নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মু. হাবিবুর রহমান তারিক

ময়মনসিংহের এক নিরব, নিভৃত পল্লীর এক অখ্যাত পরিবারের অতি নগন্য সদস্য।

মু. হাবিবুর রহমান তারিক › বিস্তারিত পোস্টঃ

হিমালয়ের দেশে (পর্ব-২৮)

১২ ই জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১২:১৮

কাঠমুন্ডু Durbar Squire

৭ জুন সকালে ফজরের সালাত আদায় করে আমরা আবার বের হলাম কাঠমুন্ডু শহরে। হাঁটতে হাঁটতে পৌছে গেলাম শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত বিখ্যাত Durbar Squire-এ। দরবার স্কয়ারের পুরো নাম Hanuman Dhoka Durbar Squire।



এটি নেপালী রাজ রাজাদের আদি বাসস্থানের নিকট অবস্থিত। এর পূর্বনাম কাঠমুন্ডু দরবার স্কয়ার যা বসন্তপুর দরবার স্কয়ার নামে পরিচিত ছিল। এটা কাঠমুন্ডু শহরের ৩টি দরবার স্কয়ারের ১টি। যা শহরের একেবারে প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত। থামেল থেকে হেঁটে যেতে মাত্র ১৫-২০ মিনিট সময় লাগে। সেখানের স্মৃতিফলক দেখে জানলাম ১৯৭৯ সালে এসব স্কয়ারকে ইউনেসকো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এখানে রয়েছে বহু রাজকীয় স্থাপনা, হিন্দু ধর্মের দেব-দেবীদের নামে উৎসর্গীকৃত বহু নয়নাভিরাম টেম্পল। ১৬৭২ সালে নির্মিত হনুমানের মূর্তির নামানুসারে এর বর্তমান নাম হনুমানঢোকা দরবার স্কয়ার । এখানে রয়েছে ১৫-১৮ শতাব্দীতে নির্মিত কিছু বিল্ডিং। এখানের রাজকীয় ভবনগুলো নির্মান করেন ১০ম শতাব্দীর শেষাংশের রাজা Gunakamadev। এখানকার দরবার স্কয়ার যাদুঘর কাঠমুন্ডুর দর্শনীয় স্থানসমূহের মধ্যে অন্যতম। এই যাদুঘরের সামনে একটি ছোট্ট মন্দিরের সম্মুখস্থ খোলা জায়গায় কবুতরের সংখ্যা দেখে আমাদের আক্কেল গুড়ুম হওয়ার যোগাড়। সুরমা রংয়ের হাজার হাজার কবুতর। কবুতরগুলোকে খাবার দেয়া হচ্ছে। খাবারের উপর হামলে পড়ছে বেশুমার কপোত-কপোতী।



মনে পড়ে গেল আমাদের দেশের জালালী কইতরের কথা। সিলেট শাহজালালের মাযারে যারা গিয়েছেন তাদের জানা আছে। সেখানেও এভাবেই জালালী কবুতরকে খাবার দেয়া হয়। জালালী কবুতরের ইতিহাস ঘাটতে গিয়ে জানলাম, ইয়েমেনে জন্ম গ্রহণকারী হযরত শাহ্ জালাল (রঃ) ৩৬০ জন আউলিয়া নিয়ে ১৩০৩ সালে তৎকালীন আসামের অর্ন্তভুক্ত সিলেট (শ্রীহট্ট) জয় করেন। ১৩০১ সালে শাহ্জালাল (র.) দিল্লীর বিখ্যাত ধর্ম সাধক হযরত নিজাম উদ্দীনের সাথে দেখা করেন। বিদায় মুহুর্তে শাহ্ জালালকে প্রীতির নিদর্শন স্বরুপ নীল এবং কালো রংয়ের একজোড়া কবুতর উপহার দেন। যা পরবর্তীতে শাহজালালের সবচেয়ে আদরের বস্তুতে পরিণত হয়। তিনি জীবিত থাকাকালে নিজ হাতে কবুতরের খাবার দিতেন। শাহ্ জালালের মাজার তথা বৃহত্তর সিলেটে বর্তমানে যা ‘‘জালালের কবুতর’’ বা ‘‘জালালী কবুতর’’ নামে পরিচিত। সিলেট ও এর আশপাশের অঞ্চলে বর্তমানে যে সুরমা রঙের কবুতর দেখা যায় তা ওই কপোত যুগলের বংশধর। সিলেটে কেউই এ কবুতর বধ করে না এবং খায় না। বরং সিলেট অঞ্চলের জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সবাই হযরত শাহ্ জালাল (রঃ) -কে মান্য করে বিধায় সবাই জালালী কবুতরের খাদ্য যোগায় ও আশ্রয় দেয়। শাহজালালের মাজারে যারা গিয়েছেন তাদের চোখে নিশ্চয়ই পড়েছে মাযার এলাকায় প্রতিদিন ঝাঁকে ঝাঁকে কবুতরের উড়াউড়ি। মাজার কর্তৃপক্ষ এসব কবুতরের খাবার সরবরাহ করে থাকে। জানা যায়, বাংলাদেশে একমাত্র সিলেটে ও ভারতের দিল্লীতে এ ধরনের কবুতর দেখা যায়।

(সিলেটের শাহজালালের রহ. এর মাযারের জালালী কবুতরের এই ছবিটি ইন্টারনেট থেকে নেয়া)

