নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মিশু মিলন

মিশু মিলন

আমি বর্তমানে ইস্টিশন এবং সামহোয়্যার ইন ব্লগে লিখি। আমার সকল লেখা আমি এই দুটি ব্লগেই সংরক্ষণ করে রাখতে চাই। এই দুটি ব্লগের বাইরে অনলাইন পোর্টাল, লিটল ম্যাগাজিন এবং অন্য দু-একটি ব্লগে কিছু লেখা প্রকাশিত হলেও পরবর্তীতে কিছু কিছু লেখা আমি আবার সম্পাদনা করেছি। ফলে ইস্টিশন এবং সামহোয়্যার ইন ব্লগের লেখাই আমার চূড়ান্ত সম্পাদিত লেখা। এই দুটি ব্লগের বাইরে অন্যসব লেখা আমি প্রত্যাহার করছি। মিশু মিলন ঢাকা। ৯ এপ্রিল, ২০১৯।

মিশু মিলন › বিস্তারিত পোস্টঃ

লোকশিল্প ও শিল্পীদের মূল্যায়ন করার শিক্ষা ও সংস্কৃতিবোধ আমাদের আছে কি?

০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৪৬




আমাদের দেশের বেশিরভাগ লোকশিল্প সংগ্রাহকের মধ্যে এক ধরনের অহংকার এবং তীব্র ঈর্ষা আছে, তারা চান তাদের সংগ্রহে যে শিল্পকর্ম আছে, তা যেন আর অন্য কারো কাছে না থাকে। তাই তারা নীরবে লোকশিল্প সংগ্রহ করেন, কোন শিল্প কোথা থেকে সংগ্রহ করেছেন তা প্রকাশ করেন না, কেউ কোনো তথ্য জানতে চাইলেও তথ্য দেন না বা বিভ্রান্ত করেন। যেন সেই শিল্পকর্মটি তাকে অমরত্ব দেবে! কিছুদিন আগে কোনো একটি পবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন বন্ধুপ্রতিম শিক্ষক এবং লোকশিল্প সংগ্রাহক (তার নাম প্রকাশ করছি না) আক্ষেপ করে জানান যে একজন লোকশিল্প সংগ্রাহক তাকে কিভাবে হয়রানি করেছে, তথ্য দিয়ে সাহায্য করবেন বলে অফিসে যেতে বলেন, তিনি অফিসে গিয়ে তাকে পাননি, অনেক চেষ্টার পর ফোন ধরলেও দেখা করেননি। সেই লোকশিল্প সংগ্রাহকের সঙ্গে আমারও একদিন দেখা হয়েছে, এক ছোটভাই পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল, নতুন পরিচয় হওয়া একজন মানুষের সঙ্গে আলাপের শিষ্টাচারটুকুও তার মধ্যে পাইনি। অস্থির চিত্ত, স্প্রিংয়ের পুতুলের মতো চঞ্চল, এক জায়গায় বিশ সেকেন্ডও দাঁড়াতে পারেন না!

গতকাল লোকশিল্প সংগ্রাহক এক ছোটভাই জানালো- একজন লোকশিল্প সংগ্রাহক শুধু ওর কাছে থেকে তথ্য নেয়, কিন্তু ও কিছু জানতে চাইলে এড়িয়ে যায়। এই হলো বেশিরভাগ লোকশিল্প সংগ্রাহকের অবস্থা!

ছোট ভাই আমাকে জানালো যে, ‘আপনার সঙ্গে যখন আমার আলাপ ছিল না, তখনও আমি আপনার প্রোফাইলে গিয়ে ভিডিও আর ছবি দেখতাম, কোথা থেকে কী সংগ্রহ করছেন তা জানতে পারতাম।’

