নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

একজন সিনেমাখোর এবং গানপাগলার ব্লগ...

কিছুটা ব্যস্ততা, কিছুটা স্বস্তি এবং কিছুটা স্বপ্ন নিয়েই চলুক জীবন...!

নির্মক্ষিক

জাতীয়তাবাদের চেতনা আমার রক্তে...জয় বাংলা...

নির্মক্ষিক › বিস্তারিত পোস্টঃ

সিডনি লুমেটের কালোত্তীর্ণ মুভি Network (1976), এবং দু'কথা

১৪ ই মার্চ, ২০১৫ রাত ১:০৮

সিনেমাঃ Network (1976)

জনরাঃ স্যাট্যায়ার/ডার্ক কমেডি

পরিচালকঃ Sidney Lumet



বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় এক দৈনিক পত্রিকার ভুল-ভাল সংবাদ প্রকাশ এবং পরবর্তীতে ক্ষমাপ্রার্থনার ইতিহাস আমাদের সবারই জানা।

অনেকেই হাহুতাশ করেছে, গেল, এবার বুঝি পত্রিকাটা গেলো। বাস্তবে পত্রিকার কাটতি বেড়েছে বৈ কমেনি। পরবর্তীতে এই চল অন্যান্য পত্রিকাও ধার নিয়েছে। প্রবাদ আছে, "কথা আর তীর একবার ছোঁড়া হলে ফেরানো যায় না", পত্রিকাগুলো এটা ব্যবহার করছে। ভাবখানা যেন, "মাফ চাইলুম, কথা ফেরত নিলুম, নিষ্পাপ হয়ে উঠলুম।"

আর তাই আমরা এখন ভালোমত জানি মিডিয়া নিজেদের প্রচারের জন্যে যাচ্ছেতাই করতে পারে।

“নেটওয়ার্ক”, সিডনি লুমেটের ফিল্ম। রেটিং কমে যাওয়া পাঁড় টিভি শো উপস্থাপক “হাওয়ার্ড বিল”কে চাকরীচ্যুত করার সিদ্ধান্ত নেয় নিউজ কর্পোরেশন।

এতদিন কাজ করার পরে পথ মাপতে বলায় হাওয়ার্ড বিল আপসেট হয়ে পড়ে, মদে চুর হয়ে উপস্থিত হয় তার শেষ অনুষ্ঠানে, বিদায় নেয় দর্শকদের কাছ থেকে আর ঘোষণা দেয় সপ্তাহ দুই পর লাইভ টিভি শো’তে আত্মহত্যা করবে।

লেও ঠেলা!

অনাকাঙ্ক্ষিত এ ঘটনায় দর্শক, মিডিয়া উভয় নির্বাক, হতবিহ্বল।

পরের শো’তে হাওয়ার্ড বিল আত্মহত্যা বা আত্মহত্যার হুমকির পরিবর্তে সমাজ, জীবন, গণতন্ত্র নিয়ে “খাটি কথা” বলতে শুরু করে “লাইনে আসুন” স্টাইলে। দর্শকপ্রিয়তা বাড়তে শুরু করে তার শো’র। কাহিনী এগোলে দেখতে পাই, হাওয়ার্ড বিলের পাগলাটে বিদ্রোহী কথাবার্তা বন্ধ করার পরিবর্তে নিউজ কর্পোরেশন উৎসুক জনতার কৌতূহলকে কাজে লাগিয়ে চ্যানেলের শেয়ার, রেটিং বাড়ানোর ধান্দায় বিলকে শো চালিয়ে যেতে দেয়। বিলের শো’ জনমনে নিদারুণ প্রভাব ফেলতে শুরু করে। মানুষ ভাবতে শুরু করে বিলই সমাগত বিপ্লবের দূত। আত্মহত্যার হুমকি দেয়া উপস্থাপক হয়ে ওঠে পর্দার পথপ্রদর্শক, ফেভারিট সেলিব্রেটি।

নেটওয়ার্কে পরিচালক লুমেট আর লেখক চায়েফস্কি বলতে চেয়েছেন মিডিয়া স্রেফ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, যে কোন মূল্যে লাভের মুখ দেখা তাদের প্রধান উদ্দেশ্য। সে উদ্দেশ্যে কী প্রকাশ করছে, তার কী প্রভাব পড়ছে তা নিয়ে তাদের মাথাব্যাথা নেই।

“We no longer live in a world of nations and ideologies, Mr. Beale. The world is a college of corporations, inexorably determined by the immutable bylaws of business. – A. Jensen”

“There are no nations. There are no peoples. There are no Russians. There are no Arabs. There are no third worlds. There is no West. There is only one holistic system of systems, one vast and immane, interwoven, interacting, multivariate, multinational dominion of dollars. Petro-dollars, electro-dollars, multi-dollars, reichmarks, rins, rubles, pounds, and shekels. It is the international system of currency which determines the totality of life on this planet.” – Arthur Jensen (CCA Chairman, Network)

