নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মিশু মিলন

মিশু মিলন

আমি বর্তমানে ইস্টিশন এবং সামহোয়্যার ইন ব্লগে লিখি। আমার সকল লেখা আমি এই দুটি ব্লগেই সংরক্ষণ করে রাখতে চাই। এই দুটি ব্লগের বাইরে অনলাইন পোর্টাল, লিটল ম্যাগাজিন এবং অন্য দু-একটি ব্লগে কিছু লেখা প্রকাশিত হলেও পরবর্তীতে কিছু কিছু লেখা আমি আবার সম্পাদনা করেছি। ফলে ইস্টিশন এবং সামহোয়্যার ইন ব্লগের লেখাই আমার চূড়ান্ত সম্পাদিত লেখা। এই দুটি ব্লগের বাইরে অন্যসব লেখা আমি প্রত্যাহার করছি। মিশু মিলন ঢাকা। ৯ এপ্রিল, ২০১৯।

মিশু মিলন › বিস্তারিত পোস্টঃ

লৌকিক লোকলীলা (উপন্যাস: পর্ব-এক)

১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৪:৪৪

এক

নির্জন রাতে উদোম গায়ের তিনজন মানুষ মধ্যম গতিতে গ্রামের কাঁচা রাস্তা ধরে নগ্ন পায়ে দৌড়তে থাকে। জয়ন্ত ফেরিওয়ালার হাতুরির ঘায়ে তোবড়ানো ভাঙারি সিলভারের গামলার মতো আধখানা চাঁদ আকাশে থাকলেও তা মধ্যবয়সী গৃহিনী অম্বিকার ধান সিদ্ধ করা জ্বলন্ত উনুন থেকে উদ্গত কালো ধোঁয়ার মতো মেঘের আড়ালে কিছুটা নিষ্প্রভ, তার ওপর লোডশেডিং এর কারণে আশপাশের গৃহস্থবাড়ির বৈদ্যুতিক বাতি বন্ধ থাকায় এবং দু-পাশের বাড়ি লাগোয়া জমিতে আম-কাঠালের বাগান থাকায়, ঝুঁকে থাকা ঘন-দীর্ঘ গাছপালার শাখা-পাতার বাড়বাড়ন্তে নরেশ কামারের মাথার কলপ দেওয়া ঝাঁকড়া চুলের মতো অন্ধকার রাস্তা। তিনজনের পরনেই কাছা মারা লাল ধুতি, ওরা নিজেদের গলা আর গায়ে প্যাঁচানো রুদ্রাক্ষের মালার দানায় দানায় ঘর্ষণের শব্দ শোনে, পায়ের ধপ ধপ আর বুকের কন্দর থেকে নাসারন্ধ্র দিয়ে বের হওয়া ঘন নিশ্বাসের ফোঁস ফোঁস শব্দ শোনে, তারক বৈরাগীর হাতের খঞ্জনির মতো আশপাশের ঝোপঝাড় থেকে একনাগাড়ে ঝিঁঝি ডাকার শব্দ শোনে, শোনে পিছনে ফেলে আসা ঢাক ও কাঁসরের বাদ্য, আর হঠাৎ হঠাৎ কানে আসে উঁচু কোনো গাছের অন্ধকারাচ্ছন্ন ডালে বসে থাকা কোকিলের সুমিষ্ট কণ্ঠস্বর।

