| নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |

এবার একটি সেমিনারে প্রথমবারের মতো একজন জর্ডানির সাথে পরিচয় হয়। রাসেম আল-গুল। ঘনকালো মাথার চুল, বলিষ্ট দেহ, উজ্জ্বল বর্ণ, দাড়ি-গোঁফ সবই আছে। না খাটো, না লম্বা। বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। প্রতিটি সেশন শেষ হলেই তিনি অদৃশ্য হয়ে যান, সম্ভবত ধূমপানের জন্য। ফিরে আসেন সুগন্ধি কিছু একটা চিবুতে চিবুতে।
ভিনদেশের মানুষের সাথে কথাবলা, তাদের মুখে নিজে দেশের সংস্কৃতি ও রাজনীতি সম্পর্কে শোনা আমার একটি সখ। এক বিরতিতে রাসেমকে জিজ্ঞেস করলাম, তোমরা কেন ফিলিস্তিনিদের পক্ষে ইসরায়েলকে কিছু বলছো না? ফিলিস্তিনিদের সাথে তোমাদের সম্পর্ক কীভাবে টিকে আছে? উত্তরে তিনি যা বললেন, তাতে আমি শুধু অবাক হলাম না, সার্বভৌম রাষ্ট্র সম্পর্কেই আমার ধারণা বদলে গেলো! সহকর্মী রাসেম জানালেন যে, তিনি নিজেও একজন ফিলিস্তিনি এবং জর্ডানের বিরাশিভাগ মুসলমানের চল্লিশভাগই ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত। অন্য কথায় ফিলিস্তিনের শরণার্থী। জর্ডানকে বলা যায় ফিলিস্তিনের সহোদর, কিন্তু ইসরায়েলের সাথে আছে তাদের অনেক গভীর সম্পর্ক। কীভাবে এটি হলো?
জর্ডানের রাজনৈতিক ইতিহাস এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের দিকে তাকালে বলা যায়, এটি একটি আন্তর্জাতিক রাষ্ট্র যেখানে পরাক্রমশালী সবদেশের আছে অবাদ যোগাযোগ। ধর্মীয় কোন বিভেদ নেই। (তবে শিয়া মুসলমান ছাড়া! হেহেহে... নিজ জাতিকে আমরা এত্ত ভালোবাসি!) বিশেষত, যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্রের সাথে তাদের এমন সম্পর্ক যে, বলা যায় জর্ডানীরা জাতেই মুসলমান কিন্তু আর্থিক স্বচ্ছলতা এবং জীবনের মানে তারা পশ্চিমাদেরই সমকক্ষ। যদিও মুসলিম সংস্কৃতি তারা ত্যাগ করে নি।
জর্ডানি এক দিনারে আপনি পাবেন প্রায় দেড় ডলার! রাসেমকে আমি বললাম, আদবকায়দার খাতিরে হলেও অন্তত ইউএস ডলারের নিচে থাকা উচিত তোমাদের! রাসেম বললো, জর্ডানি দিনারের মান ঠিক রাখা যে তাদেরই দায়িত্ব, তাদেরই স্বার্থে! জর্ডানের অর্থনীতি কাদের হাতে এবার বুঝুন। জর্ডানের অর্থনীতির দিকে তাকালে আপনার জাত্যাভিমানের আবশ্যকতা নিয়ে প্রশ্ন জাগতেই পারে (সিঙ্গাপুর এমন একটি দেশ যেখানে জাতীয়তা না বিচার করে, অর্থনৈতিক সম্পর্ককে গুরুত্ব দেওয়া হয়)। জর্ডানিদের শুধু একটাই সমস্যা, ফিলিস্তিনি শরণার্থী।
কিন্তু ১৯৪৮ এর পূর্বের ফিলিস্তিন কি এমন ছিল? ইহুদিদেরকে আশ্রয় এবং পরবর্তিতে তাদের জবরদখলের আগে কেমন ছিল ফিলিস্তিন? নাকবা (আরব-ইসরায়েল যুদ্ধ ১৯৪৮) সংঘটিত হবার পূর্ব পর্যন্ত ফিলিস্তিন ছিলো একটি বহুজাতিক, বহুসাংস্কৃতিক এবং সমৃদ্ধ দেশ। তিরিশের দশকে ইয়োরোপ যখন ইহুদিদেরকে কায়দা করে খেদানো শুরু করলো, তখন থেকেই শুরু হয় ফিলিস্তিনিদের দুর্দিন। ইহুদি রাষ্ট্র কায়েমের নামে পশ্চিমারা একটি দেশ দখলে মদদ দিয়ে আসছে ১৯৪৮ সাল থেকে আজ পর্যন্ত। জাতিসঙ্ঘ সিস্টেম করে দিয়েছে। ফিলিস্তিন তো এখন ইসরায়েল! আর ফিলিস্তিনিরা হয়েছে শরণার্থী। বিশ্বজুড়ে এমন অরাজকতা কেবল যুক্তরাষ্ট্রের মদদেই সম্ভব হয়েছে।
