নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মিশু মিলন

মিশু মিলন

আমি বর্তমানে ইস্টিশন এবং সামহোয়্যার ইন ব্লগে লিখি। আমার সকল লেখা আমি এই দুটি ব্লগেই সংরক্ষণ করে রাখতে চাই। এই দুটি ব্লগের বাইরে অনলাইন পোর্টাল, লিটল ম্যাগাজিন এবং অন্য দু-একটি ব্লগে কিছু লেখা প্রকাশিত হলেও পরবর্তীতে কিছু কিছু লেখা আমি আবার সম্পাদনা করেছি। ফলে ইস্টিশন এবং সামহোয়্যার ইন ব্লগের লেখাই আমার চূড়ান্ত সম্পাদিত লেখা। এই দুটি ব্লগের বাইরে অন্যসব লেখা আমি প্রত্যাহার করছি। মিশু মিলন ঢাকা। ৯ এপ্রিল, ২০১৯।

মিশু মিলন › বিস্তারিত পোস্টঃ

অধিকাংশ মুসলমানের মানবতা থাকে না, থাকে মুসলমানবতা

২৩ শে এপ্রিল, ২০১৯ রাত ৮:৪১

২১ এপ্রিল রবিবার একই দিনে ছিল খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের ইস্টার সানডে এবং মুসলমানদের শবে বরাত। রবিবার সকালে যখন কলম্বোর কোচিচিকাদের সেন্ট অ্যান্থনি চার্চে, কুতুয়াপিটায়ের সেন্ট সিবাস্তিয়ান চার্চে এবং  নেগোম্বো শহরের বাত্তিকালোয়া চার্চে খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীরা ইস্টার সানডে উদযাপন করছিল তখনই ভয়াবহ বোমা বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে চার্চগুলো, ছিন্নভিন্ন হয় মানুষের দেহ, তপ্ত রক্তে ভেসে যায় চার্চের মেঝে, ভেঙে তছনছ হয় চার্চের ছাদ এবং আসবাবপত্র! এই তিনটি চার্চ ছাড়াও তিনটি হোটেলে বোমা বিস্ফোরণ ঘটানো হয়, সর্বমোট আটটি বিস্ফোরণ। এই বীভৎস হামলার ছবি অল্প সময়ের মধ্যেই ছড়িয়ে পড়ে সারাবিশ্বের সংবাদ মাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। দুঃসংবাদটি শোনামাত্রই কারা এই বোমা বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে তা ভাবতে এবং সিদ্ধান্তে পৌঁছতে আমার মস্তিষ্ক এক সেকেন্ডও সময় নেয়নি। আমার মস্তিষ্ক কেবল দুটি শব্দ স্মরণ করেছে আর তা হলো-মুসলিম জঙ্গি। সন্দেহের তীর শ্রীলংকার মুসলিম জঙ্গি সংগঠন ‘ন্যাশনাল তাওহীদ জামাত’র দিকে হলেও তারা এখনো পর্যন্ত হামলার দায় স্বীকার করেনি। তবে আমার ধারণা যে সত্যি তা এরই মধ্যে প্রমাণিত, কেননা ইতোমধ্যে দুজন আত্মঘাতী জঙ্গির নাম উঠে এসেছে, একজনের নাম জাহরান হাশিম এবং আরেকজনের নাম আবু মুহাম্মদ। আরেকটি প্রশ্ন আমার মনের মধ্যে উদয় হয়েছে আর তা হলো-এই হামলা কি নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের মসজিদে হামলার প্রতিশোধ? হয়তো তাই!

ক্রাইস্টচার্চের মসজিদে হামলায় পঞ্চাশজন মুসলিম মারা গিয়েছেন, সেটি কোনো সংগঠনের কাজ নয়, বিচ্ছিন্ন একজন বর্ণবাদী খ্রিস্টানের কাজ। বিশ্বব্যাপী মুসলিম জঙ্গিদের আক্রমণের প্রতিশোধ হিসেবেই সে হামলা চালিয়েছিল। কিন্তু সেটা সঠিক পথ নয়, উগ্রতার বিপরীতে উগ্রতা কোনো সমাধান হতে পারে না। উগ্রতার বিপরীতে যদি কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিতেই হয় তার জন্য রাষ্ট্র আছে, রাষ্ট্র প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে, এর জন্য ব্যক্তির অস্ত্র হাতে তুলে নেওয়া উচিত নয়। ব্যক্তি অস্ত্র হাতে তুলে নিতেই পারে, যদি রাষ্ট্র তাকে আহ্বান জানায়।