তিনজনের মধ্যে সবার আগে পরিমল, ওর ডানহাতে ধরা নরেশ কামারের নিপুণ হাতে বানানো মাঝারি আকৃতির ধারালো রামদা, বাম হাত ফাঁকা; মাঝখানে অমল, সে ডানহাতে বেতের ছড়ির মাঝ বরাবর এমনভাবে এঁটে ধরেছে যাতে ছড়ির চারটে বেতের মধ্যে সংঘর্ষজনিত শব্দ না হয়, আর বামহাতে শক্ত করে ধরেছে পরিমলের মেরুদণ্ড বরাবর কোমরের কাছা; পিছনে বিলাস, ওর ডান কাঁধের ওপর ফেলে রাখা কোদালের হাতল ডান হাতে আর বাম হাতে ধরা অমলের কোমরের কাছা। চৈত্র সংক্রান্তির রাত হলেও দুপুরের পর এক পশলা বৃষ্টি হওয়ায় প্রকৃতিতে এখনো কিছুটা শীতলতার আভাস, তবু বেশ কিছুদূর একটানা দৌড়ে আসায় তিনজনের শরীর ঘামতে শুরু করে, কিছুটা হাঁফিয়েও ওঠে, তবু থামে না ওরা; রাস্তার দু-দিকে গৃহস্থবাড়ি কিংবা বাগান নেই এখন, ফসলি ক্ষেত, তাই অন্ধকারের দাপট এখানে কিছুটা কম। হঠাৎ উল্টোদিক থেকে ধীর গতিতে আসা চলন্ত ভ্যানের হারিকেনের আলো চোখে পড়ায় ওরা দ্রুত রাস্তার ধারের ভাঁটফুল, কালকসুন্দা, আশশেওড়া আর লতাগুল্মের ঝোপের আড়ালে গিয়ে হাঁটু মুড়ে বসে মাথা নিচু করে থাকে; তবু অমল পরিমলের আর বিলাস অমলের কোমরের কাছা ছাড়ে না। এখন বসন্তের শেষ বলে ভাঁটফুলগাছের অধিকাংশ ফুল ঝরে ছোট ছোট ফল ধরেছে, তবু গাছে গাছে কিছু ফুল এখনো আছে, ফুলের মিষ্টি গন্ধ ওদের নাকে ভেসে আসে। ভ্যানটি ক্রমশ কাছে আসে, চলন্ত ভ্যানের হারিকেনের আলো ভাঁটফুলগাছের মাথায় ছড়িয়ে থাকা অসংখ্য আলোকলতায় মুহূর্তের জন্য সোনালি আভা ছড়িয়ে সামনে এগিয়ে যায়; ভ্যানের আলো রাস্তার বাঁকে মিলিয়ে গেলে ওরা আবার রাস্তায় উঠে আসে, কিছুদূর হাঁটে, তারপর রাস্তা ছেড়ে নেমে পড়ে মাঠের আলপথে। সোজা রাস্তায় গেলে লোকজনের সঙ্গে দেখা হবার সম্ভাবনা থাকে, কিন্তু মাঠের ভেতর দিয়ে গেলে এই রাতে সে-সম্ভাবনা একেবারেই নেই, তাছাড়া মাঠের ভেতর দিয়ে গেলে পথও কম হয়। ওরা হাঁটতে থাকে, ওদের মাথার উপরের অসীম আকাশে দৃশ্যমান আধখানা চাঁদ আর বিক্ষিপ্ত কিছু নক্ষত্র, পায়ের নিচে সরু আলপথের খটখটে মাটি, দু-পাশে হাঁটু সমান পাটগাছ। সরু আলপথে ওরা সমানতালে পা চালায়, আর হঠাৎ কারো ছন্দপতন হলেই একজনের পায়ের গোড়ালিতে আরেকজনের আঙুলের মাথা ঠোক্কর খায়।

ওরা ওদের গোপীনাথপুর গ্রামের সীমানা পিছনে ফেলে নারানপুর গ্রামের সীমানায় ঢুকে পড়ে, আলপথ ছেড়ে সরু হালট ধরে দ্রুত গতিতে হাঁটতে থাকে, সামনের দিকের কোনো বাড়ি থেকে শিশুর কান্না ভেসে আসে ওদের কানে, শিশুটি হয়ত খুবই ছোট, তীক্ষ্ণ স্বরে ভীষণ জোরে চিৎকার করে কাঁদতে থাকে। তিনটে বাড়ি অতিক্রম করে আরো কাছে আসতেই ওরা বুঝতে পারে যে পোস্ট অফিসের পিয়ন গৌতমের বাড়ি থেকে শিশুর কান্না ভেসে আসছে, গৌতমের শোবার ঘর হালট লাগোয়া, ঘরের খুব কাছে এলে ওরা গৌতমের স্ত্রী অর্থাৎ শিশুটির মায়ের কণ্ঠস্বরও শুনতে পায়, সে অবিরাম আদুরে বুলি প্রয়োগে চেষ্টা করছে শিশুর কান্না থামানোর- ‘কাঁদে না সোনা বাবা আমার, ও ও ও কাঁদে না, কাঁদে না বাবা, তুমি কাঁদলি মা’র কষ্ট অয় না বুঝি, মা’র কষ্ট অয় না! ও ও ও কাঁদে না লক্ষ্মীসোনা বাবা আমার…।’

কিন্তু মা কিছুতেই বাগে আনতে পারে না অবুঝ শিশুকে। এই সময় গৌতমের বিরক্তিমাখা কণ্ঠস্বর শোনা যায়, ‘ধুর বাল, সারাদিন খাটনি করে আসে বালের ছাওয়ালের জন্যে ঘুমানের জো নাই!’