অন্যদিকে ইয়োরোপ এমন একটি মহাদেশ, যেখানে প্রবেশ করলে আপনি হয়ে যান শরণার্থী। কিন্তু ইয়োরোপ থেকে কেউ অন্য অঞ্চলে গেলে তারা হয়ে যায় সেদেশের (কলোনিয়াল) শাসক, অথবা নূন্যতম নাগরিক। শাসক হবার দিন শেষ হয়েছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর। তারপরই তাদের শরণার্থী হবার পালা শুরু হয়েছে। কিন্তু ভাগ্য তাদের সবসময় ভালো থাকে। শরণার্থী হয়ে এসে ইহুদিরা ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গ্রাস করে নিলো! আর প্রতি বছরের ১৫ মে ফিলিস্তিনিরা পেলো নাকবা বার্ষিকী (আরবি 'নাকবা' মানে বিপর্যয়)।
------------------
পাদটীকা ১: জর্ডান কেন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের সমর্থক হয়েও ইসরায়েলকে কিছু বলছে না? উত্তরে বলা যায়, কিছু তো বলছেই! কিন্তু অফিশালি বলছে না। প্রথমত, জর্ডান একটি নিরপেক্ষ, শান্তিকামী রাষ্ট্র এবং মধ্যস্থতাকারী রাষ্ট্র। দ্বিতীয়ত, কৌশলগতভাবে ছোট্ট রাষ্ট্র জর্ডান চায় না প্রতিবেশি এবং সামরিক শক্তিধর ইসরায়েল ক্ষেপে ওঠুক।
পাদটীকা ২: ফিলিস্তিন এবং জর্ডানের পতাকা কেন এক? বলেছি যে তারা সহোদর, সিরিয়াস টাইপের! ঐতিহাসিকভাবে জর্ডান হলো ফিলিস্তিনের ম্যানডেট। যুক্তরাজ্য কর্তৃক নিযুক্ত এবং জাতিসঙ্ঘের অনুমোদিত। অর্থাৎ অটোম্যানদের বিপক্ষে জর্ডান একই আরব বিদ্রোহের কমরেড। 'প্যান-আরব কালার' সেখান থেকেই এসেছে।
১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:২০
মাঈনউদ্দিন মইনুল বলেছেন:
হুম। রাজাই তো ভালো। রাজতন্ত্র যেখানে, সেখানে এখনও মানুষ ভালো আছে। গণতন্ত্র দিয়ে কী পেলাম!
২|
১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:১২
মনিরা সুলতানা বলেছেন: শরণার্থী হয়ে এসে ইহুদিরা ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গ্রাস করে নিলো! আর প্রতি বছরের ১৫ মে ফিলিস্তিনিরা পেলো নাকবা বার্ষিকী (আরবি 'নাকবা' মানে বিপর্যয়)।
![]()
১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:১৭
মাঈনউদ্দিন মইনুল বলেছেন:
কিছু করার নেই, বেহেনজি! কারণ পৃথিবীতে সব মন্দলোক একজোট, কিন্তু ভালো মানুষেরা বিচ্ছিন্ন। শুধু তাই নয়, তারা একা! ![]()
৩|
১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:১৭
শেরজা তপন বলেছেন: কিছু বুঝলাম-কিন্তু পুরো ব্যাপারটা খোলসা হোল না।
১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:১৮
মাঈনউদ্দিন মইনুল বলেছেন:
কিছু তো বুঝলেন! ধন্যবাদ ![]()
৪|
১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:২২
বিজন রয় বলেছেন: আপনি তো একটি নতুন পোস্ট দিতে পারেন।
প্রিয় ব্লগার?