ক্রাইস্টচার্চে হামলার পর সারাবিশ্বের খ্রিষ্টানরা হামলাকারীর প্রতি নিন্দা জানিয়েছে, কেউবা মুসলিমদের কাছে ক্ষমা চেয়েছে, নিহত মুসলিমদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছে ফুল দিয়ে, মুসলিমদের নামাজ পড়ার সময় খ্রিস্টানরা পিছনে দাঁড়িয়ে পাহাড়া দিয়েছে। নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জাসিন্ডা আরর্ডান হিজাব পরে মুসলিমদের কাছে গিয়েছে তাদেরকে সমবেদনা জানাতে, রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে আজান প্রচার করা হয়েছে। শুধু খ্রিষ্টানরা নয়; হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন, শিখ, ইহুদি সকল ধর্মের মানুষ সেই হামলার নিন্দা জানিয়েছে। আর মুসলিমরা তখন কী করেছে? নিন্দা তো জানিয়েছেই, অগণিত মুসলিম খ্রিস্টানদেরকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেছে। অথচ মুসলিমদের কাছে মসজিদে হামলা নতুন কোনো বিষয় নয়। ইমলাম ধর্মের জন্মের পর থেকে এ যাবৎ মুসলিমরাই সবচেয়ে বেশিবার মসজিদে হামলা চালিয়েছে-পাকিস্তানে, আফগানিস্তানে, ইরাকে, সিরিয়ায়, মিশরে, ইয়েমেনে। সৌদি জোটের বোমা হামলায় ইয়েমেনে হাজার হাজার মুসলিম মরছে, লাখ লাখ মানুষ বাস্তুহারা, লাখ লাখ শিশু অপুষ্টিতে ভুগছে। অথচ মুসলিমরা এমন উগ্র ভাষায় নিন্দা জানায়নি বা জানায় না, এমন গালিগালাজ করেনি বা করে না। মুসলিমদের কাছে ব্যাপারটা যেন এমন যে মুসলিমরা মুসলিমদের অত্যাচার করবে বা মারবে, তাই বলে খ্রিস্টানরা কেন মারবে! কিন্তু দিন শেষে মরে কে? মানুষ!

ক্রাইস্টচার্চে  হামলার পর বাংলাদেশের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঝড় উঠেছিল, মিডিয়ায় ঝড় উঠেছিল। কিন্তু শ্রীলংকায় জঙ্গি হামলায় প্রায় তিনশো জন নিহত এবং পাঁচশো জন আহত হবার পরও বাংলাদেশের মুসলমানদের মধ্যে সেই ঝড়টি দেখতে পাচ্ছিনে, অল্প সংখ্যক মডারেট মুসলিমের মাঝে কেবল মৃদুমন্দ বাতাস বইছে, বেশিরভাগেরই মুখে কুলুপ! আমার পরিচিত একজন মুসলিম বিজ্ঞের মতো বললো, ‘এটা নরেন্দ্র মোদীর কাজ, নির্বাচনে জেতার জন্য এটা করিয়েছে!’ আরেকজন বললো, ‘এটা শ্রীলংকার তামিল টাইগারদের কাজ!’

আমি হাসলাম, কে যাবে এই মূর্খদের সঙ্গে তর্কে! সবকিছুতে এরা ষড়যন্ত্র তত্ত্ব খোঁজে। যুক্তি দাঁড় করায় যে মুসলিমদের ফাঁসাতে এসব করা হয়। তারপর প্রকৃত সত্য উদঘাটিত হলে বলে, ‘মুসলিমদের অত্যাচার করা হয় তাই তারা জঙ্গি হয়!’

পাকিস্তানে হিন্দু এবং খ্রিস্টানদের ওপর যে পরিমাণ নির্যাতন করা হয়, বাংলাদেশে হিন্দু-বৌদ্ধ এবং আদিবাসীদের  ওপর যে পরিমাণ নির্যাতন করা হয়, তার সিকিভাগ নির্যাতনও করা হয় না শ্রীলংকার মুসলিমদের ওপর। তবু সেখানে জঙ্গি গোষ্ঠী গড়ে উঠেছে, অথচ মোট জনসংখ্যার দশ ভাগেরও কম মুসলিম। আসলে মুসলিমদের ক্ষেত্রে সংখ্যাগুরু বা সংখ্যালঘু কোনো বিষয় নয়, বিষয়টা হচ্ছে জিহাদ, উদ্দেশ্যটা হচ্ছে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। তাই সব জায়গায়তেই ওরা হিংস্র, বর্বর, অসভ্য। আর এর প্রধান কারণ কোরান। কোরানের মতো একটি ধ্বংসাত্মক ধর্মগ্রন্থ নেই বলেই হাজার নির্যাতনের পরেও পাকিস্তানে হিন্দুদের এবং বাংলাদেশে হিন্দু কিংবা বৌদ্ধদের মধ্য থেকে কোনো জঙ্গি সংগঠনের উত্থান ঘটে না। কিন্তু দুঃখজনক হলো এই সহজ সত্যটি সাধারণ মুসলমানরা কখনোই স্বীকার করে না।

