![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
"ধর্মীয় কুসংস্কারে যারা আবদ্ধ, তারা সব সময়েই দরিদ্র থাকে।" ---ডাব্লিউ এস ল্যান্ডস।
মোহাম্মদ মোয়াজ্জেম হোসেন
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বর্তমান বিশ্বে উন্নয়নের অন্যতম উপাদান হিসেবে পরিগণিত এবং জ্ঞানভিত্তিক সমাজের মূল চালিকা শক্তি এটা অস্বীকার করার কোন পথ নাই। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সম্প্রসারণ ও বহুমুখী ব্যবহারের মাধ্যমে একটি স্বচ্ছ, দায়বদ্ধ ও জবাবদিহিতামূলক সরকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সরকারের কর্ম-প্রক্রিয়া, ব্যবসা-বাণিজ্য এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিভিত্তিক সেবা নিশ্চিতকরণ তথা সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আধুনিক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির প্রয়োগ ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে সকল সরকারী প্রতিষ্ঠানের নাগরিক সনদ অনুযায়ী ভোক্তাদের দোরগোড়ায় সরকারের সেবা পৌছে দেয়া আধুনিক বাংলাদেশ (ই-গর্ভমেন্ট বা ডিজিটাল সরকার) বিনির্মানের পূর্বশর্ত। এখন প্রশ্ন হলো ই-গর্ভমেন্ট বা ই-গর্ভনেন্স এর প্রয়োজনটাই বা কি? বর্তমান এই তথ্য প্রযুক্তির যুগে যেখানে আমরা বাংলাদেশে বসে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য প্রকাশিত রিসার্চ পেপার নিয়ে ঘাটাঘাটি করতে পারি। সেখানে এই দেশে অবস্থান করে এই দেশেরই তথ্য পেতে দিনের পর দিন অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় থাকতে হয়। যা সুযোগসন্ধানী ব্যক্তিদের দুর্নিতির সাথে সম্পৃক্ত হবার পথ সুগম করে দিচ্ছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের একমাত্র পথ হলো ই-গর্ভমেন্ট এবং ই-গর্ভনেন্স বা ডিজিটাল সরকার ব্যবস্থা। প্রথম দিকে ডিজিটাল বাংলাদেশের বাস্তব রূপটি কেমন হবে তা নিয়ে সর্বস্তরের মানুষের মনে সংশয় ছিল। কিন্তু বিগত কয়েক বছরে সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা, আন্তরিকতা ও অংশগ্রহনের মধ্য দিয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশ ধারণাটি স্পষ্ট হতে শুরু করেছে।
২০১০ সালে বিজ্ঞান এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অধীন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগ এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ নামে দুটি স্বতন্ত্র বিভাগ গঠন করা হয়। অতঃপর এই বিভাগ দুটিকে স্বতন্ত্র মন্ত্রণালয়ে উন্নীত করে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) মন্ত্রণালয় গঠন করা হয়। এই বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়কে একীভূত করে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় নামে নতুন মন্ত্রণালয় গঠন করা হয়েছে। এর আওতায় আছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ নামে দুটি বিভাগ। ফলে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন, বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানী লিমিটেড, বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবল কোম্পানী লিমিটেড, টেলিফোন শিল্প সংস্থা, টেলিটক বাংলাদেশ লিমিটেড, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তর (নব