নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মিশু মিলন

মিশু মিলন

আমি বর্তমানে ইস্টিশন এবং সামহোয়্যার ইন ব্লগে লিখি। আমার সকল লেখা আমি এই দুটি ব্লগেই সংরক্ষণ করে রাখতে চাই। এই দুটি ব্লগের বাইরে অনলাইন পোর্টাল, লিটল ম্যাগাজিন এবং অন্য দু-একটি ব্লগে কিছু লেখা প্রকাশিত হলেও পরবর্তীতে কিছু কিছু লেখা আমি আবার সম্পাদনা করেছি। ফলে ইস্টিশন এবং সামহোয়্যার ইন ব্লগের লেখাই আমার চূড়ান্ত সম্পাদিত লেখা। এই দুটি ব্লগের বাইরে অন্যসব লেখা আমি প্রত্যাহার করছি। মিশু মিলন ঢাকা। ৯ এপ্রিল, ২০১৯।

মিশু মিলন › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাউল এবং ইস্কনের দর্শন-সংস্কৃতি ইসলামের জন্য হুমকি

২৭ শে নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:২৪

চারিদিকে উগ্রপন্থী-উগ্রচিন্তার মুসলমানরা জিগির তুলেছে- ‘ইস্কন একটি জঙ্গি সংগঠন। ইস্কনকে নিষিদ্ধ করতে হবে। বাংলাদেশের মাটি থেকে ইস্কনকে উৎখাত করতে হবে।’ আচ্ছা, শত শত বছর ধরে বাউলদের নিপীড়ন করছে, তাদের আখড়া ভাঙচুর করছে মুসলমানরা। বাউলরা কী দোষ করেছে? এই প্রশ্ন করলে জিগির ওঠে- ‘ওরা আখড়ায় গাঁজা খায়, বে-শরিয়তি কাজকর্ম করে।’ আচ্ছা, যারা গৃহী বাউল, ঘর-সংসার করে আর গ্রামে গ্রামে গান করে বেড়ায়, তাদের কেন মারছে মুসলমানরা? তখন মোল্লারা জিগির তোলে, ‘গানবাজনা হারাম। ওরা যুবসমাজকে বিপথে নিয়ে যায়।’

দুর্জনের ছলের অভাব হয় না! ভিন্নমত বা ভিন্ন দর্শনকে দমন করতে দুর্জন মুসলমান যত রকম অজুহাত আর কু-যুক্তি আছে, তা তুলে ধরে। এদের এই অজুহাত, কু-যুক্তি আর আগ্রাসনের কারণেই সংকুচিত হয়েছে দেশের যাত্রাপালা, পালাগান, পুতুলনাচ, আলকাপের মতো শিল্প।

যারা ইস্কনকে সন্ত্রাসবাদী সংগঠন বলে জিগির তুলছে তারা তাদের এই জিগিরের পক্ষে কোনো যুক্তিসংগত তথ্য-প্রমাণ দেখাতে পারেনি। একটি সংগঠনকে সন্ত্রাসবাদী বা জঙ্গিবাদী হিসেবে প্রমাণ করতে হলে যে-সব উপাদান উপস্থাপন করতে হয়, তা উপস্থাপন করতে তারা ব্যর্থ। এই রাষ্ট্রের প্রশাসন বা গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও ইস্কনকে জঙ্গি সংগঠন হিসেবে প্রমাণ করতে পারেনি। আমরা বিভিন্ন সময়ে দেখেছি যে মসজিদ-মাদ্রাসায় বিভিন্নরকম প্রাণঘাতি অস্ত্র পেয়েছে আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী। মসজিদের ইমাম, মাদ্রাসার শিক্ষক-ছাত্র গ্রেফতার হয়েছে অস্ত্র রাখার কারণে। এই মসজিদের ইমাম বা মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষকরা জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ, হিজবুত তাহরীর, আনসারুল্লাহ বাংলার মতো জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে ‍যুক্ত ছিলেন। কখনো গোপনে-কখনো প্রকাশ্যে তারা জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ড করেছেন। তরুণদের জঙ্গিদলে ভিড়িয়েছেন এবং চরাঞ্চলে ও পাহাড়ে সশস্ত্র প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। অনেকে দেশের বাইরে আফগানিস্তান-পাকিস্তানে গিয়ে উচ্চতর জঙ্গিবাদী প্রশিক্ষণ নিয়ে এসেছেন। আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আইএস বা আল-কায়েদার সঙ্গের তাদের ঘনিষ্ট যোগাযোগের সংবাদও গণমাধ্যমে এসেছে।

