নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চলছে চলবে

হাসান কালবৈশাখী

আমি দুর্বার, আমি ভেঙ্গে করি সব চুরমার। আমি কালবৈশাখীর ঝড়! আমার ফেসবুকইডি www.facebook.com/norwstorm

হাসান কালবৈশাখী › বিস্তারিত পোস্টঃ

ইতিহাসে সবচেয়ে প্রভাব বিস্তারকারি কয়েকটি ভাষনের অন্যতম সেরা ভাষণ

০৭ ই মার্চ, ২০১৫ দুপুর ১২:৪৬

পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে প্রভাব বিস্তারকারি কয়েকটি ভাষনের অন্যতম সেরা ভাষণ -
১৯৭১ এর উত্তাল বিকেলে একটি জাতিকে স্বপ্ন দেখিয়েছিল.!

সেদিন রেসকোর্স ময়দানে লক্ষ জনতা মিছিল রেসকোর্সের দিকে যাচ্ছিল। সবাই উত্তেজিত হয়ে বসেছিল মুজিব স্বাধীনতা ঘোষনা করবেন, ডাকসু ছাত্রলীগ ইতিমধ্যেই স্বাধীন বাংলার পতাকা উড়িয়ে স্বাধীনতার জন্য বদ্ধপরিকর ...... আমি হাতিরপুলের কাছে দেখলাম মিছিলে বহু মানুষের হাতে বৈঠা-লাঠি। আমি ছোট থাকলেও সেই জনতার অভিব্যক্তি চোখমুখের ভাষা অনুধাবন করতে ভুল করিনি। …. সেই উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে সবাই ধরে নিয়েছিল মুজিব স্বাধীনতা ঘোষনা করবেন।

এছাড়াও সেদিন মুজিব সরাসরি স্বাধীনতা ঘোষনা করে কিনা বিদেশী সংবাদমাধ্যম উৎসুক হয়েছিল। এপি, রয়টারস, ইউপিআই, এনবিসি, সিবিএস, এবিসি নিউজ, টাইম, নিউইয়োর্ক টাইমস, টেলিগ্রাফ ইত্যাদির শতাধিক সাদাচামড়া সাংবাদিক ইন্টারকনের লবি সাদা করে ফেলেছিল। তারা ঐদিন রেসকোর্সে উপস্থিত ছিলেন। তারা পুরো ভাষন রেকর্ড করেছিলেন অনেকের হাতে ভারি ফিল্মি ক্যামেরাও দেখেছি। সম্পুর্ন ভাষন বিবিসি আর্কাইভে এখনো সংরক্ষিত আছে। নিউইয়োর্ক টাইমস ও অনান্য বিদেশী পত্রিকায় মুজিবের মুল বক্তব্য ফলাও করে পরদিন প্রকাশিত হয়েছিল।




বঙ্গবন্ধুর ৭ ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ (পূর্ণাঙ্গ) ~
-----

আজ দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি।
আপনারা সকলে জানেন এবং বোঝেন আমরা জীবন দিয়ে চেষ্টা করেছি। কিন্তু দুঃখের বিষয় আজ ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, রংপুরে আমার ভাইয়ের রক্তে রাজপথ রঞ্জিত হয়েছে। বাংলার মানুষ মুক্তি চায়, বাংলার মানুষ বাঁচতে চায়, বাংলার মানুষ অধিকার চায়। কী অন্যায় করেছিলাম?
নির্বাচনে বাংলাদেশের মানুষ সম্পূর্ণভাবে আমাকে ও আওয়ামী লীগকে ভোট দেন। আমাদের ন্যাশনাল এসেম্বলি বসবে, আমরা সেখানে শাসনতন্ত্র তৈরী করব এবং এদেশের ইতিহাসকে গড়ে তুলব। এদেশের মানুষ অর্থনীতিক, রাজনীতিক ও সাংষ্কৃতিক মুক্তি পাবেন। কিন্তু দুঃখের সঙ্গে বলছি বাংলাদেশের করুণ ইতিহাস, বাংলার মানুষের রক্তের ইতিহাস। এই রক্তের ইতিহাস মুমূর্ষু মানুষের করুণ আর্তনাদ—এদেশের ইতিহাস, এদেশের মানুষের রক্তে রাজপথ রঞ্জিত করার ইতিহাস।
১৯৫২ সালে আমরা রক্ত দিয়েছি।১৯৫৪ সালে নির্বাচনে জয়লাভ করেও আমরা গদিতে বসতে পারিনি। ১৯৫৮ সালে আয়ুব খাঁ মার্শাল-ল জারি করে ১০ বছর আমাদের গোলাম করে রেখেছে। ১৯৬৯ সালের আন্দোলনে আয়ুব খাঁর পতনের পরে ইয়াহিয়া এলেন। ইয়াহিয়া খান সাহেব বললেন দেশে শাসনতন্ত্র দেবেন— আমরা মেনে নিলাম। তারপর অনেক ইতিহাস হয়ে গেল, নির্বাচন হলো। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান সাহেবের সঙ্গে দেখা করেছি। আমি শুধু বাংলার নয়, পাকিস্তানের মেজরিটি পার্টির নেতা হিসাবে তাঁকে অনুরোধ করেছিলাম, ১৫ই ফেব্রুয়ারি তারিখে আমাদের জাতীয় পরিষদের অধিবেশন দিন। তিনি আমার কথা রাখলেন না। রাখলেন ভুট্টো সাহেবের কথা। তিনি বললেন, মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে সভা হবে। আমি বললাম, এসেম্বলির মধ্যে আলোচনা করব— এমনকি এও পর্যন্ত বললাম, যদি ন্যায্য কথা বলে, আমরা সংখ্যায় বেশি হলেও একজনের মতেও যদি তা ন্যায্য কথা হয়, আমরা মেনে নেব।
ভুট্টো সাহেব এখানে ঢাকায় এসেছিলেন আলোচনা করলেন। বলে গেলেন, আলোচনার দরজা বন্ধ নয়, আরো আলোচনা হবে। তারপর অন্যান্য নেতাদের সঙ্গে আমরা আলোচনা করলাম— আলাপ করে শাসনতন্ত্র তৈরী করব। সবাই আসুন, বসুন। আমরা আলাপ করে শাসনতন্ত্র তৈরী করব। তিনি বললেন, পশ্চিম পাকিস্তানের মেম্বাররা যদি আসে তাহলে কসাইখানা হবে এসেম্বলি। তিনি বললেন, যারা যাবে, তাদের মেরে ফেলে দেওয়া হবে। আর যদি কেউ এসেম্বলিতে আসে পেশোয়ার থেকে করাচি পর্যন্ত সব জোর করে বন্ধ করা হবে। আমি বললাম, এসেম্বলি চলবে। আর হঠাৎ মার্চের ১লা তারিখে এসেম্বলি বন্ধ করে দেওয়া হলো।
ইয়াহিয়া খান প্রেসিডেন্ট হিসেবে এসেম্বলি ডেকেছিলেন। আমি বললাম, যাবো। ভুট্টো বললেন, যাবেন না। ৩৫ জন সদস্য পশ্চিম পাকিস্তান থেকে এলেন। তারপর হঠাৎ বন্ধ করে দেওয়া, দোষ দেওয়া হলো বাংলার মানুষের, দোষ দেওয়া হলো আমাকে। দেশের মানুষ প্রতিবাদে মুখর হয়ে উঠলো।

আমি বললাম, শান্তিপূর্ণভাবে হরতাল পালন করুন। আমি বললাম, আপনারা কলকারখানা সব কিছু বন্ধ করে দেন। জনগণ সাড়া দিল। আপন ইচ্ছায় জনগণ রাস্তায় বেরিয়ে পড়লো। সংগ্রাম চালিয়ে যাবার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হলো। আমি বললাম, আমরা জামা কেনার পয়সা দিয়ে অস্ত্র পেয়েছি বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে দেশকে রক্ষা করার জন্য। আজ সেই অস্ত্র দেশের গরিব-দুঃখী মানুষের বিরুদ্ধে— তার বুকের ওপর হচ্ছে গুলি। আমরা পাকিস্তানে সংখ্যাগুরু— আমরা বাঙালিরা যখনই ক্ষমতায় যাবার চেষ্টা করেছি তখনই তারা আমাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে।
আমি বলেছিলাম জেনারেল ইয়াহিয়া খান সাহেব, আপনি পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট। দেখে যান কিভাবে আমার গরিবের ওপর, আমার বাংলার মানুষের বুকের ওপর গুলি করা হয়েছে। কিভাবে আমার মায়ের কোল খালি করা হয়েছে। কী করে মানুষ হত্যা করা হয়েছে। আপনি আসুন, আপনি দেখুন। তিনি বললেন, আমি ১০ তারিখে রাউন্ড টেবিল কনফারেন্স ডাকব।
আমি বলেছি কীসের এসেম্বলি বসবে? কার সঙ্গে কথা বলব? আপনারা যারা আমার মানুষের রক্ত নিয়েছেন, তাদের সঙ্গে কথা বলব? পাঁচ ঘন্টা গোপন বৈঠকে সমস্ত দোষ তারা আমাদের বাংলার মানুষের ওপর দিয়েছেন, দায়ী আমরা।
২৫ তারিখে এসেম্বলি ডেকেছেন। রক্তের দাগ শুকায় নাই। ১০ তারিখে বলেছি, রক্তে পাড়া দিয়ে, শহীদের ওপর পাড়া দিয়ে, এসেম্বলি খোলা চলবে না। সামরিক আইন মার্শাল-ল উইথড্র করতে হবে। সমস্ত সামরিক বাহিনীর লোকদের ব্যারাকে ঢুকতে হবে। যে ভাইদের হত্যা করা হয়েছে, তার তদন্ত করতে হবে। আর জনগণের প্রতিনিধির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। তারপর বিবেচনা করে দেখব আমরা এসেম্বলিতে বসতে পারব কিনা। এর পূর্বে এসেম্বলিতে আমরা বসতে পারি না।
আমি প্রধানমন্ত্রিত্ব চাই না। দেশের মানুষের অধিকার চাই। আমি পরিষ্কার অক্ষরে বলে দিবার চাই যে, আজ থেকে এই বাংলাদেশ কোর্ট-কাচারি, আদালত, ফৌজদারি আদালত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে। গরিবের যাতে কষ্ট না হয়, যাতে আমার মানুষ কষ্ট না করে, সেজন্য যে সমস্ত জিনিসগুলি আছে, সেগুলির হরতাল কাল থেকে চলবে না। রিকশা, গরুর গাড়ি, রেল চলবে। শুধু সেক্রেটারিয়েট ও সুপ্রিম কোর্ট, হাই কোর্ট, জজ কোর্ট, সেমি-গভর্নমেন্ট দপ্তর, ওয়াপদা— কোনো কিছুই চলবে না। ২৮ তারিখে কর্মচারীরা গিয়ে বেতন নিয়ে আসবেন। এরপর যদি বেতন দেয়া না হয়, এরপর যদি একটি গুলি চলে, এরপর যদি আমার লোককে হত্যা করা হয়— তোমাদের কাছে আমার অনুরোধ রইল, প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলো। তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে এবং জীবনের তরে রাস্তাঘাট যা যা আছে সব কিছু আমি যদি হুকুম দিবার নাও পারি, তোমরা বন্ধ করে দেবে। আমরা ভাতে মারব, আমরা পানিতে মারব। সৈন্যরা, তোমরা আমাদের ভাই। তোমরা ব্যারাকে থাকো, তোমাদের কেউ কিছু বলবে না। কিন্তু আর তোমরা গুলি করবার চেষ্টা করো না। সাত কোটি মানুষকে দাবায়ে রাখতে পারবা না। আমরা যখন মরতে শিখেছি তখন কেউ আমাদের দাবায়ে রাখতে পারবা না।

আর যে সমস্ত লোক শহীদ হয়েছে, আমরা আওয়ামী লীগ থেকে যদ্দুর পারি সাহায্য করতে চেষ্টা করব। যারা পারেন আওয়ামী লীগ অফিসে সামান্য টাকা-পয়সা পৌঁছে দেবেন। আর সাতদিন হরতালে শ্রমিক ভাইয়েরা যোগদান করেছে, প্রত্যেক শিল্পের মালিক তাদের বেতন পৌঁছে দেবেন। সরকারি কর্মচারীদের বলি, আমি যা বলি তা মানতে হবে। যে পর্যন্ত আমার এই দেশের মুক্তি না হচ্ছে ততদিন ওয়াপদার ট্যাক্স বন্ধ করে দেওয়া হলো— কেউ দেবে না। শুনুন, মনে রাখুন। শত্রু পেছনে ঢুকেছে আমাদের মধ্যে আত্মকলহ সৃষ্টি করবে, লুটতরাজ করবে। এই বাংলায় হিন্দু-মুসলমান যারা আছে আমাদের ভাই— বাঙালি অবাঙালি তাদের রক্ষা করার দায়িত্ব আমাদের ওপর। আমাদের যেন বদনাম না হয়।
মনে রাখবেন, রেডিও যদি আমাদের কথা না শোনে, তাহলে কোনো বাঙালি রেডিও স্টেশনে যাবে না। যদি টেলিভিশন আমাদের নিউজ না দেয়, তাহলে কর্মচারীরা টেলিভিশনে যাবেন না। দুঘন্টা ব্যাংক খোলা থাকবে, যাতে মানুষ তাদের মায়নাপত্র নিতে পারে। পূর্ব বাংলা থেকে পশ্চিম পাকিস্তানে এক পয়সাও চালান হতে পারবে না। টেলিফোন, টেলিগ্রাম আমাদের এই পূর্ব বাংলায় চলবে এবং বাংলাদেশের নিউজ বাইরে পাঠানো চলবে।
এই দেশের মানুষকে খতম করার চেষ্টা চলছে— বাঙালিরা বুঝেসুঝে কাজ করবে। প্রত্যেক গ্রামে, প্রত্যেক মহল্লায় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তুলুন এবং আমাদের যা কিছু আছে, তাই নিয়ে প্রস্তুত থাকুন। রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরো দেবো। এই দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাআল্লাহ।
এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।
জয় বাংলা।

