![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
Elephant Safari
আমাদের প্যাকেজের অন্যতম ইভেন্ট ছিল হাতির পিঠে চড়ে জঙ্গল ভ্রমণ। পর্যটনের ভাষায় যাকে বলে ‘ এলিফ্যান্ট সাফারি’। ৫ জুন সকাল বেলা হোটেলের গাড়িতে আমাদেরকে নিয়ে যাওয়া হল ন্যাশনাল পার্কের একটি নির্দিষ্ট স্থানে যেখানে শত শত হাতি এবং হাতির পিঠে মাহুত চড়ে অপেক্ষা করছে পর্যটকদের জন্য। ঘড়িতে তখন সময় সকাল সাড়ে ছয়টা। আমাদের সাথে আছেন একই হোটেলের ৬ স্লোভেনিয়ান পর্যটক। রমেশ আমাদের জন্য টিকেট নিয়ে এল। হাতির পিঠে বসার জন্য সুন্দর আসন পাতা হয়েছে। আসনের চারদিকে কাঠের ফ্রেম দিয়ে শক্ত করে ঘিরে দেয়া হয়েছে যেন হাতির চলাচল বা উঠা-নামায় কেউ পড়ে না যায়।
একেক হাতির পিঠে ৪ জন করে পর্যটক বসার ব্যবস্থা। স্লোভেনিয়ার ৬ জন এবং আমরা ২ জন মোট ৮ জন হওয়ায় গ্র“পটা সুন্দর হয়েছে। ২টি হাতির পিঠে আমরা ৮ জন চড়ে বসলাম। এক হাতির পিঠে আমরা ২ বাংলাদেশী এবং ২ স্লোভেনিয়ান এবং আরেক হাতির পিঠে ৪ স্লোভেনিয়ানকে নিয়ে দুটি হাতি রওয়ানা হয়ে গেল জঙ্গল ভ্রমণে। আমরা ভেবেছিলাম আমাদের দেশের চিড়িয়াখানায় যেমন হাতির পিঠে চড়িয়ে ২/৩ মিনিট ঘুরিয়ে আবার নামিয়ে দেয়া হয় তেমন কিছু হয়ত। কিন্তু না, মাহুত মিঠু আমাদেরকে নিয়ে চলল জঙ্গলের ভেতরের, গহীন অরণ্যে। মিনিট দশেক চলার পর মাহুত হঠাৎ হাতি থামাল। কোন সমস্যা? না। মাহুত ইঙ্গিত দিল সামনের জলাশয়ের দিকে। রাইনো! তাকিয়ে দেখলাম, ওখানে উম্মুক্ত জলাশয়ে গায়ের বেশিরভাগ ডুবিয়ে দিয়ে গড়াগড়ি খাচ্ছে দুটি গণ্ডার। গাইড রমেশ আমাদের জানিয়েছিল, নেপাল পৃথিবীর দ্বিতীয় রাষ্ট্র যেখানে প্রচুর গণ্ডার রয়েছে। উম্মুক্ত স্থানে গণ্ডার! এ দৃশ্য কি মিস করা যায়? হাতে হাতে ক্যামেরার ফাশ লাইটগুলো জ্বলতে থাকল। ছবি তোলা শেষ হলে মাহুত হাতিকে চলার ইঙ্গিত দিল। খেয়াল করে দেখলাম, মাহুতের হাতি চালনা। হাতির ঘাড়ের উপর বসা মাহুত তার দুই পা স্থাপন করে হাতির দুই কানের নিচে। হাতির দুই কানের নিচে পা দিয়ে আঘাত করে মাহুত হাতিকে চলার নির্দেশ দেয়। ড্রাইভার যেমন গাড়ির স্টিয়ারিং-এ নিজের হাত রেখে গাড়ির নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখে। মাহুতও তেমনি পা দিয়ে হাতিকে দিক নির্দেশনা দেয়। পা দিয়ে আঘাত করলে তো হাতি চলবে কিন্তু এ বিশাল প্রাণীকে ডানে-বামে ঘুরার নির্দেশ কিভাবে দেয়-মনে প্রশ্ন জাগল। বিষয়টি খেযাল করে অবাক হয়ে গেলাম, সুবহানাল্লাহ! দেখলাম, হাতিকে যখন ডানে ঘুরানো প্রয়োজন তখন মাহুত তার ডান পা নিষ্ক্রিয় রেখে বাম পা দিয়ে ক্রমাগত