![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
“একটা চা দাও তো মামা”।
“কি চা?” শুনে বিরক্ত হয়ে দোকানের ছেলেটার দিকে কিছু বলতে গিয়েই বিশুর গলা শুনে কিছু বলল না হাসান।
“ভাইয়া খারান, আমি আনতিসি”।
বিশু, দোকানেই কাজ করে। হাসান এর হরলিক্স চা এর প্রতি অদ্ভুত নেশা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। তাই সব সময় এই দোকানে আসার আগেই হাসান আশা করে বিশু থাকবে সামনে পিঠে। কেননা নিজের আয়েশি কাজ গুলো নিয়ে বেশি বলতে সে পছন্দ করে না। আলগা ফকিরের বাদশাহি চাল আর কি। তার ওপর এমনিতেই টেনশনে এক পা এগোতে ইচ্ছা করছে না ওর আজকে। হঠাত করেই সিদ্ধান্ত টা নিয়ে ফেলল আজ। প্রথমে একটু কনফিউজড থাকলেও এখন বেশ লজিক্যাল মনে হচ্ছে ওর। “কালই বলে ফেলতে হবে যা হয় হোক, মানিক ঠিকই বলেছে, বাই চান্স তিথী যদি অন্য কাউকে হ্যা বলে দেয়! “I just can’t cry on forever” ভাবতে ভাবতে স্বর্ণ পত্রের প্রথম ধোঁয়া ছাড়ল।
অদ্ভুত ছটফট করছে মনের ভেতর, তাই অভ্যাসবশত পা নাচান শুরু। আসলে এর আগে কাউকে এভাবে সিরিয়াসলি প্রপোজ করার মত অসহায় অবস্থায় পরতে হয়নি তাকে। দেখতে শুনতে অতটা ভাল না হলেও, হাসান এর ভবঘুরে জীবন, আর কথার চার্ম অনেককেই কাছে টেনেছে। এছাড়া হাসান এরও কাউকে সেভাবে ভাল লাগেনি। তাই দোকলা হওয়ার সুযোগ হিসেবে যে প্রপোজ গুলো এসেছিল তা সবসময় অপর পক্ষের সাহসেই। কিন্তু কেন যেন হ্যা বলা হয়ে ওঠেনি। কিন্তু সব বদলে গেলো ৭ মাস আগে...
অন্য দুনিয়ার মানুস মনে হত বলেই হয়ত মেয়েটার দিকে আগে তাকায়নি সেভাবে। কিন্তু সেদিন ফিজিক্স ল্যাব এ একই গ্রুপে কাজ করতে গিয়ে অনিচ্ছুক হাতের ছোঁয়া; সতবিত ফিরে ভাল করে চাওয়া; এরপর থেকে নিজের অজান্তেই সব কিছ উপেক্ষা করে কথা বলতে চাওয়া; হঠাত হঠাত চোখে চোখ মিলে যাওয়ার লুকোচুরি; এখন মন, জীবন আর চোখ দুটো যে শুধু একজনকেই খোঁজে।
সাইকেল থেকে পড়ে হাত ভাঙার জন্য লেভেল ড্রপ ভার্সিটির প্রথম বছরটা আবার শুরু করতে হয়েছিল হাসানকে। বাসা থেকে অনেক লেকচার এর আলামত উঠে থাকলেও বাবার আদরের ছেলের কাছ থেকে সাধের সাইকেলটা কেও নিয়ে নেয়নি। চা শেষ করে সাইকেল এর তালা খুলে কেন যেন হাটতে ইচ্ছা করল। যেমন ভাবা, তেমন কাজ। ছেলেবেলা থেকেই হাসান তার মনের কথা শোনে। ফজল স্যার এর আদর্শ সাগরেদ হিসেবে তার একটি কথা স্কুল লাইফ থেকে নিজ আদর্শ মেনে এসেছে “ একটা মাত্র জীবন, মরে গেলেই ত শেষ; এই এক জীবনে যদি নিজ মন মত কাজ না করে অন্যের কথায় চলি তাহলে জীবনের সার্থকতা কোথায়!!!”।
