![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
"ধর্মীয় কুসংস্কারে যারা আবদ্ধ, তারা সব সময়েই দরিদ্র থাকে।" ---ডাব্লিউ এস ল্যান্ডস।
মোহাম্মদ মোয়াজ্জেম হোসেন
চিঠি সংক্রান্ত একটি কৌতুক দিয়েই না হয় শুরু করা যাক। সুমনকে চিঠি পড়ে শোনাচ্ছিল কামাল। এ সময় সেখানে এসে হাজির মিঠু। মিঠুঃ কিরে কামাল, চিঠি পড়ে শোনাচ্ছিস ভালো কথা। কানে তুলা গুঁজে রেখেছিস কেন? কামালঃ সুমনের প্রেমিকার চিঠি তো, সুমন চায় না আমি তার চিঠির কথা শুনে ফেলি! কয়েক বছর আগেও দেশবিদেশে স্বজনদের সাথে যোগাযোগ ও কুশলবিনিময়ের সর্বোত্তম ও বহুল প্রচলিত জনপ্রিয় মাধ্যম হিসেবে চিঠি লেখার এবং চিঠি আদান-প্রদানের ঐতিহ্যবাহী রেওয়াজ ছিল। ক্ষেত্র বিশেষে দেশের অভ্যন্তরে চিঠি প্রাপকের কাছে পৌছতে সময় লেগে যেত পনেরো থেকে বিশ দিন। আর ভিনদেশ থেকে হলে মাসখানেক তো অবশ্যই। কখনো-কখনো বছর খানেক বা তারও বেশি সময় লাগতেও দেখা গেছে। চিঠি প্রাপকের কাছে পৌছানো সংক্রান্ত একটি ব্যঙ্গাত্নক কৌতুক মনে পড়ে গেল। পাঠকবৃন্দের সাথে তা শেয়ার করা যায়-
ভদ্রলোক গেছেন পোস্ট অফিসে।
ভদ্রলোকঃ আমি এই চিঠিটা পোস্ট করতে চাই।
কর্মকর্তাঃ হুম। প্রাপকের ঠিকানা কী লিখব?
ভদ্রলোকঃ জাতীয় জাদুঘর।
কর্মকর্তাঃ কিছু মনে করবেন না, আপনি জাদুঘরে চিঠি পাঠাচ্ছেন কেন?
ভদ্রলোকঃ কারণ, আমি শুনেছি আপনারা চিঠি পৌঁছাতে অনেক দেরি করেন। যত দিনে চিঠিটা পৌঁছবে, তত দিনে চিঠির নিশ্চয়ই একটা প্রত্নতাত্ত্বিক মূল্য তৈরি হবে।
চিঠির প্রত্নতাত্ত্বিক মূল্য যেটাই হোক না কেন “চিঠি কেন আসেনা, আর দেরি সহেনা......” এ জাতীয় গানের কলিই জানান দিয়ে দেয় প্রিয়জনের কাছে চিঠির গুরুত্ব। যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম চিঠি প্রিয়জনের কাছে পৌঁছানোর কাজটি দীর্ঘদিন ধরেই করে আসছে ডাক বিভাগ। ডাক বিভাগের ইতিহাস মানবসভ্যতার মতোই পুরনো। মিসরে ৫ হাজার বছর আগে এবং পারস্যে ৫৫০ অব্দ থেকে এর অস্তিত্ব ছিলো। চীনে খ্রিস্টপূর্ব ১১২২ অব্দে রাজকীয় পর্যায়ে ডাক সার্ভিস চালু হয়। প্রাচীনকালে ডাক ব্যবস্থা কেবল রাজা-বাদশাদের খবরা-খবর আদান প্রদানের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিলো। তাঁরা দূত মারফত বিভিন্ন রাষ্ট্র, সরকারপ্রধান বা অধীনস্থ রাজ্যপ্রধানদের সাথে একমাত্র চিঠির মাধ্যমেই যোগাযোগ রাখতেন বলে ইতিহাস থেকে জানা যায়। সময়ের বিবর্তনের সাথে-সাথে অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে সংবাদ আদান প্রদানের মাধ্যম