এই যে শ্রীলংকায় বোমা বিস্ফোরণের পর কিছু মুসলিম উল্লসিত, আর কিছু মুসলিম মুখে কুলুপ এঁটে আছে, আমাদের দেশের মুসলিমদের জন্য এটা নতুন কিছু নয়! যখন একই ভাষার এবং একই সংস্কৃতির এই দেশের হিন্দু জনতার ওপর মুসলিম জঙ্গিরা হামলা করে কিংবা তাদের বাড়ি দখল করে বা তাদের দেবালয় ভাঙচুর করে, তখন এই দেশের অধিকাংশ মুসলিমের একটুও মন খারাপ হয় না; কিন্তু তাদের প্রাণ ভীষণ কাঁদে পৃথিবীর অন্য যে কোনো প্রান্তে অন্য যেকোনো ভাষা কিংবা সংস্কৃতির একজন মুসলিম বর্ণবাদের শিকার হলে! এই দেশের বৌদ্ধরা যখন নির্যাতিত হয়,আদিবাসীরা যখন অত্যাচারিত বা খুন হয় সেটেলার মুসলিম এবং সেনাবাহিনীর দ্বারা, তখন এই দেশের বেশিরভাগ মুসলমানের মন খারাপ হয় না; কিন্তু তাদের প্রাণ কাঁদে গাজায় কেউ আহত হলে!

আজ শবে বরাতের রাত, আমি মাঝরাতেরও পরে বাসায় ফিরেছি। রাস্তায় প্রচুর মানুষ, কবরস্থান এবং কবরস্থানের আশপাশের রাস্তায় গিজ গিজ করছে মানুষ, বারবার কান পেতেও শ্রীলংকার হামলার বিষয়ে কারো মুখে কোনো কথা শুনতে পাইনি। দুপুরে, বিকেলে, সন্ধ্যায় এবং রাতে মাইকে আজান শুনেছি; এই মধ্যরাতের পরও মসজিদের মাইকে ইমামের দোয়া-দরুদ পাঠ শুনছি; কিন্তু মসজিদের মাইক থেকে একবারও ভেসে আসেনি শ্রীলংকার হামলাকারীদের প্রতি নিন্দা কিংবা নিহত এবং আহত মানুষের প্রতি সমবেদনা।

হ্যাঁ, এটাই ইসলামী সংস্কৃতি! কোনো মসজিদের মাইক থেকেই এই হামলাকারীদের প্রতি নিন্দা শোনা যাবে না, কেননা এরা সকলেই এই হামলার নীরব সমর্থক, জিহাদীদের সমর্থক! শুক্রবারের খুতবার বয়ানে মসজিদের মাইক থেকে ইহুদী-খ্রিষ্টানদের প্রতি ঘৃণা ছড়ানো হয়। নবী  ‍মুহাম্মদ ইহুদী-খিস্ট্রানদের ঘৃণা করতে বলেছেন, তাই ইহুদি খ্রিস্টানদের প্রতি কোনো অন্যায় করা হলে কিংবা ইহুদি-খ্রিষ্টানদের হত্যা করা হলেও তাদের প্রতি সমবেদনা জানানো যাবে না, তাদেরকে ঘৃণা করতে হবে, ক্রমাগত ঘৃণা করতে হবে। মৃত্যশয্যায়ও মুহাম্মদের ক্রোধোন্মত্ত কণ্ঠস্বর থেকে উচ্চারিত হয়েছে ইহুদী-খ্রিস্টানদের প্রতি বিদ্বেষপূর্ণ বাক্য-‘হে প্রভু, ইহুদী এবং খ্রিস্টানদের ধ্বংস করো। প্রভুর ক্রোধ তাদের ওপর প্রজ্জ্বলিত হয়ে উঠুক। সমগ্র আরব ভূ-খণ্ডে ইসলাম ব্যতিত অন্য কোনো ধর্ম  না থাকুক।’

সঙ্গত কারণেই অধিকাংশ মুসলমানের মানবতা থাকে না, থাকে মুসলমানবতা; সেটাও নিজ সম্প্রদায়ের প্রতি-সুন্নীর প্রতি সুন্নীর মুসলমানবতা, শিয়ার প্রতি শিয়ার মুসলমানবতা, আহমদীয়ার প্রতি আহমদীয়ার মুসলমানবতা ইত্যাদি!

২২ এপ্রিল, ২০১৯।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.