![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মাথার মধ্যে যা আসে তা দমিয়ে রাখতে না পারার নামই আবর্জনা। আমি লিখি- কখনোই তা লেখা বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করিনি। তবু লিখছি- স্বপ্ন ভাঙা এক আগন্তুক আমি।
যেখানে শুনবেন- ‘বিচার চাই! সেখানেই জানবেন- বিচার নাই।
চমকে যাচ্ছেন? সারাদেশে আজ বিক্ষোভ-মানব বন্ধন, প্রতিবাদ সমাবেশে উত্তাল। দাবি একটাই- তনু হত্যার বিচার চাই! আমরা দেখেছি, যতবার বিচার চেয়েছি, ফলাফল শুন্যের কোঠায়। প্রতিদিন কতই তো বিচার চাচ্ছি- বিচার পাচ্ছি কিংবা পেয়েছি কি? তবে কী শর্ষের মধ্যেই ভূত?
১.
মার্চ মানেই আমাদের কাছে বীভৎস একটি অধ্যায়। এর সাথে নতুন করে যোগ হয়েছে গত ২০ মার্চ রাতের কুমিল্লা সেনানিবাস এলাকায় খুন হওয়া ভিক্টোরিয়া কলেজের স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী তনুর ঘটনাটি। ধর্ষণের পর তাকে হত্যা করা হয়েছে আমরা সবাই জানি তারপরেও আসামি ধরতে সরকারের যত গড়মসি। এখনো পর্যন্ত কোনো অপরাধীকে ধরা সম্ভব হয় নি। সরকার যে ধরণের তালবাহানা করছে তাতে করে মনে হচ্ছে আধো বিচার হবে কিনা।
এই ঘটনায় তনুর বাবা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডর কর্মচারী ইয়ার আলী অজ্ঞাতনামা আসামি করে একটি মামলা করলেও খুনিরা এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে। হয়ত এর পেছনে কোনো কারণ আছে যা সরকারই ঘোলাটে করছে।
এরপরই আমাদের সকলের আদরের মেধাবী শিক্ষার্থী তনুর খুনিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে সোচ্চার হয় পুরো দেশ। সোশ্যাল মিডিয়াতেও প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। কেউ চুপ করে নেই শুধু টেরা চোখের সরকার ছাড়া।
তবে হাতচালাচালি বন্ধ নেই, আজ এ দপ্তরে কাল ও দপ্তরে। দেখে মনে হচ্ছে ফিফার কোনো জমজমাট ফুটবল ম্যাচ। আসলে দোষ ওদের না দোষ তনুর। তনু নারী, তনুর দোষ সে হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান, তনুর দোষ সে জীবিকার জন্য বের হয়ে কিছু কুকুরের চাহিদা মেটাতে সক্ষম হয়নি। তা না হলে কেনো সেনানিবাসের মতো সুরক্ষিত এলাকায় এ ধরনের ঘটনার পরও পুলিশ ও সেনাবাহিনী চুপ?
অবশ্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান তুঘলকি কায়দায় বলে বেড়াচ্ছেন, “নিরাপত্তা বাহিনীর উপর জনগণের বিশ্বাস, আস্থা অলরেডি এসেছে। যত ঘটনা ঘটেছে সবগুলো সবাইকে অবহিত করা হয়েছে। একইভাবে তনুর হত্যার পেছনের ঘটনাও আসি আসছি করছে। কি হাস্যকর আমরা প্রকৃত অপরাধীদের বিচার দাবি করছি অন্যদিকে সরকারের এই মাথামোটা মন্ত্রী শুধু ঘটনা নিয়েই পড়ে আছে। নাকি মন্ত্রীমহোদয়ের উপর অন্য চাপ আছে তা আমাদের বোধগম্য নয়।
গত কিছুদিন আগে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, তনু হত্যার কারণ ‘উদঘাটনের কার্যক্রম’ শুরু হয়েছে তবে কবে নাগাদ শেষ হবে তা বলেনি। কতটা হাস্যকর, যে সেনাবাহিনীর দিকে সন্দেহের তীর তারাই নাকি পুলিশ ও প্রশাসনকে সর্বাত্মক সহযোগিতা দিবে?