সাইকেল নিয়ে উদাস মনে বাসার দিকে যেতে যেতে মানিক এর কথাটা আবার কানে বাজল; “তুই না বলে থাকতে থাকতে যদি সে অন্য কাউকে হ্যাঁ বলে দেয়! তুই ত জীবনেও আর নিজের মনের কথাটা তিথিকে বলতে পারবিনা”। কথাটা ঠিক বুলেট নয়, বুঝি গ্রেনেডের মতই বুকটাকে ছারখার করে দিতে উপক্রম হয়েছিল। কাউকে কিছু না বলে শুধুমাত্র “থাক তোরা আমি যাই” বলে বেড়িয়ে পড়েছিল। কিন্তু সাইকেলের প্রথম প্যাডেল মারার আগেই সে জানত সবকিছু বদলে গেছে, সে আর না বলার রিস্ক নিয়ে থাকতে পারবে না। এই জীবনে নিজেকেও কখন তিথির মত করে ভালবাসতে পারেনি সে।
ছোটন এর চিৎকার এ ঘুম ভেঙ্গেছিল। তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নিজেকে একবার আয়নায় দেখে নিয়ে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে রাস্তায় এসে হাসান এর পা যেন দুইমন ওজনের কিছু একটা হয়ে গিয়েছে বলে মনে হচ্ছিল তার। বুঝতে পারছে নার্ভাসনেস এর চূড়ান্ত পর্যায় আসন্নপ্রায়। অদ্ভুত একটা রাত গিয়েছে হাসানের। কত বার ঘুম ভেঙ্গে উঠেছিল মনে নেই তার। তিথিকে কিভাবে কি বলে কি বোঝাবে, কখন কোথায় ডাকলে তাকে একা পাওয়া যেতে পারে, কিভাবে শুরু করা যায়, কোন লাইনটা দিয়ে শেষ করলে সব চাইতে ভাল হয়, তিথির উত্তর কত ধরনের হতে পারে সব কিছু নিয়ে পিএইচডি করে ফেলেছে সে নিজের অজান্তেই।
মাথার পেছনে নিজেই নিজেকে কিল মেরে সব নেগেটিভ চিন্তা দূর করার চেষ্টা করল হাসান। “নাহ, পুরোপুরি হ্যাঁ না বললেও অন্তত সে সরাসরি না ত বলবে না”। সেই টুকরো টুকরো কথা দিয়ে শুরু, পরে একে অন্যের প্রতি আগ্রহ তো মিথ্যে ছিল না, ওর সাথে চোখাচোখি আর দেখা হলেই সেই ভুবন ভোলানো হাসিগুলো, পরে মেসেজ এর পর মেসেজ শেয়ার তো আর ভুল হতে পারে না; ভাবতে ভাবতে কখন ভার্সিটি গেইট এর সামনে চলে এসছে টেরই পেলো না। থমকে দাঁড়িয়ে পরের পদক্ষেপ দেয়ার আগে একটি পরিপূর্ণই কিন্তু নার্ভাস দীর্ঘশ্বাস ফেলে এগিয়ে যাওয়ার সময় হাসানের মনে হচ্ছিল ক্লাস পর্যন্ত যেতে পারবে তো!!
