![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
"ধর্মীয় কুসংস্কারে যারা আবদ্ধ, তারা সব সময়েই দরিদ্র থাকে।" ---ডাব্লিউ এস ল্যান্ডস।
মোহাম্মদ মোয়াজ্জেম হোসেন
গোপাল ভাঁড়ের কাছে এসে একদিন এক প্রতিবেশী, “আমাকে একটা চিঠি লিখে দাওনা ভাই”।
গোপালঃ আমি চিঠি লিখতে পারবো না, আমার পায়ে ব্যথা।
প্রতিবেশী আশ্চর্য হয়ে বললো, “চিঠি তো লিখবে হাত দিয়ে, পায়ে ব্যথা তাতে কী হয়েছে?”
গোপালঃ কারণ আমি অতোদূর হেঁটে যেতে পারবো না।
প্রতিবেশীঃ অতোদূর হাঁটতে পারবে না মানে?
গোপালঃ মানে আমার লেখা চিঠি আমি ছাড়া আর কেউ পড়তে পারবে না। আমার হাতের লেখা খুব খারাপ তো। যাকে চিঠি পাঠাবে, তাকে তো আমাকেই পড়ে দিয়ে আসতে হবে, তাই না? পায়ে ব্যথা নিয়ে যাবো কিভাবে?
২০০৮ সালের একটি ঘটনা, হাতের লেখা ভালো করার জন্য ভারতের এক ডাক্তার আদালতের একটি হলফনামায় স্বাক্ষর করেছেন। তার লেখা একটি রিপোর্ট পড়তে না পারায় বিচারকদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি হাতের লেখা ভালো করার মুচলেকা দেন। এক ব্যক্তির নাবালিকা মেয়েকে এক প্রতিবেশী বিবাহে বাধ্য করেছে এমন একটি কেসের ব্যাপারে মুম্বাইয়ের থান এলাকার এ ডাক্তারকে রিপোর্ট করতে বলা হয়েছিল। ডাক্তার মেয়েটির বয়স পরীক্ষা করে জানান, ১৮ বছর পেরিয়েছে সে। কিন্তু ডাক্তারের হাতের লেখা নিয়ে বাধে বিপত্তি। কারণ হাতের লেখা এতোটাই খারাপ যে, উদ্ধার করা যায়নি রিপোর্টের মর্মার্থ। পরে টেলিফোনের মাধ্যমে কোর্টকে অর্থ বুঝিয়ে দেন তিনি। এমন হাতের লেখার কারণ জানাতে চাইলে তিনি অধিক রিপোর্ট লেখার কথা উল্লেখ করেন। কিন্তু এ ব্যাখ্যা বিচারকদের মনোপুত না হওয়ায় মুচলেকা দিতে বাধ্য হন তিনি।
সুন্দর হাতের লেখার কদর সবার কাছেই আছে। বিশেষ করে যাদের হাতের লেখা খুব একটা সুন্দর নয় তারা সারাটা জীবনই আফসোস করেন নিজের হাতের লেখা নিয়ে। সুন্দর হাতের লেখা নিয়ে ডাক্তারের উদ্দেশ্যে রোগীর চিরকুট-
ডাক্তার সাহেব,
চলে গেলাম। চলে গেলাম বলতে, আমাকে চলে যেতে হলো। আর চলে যাওয়ার নেপথ্যে রয়েছে একটি কারণ। আমার বউ বিশ্বাস করে যত বড় ডাক্তার, তত বাজে হাতের লেখা তাঁর। কিন্তু আমি আপনাকে আরেকজন রোগীর প্রেসক্রিপশন লেখার সময় দেখলাম, আপনার হাতের লেখা বেশ ভালো। আপনি যদি আমার চিকিৎসা করেন এবং প্রেসক্রিপশন দেন তাহলে আমার বউকে কোনোভাবেই বিশ্বাস করাতে পারব না যে, আমি ভালো কোনো ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলাম। সে শুধু বলবে ভালো ডাক্তার হলে তার হাতের লেখা পড়া যাচ্ছে কেন। সে তখন সবাইকে বলে বেড়াবে আমি তার কাছ থেকে বড় ডাক্তারের কাছে যাব বলে টাকা এনে, সিনেমা দেখে ফেলেছি। আপনার জন্য আমার দাম্পত্য কলহ শুরু হোক, সেটা আমি চাইনি। বিষয়টা নিয়ে নিরিবিলি জায়গায় একটু গভীরভাবে ভাবার খাতিরে আমি চলে গেলাম।
