নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মিশু মিলন

মিশু মিলন

আমি বর্তমানে ইস্টিশন এবং সামহোয়্যার ইন ব্লগে লিখি। আমার সকল লেখা আমি এই দুটি ব্লগেই সংরক্ষণ করে রাখতে চাই। এই দুটি ব্লগের বাইরে অনলাইন পোর্টাল, লিটল ম্যাগাজিন এবং অন্য দু-একটি ব্লগে কিছু লেখা প্রকাশিত হলেও পরবর্তীতে কিছু কিছু লেখা আমি আবার সম্পাদনা করেছি। ফলে ইস্টিশন এবং সামহোয়্যার ইন ব্লগের লেখাই আমার চূড়ান্ত সম্পাদিত লেখা। এই দুটি ব্লগের বাইরে অন্যসব লেখা আমি প্রত্যাহার করছি। মিশু মিলন ঢাকা। ৯ এপ্রিল, ২০১৯।

মিশু মিলন › বিস্তারিত পোস্টঃ

লৌকিক লোকলীলা (উপন্যাস: পর্ব-দুই)

১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:১৯

পরিমল, অমল, বিলাস আর আশালতা একই ক্লাসে পড়ত এবং একই গ্রামে ওদের বাড়ি। ওদের তিনজনের অমলিন শৈশবের অনাবিল আনন্দের নাম আশালতা, কৈশোরের স্বপ্ন-আকাঙ্ক্ষা আর গোপন সুখের নাম আশালতা, যৌবন-তারুণ্যের অকৃত্রিম সুহৃদের নাম আশালতা।

ক্লাস টেনে উঠে পরিমল প্রথম অনুভব করে যে সে আশালতাকে ভালোবাসে। স্কুলে খুব চঞ্চল ছিল আশালতা; অন্যদিকে পরিমল ছিল শান্ত প্রকৃতির আর কিছুটা ভীরুও, নিজে শান্ত-ভীরু হলেও আশালতার চঞ্চলতা মুগ্ধ করত পরিমলকে। চপল স্বভাবের কারণে পরিমলই প্রথম আশালতার নাম দিয়েছিল-ফড়িং! তারপর অমল, বিলাস এবং অন্যান্য সহপাঠীরাও দুষ্টুমি করে প্রায়শই আশালতাকে ফড়িং বলে ক্ষ্যাপাত। আশালতাকে ফড়িং বলে ক্ষ্যাপালে সে তেড়ে এসে কিল-চড় মারত কিংবা চিমটি কাটত। পরিমল বহুবার আশালতার হাতের কিল-চড় কিংবা চিমটি খেয়েছে, কী যে মধুর লাগত আশালতার হাতের মার! একবার আশালতার নখের আঁচড়ে ওর হাতের চামড়া উঠে সামান্য রক্ত বের হলেও মন খারাপের পরিবর্তে ভীষণ ভালো লেগেছিল! পড়ার টেবিলে বসে নখের আঁচড় লাগা ক্ষত’র দিকে তাকিয়ে থাকত, ক্রমশ ক্ষত শুকিয়ে যাচ্ছিল, কিন্তু ওর মনে হচ্ছিল থাকুক না ক্ষত আরো কিছুদিন, নিজের হাতের ক্ষতস্থানে চুমুও খেয়েছিল!
নরম হাতের মার খেয়ে পরিমল আশালতার প্রতি আরো দূর্বল হয়ে পড়েছিল, তীব্রভাবে আশালতা ওকে আকর্ষণ করত। পরিমল, অমল আর বিলাসের সঙ্গে আশালতার ছিল দারুণ বন্ধুত্ব, এই বন্ধুত্বের সম্পর্ক অতিক্রম করে পরিমল চাইত আশালতা কেবল তার হোক, সে হোক আশালতার। কিন্তু শান্ত আর ভীরু স্বভাবের কারণে নিজের মনের কথা আশালতাকে বলতে সাহস পেত না সে। মনে হতো আশালতা যদি তাকে প্রত্যাখান করে তাহলে এখন যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক আছে তাও হয়ত থাকবে না। এমনিভাবে অন্তর্দ্বন্দ্বে ভুগতে ভুগতে স্কুলের দিনগুলি ফুরিয়ে যায়, এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হয়। জামালপুরে তখন নতুন কলেজ হয়েছে, টিনের ঘরের একটি মাত্র একাডেমিক ভবন, নতুন কলেজ, নতুন শিক্ষক, লেখাপড়া কেমন হবে তার ঠিক নেই। এই ভেবে পরিমল জামালপুর কলেজে ভর্তি হতে চাইছিল না, ও চাইছিল ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজে ভর্তি হয়ে মেসে থেকে লেখাপড়া করতে। কিন্তু জামালপুর বাজারে ওদের টিন, রড, সিমেন্ট ইত্যাদির ব্যবসা থাকায় ওর বাবা চাইছিলেন যে তার বড়ছেলে জামালপুর কলেজেই ভর্তি হোক যাতে লেখাপড়ার পাশাপাশি ব্যবসাটাও দেখতে পারে। ফলে নিজের ইচ্ছা বিসর্জন দিয়ে বাবার ইচ্ছেতে ওকে জামালপুর কলেজেই ভর্তি হতে হয়, বিনিময়ে বাবা ওকে একটা মোটর সাইকেল কিনে দেন। ব্যবসায়ী পরিবার হওয়ায় পরিমলদের অর্থনৈতিক অবস্থা বরাবরই স্বচ্ছল। বিলাসও ভর্তি হয় জামালপুর কলেজে, ওদের অর্থনৈতিক অবস্থা অস্বচ্ছল ছিল বিধায় অন্য কোথাও ভর্তি হবার দ্বিতীয় চিন্তাও করে না ও নিজে কিংবা ওর পরিবার। বিলাসের বাবা যতীন দাস ছিলেন কৃষক এবং ডুবুরি, জমি-জমা বেশি ছিল না, লোকের কাছে তিনি যতীন ডুবুরি নামেই পরিচিত ছিলেন এজন্য যে কৃষিকাজের পাশাপাশি বাড়তি রোজগারের আশায় হুঁচা আর আঁকড়া কাঁধে নিয়ে গ্রামে গ্রামে ঘুরে অর্থের বিনিময়ে নদী কিংবা পুকুরে মানুষের হারানো সোনা-রুপার গহনা অনুসন্ধানের কাজ করতেন। তারপরও সংসারের অভাব-অনটন দূর হতো না। তার ওপর বিলাসরা ছিল চার ভাই-বোন, বড় দুই বোন লেখাপড়া না করলেও বিলাস আর ওর ছোটভাই লেখাপড়া করত। ফলে বিলাসকে জামালপুর কলেজে পড়ানোও ওর বাবার জন্য ছিল কষ্টসাধ্য।

