![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
+ নিজের ব্যাপারে তেমন কিছুই বলার নাই কারন আমি তেমন স্পেশাল বা বিখ্যাত বা কুখ্যাত নই। তবুও কিছু বলার চেষ্টা করি। বাংলাদেশের একজন সাধারণ মানুষ এইটাই আমার পরিচয়। স্বপ্ন অনেক দেখি আমি, তবে বাস্তবতা শুণ্য।আর এই শুণ্য থেকেই কিছু করতে চেষ্টা করি। +বর্ষায় যদি আমার মন খারাপ হয় তাহলে সেগুলো বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে দেই আর গ্রীষ্মে প্রখর তাপে ঘাম করে ঝরিয়ে ফেলি, দুঃখ নামক জিনিসটাকে এই ক্ষুদ্র মানব দেহে বাস করতে দেয়া উচিত না।
আকাশে মেঘ জমছে যে যেভাবে পারছে ছুটছে, শহরের প্রতিটি মানুষের যেন এখন একটাই চিন্তা বৃষ্টি থেকে বাচতে হবে তবে গুটি কয়েক লোক আকাশের হুঙ্কার তোয়াক্কা না করেই আপন মনে হাটছে। তাদের মধ্যে একজন আবির। প্রকৃতির এ আয়োজন আবিরের মস্তিস্ক স্পর্শ করতে পারছেনা সে অন্য আরেকটা চিন্তায় ব্যাস্ত কিন্তু বাহ্যিক বলে কিছু একটা তো আছে। মস্তিস্ক স্পর্শ করতে না পারলে-ও বৃষ্টি ঝিরি ঝিরি ফোটা আবিরের দেহটাকে স্পর্শ করতে পেরেছে।
হঠাত বুক পকেটে থাকা মোবাইলটা বেজে উঠল।
-হ্যালো, আবির। কিরে কই তুই! বাস ধরছিস? কতক্ষণ লাগবে! তোর আম্মা তোকে দেখতে চাইতেছেন, অবস্থা খুব খারাপ!
আবির কথা বলতে গিয়েও পারছেনা, দু চোখের পানি আর বৃষ্টির পানি এক হয়ে মিশে গেছে।
-হ্যালো, কিরে শুনতেছস?
-হুম! আসছি আমি। বলেই নীরবে কাদতে লাগল আবির।
প্রকৃতির নিটল জলের সাথে শহরের পিচঢালা পথে আবিরের চোখের পানি এক হয়ে ঝরছে। আর কিছুদুর এগুলেই গ্রামে যাওয়ার বাস! আর সেটায় চড়ে ৩ ঘন্টার মধ্যেই আমার মায়ের মুখটা দেখব! আল্লাহ আমার হায়াতের সবটুকু নিয়ে আমার মায়ের হায়াতটা তুমি বাড়িয়ে দাও। প্রতিবার তুমি মায়ের দোয়াই কবুল করেছ আজ আমারটা কর। দু দিন আগেওতো ফোনে বলছিল "বাবা তুই আসবি কবে, কতদিন তোকে দেখিনা, কি খাস ওখানে কিভাবে থাকিস কিছুই জানি না" আমি অভিমানের সুরে বলেছিলাম-" মা সামনে ইয়ার ফাইনাল এখন আসি কিভাবে! এমন করলে আমি আসব না…" সেদিন তোমার চোখের জল আমি ঠিকই দেখিনি কিন্তু তোমার কুকড়ে কুকড়ে কান্নার আওয়াজটা ঠিকই আমার হৃদয় ধরতে পেরেছে মা।