ডান দিকে ঠেলতে থাকে আর মুখ দিয়ে নেপালী ভাষায় কী যেন বলে। হাতি ডানে ঘুরে যায়। আবার বাম দিকে ঘুরানো প্রয়োজন হলে ডান পা দিয়ে হাতির কানের নিচে ক্রমাগত বামে ঠেলতে থাকে এক্ষেত্রে বাম পা থাকে নিষ্ক্রিয়। আর দুই পা যখন এক তালে কানের নিচে আঘাত করতে থাকে তখন হাতি বুঝে নেয় এখন সোজা চলতে হবে। কী চমৎকার স্টিয়ারিং। গাড়িতে স্পীড বাড়াতে যেমন এক্সেলেটরে চাপ দিতে হয় হাতির পিঠে বসা মাহুত তেমনি হাতির গতি বাড়াতে ব্যবহার করে তার হাতের লাঠি। লাঠি দিয়ে হাতির ঘাড়ে আঘাত করলে এক্সেলেটরের সাথে গিয়ার অটো এডজাস্ট হয়ে যায়। হাতি চলে আরো দ্রুত। সাড়ে তিন হাত উচ্চতার মানুষ কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে বিশাল আকৃতির এই পশুটিকে। ভাবি, হায় আল্লাহ! হাতিটি যদি মনে করে সারা শরীর নয়, শুধু একটা পা আলতো করে যদি মানুষের পেটের উপর রাখে তাহলে খুব একটা চাপ দেয়ার প্রয়োজন নেই। ফট, ফট, ফটাস। নারী-ভুরি আর পেটের ভেতর কিছু অবশিষ্ট থাকবে না। মূহুর্তেই সব বাইরে বেরিয়ে যাবে। হাতি হয়ত ভাবে, হায়রে মানুষ! সৃষ্টিকর্তা প্রভু আমাকে তোর অধীনে থাকতে বলেছেন বলে কিছু করি না, নইলে আমার পিঠে চড়ে আবার আমারই শরীরে করিস আঘাত। এজন্যই বুঝি আল্লাহ বলেছেন,
আকাশ ও পৃথিবীর সবকিছুই স্বেচ্ছায় বা অনিচ্ছায় আল্লাহর হুকুমের অনুগত
হাতি এগিয়ে চলেছে হেলে দুলে। ইতোমধ্যে আমাদের হাতি বহরের সাথে যোগ দিয়েছ আরো দুইটা হাতি। পেছনে আসা ১টি হাতির পিঠে এক তরুন একাই বসে আছে। ঠিক ছোট সময়ে বিটিভিতে দেখা ভগবান এস গিদওয়ানীর কাহিনী অবলম্বনে সঞ্জয় খান এবং আকবর খান পরিচালিত ‘দ্য সোর্ড অব টিপু সুলতান’ এর নায়ক টিপু সুলতানের মত। ধনীর দুলাল হয়ত। চার টিকিটের টাকা দিয়ে এক হাতি দখল করে নিয়েছে একাই। হাতে দামী ক্যামেরা। বিশাল শালবন আর চেনা-অচেনা হাজারো প্রজাতির লতা-গুল্মের ফাঁক গলে আছড়ে পড়ছে সকালের সোনালী রোদ। রাতের বেলা সমুদ্রে চলাচলকারী জাহাজের সার্চ লাইটের মত। আরেকটু এগিয়ে মাহুত মিঠু হাতের লাঠি উচিয়ে ডানদিকে ইঙ্গিত করতেই দেখতে পেলাম কতগুলো বুনো শুয়োর। চলতে চলতে দেখা হল এক ঝাঁক চিত্রা হরিণ। চিত্রা হরিণের গায়ে ডোরাকাটা থাকে কিন্তু মায়া হরিণের শরীর ডোরাকাটা নয়। হরিণরা খুব ভীতু প্রাণী। শুনেছি, হরিণ তার পেটের ভেতরে সৃষ্ট শব্দ শুনেই ভয়ে দৌড় মারে। হরিণের ঝাঁক তাই খুব সহজে ক্যামেরাবন্দী করা যায় না। তবে খুব দামী ক্যামেরা হলে অবশ্য ভিন্ন কথা। হাতির বহর চলতে চলতে এক সময় একটি জলাশয়ের নিকট থেমে গেল। ও রে বাবা! বিশাল সাইজের দুটি গণ্ডার জলাশয়ের অল্প