অমল আর আশালতা ভর্তি হয় জামালপুর থেকে নয়-দশ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত বালিয়াকান্দী উপজেলার সবচেয়ে পুরনো কলেজ-বালিয়াকান্দী কলেজ এ। বালিয়াকান্দী উপজেলার একটি ইউনিয়ন হচ্ছে- জামালপুর।

কলেজে ভর্তি হবার পর পরিমলের লুতুপুতু স্বভাবটা কাটতে শুরু করে, কথাবার্তায় চটপটে হয় আর সাহসও বেড়ে যায়, হয়ত ব্যবসার কারণে প্রচুর মানুষের সঙ্গে মেলামেশার কারণেই। আশালতা তখন বালিয়াকান্দীতে মাসির বাড়িতে থেকে লেখাপড়া করত, এক-দুই সপ্তাহ পর পর বৃহস্পতিবার বাড়িতে আসত আর শনিবার সকালে গিয়ে ক্লাস ধরত। অমল মেসে থেকে লেখাপড়া করত আর সপ্তায় সপ্তায় বাড়ি আসত। কলেজে ভর্তি হবার মাস কয়েক পরে মাঘী পূর্ণিমায় নলিয়ার হরিঠাকুরের মেলার সময় আশালতা বাড়িতে এলে পরিমল সিদ্ধান্ত নেয় এবার যে করেই হোক সে মনের কথাটা খুলে বলবে আশালতাকে। একদিন দুপুরে পরিমল, আশালতা, বাসন্তীসহ আরো কয়েকজন বন্ধু একসঙ্গে নলিয়ার মেলায় যায়। অমল বাড়িতে ছিল না, কোথায় যেন বেড়াতে গিয়েছিল। বন্ধুরা মিলে হাসি-আনন্দে মেলায় ঘুরে বেড়ানো শেষে শীতের পড়ন্ত বিকেলে মেলা থেকে ফেরার সময় অন্যরা ভ্যানে চড়ে আর আশালতা চড়ে পরিমলের বাইকে। পরিমল ইচ্ছে করে জোরে বাইক চালিয়ে আগে চলে আসে, ওদের স্কুল অর্থাৎ নলিয়া শ্যামামোহন ইনস্টিটিউশনের কাছাকাছি এসে পরিমল বলে, ‘তোর সাথে একটা কথা আছে। চল, দীঘির পাড়ে যায়ে এট্টু বসি।’

