নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যেখানে যেমন, সেখানে তেমন

মোঃ আব্দুল মান্নান

গাঁও গ্রামের ছাওয়াল আমি, গায়ে মাটির গন্ধ; অনেক কিছু না দেখিলেও নই যে আমি অন্ধ

মোঃ আব্দুল মান্নান › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রশ্নপত্র ফাঁসঃ অসুস্থ প্রতিযোগিতা অন্যতম প্রধান কারণ

১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ১২:৫১

পারুল আপা প্রায়ই পরীক্ষার আগের সন্ধ্যায় একখানা গাইড বই নিয়ে পাশের বাড়ির কাওসার ভাইয়ের কাছে যাইতেন এবং কাওসার ভাই যথারীতি বইয়ে কিছু দাগাদাগি করে দিতেন। তখন এটি বুঝতে না পারলেও আমার যখন এমন সময় আসলো, আমি বুঝতে পারলাম পারুল আপা বইয়ে দাগাদাগির জন্য কেন কাওসার ভাইয়ের কাছে যাইতেন। আসলে মধ্যম মেধাবী ছাত্র ছাত্রীদের জন্য খুবই সাধারণ একটি ঘটনা ছিল যে, পরীক্ষার আগের রাতে একটি শর্ট সাজেশন নিবে। এক্ষত্রে আমরা সবসময় বেছে নিয়েছি বড় ভাই বা বোনদেরকে যারা মেধাবী ছাত্র-ছাত্রী হিসেবে পরিচিত ছিল। আমরা শিক্ষকের কাছ থেকে এমন সাজেশন নেওয়ার কথা ভাবতেই পারিনি। আজও এ ধারা চালু আছে তবে ভিন্ন ভাবে। আমরা যেখানে বইয়ের প্রশ্নমালাতে আঁকিবুঁকি করিয়ে আনতাম এখন সেখানে পুরো প্রশ্নই দিয়ে দেওয়া হচ্ছে কখনও হাতে লিখে কখনও টাইপ করে। বিষয়টির অবতারনা এজন্য যে, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসেও পত্রিকার প্রধান শিরোনামে জায়গা করে নিয়েছে অন্য কিছু আর তাহলো “মুন্সীগঞ্জে প্রশ্নপত্র ফাঁসে পাকড়াও ১৪”। শুধু পত্রিকার পাতায় নয়, মুন্সীগঞ্জের সুযোগ্য জেলা প্রশাসক সায়লা ফারজানা মহোদয় ফেসবুকের মাধ্যমে পাবলিক সার্ভিস ইনোভেশন ফোরামে বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাছাড়াও দেশের বিভিন্ন শ্রেণি পেশার লোকজন বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করছেন।

