নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মিশু মিলন

মিশু মিলন

আমি বর্তমানে ইস্টিশন এবং সামহোয়্যার ইন ব্লগে লিখি। আমার সকল লেখা আমি এই দুটি ব্লগেই সংরক্ষণ করে রাখতে চাই। এই দুটি ব্লগের বাইরে অনলাইন পোর্টাল, লিটল ম্যাগাজিন এবং অন্য দু-একটি ব্লগে কিছু লেখা প্রকাশিত হলেও পরবর্তীতে কিছু কিছু লেখা আমি আবার সম্পাদনা করেছি। ফলে ইস্টিশন এবং সামহোয়্যার ইন ব্লগের লেখাই আমার চূড়ান্ত সম্পাদিত লেখা। এই দুটি ব্লগের বাইরে অন্যসব লেখা আমি প্রত্যাহার করছি। মিশু মিলন ঢাকা। ৯ এপ্রিল, ২০১৯।

মিশু মিলন › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমার স্বপ্নের ‘অঞ্জলী লোকশিল্প জাদুঘর’ ও হতাশার চিত্র

০৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১২:৫১





ভারত থেকে আসার সময় মানুষ সাধারণত স্বর্ণ, জামা-কাপড়, ইলেকট্রনিকস পণ্য ইত্যাদি নিয়ে আসে। আমি নিয়ে এসেছি প্রায় ত্রিশটা পুতুল! একটা ডোগরা, দুটো কাঠের, একটা ফাইবারের (কবি সুপর্ণা উপহার দিয়েছেন), বাকিগুলো মাটির। জানতাম ইমিগ্রেশনে প্রশ্নের মুখে পড়তে হবে। মানসিকভাবে প্রস্তুতই ছিলাম। ঠিক করেছিলাম বেশি ঝামেলা করলে বলব, ‘রেখে দিন।’
স্ক্যানারে দেখার পর ভারতের অবাঙালী ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা আমার ব্যাগ আলাদা করে জানতে চাইলেন, ‘এত পুতুল কেন? এগুলো কিসের?’
বললাম, ‘একটা পিতলের, দুটো কাঠের, একটা ফাইবারের, বাকিগুলো মাটির।’
তার সহকর্মীকে ব্যাগ খুলতে বললেন। আমি বললাম, ‘মাটির জিনিস তো, খুব সাবধানে রাখা, আমি খুলে দেখাচ্ছি।’
কাগজে মোড়ানো পুতুলগুলো পুনরায় আমার ব্যবহৃত জামা-কাপড়ে মুড়ে এনেছি।
কাগজ অর্ধেক খুলে একটা কৃষ্ণনগরের পুতুল দেখালাম। সহকর্মীকে নির্দেশ দিলেন আমাকে পাশের রুমে অন্য এক কর্মকর্তার কাছে নিয়ে যেতে। গেলাম। আধখোলা পুতুলটা পুরো খুলে দেখালাম সেই কর্মকর্তাকে। ভদ্রলোক বাঙালী, বললেন, ‘এত পুতুল দিয়ে কী করবেন?’
বললাম, ‘আমি একটা লোকশিল্প জাদুঘর করবো, তাই আমি যেখানেই যাই, সেখানকার পুতুল সংগ্রহ করি।’
বললেন, ‘বাঁকুড়া আর বীরভূমে খুব ভালো পুতুল পাবেন।’
বললাম, ‘এবার বীরভূমের পুতুলই বেশি এনেছি। বাঁকুড়া যাওয়া হয়নি, পরের বার যাবো।’
ভদ্রলোক কোনো ঝামেলা করলেন না, বরং উৎসাহ দিলেন।


