নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মুক্তিযুদ্ধাদের চেতনায় গড়া বাংলাদেশ দেখতে চাই ।

হাফিজুর রহমান মিতু

ইতালী-রোম

হাফিজুর রহমান মিতু › বিস্তারিত পোস্টঃ

ইসলাম ধর্ম এবং আমাদের রাজনীতি

২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৩:৩৩

একটি জনসভায় পাকিস্থানী মুসলিম লীগ সরকার ১৪৪ ধারা জারি করেছে, মাওলানা ভাসানী সাহেব প্রধান বক্তা ছিলেন । পুলিশ এসে মাওলানা সাহেবকে একটি কাগজ দিল ।আমি বললাম মানি না ১৪৪ ধারা, আমি বক্তৃতা করবো । মাওলানা সাহেব মাক্রফোনের কাছে গিয়ে বললেন ১৪৪ ধারা জারি হয়েছে, সভা করতে দিবে না । আমি বক্তৃতা করতে চাই না, তবে আসুন আপনারা মোনাজাত করুন, আল্লাহু আমীন । মাওলানা সাহেব মোনাজাত শুরু করলেন, কিছুই বাকী রাখলেন না, যা বলার সবই বলে ফেললেন । পুলিশ অফিসার আর অন্যরাও দু হাত তুলে মোনাজাত করতে লাগলেন । আধাঘন্টা মোনাজাতে পুরো বক্তৃতা করে মাওলানা সাহেব সভা শেষ করলেন । পুলিশ ও মুসলিম লীগ ওয়ালারা বেকুব হয়ে গেলে ।
একজন আশাক্ষত লোক লম্বা আলখেল্লা পড়া, সুন্দর চেহেরা, ভালো দাড়ি, সামান্য আরবি ফার্সি বলতে পারে, বাংলাদেশে সে পীর হয়ে যায় ।বাঙালী হাজার হাজার টাকা তাকে দিচ্ছে একটু দোয়া পাওয়ার লোভে । ভাল করে খবর নিলে দেখা যাবে এই লোকটা কোন দোকানের কর্মচারী অথবা ডাকাতি বা খুনের মামলার আসামী ।
উপরে কথা গুলি বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আন্তজীবনী বই থেকে নেওয়া । আমি আমার ভাষায় বঙ্গবন্ধু কথা তুলে ধরার চেষ্টা করেছি ।উপরের এই দুইটা অংশ থেকে সহজেই বুঝা যায় যে, আমাদের রাজনীতিতে এবং সাধারন মানুষের মাঝে ইসলাম ধর্মের অপব্যবহারের ভয়াবহতা, যা বর্তমান সময়ে মারাত্মক আকার ধারন করেছে ।
গত ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধুর শাহাদাত বার্ষিকিতে আমি আমার এলাকার (ঢাকার জুরাইন) মসজিদে বঙ্গবন্ধু জন্য দোয়া/মিলাদ আয়োজন করার জন্য বলেছিলাম । কিন্তু মসজিদ কমিটি কারো নাম উল্লেখ করে দোয়া করা জায়েজ না বলে মানা করে দিয়েছে । পরে বাধ্য হয়ে পাশের মসজিদে দোয়া করার আয়োজন করি ।এক মসজিদের খতিব ফতোয়া দিল নাম উল্লেখ করে দোয়া করা জায়েজ না । একই এলাকার আরেক মসজিদের খতিব নাম উল্লেখ করেই দোয়া করলেন । এখন কোন খতিব সত্যের পথে আছে ? কে নবী (সাঃ)কে অনুসরন করছে ? কে ভাল আর কে ভন্ড ? এই সব প্রশ্নে উত্তর আমি কোথায় পাবো ?