এতক্ষণের প্রায় সুরেলা আদুরে মাতৃকণ্ঠ ফোঁস করে ওঠে গৌতমের কণ্ঠেস্বরের বিরুদ্ধে, ‘তুমি সারাদিন খাটনি করে আসো আমি চিৎ অয়ে শাইয়ো মেলে খাটে শুয়ে থাহি! কিছুই তো করো না ছাওয়লের, মুতে ভিজা ক্যাতার মদ্যি শুয়ে থাকলিউ তো ক্যাতাখান বদলায়ে দ্যাও না, তয় অত রাগ আসে কিসি!

‘রোজ রাত্তিরি ক্যাঁ ক্যাঁ করে কান্দে, কয়দিন সহ্য অয়! ছাওয়াল নিয়ে তুমি ওই ঘরে যায়ে ঘুমাও, যাও।’
‘ছাওয়ালের কান্দা সহ্য করবার পারো না তয় জন্ম দিবার কইছিল কিডা, করবার সময় তো খুব আরাম লাগছিল!’

এই কথা শুনে ঘরের পিছন দিয়ে যেতে যেতে মুখে হাত চাপা দিয়ে হাসে ওরা তিনজন, বাড়িটা পিছনে ফেলে এগিয়ে যায় সামনের দিকে, পিছনে গৌতম আর তার স্ত্রীর কথা কাটাকাটির শব্দ ক্রমশ ক্ষীণ হতে হতে আর পৌঁছয় না ওদের কানে।

হালটের পাশের একটা বাড়ির কাছ দিয়ে যাবার সময় দুটো কুকুর ডেকে ওঠে, কুকুর দুটো ওদের দিকে ধেয়ে এসে ঘেউ ঘেউ করতে থাকে, ওরা মুখে চু চু শব্দ করে কুকুর দুটোকে শান্ত করার চেষ্টা করে, কিন্তু শান্ত হবার পরিবর্তে কুকুর দুটো আরো জোরে ঘেউ ঘেউ করতে থাকে। এই দুটোর ডাকে সাড়া দিয়ে আশপাশের অন্যান্য বাড়ির এবং অন্য পাড়ার আরো কিছু কুকুর একসঙ্গে ডেকে ওঠে। পা চালিয়ে বাড়িটা অতিক্রম করার পর ওরা আবার দৌড়তে শুরু করে, হালটের দু-পাশে পাটক্ষেত আর ফাঁকে ফাঁকে গৃহস্থবাড়ি। একটুখানি দৌড়নোর পরই একটা বাড়ি থেকে কেউ একজন ওদের অস্তিত্ব টের পেয়ে চেঁচিয়ে ওঠে, ‘দৌড়োয় কারা রে?’

ওরা কোনো উত্তর না দিয়ে দৌড়ের গতি আরো বাড়িয়ে দিলে লোকটা চিৎকার শুরু করে, ‘এই চোর আইচে রে, চোর চোর….!’
মুহূর্ত কয়েক পরে ওদের সামনের একটি বাড়ি থেকে আরেকজন হেঁকে ওঠে, ‘কনে রে, কনে? এ চোর আইচে বলে রে..., চোর চোর….!’

হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে আসায় অল্পক্ষণের মধ্যেই আশপাশের বাড়ির বারান্দার বৈদ্যুতিক বাতি জ্বলে ওঠে, আলোর আভা ছড়িয়ে পড়ে বাড়ি লাগোয়া হালট আর পাটক্ষেতেও। শুরু হয় সমস্বরে লোকজনের চিৎকার আর চোরের সন্ধানে গৃহস্থবাড়িগুলো থেকে বৈদ্যুতিক টর্চলাইটের এলোমেলো আলো ঘুরতে থাকে এদিক-সেদিক। অমল পরিমলের আর বিলাস অমলের কাছা ছেড়ে দেয়, পরিমল হালট ছেড়ে পাটক্ষেতের আলপথে নেমে কুঁজো হয়ে দৌড়তে শুরু করলে বিনাবাক্যে অমল আর বিলাসও ওকে অনুসরণ করে। কিছুদূর যাবার পর ওরা আলপথ ছেড়ে পাটক্ষেতের কিছুটা ভেতরে ঢুকে সটান শুয়ে পড়ে হাতের রামদা, ছড়ি আর কোদাল পাশে রেখে। দেড়-দু’হাত দৈর্ঘের পাটগাছের আড়াল ওদেরকে বিপদ থেকে বাঁচানোর জন্য মোটামুটি সন্তোষজনক। শুয়ে শুয়ে ওরা দেখতে পায় টর্চলাইটের আলোর রেখার দুরন্ত ছুটোছুটি, মাঝে মাঝে ওদের খুব কাছ দিয়ে-ওপর দিয়েও চলে যায়, কিন্তু ওদের সন্ধান পায় না ধাবমান আলো। ওদের বুক ধুকধুক করে, নিজেদের নিশ্বাসের শব্দ শুনেও অসহ্য বোধ হয়! গৃহস্থবাড়ির পুরুষেরা চেঁচিয়ে কথা বলে, ওরা শুনতে পায় যে লোকটি ওদের দেখেছে সে অন্যদের উদ্দেশে বলছে, ‘এইদিক দিয়ে দৌড়য়ে সাধনগের বাড়ির দিক গেছে। আমি কলাম, দৌড়োয় কারা রে? শালার বিটারা আরো জোরে দৌড় দিল।’

একজন বলে, ‘কয়জন রে কাকা?’
‘তা…. চার-পাঁচজন তো অবিই।’

অন্য একজন বলে, ‘মাছ চোর নাকি? এই রতনগের পুহরি লাইট মারে দ্যাখ তো জাল-টাল ফ্যালা থুয়ে গেছে নাকি!’

কয়েকজন রতনদের পুকুরের দিকে গিয়ে টর্চলাইট মারতে থাকে পুকুরের জলে এবং চারপাশের পাড়ে, মানুষ কিংবা কোনো ধরনের জালের সন্ধান পাওয়া যায় না। কেউ কেউ বাড়ির আনাচ-কানাচে টর্চলাইট মেরে দ্যাখে, কেউ পাটক্ষেতের দিকেও বারবার টর্চলাইটের আলো ফেলে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চোর খোঁজে, কিন্তু কোথাও চোর কিংবা চোরের রেখে যাওয়া কোনো নমুনার সন্ধান পায় না তারা।

চোর কিংবা চোরের রেখে যাওয়া কোনো চি‎‎হ্নের হদিশ না পেয়ে হতাশ হয়ে আরেকজন বলে, ‘চোর না ঘুড়ার ডিম! কী দেখতি কী দেখছিস!’

পরিমলদের দেখতে পাওয়া লোকটি দৃঢ় কণ্ঠে প্রতিবাদ জানায়, ‘আলো না বুদাই, আমি কী কানাচুদা নাকি! জলজ্যন্ত কয়জন মানুষ দ্যাকলাম!’

এবার একজন নারী কণ্ঠ বলে ওঠে, ‘না দাদা, অবার পারে। আমাগের কুত্তো দুডে তো চিক্কের পারতেছিল।’

চোর না পেয়ে আশাহত হয়ে কেউ কেউ বাড়ি ফিরতে শুরু করে, কেউ হয়ত কাঁচা ঘুম থেকে উঠে এসেছে, কেউ হয়ত শোবার প্রস্তুতি নিচ্ছিল, কেউ হয়ত বাচ্চাকে দুধ খাওয়াচ্ছিল, কেউ হয়ত রতিক্রীড়ায় মত্ত ছিল আর চোর আসার কথা শুনে গতি বাড়িয়ে দ্রুত রতিক্রীড়া সাঙ্গ করেই ছুটে এসেছে!

একজন বলে, ‘অনেকদিন ভালোই ছিলাম, আবার বুঝি শুরু অলো চোর-ডাহাতির উৎপাত!’

