে ফোনের সূত্র ধরে হয়তো সেরিনাকে, পরবর্তীতে বাকিদেরকে ধরে ফেলতে পারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী । স্বভাবতই বেলায়েক হিউয়ান চাইবে তার নিরাপত্তা আরও বাড়িয়ে দিতে, তখন সে দনারাল হাউজ থেকে আরও অতিরিক্ত কিছু স্পেশাল রবোটিক হেল্পার অর্ডার করবে । আর জেনিলির কাজ হচ্ছে বেলায়েক হিউয়ানের স্ত্রী ও দুই মেয়েকে যেকোনভাবেই বেলায়েক হিউয়ানের কাছ থেকে দূরে রাখা । আর টেকনো বাহিনীকে ঘটনার ঠিক আগমুহূর্তে খবর দিয়ে দৃশ্যপটে নিয়ে আসার দায়িত্ব নিলো কার্ল নিজে । ঘটনার ঠিক আগমুহূর্তে খবর দেওয়া হবে যাতে করে তারা আক্রমণ ঠেকাতে এসেও বেলায়েক হিউয়ানকে বাঁচাতে না পারে বরং ঐসব সমস্যাসৃষ্ট হওয়া রবোটিক হেল্পারদের যাতে তারা ধ্বংস করে দিতে পারে । সকলেরই এই পরিকল্পনাটা পছন্দ হলো । পরিকল্পনা মতে পেরিসিক ও সেরিনার কাজ আজকে । আর কার্ল ও জেনিলির কাজ আগামীকাল । পেরিসিক ও সেরিনা পরিকল্পনা অনুসারেই কাজ করলো । এখন শুধু আগামীকালের অপেক্ষা ।

সকাল ধরেই রাজকীয় বাসভবনে উৎসব উৎসব আমেজ । কেউ একজন প্রাচীনকালের মত চিঠি দিয়ে বলেছে যে আজকে বেলায়েক হিউয়ানের উপর আক্রমণ হতে পারে, এই ঝুঁকিতে দনারাল হাউজ থেকে আরও কিছু অতিরিক্ত স্পেশাল রবোটিক হেল্পার আনা হয়েছে । জেনিলি ঠিকই বুদ্ধি করে বেলায়েক হিউয়ানের স্ত্রী ও দুই মেয়েকে বেলায়েক হিউয়ানের কাছ থেকে সরিয়ে দিয়েছে । সে তাদেরকে বেলায়েক হিউয়ানের উপর আক্রমণ হতে পারে, এই কথাটি বলায় তারা আর ঝুঁকি নিয়ে সামনে আসেনি । সাথে এও বলেছে এই কথাটি সে দনারাল হাউজের অষ্টম লেভেলের হেডের কাছ থেকেই শুনেছে । জেনিলির এই কথা অবশ্য তারা তিনজন সত্যতা নিশ্চিত করতে যায়নি এমনকি বেলায়েক হিউয়ানকেও জিজ্ঞাসা করতে যায়নি । আর বেলায়েক হিউয়ান অবশ্য আজকে লুকিয়ে থাকতে পারবেন না । যেহেতু আগেই ঘোষণা করা হয়েছিল, তিনি আজকে সকল কেন্টর-দের সাথে দেখা করবেন, তাই তিনি লুকিয়ে যাওয়া মানেই নিজের কথা নিজেই না রাখা । যা একজন রাজার স্বভাবের সাথে যায় না । সকাল ধরেই গ্রহের সকল কেন্টর-রা রাজার সাথে দেখা করতে আসতে লাগলো । অনেকেই ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও এসেছে, গ্রহের অভ্যন্তরীণ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীই তাদের জোর করে এখানে আনিয়েছে । প্রায় চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা পর বেলায়েক হিউয়ান একটু বিরতি নিলেন । এই সময়ে তিনি বাকী কেন্টর-দের পরবর্তীতে দেখা করার জন্য অপেক্ষা করতে বললেন । এই সময়ে তিনি একটি বড় হলরুমের মত জায়গায় তার স্পেশাল রবোটিক হেল্পারদের নিয়ে ঢুকলেন । আর বাকী সকলকেই ভিতরে ঢুকতে না করে দিলেন । তিনি ভিতরে ঢুকার পরপরই হঠাৎ-ই কি যেন হলো !! দনারাল হাউজ থেকে অর্ডার করা অতিরিক্ত স্পেশাল রবোটিক হেল্পারগুলো তার দিকে তেড়ে আসতে লাগলো । তিনি ভালোকরে মুখ খুলার আগেই, সেই রবোটিক হেল্পারগুলো তার দিকে অস্ত্র তাক করে তাকে গুলি করলো । মুহূর্তের মধ্যেই তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন । গুলি করার শব্দ হতেই টেকনো বাহিনীও হুড়মুড় করে হলরুমে ঢুকে পড়লো । রবোটিক হেল্পারগুলো যতক্ষণে তাদের দিকে অস্ত্র তাক করবে, তার আগেই তারা গুলি করে সকল রবোটিক হেল্পারগুলোকে ধ্বংস করে দিলো । কেউ একজন তাদেরকেও চিঠি দিয়ে এখানে আসতে বলছে একটু আগেই । এত কিছুর মাঝে রাজকীয় বাসভবনের আশেপাশে বিশৃঙ্খলা দেখা দিলো । সকল কেন্টর-রাই যে যার মত নিরাপদ জায়গায় সরে গেলো । ঘটনার প্রভাব শেষ হওয়ার পর সকল টিভি নিউজে প্রধান খবর হিসেবে বেলায়েক হিউয়ানের মৃত্যু-কে ফলো-আপ করতে লাগলো । হ্যাঁ, বেলায়েক হিউয়ান অবশেষে মৃত্যুবরণ করেছেন । কেন্টর-রা নির্বাচনের একদিন পরেই আবার রাজাশূন্য হয়ে গেলো । তবে এই ঘটনার পিছনে মূলত কারা সেটা আদৌ প্রকাশ পেলো না ।

