নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি, নিতান্তই একজন সাধারণ বাংলাদেশি। এই ব্লগে আমি আমার গল্প বলি — আমার কথা, আমার ভাবনা, একজন সাধারণ মানুষের, যে তার আয়নায় অসাধারণ স্বপ্ন দেখে। চলুন, একসঙ্গে খুঁজে দেখি আমার আয়নার সেই প্রতিচ্ছবি, যেখানে আমি শুধু আমি নই, আমি আমার বাংলাদেশ।

ডা. মোহাম্মদ মোমিনুজ্জামান খান

সহজ মানুষ, ভজে দ্যাখ না রে মন দিব্যজ্ঞ্যানে,পাবি রে অমুল্যনিধি, বর্তমানে, পাবি বর্তমানে।

ডা. মোহাম্মদ মোমিনুজ্জামান খান › বিস্তারিত পোস্টঃ

৩৬শে জুলাই ২০২৪, বাংলাদেশ ২.০: রক্তে ভেজা দ্বিতীয় জাগরণ

০৫ ই আগস্ট, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪


ভূমিকা: একটি জাতির হৃদয়স্পন্দন

৩৬শে জুলাই ২০২৪; একটি তারিখ, যা বাংলাদেশের ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে খোদিত হয়ে আছে। এটি ছিল শুধু একটি দিন নয়, বরং একটি জাতির প্রাণের জাগরণ, তরুণ হৃদয়ের অগ্নিময় প্রতিবাদ, এবং স্বপ্ন ও ত্যাগের এক অমর গাঁথা। এই দিনে বাংলাদেশ শুধু রাজনৈতিক পরিবর্তনের সাক্ষী হয়নি; এটি ছিল একটি নতুন স্বাধীনতার সূচনা, যাকে অনেকে "দ্বিতীয় স্বাধীনতা" হিসেবে অভিহিত করেছেন। এই দিনে রাস্তায় রাস্তায়, হৃদয়ে হৃদয়ে, জেগে উঠেছিল একটি নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন; যে স্বপ্নে ন্যায়, সমতা, এবং মানবিকতা ছিল প্রধান সুর। এই আলোচনার মাধ্যমে আমরা ফিরে যাব সেই ঐতিহাসিক মুহূর্তে, আবেগে ভিজব শহীদদের ত্যাগে, আকুতি জানাব একটি সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য, এবং স্বপ্ন দেখব একটি বাংলাদেশের, যেখানে প্রতিটি হৃদয় হাসবে অনাবিল সৌরভে।

ঘটনার সূচনা: একটি আগুনের ফুলকি

২০২৪ সালের জুন মাসে বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট একটি রায়ে সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা পুনর্বহালের সিদ্ধান্ত নেয়। এই রায় ছিল সেই ক্ষুদ্র ফুলকি, যা থেকে জ্বলে উঠল একটি অভূতপূর্ব গণ-অভ্যুত্থান। তরুণ শিক্ষার্থীরা, বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা, এই রায়ের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে এলো। তাদের দাবি ছিল সহজ কিন্তু গভীর; চাকরিতে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ, সুযোগের সমতা, এবং কোটা ব্যবস্থার সংস্কার। কিন্তু এই দাবি শুধু কোটার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি। এটি ধীরে ধীরে পরিণত হলো দীর্ঘদিনের স্বৈরাচার, দমননীতি, এবং জনগণের উপর চাপিয়ে দেওয়া অন্যায়ের বিরুদ্ধে একটি সর্বজনীন ক্ষোভে।

জুলাই মাস এগোতে থাকল, আর আন্দোলনের তীব্রতা বাড়তে লাগল। সরকারের কঠোর দমননীতি, হুট করে তুলে নেয়া, পুলিশের গুলি, লাঠিচার্জ, এবং টিয়ার গ্যাস, আন্দোলনকে দমাতে পারেনি; বরং তা আরও জ্বালাময়ী করে তুলল। ১৬ জুলাই থেকে আন্দোলন প্রাণঘাতী রূপ নিল, যা পরবর্তীতে ইতিহাসে "জুলাই গণহত্যা" নামে চিহ্নিত হলো। এই সময়ে শিক্ষার্থীরা নয়টি দাবি নিয়ে রাস্তায় দাঁড়াল; কোটা সংস্কার থেকে শুরু করে সরকারের পদত্যাগ পর্যন্ত। তাদের সঙ্গে যোগ দিল সাধারণ মানুষ: কৃষক, যারা তাদের জমির দাবি ভুলে গিয়েছিল; শ্রমিক, যারা ন্যায্য মজুরির জন্য লড়েছিল; গৃহিণী, যারা তাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিল; এবং ব্যবসায়ী, যারা অর্থনৈতিক শোষণে ক্লান্ত ছিল। এটি আর শুধু ছাত্র আন্দোলন ছিল না; এটি ছিল একটি জাতীয় গণ-অভ্যুত্থান।