ইতি,
শুক্কুর বেপারী।
ব্যক্তিগত বা দাপ্তরিক প্রয়োজনে আমরা প্রায়শই কোন-না কোন চিঠি, নথিপত্র কিংবা দলিলাদি কম্পিউটারে বাংলা অথবা ইংরেজি ভাষায় টাইপকরে (যাকে আমরা কম্পিউটার কম্পোজ বলি) ব্যবহার করি। কী-বোর্ডের দৌরাত্ম্যে অনেকের হাতেই এখন কলম ওঠে না। এ পরিস্থিতিতে ভবিষ্যতে প্রযুক্তির প্রভাবে আমাদের হাতে কলমের চেয়ে কী-বোর্ডই বেশি শোভা পাবে। আর এর প্রভাব নিয়ে সম্প্রতি চিন্তিত হয়ে পড়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এক প্রতিবেদনে বিষয়টি জানিয়েছে গার্ডিয়ান। কম্পিউটার বা নানা ডিজিটাল যন্ত্রের প্রভাবে হাতের লেখা কতখানি কমে গেছে এ সম্পর্কে কোনো নির্ভরযোগ্য পরিসংখ্যান নেই। তবে ব্রিটিশ এক জরিপে দেখা গেছে, প্রতি তিন জনে একজন গত ছয় মাসে ৪১ দিন একবারও কাগজ-কলম ব্যবহার করে কিছু লেখেননি। প্রযুক্তির প্রভাবে কলম ব্যবহার কমে যাওয়ার কারণে উদ্বেগে আছে বেশ কিছু দেশের কর্তাব্যক্তিরা। প্রায় ৪০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে মোসোপটেমিয়ায় হাতের লেখা প্রচলিত হওয়ার পরে লেখার প্রতি এক ধরনের হুমকি এলো বলে মনে করছেন অনেক বিশেষজ্ঞ। গবেষণায় দেখা গেছে, হাতের লেখার মাধ্যমে আমরা কী-বোর্ডের তুলনায় ভালোভাবে মনের ভাব প্রকাশ করতে পারি। হাতের লেখাতে প্রয়োজন হয় অনেক বেশি দক্ষতার। লেখা নিয়ে একটি কৌতুক হয়ে যাক-
শিক্ষকঃ মন্টি! তোমাকে না বলেছি, তোমার হাতের লেখা খারাপ। তাই তোমার "বাড়ির কাজ" -এর লেখাটা ১০ বার লিখবে। তুমি চারবার লিখেছ কেন?
মন্টিঃ স্যার, আমি অঙ্কেও খারাপ!
শিশুরা "বাড়ির কাজ" থেকে অনেক বিষয় শিখতে পারে। হাতের নড়াচড়া, কলম ধরা, কাগজ ধরা, সঠিকভাবে কলম ধরে নির্দিষ্ট দিকে তা ঠিকভাবে এগিয়ে নেওয়া ইত্যাদি। সে তুলনায় কী-বোর্ডে টাইপ করলে তাতে দক্ষতা অতোটা প্রয়োজন হয় না। কী-বোর্ডে আপনার একটি করে কী (key) -তে চাপ দিতে হয়। আর এক্ষেত্রে যে দক্ষতা প্রয়েজন হয় তা হলো, সঠিক কী (key) -তে চাপ দেওয়া। কলম ও কী-বোর্ড ভিন্ন দুটি মিডিয়াতে কাজ করে। এর মধ্যে ওয়ার্ডপ্রসেসিং (অনেক-অনেক ফিচার সর্মৃদ্ধ এখনো পর্যন্ত অতি জনপ্রিয় মাক্রোসফটের তৈরি একীভূত বাণিজ্যিক প্যাকেইজ প্রোগ্রাম “Microsoft Office” -এর একটি কম্পোনেন্ট “Microsoft Office Word 2003” কিংবা এর আগে-পরের অন্য কোন ভার্ষন ব্যবহার করে সাধারনত আমরা টাইপ করে থাকি) একটি সাধারণ টুল। এখানে আপনি বহু ফন্ট (Font)/অক্ষর থেকে পছন্দনীয় কিছু একটা বেছে নিতে পারবেন। কিন্তু নিজস্ব স্টাইলে একটি হাতের লেখা শুরু করার থেকে তা অনেকখানি আলাদা। হাতের লেখার বদলে কম্পিউটারে লেখালেখি করলে তা প্রাথমিকভাবে আমাদের গতি বাড়ায়, এমনটাই মনে করেন অনেক গবেষক। সাধারণত কম্পিউটারের ফন্ট (Font)/অক্ষর আপনি নিজের মতো করে তৈরি করতে পারবেন না, বেছে নিতে পারবেন।