গঠিত), বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল, বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ ও কন্ট্রোলার অব সার্টিফাইং অথরিটিজ সমন্বিতভাবে কাজ করতে পারবে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহার এবং দেশের আপামর জনগণকে এই প্রযুক্তির সাথে পরিচিত করে ২০২১ সালের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠন করার জন্যে বর্তমান সরকার বদ্ধ পরিকর। সেলক্ষ্যে সরকারী ও বেসরকারী উদ্দোগে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট বেশ কিছু কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রমগুলোর মধ্যে রয়েছেঃ
ইউনিকোড কনসোর্টিয়ামের ইনস্টিটিউশনাল সদস্যপদ লাভঃ ইউনিকোড কোনো বাড়তি প্রকৌশল ছাড়াই একটি সফটওয়্যার বা ওয়েবসাইটকে বিভিন্ন প্লাটফর্ম, ভাষা এবং দেশে ব্যবহারযোগ্যতা দেয়। এটা ব্যবহারের ফলে ডাটা বিভিন্ন সিস্টেমের মধ্যে দিয়ে আনাগোনা করতে পারে কোনো রকম বিকৃতি ছাড়াই। ইউনিকোড সংক্রান্ত এই কাজগুলো করে থাকে ইউনিকোড কনসোর্টিয়াম। ইউনিকোড কনসোর্টিয়াম হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিবন্ধিত একটি অলাভজনক বেসরকারী সংস্থা যেটা তৈরী হয়েছে ইউনিকোড বৈশিষ্ট্যের উন্নয়ন, ব্যবহার এবং বিস্তার করার জন্য, যেটা আধুনিক সফটওয়্যার এবং বৈশিষ্ট্যর প্রতিনিধিত্ব করে। এই কনসোর্টিয়ামের সদস্যপদ গ্রহণকারীরা কম্পিউটার তথ্য প্রক্রিয়াকারী শিল্পের কর্পোরেশন বা সংগঠনে তথ্য বিস্তৃতি করার জন্য বোর্ড হিসেবে দায়িত্ব পালন করে। আশার কথা এই যে, বাংলাদেশ ইউনিকোড কনসোর্টিয়ামের ইনস্টিটিউশনাল সদস্য হয়েছে। ইউনিকোড কনসোর্টিয়ামে বাংলাদেশঃ গত ১৮ মার্চ ২০১০ তারিখে এই সদস্যপদের জন্য আবেদন করে সদস্য চাঁদা বাবদ বারো হাজার ডলার পরিশোধ করে গত ৩০ জুন ২০১০ তারিখে এই সদস্যপদ লাভ করে।
ইলেকট্রনিক গভর্ণমেণ্ট প্রকিউরমেণ্ট (ই-জিপি):
উন্নয়ন কার্যক্রমকে আরও গতিশীল এবং সরকারী অর্থ ব্যয়ে অধিকতর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ই-টেণ্ডারিং ব্যবস্থা প্রবর্তন বর্তমান সরকারের অন্যতম প্রতিশ্রুতি। একটি মানসম্পন্ন, সুষ্ঠু, স্বচ্ছ ও কার্যকর ক্রয় পদ্ধতি তথা সরকারী কিংবা বেসরকারী পর্যায়ে উন্নয়ন কার্যক্রমকে গতিশীল এবং এ বাবদ অর্থ ব্যয়ে অধিকতর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে তথ্য-প্রযুক্তিভিত্তিক ইলেক্ট্রনিক্স টেন্ডার বা ই-টেণ্ডারের আগমন। পৃথিবীর যেকোন প্রান্ত থেকে প্রয়োজনীয় যোগ্যতা থাকা শর্তে ঠিকাদারগণ এই পদ্ধতিতে টেন্ডারে অংশগ্রহণ করতে পারবেন। ফলে ক্রয় কাজের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে এবং প্রকল্প বাস্তবায়নের হার ও গুণগতমান উভয়ই বৃদ্ধি পাবে। এছাড়া টেন্ডার প্রক্রিয়ায় অনভিপ্রেত বহিঃ প্রভাব তিরোহিত হবে যা আইন শৃংখলা পরিস্থিতির উপরও অনুকূল প্রভাব রাখতে সক্ষম হবে। অর্থ ব্যয়ে একটি স্বচ্ছ, গতিশীল ও টেকশই ব্যবস্থা প্রবর্তিত হবে। ২০১২ সালে এর পূর্ণ ব্যবহার শুরু করা হয়েছে।
ডিজিটাল স্বাক্ষরঃ