১ আগস্ট থেকে আন্দোলনকারীরা একটি অভিনব প্রতিবাদ শুরু করল; তারা জুলাই মাসকে "গণনা" করতে লাগল: ৩২ জুলাই, ৩৩ জুলাই, এবং এভাবে চলতে থাকল। এই গণনা ছিল শুধু সময়ের হিসাব নয়; এটি ছিল শহীদদের রক্তের প্রতি শ্রদ্ধা, জনগণের অধিকারের প্রতি অঙ্গীকার। অবশেষে, ৫ আগস্ট, যা ইতিহাসে লেখা হলো "৩৬শে জুলাই", সেই দিনে "মার্চ টু ঢাকা" কর্মসূচির মধ্য দিয়ে গণ-অভ্যুত্থান তার চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছাল। লাখো মানুষ ঢাকার রাস্তায় নেমে এলো, এবং তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ত্যাগ করলেন। বাংলাদেশ একটি নতুন অধ্যায়ের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়াল।

আবেগের জোয়ার: ত্যাগের অমর গাঁথা

৩৬শে জুলাই ছিল শুধু একটি বিজয়ের দিন নয়; এটি ছিল ত্যাগের, কান্নার, এবং অকুণ্ঠ সাহসের একটি দিন। জুলাই মাসে বাংলাদেশের রাজপথ রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল। আনুমানিক ১৪০০ মানুষ প্রাণ হারিয়েছিল, যার মধ্যে শতাধিক ছিল শিশু। ছাত্র-ছাত্রী, তরুণ-তরুণী, এমনকি নিরীহ শিশুরাও পুলিশের গুলির শিকার হয়েছিল। ঢাকার শাহবাগ, রামপুরা, যাত্রাবাড়ি, মিরপুরের গলি, চট্টগ্রামের চেরাগি পাহাড়, রাজশাহীর সাহেব বাজার; প্রতিটি জায়গা শহীদদের রক্তে ভিজেছিল। ইউনিসেফের একটি রিপোর্টে বলা হয়, শিশুদের ওপর অমানবিক নির্যাতন হয়েছিল; অনেককে গ্রেপ্তার করে অন্ধকার সেলে আটক রাখা হয়েছিল, নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছিল। এই দৃশ্য হৃদয়বিদারক ছিল, কিন্তু এটিই জাতিকে জাগিয়েছিল।

এই ত্যাগের গল্পে ছিল অগণিত নাম। ছিল আবু সাঈদ, একজন তরুণ, যার বুকে গুলি লাগলেও তার চোখে ছিল স্বপ্নের আলো। ছিল মীর মুগ্ধ, যিনি তার অগণিত ভাইবোনের তৃষ্ণা মিটাতে গিয়ে নিজের জীবন দিয়েছিলেন। ছিল সেই নাম-না-জানা শিশু, যে রাস্তায় গুলিবিদ্ধ হয়ে পড়ে ছিল। তাদের প্রতিটি জীবন ছিল একটি গল্প; যে গল্পে ছিল স্বপ্ন, ভালোবাসা, এবং একটি ন্যায়ের দেশের আকাঙ্ক্ষা। তাদের রক্তে লেখা হলো বাংলাদেশের নতুন ইতিহাস।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি, ঝিগাতলার দেওয়াল, নটর ডেম কলেজের গেট; এই সব জায়গায় জন্ম নিল শিল্প। তরুণরা দেওয়ালে গ্রাফিতি আঁকল, যেখানে ফুটে উঠল শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা, জনগণের বিজয়ের গান, এবং একটি নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন। "৩৬ জুলাই" লেখা হলো দেওয়ালে, আঁকা হলো ফুটন্ত ফুল, ভাঙা শৃঙ্খল, এবং উড্ডীন পাখি। এই গ্রাফিতিগুলো ছিল শুধু শিল্প নয়; ছিল একটি জাতির হৃদয়ের কথা, তাদের বেদনা, এবং তাদের প্রতিজ্ঞা।