মন্তব্য ২৮ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (২৮) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই মার্চ, ২০১৫ দুপুর ১:০৫

রাফা বলেছেন: ভাষণ বলেন ,কবিতা বলেন,গদ্য,পদ্য বা সংগীত যাই বলিনা কেনো অবিস্বরণিয় একটি ইতিহাস এটি।
কালজয়ী একটি ইতিহাস ,যখনি শুনবে মানুষের মনে হবে এখনকার জন্যই উপযোগি।

পুরো ভাষণটা আমার মুখস্ত আছে।

http://www.somewhereinblog.net/blog/zzamanblog/30020018

০৫ ই মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৪:৩৯

হাসান কালবৈশাখী বলেছেন:
যুক্তরাষ্ট্রের মহাফেজখানায় রক্ষিত ১–৭ মার্চ–বিষয়ক সেই নথি থেকে - মিজানুর রহমান খান
আপডেট: ০০:৫৯, মার্চ ০৫, ২০১৬ | প্রথম আলো প্রিন্ট সংস্করণ

২০১২ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বর, টানা দুই মাস আমি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ডে অবস্থিত মার্কিন জাতীয় মহাফেজখানায় কাটিয়েছিলাম। এর অন্যতম লক্ষ্য ছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ডসহ বাংলাদেশ-বিষয়ক নথিপত্র পাঠ ও তা কপি করে আনা। একদিন একটা ফাইল দেখতে গিয়ে খুবই অবাক হলাম। শয়ে শয়ে নথি ঘেঁটেছি। কিন্তু কখনো তো এমনটা দেখিনি। এই একটি ফাইলে লাল রেখা টানা। এই ফাইলের ভেতরে ১ থেকে ৭ মার্চ-বিষয়ক মূল নথি রাখা আছে।

এই নথিগুলো এখনো পর্যন্ত মার্কিন সরকারের কোনো ওয়েবসাইটে উন্মুক্ত করা হয়েছে বলে আমার নজরে আসেনি। যদিও মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর সরকারিভাবে তাদের অফিস অব দ্য হিস্টোরিয়ান সাইটে আনুষ্ঠানিকভাবে মার্চের ওপর কিছু গুরুত্বপূর্ণ দলিল প্রকাশ করেছে। এসব নথি থেকে একটি বিষয় পরিষ্কার যে মার্চের অসহযোগ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে একজন অহিংস শেখ মুজিবের উত্থান ঘটেছিল।

মার্কিন প্রশাসনের ভেতরে, বিশেষ করে যাঁরা নিক্সন ও কিসিঞ্জারের ঘনিষ্ঠ ছিলেন, তাঁরাও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বারবার শ্রদ্ধার সঙ্গে মহাত্মা গান্ধীর সঙ্গে তুলনা করেছেন। আমরা সংগতকারণেই ২৬ মার্চকে স্বাধীনতা দিবস গণ্য করি। কিন্তু এটা বিশ্বের ইতিহাসে বিরল যে কোনো আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই একাত্তরের মার্চে বীর বাঙালির স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে একটি দখলদার সরকার থেকে একটি গণমানুষের সরকারে রূপান্তরকরণ নিশ্চিত হয়েছিল। সেই হিসেবে শেখ মুজিব গ্রেপ্তার হওয়ার আগেই একটি প্রকৃত স্বাধীন রাষ্ট্রের উদ্‌গাতা ও তার নন্দিত সরকারপ্রধান হিসেবে জাতিকে নেতৃত্ব দিয়ে গেছেন। গ্রিসের নগর রাষ্ট্রের মতো প্রধানত নেতার মুখের কথায় জনগণের সম্মতি ও তাঁদের অংশগ্রহণে জনগণের কার্যকর শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। অব দ্য পিপল ফর দ্য পিপল বাই দ্য পিপল-এর ধারণা সত্যিকার অর্থেই রূপকথার মতো এই ভূখণ্ডে নেমে এসেছিল। কোনো সংবিধান, পতাকা বা রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী বা সংস্থা ছাড়াই যে একটি জনগণের সরকারব্যবস্থা স্বয়ংক্রিয়ভাবে কার্যকর হতে পারে, তার নজির বিশ্বে বেশি নেই। আর বাংলাদেশ হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার গভীর অনুভূতি থেকেই দখলদার বাহিনীর সামরিক বাহিনী ২৫ মার্চের কালরাতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। সেই অর্থে ২৬ মার্চের আগেই বাঙালি জাতি শৃঙ্খল ভেঙে ফেলেছিল। মার্কিন কূটনীতিক জোসেফ সিসকো পররাষ্ট্রমন্ত্রী উইলিয়াম রজার্সকে ১৫ মার্চ লিখেছিলেন, প্রাদেশিক পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠতার যুক্তিতে আওয়ামী লীগ আজ প্রশাসনের ভার তুলে নিয়েছে। প্রশাসন চালাতে শেখ মুজিবুর রহমানের ঘোষিত ৩৫টি নির্দেশনা সুচিন্তিত ও পরিকল্পিত পদক্ষেপ।

বঙ্গবন্ধু ও মহাত্মা গান্ধী

আজ আমাদের জাতীয় রাজনীতিতে যখন সহিংসতা ভবিতব্য হয়ে উঠেছে, তখন আমাদের সামনে ৪৫ বছর পরে যে মার্চ হাজির হয়েছে, সেই মার্চে এটা স্মরণ করতে হবে যে কী করে আমরা অহিংস পন্থায় একটি সার্থক ঐতিহাসিক অসহযোগ আন্দোলন করেছিলাম। একটি কণ্ঠই হয়ে উঠেছিল সাড়ে সাত কোটি মানুষের কণ্ঠ। কোনো নিয়মিত বাহিনী বা প্রশাসনের সাহায্য ছাড়াই জনগণ প্রাত্যহিক জীবনের সর্বস্তরে অভূতপূর্ব শৃঙ্খলা এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করেছিল। নতুন প্রজন্মের কাছে তা রূপকথা মনে হতে পারে। এই ‘আমরাই’ সেদিন তা পেরেছিলাম। মার্চের অহিংস অসহযোগ আন্দোলনটি তাই আমাদের জাতীয় জীবনের আলোকবর্তিকা।

মার্কিন সরকার তার অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে একাত্তরের মার্চের যে চিত্র বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরেছে, সেখানে কিন্তু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তারা গান্ধীজির সঙ্গে তুলনা করার বিষয়টি প্রকাশ করেছে। এমনকি নিক্সন-কিসিঞ্জারের জবানিতেও একাত্তরের মার্চের দলিলগুলো সাক্ষ্য দিচ্ছে যে বাঙালি নেতারা কোনোভাবেই একটি অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতির জন্য দায়ী ছিলেন না।

ছয় দফার অধীনে সংবিধান তৈরি করা ছাড়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের সামনে ইয়াহিয়া বা পশ্চিম পাকিস্তানের নেতাদের সঙ্গে সমঝোতার আর কোনো বিকল্প ছিল না। আমি বলব, মার্কিন সরকারও এখন আনুষ্ঠানিকভাবে শেখ মুজিবের এই ভাবমূর্তিটাই বহির্বিশ্বে তুলে ধরছে। ৩ মার্চ ১৯৭১ বেলা তিনটায় সিনিয়র রিভিউ গ্রুপের সভার জন্য প্রস্তুত দলিলে (সভাটি ৬ মার্চ হয়েছিল) বলা হলো ‘বিকজ অব হিজ ল্যান্ডস্লাইড ম্যান্ডেট মুজিব হ্যাজ লিটল ফ্লেকজিব্লিটি ইন মোডিফায়িং হিজ প্রোগ্রাম’। অর্থাৎ জনগণের নিরঙ্কুশ ম্যান্ডেটপ্রাপ্ত মুজিবের সামনে তাঁর কর্মসূচিতে পরিবর্তন আনার সামান্যই সুযোগ ছিল। পূর্ব পাকিস্তানিরা স্বাধীনতা চাইলে আমরা তা ঠেকাতে পারব না। মুজিব নতুন রাষ্ট্রে গণতান্ত্রিক সরকার চালাতে পারবেন। ১০ মার্চ ঢাকার কনসাল জেনারেল আর্চার ব্লাড এক তারবার্তায় ওয়াশিংটনকে জানালেন, আলমগীর রহমান নামের এক লোক আমাদের কাছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছ থেকে বার্তা বয়ে এনেছেন। তিনি বলেছেন, রক্তপাত এড়াতে শেখ মুজিব একটা সমঝোতায় আসতে চান। শেখ মুজিবুর রহমান আরও বলেছেন, তিনি রাজনৈতিক সমাধান চান। যুক্তরাষ্ট্র কি একটি সামরিক সংঘাত দেখতে চায়? ব্লাড নিজে মন্তব্য করেছিলেন, আমাদের অধিকতর ইতিবাচক কিছু একটা করা উচিত। ২৮ মার্চের এরপরের তারবার্তাটিই গণহত্যার বিবরণসংবলিত সেই বিখ্যাত ব্লাড টেলিগ্রাম, যা তাঁকে অমরতা দিয়েছে। ২৯ ও ৩০ তারিখের অপর দুটি ব্লাড তারবার্তায় গণহত্যার বিবরণ আছে। ৩১ মার্চে পাকিস্তানে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত জোসেফ ফারল্যান্ড লিখেছেন, শেখ মুজিবুর রহমান কয়েকটি সপ্তাহ সমান্তরাল সরকার চালিয়েছিলেন, যা প্রতিষ্ঠিত সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের নামান্তর। লক্ষণীয় ফারল্যান্ড, যাঁকে নিক্সন-কিসিঞ্জারের অন্ধ অনুসারী বলা হয়, তিনি তাঁর কথায় ‘পাকিস্তানের পতাকা ধ্বংস করে বাংলাদেশের পতাকা ওড়ানোর’ মতো ঘটনাকেও বলেছেন ইনসারেকশন বা বিপ্লবের পূর্ব লক্ষণ।

লালরঙা বর্ডার

এই নিবন্ধে আমরা দেখব, ১-৭ মার্চে কিসিঞ্জার অন্ধের মতো তাঁর পাকিস্তানি নীতি আঁকড়ে ধরে থাকলেও তিনি কখনো শেখ মুজিবের নেতৃত্বকে দায়িত্বহীন বলেননি। তাঁকে দোষারোপ করেননি। মার্কিন সরকারের বিভিন্ন সংস্থা ও বিভাগের উচ্চপদস্থ বড় কর্তারাও শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর রাজনৈতিক কৌশলের প্রতি সমীহ করেই মন্তব্য করেছেন।

১ মার্চেই এনএসসি স্টাফ হেরল্ড স্যান্ডার্স ও স্যামুয়েল হকিনসন কিসিঞ্জারকে জানিয়েছিলেন, ভবিষ্যৎ প্রধানত শেখ মুজিবুর রহমানের ওপর নির্ভর করছে। ছয় দফায় আবেগ ও জনপ্রিয়তা গগনচুম্বী, এ থেকে তাঁর ফেরা অসম্ভব। ওই দুজন ৪ মার্চে কিসিঞ্জারকে আরও তথ্য দেন যে শেখ মুজিবুর রহমান রোববার (৭ মার্চ) স্বাধীনতার সমতুল্য ঘোষণা দেবেন। ৬ মার্চের সিনিয়র রিভিউ গ্রুপের সভায় ভ্যান হোলেন বলেছিলেন, শেখ মুজিবুর রহমানকে দায়ী করে ইয়াহিয়া শক্তি প্রয়োগের হুমকি দিয়েছেন। কিসিঞ্জার তার উত্তরে বলেন, ‘শক্তি কাজ দেবে না।’

উল্লেখ্য, মার্কিন সরকার নিজেই তার ওয়েবসাইটে বলেছে, ২ মার্চে ফোর্টি কমিটির (কিসিঞ্জারের নেতৃত্বে গঠিত এই কমিটি বিদেশি নেতাদের হত্যার সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য বিতর্কিত) জন্য তৈরি করা একটি নথি (সিসকো লিখেছেন রাজনীতি-বিষয়ক মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি জনসনকে) তারা আজও গোপন রেখেছে।

লাল রঙের বর্ডার। তার নিচে লাল কালিতে লেখা: পূর্ব পাকিস্তান ১-৭ মার্চ ১৯৭১। একেবারে সার্থক অলংকরণই বটে। ফাইলটিতে যেভাবে নথিগুলো রয়েছে, আমি সেভাবেই স্ক্যানার দিয়ে স্ক্যান করেছিলাম।

