নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মু. হাবিবুর রহমান তারিক

ময়মনসিংহের এক নিরব, নিভৃত পল্লীর এক অখ্যাত পরিবারের অতি নগন্য সদস্য।

মু. হাবিবুর রহমান তারিক › বিস্তারিত পোস্টঃ

হিমালয়ের দেশে (শেষ পর্ব)

১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৪:০৯

চল রে মন আপন দেশে

৮ জুন ২০১২। নেপাল মিশন শেষে আজ আমাদের ঢাকায় ফেরার পালা। গতকাল রাত থেকেই আমরা গোছাতে শুরু করেছি। সকাল বেলায় বিদায়ী তাওয়াফের মত আমরা কাঠমুন্ডুর রাস্তায় বিদায়ী মর্নিং ওয়াক সেরে সকাল ৭.০০ টায় বেরিয়ে পড়লাম। টেক্সি নিয়ে মাত্র ২৫ মিনিটে পৌছে গেলাম নেপালের ত্রিভূবণ ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে। সকাল ১০.৩০-এ ফ্লাইট। এয়ারপোর্টে পৌছে জানলাম, বিমান আধা ঘন্টা লেট। যাক, তবু বাঁচা গেল। আমরা এয়ারপোর্টের বাইরে ঘন্টাখানেক ঘুরাঘুরি করে নয়টার দিকে বোর্ডিং পাস সংগ্রহ করলাম। আসার সময় বাংলাদেশের এয়ারপোর্টে জানালার পাশে সিট চেয়েও পাইনি। এবার নেপালে বোর্ডিং পাস কাউন্টারে কর্মরত নেপালীর মন ঠিকই গলল। সে আমাদেরকে জানালার পাশে একটি সিট (সিট নং 10H) দিল। সকাল ৯ টা ১০ মিনিটে আমরা ইমিগ্রেশনে গেলাম। বিদেশীদের আলাদা লাইনের সুবাদে খুব তাড়াতাড়িই ফরমালিটি শেষ হয়ে গেল। এরপর সিকিউরিটি চেকিং। আমার মানি ব্যাগে ছিল একটি ব্লেড। মেশিনে ধরা পড়ে গেল। ২ টাকার ব্লেড। দেরি না করে বের দিলাম। ঝামেলা শেষ। কিন্তু আসল ঝামেলা যে সামনে অপেক্ষা করছে সে কথাই বলছি। ১০.৩০ টার ফ্লাইট। এয়ারপোর্টে পৌছে ডিসপ্লেতে দেখলাম ১১.০০ টাকায়। ভাবলাম আধা ঘন্টা! এ আর তেমন কি। কিন্তু ১১.০০ টায়ও যখন আমাদের ডাক এলো না আমরা প্রমাদ গুনলাম।



(কাঠমুন্ডুর ত্রিভুবণ এয়ারপোর্টে ইলেকট্রনিক ডিসপ্লেতে বিমানের পরিবর্তিত সময় দেখছেন উদ্বিগ্ন যাত্রীরা)