আমাদের হৃদয় কাঁদে যখন ভাবি, কত মা তাদের সন্তানকে হারিয়েছেন। কত বাবা তাদের স্বপ্নের সন্তানকে কবরে শুইয়ে এসেছেন। কত বন্ধু তাদের সঙ্গীকে বিদায় জানিয়েছে। কিন্তু এই কান্নার মাঝেও রয়েছে গর্ব। আমরা গর্বিত কারণ আমাদের তরুণরা দেখিয়েছে, তারা ভয় জানে না। তারা দেখিয়েছে, সত্যের জন্য লড়াই করতে হলে জীবনও দিতে হয়। তাদের ত্যাগ আমাদের শক্তি দিয়েছে, আমাদের মনে করিয়ে দিয়েছে; আমরা বাঙালি, আমরা নতজানু হই না।

পরম্পরা: বাঙালির অদম্য চেতনা

৩৬শে জুলাই বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি নতুন অধ্যায়, কিন্তু এটি আমাদের বাঙালি পরম্পরার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। আমরা সেই জাতি, যারা ১৯৫২ সালে ভাষার জন্য রক্ত দিয়েছিল, যখন রফিক, সালাম, বরকত রাজপথে প্রাণ দিয়েছিলেন। আমরা সেই জাতি, যারা ১৯৭১ সালে নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছিল। আমরা সেই জাতি, যারা ১৯৯০ সালে গণতন্ত্রের জন্য রাজপথে নেমেছিল। আর ২০২৪ সালে, ৩৬শে জুলাইয়ে, আমরা আবার প্রমাণ করেছি, অন্যায়ের বিরুদ্ধে আমাদের চেতনা অদম্য। এই আন্দোলন ছিল আমাদের ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতা; যেখানে আমরা শুধু প্রতিবাদ করি না, আমরা নতুন পথ তৈরি করি।

এই পরম্পরা শুধু লড়াইয়ের নয়, সৃষ্টিরও। ১৯৫২ সালে আমরা ভাষার জন্য লড়েছিলাম, কিন্তু সেই লড়াই থেকে জন্ম নিয়েছিল আমাদের সাংস্কৃতিক জাগরণ। ১৯৭১ সালে আমরা স্বাধীনতার জন্য লড়েছিলাম, কিন্তু সেই লড়াই আমাদের দিয়েছিল একটি জাতীয় পরিচয়। ১৯৯০ সালে আমরা গণতন্ত্রের জন্য লড়েছিলাম, কিন্তু সেই লড়াই আমাদের জানিয়েছিল দেশের প্রশ্নে আমরা আপোষহীন। আর ২০২৪ সালে, আমরা ন্যায়ের জন্য লড়েছি, এবং সেই লড়াই থেকে ফুটে উঠেছে একটি নতুন স্বপ্ন। আন্দোলনের পর তরুণরা শুধু রাস্তায় দাঁড়ায়নি; তারা দেওয়ালে গ্রাফিতি এঁকেছে, গান লিখেছে, কবিতা রচনা করেছে। তারা লিখেছে "৩৬ জুলাই", এঁকেছে ভাঙা শৃঙ্খলের ছবি, ফুটন্ত ফুল, এবং স্বাধীনতার পাখি। এই সৃজনশীলতা আমাদের বাঙালিয়ানার প্রাণ; যেখানে আমরা দুঃখের মাঝেও হাসি খুঁজে পাই, ধ্বংসের মাঝেও সৃষ্টি করি।

এই পরম্পরা আমাদের শিকড়ের কথা বলে। আমরা বাংলার নদী, প্রাণ-প্রকৃতি, মাটির উৎসব, রবীন্দ্রনাথের গান, আর নজরুলের বিদ্রোহের সন্তান। আমাদের হৃদয়ে জ্বলে সেই আগুন, যা কখনো নিভবে না। ৩৬শে জুলাই আমাদের এই পরম্পরাকে নতুন করে জাগিয়েছে। এটি আমাদের মনে করিয়ে দিয়েছে, আমরা যখন এক হই, আমরা অপ্রতিরোধ্য। আমরা যখন স্বপ্ন দেখি, আমরা সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে পারি।