হিসেবে জনগণের মাঝে এর বিস্তার ঘটে। পরবর্তীতে অষ্টাদশ শতাব্দীতে এর পরিধি আন্তর্জাতিক রূপ নেয়। ১৮৬৮ সালে উত্তর জার্মান কনফেডারেশন ডাক বিভাগের হেনরিক ভনস্টিফেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সমন্বয়ে একটি ডাক সংস্থা গঠনের পরিকল্পনা করেন। এর ভিত্তিতে সুইজারল্যান্ডের বার্ন শহরে ১৮৭৪ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত সম্মেলনের পরিকল্পনা অনুসারে ১৮৭৪ সালের ৯ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্র, মিসর, তুরস্ক ও ইউরোপের ২২টি দেশের সমন্বয়ে জেনারেল পোস্টাল ইউনিয়ন গঠিত হয় যা ‘আন্তর্জাতিক ডাক সংস্থা’ হিসাবে পরিচিত। বর্তমানে ১৯২টি দেশ এ সংস্থার অন্তর্ভুক্ত।
কয়েক বছর পূর্বেও পোষ্ট অফিসের ডাকপিয়নের কদর ছিল আকাশচুম্বি। ডাকঘর খোলার পূর্ব থেকেই সর্বসাধারনের দারুন ভীড় দেখা যেতো পোস্ট অফিসের আঙ্গিনায়। অনেকেই বসে বসেই প্রতিক্ষার প্রহর গুণতেন কখন আসবেন ডাক পিয়ন। ইন্টারনেট যুগে চিঠির প্রচলন কমে গেলেও একেবারে বন্ধ হয়নি। বিশেষ করে সরকারি অফিস-আদালতে এখনো চিঠির মাধ্যমে যোগাযোগ কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়ে থাকে। তবে আগের মতো হাতের লিখা কিংবা টাইপরাইটারে টাইপকৃত চিঠির আদান-প্রদান নাই বল্লেই চলে। ডিজিটাল এ জামানায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির দ্রুত বিকাশের ফলে বর্তমান ইন্টারনেট যুগে জাদুঘরের বন্ধ খাচার দিকে ক্রমশঃ ধাবমান আর ইতিহাসের পাতায় বন্দি হওয়ার মতো অবস্থা এই ডাক ব্যবস্থার।
ইন্টারনেট গতিময়তার মাইল ফলক। বর্তমানে যোগাযোগ এবং তথ্য আদান-প্রদানে এটির ভূমিকা অপরিসীম। ডিজিটাল প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের তথ্যাবলী আদান-প্রদান/পরস্পর পরস্পরের সাথে যোগাযোগ করার প্রক্রিয়াকেই ই-মেইল বলা হয়। ইলেকট্রনিক মেইলের সংক্ষিপ্ত রূপ হল ই-মেইল। যদিও মূলত এটি একটি টেক্সট বেইজড যোগাযোগ ব্যবস্থা (কমিউনিকেশন সিষ্টেম) কিন্তু প্রযুক্তির আধুনিকায়নের ফলে আজ এর মাধ্যমে এটাচমেন্ট হিসেবে বিভিন্ন ফরমেটের ফাইল, ছবি কিংবা চলমান ভিডিও পাঠানো সম্ভব। মানুষ সরাসরি কিংবা ইন্টারএকটিভ কোন ভয়েস সিস্টেমে যেকোন বিষয়কে যতটানা সাজিয়ে উপস্থাপন করতে পারে তার চাইতে ই-মেইলে অনেক ভালোভাবে উপস্থাপন করতে পারে। তাছাড়া অন্যান্য কমিউনিকেশান সিস্টেমগুলোর তুলনায় এটি একবারেই সস্তা, নিরাপদ (প্রেরকের কাছ থেকে প্রাপকের ঠিকানায় পৌছানোর মধ্যকার সময়ে কোন রকম পরিবর্তন