নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সময় বড়ই আনমনা........

এম এম কামাল ৭৭

উত্তরণের পথে..

এম এম কামাল ৭৭ › বিস্তারিত পোস্টঃ

তমালের কথা...................................

১৮ ই এপ্রিল, ২০১৩ রাত ১:২৭



(তমাল গাছের ফল)



আমার ডাক নাম তমাল। সার্টিফিকেটে দাদা-দাদীর দেওয়া একটা বাহারী নাম আছে। সার্টিফিকেটের নামটা নিয়ে ছোট বেলায় এক রকম অভিযোগ ছিল, এতো নাম থাকতে এই নামটা কেন দেওয়া হলো! এখন অবশ্য কোন আক্ষেপ নাই.



আম্মাকে বলতাম তমাল নামের অর্থ কি? কেন আমার নাম তমাল হলো? উত্তর শুনে কিছুটা মন খারাপ হয়েছিল। 'তমাল' নাকি একটা গাছের নাম! আমার জন্মের সময় আমার গায়ের রং ছিল কালো, তমাল গাছের সাথে কালোর যেন কি একটা সম্পর্ক আছে। এই সব মিলে মিশে আমার নাম তমাল রাখা হয়েছে। তবে স্কুলের কবিতায় যখন হিজল-তমাল বা তাল-তমালের কথা থাকতো তখন বুকটা ভরে যেত। প্রাইভেট পড়াতাম যে ছাত্রীকে সে একদিন বলে ’স্যার আপনার নামটা না নাটকের নায়কের মত।’



মিরপুর বোটানীক্যাল গার্ডেনে 'তমাল' গাছ দেখেছিলাম। ৩২ বছর বয়সে যে গাছের নামের সাথে মিল রেখে আমার নাম রাখা হয়েছে সেই গাছের দেখা পেলাম। একটা টিনের পাতে লিখা নামটা গাছের গায়ে পেরেক দিয়ে আটকানো ছিল। আমি কাছে গিয়ে গাছের গায়ে হাত বুলিয়ে এসেছি।



আজ গুগলে এই গাছের সমন্ধে কিছু জানার চেষ্টা করেছি তা এখানে উপস্থাপন করছি।



দৃষ্টি নন্দন কান্ড – শাখা আর পত্র পল্লবিত “তমাল তরু” আবহমান বাংলার একটি পরিচিত গাছ। বৈষ্ণব কবির কবিতায় একে তমাল তরু বলা হলেও এটি তরু নয় , এটি একটি মধ্যম আকারের অরণ্যক বৃক্ষ। এর উদ্ভিদ জাগতিক নাম “ গার্সেনিয়া জেলখো সাইমাস” Garcinia xanthochymus।। কৃষ্ণ কালো তমাল শাখাঁর ফাকে আকাশকে অপরুপ নীল দেখায় বলে বোধ হয় এর আরেক নাম নীলধজ। হিন্দু সম্প্রদায় তমালকে পবিত্র বৃক্ষ হিসেবে পূজা দিয়ে থাকেন।

Clusiaceae গোত্রের Garcinia গণের একটি চিরসবুজ মধ্যমাকারের বৃক্ষ। এদের আদি নিবাস দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া। বাংলাদেশে এই গাছ প্রচুর দেখা যায়। এদের বাকলের রঙ ধূসর। বাকলের পুরুত্ব ১/৪ ইঞ্চি। এর কাঠের রঙ প্রায় সাদা। এই গাছ থেকে আঠা নির্গত হয়। এর পাতার রঙ গাঢ় সবুজ এবং উজ্জ্বল, আকারে বড়। ৮-১৪ ইঞ্চি লম্বা পাতাগুলো অবনত অবস্থায় দেখা যায়। পাতার বোঁটা প্রায় ১ ইঞ্চি লম্বা, পাতার শিরা সমান্তরাল থাকে।





( তমাল গাছের পাতা )



এই গাছের ফুল ধরে বসন্তকালে। এর ফুলের রঙ সাদা এবং পাপড়ি পুরু ও খসখসে। পাপড়িগুলো ‌১/৩ ইঞ্চি লম্বা হয়। ফুলগুলো উভ-লিঙ্গিক। এতে পাঁচটি পুংকেশর থাকে। গর্ভাশয়ে পাঁচটি কক্ষ থাকে।





