![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
গাঁও গ্রামের ছাওয়াল আমি, গায়ে মাটির গন্ধ; অনেক কিছু না দেখিলেও নই যে আমি অন্ধ
“পরিকল্পিত পরিবার গড়ি, মাতৃমৃত্যু রোধ করি”- এ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে আগামী ৩০ ডিসেম্বর ২০১৭ থেকে ৪ জানুয়ারি ২০১৮ তারিখ পর্যন্ত পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের আইইএম ইউনিটের উদ্যোগে সারাদেশ ব্যাপী পরিবার পরিকল্পনা, মা ও শিশু স্বাস্থ্য সেবা ও প্রচার সপ্তাহ উদযাপন করা হবে। এ উপলক্ষে সারাদেশের ন্যায় মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয় বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সরকারি কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক, শিক্ষক, ইমাম, এনজিও প্রতিনিধি এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে অবহিতকরণ সভা, মাইকিং, বিভিন্ন ইউনিয়নে স্থায়ী ও দীর্ঘমেয়াদী পদ্ধতির বিশেষ সেবা ক্যাম্প আয়োজন, গর্ভকালীন সেবার বিশেষ ক্যাম্প আয়োজন, তৃণমূল পর্যায়ে উঠান বৈঠক আয়োজন করে পরিকল্পিত পরিবার গঠনের গুরুত্বসহ বাল্য বিয়ের কুফল সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা।
এবারের সেবা ও প্রচার সপ্তাহের প্রতিপাদ্য বিষয়টি অত্যন্ত সময়োপযোগী হয়েছে। গত ২৩ নভেম্বর ২০১৭ তারিখে বাংলাদেশ মাতৃমৃত্যু ও স্বাস্থ্যসেবা জরিপ, ২০১৬ এর প্রাথমিক ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে যেখানে ২০১০ সালের তুলনায় মাতৃস্বাস্থ্য সেবার প্রতিটি সূচকে উন্নতি সাধিত হওয়ার পরও মাতৃমৃত্যু হার (প্রতি লাখ জীবিত জন্মে ১৯৬) স্থিতাবস্থায় রয়েছে যা আমাদের জন্য উদ্বেকের কারণ। ২০১০ সাল এবং ২০১৬ সালের জরিপের তথ্য বিশ্লেষণ করলেই বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যায়। ২০১০ সালে যেখানে দক্ষ সেবাদানকারীর সহায়তায় প্রসব সংগঠিত হয়েছে ২৭% সেখানে ২০১৬ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী এ হার ৫০%। প্রাতিষ্ঠানিক প্রসব সেবা ২০১০ সালের ২৩% থেকে ২০১৬ সালে ৪৭% এ উন্নীত হয়েছে। মায়েদের সবধরণের মাতৃত্বকালীন সেবা (গর্ভকালীন, প্রসবকালীন এবং প্রসব পরবর্তী) গ্রহণের হার ২০১০ সালের ১৯% থেকে ২০১৬ সালে ৪৩% এ উন্নীত হয়েছে। শুধু তাই না, মাতৃত্বকালীন জটিলতায় স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে চিকিৎসা গ্রহণের হার ২৯% থেকে বেড়ে ৪৬% হয়েছে। তাহলে স্বাভাবিকভাবেই মনে প্রশ্নের উদ্রেক হতে পারে “মাতৃমৃত্যু হার কমেনি কেন?” আসলে মাতৃত্বকালীন সেবার পাশাপাশি মাতৃত্বের স্বাদ গ্রহণ করার জন্য কোন দম্পতি প্রস্তুত কিনা সে বিষয়টিও আমাদেরকে বিবেচনায় আনা খুবই জরুরি।
পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের কার্যক্রম শুরুর সময় থেকেই বিভিন্ন শ্লোগান ব্যবহার করে আসছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে “কুড়িতে বুড়ি নয়, বিশের আগে বিয়ে নয়”, “ছেলে হোক মেয়ে হোক, দুটি সন্তানই যথেষ্ট”, “দুটি সন্তানের বেশি নয়, একটি হলে ভালো হয়”, “আঠারোর আগে বিয়ে নয়, বিশের আগে এবং পঁয়ত্রিশের পরে সন্তান নয়” ইত্যাদি। প্রিয় পাঠক, আমরা শেষ শ্লোগানটি বিশ্লেষণ করলে কী পাই? এখানে দুটি বার্তা পরিষ্কারভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। প্রথমত, নারীদের ক্ষেত্রে বিয়ের বয়স অবশ্যই কমপক্ষে আঠারো হতে হবে। অর্থাৎ আঠারোর আগে বিয়ে হলে মা ও অনাগত সন্তান উভয়ের জন্যই ঝুঁকি রয়ে যায়, সেক্ষেত্রে গর্ভকালীন, প্রসবকালীন এবং প্রসবোত্তর সেবা গ্রহণের পরও মা ও বাচ্চা উভয়ের জন্যই ঝুঁকি রয়ে যায়। দ্বিতীয়ত, বিশের আগে এবং পঁয়ত্রিশের পরে সন্তান না নেওয়া অর্থাৎ সন্তান ধারণের জন্য একটি উপযুক্ত বয়স আছে। প্রকৃতির কাছ থেকেও আমরা শিক্ষা নিতে পারি। ফলদি একটি গাছের বীজ বপন করে নির্ধারিত সময় পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করা লাগে ফলের জন্য। আবার কলমের চারা লাগানোর পরের বছর বা ক্ষেত্র বিশেষ সে বছরেই ফুল আসলে আমরা ফুল ভেঙ্গে ফেলি কারণ তাতে করে গাছটি হৃষ্ট পুষ্ট হবে এবং ভবিষ্যতে বেশি ফল পাওয়া যাবে এই আশায়। ঠিক একইভাবে একজন মা যদি সন্তান জন্মদানের জন্য শারীরিক এবং মানসিকভাবে প্রস্তুত না থাকেন তাহলে তার গর্ভে সুস্থ সন্তান যেমন আশা করা যায়না, তেমন তাঁর জীবনটাও ঝুকির মধ্যে রয়ে যায়। তাই নবদম্পতিদেরকে ভাবতে হবে তাঁরা কী করবেন। বিশ বছর বয়সের আগে সন্তান নিলে, অপুষ্ট শিশু জন্ম দেওয়ার পাশাপাশি মায়ের মৃত্যুর শংকাও অনেক বেশি রয়ে যায়। বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক এন্ড হেলথ সার্ভে, ২০১৪ এর প্রতিবেদন অনুযায়ী ৩০.৮ শতাংশ কিশোরী তাঁদের বয়স ১৯ বছর হওয়ার পূর্বেই সন্তান লালন পালন শুরু করে। আর এসকল গর্ভবতী মায়ের ক্ষেত্রে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে প্রসব করানোটাও জরুরি হয়ে পড়ে যার ফলাফল আমরা ২০১৬ সালের জরিপেই পাই। ২০১০ সালে যেখানে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে ডেলিভারি হতো শতকরা ১২ জন সেখানে ২০১৬ সালের জরিপে দেখা যায় শতকরা ৩১ জন মায়ের সিজারের মাধ্যমে ডেলিভারি সম্পন্ন হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে এ হার কোনভাবেই ১৫% এর উপরে হয়া উচিত নয়। মাতৃমৃত্যুর এটিও একটি কারণ যার স্বরুপ আরেকদিন আলোচনা করা যাবে। তাই সময় এসেছে সঠিক সময়ে এবং উপযুক্ত ব্যবধানে গর্ভধারণের মাধ্যমে পরিকল্পিত পরিবার গঠনের।
আমরাই পারি। মাতৃমৃত্যু হার হ্রাসে আমরা ২০১০ সালে যে সাফল্য দেখিয়েছি সে ধারা অব্যাহত থাকলে পরিকল্পিত পরিবার গড়ার মধ্য দিয়ে ২০২২ সালের মধ্যে মাতৃমৃত্যু হার প্রতি লাখ জীবিত জন্মে ১০৫ জন এবং ২০৩০ সালের মধ্যে ৭০ জনে নামিয়ে আনতে পারব ইনশাআল্লাহ। এক্ষেত্রে স্বাস্থ্য বিভাগ এবং পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের পাশাপাশি সর্বস্তরের জনগনের সহায়তা একান্ত কাম্য। তাই আমরা আশা করতে পারি বরাবরের মত বিভিন্ন সরকারি দপ্তর, জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক এবং সুশীল সমাজ “পরিকল্পিত পরিবার গড়ি, মাতৃমৃত্যু রোধ করি”- এ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের আইইএম ইউনিট কর্তৃক ঘোষিত সেবা ও প্রচার সপ্তাহ সফল করে তুলবেন এবং মাতৃমৃত্যু হার হ্রাসে ভূমিকা রাখবেন।
©somewhere in net ltd.