২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল এ সেবার উদ্বোধন করা হয়েছে। ডিজিটাল স্বাক্ষর তথ্য প্রেরণকারীর পরিচয় নিশ্চিত করে। সাথে-সাথে তথ্য বিনিময়কালে তথ্যটিতে কোন অনভিপ্রেত পরিবর্তন রোধ করে। প্রচলিত পদ্ধতিতে কোন দলিলে পরিচিতি নিশ্চিত ও অনভিপ্রেত পরিবর্তন রোধ কল্পে যেমন হাতের লেখা স্বাক্ষর ব্যবহার করা হয়, ইলেক্ট্রনিক্যালি তথ্য বিনিময়ের ক্ষেত্রেও একটি নির্দিষ্ট জটিল গাণিতিক পদ্ধতি ঠিক তেমনি পরিচিতি নিশ্চিত ও অনভিপ্রেত পরিবর্তন রোধে কাজ করে। সাধারণতঃ ইন্টারনেটে বা নেটওয়ার্কে আর্থিক লেনদেন বা অন্য কোন গোপনীয় লেনদেনের ক্ষেত্রে তথ্যের সঙ্গে ডিজিটাল স্বাক্ষর জুড়ে দেয়া হয়। প্রতিটি দলিলের জন্য স্বাক্ষর হয় ভিন্ন ও গোপনীয়। ফলে নকলের কোন সুযোগ নেই। প্রেরকের পরিচয় যাচাই -এর কাজটিও হয় সফ্টওয়ারের মাধ্যমে। ডিজিটাল স্বাক্ষর ছাড়া ইলেক্ট্রনিক লেনদেন সম্ভব নয়। কারণ, লেনদেন হতে হবে পরিচিতিসহ অনভিপ্রেত হস্তক্ষেপ মুক্ত।
বিকল্প সাবমেরিন ও টেরেস্ট্রিয়াল সংযোগঃ
দেশে উচ্চগতির নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সংযোগ দিতে দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবল সাউথইস্ট এশিয়া-মিডলইস্ট-ওয়েস্টার্ন ইউরোপ-ফাইভ (সি-মি-উই-ফাইভ) নামের নতুন সাবমেরিন ক্যাবল্ কনসোর্টিয়ামের সঙ্গে সংযুক্ত হওয়ার প্রক্রিয়া চলমান আছে। টেলিযোগাযোগ সেবা শুধুমাত্র আন্তর্জাতিক সাবমেরিন ক্যাবলে্র উপর না রেখে পাশাপাশি টেরেস্ট্রিয়াল ক্যাবল সংযোগ স্থাপনের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে ছয়টি প্রতিষ্ঠানকে আন্তর্জাতিক টেরেস্ট্রিয়াল ক্যাবল্ (আইটিসি) লাইসেন্স প্রদান করা হয়েছে। যা নিরবিচ্ছন্ন ইন্টারনেট সেবা প্রদানে সহায়ক হবে।
ইউনিয়ন তথ্য ও সেবাকেন্দ্রে (ইউআইএসসি):
জনগণের দোরগোড়ায় সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ইতোমধ্যে দেশের সকল ইউনিয়নে স্থাপন করা হয়েছে ইউনিয়ন তথ্য ও সেবাকেন্দ্র। এসব তথ্য ও সেবাকেন্দ্র থেকে তৃণমূলের জনগণ মোবাইল ব্যাংকিং, জীবন বীমা সুবিধা, বিদ্যুতের বিল পরিশোধ, বিভিন্ন সরকারি ফরম, সরকারি ঘোষণা, জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন, পাবলিক পরীক্ষার ফলাফল, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি প্রক্রিয়া, কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আইন বিষয়ক তথ্য ছাড়াও ই-মেইল করা, ইন্টারনেট ব্যবহার করা, মোবাইল ফোন রিচার্জ করা,কম্পিউটার কম্পোজ, প্রিন্ট দেয়া ইত্যাদি সেবা পাচ্ছে।
প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের সকল পাঠ্যপুস্তক নিয়ে ই-বুকের আনুষ্ঠানিক যাত্রাঃ
জাতীয় শিক্ষক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) এবং ইউএনডিপি’র অর্থায়নে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রোগ্রাম যৌথভাবে ই-বুক প্রনয়ণের সাথে সম্পৃক্ত। ই-বুক হলো মুদ্রিত বইয়ের ইলেকট্রনিক সংস্করণ যা ল্যাপটপ ও ডেস্কটপ কম্পিউটারসহ অন্যান্য ডিজিটাল যন্ত্র যেমনঃ ই-বুক রিডার, মোবাইল ফোন, পিডিএ, সিডি ও আইপ্যাডে পাঠযোগ্য।
ইউনিকোডভিত্তিক নতুন ফন্টঃ
২০১৩ এর একুশের (২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে) প্রথম প্রহরে শহীদ মিনার প্রান্তরে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইউনিকোড ভিত্তিক প্রমিত বাংলা ফন্ট ‘আমার বর্ণমালা’ -এর প্রথম ফন্ট ‘শাপলা’ উদ্বোধন করেছেন। ফন্ট তৈরিতে কাজ করছে বাংলা একাডেমী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাফিকস ডিজাইন বিভাগ ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রোগ্রাম। কম্পিউটার টাইপিং –এ ব্যবহারের জন্য, বাংলা একাডেমীর তত্ত্বাবধানে বানানো এটাই হচ্ছে প্রথম ফন্ট। এ ফন্টে ইউনিকোড সুবিধার সঙ্গে প্রমিত বাংলা, যুক্তবর্ণের সহজীকরণ ও এর রূপ নির্দিষ্ট করণে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এই ফন্টটি সবার জন্য উন্মুক্ত (http://www.amarbornomala.gov.bd -এই ওয়েবসাইট থেকে ডউনলোড করে ব্যবহার করা যাবে)। তবে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে এর বিতরণ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