পানিতে বেশ আরামে শুয়ে আছে। সবার হাতের ক্যামেরার মেমোরি পূর্ণ হতে থাকল গণ্ডারের ছবিতে। প্রথমবার যে গণ্ডারের দেখা মিলেছিল সেখানে জলাশয়ের পানি বেশি থাকায় শুধু গণ্ডারের পিঠ ও মাথার ছবি তুলেই আমাদেরকে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছিল। কিন্তু এখানে পানি একেবারেই কম থাকায় গণ্ডারের পুরো শরীর দেখা যাচ্ছে। হাতিগুলোকে দেখেও গণ্ডারের মধ্যে কোন ভাবান্তর নেই। একবারের জন্য ফিরেও তাকাতে দেখলাম না প্রাণী দুটিকে। হাতির মাহুত মিঠুও বেশ অভিজ্ঞ। হাতির পিঠে আমরা চারজন। স্বাভাবিকভাবেই ২ জন পিছে ২ জন সামনে। আমরা সামনের ২ জন তো একের পর এক ছবি তুলেই যাচ্ছি পেছনের ২ জন তেমন জুৎসইভাবে ক্যামেরা তাক করতে পারছে না। তাই মিঠু তার পায়ের স্টিয়ারিং ব্যবহার করে হাতিটাকে ঘুরিয়ে দিল। এবার পেছনের দুইজন গণ্ডারের কোজ ছবি নিতে পেরে বেশ স্যাটিসফাইড। হাতির পিঠে ঘুরতে ঘুরতে এক সময় সামনে পড়ল এক ঝাঁক বানর। বানররা তো আজীবনই বানর। সব সময় বাদরামী। পর্যটকদের দিকে কেমন যেন হাসিমুখে পিট পিট করে তাকায়। হয়ত বলতে চায়, কী খবর! আমরা ক্যামেরা তাক করলেই পাছা ঘুরিয়ে দেয়। কেমন বদমাস! বন মোরগও দেখা গেল কিছু।
উম্মুক্ত বনে ঘুরছে, স্বাধীন, বন্ধনহীন। এক সময় জঙ্গল পেরিয়ে হাতি নদীর তীরে চলে এল। কি ব্যাপার! নদী পার হবে নাকি। হ্যাঁ, সত্যি সত্যি হাতিগুলো নেমে গেল পানিতে। নদীর স্বচ্ছ টলটলে জলে হাতিগুলো তৃষ্ণা মিটিয়ে নিল। পিঠে মাহুতসহ আমরা ৫ জন। নদীর মাঝপথে এসে হাতিটি আবার থামল। কী! আমাদেরকে পিঠ থেকে ফেলে দেবে নাকি। হায় হায় পানিতে পড়ে গেলে আমাদের মোবাইল, ক্যামেরা এসবের ভাগ্যে কী ঘটবে! আমরা প্রমাদ গুনলাম।
কী ছিল হাতির মনে আল্লাহই ভাল জানেন মাহুতের সীমাহীন ধমক আর অনুরোধের পর হাতির মনে হয় দয়া হল, সে আবার চলতে শুরু করল। হাতির পিঠে চড়ে পার হয়ে এলাম নদী। নদী পেরিয়ে মিঠু হাতিকে আবার ঢুকালো জঙ্গলে। এবার ফেরার পালা। ইতোমধ্যেই পেরিয়ে গেছে দেড় ঘন্টার বেশি সময়।
(চলবে)
২| ০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৫:২০
চিন্তায় আছি বলেছেন: ভাল লাগলো, চালিয়ে যান
৩| ০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৫:২০
টেকনিসিয়ান বলেছেন: আগে এতো নেপালের ভ্রমণ কাহিনি পড়েছিলাম কিন্তু চিতোয়ান সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারলাম এ ভ্রমনে। লেখককে ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১|
০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৪:৫৩
আদিম পুরুষ বলেছেন: ছবি এবং বর্ণনা ভালো লাগলো।