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে শুধু ইসলাম ধর্মই ব্যবহার হচ্ছে না । ইসলাম ধর্মকে ওহাবী, হানিফা, সিয়া, সুন্নি সহ বিভিন্ন আজব আজব নামে ভাগ করা হচ্ছে কিছু তথাকথিত আল্লামা, মাওলানা, মুকতি আর খতিবদের ব্যাক্তি স্বার্থের জন্য (সুযোগ বুঝে এ বিষয়ে অন্য সময় লেখবো)। তাদের খায়েজ হয়েছে প্রধান মন্ত্রী হবে, এলাকায় এলাকায় চেয়ারম্যান, মেম্বার হবে । এক কথায় তারাও নেতা হতে চায় । কত কাল আর দোয়া/মিলাদ আর ওয়াজ করে পেটের ভাত যোগার করবে ।আর এই লক্ষকে সামনে রেখে পরিকল্পিত ভাবে এলাকায় এলাকায় মসজিদে মসজিদে মাদ্রাসা গড়ে তুলছে ।ঢাকার শহরে অধিকাংশ মসজিদের সাথে একটি করে মাদ্রাসা রয়েছে । আর এই সব কওমী মাদ্রাসায় নবী মাহাম্মদ (সাঃ) এর মতবাদ শিখানো হয় না, শিখানো হয় ওহাবীর মতবাদ ।কারন আমাদের এই উপমাদেশে ওহাবী মতবাদে বিশ্বাসীরা ক্রমান্বয়ে শক্তিশালী হযে উঠছেন । স্বাধীনতার ৪২ বছরের মধ্যে হেফাজতে ইসলামের ব্যানারে তারা তাদের এই শক্তির একটা মহড়া দিয়েছেন ২০১৩ সালের ৫ই মে তে । জননেত্রীর শেখ হাসিনার বলিষ্ট পদক্ষেপে সেই দিন তাদের ফিরাতে না পারলে আজ আফগানিস্থান হতো বাংলাদেশ ।যদিও পরে ৪০ কোটি টাকার মূল্যের জমি লিজ পেয়ে হেফাজতে ইসলামের ঈমান বন্দক রেখেছেন আওয়ামী লীগ সরকারের কাছে । সেই সময় ইতালীর রোমের বিভিন্ন মসজিদের খতিবরাও ফুসে উঠে ছিলেন নাস্তিকদের ধ্বংস করার জন্য ।হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা সফী সাহেবের লেখা একটি লিপলেট জুম-আ নামাজের খুদবার সময় মুসল্লিদের পড়ে শুনানোর চেষ্টা করেছেন একাধিক খতিব ।এমন কি খতিবরা সাংবাদিক সম্মেলনও করেছেন (টিভিতে নিজেদের চেহেরা দেখানোর জন্য) । কিন্তু ৪০ কোটি টাকার রেলওয়ের জমি লিজ নিয়ে সেই আল্লামা সফী সাহেব যখন সরকারের কাছে তার ঈমান বন্দক রাখলেন তখন রোমের মসজিদের খতিবরা কোন টু-শব্দ করলেন না (যদি আমার অজান্তে করে থাকেন তবে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি)। তারা বললেন না যে, শাহাবাগী নাস্তিকদের(তর্থাকথিত আলেমদের ভাষায়) চেয়েও আল্লামা সফী আরো ভয়ম্কর আরো বেশি খারাপ ।
আমাদের দেশে তর্থাকথিত আল্লামারা হলো এরকম, এক দিন এক লোক হুজুরের কাছে এলেন, তার বউয়ের প্রসব ব্যাথা উঠেছে এখন কি করবে, হুজুর পরামর্শ দিলেন একজন মহিলা ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে । ঐ লোকটি কিছু দুর গিয়ে আবার ফিরে এসে হুজুরকে বললেন আপনি তো মেয়েদের ৫/৬ ক্লাস পষন্ত পড়তে বলেছেন সংসারের হিসাব রাখার জন্য, ডাক্তার হতে হলে তো কলেজ/ভার্সিটিতে পড়তে হয় (মেয়েরা তখন হুজুরের মতে তেতুল হয়ে যায়) । হুজুর কিছু না বলে ঘরে চলে গেলেন ।
উপমহাদেশের কথিত বিখ্যাত আলেম আল্লাম সফী সাহেব যখন শাহাবগে যুদ্ধাপরাধীদের গণহারে নান্তিক বলেন, তখন তিনি আর বিখ্যাত আলেম থাকেন না, হয়ে যান তর্থাকথিত আলেম বা হাসানুল হক ইনু সাহেবের ভাষায় তেতুল হুজুর । একজন সত্যিকারের আলেম কখনো আরেক জন মুসলমানকে নাস্তিক বলতে পারে না ।পবিত্র কুরআন এবং সহী হাদিস এই কথাই বলে ।