ইস্কনের বিরুদ্ধে এই ধরনের কোনো কর্মকাণ্ডের তথ্য-প্রমাণ রাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা বা অন্য কোনো সংগঠন দিতে পারেনি। পারার কথাও নয়, কারণ ইস্কনের অস্ত্র তো খোল-করতাল! যা দিয়ে মানুষ মারা যায় না, সংগীত সৃষ্টি করে মানুষকে মোহাবিষ্ট করা যায়।

ইস্কনের প্রভুরা আমাকে বেশ কয়েকবার তাদের অনুসারী হবার পরামর্শ দিয়েছেন, কেন ইস্কনের সদস্য হবো সে-বিষয়ে অনেক যুক্তি তুলে ধরেছেন। আমিও পাল্টা যুক্তি দেখিয়েছি যে কেন আমি নাস্তিকতার পথ পরিহার করে ইস্কনের বা অন্য কোনো ঈশ্বরবিশ্বাসী দর্শনের অনুসারী হবো না। কেউ কেউ আমার ওপর বিরক্ত হয়েছেন, মনোঃক্ষুন্ন হয়েছেন। তারা আমাকে বুঝিয়েছেন, কিন্তু জোরজবরদস্তি করেননি, আমাকে প্রহার করেননি, গালাগালি করেননি। এমনটাই তো হওয়া উচিত, কেউ তার ধর্মের বার্তা আমার কাছে নিয়ে আসতেই পারেন, সেটা গ্রহণ করা বা না করা আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার।

অন্যদিকে আমরা ইসলামে দেখতে পাই যে নামাজ না পড়ার কারণে মানুষকে মানসিক এবং শারীরিকভাবে নিপীড়ন করা হচ্ছে। মানুষকে তওবা করানো হচ্ছে যে তারা নিয়মিত মসজিদে যাবে নামাজ পড়তে। শিয়া এবং আহমদিয়াদের অমুসলিম ঘোষণা দিয়ে তাদের ওপর আক্রমণ করতে দেখি সুন্নি মুসলমানদের। মাওলানারা ওয়াজ মাহফিলে ভিন্নধর্ম বা ভিন্নমতের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়ান, উস্কানিমুলক কথা বলে মানুষকে উত্তেজিত করেন। এমন একটা ওয়াজ মাহফিল খুঁজে পাওয়া যাবে না যেখানে ভিন্নধর্মের কোনো সমালোচনা করা হয় না। ইস্কন এই কাজগুলিও করে না। ইস্কনের সদস্যরা ধর্মীয় আলোচনার ক্ষেত্রেও নিজেদের ধর্মের মধ্যেই সীমাবন্ধ থাকেন। সমালোচনা করলে হিন্দুধর্মের কোনো শাখার সমালোচনাই করেন। কোনো শাখাকে তারা আক্রমণ করেন না, মেরে রক্তাক্ত করেন না। কেবল মানুষকে ইস্কনের অনুসারী হবার জন্য উৎসাহ দেন। এটা অপরাধ নয়।

তারপরও মুসলমানদেরকে সারাবিশ্বের মানুষের কাছে যে-কোনোভাবেই হোক প্রমাণ করতেই হবে যে- ‘ইস্কন একটি জঙ্গি সংগঠন।’ এখন এটা তাদের ঈমানী দায়িত্ব হয়ে গেছে! কেন ইস্কনকে জঙ্গি সংগঠন প্রমাণ করার মরিয়া চেষ্টা? এর কারণ ইস্কনের দর্শন এবং প্রচার-প্রসার ইসলামের জন্য হুমকি! সারাবিশ্বের কমবেশি দেড়শো দেশে ইস্কনের মন্দির ও কার্যক্রম বিস্তৃত। নানা জাতের, নানা বর্ণের, নানা ধর্মের মানুষ ইস্কন ও ভারতীয় সংস্কৃতির প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে, ইস্কনের দীক্ষা গ্রহণ করছে। ভারতীয়দের মতো শাড়ি পরে, তিলক কেটে, খোল-করতাল নিয়ে নেচে-নেচে গান করছে। মানুষ ইস্কনের দর্শনের মধ্যে আধ্যাত্মিকতা দর্শন যেমনি খুঁজে পেয়েছেন, তেমনি পেয়েছেন সংগীত-নৃত্যের মতো বিনোদনের উপাদান। তাই হয়ত তারা সহজেই আকৃষ্ট হচ্ছে। দিনশেষে মানুষ তো আনন্দেই বাঁচতে যায়।