ক্লাস এ ঢুকে আজ আর পেছনে যাওয়ার সাহস হল না। সবার সামনের সীটে ধপ করে বসে পরার আগে বুকটা শীতল হয়ে গেল। পেছনের দিকে দাড়িয়ে থাকা তিথির বড় বড় মনির চোখ যে মিলেছে তার সাথে। প্রতিবারই এমন হয়, যতবার একজন আর একজনের সাথে দৃষ্টি বিনিময় হলেই হাসানের বুক কেমন যেন ঠান্ডা হয়ে জমে যায়, অদ্ভুত গভীরতা আর প্রগাড় মোহ; পুরো পৃথিবীকে ভুলে যায় সে কিছুক্ষন এর জন্য।
“নাহ আজ আর পিছনে তাকানো যাবে না”। মনে মনে স্থির করে নিয়ে একটা বই বের করে বসল হাসান। আজব ধরনের অনুভূতি মনের ভেতর। একটু আশংকা আছেই যে ও আজকে প্রপোজ করার মত পরিস্থিতি পাবে কিনা। আজকে থার্ড পিরিয়ড এর পর আর ক্লাস নেই। সেহেতু কিছু সময় হাতে আছেই। তিথির বাসায় চলে যাবার সম্ভাবনা কম। কিন্তু বাধ সাধতে পারে ওর বান্ধবীরা। কেন যেন ওকে একা ছাড়েই না। স্যার ক্লাস এ এসছেন, ম্যাথ ক্লাস। “নাহ পারতেই হবে, মানুস আক্ষেপ করে কোন কিছু না করার জন্য বেশি, করার জন্য কম”। মোবাইল টা দ্রুত বের করে মেসেজ টাইপ করল সে। “ক্লাস শেষে একটু কথা বোলো”।
সেন্ড অপশন এর বাটন চাপতে গিয়েও থেমে গেল সে। “নাহ তাহলে তো ক্লাসের গ্যাপ এই চলে আসবে, তখন বলা যাবে না। থার্ড পিরিয়ড এ পাঠাবো”। কাঁপা হাতে মোবাইলটা লক করে আবার শীত নিদ্রায় ডুব। কেমন যেন কান গরম হয়ে যাচ্ছে, বেশি নার্ভাস হলে সব সময় এটা হয় তার, আগেই খেয়াল করেছে। বোর্ড এর দিকে মনযোগ দেয়ার চেষ্টা করল হাসান। অন্য দিন হলে এতক্ষনে না জানি কতবার তাকিয়ে ফেলত তিথির দিকে। কিন্তু আজ আর সাহস হচ্ছে না। জীবনের প্রথম কাউকে প্রপোজ করতে যাচ্ছে সে। এর আগেও করেছে ফ্রেন্ড দের সাথে বাজি লেগে দুই একবার। কিন্তু কারো প্রতি সত্যিই প্রেমের অনুভূতি পাগলের মত জমাট বেঁধেছে এমন এই প্রথম।
হাসান এর কাছে এই অনুভূতিটা মোটেও পরিচিত নয়। হ্যাঁ এর আগে অনেক মেয়েই তাকে বলেছে যে তাদের নাকি ওকে নিয়ে এই ধরনের ফিলিংস আসে। ফ্রেন্ডদের ও দেখেছে তাদের কাছে শুনেছে যে সারাদিন কাউকে নিয়ে ভাবনার উদয় হয়। কিন্তু এতদিন এই প্রথম থিথিকে নিয়ে তার এই অনুভূতি। রাত নেই, দিন নেই, খেলার মাঠ, পড়ার টেবিল, ক্লাস সব খানেই একজনের উপস্থিতি। অথচ ক্লাস শুরুর প্রথম দিকে কখন ভাবেনি যে তিথির ভাবনায় মত্ত হয়ে যাবে সে অদুর ভবিষ্যতে। কথার শুরু হয় কোন এক ল্যাব এ একি গ্রুপ এ পরার পর। সব ই ঠিক ছিল। একদিন হঠাত ল্যাব করার সময় কাছে থেকে খেয়াল করা তারপর দুনিয়া বদলে গেল কেমন যেন। আগে ঠিক্টাক কথাও বলত। কোন সমস্যা হয় নি। ফেসবুক এও টুকরো টুকরো কথা থেকে লম্বা লম্বা মেসেজ। কিন্তু যেদিন তার মনের কাছে হার স্বীকার করে নিল সে, সেদিন থেকে তিথি সামনে আসলেই কেমন নার্ভাস হয়ে যায় সে। এটা সেটা নিয়ে অযথা কথা বলার চেষ্টা যতবারি করতে গিয়েছে নার্ভাস হয়ে গিয়েছে সে, একটা কথার পরই কথা শেষ। আর কিছু মাথায় আসেই না। বরং হাসান তিথির কাছেই অনেক কৃতজ্ঞ যে প্রায়ই তিথি নিজে থেকেই কথা বলতে আসে। “ইশ ও যদি জানত আমি কত খুশি হই, যখন ওর সাথে কথা বলতে পারি। যাক আজই আর কোন কিছু গোপন থাকবে না। সব বলে দেব”। এইসব উলটা পালটা ভাবতে ভাবতে দুই পিরিয়ড উড়ে গেল।