১ মার্চ ১৯৭১। কিসিঞ্জারের ঘনিষ্ঠ সহকারী জোসেফ সিসকো ইয়াহিয়ার জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত রাখা বিষয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী উইলিয়াম রজার্সের কাছে দেওয়া এক তথ্য স্মারকে মন্তব্য করেছেন, ‘ইয়াহিয়া শেখ মুজিবুর রহমানের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করে পশ্চিমা নেতা ভুট্টোকে খুশি করেছেন। এখন শেখ মুজিবের সামনে বিকল্প পথ হলো হয় ছয় দফার ভিত্তিতে সংবিধান তৈরি, নাহলে স্বাধীনতা ঘোষণা।’

এভাবে আমার দেখা মার্চের প্রতিটি দলিলে মুজিবের প্রতি তাদের সহানুভূতির অভিব্যক্তি ঘটেছে। ১ মার্চে সিসকো লেখেন, শেখ মুজিবুর রহমান একটা কঠিন অবস্থায় আছেন। তাঁকে একটা শিথিল ফেডারেশনের মধ্যে থাকার কথা বলতে হবে। অন্যথায় সরাসরি স্বাধীনতা ঘোষণা বা তেমন একটা প্রকাশ্য হুমকি হলেও দিতে হবে। আমরা জানি না শেখ মুজিব কোনটা করবেন, তবে নেতৃত্ব ধরে রাখতে তাঁকে ক্ষিপ্রতার সঙ্গে সিদ্ধান্ত দিতে হবে।

২ মার্চ ১৯৭১। জোসেফ সিসকো উইলিয়াম রজার্সকে যা লিখেছেন তাতে পরিস্থিতির আরও অবনতির জন্য ইয়াহিয়াকেই অভিযুক্ত করা হয়। তিনি লেখেন, কনসিলিয়েটরি (আপসে আগ্রহী) গভর্নরকে বরখাস্ত করলেন ইয়াহিয়া। প্রেস সেন্সরশিপ দিলেন। অন্যদিকে শেখ মুজিবুর রহমানের অহিংসনীতি সম্পর্কে তিনি লি​েখছেন, শেখ মুজিব যদিও বলেছেন যে ‘বাঙালি জানে যে কী করে রক্ত ঝরাতে হয়’ এবং তারা ‘ছেড়ে কথা বলবে না’, কিন্তু তা সত্ত্বেও তিনি তাঁর জনগণের প্রতি অহিংসা ও অসহযোগের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া (বাট হি আর্জড হিজ পিপল টু ফলো ডেমোক্রেটিক প্রসেসেস অব নন-ভায়োলেন্স অ্যান্ড নন-কো-অপারেশন) অনুসরণের আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু এই তথ্যস্মারকটিতে সিসকো ৭ মার্চের ভাষণ প্রসঙ্গে এটাই বলেছেন, যদি শেখ মুজিবুর রহমান বা তাঁর সভাকে দমানো হয়, তাহলে সহিংসতার বিস্তার ঘটতে বাধ্য। আর তিনি যদি বেশি সতর্ক অবস্থান নেন, তাহলে তাঁর নেতৃত্ব চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে।’

বাঙালির সামনে পথ যে আর বেশি খোলা ছিল না, সেটাও তাঁরা বিবেচনায় নিয়েছেন। ২ মার্চে সিসকো তাই লিখেছেন, ‘আপাতত বিচ্ছিন্নতা এড়াতে চাইলে আরেকটি বিকল্প হতে পারে, গান্ধীর মতো বেসামরিক অসহযোগ আন্দোলনে নামা। কিন্তু তখন অবশ্যই সামরিক কর্তৃপক্ষের দমনমূলক নীতির কবলে পড়তে হবে। কিন্তু তাতে পরিকল্পনা করার জন্য পূর্ব ও পশ্চিম উভয়ে কিছুটা সময় পাবে।’ কিন্তু এই বার্তাটির উপসংহারে লেখা হয়, উভয় অংশের অখণ্ড থাকার সম্ভাবনা প্রায় শূন্য, দুইয়ের মধ্যে রিকনসিলিয়েশনের সুযোগ স্পষ্টতই মুছে গেছে।

‘যদি শেখ মুজিবুর রহমান বা তাঁর সভা দমানো হয়, তাহলে সহিংসতার বিস্তার ঘটতে বাধ্য’। ছবি: সংগৃহীতএবং ৭ মার্চের ভাষণ
৪ মার্চ, ১৯৭১। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ইয়াহিয়ার আমন্ত্রণকে শক্ত ভাষায় নাকচ করে বলেছেন, ‘এটা নিষ্ঠুর কৌতুক, যা নিরস্ত্র বেসামরিক লোকদের ব্যাপক হত্যা ডেকে আনবে।’ সিসকো লিখেছেন, শেখ মুজিব লুটতরাজ ও অগ্নিসংযোগ বন্ধ করতে যে আহ্বান করেছেন, তাতে মানুষ সাড়া দিয়েছে আর তাতে নৈরাজ্যকর অবস্থা অনেকটা হ্রাস পেয়েছে বলেই কনস্যুলেট জেনারেল জানিয়েছেন। শেখ মুজিবুর রহমান এখনো পর্যন্ত একটা আলগা সম্পর্ক হলেও ধরে রাখতে চাইছেন। কিন্তু পরিস্থিতি তাঁকে স্বাধীনতা ঘোষণা করার দিকে টেনে নিয়ে যেতে পারে।
৫ মার্চ ১৯৭১, সিক্রেট লেখা এই নথিটি মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী উইলিয়াম পি রজার্সের কাছে প্রেরণ করেছিলেন জোসেফ সিসকো। এটি একটি তথ্যস্মারক। বিষয়: পূর্ব পাকিস্তানের বিচ্ছিন্নতা প্রতিরোধে সম্ভাব্য পাকিস্তানি সামরিক হস্তক্ষেপ। এতে বলা হয়েছে, আমরা ইসলামাবাদের মার্কিন দূতাবাস থেকে সামরিক হস্তক্ষেপের বিষয়ে একটি মূল্যায়ন পেয়েছি। ৪ মার্চেও রজার্সের কাছে একটি তথ্যস্মারক পাঠানো হয়। কিন্তু পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পরিস্থিতি বদলায়। কারণ সিসকো বলছেন, ‘সামরিক পদক্ষেপের আশঙ্কা গতকালের চেয়ে আরও বেড়ে গেছে। দেশের ঐক্য বজায় রাখার পথ যদি আর একটিই অবশিষ্ট থাকে বলে তারা মনে করে, তাহলে তারা শক্তি প্রয়োগের দিকেই যাবে। যদিও তারা ইতিমধ্যেই শক্তি প্রয়োগ করছে। তবে আরও করার মতো সামর্থ্য আর নেই।’ এই সামর্থ্য যে বাড়াতে শুরু করেছিল, সেই ইঙ্গিতও তাঁরা পাচ্ছিলেন।

তবে ৭ মার্চের ভাষণ সম্পর্কে সিসকো ভবিষ্যদ্বাণী করেন যে ‘সব ইঙ্গিত স্পষ্ট করেছে যে ৭ মার্চে শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেবেন। এবং সম্ভবত সেটা হবে স্বাধীনতার সমতুল্য। একটি আলাদা সংবিধান, পূর্ব পাকিস্তানের জন্য একটি সরকার, যা শিথিলভাবে পাশ্চাত্যের কোনো একটি ফেডারেল কাঠামোতে লেপ্টে থাকে। কিন্তু দেখার বিষয় হলো এই বাক্যটি—‘শেখ মুজিবের ঘোষণার প্রতি সামরিক আইন প্রশাসন কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখায়, তার ওপর শান্তিপূর্ণভাবে একটি রাজনৈতিক ক্রান্তিকাল অতিক্রম বা একটি বিশৃঙ্খলা বা রক্তপাত ঘটার বিষয় নির্ভর করবে।’ এরপরের বাক্যেই লেখা: ‘যত ভয়ানকই হোক সহিংস পন্থা, হতে পারে তা নিষ্ফল কিন্তু সামরিক বাহিনী দমনের দিকেই যাবে।’ কিন্তু কোথাও দেখা যাচ্ছে না যে শেখ মুজিবুর রহমান কখন কী করে বসেন, সেটা ভেবে তাঁরা কখনো বিচলিত হয়েছেন। বরং তাঁদের নথিতেই যেটা ফুটে উঠেছে তাতে দেখা যায়, ইয়াহিয়ার গোঁ ধরার সঙ্গে কিসিঞ্জারের গোঁ ধরার মধ্যে কোনো ফারাক নেই।
১–৭ মার্চ-বিষয়ক সেই নথির একটি পৃষ্ঠা৭ মার্চের ভাষণ সম্পর্কে সিসকো ভবিষ্যদ্বাণী করেন যে ‘সব ইঙ্গিত স্পষ্ট করেছে যে ৭ মার্চে শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেবেন। এবং সম্ভবত সেটা হবে স্বাধীনতার সমতুল্য।’

একাত্তরের ১৩ মার্চে কিসিঞ্জার নিক্সনকে এক স্মারকে জানিয়েছিলেন, ৭ মার্চে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সরাসরি স্বাধীনতার ঘোষণাদান থেকে নিবৃত্ত থাকাটা দৃশ্যত কৌশলগত। আর এই স্মারকেই কিসিঞ্জার বঙ্গবন্ধুর প্রতি একটা গভীর শ্রদ্ধাপূর্ণ মন্তব্য করেন। শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে তাঁর নেতিবাচক মন্তব্যগুলো অনেক বেশি প্রচার পেয়েছে কিন্তু যেটি পায়নি সেটি হলো কিসিঞ্জার নিজেই নিক্সনকে বলেছিলেন, শেখ মুজিব যেভাবে গান্ধীর মতো অহিংস অসহযোগ আন্দোলন পরিচালনা করছেন, তাতে সেখানে দমন-পীড়ন চালানোর যথার্থতা দেওয়া কঠিন। কিসিঞ্জারের নিজের ভাষায়, ...রহমান হ্যাজ এমবার্কড অন এ গান্ধিয়ান টাইপ নন-ভায়োলেন্ট নন-কো-অপারেশন ক্যাম্পেইন হুইচ মেকস ইট হার্ডার টু জাস্টিফাই রিপ্রেশন।

সবটাই যুক্তরাষ্ট্রের নখদর্পণে ছিল। ৫ মার্চে সিসকো তিনটি বিকল্প সম্পর্কে পররাষ্ট্রমন্ত্রী রজার্সকে ধারণা দিয়েছিলেন, যার সবটাই পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর শক্তি প্রয়োগসংক্রান্ত। তার কোথাও ইয়াহিয়ার তরফে সংলাপ বা আপসের কোনো কথা ছিল না। তাতে লেখা ছিল, ব্যাপক ভিত্তিক সহিংসতা ও রক্তপাত হলে আমরা মারাত্মকভাবে উদ্বিগ্ন হব। ব্রিটেন, জাপানসহ অন্য বন্ধুদের নিয়ে ইয়াহিয়াকে নিবৃত্ত করতে উদ্যোগী হব। কিন্তু আঘাত যখন সত্যি হলো, তখন তারা সর্বাত্মক মদদ দিয়েছে। এমনকি গোপনে অস্ত্র সরবরাহ করেছে। শেখ মুজিবুর রহমানকে ওরা অহিংস পন্থায় স্বাধীনতা পেতে ব্যর্থ করেছে।

আজ হোক কাল হোক, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে একাত্তরের গণহত্যার নৈতিক ও রাজনৈতিক দায় নিতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রজন্ম একদিন নিশ্চয় এর কৈফিয়ত চাইবে। বিচার চাইবে।
“লাল রঙের বর্ডার। তার নিচে লাল কালিতে লেখা: পূর্ব পাকিস্তান ১-৭ মার্চ ১৯৭১। একেবারে সার্থক অলংকরণই বটে। ফাইলটিতে যেভাবে নথিগুলো রয়েছে, আমি সেভাবেই স্ক্যানার দিয়ে স্ক্যান করেছিলাম

৭ মার্চের ভাষণ সম্পর্কে সিসকো ভবিষ্যদ্বাণী করেন যে ‘সব ইঙ্গিত স্পষ্ট করেছে যে ৭ মার্চে শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেবেন। এবং সম্ভবত সেটা হবে স্বাধীনতার সমতুল্য।’

২| ০৭ ই মার্চ, ২০১৫ দুপুর ১:১২

রাফা বলেছেন: এ,কে খন্দকারের জবাব আছে এখানে

০৮ ই মার্চ, ২০১৫ রাত ১:০৯

হাসান কালবৈশাখী বলেছেন: সত্যটা আমরা সবাই জানি।

আমি সে সময় আমি খুবই ছোট, সেখানে না থাকলেও কাছাকাছি ছিলাম (হাতিরপুল) রাস্তায়ও প্রচুর লোক। আমি মনে করি সে দিন স্বাধিনতার দাবিতে মুক্তিকামি জনতার উত্তাল ঢেউয়ের ভেতর কারও পক্ষে পাকিস্তান জিন্দাবাদ বলা সম্ভব ছিলনা।

৩| ০৮ ই মার্চ, ২০১৫ রাত ১:২০

বিদ্রোহী বাঙালি বলেছেন: স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে এতো বিকৃতি, এতো দ্বন্দ্ব, অথচ বঙ্গবন্ধু তাঁর ৭ই মার্চের ভাষণেই স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। কালজয়ী এই ভাষণ যখনই শুনি, তখনই শরীরের রক্ত টগবগিয়ে উঠে। শেয়ার করার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ।

