![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ওরে বাবা! কুমীর!!
দুপুরের পর আমাদের প্রোগ্রাম ছিল Canoeing Trip এবং Jungle Walk। লাঞ্চের পর রমেশ আমাদের নয়জন (আমরা ২ বাংলাদেশী, ৬ শ্লোভানিয়ান এবং ১ সৌদিয়ান) কে নিয়ে গাড়িতে করে রওয়ানা দিল নদীর তীরে। নদীর ঘাটে পৌছে দেখলাম আমাদের মত অনেক পর্যটক। রমেশ একটি নৌকা ঠিক করল। যাতে চেপে বসলাম আমরা নয়জন। আমাদের সাথে রমেশ এবং রমেশের সহকারী আরেকজন। নৌকার দুই পাশে ওয়ালের মত খাড়া। পাটাতনে ছোট ছোট চেয়ারের মত করে বানিয়ে রাখা হয়েছে যাত্রীদের বসার জন্য। আমার সামনে যোবায়ের ভাই এবং পেছনে বসেছেন সৌদিয়ান সালেহ ফাওজান। মি. রমেশ নৌকার সামনে দাড়িয়ে রাপ্তি নদী সম্পর্কে খানিকটা বক্তৃতা ঝাড়ল। সে জানাল, নদীর পুরো নাম বুদি রাপ্তি (Bhude Rapti River)। নদীটির উৎপত্তিস্থল ইন্ডিয়ার শিবা পর্বত। এখানে রয়েছে বহু ধরনের মাছ। রয়েছে ২ ধরনের কুমীর ইত্যাদি ইত্যাদি আরো অনেক তথ্য। আমরা তখন পাহাড়ের বুক চিড়ে এগিয়ে চলা রাপ্তি নদীর অপরূপ সৌন্দর্য্য অবলোকনে ব্যস্ত। কে শুনে রমেশের বক্তৃতা! সেই আমাদের দেশের শীতকালীন ওয়াজ মাহফিলের মত। গভীর রাতে হুজুর বয়ান করছেন। দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণের সব দামী দামী কথা বলে যাচ্ছেন। আর যাদের উদ্দেশ্যে এত মূল্যবান বাণী ছাড়ছেন সেই শ্রোতা মণ্ডলীর কেউ রাস্তায় চা খাচ্ছে, কেউ বহুদিন পরে দেখা দেখা বন্ধুর সাথে আলাপ করছে, কেউ বা তার পাশের জমিতে শীতকালিন কী সব্জি করা যায়, অথবা তার বুরো ক্ষেতের পোকা দমনের জন্য কোন্ বালাইনাশক ভাল হবে এ ব্যাপারে প্রতিবেশীর পরামর্শ নিচ্ছে। ওদিকে বেচারা বক্তার সামনে যারা বসে আছে তাদের কী অবস্থা! সামনের হাতে গুনা কয়েকজন বুড়ো লোক চাদর মুড়ি দিয়ে ওয়াজ শুনছে। কেউবা ঝিমাচ্ছে, আবার কেউবা পেছনের দিকে সটান শুয়ে নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে। হয়ত ভেবেছে, হুজুর বলে যাক, উনি তো আর মিথ্যা কিছু বলবে না। আমার বুঝে আসে না সারারাতব্যাপী ওয়াজ মাহফিলের মাহাতœটা কী। আবার রাত যত গভীর হবে, তত ভাল বক্তা। ভাল কথাগুলো যেন লোকেরা শুনতে না পারে। যাক সে কথা। নৌকা এগিয়ে চলল রাপ্তির বুক চিরে। টলটলে স্বচ্ছ পানি। কোথাও গভীর, কোথাও আবার নদীর পাথুরে তলদেশ পরিস্কার নজরে পড়ে। নদীর দুই পাশে পাহাড়ে জানা-অজানা নানা রঙের গাছ-পালা,গুল্ম-লতা। বিকালের সোনারোদ রাপ্তির বুকজুড়ে। মাঝে মাঝে স্রোত যেখানে কম, সেখানে গজিয়েছে কচুরিপানা। কচুরিপানায় ফুটেছে সাদা আর বেগুনি রং মিশ্রিত বাহারি ফুল। মি. সালেহ আমার পেছন থেকে হাত বাড়িয়ে আমার দিকে কচুরীপানার একটি ফুল এগিয়ে দিয়ে বলল, For you ! আমি হাসি মুখে Thankyou বলে ফুলটি নিয়ে বুক পকেটে রাখলাম।
