![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
হাতি প্রজনন কেন্দ্র (Elephant Breeding Centre)
জঙ্গল ওয়াকিং শেষে গাইড মি. রমেশ আমাদেরকে চিতোয়ান ন্যাশনাল পার্কের পাশে গড়ে তোলা হাতি প্রজনন কেন্দ্র (Elephant Breeding Centre)-এ নিয়ে যায়।
এটি আমাদের হোটেল এলাকা (সুরাহা) থেকে ৩ কিলোমিটার পশ্চিমে রাপ্তি নদীর তীরবর্তী চিতোয়ানের একটি বিখ্যাত দর্শনীয় স্থান। এলিফ্যান্ট সাফারিতে ব্যবহৃত হাতিগুলোর বেশিরভাগই এখান থেকে সরবরাহকৃত। আমাদের দাড় করিয়ে রমেশ গিয়ে টিকেট নিয়ে এল। সেন্টারের প্রবেশপথেই রয়েছে হাতির কঙ্কাল ও হাতির ব্যবহৃত বিভিন্ন সরঞ্জাম দিয়ে সাজানো `হাতি বিষয়ক যাদুঘর'। রুমের চারপাশের দেয়ালে সাঁটানো হাতির জীবনবৃত্তান্ত ও বিভিন্ন তথ্য সম্বলিত বড় বড় পোস্টার। কটির ঠিক মাঝখানে একটু মঞ্চের মত জায়গায় একটি হাতির মাথার কঙ্কাল।
হাতির যাদুঘর পরিদর্শন শেষে আমরা ঢুকলাম হাতির শেডে। এখানে ছোট বড় বিভিন্ন হাতির মেলা। মায়ের সাথে বাচ্চা হাতির খেলা ট্যুরিস্টদের মাতিয়ে রেখেছে। মা হাতিগুলো শিকলাবদ্ধ এবং বাচ্চা হাতিগুলো নির্দিষ্ট এরিয়ায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। মাঝে মাঝে বাচ্চা গুলো দৌড়ে লোহার পাইপ দিয়ে তৈরি ব্যারিকেডে-এর কাছে চলে আসে। মাথা দিয়ে গুতোগুতি করে ব্যারিকেট ভেঙ্গে বেরিয়ে আসতে চায়। ব্যর্থ হয়ে আবার দৌড়ে মায়ের কাছে চলে যায়। মায়ের পেটের সাথে খানিক ঘষাঘষি করে আবার ভু দৌড় সীমানার দিকে।
হাতির বাচ্চার এই দুরন্ত চলাফেরা পর্যটকদের নিকট বেশ উপভোগ্য। তাদের হাতের বিভিন্ন ব্রান্ডের ক্যামেরাগুলো সচল হয়ে উঠে। স্থির কিংবা চলমান বিভিন্ন চিত্রে পরিপূর্ণ হতে থাকে ক্যামেরার মেমোরি কার্ড। রমেশ জানায় এখানকার হাতিগুলো সরকারি সম্পত্তি। একসময় এই পার্ক বন্য হাতিতে পরিপূর্ণ ছিল। হাতিগুলো ধরে নিয়ে বিভিন্নজন বিভিন্ন কাজে লাগাতে শুরু করলে হাতি বিলুপ্তির আশংকা দেখা দেয়। তখন সরকার হাতি ধরা নিষেধ করে দেয় এবং বনের হাতি ধরে এনে এই হাতি প্রজনন কেন্দ্র গড়ে তোলে। রমেশকে জিজ্ঞেস করে জানলাম, এলিফ্যান্ট সাফারী, এলিফ্যান্ট বাথ ইত্যাদি কাজে ব্যবহৃত হাতিগুলো ব্যক্তিগত সম্পত্তি। এর বেশিরভাগই ইন্ডিয়া থেকে সংগৃহীত। আরেক জিজ্ঞাসার জবাবে মি. রমেশ আমাকে জানাল একেকটা হাতির বর্তমান মূল্য প্রায় ৪০-৪৫ লাখ টাকা। হাতি প্রজনন কেন্দ্রে পৌছে হাতির শেডগুলোর সামনে দাঁড়িয়ে আমাদের গাইড রমেশ হাতি সম্পর্কে মোটামোটি একটি ভাষণ দিয়ে দিল। আমরা কিছুণ তার তিন দিকে অর্ধ বৃত্তাকার অবস্থায় দাঁড়িয়ে ভাষণ শুনলাম। হাতি কত প্রকার, হাতির আয়ু, খাদ্যাভ্যাস, বেড়ে ওঠা, বয়োপ্রাপ্তির লণ ইত্যাদি বিষয়ে বেশ লম্বা বক্তৃতা শুনে আমরা একটু অধৈর্য