১১ ই মার্চ, ২০১৫ রাত ১১:৩১

হাসান কালবৈশাখী বলেছেন: - ধন্যবাদ।

০৭ ই মার্চ, ২০১৭ রাত ১:২৫

হাসান কালবৈশাখী বলেছেন:
বঙ্গবন্ধু সেই ভাষনে হটকারি তিনটি শক্তিকে অত্যন্ত সুকৌশলে নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন।
দেশবাসির প্রতি বিশ্বাস ও প্রতীতির প্রতি তার আস্থা নিরঙ্কুশ ছিল। তার সমস্ত সত্তায় বাংলার মানুষের হৃদয়ের অনুরণন অনুরণিত হতো। তাই তো তিনি ৭ই মার্চের ভাষণে বলতে পারলেন- ‘আমি প্রধানমন্ত্রিত্ব চাই না, আমি বাংলার মানুষের অধিকার চাই’। এ কারণেই স্বাধীনতা-উত্তরকালে সব ষড়যন্ত্রের জালকে ছিন্ন করে তিনি বাংলার মানুষকে একটি অদৃশ্য ঐক্যের বন্ধনে বাঁধতে পারলেন। ৭ই মার্চের ভাষণে তার অকুতোভয় চিত্ত বজ্রনির্ঘোষে ঘোষণা দিল, "রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরো দেব। তবুও বাংলার মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাআল্লাহ"।

অন্যদিকে বিচ্ছিন্নতার অপবাদ থেকে নিজেকে ও দেশবাসিকে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে নিরাপদ রাখলেন।
কৌশলী শব্দ প্রয়োগে বলতে পারলেন- আমি যদি হুকুম দেবার না-ও পারি, তোমাদের যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা কর। তিনি আরো বলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। ভাষণটি শুধু সাধারণ বাঙালিদেরই নয়, রাজনৈতিক নেতৃত্বকেও এমনভাবে উজ্জীবিত করেছিল যে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীও বঙ্গবন্ধুর ওপর অকৃত্রিম আস্থা রাখলেন। তিনি ১১ই মার্চ পল্টন ময়দানে এবং ১৭ই মার্চ রংপুরের জনসভায় বললেন, ‘আমারা মজিবরকে বিশ্বাস করি। তাহার নেতৃত্বেই দেশ ও জাতি মুক্ত হইবে’। সবাই মজিবরের নির্দেশ মেনে চল।

৪| ১০ ই মার্চ, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৪৯

মিতক্ষরা বলেছেন: ৭ই মার্চের ভাষনের শেষে মুজিব জিয়ে পাকিস্তান বলেছিলেন বলে অনেকে দাবী করেন।

১১ ই মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৪:২৭

হাসান কালবৈশাখী বলেছেন:
একটি জাতির সবচেয়ে বড় গর্ব সবচেয়ে কষ্টের আবেগের মুক্তিযুদ্ধকে বিতর্কিত করার জন্য স্বাধীনতাবিরোধী চক্র, বঙ্গবন্ধু খুনিচক্র ও তার দোশররা স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধকে বিতর্কিত করতে দির্ঘদিন জাবৎ বিভিন্ন ভাবে অপচেষ্টা করে যাচ্ছে।

একে খন্দকারের বই এর বক্তব্যে এই চক্রের উল্লাশ দেখেলেইই বোঝা যায় কোন পক্ষের ফরমায়েসে এই বই। এই নির্লজ্জের দল দেশের সম্মানের বারোটা বাজিয়ে হলেও খুনি স্বাধীনতাবিরোধী চক্রের পক্ষে কাজ করে।

কবি শামসুর রাহমান
ত্রুটি স্বীকার করে লজ্জিত হয়ে প্রকাশ্যে ক্ষমা প্রার্থণা করে পত্রিকায় বিবৃতি ছাপিয়েছেন।
আহামেদ ছফা – চ্যালেঞ্জের জবাবে দ্বিধান্বিত, ঠিকঠাক মনে নেই বলে স্বীকার করছেন,
মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান বাংলাদেশের তারিখ’ বইয়ের দ্বিতীয় সংস্করণ থেকে দুঃখ্যপ্রকাশ করে বইটি থেকে জয়পাকিস্তান শব্দটি প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।

বাকি লেখকরা এসব না জেনেই শামসুর রহমান ও মুহাম্মদ হাবিবুর রহমানের বইয়ের উধৃতির রেফারেন্স দিয়েই লিখেছেন।
কিন্তু ‘জিয়ে পাকিস্তান’ পন্থি স্বাধীনতা বিরোধী চক্র ও ছাগুপ্রেমিরা এখনো তাদের বই থেকে উধৃতি দিয়ে লাফাচ্ছে …..

০১ লা মার্চ, ২০২৩ বিকাল ৩:১৮

হাসান কালবৈশাখী বলেছেন:
৭ মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু কি পাকিস্তান জিন্দাবাদ বলেছিলেন?
ইতিহাস বলে ১৯৬৯ সালের ৫ ডিসেম্বর হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুবার্ষিকীতে পূর্ব পাকিস্তানের নাম বাংলাদেশ ঘোষণা দেওয়ার পর বঙ্গবন্ধুর কোনো বক্তৃতায় পাকিস্তান জিন্দাবাদ শ্লোগান আর শোনা যায়নি। পরিচিত এক কর্মকর্তার মুখে শুনেছিলাম বিএনপির সাবেক তথ্যমন্ত্রী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা বিটিভি আর্কাইভে ঘন্টার পর ঘন্টা সময় কাটিয়েছেন এই শ্লোগানটার খোঁজে। পাননি। ৭ মার্চের ভাষণ শুধু এদেশী নন, বিদেশীরাও ধারণ করেছেন, তাদের কাছেও পুরো ভাষণ আছে। কিন্তু পাকিস্তান জিন্দাবাদের অস্তিত্ব মেলেনি। এমনকি কবি শামসুর রাহমানও স্বীকার করে গেছেন ৭ মার্চের ভাষণে পাকিস্তান জিন্দাবাদ আমদানী তার ভুল ছিলো, ক্ষমা চেয়েছেন তিনি।
খোদ পাকিস্তানীরাও কখনও এই দাবী করেনি। তারা পাকিস্তান জিন্দাবাদ না বলায় ক্ষুব্ধ ছিলো বঙ্গবন্ধুর উপর। একটা প্রমাণ মিলে আজাদ পাকিস্তান নামে একটা তথ্যচিত্রে,

৫| ১০ ই মার্চ, ২০১৫ রাত ৮:৩৮

কলাবাগান১ বলেছেন: ভাষনের মধ্যে এত কালজয়ী দিকনির্দেশনা, স্বাধীনতার দলিল, জাতির মুক্তির সোপান.... এইসব সব উপেক্ষা করে জামাতি রাজাকার রা পড়ে রয়েছে দুইটা শব্দের মধ্যে কেননা এই দুই শব্দই (জিয়ে পাকিস্হান) তাদের মূলমন্ত্র।

যতই চেস্টা কর না কেন এই ভাষনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে, কিছুই করতে পারবে না @মিতক্ষরা... কেননা এটা বিশ্বের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ভাষন হিসাবে এখন প্রতিস্ঠিত

এই ভাষনকে পাঠ্যপুস্তকে ক্লাশের পড়া হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত

০৭ ই মার্চ, ২০১৭ সকাল ৮:৩৭

হাসান কালবৈশাখী বলেছেন:
বিশ্বে হাজার বছরের সেরা ভাষণের তালিকায় ৭ মার্চ

গত আড়াই হাজার বছরের ইতিহাসে বিশ্বসেরা ৪১টি ভাষণের মধ্যে স্থান করে নিয়েছে বঙ্গবন্ধুর ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ভাষণ।
এই ভাষণে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও বাঙালির মুক্তির ডাক দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’।
সময়ের সেরা ও আলোচিত এই ৪১টি ভাষণ সম্প্রতি ‘উই শ্যাল ফাইট অন দ্য বিচেস’-দ্য স্পিচেস দ্যাট ইন্সপায়ার্ড হিস্ট্রি’ নামে একটি বইয়ে সঙ্কলিত হয়েছে। গ্রন্থের নামের প্রথম অংশটি উইনস্টন চার্চিলের যুদ্ধকালীন একটি বিখ্যাত ভাষণের উক্তি। গত বছর ব্রিটেনে মাইকেল ওমারা বুকস লিমিটেডের প্রকাশিত
এই সঙ্কলনটিতে পিরিক্লিসের খ্রিস্টপূর্ব ৪৩১ সালের একটি ভাষণ থেকে সর্বশেষ ১৯৮৭ খ্রিস্টাব্দে রোনাল্ড রিগ্যানের একটি ভাষণ আছে অন্যদের মধ্যে আছেন আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট, জুলিয়াস সিজার, জেমস ফ্রান্সিস এডওয়ার্ড স্টুয়ার্ট, জর্জ ওয়াশিংটন, নেপোলীয় বোনাপার্তে, অটো ফন বিসমার্ক, আব্রাহাম লিঙ্কন, ভ্লাদিমির লেনিন, অ্যাডলফ হিটলার প্রমুখ। ২২৩ পৃষ্ঠার সঙ্কলন সম্পাদনা করেছেন ইংরেজ ইতিহাসবিদ ও লেখক জ্যাকব এফ ফিল্ড।
বঙ্গবন্ধুর ভাষণটির শিরোনাম দেওয়া হয়েছে ‘দ্য স্ট্রাগল দিস টাইম ইজ দ্য স্ট্রাগল ফর ইন্ডিপেন্ডেন্স’।

৬| ১১ ই মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৪:৩০

সেলিম আনোয়ার বলেছেন: সন্দেহাতীত ভাবে সেরা ভাষণ । স্বাধীনতা যুদ্ধের অন্যতম প্রেরণা ছিল এটি । আর ভয়েস অভিব্যক্তি আবেগ সব মিলিয়ে বঙ্গবন্ধু ছিলেন অনন্য ।

১১ ই মার্চ, ২০১৫ রাত ৯:০৩

হাসান কালবৈশাখী বলেছেন:
ধন্যবাদ সেলিম ভাই।
ভন্ড সুবিধাবাদিদের ভিড়ে আপনার সাহসি মন্তব্য আমাকে উজ্জিবিত করল।
আপনার অসাধারন বক্তব্য আমার পোষ্টটিকে সমৃদ্ধ করলো।

৭| ১১ ই মার্চ, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:১৯

মিতক্ষরা বলেছেন: যতই চেস্টা কর না কেন এই ভাষনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে, কিছুই করতে পারবে না @মিতক্ষরা... কেননা এটা বিশ্বের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ভাষন হিসাবে এখন প্রতিস্ঠিত

@কলাবাগান, এই ভাষনের গুরুত্ব আমি অস্বীকার করি না। কিন্তু ইয়াহিয়াই এই সমাবেশের অনুকতি দিয়েছিল, অথচ আজকের বিএনপিকে আওয়ামী লীগ সমাবেশের অনুমতি দেয় নি। সেই অগ্নিঝরা মার্চে পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সমাবেশের অনুমতি পায়। অথচ একই অধিকার আওয়ামী লীগ তার বিরোধী দলকে দিতে নারাজ।

"জিয়ে পাকিস্তান" নিয়ে আবুল মনসুর আহমদের বইতে যা রয়েছে তা মোটামুটি যুক্তি সংগত। তিনি এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে একজন জবাব দিয়েছেন, "মূল ভাষনে "জিয়ে পাকিস্তান" ছিল কিন্তু প্রিন্ট ভাষনে তা বাদ দেয়া হয়েছে।" এত মানুষ এই "জিয়ে পাকিস্তান" নিয়ে কথা বলেছেন যে তা অবিশ্বা্স্য মনে হয় না।

১১ ই মার্চ, ২০১৫ রাত ১০:২২

হাসান কালবৈশাখী বলেছেন:
আবুল মনসুর আহমদ ও অনান্যরা শামসুর রহমান ও মুহাম্মদ হাবিবুর রহমানের বইয়ের উধৃতির রেফারেন্স দিয়েই লিখেছেন। অতচ শামসুর রহমান ও জাস্টিস হাবিবুর রহমান পত্রিকায় বিবৃতি দিয়ে ঐ বক্তব্য প্রত্যাহার করে বইটির পরবর্তি এডিশনে সংশোধন করেছিলেন।
এ ক্ষেত্রে আবুল মনসুর পুরাতন বইয়ের উদ্ধৃতি দিয়ে কিছু বললে তা মুল্যহিন হিসেবেই গন্য হবে।

সেদিন রেসকোর্স ময়দানে লক্ষ জনতা উত্তেজিত হয়ে বসেছিল মুজিব স্বাধীনতা ঘোষনা করবেন, ছাত্রলীগ ইতিমধ্যেই স্বাধীন বাংলার পতাকা উড়িয়ে স্বাধীনতা হাফ ডান করে ফেলেছে ...... আমি হাতিরপুলের কাছে মিছিলে বহু মানুষের হাতে বৈঠা-লাঠি। আমি ছোট থাকলেও সেই জনতার অভিব্যক্তি চোখমুখের ভাষা অনুধাবন করতে ভুল করিনি। …. সেই উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে কেউ উর্দু ভাষায় "জিয়ে পাকিস্তান" বলতেই পারে না।