বাংলা প্রথম এবং পূর্ণাঙ্গ সার্চ ইঞ্জিন পিপীলিকাঃ
বাংলা নববর্ষের (১৪২০) ঠিক আগের রাত ১৩ এপ্রিল আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হলো পৃথিবীর প্রথম এবং পূর্ণাঙ্গ বাংলা সার্চ ইঞ্জিন ‘পিপীলিকা’। সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগ এবং জিপি আইটি লিমিটেড যৌথভাবে তৈরি করেছে এই বাংলা সার্চ ইঞ্জিন। এটা প্রথমে শুরু হয়েছিলো শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থীদের একটি প্রজেক্ট হিসাবে। প্রত্যেক বছরের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থীদের একটা প্রজেক্ট করে জমা দিতে হয়। সেই রকম একটা প্রজেক্ট ছিলো পিপীলিকা। সেই প্রজেক্ট যখন শুরু হলো তখন তারাই প্রজেক্টটির নাম দিয়েছিলো পিপীলিকা। পিপীলিকা যেমন সব জায়গা থেকে ঘুরে ঘুরে খাবার সংগ্রহ করে রাখে, তেমনি সার্চ ইঞ্জিনের ভিতরে সব তথ্য খুঁজে খুঁজে রেখে দেওয়া হবে সেই ধারনা থেকে এর নাম। এটি পূর্ণাঙ্গ সার্চ ইঞ্জিন হিসেবে ২০ কোটির বেশি মানুষকে বাংলা তথ্য খোঁজায় সহায়তা করবে। পিপীলিকায় বাংলায় তথ্য অনুসন্ধানের জন্য নিজস্ব বাংলা অভিধান ব্যবহার করা হয়েছে। যদি ব্যবহারকারী কোনো শব্দের ভুল বানানও দেন, পিপীলিকা স্বয়ংক্রিয়ভাবে সঠিক বানান খুঁজে নিয়ে সেই নতুন শব্দ দিয়ে অনুসন্ধান চালাবে, ফলাফল দেবে এবং সঙ্গে সঙ্গে ব্যবহারকারীকে জানিয়ে দেবে তাঁর কোন শব্দের বানান ভুল ছিল, সঠিক কোন শব্দ দিয়ে অনুসন্ধান চালানো হয়েছে। সংবাদ অনুসন্ধান, ব্লগ অনুসন্ধান, বাংলা উইকিপিডিয়া অনুসন্ধান ও জাতীয় ই-তথ্যকোষসহ আরও অনেক কিছু থাকছে পিপীলিকায়।
দেশে সফটওয়্যার খাতে ১০ কোটি ডলার আয়ঃ
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) উদ্যোগে একটি বিশেষ সাংবাদিক সম্মেলনে (৩১/০৮/২০১৩ তারিখে অনুষ্ঠিত) জানানো হয়, এবারই প্রথম আইসিটি খাতে রপ্তানি আয় ১০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে। গত কবছরে সফটওয়্যার ও আইসিটি খাতে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে গড়ে ৫০ ভাগ। এ প্রবৃদ্ধি রপ্তানিতে দেশের শীর্ষস্থানীয় ১০টি খাতের অন্যতম। দেশের সফটওয়্যার ও আইসিটি খাতে রপ্তানি আয় ১০ কোটি মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। ২০১১-১২ অর্থবছরে রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৭ কোটি ৮০ লাখ মার্কিন ডলার। গত ২০১২-১৩ অর্থবছরে এ খাতে রপ্তানি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০১.৬৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে। বিগত বছরের তুলনায় রপ্তানি প্রবৃদ্ধির পরিমাণ ছিল ৪৩.৫৩ ভাগ। দেশের আইসিটি খাতে এটি যুগান্তকারী অর্জন। আইসিটিতে রপ্তানির এ প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকলে এবং সম্মিলিত উদ্যোগ আর পরিকল্পনা নিয়ে এগোলে আগামী ২০২১ সাল নাগাদ এ খাতে ১০০ কোটি ডলার আয় করা সম্ভব বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