আকুতি: শহীদদের প্রতি, জাতির প্রতি

প্রাণের বাংলাদেশ, তোমার মাটিতে যারা রক্ত দিয়েছে, তাদের প্রতি আমাদের হৃদয়ের গভীর আকুতি। আমরা প্রার্থনা করি, তাদের ত্যাগ যেন আমাদের পথ দেখায়। আমরা জানি, তাদের মা-বাবা, ভাই-বোন, বন্ধু-স্বজন এখনো কাঁদেন। তাদের চোখের জল আমাদের জন্য একটি ঋণ। আমরা কি পারব না তাদের জন্য একটি ন্যায়ের বাংলাদেশ গড়তে? আমরা কি পারব না তাদের স্বপ্নকে বাঁচিয়ে রাখতে? শহীদদের প্রতিটি ফোঁটা রক্ত আমাদের বলছে, তোমরা থেমো না, তোমরা হার মেনো না।

আমাদের আকুতি আমাদের জাতির প্রতি, আমরা যেন বিভেদ ভুলে এক হই, আমরা যেন ভুলে না যাই কেন আমরা লড়েছি। শহীদদের স্বপ্ন ছিল একটি সমতার দেশ, যেখানে কেউ কাউকে পিছনে ফেলে না। আমরা কি সেই স্বপ্নের দায়িত্ব নেব না? আমরা কি ভুলে যাব, কত দাম দিয়ে আমরা এই বিজয় অর্জন করেছি? আমাদের হৃদয় বলে, আমরা পারব। আমরা পারব শহীদদের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে। আমরা পারব তাদের ঋণ শোধ করতে। কিন্তু এর জন্য আমাদের এক হতে হবে, আমাদের ভালোবাসতে হবে, আমাদের সত্যের পথে হাঁটতে হবে।

প্রতিটি তরুণ প্রাণের কাছে আমরা আকুতি জানাই; তোমরা যারা রাস্তায় দাঁড়িয়েছিলে, যারা গ্রাফিতি আঁকছিলে, যারা গান গেয়েছিলে, তোমরা থেমো না। তোমরা আমাদের আশা, তোমরা আমাদের ভবিষ্যৎ। প্রতিটি বাঙালি প্রতিটি বাংলাদেশির কাছে আকুতি জানাই, আমরা যেন আমাদের ঐতিহ্যের মর্যাদা রাখি। আমরা যেন শহীদদের স্বপ্নের প্রতি বিশ্বস্ত থাকি। আমাদের আকুতি আমাদের দেশের প্রতি; তুমি হাসো, তুমি জ্বলো, তুমি নতুন স্বপ্নে ভরে উঠো।

স্বপ্ন: একটি নতুন বাংলাদেশ

৩৬শে জুলাই আমাদের শুধু অতীতের গল্প নয়; এটি আমাদের ভবিষ্যতের স্বপ্ন। আমরা স্বপ্ন দেখি এমন একটি বাংলাদেশের, যেখানে প্রতিটি তরুণের মেধা মূল্য পাবে। আমরা স্বপ্ন দেখি এমন একটি দেশের, যেখানে কোনো শিশু গুলির ভয়ে কুঁকড়ে যাবে না। আমরা স্বপ্ন দেখি এমন একটি সমাজের, যেখানে ন্যায়বিচার হবে প্রতিটি নাগরিকের অধিকার, এবং স্বাধীনতা হবে প্রতিটি হৃদয়ের গান। এই স্বপ্ন শুধু আমার, তোমার বা আপনার নয়, এটি দল-মত নির্বিশেষে সবার, এটি সেই তরুণদের, যারা দেওয়ালে গ্রাফিতি আঁকছিল। তাদের রঙের প্রতিটি টানে ছিল শান্তির স্বপ্ন, সমৃদ্ধির স্বপ্ন, এবং ভালোবাসার স্বপ্ন।

আমরা স্বপ্ন দেখি এমন একটি বাংলাদেশের, যেখানে আমাদের নদী আমাদের প্রকৃতি আবার পরিষ্কার হবে। আমরা স্বপ্ন দেখি এমন শহরের, যেখানে কোনো দরিদ্র শিশু খাবারের জন্য কাঁদবে না। আমরা স্বপ্ন দেখি এমন গ্রামের, যেখানে প্রতিটি কৃষক তার ফসলের ন্যায্য মূল্য পাবে। আমরা স্বপ্ন দেখি এমন একটি শিক্ষাব্যবস্থার, যেখানে প্রতিটি শিশু স্বপ্ন দেখার সুযোগ পাবে। এই স্বপ্নগুলো বিলাসিতা নয়; এটি আমাদের অধিকার। ৩৬শে জুলাই আমাদের দেখিয়েছে, আমরা যখন লড়ি, আমরা আমাদের অধিকার ছিনিয়ে আনতে পারি।