এছাড়াও সেদিন মুজিব সরাসরি স্বাধীনতা ঘোষনা করে কিনা বিদেশী সংবাদমাধ্যম উৎসুক হয়েছিল। এপি, রয়টারস, ইউপিআই, এনবিসি, এবিসি নিউজ, টাইমস নিউইয়োর্ক টাইমস, টেলিগ্রাফ ইত্যাদির শতাধিক সাদাচামড়া সাংবাদিক ইন্টারকনের লবি সাদা করে ফেলেছিল। তারা ঐদিন রেসকোর্সে উপস্থিত ছিলেন। তারা পুরো ভাষন রেকর্ড করেছিলেন অনেকের হাতে ফিল্মি ক্যামেরাও দেখেছি। সম্পুর্ন ভাষন বিবিসি আর্কাইভে এখনো সংরক্ষিত আছে। নিউইয়োর্ক টাইমস ও অনান্য বিদেশী পত্রিকায় মুজিবের মুল বক্তব্য ফলাও করে পরদিন প্রকাশিত হয়েছিল।
কেউ উর্দু ভাষায় "জিয়ে পাকিস্তান" বলে থাকলে তার প্রমান কোথা না কোথাও থাকতোই।

৮| ১১ ই মার্চ, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:২১

মিতক্ষরা বলেছেন: @কলাবাগান,

এখন এই ভাষনটি পড়ে মনে হতে পারে খালেদা জিয়া দেশবাসীর উদ্দেশ্যে ভাষন দিচ্ছেন। কারন বিএনপির কর্মীদের লাশ পাওয়া যায় জংলায়, তাদের মিছিল সমাবেশের কোন অধিকার নেই। নির্বাচন দূরে থাক।

৯| ১১ ই মার্চ, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:২৪

মিতক্ষরা বলেছেন: Click This Link

লিংক দেখুন, আরেকটা লাশের খবর খুব শিগগীর।

১১ ই মার্চ, ২০১৫ রাত ৯:২০

হাসান কালবৈশাখী বলেছেন:
সালাহউদ্দিন বিন-লাদেন আল-বাগদাদিও নিখোঁজ

১০| ১১ ই মার্চ, ২০১৫ রাত ৯:২৮

সাদী ফেরদৌস বলেছেন: বাঙ্গালির হাজার বছরের সৌভাগ্য এদেশে বঙ্গবন্ধুর জন্ম হয়েছিলো। এবং আমি বলবো তাকে পাগলে কামড়ে দিয়েছিল কারণ তিনি এদেশের মানুষদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছিলেন তাই আজ এত বছর পর তাকে কলঙ্কিত করা হচ্ছে , বলা হচ্ছে তিনি জিয়ে পাকিস্তান বলেছিলেন ইত্যাদি।এগুলা যারা বলে তারা জানোয়ার এর চেয়েও অধম এবং পাকি বীর্যে পয়দা।এরা পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত বাংলা ভাষী।মূলত ৭ ই মার্চের ভাষণের মাধ্যমেই বাঙ্গালির জন্য আলাদা একটি দেশের জন্ম পূর্ণতা পেয়েছিল। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ একই আত্মা

১১ ই মার্চ, ২০১৫ রাত ১০:৪২

হাসান কালবৈশাখী বলেছেন:
ধন্যবাদ ভাইয়া।
খুব সুন্দর ভাবে বলেছেন। আপনার ব্লগের লেখাগুলোও ভাল মানের।

১১| ১১ ই মার্চ, ২০১৫ রাত ১০:০৯

কলাবাগান১ বলেছেন: "তাকে পাগলে কামড়ে দিয়েছিল কারণ তিনি এদেশের মানুষদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছিলেন তাই আজ এত বছর পর তাকে কলঙ্কিত করা হচ্ছে"

অকৃতজ্ঞ বাংগালী

১১ ই মার্চ, ২০১৫ রাত ১০:৩১

হাসান কালবৈশাখী বলেছেন:
ধন্যবাদ কলাবাগান ভাই।
কিছু অকৃতজ্ঞ বাংগালীকে প্রমান সহ পত্রিকার কাটিং পানিতে গুলে খাইয়ে দিলেও বিশ্বাস করবে না।

১২| ১৩ ই মার্চ, ২০১৫ রাত ৯:৩২

চাঁদগাজী বলেছেন:


শেখ সাহেব যা বলতেন, পরে ভুলে যেতেন

১৮ ই মার্চ, ২০১৫ রাত ১২:৩৭

হাসান কালবৈশাখী বলেছেন:
জ্ঞ্যানী মানুষ হয়ে একটা ফালতু মন্তব্য করলেন।
মুজিবকে সময় দিছিলেন কয়দিন?
যুদ্ধবিধ্বস্ত শুন্য রাজকোষ বৈরি মার্কিন সাম্রাজ্যবাদিদের রোষানলের ভেতর সুরু করা, ৭৩ এ দেশটি মোটামোটি দাঁড়িয়ে যাচ্ছিল। তখই বিপর্যয়। কিন্তু ৭৩ এ আরব ইসরাইল যুদ্ধ, তেলের মুল্য ৩ ডলার থেকে ১২ ডলারে উন্নিত হলে সব দ্রব্যমুল্যের দাম ২-৩ গুন বেড়ে যায়।এরপর জরুরি অবস্থা জারি করতে হয় বাধ্যহয়েই। এত বৈরি পরিবেশেও ৭৫ এর আগেই ৩টি ৪ লেনের বড় সেতু, কাচপুর, নয়ারহাট, গাবতলি তৈরি হয়ে ব্যাপক কানেক্টিভিটির সুচনা হয়। কিন্তু তারপর জিয়ার আমলে কোন বড় সেতু হয় নি। এরপর এরশাদ এসে একই হাইওয়েতে ৪ লেনের বদলে ২লেন মেঘনা সেতু করলেন। খালেদাও একই পথে ৪ লেনের বদলে ২লেন গোমতি সেতু করলেন। এরসাদ-খালেদা কতখানি অবিবেচক, দুরদৃষ্টির কত অভাব! এরশাদ ৯ বছর সময় পেয়েছিল, মুজিব পেয়েছিল ৩ বছর। তফাৎ খেয়াল করেন।
মুজিব সরকার গ্লোবাল টেলি কানেকটিভিটির জন্য পরিকল্পনা করা হয় ৭২এই। তালিবাবাদ ও বেতবুনিয়া দুটি ভু উপগ্রহ কেন্দ্র। তৈরি সম্পন্ন হয়। বেতবুনিয়া ভুউপগ্রহ কেন্র চালু হয়ে যায়, সুরুহয় গ্লোবাল টেলি কানেক্টিভিটি ও ডিজিটাল বাংলাদেশের সুচনা। ৭৪ এর বন্যার পর বংগবন্ধুর সবুজ বিপ্লবের আলকে বাম্পার ফলন ইরি-বোরো, আমনের উজ্জ্বল সম্ভাবনা। ৭৫ এর সুরুতেই দুর্বিক্ষের ছায়া সরে যেতে থাকে।
এত বৈরি পরিবেশে মাত্র ৩ বছরে একে বিপুল উত্থানই বলা যায়।
হত্যাকারি চক্র সুধু মুজিবকেই হত্যা করেনি, ইতিহাসকেও হত্যা করেছে। তানা হলে আপনার মত চাদগাজী ৩ বছরে এত কিছু করার পরও মুজিবকে কটুক্তি করতেন না। অতচ বাকি সরকারগুলো যা ৩৬ বছরেও পারেনি, এই মহাসড়কে কাঁচপুর সেতুর মত চওড়া সেতুর দরকার বোঝেনি ৩৫ বছরেও।
এরপরও চাদগাজীরা বলে মুজিব সব ভুলে যায়, মুজিব অযোগ্য!

২৪ শে অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ১১:২৪

হাসান কালবৈশাখী বলেছেন:
মুজিব প্রবাসিদের জন্য ভাবেন নি, এটাও ভুল।
প্রবাসীদের দ্বারা ওয়েজ আর্নার্স স্কিম যা ১৯৭৩ সালে ড. মোমেন কমার্স মিনিস্ট্রিতে থাকাকালে লন্ডনের প্রবাসীদের সঙ্গে মতবিনিম করে খসড়া তৈরি করে ঢাকায় পাঠালে বঙ্গবন্ধুর সরকার সেই প্রস্তাবটি আমলে নেন। এবং ১৯৭৪ সালে ওয়েজ আর্নার্স স্কিম আইনে পরিণত করেন।

১৩| ২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১:৫৯

হাসান কালবৈশাখী বলেছেন: সংযোজন:
বঙ্গবন্ধুর জনসম্মুখে দেয়া শেষ ভাষণ (এ ভাষণ নয়, বাংলার ইতিহাস)-১৯৭৫ সালের ২৬শে মার্চ

বর্তমান বাংলাদেশের বাস্তবতায়ও এভাষণটি কতটা প্রাসঙ্গিক তা পড়তে গেলেই টের পাওয়া যায়। অনেক প্রশ্ন ও তার উত্তর ইতিহাসের ধুলোয় ঢেকে যাওয়া এভাষণটিতে রয়েছে। ১৯৭৫ সালের ২৬শে মার্চ বঙ্গবন্ধু এই ভাষণটি জাতির উদ্দেশ্যে দিয়েছিলেন। এটাই তাঁর জীবনে জনসম্মুখে দেয়া শেষভাষণ।
ইতিহাসের ধুলোয় চাপা পড়ে যাওয়া সেই ভাষণটি হুবহু এখানে তুলে ধরা হলো:

আমার ভাই ও বোনেরা আজ ২৬শে মার্চ। ২৫শে মার্চ রাত্রে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী বাংলার মানুষকে আক্রমণ করেছিল। হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ লোককে হত্যা করেছিল। সেদিন রাত্রে বি ডি আরের ক্যাম্পে, আমার বাড়ীতে ও বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং চারদিকে আক্রমণ চালায় ও নিরস্ত্র মানুষের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে পাশবিক শক্তি নিয়ে। বাংলার মানুষকে আমি ডাক দিয়েছিলাম। ৭ই মার্চ আমি তাদের প্রস্তুত করে দিয়েছিলাম। যখন দেখলাম আক্রমণ শুরু হয়ে গেছে, সেই মুহূর্তে আবার আমি ডাক দিয়েছিলাম। আর নয়, মোকাবিলা কর। বাংলার মানুষও যে যেখানে আছ, যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা কর। বাংলার মাটি থেকে শত্রুকে উৎখাত করতে হবে। বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষকে দাবিয়ে রাখতে পারবে না।

দুনিয়ার মানুষের কাছে আমি সাহায্য চেয়েছিলাম। আমার সামরিক বাহিনীতে যারা বাঙালী ছিল, তাদের এবং আমার বি ডি আর, আমার পুলিশ, আমার ছাত্র, যুবক ও কৃষকদের আমি আহবান করেছিলাম। বাংলার মানুষও রক্ত দিয়ে মোকাবিলা করেছিল। ৩০ লক্ষ লোক শহীদ হয়েছিল। লক্ষ লক্ষ মা-বোন ইজ্জত হারিয়েছিল, শত শত বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করা হয়েছিল। দুনিয়ার জঘন্যতম ইতিহাস সৃষ্টি করেছিল পাকিস্তানী শোষক শ্রেণী। দুনিয়ার ইতিহাসে এত রক্ত স্বাধীনতার জন্য কোন দেশ দেয় নাই, যা বাংলার মানুষ দিয়েছে। শুধু তাই নয়, তারা পঙ্কিলতা শুরু করলো। যা কিছু ছিল ধ্বংস করতে আরম্ভ করলো। ভারতে আমার এক কোটি লোক আশ্রয় নিয়েছিল। তার জন্য আমরা নিশ্চয়ই কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করব। আমি তাদের স্মরণ করি, খোদার কাছে তাদের মাগফেরাত কামনা করি, যারা এদেশের স্বাধীনতার জন্য জীবন দিয়েছে, আত্মহুতি দিয়েছে। আমি তাদের স্মরণ করব, যে সকল মুক্তিবাহিনীর ছেলে, যেসব মা-বোনেরা, আমার যে কর্মী বাহিনী আত্মাহুতি দিয়েছিল, শহীদ হয়েছিল স্বাধীনতা সংগ্রামে। এদেশ তাদের সশ্রদ্ধচিত্তে স্মরণ করে। ভারতীয় সেনাবাহিনীর যারা জীবন দিয়েছিল বাংলার মাটিতে, আজ তাদের কথাও আমি স্মরণ করি।

এখানে একটা কথা। আপনাদের মনে আছে, পাকিস্তানীরা যাওয়ার পূর্বে ১৩, ১৪, ১৫ তারিখে, ১৬ই ডিসেম্বরের আগে, কারফিউ দিয়ে ঢাকা এবং অন্যান্য জায়গায় আমার বুদ্ধিজীবিদের হত্যা করেছিল। উদ্দেশ্য ছিল এই বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করব, সম্পদ ধ্বংস করব, বাঙালী স্বাধীনতা পেলেও এই স্বাধীনতা রাখতে পারবে না। ইনশাআল্লাহ, বাংলার স্বাধীনতা রক্ষা হয়েছে। বাংলার লোক স্বাধীন হয়েছে। বাংলার পতাকা আজ দুনিয়ায় ওড়ে। বাংলাদেশ আজ জাতিসংঘের সদস্য। বাংলাদেশ জোট নিরপেক্ষ গোষ্ঠীর সদস্য, কমনওয়েলথের সদস্য, ইসলামী সামিটের সদস্য। বাংলাদেশ দুনিয়ায় এসেছে, বাংলাদেশ থাকবে, কেউ একে ধ্বংস করতে পারবে না।