গত দুদিন ধরে শহরের প্রধান আলোচ্য বিষয় হচ্ছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণি থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত বার্ষিক পরীক্ষার সকল বিষয়ের প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে এবং সদর উপজেলার একশত উনিশ টি বিদ্যালয়ের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে যা নতুন প্রশ্নপত্রের মাধ্যমে আবার সতেরো তারিখ থেকে নেওয়া হবে। মুন্সীগঞ্জ জেলার সুযোগ্য জেলা প্রশাসক সায়লা ফারজানা মহোদয় এবং পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম, বিপিএম মহোদয়ের বলিষ্ঠ ভূমিকার কারণে হীন এ কাজের সাথে জড়িতদেরকে সনাক্ত করে আটক করা হচ্ছে। এজন্য জেলা প্রশাসন এবং পুলিশ প্রশাসনের শীর্ষ দুই কর্মকর্তাকে মোবারকবাদ জানাই।
একটু অন্য প্রসঙ্গে আসি, আসলে আমরা কোন দিকে যাচ্ছি? একেতো আমাদের শিক্ষার বেহাল দশা অন্যদিকে প্রশ্নপত্র ফাঁস! এতদিন শুনেছি বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার অথবা পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয় কিন্তু মুন্সীগঞ্জে ফাঁস হলো প্রাথমিকের (দ্বিতীয় থেকে চতুর্থ শ্রেণির) বার্ষিক পরীক্ষার সকল বিষয়ের প্রশ্নপত্র। এ পর্যন্ত গ্রেপ্তারকৃতদের প্রায় সকলেই কোচিং এর সাথে জড়িত। তাহলে কি ধরে নিব এর জন্য শুধুমাত্র কোচিং ব্যবসার সাথে জড়িতরাই দায়ী? আমার মতে এর উত্তর এক কথায় “না”। প্রায় চার বছরের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা থেকে যেটা উপলব্ধি সেটা হলো কোচিং ব্যবসায়ীর পাশাপাশি কোন কোন অভিভাবকও এর দায় এড়াতে পারেন না। অভিভাবকদের মধ্যে দেখা যায় একটি অসুস্থ প্রতিযোগিতা যা আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাচ্ছে। আমার অভিজ্ঞতায় আমি দেখেছি আমার পাটদানের বিষয় ইংরেজি পরীক্ষার আগের রাতে অভিভাবকগণ অথবা শিক্ষার্থী নিজেই শর্ট সাজেশন নেওয়ার জন্য বাসায় চলে আসতেন এবং আমি যেহেতু প্রাইভেট পড়াতাম সেহেতু নাও করতে পারতাম না। যাহোক আমার বিবেচনা মতে আমি তাদেরকে কিছু বিষয় দাগিয়ে দিতাম এবং তার কিছুটা প্রশ্নে কমনও পড়তো আবার কখনও কমন পড়তো না। অভিভাবকদের মধ্যে এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হতো। আলোচনার বিষয় ছিল অমুক স্যারের দাগানো সবগুলো প্রশ্নই কমন পড়েছে আর তমুক স্যারের সাজেশন থেকে খুব বেশি কমন পড়েনি। আর এগুলো যখন আমার ছাত্রীরা বলত তখন মনটা খারাপ হয়ে যেত। মনটা খারাপ হত এই ভেবে না যে, আমার দাগানো প্রশ্ন কমন পড়েনি, বরং এই ভেবে যে, আমাদের সন্তানদেরকে আমরা কোন পথে নিয়ে যাচ্ছি। পাশাপাশি ভালো ব্যাপার ছিল এটাই যে, আমি জুনিয়র হওয়ায় আমাকে প্রশ্ন করার মত এত বড় গুরু দায়িত্ব তখনও পর্যন্ত দেয়া হয়নি কারণ আমি ছাড়াও আরও বারো জন শিক্ষক ছিলেন আমার ইংরেজি ডিপার্টমেন্টে। বলা যেতে পারে সুযোগের অভাবে সৎ ছিলাম আমি।
তাহলে এর শেষ কোথায়? আইনের কঠোর প্রয়োগ এবং শিক্ষার মানোন্নয়ন। প্রথম বিষয়টি অর্থাৎ আইনের কঠোর প্রয়োগের মাধ্যমে মুন্সীগঞ্জ কে সারা বাংলাদেশের জন্য একটি উদাহরণ হিসেবে তৈরি করার সুযোগ এসেছে। প্রশ্নপত্র ফাঁসের সাথে জড়িতদেরকে তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে যদি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করা যায়, তাহলে সারা বাংলাদেশ এর থেকে শিক্ষা নিবে এবং প্রশ্নপত্র ফাঁসের মত নেক্কারজনক ঘটনাও বন্ধ না হলেও অনেকাংশে কমে যাবে। আমাদের কোমলমতি শিক্ষার্থীগণ তাঁদের উপর চাপিয়ে দেওয়া অসুস্থ প্রতিযোগিতা থেকেও বেরিয়ে আস্তে পারবে। তাঁরা তাঁদের মত করে শিখতে পারবে এবং তাঁদের কর্মক্ষেত্রে প্রয়োগ করতে পারবে। দ্বিতীয় বিষয়টি হলো শিক্ষার মানোন্নয়ন যার ব্যাপ্তি আসলে বিশাল। এ বিষয়ে পরে আরেকদিন আলোচনা করা যাবে। পরিশেষে শুধু এটুকুই বলব আসুন আমরা সবাই মিলে আমাদের সন্তানের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে তাঁদের কে আর অসুস্থ প্রতিযোগিতার মধ্যে ঠেলে না দিই। এতেই আমরা আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মকে মানুষের মত মানুষ রুপে গড়ে তুলতে পারবো।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ২:২৫

বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: বাংলাদেশের মত দেশে সুযোগ খুঁজবে সবাই। আর এখানে তো তেমন কষ্টও করতে হয় না প্রশ্ন পাওয়ার জন্য! তাই প্রশ্ন ফাঁসে যারা জড়িত তাদেরই আগে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে...

২| ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ৩:৫৪

সচেতনহ্যাপী বলেছেন: বহুকাল আগে মনোজ বসুর মানুষ গড়ার কারিগর পড়েছিলাম।। আজকের বাস্তবতা থেকে দুরে নয় সেই গল্প।।!!

৩| ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১২:০৪

রাজীব নুর বলেছেন: আমাদের একজন দক্ষ শিক্ষা মন্ত্রী খুব দরকার।

১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১২:৫৫

মোঃ আব্দুল মান্নান বলেছেন: রাজীব ভাই, আমি আপনার মতের বিরুদ্ধে নয়। তবে আমি আমাদের বর্তমান মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী জনাব নুরুল ইসলাম নাহিদ স্যার কে খুব কাছ থেকে ৪ বছর ৮ মাস দেখার এবং কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। তিনি আমাদের কোমলমতি শিশুদের নিয়ে খুব ভাবেন এবং সেগূলো বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করেন। আসলে আমাদের এ জনবহুল দেশে একজন মন্ত্রী সবকিছু করে দিতে পারবেন তা আমার কাছে মনে হয় না। আমাদের মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী প্রশ্নপত্র ফাঁসের ব্যাপারে জিরো টলারেন্স নীতিতে আছেন এবং সেটা সেভাবেই প্রয়োগের জন্য নিয়মিত নির্দেশনা দিচ্ছেন। কিন্তু চোরে না শুনে ধর্মের কাহিনী। মূল সমস্যা হচ্ছে আমাদের অভিভাবকদের বা ছাত্র ছাত্রীদের মধ্যে অসুস্থ প্রতিযোগিতা। আর এ থেকে পরিত্রাণের উপায়ও খুজে পাওয়া খুব কষ্টকর হবে। কারণ ঐ যে ক্লাসে রোল সিস্টেম যেখানে সকলকেই প্রথম হতে হবে। আমার মতে বিদ্যালয় পর্যায়ে শুধু উত্তীর্ণ এবং অনুত্তীর্ণ এ দুটি পর্যায় থাকলে এটা কিছুটা কমবে। যাহোক, আপনার বাড়ি যেহেতু ঐতিহ্যবাহী বিক্রমপুরে, একদিন চলে আসেন আমার অফিসে, চায়ের সাথে আড্ডা হয়ে যাক।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.