তৃতীয় প্রজন্মের নেটওয়ার্ক বা ৩জিঃ
৩জি (ইংরেজি: 3G) হল থার্ড জেনারেশন বা তৃতীয় প্রজন্ম-এর সংক্ষিপ্ত রূপ। এটি হল তৃতীয় প্রজন্মের তারবিহীন নেটওয়ার্ক প্রযুক্তি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গত ১৪ অক্টোবর ২০১২ সালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র থেকে মহামান্য রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমানের সঙ্গে কথা বলে চীন সরকারের সহায়তায় সংযোজিত টেলিটকের পরীক্ষামূলকভাবে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে আধুনিক থ্রিজি প্রযুক্তি সেবার উদ্বোধন করেন। এবং ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৩ -বহুল প্রত্যাশিত ৩জি সেবা চালু করার লক্ষ্যে অবশেষে দেশের বেসরকারী অপারেটরগুলো ৩জি'র লাইসেন্স পেয়েছে। ফলে চারটি মোবাইল ফোন অপারেটর থ্রিজি সেবা দিতে পারবে। তারা হল- গ্রামীণফোন, বাংলালিংক, রবি ও এয়ারটেল। নিলামে অংশ নিয়ে অপারেটর চারটি থ্রিজির জন্য সরকারের কাছ থেকে তরঙ্গ বরাদ্দ নিয়েছে। থ্রিজি প্রযুক্তির সবচেয়ে বড় ও আকর্ষণীয় সুবিধা হলো, এই প্রযুক্তি কার্যকর থাকলে মোবাইল হ্যান্ডসেটের মাধ্যমে ভয়েস সুবিধার পাশাপাশি ব্যবহারকারী উচ্চগতির ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারে। এছাড়া টিভি দেখা, খেলা দেখা, ভিডিও ক্লিপস আদান-প্রদান, ভিডিও কনফারেন্স সবই সম্ভব। থ্রিজি বাংলাদেশের ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের একমাত্র সমাধান। গণ ব্রডব্যান্ড ছাড়া ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন অবান্তর। কেননা ডিজিটাল বাংলাদেশে অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থানের পরে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট হবে জনগণের অন্যতম মৌলিক অধিকার। মোবাইল নেটওয়ার্ক ছাড়া অন্য কোনো নেটওয়ার্কে যে কোনো লোকেশনে ব্রডব্যান্ড দেয়া প্রায় অসম্ভব। বর্তমান সময়ে ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্কের জন্য পৃথিবীতে সাধারণত তিন ধরনের নেটওয়ার্ক অবকাঠামো ব্যবহার করা হচ্ছে- ১. ফাইবার অপটিক ক্যাবল; ২. ওয়াইম্যাক্স ও ৩. থ্রিজি মোবাইল নেটওয়ার্ক।
ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড ২০১৪:
একটি আধুনিক ডিজিটাল সমাজ গঠনে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি নির্ভর ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের উৎসাহ দিতে এ সংশ্লিস্ট বিভিন্ন উদ্যোগ, আইসিটি ক্ষেত্রের সাফল্য ও সক্ষমতা তুলে ধরতে গত ৪ থেকে ৭ জুন ২০১৪ ঢাকায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয়েগেল ‘ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড ২০১৪’ শীর্ষক আয়োজন। দেশের সার্বিক উন্নয়নের স্বার্থে বিশ্বে তথ্য-প্রযুক্তির ক্ষেত্রে যে বিপুল অগ্রগতি সাধিত হয়েছে তার সুফল দেশের আর্থ-সামাজিক খাতে ছড়িয়ে দেয়া ও যুবসমাজের মধ্যে উদ্যোক্তা হওয়ার নতুন একটি সংস্কৃতি গড়ে তুলতে এ আয়োজন করা হয়েছিল। দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞ ও সংশ্লিস্টরা এতে অংশগ্রহণ করেন।
এক পোর্টালে পুরো বাংলাদেশঃ