আশালতা বলে, ‘চল।’

পরিমলের বাইক রাস্তার পূর্বদিকের স্কুল চত্ত্বরে ঢুকে পড়ে, চত্ত্বর পেরিয়ে দীঘির উত্তর পাড় দিয়ে খেলার মাঠের পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। বাইক রেখে ওরা দীঘির পূর্বদিকের পাড় ধরে কিছুটা দক্ষিণে এগিয়ে পুরোনো শান বাঁধানো ঘাটের সিঁড়িতে একেবারে জলের কাছে গিয়ে পাশাপাশি বসে। এই ঘাটের ঠিক বিপরীতে পশ্চিমপাশের নতুন ঘাটে একজন তরুণ প্রায় দাপিয়ে জল কাঁপিয়ে স্নান করছে, হয়ত শীতকে উপেক্ষা করার জন্যই, সেই স্নানজনিত ঢেউ অনেকটা দূর্বল হয়ে আড় ভাঙে দীঘির পূর্ব পাড়ে, ঘাটের পাশেই গাছের সঙ্গে বাঁধা একটা ডিঙ্গি নৌকা ঢেউয়ের তালে তালে দুলতে থাকে। ওরা দুজনই কিছুটা স্মৃতিকাতর হয়ে পড়ে, কেননা এই স্কুল, দীঘির পাড় আর খেলার মাঠে ছুটোছুটি করেই কেটেছে ওদের বাল্য-কৈশোরের অনেকগুলো বছর।

আশালতা দীঘির পশ্চিম দিকের স্কুল ভবন থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে এনে পরিমলের দিকে তাকিয়ে বলে, ‘স্কুলের দিনগুলোই ভালো ছিল রে!’
পরিমল সহমত প্রকাশ করে, ‘আমারও তাই মনে হয়। কলেজের বন্ধুদের চেয়ে স্কুলের বন্ধুরাই বেশি আপন হয়।’

পরিমলের বুকের ভেতর দিয়ে যেন হু হু করে শীতল বাতাস বয়ে যায়! স্কুলের গণ্ডি পেরোতেই বন্ধুরা একেকজন একেক জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছে, বিশেষ করে আশালতা তার থেকে দূরে চলে গেছে। ওরা কিছুক্ষণ অন্য বন্ধুরা কে কোথায় ভর্তি হয়েছে, কে কেমন আছে তাই নিয়ে আলাপ করে। তারপর আশালতা বলে, ‘কী কইতে চালি ক।’

পরিমল তার শূন্যে রাখা দৃষ্টি গুটিয়ে এনে বামদিকে ঘাড় ঘুরিয়ে আশালতার মুখের দিকে তাকায়, গোধুলির লালচে আভায় উজ্জ্বল শ্যামবর্ণ আশালতার মুখশ্রী আরো উজ্জ্বল দেখায়, পরিমলের দৃষ্টি আটকে থাকে আশালতার কপালের সবুজ টিপের দিকে আর ওর মনে হয় টিপটা দুই ভ্রূ’র ঠিক মাঝখানে নেই, কিঞ্চিৎ ডানদিকে সরে আছে, হয়ত আশালতা পরার সময় খেয়াল করেনি।

পরিমল বলে, ‘তোর টিপটা ডানদিকে একটু বেশি সরে গেছে, মাঝখানে নাই।’
‘সত্যি!’
‘হ।’
‘ঠিক করে দে।’