ভারতের ইমিগ্রেশন পার হয়ে বাংলাদেশে ব্যাগ চেকিংয়ে দেবার আগেই একজন নিরাপত্তারক্ষী বললেন, ‘কিছু বকশিস দ্যান?’
বললাম, ‘সরকার আপনাকে বেতন দেয় না?’
বললেন, ‘চার মাস বেতন পাই না।’ (নিশ্চিত মিথ্যে কথা)
ভারতে যাবার দিনও আমি ডলার নিইনি বলে একজন ইমিগ্রেশন পুলিশের সাথে আমার তর্ক হয়েছিল, টাকা চেয়েছিল। দিইনি। কিন্তু দেখলাম অনেকের কাছ থেকেই টাকা নিচ্ছে, বিশেষত যারা গ্রামের মানুষ।
বললাম, ‘লিখিত দিতে পারবেন যে চারমাস বেতন পান না?’
আর কোনো কথা বললেন না। ততক্ষণে আমার ব্যাগ স্ক্যান হয়ে এগিয়ে গেছে এবং যথারীতি আটকে দিয়েছে।
ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা নিজেই ব্যাগ খুলতে গেলে বললাম, ‘আমি খুলে দেখাচ্ছি।’
আমি ব্যাগ খুলে একটা পোটলা বের করলাম। কাপড় আর কাগজে জড়ানো পুতুল বের করার সময়ে সেই কর্মকর্তা ব্যাগ থেকে আরেকটা পোটলা নিয়ে ঝুনো নারকেল ছোলার মতো খুলতে শুরু করলেন। বললাম, ‘ভাই, এগুলো মাটির জিনিস, এভাবে খোলা যাবে না। একটু ধৈর্য্য ধরেন আমি সব খুলে দেখাচ্ছি।’
আমি দ্রুত হাত চালিয়ে পুতুল বের করতে লাগলাম। তিনিও আমার কথা অমান্য করে ক্ষিপ্রহাতে পুতুল বের করতে লাগলেন।
একজন নারী কর্মকর্তা বললেন, ‘এসব কেন এনেছেন?’
ওপারে যে উত্তর দিয়েছিলাম, এখানেও তাই দিলাম। তিনি নাপাক কিছু দেখছেন এমন দৃষ্টিতে বললেন, ‘পাঁচ কেজির বেশি আছে, শুল্ক দিতে হবে।’
বললাম, ‘আমি সোনা বা হীরা আনিনি। আর্থিকভাবে এসব মাটির পুতুলের মূল্যও খুব বেশি নয়। একটা লোকশিল্প জাদুঘর করতে চাই, তার জন্য মাটির পুতুল এনেছি। সারা পৃথিবীর মৃৎশিল্প এখন ধুঁকছে। আপনাদের তো আরও উৎসাহ দেওয়া উচিত।’
বললেন, ‘এসব ভারত থেকে এনেছেন কেন? আমাদের দেশেই তো কত আছে!’
গাইড মুখস্ত করে চাকরি পাওয়া হিজাবী বুবুটিকে আমি কি করে বোঝাই যে আমাদের দেশেরই ফরিদপুরের পুতুল আর রাজশাহী কিংবা কিশোরগঞ্জের পুতুলের মধ্যে কত পার্থক্য হয়, আর বাঁকুড়া-বীরভূম কিংবা কৃষ্ণনগরের মৃৎশিল্প তো একেবারেই আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট্যের!
তারা ওজন দেবেনই, শুল্ক নেবেনই! হিজাবী বুবুটি রীতিমতো কোমরে কাপড় পেঁচিয়ে ঝগড়া করার মতো আমার সঙ্গে তর্কে লিপ্ত হলেন। আমাকে স্মরণ করিয়ে দিলেন, ‘আপনারা এইসব কিনে দেশের টাকা অপচয় করে আসেন।’
আহা, লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা পাচারের দেশের, চোরা কারবারীতে ভরা দেশের একজন ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা কত সচেতন! আর আমি হতভাগা কিনা মাটির পুতুলের শুল্ক দিতে চাই না! তর্ক চলতে লাগল আর আমি দেখলাম দশ-বিশ কেজি ওজনের ব্যাগ নিয়ে মানুষ বিনাশুল্কেই ইমিগ্রেশন পার হচ্ছে। অনেক তর্কের পর শেষ পর্যন্ত তারা বিনাশুল্কেই ছেড়ে দিলেন।
আহারে আমার সাধের দেশ, দেশের শিক্ষিত মানুষের কী সংস্কৃতিবোধ, কী রুচি!