প্রোগ্রামিং ক্লাস শুরুর সাথে সাথেই কাঁপা হাতে মেসেজ পাঠানো, সাথে হাসানের দম উড়ে যাবার আগেই ছোট্ট একটি “ওকে” রিপ্লাই থেকে জীবন ফিরে আসা। স্যার কি যেন পড়াচ্ছেন। খুব গুরুত্তপূর্ণ এই দুটি শব্দ শুধু এতবধি কানে ঢুকেছে হাসানের। আর ‘সি’ নামক দুর্বোধ্য ভাষার লজিক তো কখন রকেটের ছাদে চড়ে আকাশ পানে পাড়ী জমিয়েছে। মাথার উপর দিয়ে গেলে বুঝি লাফিয়ে ধরার চেষ্টা করা যেত। সময় যেন থমকে দাড়িয়ে গেছে আরও ২০ মিনিট বাকি ক্লাসের। বুকে হাত দিয়ে হার্ট এটাক এর আশঙ্কা করল হাসান। সাথে আল্লাহর কাছে আকুতি প্রপোজ করার আগ পর্যন্ত যেন সুস্থ থাকতে পারে সে।
এই ছোট্ট ঘটনাবহুল জীবনে হাসান একটা জিনিসই শিখেছে, আর সেটা হল কোন কিছু নিয়ে এক্সপেক্টেশন কম করা। আর যদি সম্ভব হয় না করা। তার এই চিন্তা ধারা তাকে বহু স্থানে অনেক দুঃখ থেকে বাচিয়েছে। কিন্তু এই একটা ব্যাপারে সে যেন নিরুপায়, জানেনা কিভাবে এই এক্সপেক্টেশন কে কমিয়ে রাখা যায়। তিথি এমন একটি অধ্যায় যা সে কোন মুল্যেই হারাতে চায় না। প্রথম যেদিন সে বুঝতে পারে যে কিছু একটা বদলে যাচ্ছে তার মধ্যে, স্বভাববশতই সে তার এক্সপেক্টেশন কে কমিয়ে রাখার চেষ্টা করেছে। সম্ভব হলে চেঞ্জ টাকে দমিয়ে রাখার চেষ্টা করেছে। কিন্তু যতই সে ক্লাসের অপর প্লান্তের মেয়েটির সাথে কথা বলেছে, যতবার চোখ মিলেছে “he just dived in more”। কখন একটু পছন্দ ভালবাসার রুপ নিয়েছে সেটা বুঝতে পারলে তো এত ব্যাকুলতা আর অপর প্রান্তে কি চলছে সেই অজানাকে জানতে না পারার হাহাকার এভাবে মাথা পেতে নেয়ার সাহস করত না।
চিন্তা দুশ্চিন্তা আর আশা আকাঙ্ক্ষার সাগর পারি দিয়ে যখন সতবিত ফিরল, ঘড়িতে আর পাঁচ মিনিট বাকি। হঠাত ই হাসানের শরীর অবশ হয়ে এল। “যদি ও না বলে দেয়, যদি ও না বলে দেয়!! তাহলে কি আর ওর সাথে কথা বলা হবে না? এই যে প্রতিদিন ক্লাসে এসে ওকে দেখা আর ওর সাথে কথা বলার লুকায়িত আনন্দগুলোকে কি না চাইতেই বলি দিতে হবে?
“হ্যাঁ, স্যার বলেন আমি হাজির”
অবাক হয়ে সামনে তাকাল হাসান। ধক করে উঠলো তার সব ধরনের সিস্টেম। ক্লাস কখন শেষ হয়েছে টের পায়নি। তিথি তার সুগভীর নয়নে তাকিয়ে আছে তার দিকে যেন ভেতর টা পড়ে ফেলছে সে কিছু বলার আগেই।
দুই তিন সেকেন্ড মনে হয় চলে গেছে। নিজের সিস্টেম রিস্টার্ট দিয়ে চোখ অনিচ্ছা সত্তেও সরিয়ে নিল হাসান।
“ওহ, হ্যাঁ দাঁড়াও, ব্যাগটা গুছিয়ে নেই”।
অন্য দিন ব্যাগ গুছাতে টাইমই নেয় না সে। আজ বুঝি একটু সময় নিয়েই কাঁপা হাতে ব্যাগ গুছিয়ে নিল।
“চল হাটতে হাটতে বলি? নাকি!!”