ভাইয়েরা-বোনেরা আমার, আমি চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু একটা ওয়াদা আমি রাখতে পারি নাই। জীবনে যে ওয়াদা আমি করেছি, জীবন দিয়ে হলেও সে ওয়াদা আমি পালন করেছি। আমরা সমস্ত দুনিয়ার রাষ্ট্রের সংগে বন্ধুত্ব চাই। আমরা জোটনিরপেক্ষ নীতিতে বিশ্বাস করি, আমরা কো-একজিস্টেন্সে বিশ্বাস করি। আমরা ভেবেছিলাম, পাকিস্তানীরা নিশ্চয়ই দুঃখিত হবে, আমার সম্পদ ফেরত দেবে। আমি ওয়াদা করেছিলাম, তাদের বিচার করব। এই ওয়াদা আপনাদের পক্ষ থেকে খেলাপ করেছি। তাদের আমি বিচার করিনি। আমি ছেড়ে দিয়েছি এই জন্য যে, এশিয়ায়-দুনিয়ায় আমি বন্ধুত্ব চেয়েছিলাম। দুঃখের বিষয়, পাকিস্তানীরা আমার সম্পদ এক পয়সাও দিল না। আমার বৈদেশিক মুদ্রার কোন অংশ আমাকে দিল না। আমার গোল্ড রিজার্ভের কোন অংশ আমাকে দিল না। একখানা জাহাজও আমাকে দিল না। একখানা প্লেনও আমাকে দিল না। কেন্দ্রীয় সরকারের সম্পদ এক পয়সাও দিল না। এবং যাবার বেলায় পোর্ট ধ্বংস করলো, রাস্তা ধ্বংস করলো, রেলওয়ে ধ্বংস করলো, জাহাজ ডুবিয়ে দিল। শেষ পর্যন্ত কারেন্সী নোট জ্বালিয়ে বাংলাদেশকে ধ্বংস করতে চেয়েছিল। পাকিস্তানীরা মনে করেছিল, বাংলাদেশকে যদি অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করতে পারি তাহলে বাংলাদেশের মানুষকে দেখাতে পারব যে, তোমরা কি করছো।

ভুট্টো সাহেব বক্তৃতা করেন। আমি তাঁকে সংবর্ধনা দিয়েছিলাম লাহোরে আমাকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছিল বলে। ভুট্টো সাহেব বলেন, বাংলাদেশের অবস্থা কি? ভুট্টো সাহেবকে আমি জিজ্ঞাসা করি, ফ্রণ্টিয়ারের পাঠানদের অবস্থা কী? ভুট্টো সাহেবকে জিজ্ঞাসা করি, বেলুচিস্তানের মানুষের অবস্থা কী? এরোপ্লেন দিয়ে গুলী করে মানুষ হত্যা করছেন। সিন্ধুর মানুষের অবস্থা কী? ঘর সামলান বন্ধু, ঘর সামলান। নিজের কথা চিন্তা করুন। পরের জন্য চিন্তা করবেন না। পরের সম্পদ লুট করে খেয়ে বড় বড় কথা বলা যায়। আমার সম্পদ ফেরত দেওয়া না পর্যন্ত তোমার সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব হতে পারে না। তোমরা আমার কি করেছো? আমি সবার বন্ধুত্ব কামনা করি। পাকিস্তানের জনগণের বিরুদ্ধে আমার কিছুই বলার নাই। কিন্তু আমার সম্পদ তাকে দিতে হবে।

আমি দুনিয়ার প্রত্যেক রাষ্ট্রের সাথে বন্ধুত্ব চাই, কারো সাথে দুশমনি করতে চাই না। সকলের সাথে বন্ধুত্ব করে আমরা শান্তি চাই। আমার মানুষ দুঃখী, আমার মানুষ না খেয়ে কষ্ট পায়। আমি যখন বাংলাদেশ সরকার পেলাম, যখন জেল থেকে বের হয়ে এলাম, তখন আমি শুধু বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষই পেলাম। ব্যাংকে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা ছিল না। আমাদের গোল্ড রিজার্ভ ছিল না। শুধু কাগজ নিয়ে আমরা সাড়ে সাত কোটি লোকের সরকার শুরু করলাম। আমাদের গুদামে খাবার ছিল না। গত তিন চার বৎসরে না হলেও বিদেশ থেকে ২২ কোটি মণ খাবার বাংলাদেশে আনতে হয়েছে। বাইশ শ’ কোটি টাকার মত বিদেশ থেকে হেল্প আমরা পেয়েছি। সেজন্য যারা আমাদের সাহায্য করেছে, সে সমস্ত বন্ধুরাষ্ট্রকে আমরা ধন্যবাদ জানাই।

কিন্তু আর একটি কথা। অনেকে প্রশ্ন করেন, আমরা কি করেছি? আমরা যখন ক্ষমতায় এলাম, দেশের ভার নিলাম, তখন দেশের রাস্তাঘাট যে অবস্থায় পেলাম, তাকে রিপেয়ার করবার চেষ্টা করলাম। সেনাবাহিনী নাই, প্রায় ধ্বংস করে গেছে। পুলিশ বাহিনীর রাজারবাগ জ্বালিয়ে দিয়েছিল। সেই খারাপ অবস্থা থেকে ভাল করতে কী করি নাই? আমরা জাতীয় সরকার গঠন করলাম। আমাদের এখানে জাতীয় সরকার ছিল না। আমাদের ডিফেন্স ডিপার্টমেন্ট ছিল না, বৈদেশিক ডিপার্টম্নেট ছিল না, প্ল্যানিং ডিপার্টমেন্ট ছিল না। এখানে কিছুই ছিল না। তার মধ্যে আমাদের জাতীয় সরকার গঠন করতে হল। যাঁরা শুধু কথা বলেন, তাঁরা বুকে হাত দিয়ে চিন্তা করে বলুন, কী করেছি। এক কোটি লোককে ঘরবাড়ি দিয়েছি। রাষ্ট্রের লোককে খাওয়ানোর জন্য বিদেশ থেকে খাবার আনতে হয়েছে। পোর্টগুলোকে অচল থেকে সচল করতে হয়েছে। দুনিয়ার বিভিন্ন জায়গা থেকে ২২ কোটি মণ খাবার এনে বাংলার গ্রামে গ্রামে দিয়ে মানুষকে বাঁচাতে হয়েছে।

এরপরও কথা আছে। আমি মানুষকে বললাম, আমার ভাইদের বললাম, মুক্তি বাহিনীর ছেলেদের বললাম, তোমাদের অস্ত্র জমা দাও। তারা অস্ত্র জমা দিল। কিন্তু একদল লোক-আমার জানা আছে, যাদের পাকিস্তান অস্ত্র দিয়ে গিয়েছিল তারা অস্ত্র জমা দেয় নাই। তারা এসব অস্ত্র দিয়ে নিরপরাধ লোককে হত্যা করতে আরম্ভ করলো। এমনকি, পাঁচজন পার্লামেন্ট সদস্যকেও তারা হত্যা করলো। তবুও আমি শাসনতন্ত্র দিয়ে নির্বাচন দিলাম। কিন্তু যদি বাংলার জনগণ নির্বাচনে আমাকেই ভোট দেয়, তাহলে সেটা আমার দোষ নয়। ৩১৫ টি সিট এর মধ্যে ৩০৭ টি সিট বাংলার মানুষ আমাকে দিল। কিন্তু একদল লোক বলে, কেন জনগণ আমাকে ক্ষমতা দিল? কোনো দিন কোনো দেশ সশস্ত্র বিপ্লবের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে কাউকে এভাবে অধিকার দেয় না। কিন্তু অধিকার ভোগ করতে হলে তার জন্য যে রেসপনসিবিলিটি আছে, সেটা তারা ভুলে গেল। আমি বললাম, তোমরা অপজিশন সৃষ্টি কর। তারা তা সৃষ্টি করলো। বক্তৃতা করতে আরম্ভ করলো। কিন্তু সেই সঙ্গে অন্ধকারে মানুষ হত্যা করতে আরম্ভ করলো। দরকার হলে অস্ত্র দিয়ে আমাদের মোকাবেলা করতে চায়। অস্ত্রের হুমকি দেওয়া হল। মানুষ হত্যা থেকে আরম্ভ করে রেল লাইন ধ্বংস করে, ফার্টিলাইজার ফেক্টরি ধ্বংস করে, জাহাজ ডুবিয়ে দিয়ে তারা এমন অবস্থার সৃষ্টি করলো যাতে বিদেশী এজেন্ট যারা দেশের মধ্যে আছে, তারা সুযোগ পেয়ে গেল। আমাদের কর্তব্য মানুষকে বাঁচানো। চারিদিকে হাহাকার। স্বাধীনতা পাওয়ার সংগে সংগে সমস্ত দুনিয়ার সমস্ত জিনিষের দাম আস্তে আস্তে বেড়ে গেল। সমস্ত দুনিয়া থেকে আমাদের কিনতে হয়। খাবার কিনতে হয়, কাপড় কিনতে হয়, ঔষধ কিনতে হয়, তৈল কিনতে হয়। আমরা তো দুইশ’ বছর ইংরেজদের কলোনী ছিলাম, পঁচিশ বছর পাকিস্তানের কলোনী ছিলাম। আমাদের তো সব কিছুই বিদেশ থেকে কিনতে হয়। কিন্তু তার পরেও বাংলার মানুষ কষ্ট স্বীকার করে কাজ করতে আরম্ভ করেছে। কিন্তু তারা তাদের এগোতে, কাজ করতে দেয় না।আর একদল বিদেশে সুযোগ পেল। তারা বিদেশ থেকে অর্থ এনে বাংলার মাটিতে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করলো। স্বাধীনতাকে নস্যাৎ করবার চেষ্টা করলো। আজ এদিনে কেন বলছি একথা? অনেক বলেছি, এত বলার দরকার ছিল না। কিন্তু আমার চোখের সামনে মানুষের মুখ ভাসে। আমার দেশের মানুষের রক্ত ভাসে। আমার চোখের সামনে ভাসে আমারই মানুষের আত্মা। আমার চোখের সামনে সে সমস্ত শহীদ ভাইয়েরা ভাসে, যারা ফুলের মত ঝরে গেল, শহীদ হল। রোজ কিয়ামতে তারা যখন বলবে, আমার রক্ত দিয়ে দেশ স্বাধীন করলাম, তোমরা স্বাধীনতা নস্যাৎ করছো, তোমরা রক্ষা করতে পার নাই, তখন তাদের আমি কী জবাব দেব?

আর একটি কথা। কেন সিস্টেম পরিবর্তন করলাম ? সিস্টেম পরিবর্তন করেছি দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাবার জন্য। সিস্টেম পরিবর্তন করেছি শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনবার জন্য। কথা হল, এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে যে, অফিসে যেয়ে ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে যায়, সাইন করিয়ে নেয়। ফ্রি স্টাইল ! ফেক্টরিতে যেয়ে কাজ না করে টাকা দাবী করে। সাইন করিয়ে নেয়। যেন দেশে সরকার নাই। আবার, শ্লোগান হল- বঙ্গবন্ধু কঠোর হও।

বঙ্গবন্ধু কঠোর হবে। কঠোর ছিল, কঠোর আছে। কিন্তু দেখলাম, চেষ্টা করলাম, এত রক্ত, এত ব্যাথা, এত দুঃখ। তার মধ্যে ভাবলাম, দেখি, কি হয়, কিছু করতে পারি কিনা। আবদার করলাম, আবেদন করলাম, অনুরোধ করলাম, কামনা করলাম, কিন্তু কেউ কথা শোনে না। চোরা নাহি শোনে ধর্মের কাহিনী।

ভাইয়েরা, বোনেরা আমার, আজকে যে সিস্টেম করেছি, তার আগেও ক্ষমতা বঙ্গবন্ধুর কম ছিল না। আমি বিশ্বাস করি না, ক্ষমতা বন্দুকের নলে। আমি বিশ্বাস করি ক্ষমতা বাংলার জনগণের কাছে। জনগন যেদিন বলবে, ‘বঙ্গবন্ধু ছেড়ে দাও’। বঙ্গবন্ধু তারপর একদিনও রাষ্ট্রপতি, একদিনও প্রধানমন্ত্রী থাকবে না। বঙ্গবন্ধু ক্ষমতার জন্য রাজনীতি করে নাই। বঙ্গবন্ধু রাজনীতি করেছে দুঃখী মানুষকে ভালবেসে, বঙ্গবন্ধু রাজনীতি করেছে শোষণহীন সমাজ কায়েম করবার জন্য।

দুঃখের বিষয় তারা রাতের অন্ধকারে পাঁচজন পার্লামেন্ট সদস্যকে হত্যা করেছে, তিন-চার হাজারের মত কর্মীকে হত্যা করেছে। আরেক দল দুর্নীতিবাজ টাকা-টাকা, পয়সা-পয়সা করে পাগল হয়ে গেছে। তবে যেখানে খালি দুর্নীতি ছিল, গত দুই মাসের মধ্যে ইনশাআল্লাহ্, কিছুটা অবস্থা ইম্প্রুভ করেছে। দুর্নীতি বন্ধ করবার জন্য আজকে কিছু করা হয়েছে।