সিনেমায় সূক্ষ্ম রসবোধের আশ্রয় নিয়েছেন দুজন। সম্পূর্ণ সিনেমায় স্যাট্যায়ার অদৃশ্যভাবে দৃশ্যমান। ডার্ক কমেডি হিসেবে নেটওয়ার্ক সফল কাজ, নিঃসন্দেহে।

সত্তুরের দশকে নির্মিত এই সিনেমার সবচেয়ে আশ্চর্যকর বৈশিষ্ট্য হলো, এর বক্তব্য সব কালের ক্ষেত্রেই খাটে, যা সিনেমাটাকে কালোত্তীর্ণ করে তুলেছে। হাওয়ার্ড বিলের কণ্ঠে যেন চায়েফস্কির ক্ষেদ শুনতে পাই,

“You're beginning to think that the tube is reality, and that your own lives are unreal. You do whatever the tube tells you! You dress like the tube, you eat like the tube, you raise your children like the tube, you even *think* like the tube!” – Howard Bill, The Mad Prophet.

“It's the individual that's finished. It's the single, solitary human being that's finished.” – Howard Bill, The Mad Prophet.

বলুন তো, বর্তমান সমাজে এর কোন কথাটা সত্য নয়? সিনেমা, নাটক, সিরিয়ালের পারফরম্যারদের আমরা সজ্ঞানে/অজ্ঞানে ফলো করে চলেছি। উদাহরণ পেতে খুব বেশী দূরে যেতে হবে না, পত্রিকাগুলোর বিনোদন পাতার সংবাদে চোখ বুলিয়ে দেখুন। পুঁজিবাদ আর ভোক্তাবাদ কিভাবে চল ঢুকিয়ে দিয়েছে আঁচ করার চেষ্টা করুন।

কদিন আগেই “পাখি ড্রেস” নিয়ে যে কাণ্ডটা হলো, সেটা কী করে ভুলে যাই? এর আগেও বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন আজব আজব নামের পোশাক আশাক নিয়ে তুলকালাম কাণ্ড হয়েছে।

সেলিব্রেটিদের মত চুল কাটা, মেক আপ, ড্রেসিং, কথা বলার ধরণ, মুদ্রাদোষ, চোখ টেপার স্টাইল, ঢোক গেলার স্টাইল, তোতলানোর স্টাইল সবকিছুই ফলো করার মত লোক খুজে পাওয়া যায়।

এমনকি আমাদের মধ্যে সবচেয়ে যারা নিজেদের স্বশিক্ষিত, সুশিক্ষিত দাবী করি তারাও অবচেতনে এর আওতাভুক্ত। এই ট্রেন্ড প্রতিটা দেশের প্রতিটা সমাজেই ভিন্ন রূপে একই।

শেষ করার আগে পরিচালককে নিয়ে দু কথা না বললেই নয়। সিডনি লুমেট আমার মতে সবচেয়ে বঞ্চিত পরিচালকদের মধ্যে একজন। সিনেমার ভাব, গল্প, চরিত্রায়ন ইত্যাদিকে অধিকতর স্পষ্ট করে তোলেন বলে তিনি নিজে অস্পষ্ট – এ যুক্তি আমি মানতে রাজী নই। সৃষ্টির মহত্ত্বে স্রষ্টার ভূমিকা প্রধান। তাই, কাড়ি কাড়ি পুরস্কার আর পরিচিতি না থাকলেও সিনেমাপ্রেমীদের কাছে সিডনি লুমেট সেরাদের একজনই হয়ে থাকবেন সবসময়।

আমার রেটিং ৯.৫/১০



লেখাটি কিছুদিন আগে ফেসবুক গ্রুপ সিনেমাখোরে লিখেছিলাম।

মন্তব্য ৭ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই মার্চ, ২০১৫ সকাল ১১:৩৩

সুমন কর বলেছেন: রিভিউ ভাল হয়েছে। দেখতে হবে।

১৪ ই মার্চ, ২০১৫ রাত ১১:৫১

নির্মক্ষিক বলেছেন: ধন্যবাদ, দেখে ফ্যালেন :)

২| ১৪ ই মার্চ, ২০১৫ সকাল ১১:৪৭

বঙ্গভূমির রঙ্গমেলায় বলেছেন:
চমৎকার রিভিউ।

১৪ ই মার্চ, ২০১৫ রাত ১১:৫২

নির্মক্ষিক বলেছেন: ধইন্যাপাতা ভ্রাতা, মুভিটা দেখেছেন?

৩| ১৪ ই মার্চ, ২০১৫ দুপুর ২:৩১

আরাফাত নিলয় বলেছেন: হুম, ভালো।

৪| ১৪ ই মার্চ, ২০১৫ রাত ৯:২১

এম এম করিম বলেছেন: অসাধারন মুভি।

সিডনি লুমেটের মুভিগুলো ভাল লাগে।

+++

১৪ ই মার্চ, ২০১৫ রাত ১১:৫৩

নির্মক্ষিক বলেছেন: :) লুমেটের প্রথম মুভিই কিন্তু টুয়েল্ভ অ্যাংরি মেন ছিল, প্রথম মুভিতেই মাত করে দিয়েছে। প্রচুর ট্যালেন্টেড লোক।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.