আমি আমার মায়ের নামে ‘অঞ্জলী লোকশিল্প জাদুঘর’ করতে চেয়েছিলাম আমার গ্রামের বাড়িতে। চারপাশের মানুষের আচরণ ও পরিবেশ আমাকে নিরুৎসাহিত করেছে। বাড়িরটার অর্ধেক বিক্রি করে দিয়েছি, বাকি অর্ধেকও বিক্রি করবো।
এই দেশ ও দেশের মানুষের কাছে আমি কোনো কিছু পাওয়ার আশা করি না। কিন্তু আমি এই দেশে জন্মেছি, এই দেশের অন্ন খেয়ে, আলো-হাওয়ায় বেড়ে উঠেছি। তাই দেশের জন্য কিছু করতে চাই। আমি খুব ক্ষমতাবান বা ধনী নই, আমার সামর্থ্য সামান্য। আমি একা মানুষ, বেঁচে থাকার জন্য আমার চাহিদা খুব বেশি নয়, তাই নিজের অর্থসম্পদ যা আছে তার কিছুটা ভাগ্নিকে দেব, আর আমি যেহেতু সংস্কৃতিকর্মী, তাই বাকিটা দিয়ে দেশের শিল্প-সংস্কৃতির জন্য কিছু একটা করতে চেয়েছি।
এখন আমি ভাবছি- আদতে এই দেশে আমার স্বপ্নের ‘অঞ্জলী লোকশিল্প জাদুঘর’ করবো কি না? এই দেশের শিক্ষিত মানুষেরই এইরকম সংস্কৃতিবোধ, আর আরেকটা শ্রেণি তো আগুন বুকে নিয়ে ঘুরে বেড়ায়, তারা যদি ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ সংগীতাঙ্গনের মতো আগুনে পুড়িয়ে দেয় আমার সাধের জাদুঘর!



ঢাকা
ডিসেম্বর, ২০২৩







মন্তব্য ১০ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ বিকাল ৫:২৪

মারুফ তারেক বলেছেন: সুন্দর৷ শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।

০৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:২৫

মিশু মিলন বলেছেন: ধন্যবাদ।

২| ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:৩৪

প্রামানিক বলেছেন: সুন্দর কালেকশন

০৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:৪১

মিশু মিলন বলেছেন: ধন্যবাদ।

৩| ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ রাত ৯:৪৫

কামাল১৮ বলেছেন: কিছু খারাপ মানুষে জন্য ভালো মানুষ বিপদে পড়ে।আমারা আমাদের আধিকার সম্পর্কে সচেতন না।আসলে জানিও না।জানতে চাই না।ব্যাগেজ রুলসে সব লিখা আছে।

০৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ রাত ১১:০৭

মিশু মিলন বলেছেন: মানুষ ২০-২৫ কেজি নিয়েও বিনাশুল্কে চলে আসে। অবৈধভাবে টাকা নেওয়ার জন্য তারা নানা কৌশল অবলম্বন করে।

৪| ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ রাত ১২:১২

বিজন রয় বলেছেন: ত্রিশটা পুতুল!! করেছেন কি!!

অঞ্জলি জাদুঘর অবশ্যই করবেন।
বাঁধা আসবে এটা মাথায় নিয়েই করবেন।

কেমন আছেন?
শুভকামনা।

০৯ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ রাত ১২:৫১

মিশু মিলন বলেছেন: ধন্যবাদ।
ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন?

৫| ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১:২০

রাজীব নুর বলেছেন: লোকশিল্প যাদুঘর তো আমাদের আছে। সোনারগাও তে।

০৯ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ রাত ১০:০৩

মিশু মিলন বলেছেন: হুম আছে, বিভিন্ন জেলায় আরও হওয়া উচিত। পঞ্চগড়, কুড়িগ্রাম, বরগুনা, সাতক্ষীরা এইসব জেলার অনেক মানুষের পক্ষেই সোনারগাঁও আসা সম্ভব হয় না।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.