বছর দেড়েক আগে শেষ যে-বার এই গ্রামে চুরি হয়, সেই স্মৃতি খুঁচিয়ে তোলে একজন, কালীপদ নামের একজনের দুধেল গাই চুরি হয় সে-বার, দুইবেলায় আট-দশ কেজি দুধ দিত গাইটি, থানা-পুলিশ করেও আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। অভিজ্ঞ একজন মতামত জানায় যে হয়ত ট্রাকে করে দূরের কোনো হাটে নিয়ে গিয়ে গাইটি বিক্রি করে দিয়েছিল চোরেরা। গাই চুরির কিছুদিন আগে এক রাতে সুশীল নামের একজনের প্রায় দশ মণ পিঁয়াজ চুরি হয়, সে-কথাও ওঠে। এদের কথায় জানা যায় গাই চুরির পরে গ্রামের লোকজন দল বেঁধে পালা করে পাহারা দিত রাতে, তারপর আর চুরি না হওয়ায় পাহারা দেওয়া বন্ধ হয়ে যায় একসময়।

অন্য একজন সবাইকে সতর্ক করে বলে, ‘শোন, সজাগ থাহিস। কওয়া তো যায় না, কার কী সব্বনাশ করে!’

কিছুক্ষণ বিরতির পর আবারো এলোমেলোভাবে টর্চলাইটের আলো ধাবিত হয় এদিক-সেদিক, শেষবারের মতো সতর্কভাবে চারপাশটা দেখতে দেখতে ঘরে ফিরতে থাকে সবাই, গুঞ্জন কমতে কমতে ক্রমশ মিলিয়ে যায়, নিস্তব্ধ হয়ে যায় চারিদিক। কিছুটা সময় পেরিয়ে গেলে বিলাস ফিসফিস করে পরিমলের উদ্দেশে বলে, ‘এই পরি, থামলিনে ক্যান? পরিচয় দিলি আর এই ঝামেলায় পড়তি ওতো না।’

পরিমলও ফিসফিসিয়ে উত্তর দেয়, ‘আরে আমি কী আর জানতাম নাকি যে শালার বিটা চোর চোর বলে চিক্কের দিবি! ভাবলাম দৌড়ো চলে যাই।’

‘ধরা খালি কী বেইজ্জতিই না অতাম!’

অমল নিচু স্বরে ধমকায় দুজনকেই, ‘চুপ থাক, রাতের ফিসফিসানিও অনেক দূর যায়।’

ওরা চুপ হয়ে যায়। বুকের ওপর হঠাৎ চলমান প্রাণের অস্তিত্ত্ব টের পেয়ে গা শিরশির করে ওঠে বিলাসের, বাম হাত দিয়ে ঝেড়ে ফেলে দেয় পাটের পাতা থেকে বুকের ওপর পড়া বিছাটাকে। পরিমলের দুই হাত ভাঁজ করে পেটের ওপর রাখা, দুশ্চিন্তা মুক্ত হয়ে এতক্ষণে একটু স্বস্তিতে চোখ বোজে ও, অনুভব করে ঘামের রেখা গড়িয়ে চুলের গোড়ায় বিলি কাটতে কাটতে নেমে যাচ্ছে মাটির দিকে। কয়েক মুহূর্ত পর ওর মনের ক্যানভাসে হঠাৎ ভেসে ওঠে আশালতার হাসিমাখা মুখ, মনের আঙিনায় মূর্ত হয়ে ওঠে শৈশব, কৈশোর, যৌবনের আশালতা; যে ফ্রক পরে উদোম গায়ে ধুলোয় বসে রান্নাবাটি খেলত, দাঁড়িয়াবান্ধার কোর্টে চঞ্চল পায়ে ছুটোছুটি করত, একা হাতে সংসার সামলাত।




(চলবে......)

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৫:২৮

নেওয়াজ আলি বলেছেন: পরিপাটি লেখা ।

১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ১১:০৯

মিশু মিলন বলেছেন: ধন্যবাদ।

২| ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৩০

রাজীব নুর বলেছেন: ভালো লিখেছেন।
ঢাকা শহরের চেয়ে বোধহয় গ্রামেই চুরী বেশি হয়।

১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ১১:১৩

মিশু মিলন বলেছেন: হুম, গ্রামেও অনেক চুরি হয়। ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.