এই স্বপ্নের মধ্যে রয়েছে আমাদের সংস্কৃতির প্রতি ভালোবাসা। আমরা স্বপ্ন দেখি এমন একটি বাংলাদেশের, যেখানে রবীন্দ্রনাথের গান প্রতিটি হৃদয়ে বাজবে, নজরুলের বিদ্রোহ প্রতিটি তরুণকে জাগাবে। আমরা স্বপ্ন দেখি এমন একটি দেশের, যেখানে বৈশাখের উৎসব হবে সবার জন্য, যেখানে আনন্দ শোভাযাত্রা হবে ঐক্যের প্রতীক। এই স্বপ্ন আমাদের এক করে, আমাদের শক্তি দেয়।

ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা: আমরা কী করব?

৩৬শে জুলাই আমাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ পাঠ দিয়েছে; লড়াই শেষ হয় না, এটি শুধু রূপ বদলায়। আমাদের ভবিষ্যৎ গড়তে হবে এই শিক্ষার ওপর ভিত্তি করে।

প্রথমত, আমাদের শিক্ষা ও সুযোগের ক্ষেত্রে সমতা নিশ্চিত করতে হবে। কোটা সংস্কার ছিল আন্দোলনের শুরু, কিন্তু আমাদের লক্ষ্য হবে এমন একটি ব্যবস্থা, যেখানে মেধাই হবে একমাত্র মাপকাঠি। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাকে আরও স্বচ্ছ করতে হবে, যাতে প্রতিটি তরুণ তাদের সম্ভাবনা পূর্ণভাবে কাজে লাগাতে পারে।

দ্বিতীয়ত, আমাদের ঐক্য ধরে রাখতে হবে। ৩৬শে জুলাই আমাদের দেখিয়েছে, যখন আমরা এক হই, কোনো শক্তি আমাদের থামাতে পারে না। এই ঐক্যকে আমাদের রাজনৈতিক, সামাজিক, এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে কাজে লাগাতে হবে। আমরা একটি ন্যায্য সমাজ গড়ব, যেখানে কেউ ক্ষুধার্ত থাকবে না, কেউ বঞ্চিত হবে না, কেউ দুর্নীতি করবে না। আমাদের অর্থনীতিকে আরও সমতাভিত্তিক করতে হবে, যাতে ধনী-দরিদ্রের ব্যবধান কমে।

তৃতীয়ত, আমাদের পরিবেশের প্রতি দায়িত্বশীল হতে হবে। আমাদের নদী, বন, এবং মাটি আমাদের স্বাধীনতার সাক্ষী। আমরা কি তাদের ধ্বংস করব? আমাদের তরুণ প্রজন্মকে পরিবেশ রক্ষায় এগিয়ে আসতে হবে। আমরা প্লাস্টিকের ব্যবহার কমাব, গাছ লাগাব, এবং আমাদের নদীগুলোকে পুনরুদ্ধার করব। আমরা স্বপ্ন দেখি এমন একটি দূষণমুক্ত বাংলাদেশের, যেখানে আমাদের সন্তানরা পরিষ্কার বাতাসে শ্বাস নেবে, সবুজ মাঠে খেলবে।

চতুর্থত, আমাদের সংস্কৃতির প্রতি যত্নশীল হতে হবে। আমাদের লোকসঙ্গীত, হস্তশিল্প, এবং সাহিত্য আমাদের পরিচয়। আমরা এগুলোকে প্রচার করব, আমাদের তরুণদের মধ্যে ছড়িয়ে দেব। আমরা বৈশাখের উৎসবকে আরও বড় করব, আনন্দ শোভাযাত্রাকে আরও রঙিন করব। আমাদের সংস্কৃতি আমাদের শক্তি, এবং এটি আমাদের এক ও অদ্বিতীয় করে তুলবে।