হ্যা, প্রেসিডেন্সিয়াল ফর্ম অব গভার্মেন্ট করেছি। জনগণ প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করবে। পার্লামেন্ট থাকবে। পার্লামেন্ট এর নির্বাচনে একজন, দুইজন, তিনজনকে নমিনেশন দেওয়া হবে। জনগণ বাছবে, কে ভাল, কে মন্দ। আমরা চাই শোষিতের গনতন্ত্র। এটা পরিষ্কার।

আমি পোগ্রাম দিয়েছি। আজকে আমাদের সামনে কাজ কী? আজকে আমাদের সামনে অনেক কাজ। আমি সকলকে অনুরোধ করব, আপনারা মনে কিছু করবেন না, আমার কিছু উচিৎ কথা কইতে হবে। কারণ, আমি কোন দিন ক্ষমতার জন্য রাজনীতি করি নাই। সত্য কথা বলবার অভ্যাস আমার আছে। মিথ্যা বলবার অভ্যাস আমার নেই। কিন্তু কিছুটা অপ্রিয় কথা বলব।

বন্যা হল। মানুষ না খেয়ে কষ্ট পেল, হাজার হাজার লোক না খেয়ে মরে গেল। দুনিয়া থেকে ভিক্ষা করে আনলাম! পাঁচ হাজার সাতশ’ লঙ্গরখানা খুললাম মানুষকে বাঁচাবার জন্য। আমি চেয়েছিলাম স্বাধীনতা। কি স্বাধীনতা? আপনাদের মনে আছে, আমার কথার মধ্যে দুইটি কথা ছিল। রাজনৈতিক স্বাধীনতা ব্যর্থ হয়ে যায়, যদি অর্থনৈতিক স্বাধীনতা না আসে। যদি দুঃখী মানুষ পেট ভরে ভাত খেতে না পারে, কাপড় পড়তে না পারে, বেকার সমস্যা দূর না হয়, তা হলে মানুষের জীবনে শান্তি ফিরে আসতে পারে না।

আজ কে দুর্নীতিবাজ? যে ফাঁকি দেয়, সে দুর্নীতিবাজ। যে স্মাগলিং করে সে দুর্নীতিবাজ। যে ব্ল্যাক-মার্কেটিং করে, সে দুর্নীতিবাজ। যে মজুদ করে সে দুর্নীতিবাজ। যারা কর্তব্য পালন করে না, তারা দুর্নীতিবাজ। যারা বিবেকের বিরুদ্ধে কাজ করে, তারাও দুর্নীতিবাজ, যারা বিদেশের কাছে দেশকে বিক্রি করে, তারাও দুর্নীতিবাজ। এই দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে আমাদের সংগ্রাম শুরু করতে হবে। আমি কেন ডাক দিয়েছি? এই ঘুণেধরা ইংরেজ আমলের পাকিস্তানী আমলের যে শাসন ব্যবস্থা, তা চলতে পারে না। তাহলে দেশের মঙ্গল আসতে পারে, না হলে আসতে পারে না। আমি তিন বছর দেখেছি। দেখে শুনে আমি আমার স্থির বিশ্বাসে পৌঁছেছি। এবং তাই জনগণকে বুঝিয়ে দিতে হবে শাসনতন্ত্রের মর্মকথা।

আজকে জানি, আপনাদের কষ্ট হচ্ছে। আমি জানি, না খেয়ে কষ্ট পাচ্ছেন। আমার চেয়ে অধিক কে জানতে পারে? বাংলার কোন থানায় আমি ঘুরি নাই, বাংলার কোন যায়গায় আমি যাই নাই? বাংলার মানুষকে আমার মত কে ভাল করে জানে?

আপনারা দুঃখ পান, না খেয়ে কষ্ট পাচ্ছেন। আপনাদের গায়ে কাপড় নাই। আপনাদের শিক্ষা দিতে পারছি না। কিন্তু সবচেয়ে বড় জিনিষ খাদ্য।

একটা কথা বলি আপনাদের কাছে। সরকারী আইন করে কোনো দিন দুর্নীতিবাজদের দুর করা সম্ভব নয়, জনগণের সমর্থন ছাড়া। আজকে আমার একটি মাত্র অনুরোধ আছে আপনাদের কাছে।আমি বলেছিলাম, ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল, জেহাদ করতে হবে, যুদ্ধ করতে হবে শত্রুর বিরুদ্ধে। আজকে আমি বলব বাংলার জনগণকে- এক নম্বর কাজ হবে, দুর্নীতিবাজদের বাংলার মাটি থেকে উৎখাত করতে হবে। আমি আপনাদের সাহায্য চাই। কেমন করে করতে হবে? আইন চালাব। ক্ষমা করব না। যাকে পাব, ছাড়ব না। একটা কাজ আপনাদের করতে হবে। গণআন্দোলন করতে হবে। আমি গ্রামে গ্রামে নামব। এমন আন্দোলন করতে হবে যে, ঘুষখোর, যে দুর্নীতিবাজ, যে মুনাফাখোর, যে আমার জিনিষ বিদেশে চোরাচালান দেয় তাদের সামাজিক বয়কট করতে হবে। একথা মনে রাখতে হবে। গ্রামে গ্রামে মিটিং করে দেখতে হবে, কোথায় আছে, ঐ চোর, ঐ ব্ল্যাক মার্কেটার, ঐ ঘুষখোর। ভয় নাই, আমি আছি। ইনশাল্লাহ, আপনাদের উপর অত্যাচার করতে দেব না। কিন্তু আপনাদের গ্রামে গ্রামে আন্দোলন করতে হবে। আন্দোলন করতে পারে কে? ছাত্র ভাইয়েরা পারে। পারে কে? যুবক ভাইয়েরা পারে। পারে কে? বুদ্ধিজীবিরা পারে। পারে কে? জনগণ পারে। আপনারা সংঘবদ্ধ হন। ঘরে ঘরে আপনাদের দুর্গ গড়তে হবে। সে দুর্গ গড়তে হবে দুর্নীতিবাজদের খতম করবার জন্য, বাংলাদেশের দুঃখী মানুষের দুঃখ মোচন করবার জন্য। এই দুর্নীতিবাজদের যদি খতম করতে পারেন, তাহলে বাংলাদেশের মানুষের শতকরা ২৫ থেকে ৩০ ভাগ দুঃখ চলে যাবে। এত চোর যে কোথা থেকে পয়দা হয়েছে জানি না। পাকিস্তান সব নিয়ে গেছে, কিন্তু এই চোর রেখে গেছে। এই চোর তারা নিয়ে গেলে বাঁচতাম। কিছু দালাল গেছে, চোর গেলে বেঁচে যেতাম।

দ্বিতীয় কথা, আপনারা জানেন, আমার দেশের এক একর জমিতে যে ফসল হয়, জাপানের এক একর জমিতে তার তিনগুন বেশি ফসল হয়। কিন্তু আমার জমি দুনিয়ার সেরা জমি। আমি কেন সেই জমিতে ডাবল ফসল করতে পারব না? আমি যদি দ্বিগুণ করতে পারি তাহলে আমাকে খাদ্য কিনতে হবে না, ভিক্ষা করতে হবে না।

ভাইয়েরা আমার, বোনেরা আমার, ভিক্ষুক জাতির ইজ্জত নাই। একটা লোককে আপনারা ভিক্ষা দেন এক টাকা কি, আট আনা। তারপর তার দিকে কিভাবে চান? বলেন, ‘ও বেটা ভিক্কুক। যা বেটা, নিয়ে যা আট আনা পয়সা।’ কোন জাতি যখন ভিক্ষুক হয়, মানুষের কাছে হাত পারে, মানুষকে বলে, ‘আমাকে খাবার দাও, আমাকে টাকা দাও,’ তার তখন ইজ্জত থাকতে পারে না। আমি সেই ভিক্ষুক জাতির নেতা থাকতে চাই না।

আমি চাই বাংলাদেশের প্রত্যেক কৃষক ভাইয়ের কাছে- যারা সত্যিকার কাজ করে, যারা প্যান্ট-পরা কাপড় পরা ভদ্রলোক, তাদের কাছেও চাই, – জমিতে যেতে হবে। ডাবল ফসল করুন। প্রতিজ্ঞা করূন আজ থেকে ঐ শহীদদের কথা স্মরণ করে ডাবল ফসল করতে হবে। যদি ডাবল ফসল করতে পারি, আমাদের অভাবও, ইনশাআল্লাহ্, হবে না। কারো কাছে ভিক্ষুকের মত হাত পাততে হবে না।

আমি পাগল হয়ে যাই চিন্তা করে। এ-বৎসর, ১৯৭৫ সালে, আমাকে ছয় কোটি মণ খাবার আনতে হবে। কি করে মানুষকে বাঁচাব? কি করে অন্যান্য জিনিষ কিনব? বন্ধু রাষ্ট্র সাহায্য দিচ্ছে বলে বেঁচে যাচ্ছি। কিন্তু এভাবে চলতে পারে না। আমাদের স্বয়ংসম্পূর্ন হয়ে নিজেদের পায়ের ওপর দাঁড়াতে হবে জাতি হিসেবে।

ভাইয়েরা আমার, একটা কথা ভুলে গেলে চলবে না যে আমাদের প্রত্যেক বৎসর ৩০ লক্ষ লোক বাড়ে। আমার জায়গা হল ৫৫ হাজার বর্গমাইল। যদি আমাদের প্রত্যেক বৎসর ৩০ লক্ষ্য লোক বাড়ে, তাহলে ২৫/৩০ বৎসরে বাংলায় কোন জমি থাকবে না হাল চাষ করবার জন্য। বাংলার মানুষ বাংলার মানুষের মাংস খাবে। সেই জন্য আজকে আমাদের পপুলেশন কন্ট্রোল, ফ্যামিলি প্ল্যানিং করতে হবে। এটা হল তিন নম্বর কাজ। এক নম্বর হল – দুর্নীতিবাজ খতম করা। দুই নম্বর হল – কলে কারখানায়, ক্ষেতে খামারে প্রোডাকশন বাড়ান। তিন নম্বর হল – পপুলেশন প্ল্যানিং। চার নম্বর হল – জাতীয় ঐক্য।

জাতীয় ঐক্য গড়বার জন্য একদল করা হয়েছে। যারা বাংলাকে ভালবাসে, এর আদর্শে বিশ্বাস করে, চারটি রাষ্ট্রীয় আদর্শ মানে, তারা সকলেই এই দলের সদস্য হতে পারবে। যারা বিদেশি এজেন্ট, যারা বহিঃশত্রুর কাছ থেকে পয়সা নেয়, এতে তাদের স্থান নাই। সরকারী কর্মচারীরাও এই দলের সদস্য হতে পারবে। কারণ, তারাও এই জাতির একটা অংশ। তাদেরও অধিকার থাকবে এই দলের সদস্য হওয়ার। এই জন্য সকলে – যে যেখানে আছি, একতাবদ্ধ হয়ে দেশের কাজে লাগতে হবে।

ভাইয়েরা, বোনেরা আমার, এই জাতীয় দলের আপাতত পাঁচটা ব্রাঞ্চ হবে। একটা শ্রমিক ভাইদের অঙ্গদল, কৃষক ভাইদের একটা, যুবক ভাইদের একটা, ছাত্রদের একটা এবং মহিলাদের একটা। এই পাঁচটা অঙ্গদল মিলে কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ। আমাকে অনেকে বলে, কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ তো হল। কিন্তু আমাদের কী হবে? আমি বলি আওয়ামী মানে তো জনগণ। ছাত্র, যুবক, শিক্ষিত সমাজ, সরকারী কর্মচারী, সকলে মিলে কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ।

শিক্ষিত সমাজের কাছে আমার একটা কথা। আমরা শতকরা কতজন শিক্ষিত লোক? আমরা শতকরা ২০ জন শিক্ষিত লোক। তার মধ্যে সত্যিকার অর্থে আমরা শতকরা ৫ জন শিক্ষিত। শিক্ষিতদের কাছে আমার একটা প্রশ্ন। আমি এই যে দুর্নীতির কথা বললাম, তা কারা করে? আমার কৃষক দুর্নীতিবাজ? না। আমার শ্রমিক? না। তাহলে ঘুষ খায় কারা? ব্ল্যাক মার্কেটিং করে কারা? বিদেশি এজেন্ট হয় কারা? বিদেশে টাকা চালান দেয় কারা? হোর্ড করে কারা? এই আমরা, যারা শতকরা ৫ জন শিক্ষিত। এই আমাদের মধ্যেই রয়েছে ঘুষখোর, দুর্নীতিবাজ। আমাদের চরিত্রের সংশোধন করতে হবে, আত্মশুদ্ধি করতে হবে। দুর্নীতিবাজ এই শতকরা ৫ জনের মধ্যে, এর বাইরে নয়।

শিক্ষিত সমাজকে আর একটা কথা বলব। আপনাদের চরিত্রের পরিবর্তন হয় নাই। একজন কৃষক যখন আসে খালি গায়ে, লুঙ্গী পরে, আমরা বলব, ‘এই বেটা, কোত্থেকে আইছিস, বাইরে বয়, বাইরে বয়।’ একজন শ্রমিক যদি আসে বলি ‘ঐখানে দাড়া।’ ‘এই রিক্সাওয়ালা, ঐভাবে চলিস না।’ তাচ্ছিল্যের সঙ্গে তাদের সঙ্গে কথা বলেন। তাদের তুচ্ছ করেন। এর পরিবর্তন করতে হবে। আপনি চাকরি করেন, আপনার মাইনে দেয় ঐ গরীব কৃষক। আপনার মাইনে দেয় ঐ গরীব শ্রমিক। আপনার সংসার চলে ওই টাকায়। আমরা গাড়ি চড়ি ঐ টাকায়। ওদের সম্মান করে কথা বলুন, ইজ্জত করে কথা বলুন। ওরাই মালিক। ওদের দ্বারাই আপনার সংসার চলে।