পরিমল আশালতার চোখে দৃষ্টি স্থির রাখে, তারপর কপালের টিপে। প্রেমে পড়লেও এতদিন আশালতাকে সে বন্ধুই ভাবত, কিন্তু আজ এই মুহূর্তে নিজেকে আশালতার প্রেমিক ভাবতে ইচ্ছে করে ওর, প্রেমিকের চোখে আশালতাকে দ্যাখে, আশালতার কপালের দিকে যে হাত বাড়ায় সেও প্রেমিকের হাত। টিপটা টেনে তোলে আশালতার কপাল থেকে, আশালতার তপ্ত নিশ্বাস লাগে ওর হাতে, দুই ভ্রূ’র ঠিক মাঝখানে পরিয়ে দেয় টিপটা, ওর তপ্ত নিশ্বাস পড়ে আশালতার মুখে। ওর ইচ্ছে করে আশালতাকে বুকে জড়িয়ে ধরতে, কিন্তু সাহস করে উঠতে পারে না, বুকের অতলের কোথাও থেকে বাধা পায়। আবার দৃষ্টি রাখে আশালতার চোখে, কিন্তু বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারে না, লজ্জা লাগে ওর, হঠাৎ কেন যেন বুকের ধুকপুকুনি বেড়ে যায়, দৃষ্টি নামায় দীঘির সবুজাভ জলের বুকে ভাসতে থাকা একটা ঝরাপাতার দিকে। আশ্চর্য, ভাসমান ঝরাপাতার ওপরে একটা ছোট্ট পিঁপড়া! ঝরাপাতার মাঝখানের কিছুটা জায়গা ভেজেনি, বাঁচার আশায় সেই অল্প একটু জায়গাতেই এদিক-সেদিক ছুটছে পিঁপড়াটা! পরিমলের মনে হয়, আহারে পিঁপড়াটা হয়ত কোনো গাছে ছিল, পাতার সঙ্গে সেও ঝরে পড়েছে দীঘির জলে! এখন স্বজন-বন্ধুহীন হয়ে একা বাঁচার লড়াই করছে। পরিমল উঠে গিয়ে হাত বাড়িয়ে পিঁপড়াসহ পাতাটা হাতে নেয়।
আশালতা বলে ‘কী রে?’

পরিমল আগের জায়গায় বসে পাতাটা আশালতার সামনে ধরে বলে, ‘দ্যাখ, একটা পিঁপড়ে।’
‘ছাড়ে দে।’
‘ছাড়ে তো দেব, কিন্তু বেচারা একা হয়ে গেল। কোন গাছের তে পড়ছে কিডা জানে!’
আশালতা হেসে বলে, ‘তুই গাছে গাছে উঠে দ্যাখ কোন গাছে ওর বউ-বাচ্চা আছে!’

পরিমল পিঁপড়াসহ পাতাটা সিঁড়িতে রেখে দেয়। আশালতা পরিমলের মুখের দিকে তাকিয়ে তাড়া দেয়, ‘কী কইতে চালি ক, সন্ধে লাগে যাতেছে!’

পরিমল পিঁপড়া আর পাতার দিক থেকে মুখ তোলে, দীঘির অপর পাড়ে রাস্তার ধারের অশ্বত্থ গাছের ওপর দিয়ে দৃষ্টি রেখে বলে, ‘আমি তোরে ভালোবাসি আশা।’

আর কিছুই বলতে পারে না পরিমল, ওর কণ্ঠ যেন আড়ষ্ট হয়ে আসে! মৌন আশালতা কিছুক্ষণ পরিমলের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে, তারপর দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখে দীঘির জলে। আশালতা ভাবেনি পরিমল তাকে এই কথা বলার জন্য দীঘির ঘাটে নিয়ে এসেছে, সে উত্তর খোঁজে, দীঘির বুক থেকে মুখ তুলে অপর পাড়ে তাকায়। দক্ষিণের মৃদুমন্দ বাতাস ছুঁয়ে যায় ওদের দুজনকে, স্কুলের সামনের চত্ত্বরে কয়েকটা বাচ্চা হইচই করছে, পাকা রাস্তা দিয়ে ভ্যান আর ইজিবাইক আসা-যাওয়া করছে, একজন নারী দীঘির পশ্চিম পাড় দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে এক বালকের হাত ধরে, পাখিরা অশ্বত্থ নীড়ে ফিরছে। আশালতা আর পরিমল সবই দ্যাখে, অথচ কিছুই যেন দ্যাখে না, দুজনেই মৌন, দুজনই যেন কথা হারিয়ে ফেলে!