২.
বাংলাদেশে কুমিল্লা সেনানিবাস এলাকায় একজন শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার অভিযোগ তুলে কুমিল্লা এবং রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে বিভিন্ন সংগঠন বিক্ষোভ করছে। আমরাও স্থানীয় ভাবে দুটো মানব বন্ধন ও প্রতিবাদ বিক্ষোভ সমাবেশ করেছি। পলাশ দে’র নেতৃত্বে শ্রীপুরে ও শেখ মোহাম্মদ জসীম উদ্দীন এর নেতৃত্বে মাওনা চৌরাস্তায় মানব বন্ধন হয়। দুদিনই বৃষ্টি উপেক্ষা করে সব শ্রেণিপেশার মানুষ স্বতঃপূর্তভাবে কর্মসূচী পালন করে। সবার সাথে আমরাও তনুর হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত এবং বিচার দাবি করেছে।
প্রসঙ্গত গত ২০ তারিখ কুমিল্লা সেনানিবাসেরই বাসিন্দা সোহাগী জাহান তনু নামের ঐ শিক্ষার্থীর মৃতদেহ পাওয়া যায় ।
নারী অধিকার আন্দোলনকারীরা বলেছেন, আগে ধর্ষণের জন্য নারীদের পোশাক-আশাককে দায়ী করা হতো। এখন এই ঘটনার পর পোশাকের শালীনতার সঙ্গে ধর্ষণের যোগাযোগ কতটা সম্পর্কিত তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
সোহাগী জাহান তনুর বাবা কুমিল্লা সেনানিবাসে বোর্ডে একজন সামান্য বেতনের বেসামরিক কর্মচারী। সেই সুবাদে সেনানিবাসে কোয়াটারে তাদের বসবাস । তিন ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট সোহাগী জাহান তনু কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে ইতিহাস বিভাগে দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ছিল। তাঁকে ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগ তুলে তাঁর কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা প্রতিদিনই বিক্ষোভ করেছে। ঢাকাতেও শাহবাগ এলাকায় গণজাগরণ মঞ্চ এবং ছাত্র ইউনিয়নসহ বিভিন্ন সংগঠন বিক্ষোভ করছে। বিক্ষোভ অব্যাহত আছে।
হায়রে বাংলাদেশ! যে সোহাগী জাহান তনু লেখাপড়ার পাশাপাশি তাঁর কলেজে নাটকসহ সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত ছিল।
টানাটানির সংসারে যে কুমিল্লা সেনানিবাসের ভিতরেই টিউশনি করে নিজের খরচের কিছুটা যোগাতেন। প্রতিদিনের মত ২০ই মার্চ টিউশনি করতে গিয়েছিল কিন্তু রাত আটটাতেও না ফিরলে তাদের মা খুঁজতে যান। যে পথ দিয়ে টিউশনির বাসায় যেতেন, সেই পথেই সেনানিবাসের ভিতরে একটি কালভার্টের নীচে মৃতদেহ পাওয়া যায়। তারপরেরটুকু সবাই ভালো জানেন।
অন্যদিকে ঘটনার ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ পরিষ্কার করে কিছুই বলছে না। আর এই নিরবতাই বিষয়টাকে ভিন্নখাতে নেওয়ার চেষ্টা চলছে। দানা বাধছে সন্দেহর। প্রশ্ন হচ্ছে তনু হত্যার অথবা তনুদের হত্যাকারীদের বিচার আধো হয়েছে কি কিংবা হবে কী??