জাতীয় বাতায়ন (National Portal-NP) এর আওতায় দেশের সকল ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা, বিভাগ, অধিদপ্তর, মন্ত্রণালয়সহ সকল সরকারি দপ্তরের জন্য প্রায় ২৫ (পঁচিশ) হাজার ওয়েব পোর্টাল (তথ্য বাতায়ন) নির্মাণের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বাংলাদেশ গভ ডট বিডি (http://www.bangladesh.gov.bd) নামের এই ওয়েবসাইট গত সোমবার ২৩ জুন, ২০১৪ তারিখে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে তাঁর তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় আনুষ্ঠানিকভাবে এই ওয়েবসাইটের উদ্বোধন করেন। জাতীয় বাতায়ন বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম বাতায়ন। সরকারি উদ্যোগে ২৫ হাজার সরকারি প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটকে একসূত্রে সংযুক্তকরণে এটি অনন্য নজির। বাংলা ভাষায় তৈরি এ বাতায়নে রয়েছে ২০ লাখের বেশি কনটেন্ট। সরকারের প্রতিটি দফতরের মাঠ পর্যায় থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অংশ নিয়েছেন পোর্টালটি ডেভেলপ এবং কনটেন্ট তৈরিতে। জাতীয় তথ্য বাতায়নে সরকারের সব ধরনের তথ্য ও সেবা ছাড়াও রয়েছে দেশের পর্যটনকেন্দ্র, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, পুরাকীর্তি ও ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ স্থান-স্থাপনার ছবি এবং বর্ণনা। জাতীয় তথ্য বাতায়ন যেন বাংলাদেশের নতুন ঠিকানা।
পরিশেষে একটি কথা উল্লেখ না করলেই নয়, সরকারের প্রতিটি প্রতিষ্ঠান (মন্ত্রণালয়/বিভাগ/সংস্থা) যদি তাদের অভ্যন্তরীন প্রয়োজনে আইসিটি সংশ্লিষ্ট কোন উন্নয়ন (সফটওয়ার/হার্ডওয়ার সংশ্লিষ্ট) করে তবে সে প্রতিষ্ঠান হয়তো তাদের নিজস্ব গন্ডির মধ্যে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে, কিন্তু সে প্রতিষ্ঠানের সাথে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের আন্ত-যোগাযোগ দূরহ হবে বইকি। এমনকি প্রতিটি প্রতিষ্ঠান যদি পৃথক-পৃথক ভাবে নিজস্ব ধ্যান-ধারনায় আইসিটি সংশ্লিষ্ট কোন উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করে তবে সরকারী অর্থের অপচয় হওয়াটাও অস্বাভাবিক কিছু নয়। সেমোতাবেক ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় একক প্রতিষ্ঠান হিসেবে ডিজিটাল বাংলাদেশ বির্ণিমানে আইসিটি সংশ্লিষ্ট যাবতীয় সকল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে সমন্বয় সাধণের লক্ষ্যে। সরকারের সকল আইসিটি জনবলকে উক্ত মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণে এনে একটি আইসিটি সার্ভিস গঠনের মাধ্যমে সরকারের আইসিটি খাতকে একটি সম্মানজনক পেশায় পরিণত করে দক্ষ আইসিটি জনবলকে এই খাতে আকৃষ্ট করা প্রয়োজন। যারা হবে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে অগ্রণী সৈনিক ও রক্ষক। সে জন্য দরকার ই-গর্ভমেন্ট মাস্টার প্ল্যান বা মহাপরিকল্পনা। যার মাধ্যমে আমরা সবাই মিলিত হব জীবনের প্রতিক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তি বাস্তবায়নের মহামিছিলে! আর বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশ স্থান করে নেবে দুর্নীতিমুক্ত, সভ্য ও আধুনিক ধ্যান ধারনার নব্য সহযাত্রী হিসেবে।
[লেখকঃ মোহাম্মদ মোয়াজ্জেম হোসেন, প্রোগ্রামার, বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি), পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়, ঢাকা। ই-মেইলঃ [email protected] ]
©somewhere in net ltd.