হয়ে উঠলাম। শ্রোতার বিরক্তিভাব হয়ত রমেশ বোধ হয় বুঝতে পারছিল তাই ভাষণ সংপে করে সে আমাদেরকে সামনে নিয়ে চলল। একেকটা হাতির জন্য এখানে পৃথক পৃথক শেড নির্মান করা হয়েছে। হাতির শেডগুলোর শেষ প্রান্তে পৌছে একটা হাতির সাথে দুটি বাচ্চা দেখা গেল। রমেশ জানাল এই হাতিটি টুইন বেবি জন্ম দিয়েছে। সে আরো জানাল পৃথিবীতে হাতির একসাথে দুই বাচ্চা হওয়ায় এটি নাকি দ্বিতীয় রেকর্ড। এর আগে প্রথম রেকর্ডটি করেছে থাইল্যান্ডের একটি হাতি। হাতি যখন বয়োপ্রাপ্ত হয় তখন তার কানের নিচে, ঘাড়ের পাশের রং পরিবর্তন হয়ে কালো থেকে বাদামী রং ধারণ করে। হাতি গর্ভবর্তী হলেও তার গায়ের রংয়ে কিছুটা পরিবর্তন আসে বলে রমেশ আমাদেরকে জানাল। প্রায় ৪০ মিনিট ঘুরাঘুরি করে আমরা হোটেলের পথ ধরলাম। রাপ্তির পাড়েই হোটেলের গাড়ি অপো করছিল। হোটেলে যখন পৌছলাম সূর্য তখন পাটে।
বিদায় চিতোয়ান
৬ জুন। চিতোয়ানের শেষ সকাল। ৩ দিনেই চিতোয়ান, হোটেল সাফারি গাইড রমেশ, রাম, হোটেল বয় সুভাস (সে জানিয়েছিল তার একটি ডাকনাম আছে `মেচে') এবং হোটেলের সবকিছু যেন আমাদের নিকট বেশ প্রিয় ও পরিচিত হয়ে উঠেছে। মনে হচ্ছে, সময়টা যেন খুব তাড়াতাড়িই চলে গেল। হোটেল থেকে বিদায় নেয়ার আগে আমরা শেষবারের মত হোটেল, এর সামনের বাগান, বিভিন্ন ফুল ও ফলের গাছ ইত্যাদির ছবি তুললাম। হোটেল বয় সুভাস সদা হাস্যময় বালক। তার ছবিও তোলা হল। এ কয়েকদিন বেশ যত্ন করেই সে আমাদের খাইয়েছে। (যদিও তার অনেক কিছুই আমাদের রুচিসম্মত হয়নি, সেটা ভিন্ন কথা; তবে খাবার পরিবেশনে তার আন্তরিকতার অভাব ছিল না) আসার সময় হোটেলের টিপস্ বক্সে ফেলার জন্য সুভাসের হাতে গুজে দিলাম ১০০ রুপির নোট। সে খুব খুশি। বিদায় নিয়ে চিতোয়ান বাস স্ট্যান্ডের উদ্দেশ্যে আমরা গাড়িতে চেপে বসলাম। আমাদের সাথে যথারীতি গাইড রমেশ। আমাদের জন্য বাসের টিকিট বুকিং এর কাজটি সেই করেছে। আমাদেরকে বাসে তুলে দিয়ে তার দায়িত্ব শেষ। এরপর সে আবার ব্যস্ত হয়ে পড়বে নতুন অতিথি নিয়ে। গাড়িতে আমাদের সাথে আরো আছেন সউদিয়ান সালেহ ফাওজান। তার যাত্রা পোখারা। হোটেল সাফারীর গেট পার হলেই রাস্তার দু পাশে ধানতে। তারপর থারু পল্লী এরপর পাকা রাস্তায় সামান্য এগিয়েই গাড়ি এবড়ো থেবড়ো পাথুরে রাস্তায় পড়ল। রাস্তার দুই ধারে ভুট্টার তে। ভুট্টা তুলছে থারু মহিলারা। হোটেল থেকে বাস স্ট্যান্ডের দিকে যেতে যেতে আমার কাছে মনে হচ্ছিল যেন বিশাল এক নাটকের শেষ দৃশ্য মঞ্চায়িত হচ্ছে। কিছুণের মধ্যেই `সমাপ্তি' এর পর্দা টেনে দেয়া হবে। চিতোয়ান বাস স্ট্যান্ড দেখা গেল। হোটেল থেকে মাত্র ৫/৭ মিনিটের পথ। বাস স্ট্যান্ডে বেশ কয়েকটি বাস দন্ডায়মান। এর কোনটা যাবে কাঠমুন্ডু আবার কোনটার গন্তব্য পোখারা। সউদিয়ানকে পোখারার বাসে তুলে দিয়ে রমেশ আমাদেরকে নিয়ে চলল আরেকটি বাসের দিকে। Baba Travels & Tours (P.) Ltd.।