ঠিক এ সময়ে ডিসপ্লেতে লেখা ভাসল KTM-DHK BG 702 12.30 অর্থাৎ আরো দেড় ঘন্টা। খোঁজ নিয়ে জানলাম, যে বিমান আমাদেরকে নিয়ে যাবে তা এখনও ঢাকা থেকে ফ্লাই-ই করেনি। কি আর করা। আমরা তো আর কণ্ঠশিল্পী নচিকেতার মত বলতে পারব না ‘...বসে বসে দিন গুনা? না, না, না গুনব না’। অপেক্ষার প্রহর গুনতেই হবে। এয়ারপোর্টের বাইরে থাকলে নিদেন পে সিকিউরিটি চেকের আগে বিলম্বের কথা জানতে পারলে না হয় সেখানকার দোকান বা ডিপার্টমেন্টাল স্টোরগুলোতে ঢু মারা যেত। এদিক-সেদিক ঘুরাফেরা করে সময় কাটানো যেত। কিন্তু সিকিউরিটি চেকের পরে তো বাইরে যাবার জো নেই। সুতরাং ওয়েটিং রুম থেকে বিমান আসা-যাওয়ার দৃশ্য আর মাঝে-মধ্যে টিভিতে সিএনএন এর নিউজ দেখে সময় পারের চেষ্টা করা আরকি। অপেক্ষার দেড় ঘন্টা যে কত মিনিটে হয় তা হাড়ে হাড়ে টের পাওয়া গেল। যাই হোক ১১ টা ৪১ মিনিটে আমাদের কাঙ্ক্ষিত বিমান (বিজি ৭০২) ল্যান্ড করল। অপোর প্রহর শেষে বিমানে যখন উঠলাম তখন ঘড়ির কাটা ১২ টা ২১ এর ঘরে। ঠিক সাড়ে ১২ টাতেই বিমান চাকার উপর দিয়ে চলতে শুরু করল। ৩৩ হাজার ফিট উপর দিয়ে বিমানটি যাবে এবং ১ ঘন্টার মধ্যে ঢাকায় পৌছবে বলে বিমানের ক্যাপ্টেন ইমরান ও তার এক মহিলা সহকারী (নামটা বলেছিল কিন্তু বুঝতে পারিনি) সুরেলা কন্ঠে প্রথমে ইংরেজিতে পরে বাংলায় আশাবাদ ব্যক্ত করল। বাংলাদেশ বিমানের আভ্যন্তরীণ কিংবা আন্তর্জাতিক যেকোন ফ্লাইটে এখনও বিমান ছাড়ার আগে দোয়া-কালাম পড়ার রেওয়াজটি আছে। বাংলাদেশ বিমানে শুধু নয়। আমাদের দেশীয় প্রাইভেট বিমান সংস্থা ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ-এর ফাইটেও উড্ডয়নের আগে দোয়া কালাম পড়া হয়। কাঠমুন্ডুর ত্রিভূবণ এয়ারপোর্টের রান ওয়ে বেশ ছোট। বিমান ছাড়ার সময় চাকার উপর দিয়ে এক চক্কর দিয়ে একটু থামে তারপর চাকার উপর দিয়ে আবার চলতে শুরু করে। ১২ টা ৪২-এ প্রায় ২০০ যাত্রী নিয়ে শূন্যে উড়াল দেয় বিশাল বিমানটি। আজ আকাশ বেশ পরিস্কার। নেপাল আসার দিন আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকায় বিমান থেকে কাঠমুন্ডু শহর ভালভাবে নজরে আসেনি। আজ অনেকণ পর্যন্ত দেখা গেল। আস্তে আস্তে পাহাড়-পর্বত, পাহাড়ের গা বেয়ে নির্মিত সর্পিল রাস্তাগুলো অস্পষ্ট হতে থাকল। ১২ টা ৫০ মিনিটে বিমান মহাশূণ্যে স্থির হলে নাস্তা পরিবেশন করা হল। দি সেইম ম্যানু। ঢাকা টু কাঠমুন্ডু যাত্রার সময় যা যা দেয়া হয়েছিল। নাস্তা পরিবেশনের সময় জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখা গেল দুর্লভ এক দৃশ্য। হিমালয়ের বরফাচ্ছাদিত চূড়া। এ দৃশ্যটি দেখার জন্যই আমরা গতকাল নাগরকোট ভিউ পয়েন্টে গিয়েছিলাম, কিন্তু আকাশ কুয়াশাচ্ছন্ন থাকায় তা দেখা যায়নি। এবার বিমান থেকে তা স্পষ্ট দেখা গেল। যোবায়ের ভাই ক্যামেরা তাক করলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য Camera Standby। মানে চার্জ নেই। আমার মোবাইলের চার্জ তো আগেই শেষ। সুতরাং ‘যদি হৃদয়ে লেখো নাম...’ গানের মত এ দুর্লভ দৃশ্য শুধু চোখে দেখে এবং হৃদয়ে ধারন করেই সন্তুষ্ট থাকতে হল।