বেশ কিছুক্ষণ পর মৌনতা ভেঙে আশালতা বলে, ‘আমি একজনকে ভালোবাসি পরি।’

আশালতার হাওয়ায় ভাসা বাক্যটি যেন হঠাৎ মহাশূন্য থেকে ভেসে আসা সুবিশাল উল্কাপিণ্ড হয়ে পরিমলের বুকের ওপর আছড়ে পড়ে! আশালতার দিকে সহজাতভাবে তাকাতে পারে না, চোখ ছলছল করে ওঠে। এতদিন ধরে সে যাকে মনে মনে ভালোবেসে আসছে, সেই আশা ভালোবাসে অন্য কাউকে? কে সেই ভাগ্যবান, যে আশার হৃদয় দখল করেছে? পরিমলের মনে হয় সে যদি মুহূর্তের মধ্যে দীঘির অতল জলে অদৃশ্য হয়ে যেতে পারত আশালতার সামনে থেকে, অথবা এক দৌড়ে পালিয়ে যেতে পারত! কিন্তু পালায় না, আশালতাকে এখানে একলা ফেলে যাওয়া উচিত নয় ভেবে।

বরং নিজের ভেতরের ঝড় সামলে শান্ত কণ্ঠে পরিমল জানতে চায়, ‘কে সে?’

আশালতা তাকায় পরিমলের দিকে, ‘আমি ওর নাম কইতে পারবো না পরি। ও কাউকে কইতে নিষেধ করছে।’

দুজনই আবার মৌন থাকে কিছুক্ষণ, তারপর আশালতা পরিমলের কাঁধে হাত রাখে, ‘তুই আমার ভালো বন্ধু পরি, আমরা আজীবন ভালো বন্ধু হয়েই থাকি।’

পরিমলের আশালতাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে ইচ্ছে করে, বলতে ইচ্ছে করে অনেক কিছু, অথচ কিছুই বলতে পারে না।

অমল আর বিলাসের ফিসফিসানিতে স্মৃতির ঘোর কাটে পরিমলের, টের পায় যে ওর চোখ ভিজে উঠেছে। বিলাস দুজনের উদ্দেশে বলে, ‘চল, এহন উঠি।’

অমল বলে, ‘কেউ নাই তো?’
‘না, মনে হয় না এতক্ষণে কেউ আছে।’
অমল উঠে বসে বলে, ‘চল পাটক্ষেতের ভিতর দিয়ে যায়ে রাস্তায় উঠি।’
বিলাসও উঠে সায় দেয়, ‘তাই করি চল। এই পরি ওঠ।’

পরিমলও উঠে বসে। পরিমলের ভেজা চোখ অমল আর বিলাস দেখতে পায় না, পরিমলের বুকের আর্তনাদও ওরা শুনতে পায় না। তিনজনই গৃহস্থবাড়িগুলোর দিকে তাকায়, মানুষের কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে যার যার রামদা-ছড়ি-কোদাল হাতে নিয়ে ওরা উঠে দাঁড়ায়, আর হালটে ওঠে না, পাটক্ষেতের আলপথ দিয়ে আগে আগে দ্রুত পায়ে হেঁটে যায় পরিমল, তাকে অনুসরণ করে অমল আর বিলাস, এবার আর কেউ কারো কাছা ধরে না।

পাটক্ষেতের আলপথ ধরে পূর্বদিকে বেশ কিছুদূর হাঁটার পর লোকালয়ে ঢোকার আগে বিলাস সতর্ক করে, ‘এই পরি, আর কিন্তু দৌড় দিসনে।’

‘আরে না, একবার যে শিক্ষে হইছে, আর দৌড় দেই!’


(চলবে......)

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৪০

নেওয়াজ আলি বলেছেন: মুগ্ধতা এক রাশ ।

১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ১২:৫১

মিশু মিলন বলেছেন: ধন্যবাদ।

২| ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ১০:৪৩

রাজীব নুর বলেছেন: চলুক তিন বন্ধুর গল্প।

১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ১২:৫২

মিশু মিলন বলেছেন: ধন্যবাদ সাথে থাকার জন্য।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.