কিংবা প্রকাশহয়ে যাবার সম্ভাবনা একান্তই ক্ষীণ) এবং দ্রুত (মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে) যোগাযোগ ব্যবস্থা। প্রাপকের সাময়িক অনুপস্থিতি কিংবা ব্যস্ততা এই ই-মেইল যোগাযোগ ব্যবস্থায় কোন বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারেনা। ই-মেইল পেতে প্রথম দিকের ই-মেইল ব্যবস্থায় প্রেরক এবং প্রাপক দুজনকেই অনলাইনে থাকতে হত। এখনকার ই-মেইল ব্যবস্থায় এই সমস্যা নেই। ই-মেইল সার্ভারগুলো মেইল গ্রহণ করে এবং সংরক্ষন করে। ব্যবহারকারী বা প্রাপককে অথবা কম্পিউটারকে অনলাইনে থাকার প্রয়োজন হয় না। প্রাপক স্থান-কালভেদে ইন্টারনেট সংযোগ আছে এমন কোন ডিভাইস (মোবাইল ফোন, আইপ্যাড, নোটপ্যাড ইত্যাদি)/কম্পিউটারে বসে তার সচল ইউজারনেম (ই-মেইল ঠিকানা) ও পাসওয়ার্ড (গোপন নম্বর) দিয়ে ই-মেইল অ্যাকাউন্টে লগ ইন করলেই সার্ভার থেকে সরাসারি ই-মেইল দেখতে ও পড়তে পারেন। এমনকি তা প্রিন্ট কিংবা কম্পিউটারে সংরক্ষণ করেও রাখতে পারেন। সংরক্ষণকৃত ই-মেইল পরবর্তিতে ইন্টারনেট সংযোগ না থাকলেও সে কম্পিউটার থেকে যেকোন প্রয়োজনে তিনি তা পুনরায় ব্যবহার করতে পারেন।
১৯৭১ সালের অক্টোবরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রোগ্রামার রে টমলিনসন সর্বপ্রথম ই-মেইল আবিষ্কার করেন। তিনিই প্রথম ই-মেইলের প্রাপককে চিহ্নিত করার জন্য ‘এট’ সিম্বল (@ ) ব্যবহার শুরু করেন। একটি ই-মেইল ঠিকানা দুইটি অংশ (যেমনঃ [email protected]) নিয়ে গঠিত। ‘এট’ সিম্বলের আগের অংশ- যাকে ‘ইউজারনেম (mithu_cse24)’ বলা হয় এবং ‘এট’ সিম্বলের পরের অংশ- যাকে ‘ডোমেইন নেম (yahoo.com)’ বলা হয়। ‘ইউজারনেম’ সাধারনত সর্বোচ্চ ৬৪ অক্ষরের এবং ‘ডোমেইন নেম’ সর্বোচ্চ ২৫৬ অক্ষরের মধ্যে হয়ে থাকে। ই-মেইল মার্কেটিং রিপোর্ট নামের একটি জরিপ প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে, ২০১২ সালের জুন মাস পর্যন্ত সারা পৃথিবীতে মাইক্রোসফটের হটমেইল, গুগলের জিমেইল এবং ইয়াহুমেইলের মোট এক বিলিয়ন একটিভ ই-মেইল ইউজার রয়েছেন। মাইক্রোসফট, গুগল এবং ইয়াহু ছাড়া বিশ্বে আরো অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা ই-মেইল সেবা দিয়ে থাকেন। সে হিসেব করলে একটিভ ই-মেইল ইউজারের সংখ্যা আরো অনেক বেড়ে যাবে। সুতরাং ডাক ব্যবস্থা জাদুঘরের বন্ধ খাচার দিকে ক্রমশঃ ধাবমান আর ইতিহাসের পাতায় বন্দি হওয়ার মতো অবস্থা কথাটি মোটেই অমূলক নয় বলেই মনে হচ্ছে। সবশেষে ই-মেইল নিয়ে লিখা একটি কৌতুক দিয়েই না হয় শেষ করা যাক-