১০/১৫ মিনিট নৌকা চলার পর মাঝি তার হাতের লগি দিয়ে নদীর পাড়ের দিকে ইঙ্গিত দিল। Crocodile! আমরা সবাই সেদিকে তাকালাম। ওরে বাবা! জলজ্যান্ত এক কুমীর! সটান শুয়ে আছে নদীর পাড়ে ঘাসের উপর। নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। হাল্কা স্রোতে নৌকা এগিয়ে চলছে ভাটির দিকে। এ কি স্বপ্ন দেখছি! যখন মনে হল, না স্বপ্ন নয়, বাস্তব। তখন ভয়ে গা হিম হয়ে যাবার মত অবস্থা। এখনি যদি কুমীর নদীতে লাফিয়ে পড়ে নৌকাকে আক্রমণ করে বসে! কোন যাত্রীর মুখে কোন কথা নাই। সবাই মনে হয় বিপদসীমা পার হওয়ার অপোয়। আরো বড় ভয়ের কারণ যে সামনে অপো করছে সেকথা তখনও আমাদের অজানা। মিনিট দশেক নৌকা চলার পর নৌকাচালক আবারও আগের মতই ইঙ্গিত দিল। অভিজ্ঞ মাঝি। দাড়িয়ে নৌকা চালাচ্ছে। তার মুখে কোন ভাবান্তর নেই। তাকিয়ে দেখি হায় আল্লাহ! সর্বনাশ!! আমাদের নৌকা থেকে মাত্র কয়েক গজ দূরে পানিতে গা ডুবিয়ে দিয়ে একটি কুমীর পানিতে ভেসে আছে।
জিওগ্রাফী চ্যানেলে দেখেছি কুমীর কিভাবে বন্য প্রাণীর উপর হামলে পড়ে। কে কি ভাবল জানি না। আমার মনের আনন্দের স্থান ভয়ে পরিপূর্ণ হয়ে গেল। নেপাল ভ্রমণে এসে নিজের মূল্যবান জানটা খোওয়াবো নাকি? চারদিকের কোন দৃশ্য আর এখন দেখতে ইচ্ছে করছে না। এমনিতেই নৌকা ওভারলোডেড। নৌকার শরীর পুরোটা পানিতে ডুবে একেবারে পানির প্রায় সমান্তরালে চলছে। সামান্য কাত হলেই নৌকায় পানি উঠে উঠে অবস্থা। আমার মনে হয় এই বুঝি নৌকা কাৎ হয়ে গেল, এই বুঝি আমরা সবাই নৌকা থেকে পড়ে গেলাম, এই বুঝি বিশাল কুমীর এসে নৌকাকে আক্রমণ করে বসল। এই বুঝি আমি পড়ে গেলাম একেবারে কুমীরের সামনে। মনে আরো কত কিছু জাগছে তার ইয়ত্তা নেই। আচ্ছা যদি এখানে নৌকা ডুবেই যায়, আমি যদি পড়েই যাই, সাতরে কি কুলে উঠতে পারব? কুমীর যদি ধরে ফেলে। তাহলে ব্যাপারটা কেমন হবে? ‘নেপালে বেড়াতে গিয়ে ইসলামী ব্যাংক কর্মকর্তার করুন মৃত্যু‘ হয়ত পত্রিকার শিরোনাম হবে। না, না এভাবে বিদেশ বিভুইয়ে আল্লাহ তুমি মৃত্যু দিয়ো না। এসব ভাবছি আর অপো করছি কখন এই জার্নি শেষ হবে। না! সে যাত্রায় যে বেঁচে গিয়েছিলাম তার তো আর প্রমাণ দেয়ার দরকার নেই। বেঁচে না থাকলে এই লেখা লেখছি কি করে? তাই না?
(চলবে)
©somewhere in net ltd.
১|
০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৩:২৯
দিকভ্রান্ত*পথিক বলেছেন: সিরাাাাাাাাাাাাাাাাাাাাামমমমমমমম ভাই