![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সেই ১৮৯০-৯১ সালের দিকে যখন চলচ্চিত্র শিল্পের যাত্রা শুরু হয় তখন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বয়স ত্রিশের কোঠায়। এরপর বয়সকালে দেশ-বিদেশে সফররত অবস্খায় তিনি এই শিল্প মাধ্যমটির অভিনবত্ব দেখে মুগ্ধ হন। ‘পশ্চিম যাত্রীর ডায়েরী' রচনায় তার চলচ্চিত্রের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে সু-স্পষ্ট বর্ণনা করেছেন।
রবীন্দ্রনাথের জার্মানী ভ্রমণকালে ‘ইউএফএ' নামক জার্মানীর একটি কোম্পানী একটি চিত্রনাট্য লিখে দেয়ার জন্য কবিকে অনুরোধ করেন। তখন তিনি ‘দ্যা চাইল্ড' (শিশুতীর্থ) নামক একটি চিত্রনাট্য রচনা করেন।
বাংলা চলচ্চিত্রের প্রথম যুগ অর্থাৎ নির্বাক যুগ থেকেই রবীন্দ্রনাথের বিভিন্ন সাহিত্য কর্ম অবলম্বনে চলচ্চিত্র নির্মাণ শুরু হয়। রবীন্দ্রনাথের সাহিত্য অবলম্বনে নির্মিত চলচ্চিত্রগুলো দর্শক মনকে তেমনভাবে আকৃষ্ট করতে পারেনি। বেশির ভাগ চলচ্চিত্রই সার্থকতার পরিচয় দিতে ব্যর্থ হয়েছে।
সবাক যুগে এসেও যে সার্থক হয়েছে তা বলা যাবে না। অর্থাৎ সবাক যুগের প্রথম দিকটাও ছিলো ব্যর্থতার অকারে ঢাকা। ১৯৪৭ সাল থেকে পরবর্তী ২৪ বছরে হিন্দি ও অন্যান্য আঞ্চলিক ভাষা মিলিয়ে রবীন্দ্রনাথের কাহিনী অবলম্বনে ছয়টির মতো চলচ্চিত্র নির্মিত হয়। এগুলোর মধ্যে কয়েকটি সাফল্য পেলেও শিল্পের বিচারে তা ছিলো খুবই সামান্য।
পরিচালক নরেশচন্দ্র মিত্র ১৯২৩ সালের দিকে রবীন্দ্রনাথের কাহিনী অবলম্বনে প্রথম নির্বাক চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। যেটির নাম দেয়া হয় ‘মানভঞ্জন'। অবশ্য চলচ্চিত্রটি সাফল্য অর্জনে ব্যর্থ হয়। সেই ব্যর্থতা দিয়ে শুরু। এরপর ১৯২৭ সালের দিকে রবীন্দ্রনাথের ‘বিসর্জন' নাটক অবলম্বনে সাত রিলের একটি চলচ্চিত্র তৈরি করা হয়। নাট্যাচার্য শিশির কুমার ভাদুড়ী ১৯২৯ সালের দিকে ‘বিচারক' নামে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। যেটির রচনাকারীও ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। এর পরের বছর ‘ডালিয়া' নামের একটি রবীন্দ্র-চলচ্চিত্র নির্মিত হয়। এর দুই বছর পর নরেশচন্দ্র মিত্রের দ্বিতীয় চলচ্চিত্র ‘নৌকাডুবি' মুক্তি পায়।
সবাক যুগের প্রথম চলচ্চিত্র ছিল ‘চিরকুমার সভা'। এটি নির্মিত হয় ১৯৩২ সালের দিকে। এরপর থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত অর্থাৎ ৫৮ বছরে প্রায় ৪০টিরও অধিক রবীন্দ্র চলচ্চিত্র নির্মিত হয়। সবাক যুগের প্রথম রবীন্দ্র চলচ্চিত্রটির নির্মাতা ছিলেন প্রখ্যাত সাহিত্যিক প্রেমাঙ্কুর আতর্থী। চলচ্চিত্রটি অবশ্য বিরূপ সমালোচনার শিকার হয়েছিল। শান্তিনিকেতনের ছাত্র-ছাত্রীদের পাত্র-পাত্রী করে দীনেন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘নটীর পূজা' চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছিলেন।
১৯৩৮ সাল থেকে শুরু করে পরবর্তী ১৭ বছরের মধ্যে ‘গোরা', ‘চোখের বালি', নৌকাডুবি', ‘দৃষ্টিদান' ‘শেষের কবিতা'সহ মোট ১০টি চলচ্চিত্র মুক্তি পায়। ১৯৪৭ সালে মুম্বাইয়ে নীতিন বসু ‘নৌকাডুবি' চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করেন। যা সার্থক রবীন্দ্র চলচ্চিত্র হিসেবে পরিগণিত হয়। এর পরের বছর তারই পরিচালনায় নির্মিত হয় ‘দৃষ্টিদান' চলচ্চিত্রটি। রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টির মধ্যে ক্লাসিক চলচ্চিত্র