যদি কোন ব্যক্তি ইসলামের জরুরী বিষয়কে মান্য করে, কিন্তু গোনাহগার। তাহলে উক্ত গোনাহের কারণে লোকটিকে কাফের বলা জায়েজ নয়। হারাম। কুরআন ও হাদীসে এ ব্যাপারে কড়া ধমকী এসেছে।
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا ضَرَبْتُمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَتَبَيَّنُوا وَلَا تَقُولُوا لِمَنْ أَلْقَىٰ إِلَيْكُمُ السَّلَامَ لَسْتَ مُؤْمِنًا تَبْتَغُونَ عَرَضَ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا فَعِنْدَ اللَّهِ مَغَانِمُ كَثِيرَةٌ ۚ كَذَٰلِكَ كُنْتُمْ مِنْ قَبْلُ فَمَنَّ اللَّهُ عَلَيْكُمْ فَتَبَيَّنُوا ۚ إِنَّ اللَّهَ كَانَ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرًا [٤:٩٤]
হে ঈমানদারগণ! তোমরা যখন আল্লাহর পথে সফর কর,তখন যাচাই করে নিও এবং যে, তোমাদেরকে সালাম করে তাকে বলো না যে, তুমি মুসলমান নও। তোমরা পার্থিব জীবনের সম্পদ অন্বেষণ কর,বস্তুতঃ আল্লাহর কাছে অনেক সম্পদ রয়েছে। তোমরা ও তো এমনি ছিলে ইতিপূর্বে; অতঃপর আল্লাহ তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন। অতএব, এখন অনুসন্ধান করে নিও। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের কাজ কর্মের খবর রাখেন। {সূরা নিসা-৯৪}
হাদীসে রাসূল (সাঃ) যে ব্যক্তি কাফের না তাকে কাফের বললে, সেই কুফরী নিজের দিকে প্রত্যাবর্তন করে মর্মে কঠোর হুশিয়ারী উচ্চারণ করেছেন-
عن أبي ذر رضي الله عنه أنه سمع النبي صلى الله عليه و سلم يقول ( لا يرمي رجل رجلا بالفسوق ولا يرميه بالكفر إلا ارتدت عليه إن لم يكن صاحبه كذلك ) হযরত আবু জর রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসুল সাঃ বলেছেন যে, তোমাদের কেউ যদি কাউকে ফাসেক বলে, কিংবা কাফের বলে অথচ লোকটি এমন নয়,তাহলে তা যিনি বলেছেন তার দিকে ফিরে আসবে।
কত মারাত্মক হুশিয়ারী, তাই কাউকে কাফের, মুশরিক, নাস্তিক বলার ক্ষেত্রে কঠোর সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।
যুদ্ধাপরাধীদের ফাসির দাবীতে শাহাবাগে লক্ষ লক্ষ জনতা আন্দোলন করেছে, হেফাজতে ইসলামের আল্লামা সফী সাহেব সহ রোমের মসজিদের খতিবরা যে, তাদের গণহারে নাস্তিক বলেছে এটা কি ইসলাম সমমত ছিল ? কুরআন ও হাদীসের আলোকে রোমের মসজিদের খতিবরাই নাস্তিক/কাফেরের সমতুল নয় কি ? এদের পিছনে নামাজ পড়াটা কতটুকু যুক্তিকর হচ্ছে, রোমের মসজিদ কমিটি গুলো দয়া করে ভেবে দেখবেন কি ? ধন্যবাদ ।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.