১৬ ই অক্টোবর, ২০২৫ বিকাল ৫:০৯
মাঈনউদ্দিন মইনুল বলেছেন:
মহামান্য কবি, কেমন আছেন? ভালোবাসা জানবেন!
"কবিতায় আর কি লিখব?/ যখন বুকের রক্তে লিখেছি
একটি নাম/ বাংলাদেশ।"
(শহীদ স্মরণে: কবি মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান)
৫|
১০ ই অক্টোবর, ২০২৫ রাত ১২:৪৭
খায়রুল আহসান বলেছেন: যাক, আপনার এ পোস্টের সুবাদে অজানা জর্দানের রাষ্ট্রীয় পলিসি/ মূলনীতি সম্বন্ধে কিছুটা তো জানা হলো! এ জন্যেও অনেক ধন্যবাদ আপনার প্রাপ্য। নেপালে এখন আপনার দিনকাল কেমন কাটছে?
সাবধানে থাকবেন। সময় সুযোগ করে এ ব্লগে নেপালি কৃষ্টি, সংস্কৃতি, আচার ব্যবহার এবং আমাদের প্রতি তাদের মনোভাব (খাঁটি মনোভাব, কেবলই স্তুতিমূলক নয়) সম্বন্ধে জেনে জানাবেন বলে আশা রাখছি।
১৬ ই অক্টোবর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৫
মাঈনউদ্দিন মইনুল বলেছেন:
স্তুতি ছাড়া যে কিছুই ভালো লাগে না, প্রিয় লেখক, কীভাবে কী লেখি? তবে এখানে আবহাওয়া আর আদবকায়দা নিয়ে স্তুতি ছাড়া কিছু বলার নেই। শীতের কাপড় পড়তে শুরু করেছি যা গরম দেশের মানুষ হিসেবে অনেক স্বস্তির বিষয়!
দোয়া করবেন যেন ডিসেম্বরের শীতকে জয় করে নতুন বছরে উত্তীর্ণ হতে পারি।
পাবলিক প্লেসে একটি স্বাধীনদেশ নিয়ে সব বলা যায় না, বিশেষত বিভিন্নদেশের সহকর্মীদের মনের কথা চিন্তা করে।
বাংলা ব্লগে অবশ্য মন খুলে লেখতে পারবো।
দেখি কীভাবে শুরু করা যায়, আপনার মতো সহজভাবে জীবনের গল্প লেখতে পারলে কত ভালো লাগতো!
অনেক শুভেচ্ছা রইলো!
৬|
১০ ই অক্টোবর, ২০২৫ বিকাল ৫:৪১
বিজন রয় বলেছেন: আপনি ব্লগে?
ব্যাপার কি?
দিনে চাঁদ উঠলো নাকি!!!!
১৬ ই অক্টোবর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৭
মাঈনউদ্দিন মইনুল বলেছেন:
কবি, 'তাওয়া গরম' হোক! কেমন?
এবিষয়ে আপনি নিশ্চয়ই একটি কবিতা লেখে ফেলতে পারেন। আকাশের চাঁদ যেখানেই থাকুক!
©somewhere in net ltd.
১|
১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৯
ঢাবিয়ান বলেছেন: জর্দানে রাজতন্ত্র বিদ্যমান । হাশিমি রাজপরিবার ১৯২১ সাল থেকে জর্ডান শাসন করে আসছে। সৌদি রাজপরিবারের মতই জর্দানের রাজপরিবারও ইসরাইলের মিত্র।