![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
গাঁও গ্রামের ছাওয়াল আমি, গায়ে মাটির গন্ধ; অনেক কিছু না দেখিলেও নই যে আমি অন্ধ
মাতৃস্বাস্থ্যের উন্নতির লক্ষ্যে সরকারি পর্যায়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং বেসরকারি পর্যায়ে বিভিন্ন এনজিও এবং প্রাইভেট হাসপাতাল বা ক্লিনিক নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে যার ফলাফল আমরা দেখতে পাই ২০০১ এবং ২০১০ সালের মাতৃমৃত্যু ও স্বাস্থ্যসেবা জরিপের ফলাফলে। ১০ বছরের ব্যবধানে মাতৃমৃত্যু হার (প্রতি লাখ জীবিত জন্মে) ৩২২ থেকে কমে ১৯৪-এ দাড়ায়। নিঃসন্দেহে এটি একটি উল্লেখযোগ্য সফলতা। এ সফলাতার পিছনে যে ইনডিকেটর গুলো কাজ করেছে তা হলো পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি ব্যবহারকারীর হার বৃদ্ধি, মোট প্রজনন হার হ্রাস, মাতৃস্বাস্থ্য সেবার সুযোগ বৃদ্ধি এবং আর্থসামাজিক অগ্রগতি।
নভেম্বর মাসেই বাংলাদেশ মাতৃমৃত্যু ও স্বাস্থ্যসেবা জরিপ, ২০১৬ এর প্রাথমিক ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে যেখানে মাতৃস্বাস্থ্য সেবার প্রতিটি ইনডিকেটরের উন্নতি সাধিত হওয়ার পরও মাতৃমৃত্যু হার (প্রতি ১ লাখ জীবিত জন্মে ১৯৬) স্থিতাবস্থায় রয়েছে যা আমাদের জন্য উদ্বেকের কারণ। ২০১০ সাল এবং ২০১৬ সালের জরিপের তথ্য বিশ্লেষণ করলেই বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যায়। ২০১০ সালে যেখানে দক্ষ সেবাদানকারীর সহায়তায় প্রসব সংগঠিত হয়েছে ২৭% সেখানে ২০১৬ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী এ হার ৫০%। প্রাতিষ্ঠানিক প্রসব সেবা ২০১০ সালের ২৩% থেকে ২০১৬ সালে ৪৭% এ উন্নীত হয়েছে। মায়েদের সবধরণের মাতৃত্বকালীন সেবা (গর্ভকালীন, প্রসবকালীন এবং প্রসব পরবর্তী) গ্রহণের হার ২০১০ সালের ১৯% থেকে ২০১৬ সালে ৪৩% এ উন্নীত হয়েছে। শুধু তাই না, মাতৃত্বকালীন জটিলতায় স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে চিকিৎসা গ্রহণের হার ২৯% থেকে বেড়ে ৪৬% হয়েছে। এখানেই মিলিয়ন ডলারের প্রশ্ন “মাতৃমৃত্যু হার কমেনি কেন?”
পরিবার পরিকল্পনা বিভাগে কাজের সুবাদে প্রত্যন্ত অঞ্চলের নারী ও কিশোরীদের নিয়ে উঠান বৈঠকে অংশগ্রহণের মাধ্যমে তাঁদের সাথে খোলামেলা আলোচনার যথেষ্ট সুযোগ হয়েছে। সেখানে যে তথ্য উপাত্ত পাওয়া গেছে তা বিশ্লেষণ করলে মাতৃমৃত্যুর নানাবিধ কারণের মধ্যে মূল কারণ হিসেবে আমার কাছে মনে হয় বাল্য বিয়ে বা শিশু বিয়ে। এব্যাপারে তথ্য উপাত্ত কী বলে? বর্তমানে বাংলাদেশে বাল্য বিয়ের হার ৫৯% (বিডিএইচএস, ২০১৪)। শুধু তাই না, বাল্য বিয়ের শিকার এ কিশোরীরা অনিচ্ছা সত্ত্বেও শ্বশুর-শ্বাশুড়ি ও অন্যান্য আত্বীয় স্বজনের চাপে গর্ভধারণ করছেন যা গর্ভবতী কিশোরী এবং অনাগত সন্তান উভয়ের জন্যই ঝুঁকিপূর্ণ। বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক এন্ড হেলথ সার্ভে (বিডিএইচএস), ২০১৪ এর তথ্য মতে ৩০.