মিনেসোটার একজোড়া কপত-কপোতি এক শীতে ছুটি কাটানোর জন্য ফ্লোরিডায় গেল। তারা ঠিক করল সেই হোটেলেই উঠবে, যেখানে তারা বিশ বছর আগে হানিমুনে এসেছিল। তারা অতি ব্যস্ততার মাঝখানে তাদের ভ্রমন প্ল্যান করেছিল, তাই তাদের একসাথে যাওয়া হয়ে ওঠে নি। স্বামী মিনেসোটা ত্যাগ করে ফ্লোরিডায় পৌঁছাল বৃহস্পতিবারে। তার স্ত্রীর তার পরের দিন যাওয়ায় কথা। স্বামী হোটেলে এসে পৌঁছাল। তার ঘরে একটি কম্পিউটার ছিল। তাই সে ঠিক করল তার স্ত্রীকে একটি ই-মেইল পাঠাবে। কিন্ত অসাবধানবসত সে ই-মেইলের ঠিকানার একটি অক্ষর ভুল লিখল। সে সেটা খেয়াল না করেই ই-মেইল টি পাঠিয়ে দিল।
ঠিক এরকম সময়ে… হাউস্টনের কোন এক যায়গায়, এক বিধবা তার স্বামীর শেষকৃত্য অনুষ্ঠান থেকে বাড়ি ফিরে এসেছে। মহিলার স্বামী এলাকার মন্ত্রী ছিল যে কিনা একটা হার্ট এটাকে মৃত্যু বরণ করেছিল। বিধবাটি তার ই-মেইল চেক করার সিদ্ধান্ত নিল, এই ভেবে যে তার প্রতিবেশী এবং আত্মীয় স্বজন তাকে সান্তনা জানিয়ে ই-মেইল পাঠিয়ে থাকবে। কিন্তু প্রথম চিঠিটা পড়েই বিধবা মূর্ছা গেল। পতনের শব্দ শুনে বিধবার পুত্র তাড়াতাড়ি ঘরে প্রবেশ করল এবং তার মাকে মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখল। সে আরো দেখতে পেল, কম্পিউটার স্ক্রিন এ লেখাঃ
প্রতিঃ আমার প্রিয় স্ত্রী।
বিষয়ঃ আমি এসে পৌঁছেছি।
প্রিয়তমা,
আমি জানি তুমি আমার কাছ থেকে চিঠি পেয়ে বিস্মিত হবে। তাদের এখানে কম্পিউটার আছে এবং এখানে সবাই তাদের প্রিয়জনের কাছে চিঠি লিখতে পারে। আমি এই মাত্র এখানে এসে পৌঁছলাম এবং দেখলাম যে কালকে তোমার এখানে আসার সব বন্দবস্তই প্রস্তত। শীঘ্রই তোমাকে দেখার প্রতীক্ষায় রইলাম। আসা করি তোমার এ ভ্রমন এতটা কষ্টকর হবে না যতটা আমার ছিল। তবে এখানে বেশ গরম তাতে কোন সন্দেহ নেই।
[লেখকঃ মোহাম্মদ মোয়াজ্জেম হোসেন, উপ-প্রকল্প পরিচালক (প্রোগ্রামার), এসএমইসিআই প্রকল্প, আইএমইডি, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়, ঢাকা। ই-মেইলঃ [email protected] ]
তারিখঃ ২৮/১০/২০১৩ খ্রিঃ।
২| ০২ রা নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:১৯
মোহাম্মদ মোয়াজ্জেম হোসেন(মিঠু) বলেছেন: আলহামদুলিল্লাহ....... মন্তব্যের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ জনাব মহিদুল। Article টি এখান খেকেও পড়তে পারেন। Link: Click This Link
©somewhere in net ltd.
১|
২৮ শে অক্টোবর, ২০১৩ রাত ৯:৪৯
মহিদুল বেস্ট বলেছেন: পড়ে অনেক ভালো লাগছে!