![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ইতিহাস পর্যালোচনা করলে জানা যায়, ভারতীয় উপমহাদেশে করের প্রচলন শুরু করেছিলো আওরঙ্গজেব। তিনি জিজিরা কর ধার্য করেছিলো। এরপর ১৮৩৯ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী এটিকে প্রাতিষ্ঠানিক রুপ দেয়। স্যার জেমস গ্রিগ ভারতীয় সংবিধানে প্রথম আয়কর ব্যবস্থার প্রবর্তন করেন। এরপর ১৮৭৮ সালে আমদানি শুল্ক ব্যবস্থা প্রবর্তিত হয়। দেশ বিভাগের পর ১৯৬৯ সালে পাকিস্তান শুল্ক আইন আমদানি রপ্তানি উভয় ক্ষেত্রেই প্রয়োগ করে। স্বাধীনতার পর ১৯৯১ সালে বাংলাদেশে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যালু অ্যাডেড ট্যাক্স) বা ভ্যাট চালু হয়। এটি কিছু দিনের মধ্যেই জনপ্রিয় হয়ে উঠতে থাকে। দেশ ও জাতীয় উন্নয়নে যার আসলেই বিকল্প নেই।
সমস্যাটা সৃষ্টি হয় তখনই যখন এই কর বা শুল্ক বা ভ্যাট জনগনের উপর আশির্বাদ না হয়ে বোঁঝা হয়ে দাঁড়ায়। ইতিহাসে ভ্যাটের বিরোধিতায় বিক্ষোভ ও প্রসাশনের বাধ্য হয়ে প্রত্যাহারের নজিরও আছে অনেক।
ইংল্যান্ডে এক সময় স্ট্যাম্প লাগানো টুপির উপর করারোপ করা হয়েছিলো। এরপর ব্রিটেনের রানী ঘড়ি কেনার উপর কর ধার্য করে। তখন ঘড়ি বিক্রেতারা রাস্তার ধারে ঘড়ি সাসিয়ে রেখে প্রতিবাদ করে। ১৯৮৫ সালে ইউগ পাউডারের উপর করারোপ করা হয়। যাদের মাথায় টাক ছিলো এবং পরচুল পরতো তারা এই পাউডার ব্যবহার করতো। এর প্রতিবাদের সে সময় লোকজন পরচুল পরাই বাদ দিয়েছিলো। নেপোলিয়ান যুদ্ধের সময় চার্চিল খেলনা বন্দুকের ওপর কর ধার্য করে বসেন। যুদ্ধের জন্য আর্থিক সঙ্কট দূর করার উদ্দেশ্যে তিনি এই আয়কর প্রবর্তন করেন। ইতালির মুসোলিনির যুগে কিংবা তারও আগে ১৮২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের মিসৌরিতে বিয়ে না করার শাস্তি পেতে হতো। আর এটা হতো অর্থনৈতিক শাস্তি। সে সময় মানুষকে দিতে হতো বিয়ে না করার কর- 'ব্যাচেলর ট্যাক্স'। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সিগারেট ও মদের ওপর নতুন করে করারোপ করা হয়। প্রতিটি ক্ষেত্রেই প্রতিবাদ করেছিলো ভুক্তভোগিরা।
ভারতের ইতিহাসে অসহযোগ আন্দোলনের পটভুমি পর্যালোচনা করলে এর পিছনেও করের প্রভাব পাওয়া যায়। মুলত ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি লবনের উপর কর ধার্য করলে জনতা বিদ্রোহী হয়ে উঠে। সেটিই পরবর্তীতে আন্দোলনে রুপ নেয়।
যুগে যুগে কর নিয়ে রসিকতাও যে কম হয়নি। বেনজামিন ফ্রাঙ্কলিন বলেছিলেন, এ পৃথিবীতে একমাত্র মৃত্যুবরণ আর কর হলো অনিত্য। বার্নাডশ আক্ষেপ করে বলেছিলেন, 'আমার একটি নাটক জনপ্রিয় হলে আমিও শেষ হয়ে যাব'। বিশাল অঙ্কের করের বিরোধিতার তিনি এ উক্তি করেছিলেন।
তবে ইতিহাস কিছু শাসকের নাম চিরদিন স্মরন রাখবে যারা অহেতুক করপ্রথার বিরোধি ছিলো। রোমের সম্রাট আরোনিয়ান কর ও শুল্ক সংক্রান্ত সব কাগজপত্র আয়োজন করে পুড়িয়ে ফেলে দেশের মানুষকে করমুক্ত করেছিলেন। ইংল্যান্ডে গ্লান্ড স্টোন আয়করব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে বিলোপ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু নির্বাচনে তিনি পরাজিত হন।
বলতে দ্বিধা নেই- দেশের অর্থনীতির মেরুদন্ডই হলো কর বা ভ্যাট। তবে কর নিয়ে করাকরিও যে কম হয় তা নয়। নামে-বেনামে, জায়গা-অজায়গায় ভ্যাটা বসালে সেটি অর্থনীতির মেরুদন্ড জোড়দার করলেও ক্ষয় করে ফেলবে ভ্যাটদাতার দুইশ ছয়খানা হাড়ই। এ রকমই একটি হাড় ক্ষয় করা ভ্যাট চালু হয়েছে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে। সেটি হলো বেসরকারী শিক্ষাখাতে সাড়ে সাত শতাংশ ভ্যাট।
ভাদ্র মাসে কিছু ইতর প্রানী পাগলা হলে উল্টাপাল্টা কাজ কারবার করে। তবে শিক্ষাখাতে ভ্যাটারোপ করা সেই প্রানীটি জৈষ্ঠ মাসেই পাগল হয়ে এই কাজ করেছে। এটা যে স্পষ্টত জুলুম ও হঠকারিতা সেটি সকলের বোধগম্য হলেও তিনি বুঝেন না। শুরু থেকেই এর বিরোধিতা করে আসছে বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীসহ সর্বস্তরের জনগন। লেখালেখি, সভা-সেমিনার, স্মারকলিপী প্রদান কমতো আর হয়নি। শেষমেষ বাংলাদেশের চিরচারিত আন্দোলনের যা ইতিহাস তারই পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা ভ্যাট প্রত্যাহরের দাবিতে রাস্তায় নেমে এসেছে। রাস্তা অবরোধ করে শান্তিপূর্ন বিক্ষোভ করছে। এতেই প্রশাসনের কিছু অতি উৎসাহী রক্তচোষা আন্দোলন প্রতিহতের নামে নির্যাতনের পথ বেছে নিয়েছে।
প্রশাসনের নিকট আকুল আবেদন, শান্তিপূর্ন আন্দোলনকে সংঘাতের দিকে নিয়ে যাবেন না। দাবী আদায় না করে তারা হয়তো আজ ঘরে ফিরে যাবে না। তাদের মুখে একটাই কথা- “ভ্যাট দিমু না, গুলি কর।”
©somewhere in net ltd.