হাসানের মনে ঝড় উঠে যায় এমন আর একটি ইউনিক এক্সপ্রেশন দিয়ে পাশাপাশি হাটা শুরু করল তিথি। বরাবরের মতই একবার তাকিয়ে মাথা নিচু করে সামনে যেতে শুরু করল হাসান।
“হুম বল, কি বলবে বলছিলে?”
“সিড়িতে নামতে নামতে বলি?” হচকচিয়ে হাসানের মরিয়া জবাব। মন ডুকড়ে কেঁদে উঠল যেন ‘সিড়ি যেন কখনই না আসে’। কিন্তু এসে গেল যেন অন্য সময়ের চেয়েও একটু বেশি তাড়াতাড়ি। দুধাপ নেমে কিছু একটা বলতে ইচ্ছা করল। বলার জন্য বামে তাকালও বটে, কিন্তু তিথির অনুসন্ধানী দৃষ্টি যেন গলাটা শুকিয়ে দিল। কোন স্বর বেরই হল না হাসানের।
“হাসান ভাই, থাকেন তাইলে কালকে দেখা হবে” চোখ উচিয়ে হাসান দেখল বিরক্তিকর বাচাল ধরনের ছেলেটা, ওর স্কুল এই পড়ত নিচের ক্লাসে এখনও ভাই ডাকে, নাম সোহাগ; যেন তাকে আর একটু সময় করে দিতেই পাশ দিয়ে নেমে যেতে যেতে কথা ছুড়ে দিয়ে গেল।
“আমার কিন্তু কেন যেন নার্ভাস ফিল হচ্ছে হাসান। কিছু বলছ না কেন?” তিথির এই স্বর এর সাথে হাসান খুবই পরিচিত, সে আসলেই নার্ভাস বুঝতে পারছে হাসান। কি বলবে ঠিক বুঝতে না পেরে অসহায় স্বর এ বোকার মত হাসি দিয়ে বলে ফেলল, “আমারও নার্ভাস লাগছে।”
কথাটা বলে ফেলে নিজেকে মনে মনে দুটা গালি দিয়ে চারতালার সিড়ির মাঝে গিয়ে থেমে তিথির দিকে ফিরল সে, বুঝে গিয়েছে আর পিছপা হওয়ার উপায় নেই।
“তিথি আসলে ব্যাপারটা হল, I think, I mean I think, I fell for you”
কিছু সময়ের অসহ্য নীরবতার পর সব যেন খুব দ্রুত ঘটা শুরু করলঃ
“মানে?”(তিথি)
“মানে হল। I became weak for you”
“weak means!!!”
আর সহ্য করতে পারল না হাসান। বলে ফেলল, একটু সাহস বেড়েছে বইকি (coz dah!! words out)।
“I am in love with you”
“কবে থেকে?” (তিথির মৃদু স্বর)
“for a while!! আচ্ছা আমরা নামতে নামতে কথা বলি?” বাকি স্টুডেন্ট দের উপর থেকে নামতে দেখে হাসানের নিজের গলার স্বর অনেকটা আকুতির মতই শোনালো নিজের কাছে।
“আসলে মাথায় কিছু ঢুকছে না। কি বলব বুঝতে পারছি না” (একটু সময় নিয়ে বলল তিথি) “আমার তো ঠিক বিশ্বাস হচ্ছে না কবে থেকে! কেন! কিভাবে!”
“Oh! It just happened, auto. আর লুকিয়ে রাখা পসিবল হচ্ছিলো না, সরি। তাই বলে ফেলতে হল”
টুকরো টুকরো কথা বলতে বলতে কখন মাঠের কাছে চলে এসছে হয়ত দুজনের কেউই খেয়াল করেনি। তিথি বলে উঠল
“ সবই তো ঠিকই চলছিল। বলার কি দরকার ছিল? এই কথা বলতে হবে এটা মনে হল কেন?”
রহস্যময় কথা, তাই আশাতে বুক বাঁধবে নাকি নিরাশার সাগরে ঝাঁপ দেয়ার প্রস্তুতি নিবে ঠিক বুঝে উঠতে পারল না হাসান।
“ জানি না। মনে হল পরে যদি বলার মত সিচ্যুয়েশন না থাকে!”
