![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
তাহলে কূটনৈতিক মহলের দল বেঁধে নির্বাচন কমিশনে যাওয়া আর দুই নেত্রীকে বান কি মুনের টেলিফোন শুধু নির্বাচনী সংকট মীমাংসার উদ্যোগ নয়। ইসলামপন্থি রাজনীতির সম্ভাব্য শক্তি মোকাবিলার পদক্ষেপ। বান কি মুনের টেলিফোন বাংলাদেশে জাতিসংঘের হস্তক্ষেপের প্রাথমিক আলামত। এর রাজনৈতিক তাৎপর্য হচ্ছে বাংলাদেশকে সংঘাতসংকুল দেশ হিসাবে আন্তর্জাতিক ভাবে চিহ্নিত করবার প্রক্রিয়াকে এক কদম এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। একটি টেলিভিশানের টক শোতে বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ডঃ সাদাত হুসেন বলেছেন, ‘জাতিসংঘের খাতায় বাংলাদেশের নাম উঠে গিয়েছে’। তিনি ঠিকই বলেছেন। জাতিসংঘ বাংলাদেশের নির্বাচনকালীন সরকারের ফর্মুলার বিকল্প নিয়ে যতোটা চিন্তিত তার চেয়ে অনেক বেশী চিন্তিত বাংলাদেশের রাজনীতি সচেতন তরুণ প্রজন্ম ও ইসলামপন্থিদের নিয়ে। বিশেষ ভাবে হেফাজতে ইসলামের আবির্ভাব তাদের মাথা খারাপ করে দিয়েছে। যদিও তারা সাধারণ ভাবে বাংলাদেশে ইসলামি শক্তির আবির্ভাবে ভীত এবং একে ইসলামি জঙ্গিবাদের উত্থান হিসাবেই প্রচার করতে আগ্রহী। কিন্তু তাদের মূল ভীতি হচ্ছে বাংলাদেশকে ইসলাম বনাম ধর্মনিরপেক্ষতার বিভাজন দিয়ে এতোকাল যেভাবে বিভক্ত করে রাখা হয়েছিল এখন সেটা আগের মতো কাজ করছে না। তাদের ভিন্ন নীতি ও কৌশল গ্রহণ করতে হবে। এর পক্ষে আমি দুটি লক্ষণের কথা বলব । বা্ন কি মুনর টেলিফোনের আগে বাংলাদেশে চীনা রাষ্ট্রদূত লি জুন২১ আগস্ট হোটেল রেডিসনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে সংলাপে বসার আহ্বান জানিয়েছেন। চিনারা কখনই এভাবে প্রকাশ্যে বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে তাদের আগ্রহ দেখায় নি। কিন্তু এখন করছে। এর প্রধান কারণ হচ্ছে পরিস্থিতি আগাম তৈরি করা যে রাজনৈতিক দলগুলো নিজেরা যদি কোন মীমাংসায় না আসে তাহলে এর পরে উদ্যোগ জাতিসংঘ থেকেই নেওয়া হবে। সে রকম উদ্যোগ চিনকে বাদ দিয়ে নেওয়া যাবে না। অর্থাৎ জাতিসংঘের পক্ষে নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য চিনকে বাদ দিয়ে কোন উদ্যোগ নেওয়া অসম্ভব। বাংলাদেশের রাজনীতিতে চিনের হঠাৎ অংশগ্রহণ এ কারণে খুবই তাৎপর্য পূর্ণ। জাতিসংঘ সেই উদ্যোগ নিলে চিন যুক্ত থাক, সেটাই তাদের ইচ্ছা তা বুঝিয়ে দেওয়া হোল। চিনও কবুল করল। জাতিসংঘ থেকে কোন উদ্যোগ বা সিদ্ধান্ত নিতে গেলে চীনের সম্মতি দরকার তাই। একই সঙ্গে ইসলামপন্থিদের ঠেকাবার জন্যও এটা দরকার। একই দিনে ২১ অগাস্ট তারিখে ড. মুহাম্মদ ইউনূসও ‘শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের’ পূর্বশর্ত হিসেবে প্রথমবারের মতো নির্দলীয় সরকারের পক্ষে সরাসরি মন্তব্য করেছেন। তবে তার এই উৎকন্ঠা কতোটুকু তার ব্যক্তিগত আর কতোটুকু জাতিসংঘের উদ্যাগের সঙ্গে জড়িত সেটা এখনও স্পষ্ট নয়। কারন এ ধরণের কথা তিনি এর আগেও বলেছেন। নতুন কিছু নয়। দেখা যাক। দ্বিতীয় যে লক্ষণের কথা আমি বলব সেটা হচ্ছে ২৩ আগস্ট বান কি মুন খালেদা জিয়াকে জাতিসংঘে বিএনপির দুজন জ্যেষ্ঠ নেতা পাঠাতে অনুরোধ করেছেন। বিএনপি সঙ্গত কারণে তা গোপন রাখতে চেয়েছে, কিন্তু এটা এখন আর গোপন নাই, এবং বিএনপি এতে সম্মতও হয়েছে। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশন আগামী ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হবে। ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে ২ অক্টোবর পর্যন্ত চলবে সাধারণ বিতর্ক। সাংবাদিকরা বলছেন ১৭ সেপ্টেম্বরের পরপরই বিএনপির দুই জ্যেষ্ঠ নেতা নিউইয়র্কের উদ্দেশে বাংলাদেশ ত্যাগ করবেন। বিএনপির এখন যে নিরুত্তাপ, আপোষী ও আন্দোলন থেকে জিরিয়ে নেওয়া ভাব তার কারন এখানেই নিহিত। যদি তাই হয় পরিস্থিতি কী দাঁড়াল তাহলে? শেখ হাসিনা এক চুলও নড়বেন না। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বাংলাদেশের জনগণের একমাত্র ‘বৈধ’ প্রতিনিধি ক্ষমতাসীন সরকার। এই সরকার নির্বাচিত, ফলে আন্তর্জাতিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় এই বৈধতাই স্বীকৃত, ফলে তারা বিরোধী দলেরও প্রতিনিধি। কিন্তু যদি জাতিসঙ্ঘ সাধারণ পরিষদে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসাবে বিরোধী দলকে অংশগ্রহণের জন্য ডাকা হয় তার মানে দাঁড়ায় বিভক্তি ও সংঘাতের জন্য বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মহলের কাছে অখণ্ড রাজনৈতিক জনগোষ্ঠি হিসাবে নয়, দুটি বিবাদমান পক্ষ হিসাবে বিবেচিত হচ্ছে, যারা তাদের বাংলাদেশের রাজনীতির সীমানার মধ্যে রাজনৈতি দ্বন্দ্বসংঘাতের মীমাংসা করতে অক্ষম। ব্যর্থ রাষ্ট্র ও সংঘাতক্লিষ্ট পূর্ণ দেশের প্রতি যে দৃষ্টিভঙ্গি আমরা আন্তর্জাতিক মহলে দেখি জাতিসংঘ বাংলাদেশকে সেই দৃষ্টিতেই দেখছে। স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের জনগণের একমাত্র বৈধ’ প্রতিনিধি হিসাবে স্বীকৃতি হারাতে চলেছেন, কিম্বা ইতোমধ্যেই হয়ত হারিয়েছেন। বেগম খালেদা জিয়াকে আরেকটি অংশের প্রতিনিধি হিসাবে আন্তর্জাতিক মহল গণ্য করতে শুরু করেছে। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে শেখ হাসিনার সরকারের বৈধতার ক্ষয় আগেই শুরু হয়েছিল। সেই ক্ষয় এতে ত্বরান্বিত হতে শুরু করল কিনা সেটা অচিরেই বোঝা যাবে। বিরোধী দলের দিক থেকে দেখলে এই স্বীকৃতি বেগম খালেদা জিয়ার জন্য নগদ লাভ মনে হতে পারে। কিন্তু সেটা সাময়িক এবং দেশের সার্বভৌমত্বের দিক থেকে ভয়ানক বিপজ্জনক। একে বাড়তে দেওয়ার অর্থ বাংলাদেশকে লিবিয়া, বা সিরিয়ায় মতো জায়গায় নিয়ে যাওয়ার পথ সাফ করা। আমরা আশা করি খালেদা জিয়া এই ফাঁদে পা দেবেন না। তাঁকে বুঝিয়ে দিতে হবে শেখ হাসিনা যদি বর্তমান সংকটের সমাধান না করেন, তিনি বরং জনগণের আন্দোলন সংগ্রামের ওপর নির্ভর করবেন, কিন্তু জাতিসংঘের হস্তক্ষেপের নামে পরাশক্তির অশুভ হস্তক্ষেপ তিনি মেনে নেবেন না। সেটা জাতিসঙ্ঘের অধীনে হলে আরও বিপজ্জনক। অন্যদিকে আমরা আশা করব শেখ হাসিনা বর্তমান পরিস্থিতি থেকে বের হবার জন্য পরাশক্তির খেলার গুটি হবেন না। তিনি যদি শেখ মুজিবের কন্যা হয়ে থাকেন, তাহলে নিজের ক্ষতি স্বীকার করেও দেশের সমস্যা দেশের মধ্যেই মীমাংসা করবেন। অন্যথায় দুইজনের কাউকেই জনগণ ক্ষমা করবে না। কিন্তু গণআন্দোলন গড়ে তোলার নীতি ও কৌশলের দিক থেকেও এই বাস্তবতা নতুন। অতএব জনগণকেও নতুন করে ভাবতে হবে। আগামি কিস্তিগুলোতে সে সম্পর্কে আলোচনা করব (অসমাপ্ত) [লেখার দ্বিতীয় কিস্তি আগামী বৃহস্পতিবার] ২ সেপ্টেম্বর ২০১৩। ১৮ ভাদ্র ১৪২০।
‘যেমন বেণী তেমনি রবে...
Click This Link
©somewhere in net ltd.