স্বদেশে স্বভূমে

বিমানে থাকাবস্থায় দুপুর ১ টা ৭ মিনিটে যোবায়ের ভাইয়ের সিটিসেল মোবাইলের সময় পরিবর্তন হয়ে গেল। ১ টা ২২ মিনিট। অর্থাৎ আমরা বাংলাদেশ সীমানায় প্রবেশ করেছি। এর মিনিট দশেক পরে বিমান বালারা Arrival Card/আগমনী কার্ড বিতরণ করল। আমরা পূরণ করলাম। এয়ারপোর্টের ইমিগ্রেশনে জমা দিতে হয়। বাংলাদেশের স্থানীয় সময় ১টা ৩৪ মিনিটে বিমান থেকে নিচের বাড়ি-ঘর, নদী-নালা আবছা নজরে এল। আকাশ পরিস্কার ও মেঘমুক্ত থাকায় বহু উপর থেকেও নিচের দৃশ্য কিছুটা দেখা যাচ্ছে। বিমান আস্তে আস্তে নিচে নামছে। নদী, জলমগ্ন ভূমি, বাড়ি-ঘর রোদের আলোয় চিক চিক করছে। নদী গুলো ঠিক যেন ছোটবেলায় জ্যামিতি বইয়ে দেখা বক্ররেখার মত। আস্তে আস্তে বাড়ি-ঘরগুলো চোখের সামনে ভেসে উঠছে। ১ টা ৪৩ মিনিটে একটু ঝাকি দিয়ে অনেক নিচে নেমে গেল বিমান। ককপিট থেকে জানানো হল ঢাকার তাপমাত্রা এখন ৩৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস। ৩ মিনিটের মধ্যে বিমান ল্যান্ডিং করবে মর্মে ঘোষণা দেয়া হল। বাড়ি-ঘরগুলো আস্তে আস্তে বড় হচ্ছে। কিছুণ পরে বিমানের শব্দে হঠাৎ পরিবর্তন। সম্ভবত ল্যান্ডিং এর প্রস্তুতি। চোখে পড়ল, আশুলিয়া এলাকা। বর্ষার পানিতে থৈ থৈ আশুলিয়া যেন এক বিরাট সমুদ্র সৈকত। ইটের ভাটার ফিক্সড চিমনিগুলো যেন একেকটা সুউচ্চ মিনারের মত মাথা উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই দেখা গেল উত্তরা মডেল টাউন। আমাদের বহনকারী বিমানটির চাকা যখন ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের রানওয়ে স্পর্শ করল তখন ঘড়িতে দুপুর ১টা ৫১ মিনিট। সবার হাতের মোবাইলগুলো যেন মুহুর্তে সচল হয়ে উঠল। আর একটা কথা না বললেই নয়। মোবাইলে কথা বলার ক্ষেত্রে আমরা বাংলাদেশীরা মাসাআল্লাহ...। এত কথা বলে। পৃথিবীর আর কোন দেশের নাগরিকরা এত কথা বলে কিনা তা বলার দুঃসাহস আমার নেই। যে কয়টি দেশ ভ্রমণ করেছি। বাংলাদেশীদের মত মোবাইল টকিং আর কোন দেশের নাগরিকদের করতে দেখিনি। মহাশূণ্যে নেটওয়ার্ক না থাকায় এতণ মোবাইলগুলো বিশ্রামে ছিল। গাড়ি পাঠানো হয়েছে কিনা, কোন্ ড্রাইভার এসেছে, গাড়ি কোথায় থাকবে, ডমেস্টিক টার্মিনালে নাকি ইন্টারন্যাশনাল টার্মিনালে, গাড়ি এখনও আসলো না কেন? ইত্যাদি ইত্যাদি বিভিন্ন কথোপকথন গাড়িওয়ালাদের। আমরা যারা পায়ে হাঁটার দল, তাদের গাড়ির কোন টেনশন নাই। তাই বলে কি আমরা মোবাইল বন্ধ করে বসে থাকব? গাড়ি না থাক, মোবাইল তো আছে। সচল হল আমাদের মোবাইলও। বাসায় ফোন করে জানালাম, আমরা পৌছেছি, বিমান এখনও চাকার উপর দিয়ে চলছে ইত্যাদি ইত্যাদি। বিমান থেকে নেমে ইমিগ্রেশন। দেশের ছেলে দেশে ফিরেছি। তবুও ইমিগ্রেশনের যন্ত্রণা। সে কি আর সহ্য হয়। যাই হোক, ইমিগ্রেশন থেকে আমরা গেলাম লাগেজ নেয়ার জন্য। কপাল ভাল; কাস্টম্স-এ কোন চেক হল না। কাস্টম্স পার হয়ে বড়লোকেরা গেল তাদের নিতে আসা গাড়ি আর ড্রাইভারের খোঁজে আর আমরা দেখছি কোন সিএনজি পাওয়া যায় কিনা।



চোখে তখন স্ত্রী, কন্যা, সংসার, অফিস আর মনে তখনও কাঠমুন্ডু, থামেল, পোখারা, চিতোয়ান, হিমালয়, এভারেস্ট।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.