হচ্ছে ‘শেষের কবিতা।' যেটি মধু বসুর পরিচালনায় ১৯৫৩ সালের দিকে মুক্তি পায়। এর তিন বছর পর দেবকী কুমার বসুর পরিচালনায় নির্মিত হয় ‘চিরকুমার সভা'। দর্শকপ্রিয়তা এবং প্রশংসা দু'টিই পেয়েছে এই চলচ্চিত্রটি। একই চলচ্চিত্র দুইবার নির্মাণ হলেও আগেরটি (১৯৩২ সালে)র চেয়ে অধিক জনপ্রিয়তা লাভ করে। রবীন্দ্রনাথের বিখ্যাত গল্পের সর্বজনগ্রাহ্য রূপ পর্দায় প্রতিফলন করার চেষ্টায় একই বছর মুক্তি পায় তপন সিংহ পরিচালিত চলচ্চিত্র ‘কাবুলিওয়ালা'। এরপর তার পরিচালনায় ‘ক্ষুধিত পাষাণ' এবং ‘অতিথি মুক্তি'চলচ্চিত্র দু'টি মুক্তি পায় যথাক্রমে ১৯৬০ এবং ১৯৬৫ সালের দিকে। অগ্রগামী গোষ্ঠীর পরিচালনায় ‘নিশীথে' চলচ্চিত্রটিও এ বছরই মুক্তি পায়। ‘অর্ঘ্য' নামে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করা হয় রবী ঠাকুরের চার কবিতা অবলম্বনে। দেবকী কুমার বসুর পরিচালনায় এ চলচ্চিত্রটি মুক্তি পায় রবীন্দ্রনাথের জন্মশতবর্ষে। এ বছর অবশ্য আরও একটি অসাধারণ চলচ্চিত্র নির্মিত হয়। সত্যজিৎ রায়ের পরিচালনায় নির্মিত হয় ‘তিন কন্যা' নামক রবীন্দ্র চলচ্চিত্রটি। ‘ পোস্টমাস্টার', ‘মনিহার' এবং ‘সমাপ্তি'- এই তিনটি গল্প অবলম্বনে নির্মিত হয় ‘তিন কন্যা' নামক চলচ্চিত্রটি। সত্যজিৎ রায়ের পরিচালনায় ১৯৬৪ সালে ও ১৯৮৫ সালে ‘চারুলতা' ও ‘ঘরে-বাইরে' নামক চলচ্চিত্র দু'টি নির্মিত হয়। এদের মধ্যে ‘চারুলতা'ই শ্রেষ্ঠ এবং সিনেমাটিক গুণসম্পন্ন বলে অনেকে তখন অভিমত দিয়েছেন। অবশ্য চলচ্চিত্রটিকে সত্যজিৎ রায় প্রশংসা পাবার যোগ্য করেই তৈরি করেছেন।
এর মাঝে অবশ্য আরও বেশ কিছু চলচ্চিত্র নির্মিত হয় রবীন্দ্র সাহিত্য অবলম্বনে। সেগুলোর মধ্যে পার্থ প্রতিম চৌধুরীর ‘শুভা ও দেবতার গ্রাস' (১৯৬৪) অরুতী দেবীর ‘ মেঘ ও রৌদ্র (১৯৬৯), মৃণাল সেনের ইচ্ছাপূরণ' (১৯৭০), অজয় করের ‘মাল্যদান (১৯৭০), ‘নৌকাডুবি' (১৯৭৪), স্বদেশ সরকারের ‘শাস্তি' (১৯৭০), বীরেশ্বর বসুর ‘বিসর্জন' (১৯৭৪) এবং স্বদেশ সরকারের পরিচালিত চলচ্চিত্র ‘দিদি'-ই ছিল উল্লেখ করার মতো।
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের প্রযোজনা এবং সন্তোষ ঘোষালের পরিচালনায় ১৯৮৬ সালে নির্মিত হয় ‘ছেলেটা'। রবী ঠাকুরের কাহিনী অবলম্বনে নির্মিত ‘ চোখের বালি' ভারতে এখন পর্যন্ত সর্বশেষ রবীন্দ্র চলচ্চিত্র। আর আমাদের দেশে রবীন্দ্র সাহিত্য অবলম্বনে চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন প্রখ্যাত পরিচালক চাষী নজরুল ইসলাম। তবে বাঙলা চলচ্চিত্রের বেশ খানিকটা সময় খুব খারাপ কেটেছে। অশ্লীলতায় ভরে ওঠেছিল চলচ্চিত্র অঙ্গন। এখন অবশ্য পরিচালকরা ভালো ছবি নির্মাণের জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। ভালো চলচ্চিত্রের কাহিনী এখন হতে পারে রবীন্দ্রনাথের সাহিত্যকর্ম অবলম্বনে। নির্মিত হতে পারে রবীন্দ্র চলচ্চিত্র। আবার প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে স্ব-পরিবারে বাঙলা চলচ্চিত্র দেখবে মানুষ। মানুষ আরও বেশি করে জানতে পারবে রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে, তার সৃষ্টি কর্ম সম্পর্কে।
(তথ্যসূত্র: দেশ পত্রিকা)
২| ০৫ ই জুন, ২০০৮ সকাল ১১:৩৯
স্বাক্ষর শতাব্দ বলেছেন: প্রিয় পোস্টে গেল
৩| ১৮ ই জুলাই, ২০০৮ সকাল ৯:২৬
বিবর্তনবাদী বলেছেন: খুব ভাল লাগল। প্রিয়তে+++++
©somewhere in net ltd.
১|
০৫ ই জুন, ২০০৮ সকাল ৮:০৩
আশরাফ মাহমুদ বলেছেন: ধন্যবাদ