“একথা বলছ কেন কিসের সিচ্যুয়েশন?”(তিথি)
“ধর এখন আমরা কথা বার্তা বলছি। ভাল বন্ধুর মতই। দেখা সাক্ষাৎ হচ্ছে। পড়ে যদি এই রকম রিলেশন না থাকে! এই কথাগুলো বলার মত! যদি দূরত্ব বেড়ে যায়! তুমি অন্য কারো হয়ে যাও যদি! আমি তো তাহলে আর কোনদিন বলতেও পারতাম না, তাই না?”
“জানি না, আমার জন্য ব্যাপারটা খুব sudden মাথা কাজ করছে না”
যেন নিজের নার্ভাসনেস কে ঢাকতেই বলে চলল হাসান “ এছাড়া জানোই তো আমার জন্য মনে কিছু আসলে সেটাকে না বলে গোপন রাখা কতটা কঠিন। সোজাসুজি কথা বলি। বেশ কদিন ধরেই আটকে রেখেছি বুঝলে। আটকে রাখাটা সহজ না”
“আচ্ছা সেটা বুঝি তোমার মনের কথা সোজাসুজি বলে দেয়ার ব্যাপারটা। কিন্তু...... কি অবস্থা! ... আমার এখন কি করতে হবে? এটার উত্তর দিতেই হবে কি”
“উম মম... sort of …।। পরের কথাগুলো অনেকটা সারারাত ধরে ভেবে রাখা কথাগুলো মুখস্ত বলে গেল হাসান “ হ্যাঁ, বলতে তো হবে একটা কিছু। এখনি বলতে হবে তা না, তুমি সময় নিয়ে ভেবে বলতে পারো আমাকে। নো প্রবস... হ্যাঁ বা না যেটাই বল, anything is cool, don’t worry”
“আচ্ছা। এটা তো সাডেন weakness ও হতে পারে তাই না?”(তিথি)
“আমিও তাই ই ভেবেছিলাম প্রথমে। তাই ignore করারও অনেক ট্রাই করেছি। কিন্তু জিনিস্টা ঠিক কন্ট্রোল এ নেই। weakness হলে এভাবে বলে ফেলতাম না বা তোমাকে ডিস্টার্ব করতাম না। বুঝেছি যে এটা real deal তাই সিওর হয়েছি এখন তাই বলছি”
“আল্লাহ! কি অবস্থা! আচ্ছা জাস্ট আস্ক করছি। এখন যদি আমার উত্তর না হয় তাহলে কি হবে? আমাদের মধ্যে এই যে কথা বার্তা, সব কিছু অফ হয়ে যাবে? বুঝতে পারছি না মাথা হ্যাং হয়ে যাচ্ছে”
“উম মম... হ্যাঁ, at least যতদিন আমার ফিলিংস sort out না করতে পারি ততদিন তো অবশ্যই, দূরত্ব বজায় রাখতেই হবে”
কথাটা বলেই তিথির দিকে তাকাল হাসান। .....................।।
ডান কাঁধে ব্যাগ ফেলে দিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলতে ফেলতে বাড়ির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে হাসান। মুখে অনেক টেনশন এর মদ্ধেও মৃদু হাসি। টেনশন তো হবেই, ভাবার জন্য সময় চেয়েছে যে তিথি! ভেবে বলবে বলেছে। কিন্তু সেদিকে ঠিক ভ্রূক্ষেপ নেই তার। উত্তর না হলে যে দূরত্ব বজায় রাখতে হবে, এই কথা বলার পর এই জীবনের সব থেকে প্রিয় মুখটার দিকে তাকিয়েছিল সে, তখন সেই নিষ্পাপ মুখে কোন কিছু হারিয়ে ফেলার ভয়ের যে হাহাকার দেখতে পেয়েছিল! সেটাই মনে এক অদ্ভুত প্রশান্তি এনে দিয়েছে। উত্তর যা ই হোক না কেন সেদিক নিয়ে আর তেমন মাথাব্যথা নেই তার। কেননা নিজের ভবিষ্যৎ সে বুঝে ফেলেছে; হ্যাঁ বা না কোন কিছুই হাসানকে তিথির প্রতি নিখাদ ভালবাসাকে নেই করে দিতে পারবে না।
“ভালবাসি, নিজের থেকেও বেশি ভালবাসি” ভাবতে ভাবতে হাসানের যাত্রা শুরু অজানা পথে......।।
©somewhere in net ltd.