অবশেষে দনারাল হাউজের সকল হেডের সিদ্ধান্তক্রমে রুইনি সেজার্টকেই কেন্টর-দের রাজা তথা রানী ঘোষণা করা হলো । এই খবর শোনার পর থেকে গ্রহের সকল কেন্টর-দের মাঝে আনন্দের বন্যা বইয়ে যেতে লাগলো । এরপর থেকেই স্প্লাটুজেনাস গ্রহের সকল কিছুই পরিবর্তন হতে লাগলো । শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত, সাপার্ট-দের সাথে কেন্টর-দের যুদ্ধ এখন নতুন দিকে মোড় নিয়েছে । কেন্টর-রা সাপার্ট-দের সাথে যুদ্ধের জন্য আরও একটি বাহিনী তৈরি করেছে । এই নতুন বাহিনীর নাম দেওয়া হয়েছে, ক্রাস্টেন । এককথায় কেন্টর-দের নতুন কর্মক্ষেত্র তৈরি করে রুইনি সেজার্ট আরেকটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিলেন । তিনি চাইলেও সাপার্ট-দের সাথে যুদ্ধ করা বন্ধ করতে পারবেন না, কারণ গ্রহের প্রায় সকল কেন্টর-রাই এই যুদ্ধের পক্ষে ।

সেরিনা অবশেষে তার ড্যাডির হত্যাকারীর প্রতিশোধ নিতে পেরেছে । সে তাই অনেক খুশি । আর তাছাড়া রুইনি সেজার্ট-ই যে এই কেন্টর-দের সঠিক অর্থে রাজা সেটা সেও মনে প্রাণে বিশ্বাস করে । কার্ল ও জেনিলিও খুশি । কার্ল, সেরিনা ও গ্রহের অধিকাংশ কেন্টর যারা ডিমোশন অর্ডিন্যান্সের কারণে ডিমোশনের শিকার হয়েছিল, সেই অর্ডিন্যান্সটি বাতিল করা হয়েছে । তাই সকলেই সকলের আগের পদটি ফিরে পেয়েছে । তবে সেরিনা এখনও মনে মনে আশা করে, একজন মনের মত ছেলে পার্টনার পাওয়ার, যার মুখের দিকে তাকিয়েই সারা জীবন কাটিয়ে দেওয়া যাবে । কার্ল ও জেনিলিকে দেখলে তার হিংসে হয় । সে কি আদৌ পাবে না মি. পারফেক্টকে ?

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে এপ্রিল, ২০১৮ সকাল ১০:৫১

রাজীব নুর বলেছেন: আমরা সহজ চিন্তা করতে পারিনা !

২| ২৮ শে এপ্রিল, ২০১৮ দুপুর ১২:৩৩

থিওরি বলেছেন: প্রচুর চরিত্র। মনোযোগ দিয়ে পড়লাম। শেষে আর একটু টার্নিং আশা করছিলাম

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.