একই কথা বাউলদের ক্ষেত্রেও সত্য, বাংলাদেশ-ভারত ছাড়াও পশ্চিমাবিশ্বের অনেক মানুষ বাউল দর্শনের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে বাউলদের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেছেন, এখনও করছেন। এখানেও তারা আধ্যত্মিকতা এবং সংগীতের সুধার মধ্যে শান্তি খুঁজে পেয়ে নিজেদেরকে সমর্পণ করছেন।

বাউল ও ইস্কনের দর্শনের একটি শক্তির জায়গা সংগীত। যারা এই দুটি দর্শনের অনুসারী নন, তারাও বাউলগান ও ইস্কনের কীর্তন-ভজন শুনে মুগ্ধ হয়। বাউল ও ইস্কনের উৎসবে যোগ দেয়। এই যে কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ায় লালন উৎসবে যারা যায়, তারা সবাই কি লালনের অনুসারী? মোটেও না, যায় উৎসব উপভোগ করতে, যায় সংগীত সুধারস গ্রহণ করতে। সেই কাঁচা মাংস খাওয়া মানুষের আদিপুরুষ থেকে শুরু করে আজকের আধুনিক মানুষ, সবাই উৎসব চায়, ছোট্ট এই জীবনে আনন্দে বাঁচতে হায়। ইসলামে তো সিনেমা দেখা, গান শোনা হারাম। সারাবিশ্বে একজন মুসলমানও কি পাওয়া যাবে যে সিনেমা দ্যাখেনি বা গান শোনিনি! কট্টর মুসলমান পরিবারের শিশুও আপনমনে গুনগুনিয়ে গেয়ে ওঠে, তাকে শেখাতে হয় না।

এই একবিংশ শতাব্দীতে ইন্টারনেটের বিস্তৃতির কারণে বিভিন্ন ধর্ম ও দর্শনের কথা মানুষের কাছে খুব সহজেই পৌঁছে যাচ্ছে। মানুষ বিভিন্ন ধর্ম ও দর্শন সম্পর্কে জানতে পারছে, মতামত দিতে পারছে। ধর্ম ও দর্শনের ভালো-মন্দ সম্পর্কেও তারা সচেতন হচ্ছে। বর্তমান পৃথিবীতে প্রেমবিবাহ ঘটিত এবং জোরজবরদস্তিমুলক কারণ ব্যতিত সাবালক মানুষের ইসলাম গ্রহণের ঘটনা বিরল। মানুষকে মুগ্ধ করার মতো উপাদান ইসলামে না থাকলেও আতঙ্কিত করার মতো যথেষ্ট উপাদান আছে। যে ইসলামী দেশগুলোতে আটানব্বই, নিরানব্বই বা শতভাগ মানুষ মুসলমান; সেখানেও প্রায়শই ইসলামের এক পক্ষের বোমা বিস্ফোরণে বা গুলিতে আরেক পক্ষের মানুষ মরছে, যেমন-পাকিস্তান-আফগানিস্তান। কট্টর ইসলামী দেশে পোশাকের স্বাধীনতা, বাক-স্বাধীনতা, নারীর স্বাধীনতা বলে কিছু নেই। মানবাধিকার বলে কিছু নেই।