কিন্তু তখন তোমার অনুপুস্থিতিটা বুঝতে পারিনি, বুঝতে পারিনি যে হৃদয়ের বা পাশটাতে আজকের এই তীব্র ব্যাথা । এইত মা আসছি আমি তোমার কাছে, গিয়ে যেন দেখি তুমি বাড়ির রাস্তায় ঠিক আগের মত আমার জন্যে দাড়িয়ে আছ, হাত মুখ ধোয়া শেষে তোমার আচল দিয়ে মাথা টা মুছতে দিবে আর খাওয়ার সময় সবার আগে বড় মাছের মাথাটা আমার প্লেটে তুলে দিতে দিতে বলবে " আবির হোষ্টেলে থাকা খুব কষ্ট তাই না বা জান" সবাই এক গাল হেসে বলবে " কষ্ট হলে আবির মিয়ার স্বাস্থ্যের এত উন্নতি হইত না" তুমি পাল্টা উত্তরে বলবা- "কোনখান থেকে স্বাস্থ হইছে, পোলাটা শুকিয়ে কাট হয়ে গেছে"
মা সেদিন ফোনে না বলছিলা আমাদের পুকেরে যে কৈ মাছ ছাড়া হইছিল তা খুব বড় হইছে, আমি বাড়ি এলে তুমি জসীম ভাইয়াকে দিয়ে সব চেয়ে বড় গুলা ধরে নিজের হাতে রান্না করবা, আমি আসছি মা তোমার হাতের রান্না খেতে। আনমনে কথা গুলি ভাবছিল আবির।
-ভাই কয়টা বাজে? হঠাৎ অন্য মানুষের আওয়াজে সম্মেত ফিরে পেল আবির।
বৃষ্টি থেমে গেছে, আকাশে মেঘ ও নেই, ক্ষীণ তিব্রতা নিয়ে সুর্যটা উকি দিয়েছে প্রখর হয়নি।
বুক পকেট থেকে মোবাইলটা বের করল আবির, মোবাইলটা ভিজে গেছে কিন্তু অফ হয়নি ওর ও টাইম দেখা দরকার। টাইম দেখে নিল, দুপুর ১ টা ৪৫ বাজে।
-ভাই কইটা বাজে?
-১টা ৪৫ বাজে। লোকটা চলে গেল সময় জেনেই। আবিরের ভিজা শরীর আর কান্না করাতে চোখ লাল হয়ে আছে সেগুলো খেয়াল করে একটা প্রশ্ন ও করল না। আসলেই এই শহরটার মানুষ গুলি বেশী যান্ত্রিক হয়ে গেছে।
বাসে এসে উঠে বসেছে পিছের সিটে, কিছুক্ষণ পরেই ছাড়বে বাস। আবির মোবাইলটা পকেটে রাখতে যাবে সে সময়েই আবার ফোন এল, -আবির, খালাম্মা আর নেই
বলে কাদতে লাগল মোবাইলের অপর প্রান্তের কণ্ঠ…
আবির কি বলবে বুঝতে পারছে না। এতক্ষণ তো খুব কস্টে কান্নাটা চেপে রেখেছিল কিন্তু আর পারল না, চিৎকার করে বাসি কেদে দিল আবির…বুকের বা পাশটার ব্যাথা এতটাই তীব্র হয়েছে যে স্ব্ভাবিক শ্বাস নিতেই আবিরের কষ্ট হচ্ছে।
সত্যি মা নেই? আবিরের ভাবতেই কষ্ট হচ্ছে, কি যেন হারিয়ে গেল চোখের সামনে থেকে কিন্তু ধরে রাখতে পারল না আবির, এমনটাই মনে হচ্ছে…
মোবাইলের অপর প্রান্তের থেকে কথা শুনা যাচ্ছে
-আবির, তুই আয় তুই আসলেই দাফন করা হবে, হ্যালো আবির শুনছিস, হ্যালো
বাসের সবাই নির্বাক হয়ে এক যুবকের শিশু সুলভ কান্না দেখছে…বাস তার নিয়ম মাফিক থিকই নিয়ে যাবে আবিরকে বাড়িতে কিন্তু মায়ের সেই পথ চেয়ে থাকা, আদর করা কি আর পাবে আবির তার এই জিবনে.…বৃষ্টি গুলি এবার মুষল ধারায় ঝরছে, একদিকে প্রকৃতি অপর দিকে আবির দুজনেই আজ দুঃখ ঝরাচ্ছে…
note:এক বড় ভাইকে উৎসর্গ করে লেখা।
©somewhere in net ltd.