ফলগুলো গোলাকার হয়, ফলের রঙ গাঢ় পীতবর্ণ। ফলের নিম্নভাগ সুচালো। এর বীজগুলো কাঁঠালের বিচির মতো লম্বাটে। প্রতিটি ফলে ১-৪টি বীজ থাকে। গ্রীষ্মকালে ফল পাকে। ফলের স্বাদ অম্ল-মিষ্ট।



(তমাল গাছের ফল)





ঔষধ হিসাবে এর ফল বীজ ও বাকল ব্যবহৃত হয়। এর কচি ডাল পানিতে পেষণ করে ফোঁড়ায় লাগালে উপশম হয়। ফল স্কার্ভির রোগের জন্য উপকারী। এছাড়া এর ফল দিয়ে অম্ল-পানীয় তৈরি করা হয়। এর বীজ চূর্ণ করে পানির ভিতর মন্থন করলে এক প্রকার মাখনের মতো পদার্থ পাওয়া যায়। একে বলা হয় 'কোককমননী'। এর অপর নাম আমশূল। এই আমশূল ভাতের সাথে অল্প পরিমাণ মিশিয়ে খেলে আমাশয় ভালো হয়। এছাড়া পা-ফাটা নিরাময়ে আমশূল ব্যবহার করা হয়।



গীতা দাস স্মৃতী চারন “তখন ও এখন” লিখেছেন:



’আমাদের উঠানে একটা তমাল গাছ ছিল। তুলসী তলার পাশে। ঐটার ফল কাঁচা থাকতে সবুজ ও পাকলে লালাভ হলুদ রঙ হত। খাওয়ার অযোগ্য। আফসোস হত। তমালের বদলে অন্য কোন ফল গাছ লাগালেও তো পারত।



প্রশ্ন করে জেনেছি — তমাল গাছটি লাগায়নি। আপনা আপনি অর্থাৎ নিজে নিজেই উঠেছে। তবে আপনা আপনি উঠলেও পরে অনেক যত্ন পেয়েছে।



উঠান ঝাড়ু দিয়ে তমালের পাতা সাবধানে রাখা হত যাতে উনুনে না যায়। যে গাছের ডালে কৃষ্ণ বসে সে গাছের পাতা পর্যন্ত ভুলেও পুড়ানো মহাপরাধ। কিন্তু কৃষ্ণের বসবাসের গাছের ফল কেন যে খাওয়ার অযোগ্য তা বোধগম্য হত না। কৃষ্ণ বসার ফলে তো তমাল ফল অমৃত হয়ে যাবার কথা।’



আর এক কবিতায় পেলাম



না পেড়াইও রাধার অঙ্গ

না ডুবাই ও জলে,

মরিলে তুলিয়া রাইখো

তমালের ও ডালে।



পরিশেষে, গাছের নামের সাথে মিলিয়ে নাম রাখার জন্য কিনা আমার স্বভাব কিছুটা গাছের মত, তবে সেটা তমাল গাছের মত দৃঢ় নয়, লতা জাতিয় গাছের মত। আমার একটা শক্ত নারকেল গাছ আছে যাকে অবলম্বন করে সব সময় জড়িয়ে থাকি, সেও পরম মমতায় আমাকে ছায়া দিয়ে আগলে রাখে।

মন্তব্য ১৭ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (১৭) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই এপ্রিল, ২০১৩ রাত ২:৩৫

নানাভাই বলেছেন: বড়ই মনোরম লিকছেন। প্লাসাইলাম। :)

১৮ ই এপ্রিল, ২০১৩ দুপুর ২:১৫

এম এম কামাল ৭৭ বলেছেন: নানা ভাই আছেন? পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

২| ১৮ ই এপ্রিল, ২০১৩ ভোর ৪:৩০

বহুরুপি জীবন বলেছেন: এটারেই কি ট্যাফল বলে ?