ফলে অমুসলিমদেরকে মিথ্যা বলে, ভুল বুঝিয়ে এখন আর মুসলমান বানানো যায় না। কিছুদিন আগে একটি ভিডিও দেখলাম, এক নারী ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। পরবর্তীকালে কোরান পড়ার পর তিনি ইসলাম ত্যাগ করেছেন। যে-কোনো মানবিক মানুষ কোরান পড়লে সেটাই করবে।
ধর্মব্যবসায়ীদের এটাই মাথা ব্যথার কারণ। কারণ আগামী দশকগুলোতে বা আগামী শতাব্দীতে মানুষ আরও সভ্য হবে, বহু সভ্য মানুষ ইসলাম ত্যাগ করবে, অন্যান্য ধর্মও ত্যাগ করবে। তাদের অনেকে নাস্তিকতার পথ বেছে নেবে, অনেকে শান্তিপূর্ণ কোনো ধর্ম বেছে নেবে।

ইসলামী দেশগুলোতে ধর্ম পালন বা ত্যাগ করার স্বাধীনতা দিলে এই মুহুর্তে কোটি কোটি মুসলমান ইসলাম ত্যাগ করবে। তারা এখন ইসলাম ত্যাগ করতে পারছে না রাষ্ট্রীয় এবং জঙ্গিদের দ্বারা নিপীড়ন ও হত্যার ভয়ে। কিন্তু জোরজবরদস্তি, শোষণ ও হত্যার ভয় দেখিয়ে ভবিষ্যতে ইসলামী সাম্রাজ্য টিকিয়ে রাখা যাবে না। মানুষ জাগবেই। খোদ সৌদি আরব জাগতে শুরু করেছে।

ইসলাম যেখানে ধর্মীয় তত্ত্ব, সংস্কৃতি এবং অধ্যাত্মিকতা দিয়ে মানুষকে আকৃষ্ট করতে পারছে না। সেখানে মানুষকে মুগ্ধ করে চলেছে বাউল ও ইস্কনের দর্শন। আফ্রিকার কৃষ্ণাঙ্গ, ইউরোপের শেতাঙ্গরা বাউল ও ইস্কনের দর্শনে মুগ্ধ হয়ে দীক্ষা গ্রহণ করছে। ইসলাম ধর্মের মাওলানারা এটাকেই ভবিষ্যতের জন্য চরম হুমকি মনে করছে। কারণ ধর্মের সঙ্গে তাদের রুটি-রুজি জড়িত। বাজার সংকুচিত হয়ে এলে তাদের পেটে আঘাত পড়বে। এজন্যই তারা উঠে-পড়ে লেগেছে ইস্কনের গায়ে জঙ্গি তকমা লাগানোর। সাধারণ মুসলমানদের উস্কনের বিরুদ্ধে উসকে দিচ্ছে। কারণ বিশ্বের মানুষের কাছে ইস্কনকে জঙ্গি সংগঠন হিসেবে পরিচিত করাতে পারলে মানুষ আর ইস্কনের প্রতি আকৃষ্ট হবে না, ইস্কনের অনুসারী হবে না। ইসলাম ধর্মে সারা পৃথিবীজুড়ে যেখানে শত শত জঙ্গি সংগঠন, সেখানে একশো বিশ-ত্রিশ কোটি হিন্দুদের মধ্যে একটি জঙ্গি সংগঠনও নেই! যেখানে পনের লাখ রোহিঙ্গার মধ্যেই পঞ্চাশের অধিক জঙ্গি সংসঠন আছে! ফলে হিন্দু সংগঠনগুলোর মধ্যে যেহেতু ইস্কনের বিস্তারই সবচেয়ে বেশি, সেহেতু ইস্কনের গায়েই জঙ্গি তকমা লাগানোটা মুসলমানদের জন্য জরুরি এবং ঈমানী দায়িত্ব হয়ে পড়েছে! আর বাংলাদেশের মানুষ যেহেতু গান পাগল, দোতারার টোকা কিংবা ঢোলের বোল শুনলেই তাদের রক্ত নেচে ওঠে, বাউলদের প্রতি আকৃষ্ট হয়; তাই বাউলদর্শন উৎখাত করাও জরুরি ও ঈমানী দায়িত্ব হয়ে পড়েছে। কারণ, বাউল এবং ইস্কনের দর্শন-সংস্কৃতি ইসলামের জন্য হুমকি!



২৭ নভেম্বর, ২০২৪



মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.