টাইপিং -এর সময় ভাষাগত কারণে, ফন্ট (Font)/অক্ষর পরিবর্তন করতে হয়। ফন্ট/অক্ষর হলো কী-বোর্ডের কোন কী (key) প্রেস করলে তার বিপরীতে যে ক্যারেক্টার এডিটর স্ক্রীন/মনিটরে ভেসে উঠে তা। প্রতিটি ফন্টকে একক নাম (যেমনঃ টাইমস নিউ রোমান, নিকস, শাপলা, ভ্রিন্দা, সুতন্নি, সোলাইমানলিপি) দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। ফন্ট এর আকার একটি নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে প্রয়োজন অনুযায়ী এডিটর স্ক্রীনে পরিবর্তন (ছোট/বড়) করা যায়। প্রতিটি ফন্টের নিজস্ব স্টাইল থাকে। সাধারণ স্টাইলকে রোমান (Roman) বলা হয়, এছাড়াও বোল্ড (Bold) এবং ইতালিক (Italic) নামে আরো দুই ধরনের স্টাইল রয়েছে। বিভিন্ন স্টাইলের ফন্ট গ্রুপ (রোমান, বোল্ড ও ইতালিক) -কে ফন্ট ফ্যামেলী বলা হয়। প্রিতিটি ফন্টের মালিক হলেন তার ডিজাইকারী। সুতরাং ফন্ট ডিজাইকারীর অনুমতি ছাড়া তা ব্যবহার করা আইন সিদ্ধ নয়।
ফন্টগুলো আবার দুই রকম হতে পারে, এক. ইউনিকোড সাপোর্টেড ফন্ট এবং দুই. সাধারণ ফন্ট। ইউনিকোড পৃথিবীর প্রতিটি ভাষার প্রতিটি অক্ষরের জন্য একটি একক সংখ্যা/নম্বর বরাদ্দ করে, সেটা যে প্লাটফর্মের জন্যই হোক, যে প্রোগ্রামের জন্যই হোক, আর যে ভাষার জন্যই হোক। ইউনিকোডে বিশাল লিপিসংকেতের সমর্থন থাকায় ক্লায়েন্ট সার্ভার বা বহুমুখী এ্যপ্লিকেশন এবং ওয়েবের গঠনে পুরনো লিপিমালার ব্যবহার না করে ইউনিকোডের ব্যবহার অনেক খরচ কমিয়ে আনতে পারে। ইউনিকোড কোনো বাড়তি প্রকৌশল ছাড়াই একটি সফটওয়্যার বা ওয়েবসাইটকে বিভিন্ন প্লাটফর্ম, ভাষা এবং দেশে ব্যবহারযোগ্যতা দেয়। এটা ব্যবহারের ফলে ডাটা বিভিন্ন সিস্টেমের মধ্যে দিয়ে আনাগোনা করতে পারে কোনো রকম বিকৃতি ছাড়াই। মোটকথা হলো, ইউনিকোড সাপোর্টেড ফন্ট ব্যবহার করে টাইপকরা ডক্যুমেন্ট অন্য যেকোন কম্পিউটারে ওপেন করে পড়া ও এডিট যায় কিন্তু সাধারণ ফন্টে লিখা ডক্যুমেন্টের ক্ষেত্রে সেটা সম্ভব নয়।
বাংলা একাডেমি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাফিক ডিজাইন বিভাগের সহযোগিতায়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রকল্পের উদ্যোগে চলছে বাংলা বর্ণমালা আদর্শিকরণের কাজ। গত ১২ নভেম্বর ২০১২ তারিখে বাংলা একাডেমি, গ্রাফিক ডিজাইন বিভাগ ও এটুআই এর মধ্যে এ বিষয়ে একটি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর হয়। চুক্তি অনুযায়ী গ্রাফিক ডিজাইন বিভাগ এর তত্ত্বাবধানে একদল বাংলা টাইপোগ্রাফার বাংলা বর্ণমালার একটি পূর্ণাঙ্গ সেট তৈরী করবেন। যার নামকরণ করা হয়েছে “আমার বর্ণমালা”। ইতোমধ্যে আমার বর্ণমালার প্রথম ফন্ট “শাপলা” উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে। এটাই হচ্ছে বাংলা একাডেমীর তত্ত্বাবধানে বানানো ইউনিকোড ভিত্তিক প্রথম বাংলা ফন্ট। বিস্তারিত জানতে কিংবা ফন্ট ডাউনলোড করতে ভিজিট করতে পারেনঃ http://www.amarbornomala.gov.bd। দেশে অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান নিজেদের মতো করে বেশকিছু ফন্ট তৈরি ও বাজারজাত করেছে। ফলে যুক্তাক্ষর ও প্রমিত বানান তেমন গুরুত্ব পায়নি। বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের উদ্যোগে প্রথমবারের মতো সরকারিভাবে “নিকস” নামে একটি ফন্ট তৈরি করা হয়েছে। এ ফন্টটিতেও যুক্তাক্ষরে লেখাসহ কিছু সুবিধা পূর্ণাঙ্গরূপে পাওয়া যায় না বলে শুনা যায়। তবে “আমার বর্ণমালা” ফন্টে ইউনিকোড সুবিধার সঙ্গে প্রমিত বাংলা, যুক্তাক্ষর ও নতুন সংস্করণের প্রযুক্তির সমন্বয় করা হবে বলে জানানো হয়েছে। এ বিষয়ে বাংলা একাডেমীর অংশগ্রহণ দেরিতে হলেও তা প্রসংশার দাবিদার। কেননা এতে করে কম্পিউটারে বাংলা টাইপিং এর জন্য জাতীয়ভাবে গ্রহণযোগ্য ফন্ট পাওয়া যাবে। সবশেষে ডাক্তারের লেখা প্রেসক্রিপশন নিয়ে আর একটি কৌতুক-
এক ব্যক্তি বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে গেলেন চিকিৎসার জন্য। তো ডাক্তারমশাই দেখেটেখে প্রেসক্রিপশন দিয়ে দিলেন। প্রেসক্রিপশনে লেখা কয়েকটি ঔষধের নাম অতিকষ্টে বের করা গেলেও একটির নাম কেউই বুঝতেছিলো না। ফার্মেসীর লোকেরা ঔষধটির নাম বুঝতে নাপেরে বলেন যে, এই ঔষধ নাই, কিন্তু বলে না যে নাম পড়তে পারছেন না। বেশ কয়েকটি ফার্মেসী ঘুরে শেষে এক সত্যবাদী ফার্মাসীস্ট পাওয়া গেল, দেখেন আঙ্কেল, উনি যে কি লিখছে উনিই জানেন; আপনে বরং ওনার কাছ থেকে ক্লিয়ার হয়ে আসেন, এটা আসলে কোন ঔষধ। ব্যক্তিটি কি আর করবেন, আবার চেম্বারে ডাক্তারের কাছে আসলেন। কোন রকমে ওনার রুমে ঢুকে জিজ্ঞাসা করলেন স্যার এই ঔষধের নামটা কি লিখছেন কেউ বুঝতে পারছে না, একটু ক্লিয়ার করে দিলে, কিনতে পারবো। বিশেষজ্ঞ মহোদয় পাক্কা দুই মিনিট তাকাইয়া রইলো, মাথা খাউজাইলো, দাঁত দিয়া ঠোঁট কামড়াইলো মাগার সে নিজেও ঔষধটা যে কি সেটা আবিষ্কার করতে পারলেন না, এমন হাতের লেখা তার। এরপর তিনি ঐ ব্যক্তিকে বললেন, আসলে এই ঔষধটা দরকার নাই, আপনি বরং এই ঔষধটা খান বলে আগেরটা কেটে নতুন আরেকটা নাম লিখে দিলেন।
[লেখকঃ মোহাম্মদ মোয়াজ্জেম হোসেন, প্রোগ্রামার, বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি), পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়, ঢাকা। ই-মেইলঃ [email protected] ]
তারিখঃ ১৩/০১/২০১৫ খ্রিঃ।
©somewhere in net ltd.
১|
১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:১২
মোহাম্মদ মোয়াজ্জেম হোসেন(মিঠু) বলেছেন: Click This Link