আমি এমন এমন কিছু জায়গা থেকে শিল্প সংগ্রহ করেছি, যাদের কাছে কোনোদিন কোনো লোকশিল্প সংগ্রাহক যায়নি। কিন্তু আমি তাদের শিল্পকর্মের ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করেছি। তাদের কাজ নিয়ে ডকুমেন্টারি তৈরি করছি এবং আগামীতে বিস্তারিত লিখে বইও প্রকাশ করব। কোনো লোকশিল্পীর কাজ কেবল নিজের কাছে কুক্ষিগত করে রাখতে চাই না। লোকশিল্পের মূল ভোক্তা গ্রামের সাধারণ মানুষ, তারা লক্ষ্মীসরা কিনে পূজার পর ঘরে রেখে দেন, পরের বছর পূজা এলে সেটি ফেলে দিয়ে নতুন সরা কেনেন। মনসাঘট বা যে অন্য ঘটের বেলায়ও তাই। কোনো কোনো ঘট পূজার পরপরই জলে বিসর্জন দেন। বেশিরভাগই মানুষ পুতুল কেনেন বাচ্চাদের খেলনা হিসেবে, সংগ্রহের জন্য বা ঘর সাজানোর উপকরণ হিসেবে নয়। খেলতে খেলতে বাচ্চারা পুতুল ভেঙে ফেলে বা ফেলে দেয়। বাবা-মা আবার মেলা থেকে নতুন পুতুল কিনে দেন। ফলে বেশিরভাগ লোকশিল্পীদের কাজ হারিয়ে যায়। কোনো লোকশিল্পীর মৃত্যু হলে পরিবারও তার কোনো কাজ সংরক্ষণ করে রাখে না। প্রয়াত বেশ কয়েকজন লোকশিল্পীর সন্তানকে জিজ্ঞেস করেছি যে আপনার বাবার কোনো কাজ আপনার কাছে আছে কি না। নেই জানিয়েছেন। আর এই সুযোগটাই কোনো কোনো লোকশিল্প সংগ্রাহক কাজে লাগান, গর্ব করে বলেন, ‘অমুক শিল্পীর কাজ আমার কাছে ছাড়া আর কারো কাছে নেই!’ আত্মতৃপ্তিতে ভোগেন। এই জন্যই তারা শিল্প সংগ্রহের তথ্য প্রকাশ করেন না এবং কেউ জানতে চাইলেও তথ্য দিতে চান না।
আমি লোকশিল্পীর কাজ, তার অবস্থান সব তথ্য প্রকাশ করি। আমি চাই শিল্পী এবং তার কাজ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ুক। তাতে করে অন্য লোকশিল্প সংগ্রাহকরা যেমনি শিল্পীদের শিল্পকর্ম সংগ্রহ করতে পারবেন, তেমনি ঘর সাজানোর জন্যও অনেকে সংগ্রহ করবেন। এতে শিল্পী আর্থিকভাবে লাভবান হবেন, তার সংসারটি আরেকটু স্বচ্ছলভাবে চলবে। আমি গ্রামের শিল্পীদের সঙ্গে ঢাকার বিক্রেতাদেরও আলাপ করিয়ে দেই, শিল্পীরা অর্ডারও পান। শিল্পীরা আর্থিকভাবে ভালো থাকলে আমাদের লোকশিল্প টিকে থাকবে। যদিও অনেক জায়গায় লোকশিল্পের শেষের ঘণ্টা বাজছে!

বিড়ম্বনাও আছে, আমাকে বিক্রেতা ভেবে অনেকে দাম জানতে চান, তাদের উদ্দেশে বলি- ভাই আমি বিক্রেতা নই। শিল্প সংগ্রহ করি জাদুঘর তৈরির জন্য। লাখ টাকা দিলেও আমার সংগ্রহের পুতুল বিক্রি করব না। পোস্ট দেবার পরই অনেকে শিল্পীর ফোন নম্বরের জন্য ইনবক্স করে, দিই। অনেক সময় ইনবক্স চেক করা হয় না, দিতে দেরি হয়। ইনবক্সে সাড়া না পেয়ে অনেকে ফোনের পর ফোন দিতে থাকে, ভাই আমারও তো সময়ের ব্যাপার আছে! একজনই পাঁচ-সাতটা নম্বর চাইলে বিব্রত হই। আমার আসল কাজ সাহিত্য চর্চা, ফলে বাসায় থাকলে দিনের অনেকটা সময় ফোন আমার থেকে দূরে রাখি, চব্বিশ ঘণ্টা ফোনের রিংটোন বন্ধ থাকে।

তিন-চারজন লোকশিল্প সংগ্রাহকের সঙ্গে আমার ভালো সম্পর্ক আছে, আমি তাদের কাছ থেকে সঠিক তথ্য পাই, তাদেরকেও তথ্য দিয়ে সাহায্য করতে চেষ্টা করি। এর বাইরে আমি কারো কাছে তথ্যের জন্য যোগাযোগ করি না, সেটা তাদের মনোভাবের কারণেই। আর আমি কারেণ্ট অ্যাফেয়ার্স সাংবাদিক ছিলাম, অন্ধকারে হাতরেও ফোন নম্বর বা তথ্য যোগাড় করার অভ্যাস আমার আছে। আমি মেলায় মেলায় ঘুরে বিক্রেতাদের কাছ থেকে মৃৎশিল্পীদের তথ্য নিই, পরিচিতজনদের কাছে থেকে তথ্য নিই, কোথাও ঘুরতে গেলে অনুসন্ধান করি, বাস বা ট্রেনে যেতে যেতে অচেনা সহযাত্রীদের কাছ থেকে তাদের এলাকার মৃৎশিল্প সম্পর্কে তথ্য নিই এবং সেই ব্যক্তির মাধ্যমে ফোন নম্বর সংগ্রহ করি। লোকশিল্প সংগ্র্রাহক ছোটভাই আরাফ রাতুলকে বলেছি, ‘তুমি একটা সাইকেল কেনো, আমরা সাইকেল নিয়ে সারাদেশের গ্রাম আর মেলায় মেলায় ঘুরে শিল্প সংগ্রহ করবো। কিন্তু কোনো অহংকারী বা ঈর্ষাপরায়ণ লোকের কাছে সাহায্য চাইবো না।’