হযরত শাহজালার (র) এর বোনের ছেলে হযরত শাহপরাণকে জড়িয়ে আরেকটি কাহিনী সিলেট অঞ্চলে বেশ প্রচলিত। মামা হযরত শাহজালাল (রঃ) হিন্দুস্থান যাত্রার খবর পেয়ে ভাগ্নে শাহপরাণ মামার সঙ্গী হয়ে যান। দিল্লী থেকে প্রাপ্ত কবুতর জোড়া সিলেটে নিয়ে আসার পর বংশ বৃদ্ধি পেতে থাকে। সেগুলো কেউ কেউ খেয়ে ফেলতো। হযরত শাহ পরাণ (রঃ) প্রতিদিন একটি করে কবুতর খেতেন। তবে কবুতর খেয়ে তার পালকগুলি তিনি রেখে দিতেন। তাঁর মামা একদিন জালালী কবুতরের সংখ্যা কম দেখে খাদেমদের জিজ্ঞাসা করলে খাদেমগণ হযরত শাহজালাল (রঃ) কে আসল ঘটনা বলে দিলেন। হযরত শাহ পরাণ (রঃ) এটা জেনে মামাকে বললেন আপনার কবুতরগুলো ফেরত দিচ্ছি। এই বলে তার রতি পালকগুলি বাতাসে উড়িয়ে দিয়ে বললেন যাও আল্লাহর হুকুমে শাহজালালের দরবারে পৌছে যাও। সাথে সাথে পালকগুলি জালালী কবুতর হয়ে তার মামার দরবারে হাজির হল।



Swayambhu Temple

আমাদের প্যাকেজ প্রোগ্রাম অনুযায়ী ৭ জুন আমাদের কাঠমুন্ডু সাইটসিয়িং অর্থাৎ কাঠমুন্ডুর দর্শনীয় স্থানসমূহ ছাড়াও বিখ্যাত ভক্তপুর এবং নাগরকোট পরিদর্শনের কথা। সকাল সাড়ে নয়টায় মাদবের ঠিক করা প্রাইভেট কার নিয়ে ড্রাইভার বিষু আমাদের হোটেলে হাজির হল। মাদবের রুচি আছে বলতে হবে। সে আমাদের জন্য সম্পূর্ণ নতুন একটি মারূতি সুজুকী প্রাইভেট কার ঠিক করে দিয়েছে। বিষু আমাদেরকে প্রথমে নিয়ে গেল নেপালের বিখ্যাত শোয়াম্বু মন্দিরে। Swayambhu Temple টি Swayambhunath বলেও পরিচিত। মন্দিরটি কাঠমুন্ডু ভ্যালির পশ্চিমে এক পাহাড়চূড়ায় অবস্থিত; যা বুদ্ধদের প্রাচীন ধর্মীয় কেন্দ্র এবং তীর্থস্থান। মন্দিরে ঢোকার দুটি গেট রয়েছে। পদব্রজে যারা টেম্পলে যেতে চান পূর্বদিকের গেট দিয়ে সমতল থেকে প্রায় ৩৬৫ টি সিড়ির ধাপ পাড়ি দিয়ে তাদেরকে মন্দির প্রাঙ্গনে পৌছতে হবে। আর প্রাইভেট কার বা টেক্সিতে গমনকারী পর্যটকদের জন্য পাহাড়ের চারপাশ ঘূরে পাকা রাস্তা উঠে গেছে মন্দিরের দক্ষিণ-পশ্চিম গেটে। গেটে পৌছার পূর্বেই নজরে এল একটি বাক্য পাহাড়ের গা ঘেষে নির্মিত দেয়ালে বেশ বেড় করে লেখা ``The Perfect Buddists are born to benefit others.''। টেম্পলে বহু বানর বসবাস করে বলে Swayambhu Temple এর আরেক নাম Monkey Temple। টিকেট করে ভেতরে ঢুকতেই চোখে পড়ল উম্মুক্ত স্থানে খেলা করছে এক ঝাঁক বানর। যোবায়ের ভাই দেখাল সামনের দিকে। তাকিয়ে দেখি, একটি বিশাল ঝাঁকড়া গাছে খেলা করছে অগণিত বানর। এতণে মাঙ্কি টেম্পল নামকরণের স্বার্থকতা বুঝে আসল। চারদিকে চোখ বুলিয়ে দেখি শুধু সামনে নয়। ডানে-বামে, সামনে-পিছে লাফাচ্ছে, দর্শনার্থীদের দিকে ভ্যাংচি কাটছে বানর আর বানর।



শোয়াম্বু টেম্পল কমপ্লেক্সে রয়েছে বহু মঠ ও মন্দির। রয়েছে বুদ্ধের বিশাল মূর্তি এবং মিউজিয়াম। সম্প্রতি এর সাথে যুক্ত হয়েছে লাইব্রেরী। এখানে রয়েছে নেপালী পণ্যের দোকান, রেস্টুরেন্ট এবং হোটেল। গেট পেরিয়ে মন্দির প্রাঙ্গনে ঢুকতেই সামনেই পড়ে World Peace Pond. এখানে পানিপূর্ণ একটি চৌবাচ্চার ঠিক মাঝখানে পদ্মফুলের উপর পিতল নির্মিত মহামতি বুদ্ধের একটি মূর্তি।



মূর্তির পায়ের সামনে একটি পাতিলের মত পাত্র। সবাই কয়েন ফেলছে। নির্দিষ্ট পাত্রটিতে কয়েনটি ফেলতে পারলে ভাগ্য সুপ্রসন্ন বলে বুদ্ধদের বিশ্বাস। চৌবাচ্চার দেয়ালে লেখা রয়েছে ``May Peace Prevail on Earth'' (সারা পৃথিবীতে শান্তি বিরাজ করুক)। শোয়াম্বু টেম্পলের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হল এখান থেকে পুরো কাঠমুন্ডু শহর দেখা যায়।





(চলবে)

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই জানুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৩:১০

নতুন বলেছেন:

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.