৮% কিশোরীর বয়স ১৯ বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই সন্তান লালন পালন শুরু করছেন। একটি শিশুর গর্ভে আর একটি শিশু-ভাবতেই কষ্ট হয়। অনাকাংখিত গর্ভধারণের ফলে পরিবারে ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। আমি বিশ্বাস করি বাল্য বিয়ের বিরুদ্ধে যে অভিযান শুরু হয়েছে, সে ধারা অব্যাহত রাখতে পারলে ২০২২ সালের মধ্যে মাতৃমৃত্যু হ্রাসের যে লক্ষ্যমাত্রা প্রতি লাখ জীবিত জন্মে ১০৫ জন নির্ধারণ করা হয়েছে তা অর্জন করা সম্ভব হবে। আর বাল্য বিবাহ বন্ধ সহ কিশোরী গর্ভধারণ রোধ না করতে পারলে, আবার যদি ২০০১ সালের ৩২২ জনে ফিরে যায় আমাদের অবাক হওয়ার কোন কারণ থাকবে না।
আশার কথা হলো এ বিষয়টিকে মাথায় রেখেই আমি আমার সহকর্মীদের সাথে আলোচনা করে একটি উদ্যোগ গ্রহণ করি যেটি পাইলটিং আকারে মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার রামপাল ইউনিয়নে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। উদ্ভাবনী এ উদ্যোগটির শিরোনাম দেওয়া হয়েছে বাল্য বিয়ের শিকার নব দম্পতিদের অনাকাংখিত গর্ভধারণ রোধকল্পে পরিবার পরিকল্পনা সেবা নিশ্চিতকরণ। এজন্য রামপাল ইউনিয়নের সকল বাল্য বিয়ের শিকার নবদম্পতিদের আলাদা তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। সংগ্রহ করা হয়েছে তাদের মোবাইল নম্বর। স্বাভাবিকভাবে যেখানে একজন দম্পতিকে প্রতি দুই মাসে একবার পরিদর্শন করা হয় সেখানে বিশেষ এসকল দম্পতিকে প্রতি মাসে পরিদর্শন করা হচ্ছে এবং ১৫ দিন অন্তর মোবাইল ফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ করা হচ্ছে। এছাড়াও বাল্য বিয়ের শিকার এ দম্পতির শ্বশুর শাশুড়িকে কাউন্সেলিংয়ের আওতায় আনা হচ্ছে। সবচেয়ে আশার কথা হচ্ছে অধিকাংশ দম্পতি সাবলীলভাবে বিষয়টি মেনে নিচ্ছেন।
এ উদ্যোগটি বাস্তবায়নের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এটুআই প্রকল্প কারিগরি ও পরামর্শ সেবা প্রদান করছেন। পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাবৃন্দ, জেলা প্রশাসন এবং উপজেলা প্রশাসন এ উদ্যোগ বাস্তবায়নে উৎসাহ ও সহযোগিতা করায় কাজটি আরও সহজ হচ্ছে। গণমাধ্যমের প্রতিনিধিবৃন্দ, জনপ্রতিনিধি, সুশীল সমাজের প্রতিও কৃতজ্ঞতা তাঁদের অকুণ্ঠ সমর্থনের জন্য। ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই রামপাল ইউনিয়নের পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের কর্মচারীবৃন্দের প্রতি কারণ তাঁরা এগিয়ে না আসলে এটি বাস্তবায়ন করা সহজ হতো না।
০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৪:৫০
মোঃ আব্দুল মান্নান বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে। খুবই উদ্বেগের বিষয় এটি!!!
©somewhere in net ltd.
১|
২৮ শে নভেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৫:০৭
কালীদাস বলেছেন: ফার্টিলিটি রিলেটেড টপিকে কাজ করা ছেড়ে দিয়েছি অনেকদিন হয়, রিসেন্ট কিছু ইভেন্ট মোটেও মানতে পারিনি। রিপ্লেসমেন্ট লেভেল ফার্টিলিটির এত কাছে যাওয়ার পর বাল্যবিবাহ আরও কড়া আইন করে বন্ধ করা উচিত ছিল, সেখানে সরকার কিনা লিগাল এজের আইনে সুযোগসন্ধানীদের জন্য ফাঁক রেখে দিয়েছে হাস্যকর এক লজিক দেখিয়ে।

আপনাদের উদ্যোগটা জেনে ভাল লাগল। শুভকামনা রইল