কুমিল্লা জেলার পুলিশ সুপার শাহ আবিদ হোসেন বলেছেন, ধর্ষণের চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে হত্যা করা হতে পারে ,পুলিশ প্রাথমিকভাবে এমন ধারণা করছে। তদন্তের স্বার্থে এখনই তিনারা বিস্তারিত বলতে রাজি নন। বিবেগের কাছে প্রশ্ন করুন, আচ্ছা আপনারা আর কত তদন্ত করবেন? এভাবে তদন্তের মূলা ঝুলিয়ে আর কত ছোলা খাওয়াবেন? প্লিজ তদন্তের নামে আমাদের ধৈর্যচুত করবেন না।
অন্যদিকে আজ হেফাজত কই? কই আপনাদের মতিঝিল অবরোধ? কোথায় আপনাদের জোর করে পড়ানো হিজাবের জন্য ধ্বংসাত্বক কার্যকলাপ? সোহাগী জাহান তনুও তো হিজাব পড়ত। যা সামাজিক নেটওয়ার্কে প্রকাশ হয়েছে।
তাহলে সে কেনো ধর্ষণের স্বীকার হলো? মানলাম সে জীবিকার জন্য রাস্তায় বের হয়ে অন্যায় করেছে,ধর্ষিত হয়েছে। তাহলে যেসব ধর্ষণ চার দেয়ালের মধ্যে হয় তার দায় কি হেফাজতিরা নিবেন? আর প্রধানমন্ত্রী আপনিই বা চুপ কেনো? আপনি না নারী? নাকি থলের বিড়াল বের হয়ে যাবে? নাকি আমরা আপনার এই চুপ থাকাকে ধরে নিব, সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে কিছু বললে আপনার অবৈধ মসনদ হাতছাড়া হয়ে যাবে? প্লিজ, দয়া করে আমাদের চুপ করান।
নারী অধিকার নিয়ে আন্দোলনকারী সংগঠনগুলো বলছে, এর আগে কোনো নারী ধর্ষণের শিকার হলে তার পোশাক নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলতেন।এখন সেই প্রশ্ন অবান্তর বলে মনে করেন নারী আন্দোলনের অন্যতম একজন নেত্রী ফরিদা আকতার। তিনি বলেছেন, “যারা নারীদের ওপর শারীরিকভাবে আক্রমণ করে, পোশাক বা বয়স কোন কিছুই তাদের কাছে বিষয় নয়। এটা বাংলাদেশসহ আন্তর্জাতিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে”।
ফরিদা আকতার আরও বলেছেন, “ধর্ষণের শিকার নারীর পোশাককে যারা দায়ী করতে চায়, তারা আসলে ক্ষতিগ্রস্ত নারীকে দোষী বানাতে চায়। তারা নারীর বিরুদ্ধেই কথা বলে”।
দেখা গেছে কিছু কিছু ধর্ষণের ঘটানা ঘিরে সামাজিক নেটওয়ার্ক ফেসবুকে কিছু তৎপরতা দেখা দিলেও অনেক ঘটনাই টাকার কাছে ধামাচাপা পড়ে যায়। মূলধারার সংবাদমাধ্যমে এসব ঘটনা নিয়ে সেভাবে খবর চোখে পড়ে না। তবে তনুর ঘটনায় অনেকের টনক নড়েছে। আমরা চাই সরকারেরও টনক নড়ুক। সবকিছু জবাবদিহিতার মধ্যে আসুক। আমরা চাই তনু হত্যার ঘটনার যেনো আর পুনরাবৃত্ত না হয়। আর যেনো কোনো তনুকে এভাবে জীবন দিতে না হয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের একটাই দাবী।
____
কবিও লেখক, সম্পাদক
দৈনিক গণমাধ্যম, দৈনিক ইনসাফ বার্তা ও মাসিক আগন্তুক।
২| ১৯ শে এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১২:০৮
আগন্তুক কবি বলেছেন: বিষয়টি অন্য ভাবে ভাবা যায় না?
©somewhere in net ltd.
১|
০২ রা এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১২:০৭
নতুন বলেছেন: এরকমের একটা হত্যাকান্ডে যদি পযাপ্ত ক্লু না থাকে তবে কিভাবে পুলিশ হত্যাকারীকে গ্রেপ্তার করবে?
তনুর বাড়ী বেশ কাছেই হত্যা করেছে। তাকে আঘাত করে হত্যা করা হয়েছে সেটা কোন রাগ/আক্রস থেকে।