সমাজকে পিছন দিকে ঠেলা, মাটি ও সংস্কৃতি থেকে দূরে অবস্থান করা, কেবল বিনোদনের দাস-দাসী হিসেবে সিনেমা-নাটকে দূর্গন্ধ ছড়ানো তথাকথিত ভাঁড়রা নয়, আমাদের প্রকৃত নায়ক এই লোকশিল্পীরা। এরাই আমাদের শিকড়ের কথা বলেন, মাটির কথা বলেন, বংশ পরম্পরায় আমাদের সংস্কৃতি রক্ষা করেন। কিন্তু আমরা তাদের কতটুকু মূল্যায়ন করি? লোকশিল্প ও শিল্পীদের মূল্যায়ন করার শিক্ষা ও সংস্কৃতিবোধ আমাদের আছে কি?

আমাকে অনেকেই প্রশ্ন করে, ‘এসব পুতুল-টুতুল কিনে লাভ কী?’ আগে তারা আমাকে বলতেন, ‘থিয়েটার-টিয়েটার করে লাভ কী? টাকা পাওয়া যায়?’ তাদের উদ্দেশে বলি, জীবনটা ইউনুসের গ্রামীণ ব্যাংক নয়, পাটের আড়তদারের হিসাবের খাতাও নয়, যে শুধু লাভ-ই খুঁজবো! এত যে লাভ-ক্ষতির হিসাব কষে, অথচ তাদের সন্তানরা সেই বিশ-পঞ্চাশ হাজার টাকার চাকর হয়, বিল গেটস হলে না হয় হিসাবের সুফল মিলত! এই লাভ-ক্ষতির বাইরেও সুন্দর একটা জীবন আছে, লাভ-ক্ষতির বৃত্তের মধ্যে আবদ্ধ না থেকে, একটু বাইরে এসে দেখতে হবে সেই জীবনটা, বড় আনন্দের সেই জীবন। ছোট্ট এই জীবনে যে যা করে আনন্দ পায়, সে থাকুক না তাই নিয়ে। কেন সমালোচনা করতে গিয়ে নিজেকে ছোট করা, নিজের অশিক্ষা, সংস্কৃতিহীন কূপমণ্ডুকতা জাহির করা!

যাইহোক, লোকশিল্প কিনুন, লোকশিল্পীদের পাশে থাকুন, টিকে থাকুক আমাদের হাজার বছরের লোকশিল্প।

ঢাকা
৫ সেপ্টম্বর ২০২৫

মন্তব্য ৭ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১৭

শেরজা তপন বলেছেন: আপনার অনেক কর্মকাণ্ডই দারুন প্রশংসার যোগ্য। পটুয়ার ( ঠিক বলেছি?) পেছনে আপনাকে দেখে ভাল লাগল

০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:২০

মিশু মিলন বলেছেন: ধন্যবাদ। হ্যাঁ ঠিক বলেছেন।

২| ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:৩৫

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: লোকশিল্প আমাদের বাঙ্গালির পরিচয় ধারণ করে।

০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:৪২

মিশু মিলন বলেছেন: হ্যাঁ, ধন্যবাদ।

৩| ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:৫৪

অপ্‌সরা বলেছেন: এই লোকশিল্পীদের ঠিকানা কনট্যাক্ট নাম্বার দিয়ে একটা পোস্ট দিলেই তো অনেকে জানবে হয়ত!

০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৪৮

মিশু মিলন বলেছেন: যে শিল্পীর সঙ্গে আমার ছবি দেখছেন, তার কোনো ফোন নম্বরই নেই। এরকম অনেকেই আছেন। আবার অনেকে ফোন নম্বর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পাবলিক করতেও চান না। আমি যাদেরকে নম্বর দিই, শিল্পীর অনুমতি নিয়ে।

৪| ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫২

ইফতেখার ভূইয়া বলেছেন: আপনার লিখার টাইটেলে যে প্রশ্ন করেছেন, তার সংক্ষিপ্ত উত্তর হলো "না, নেই"। আমাদের প্রজন্মকে ঐ শিক্ষা দেয়া হয় নি, এই শিল্পগুলোর গুরুত্ব বোঝানো হয় নি। নিজস্ব স্বকীয়তা বাঁচিয়ে রাখার জন্য আমাদের লোকশিল্পকে অবশ্যই ধারণ ও লালন করতে হবে। এর অন্যথা হলে এ শিল্প হারিয়ে যাবে খুব সহজেই। ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.