নেপালের ট্রান্সপোর্ট ও ট্যুরিজমের ক্ষেত্রে Baba Travels একটি বিখ্যাত নাম। এছাড়াও খেয়াল করেছিলাম ইধনধ শব্দটি দিয়ে এদেশের অনেক কিছুর নামকরণ করেছে। বাবা ট্রাভেলস্, বাবা স্টোর, বাবা হলিডেইজ, বাবা রিসোর্টস্ ইত্যাদি। এখানে `Baba' বলতে নেপালী তথা হিন্দুদের দেবতা `শিবা' কে মিন করা হয়। বাসের ভেতরে ঢুকে রমেশ আমাদের বুক করা টিকেট নিয়ে এল। সড়কপথে সুরাহা, চিতোয়ান থেকে কাঠমুন্ডুর দূরত্ব মাত্র ১৫৫ কিলোমিটার হলেও টিকেট নেয়ার সময় খেয়াল করলাম রমেশ ১০০০ রুপির দুটি নোট টিকেটম্যানের হাতে দিল। অর্থাৎ পারহেড ভাড়া ১০০০ টাকা।
নন এসি বাসে ভাড়াটা একটু বেশিই মনে হল। কিছুদিন আগে আমাদের দেশে বিখ্যাত `সোহাগ পরিবহণ' এর বহরে নতুনভাবে সংযুক্ত `সোহাগ প্রিমিয়াম' (ভলভো এসি) বাসে ঢাকা থেকে চিটাগাং গিয়েছিলাম। ভাড়া নিয়েছিল ৯৫০ টাকা। অথচ ঢাকা থেকে চিটাগাং এর দূরত্ব ২৬৪ কিলোমিটার। বাস ছাড়ার কিছু আগে রমেশ আমাদের দিকে বিদায়ী হাত বাড়াল। ১০০ রুপীর দুটি নোট (টিপ্স) হাতে ধরিয়ে দিলে তা চুপ করে পকেটে রেখে আমাদের কাছ থেকে বিদায় নিল। শুধু ঘুম আর বিশ্রাম ছাড়া চিতোয়ানের পুরো ৩ দিন সে আমাদের সঙ্গ দিয়েছে। ক্ষণিকের পরিচিত হলেও আমাদের বেশ আপন হয়ে উঠেছিল রমেশ। আমরা তাকে বিদায় দিয়ে বাসের সিটে গিয়ে বসলাম। চিতোয়ানের গরম আবহাওয়ায় বাসের ভেতরটাও বেশ গরম। কিছু করার নেই। এখন কতক্ষণে বাস ছাড়ে সেই অপেক্ষার প্রহর গুনা ছাড়া আপাতত আর কোন কাজ নেই।
(চলবে)
২| ০৯ ই জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১২:০০
মু. হাবিবুর রহমান তারিক বলেছেন: পুষ্টিহীনতার এই যুগে আপনি নিজেই 'ভিটামিন সি' হয়ে বসে আছেন, আপনি ভাগ্যবান! সময়, সুযোগ, সামর্থ্য- এগুলো সময়ের ব্যাপার মাত্র। হতাশ হওয়ার কিছু নেই। এক সময় আমার নিজের অবস্থাও আপনার মতই ছিল। আর আইন্নে মমিসিইঙ্গা ভাই জাইন্যা খুব বালা লাগলো। ধন্যবাদ।।
৩| ০৯ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১১:৫৩
মোঃ জুম্মা বলেছেন: সুন্দর বর্ণনা ।
৪| ১০ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১:১৮
আদিম পুরুষ বলেছেন: অনেক সুন্ধর বর্ণনা। নেপালে যাওয়ার ইচ্ছে আছে।
৫| ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১২:১০
সুবর্ণা রহমান বলেছেন: সুন্দর বর্ণনা । +
©somewhere in net ltd.
১|
০৯ ই জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১১:৩৬
ভিটামিন সি বলেছেন: আপনাদের ঘুরে বেড়ানোর গল্প পড়ে আমার হিংসা লাগে। আমি কেন ঘুরে বেড়াতে পারি না? আসলে আমার টাকা ও সময় কোনটাই নেই। আমিও কিন্তু খাডি মমিসিংঙ্গা।