সরকারী কর্মচারী বলি, মনে রেখো, এটা স্বাধীন দেশ। এটা ব্রিটিশের কলোনী নয়। পাকিস্তানের কলোনী নয়। যে লোককে দেখবে, তার চেহারাটা তোমার বাবার মত, তোমার ভাইয়ের মত। ওরই পরিশ্রমের পয়সায় তুমি মাইনে পাও। ওরাই সম্মান বেশী পাবে। কারণ, ওরা নিজেরা কামাই করে খায়।

একটা কথা আমি জিজ্ঞাসা করি, কিছু মনে করবেন না। আমাদের লেখাপড়া শিখিয়েছে কে? আমার বাপ-মা। আমরা বলি, বাপ-মা। লেখাপড়া শিখিয়েছে কে? ডাক্তারী পাশ করায় কে? ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করায় কে? সায়েন্স পাশ করায় কে? বৈজ্ঞানিক করে কে? অফিসার করে কে? কার টাকায়? বাংলার দুখী জনগণের টাকায়। একজন ডাক্তার হতে সোয়া লাখ টাকার মত খরচ পড়ে। একজন ইঞ্জিনিয়ার করতে এক লাখ থেকে সোয়া লাখ টাকার মত খরচ পড়ে। বাংলার জনগণ গরীব। কিন্তু এরাই ইঞ্জিনিয়ার বানাতে টাকা দেয়, মেডিকেলের টাকা দেয় একটা অংশ।

আপনাদের কাছে আমার জিজ্ঞাসা, শিক্ষিত ভাইয়েরা, আপনাদের লেখাপড়ার যে খরচ জনগণ দিয়েছে, তা শুধু আপনাদের সংসার দেখবার জন্য নয়। আপনাদের ছেলেমেয়েদের দেখবার জন্য নয়। দিয়েছে এই জন্য যে, তাদের জন্য আপনারা কাজ করবেন, তাদের সেবা করবেন। তাদের আপনারা কী দিয়েছেন? কী ফেরত দিয়েছেন, কতটুকু দিচ্ছেন? তাদের টাকায় ইঞ্জিনিয়ার সাহেব, তাদের টাকায় ডাক্তার সাহব, তাদের টাকায় রাজনীতিবিদ সাহেব, তাদের টাকায় মেম্বার সাহেব, তাদের টাকায় সব সাহেব। আপনারা দিচ্ছেন কী? কী ফেরত দিচ্ছেন? আত্মসমালোচনা করুন। বক্তৃতা করে লাভ নাই। রাতের অন্ধকারে খবরের কাগজের কাগজ ব্ল্যাক মার্কেটিং করে সকাল বেলা বড় বড় কথা লেখার দাম নেই। রাতের বেলা ঔষধ ব্ল্যাক মার্কেটিং করে বড় বড় কথা বলার দাম নাই। হোটেল ইন্টারকন্টিনেণ্টালে মদ খেয়ে অনেস্টি এর কথা বলার দাম নেই। আত্মসমালোচনা করুন, আত্মশুদ্ধি করুন। তাহলেই হবেন মানুষ।

এই যে কি হয়েছে সমাজের! সমাজ ব্যবস্থায় যেন ঘুণ ধরে গেছে। এই সমাজের প্রতি চরম আঘাত করতে চাই। যে আঘাত করেছিলাম পাকিস্তানীদের, সে আঘাত করতে চাই এই ঘুণে ধরা সমাজ ব্যবস্থাকে। আমি আপনাদের সমর্থন চাই। আমি জানি, আপনাদের সমর্থন আছে।

কিন্তু একটা কথা এই, যে নতুন সিষ্টেমে যেতে চাচ্ছি আমি, তাতে গ্রামে গ্রামে বহুমুখী কো-অপারেটিভ করা হবে। ভুল করবেন না। আমি আপনাদের জমি নেব না। ভয় পাবেন না যে, জমি নিয়ে যাব। তা নয় পাঁচ বৎসরের প্ল্যান এ বাংলাদেশে ৬৫ হাজার গ্রামে একটি করে কো-অপারেটিভ হবে। প্রত্যেক গ্রামে এই কো-অপারেটিভ। এর জমি মালিকের জমি থাকবে। কিন্তু ফসলের অংশ সবাই পাবে। প্রত্যেকটি বেকার, প্রত্যেকটি মানুষ – যে মানুষ কাজ করতে পারে, তাকে এই কো-অপারেটিভ এর সদস্য হতে হবে। এগুলি বহুমুখী কো-অপারেটিভ হবে। পয়সা যাবে তাদের কাছে, ওয়ার্কস পোগ্রাম যাবে তাদের কাছে। আস্তে আস্তে ইউনিয়ন কাউন্সিল এ যারা টাউট আছেন, তাদের বিদায় দেওয়া হবে। তা না হলে দেশকে বাঁচানো যাবে না। এই জন্য ভিলেজ কো-অপারেটিভ হবে। আমি ঘোষণা করছি আজকে যে, পাঁচ বৎসরের প্ল্যান এ প্রত্যেকটি গ্রামে পাঁচ শত থেকে এক হাজার ফ্যামিলি নিয়ে কম্পল্সারি কো-অপারেটিভ হবে। আপনার জমির ফসল আপনি নেবেন, অংশ যাবে কো-অপারেটিভ এর হাতে, অংশ যাবে গভর্নমেন্ট এর হাতে।

দ্বিতীয়তঃ থানায় থানায় একটি করে কাউন্সিল হবে। এই কাউন্সিলে রাজনৈতিক কর্মী বা সরকারী কর্মচারী যেই হন, একজন তার চেয়ারম্যান হবেন। এই থানা কাউন্সিলে থাকবে বিভিন্ন ডিপার্টমেন্ট এর সরকারী কর্মচারী। তার মধ্যে আমাদের কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি থাকবে, যুব প্রতিনিধি থাকবে, কৃষক প্রতিনিধি থাকবে। তারাই থানাকে চালাবে।

আর, জেলা থাকবে না, সমস্ত মহকুমা জেলা হয়ে যাবে। সেই মহকুমায় একটি করে এডমিনিষ্ট্রেটিভ কাউন্সিল হবে। তার চেয়ারম্যান থাকবে। সব কর্মচারীরা এক সঙ্গে তার মধ্যে থাকবে। এর মধ্যে পিপলস রিপ্রেজেন্টেটিভ থাকবে। পার্টি রিপ্রেজেন্টেটিভ থাকবে। সেখানে তারা সরকার চালাবে। এইভাবে আমি একটা সিস্টেম চিন্তা করেছি এবং করব বলে ইনশাআল্লাহ আমি ঠিক করেছি। আমি আপনাদের সাহায্য ও সহানুভূতি চাই।

ভাই ও বোনেরা আমার, আজকে আর একটা কথা বলি। আমি জানি, শ্রমিক, ভাইয়েরা, আপনাদের কষ্ট আছে। কী কষ্ট, আমি জানি। তা আমি ভুলতে পারছি না। বিশেষ করে ফিক্সড ইনকাম গ্রুপ এর কষ্টের সীমা নাই। কিন্তু কোথায় থেকে কী হবে? টাকা ছাপিয়ে বাড়িয়ে দিলেই তো দেশের মুক্তি হবে না। ইনফ্লেশন হবে। প্রোডাকশন বাড়াতে পারলে তার পরেই আপনাদের উন্নতি হবে। না হলে উন্নতি হবে না। আমি এই-ই জানি। যেমন আমরা আজকে দেখছি।

কপাল, আমাদের কপাল! আমরা গরীব দেশ। আমাদের কপাল, – আমার পাটের দাম নাই, আমার চায়ের দাম নাই। আমরা বেচতে গেলে অল্প পয়সায় আমাদের বিক্রি করতে হয়। আর, আমি যখন কিনে আনি, যারা বড় বড় দেশ, তারা তাদের জিনিষের দাম অনেক বাড়িয়ে দেয়। আমরা বাঁচতে পারি না। আমরা এই জন্য বলি, তোমরা মেহেরবানি করে যুদ্ধের মনোভাব বন্ধ করো। আর্মামেন্ট রেইস বন্ধ করো। ওই সম্পদ দুনিয়ার দুঃখী মানুষকে বাঁচাবার জন্য ব্যয় করো। তাহলে দুনিয়ায় শান্তি ফিরে আসবে। আজকে তোমরা মনে করেছ, আমরা গরীব, – আমাদের তাই কোন মূল্য নাই।

কিন্তু-হে মোর দুর্ভাগা দেশ, যাদের করেছঅপমানঅপমান হতে হবে তাহাদেরসবার সমান।

তোমরা মনে করেছ আমরা গরীব, আমাদের তাই যে দামেই হোক, বিক্রি করতে হয়। কিন্তু এই দিন থাকবে না। আমরা বাংলাদেশের মানুষ। আমাদের মাটি আছে, আমার সোনার বাংলা আছে, আমার পাট আছে, আমার গ্যাস আছে, আমার চা আছে, আমার ফরেষ্ট আছে, আমার মাছ আছে, আমার লাইভস্টক আছে। যদি ডেভেলপ করতে পারি তবে ইনশাআল্লাহ্ এ দিন থাকবে না। তোমরা আজকে সুযোগ পেয়ে জাহাজের ভাড়া বাড়িয়ে দাও। আর তাই আমাদের কিনতে হয়। আমরা এখানে না খেয়ে মরি, আমাদের ইনফ্লেশন হয়, আমরা বাঁচতে পারি না। ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে যাই, তোমরা কিছু খয়রাত দিয়ে একটু মিষ্টি হাসো। হাসো, হাসো, হাসো। দুঃখে পড়েছি, বিক্রীত হয়েছি। তোমাদের কাছে হাত পাততে হবে, হাসো। অনেকে হেসেছে, – যুগ যুগ ধরে হেসেছে। হাসো! আরব ভাইয়েরাও গরীব ছিল।

আরব ভাইদের সঙ্গে আমরা একাত্মতা ঘোষণা করেছি। প্যালেস্টাইন এর আরব ভাইদের ন্যায্যঞদাবী সমর্থন করে বাংলার মানুষ। আরব ভাইদের পিছনে তারা থাকবে প্যালেস্টাইন উদ্ধার করবার জন্য। এও আমাদের পলিসি। সেখানে নির্যাতিত দুঃখী মানুষ, সেখানে আমরা থাকব।

শ্রমিক ভাইয়েরা, আমি শ্রমিক প্রতিষ্ঠান করছি। আপনাদের প্রতিনিধি ইন্ডাষ্ট্রিয়াস ডিপার্টমেন্ট, লেবার ডিপার্টমেন্ট এর প্রতিনিধি বসে একটা প্ল্যান করতে হবে। সেই প্ল্যান অনুযায়ী কি করে আমরা বাঁচতে পারি তার বন্দোবস্ত করতে হবে।

ছাত্র ভাইয়েরা, লেখাপড়া করুন। আমি দেখে খুশী হয়েছি, আপনারা নকল-টকল বন্ধ করেছেন একটু। কিন্তু একটা কথা আমি বলব। আমি পেপারে দেখেছি যে এবারে প্রায় এক পার্সেন্ট পাশ, দুই পার্সেন্ট পাশ, তিন পার্সেন্ট পাশ। শিক্ষক সম্প্রদায়ের কাছে আমার আকুল আবেদন, ফেল করাবেন না। নকল বন্ধ করেছি। আপনাদের একটা কর্তব্য আছে, ছেলেদের মানুষ করতে হবে। ফেল করানোতে আপনাদের তেমন বাহাদুরি নাই, পাশ করালেই বাহাদুরি আছে। আপনাদের কর্তব্য পালন করুন। খালি ফেল করিয়ে বাহাদুরি নেবেন, তা হয় না। তাদের মানুষ করুন। আমি তো শিক্ষকদের বেতন দেব। আমরা সব আদায় করব। আপনারা লেখাপড়া শেখান, আপনারা তাদের মানুষও করুন। শৃংখলা ফিরিয়ে আনুন, রাজনীতি একটু কম করুন। তাদের একটু মানুষ করবার চেষ্টা করুন। একটু সংখ্যা বাড়ান শুধু এক পার্সেন্ট, দুই পার্সেন্ট, পাঁচ পার্সেন্ট দিয়ে বাহুদুরি দেখিয়ে বলবেন খুব স্ট্রিক্ট হয়েছি? আমিও স্ট্রিক্ট চাই। নকল করতে দেবেন না। তবে, আপনাদের কাছে আবেদন, আপনারা মেহেরবানী করে আপনাদের কর্তব্য পালন করুন। ছেলেদের মানুষ করবার চেষ্টা করুন পাশের সংখ্যা বাড়ান।

১৪| ০১ লা মার্চ, ২০২৩ বিকাল ৩:৪৯

রানার ব্লগ বলেছেন: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেশ স্বাধিনের পুর্ববর্তি ও পরবর্তি প্রত্যেক টি ভাষনই কালজয়ী । এই ভাষন গুলা কে আপনি কোন টাইম ফ্রেমে বন্দী করতে পারবেন না।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.