সুন্দর লেখা ।

১৮ ই এপ্রিল, ২০১৩ দুপুর ২:১৯

এম এম কামাল ৭৭ বলেছেন: বহুরুপি জীবন লিখা সুন্দর বলেছেন, আপনাকে ধন্যবাদ।

এই ফলটাকে ট্যাফল বলে কিনা জানি না। তবে আমার বউ আমাকে মাঝে মাঝে দুষ্টামি করে ’ট্যামাল’ বলে ডাকে।

৩| ১৮ ই এপ্রিল, ২০১৩ সকাল ৯:০৯

সোহাগ সকাল বলেছেন: ভাল্লাগলো।

শুভ কামনা।

১৮ ই এপ্রিল, ২০১৩ দুপুর ২:২৩

এম এম কামাল ৭৭ বলেছেন: সোহাগ সকাল ভাই, আপনার প্রতি ও শুভ কামনা রইলো। ধন্যবাদ পড়ার জন্য।

৪| ১৮ ই এপ্রিল, ২০১৩ সকাল ৯:২০

ভিটামিন সি বলেছেন: কবিরাজ, বৈদ্য, হেকিমরা যদি টের পায় আপনি তমাল, তাইলে ছাল তুইল্যা নিয়া মেডিসিন বানাইবো। হা হা হা হা হা াহা হা হা হা হা হা।

১৮ ই এপ্রিল, ২০১৩ দুপুর ২:২৭

এম এম কামাল ৭৭ বলেছেন: আপনার কথা শুনে ভয় পাইলাম। ছলি চামড়া তুলে নিবে ওরে বাবা।

কিন্তু ’ভিটামিন সি’ ভাই আপনারও কিন্তু বিপদ কম না, সিভিটের মত পুরোটাই মজা করে খেয়ে নিবে।

ধন্যবাদ, ভাল থাকবেন।

৫| ১৮ ই এপ্রিল, ২০১৩ সকাল ১০:১৩

সািহদা বলেছেন: না পেড়াইও রাধার অঙ্গ
না ডুবাই ও জলে,
মরিলে তুলিয়া রাইখো
তমালের ও ডালে।


আপনি তো দেখছি অনেক উপকারী । আপনার নামে এত উপকার পাওয়া যায় ভবিষৎতে কাজে আসবে। প্রিয়তে রাখলাম ।

ভাল ভাবে থাকবেন আপনার জন্য না হলেও আশে পাশে মানুষের জন্য ।

১৮ ই এপ্রিল, ২০১৩ দুপুর ২:২৯

এম এম কামাল ৭৭ বলেছেন: হা আশে পাশের মানুষের জন্যই তো ভাল থাকতে হয়।


ভাল থাকবেন, পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

৬| ১৮ ই এপ্রিল, ২০১৩ দুপুর ১:০৪

রেজোওয়ানা বলেছেন: দারুন!

গাছ নিয়ে জানতে আমার খুব ভালো লাগে, সুন্দর পোস্ট।

১৮ ই এপ্রিল, ২০১৩ দুপুর ২:৩৬

এম এম কামাল ৭৭ বলেছেন: ধন্যবাদ আপা। আপনার মত বহুমাত্রীক লেখক হতে ইচ্ছা করে।


আপনার প্রফাইল থেকেঃ

জীবন মানে শুধুই যদি প্রাণ রসায়ন/
জোছনা রাতে মুগ্ধ কেন আমার নয়ন


............ইমন জুবায়ের

৭| ১৮ ই এপ্রিল, ২০১৩ বিকাল ৪:৪৮

নস্টালজিক বলেছেন: আমারও খুব ইচ্ছে করে গাছে সম্বন্ধে জানতে! কিহচুতেই কেনো জানি নাম মনে রাখতে পারিনা!


শুভেচ্ছা কামাল!


ভালো থাকুন নিরন্তর!

১৯ শে এপ্রিল, ২০১৩ সকাল ১০:২৭

এম এম কামাল ৭৭ বলেছেন:
কথাটি সুন্দর:

"ভালো থাকুন নিরন্তর! "

আপনিও ভাল থাকুন নস্টালজিক ভাই।

৮| ২৮ শে মে, ২০১৩ বিকাল ৩:৩৬

মনিরা সুলতানা বলেছেন: আপনার নাম এর গুনে ই হোক অনেক কিছু জানলাম ...
পোস্ট ভাল পাইছি ভাইয়া ...... :)

০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:৫০

এম এম কামাল ৭৭ বলেছেন: ধন্যবাদ আপা, পড়ার জন্য ধন্যবাদ ভাল থাকবেন।

৯| ২৪ শে মার্চ, ২০১৮ সকাল ৯:৫৭

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: আপনি যেটাকে তমাল বলছেন সেটা তমাল না।
তমালের বৈজ্ঞানিক নাম : Diospyros montana বা Diospyros cordifolia

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.