আশা: নতুন ভোরের প্রতিশ্রুতি

৩৬শে জুলাই আমাদের দিয়েছে আশা। যখন আমরা রাস্তায় ছিলাম, যখন আমরা গুলির মুখে দাঁড়িয়েছিলাম, তখন আমরা জানতাম এই অন্ধকার শেষ হবে। আর আজ, যখন আমরা নতুন পথে হাঁটছি, আমরা জানি, এই পথ আমাদের স্বপ্নের দিকে নিয়ে যাবে। আমাদের তরুণরা, যারা দেওয়ালে স্বপ্ন এঁকেছে, তারাই আমাদের ভবিষ্যৎ। তাদের চোখে আমরা দেখি একটি নতুন বাংলাদেশ; যেখানে ভালোবাসা হবে শক্তি, ন্যায় হবে নিয়ম, এবং স্বাধীনতা হবে প্রতিটি হৃদয়ের অধিকার।

আমাদের হৃদয় বলে, আমরা পারব। আমরা পারব শহীদদের স্বপ্ন পূরণ করতে। আমরা পারব একটি বাংলাদেশ গড়তে, যেখানে প্রতিটি শিশু হাসবে, প্রতিটি তরুণ স্বপ্ন দেখবে, এবং প্রতিটি বৃদ্ধ গর্ব করবে। ৩৬শে জুলাই আমাদের শিখিয়েছে, আমরা যখন এক হই, আমরা অপ্রতিরোধ্য। আমরা স্বপ্ন দেখি এমন একটি দেশের, যেখানে আমাদের প্রকৃতি হাসবে, আমাদের শহর আলো জ্বালবে, এবং আমাদের গ্রাম ফুটবে সুখের ফসলে।

এই আশা আমাদের শক্তি। এই আশা আমাদের পথ দেখায়। আমরা জানি, পথ সহজ হবে না। আমাদের সামনে চ্যালেঞ্জ আছে; অর্থনৈতিক অস্থিরতা, সামাজিক বিভেদ, এবং পরিবেশের সংকট। কিন্তু আমরা জানি, আমরা যখন এক হই, আমরা সব পারি। আমরা স্বপ্ন দেখি, এবং আমরা সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেই। ৩৬শে জুলাই আমাদের সেই শক্তি দিয়েছে।

শেষ কথা: আমাদের প্রতিজ্ঞা

৩৬শে জুলাই ২০২৪ আমাদের জন্য একটি আলোর দিন। এটি আমাদের মনে করিয়ে দেয়, আমরা বাঙালি, আমরা বাংলাদেশি; আমরা সেই জাতি, যারা ভাঙতে জানে, গড়তেও জানে। আমরা শহীদদের কাছে প্রতিজ্ঞা করি, তাদের রক্ত বৃথা যাবে না। আমরা আমাদের দেশকে ভালোবাসব, আমরা আমাদের স্বপ্নকে বাঁচিয়ে রাখব, এবং আমরা একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ব; যেখানে প্রতিটি হৃদয়ে বাজবে স্বাধীনতার গান।

৩৬শে জুলাই আমাদের শুধু ইতিহাস নয়, আমাদের ভবিষ্যৎ। আমরা হাতে হাত ধরে এই পথে হাঁটব। আমরা জানি, পথে কাঁটা থাকবে, চ্যালেঞ্জ থাকবে। কিন্তু আমরা জানি, আমাদের হৃদয়ে জ্বলে সেই আগুন, যা কখনো নিভবে না। আমরা শহীদদের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেব। আমরা একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ব; যেখানে প্রতিটি শিশু হাসবে, প্রতিটি তরুণ স্বপ্ন দেখবে, এবং প্রতিটি বৃদ্ধ গর্ব করবে। আমাদের সামনে অপেক্ষা করছে একটি নতুন ভোর, একটি নতুন বাংলাদেশ; বাংলাদেশ ২.০। শুভ হোক আমাদের এই পথচলা।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই আগস্ট, ২০২৫ দুপুর ১:৩৮

কাঁউটাল বলেছেন: বাংলাদেশের শত্রু হাউয়ামী লীগ এবং উহাদের পভুপাদ মুদির দেশ ভঁড়ৎকে উষ্টার উপরে রাখতে হবে।

২| ০৫ ই আগস্ট, ২০২৫ দুপুর ১:৫৮

নতুন নকিব বলেছেন:



হাজারও শহীদের রক্তে ভেজা জাগ্রত বাংলাদেশের এই গল্প আমাদের হৃদয়ে আগুন জ্বালায়। আমরা একসাথে এগিয়ে যাব, একটি ন্যায়ের বাংলাদেশ গড়ব। আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টাই বিনির্মান করবে একটি সুন্দর বাংলাদেশ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.