নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মোহা. মাসুদ

সাদামাটা এক লোকটার সম্পূর্ণ নাম- মোহাম্মদ মাসুদ।

মোহা. মাসুদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

জঙ্গিবাদ নির্মূল : প্রয়োজন সাংস্কৃতিক চর্চা ও সচেতনতা

০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১০:০৩


জঙ্গিবাদ নির্মূল : প্রয়োজন সাংস্কৃতিক চর্চা ও সচেতনতা
মোহাম্মদ মাসুদ

আজ বিশ্বপরিমণ্ডলে সমস্যার আরেক নাম— জঙ্গিবাদ। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে জঙ্গিবাদ-ইস্যুটি গুলশান হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্ট ও শোলাকিয়া ঈদগাহে হামলার ভেতর দিয়ে সরকার-প্রশাসন থেকে সর্বমহলে নজর কাড়ে। ধর্মের মোহকে মাত্রাতিরিক্ত আবেগে আচ্ছন্ন করে একশ্রেণির স্বার্থান্বেষী মহল একঝাঁক তরুণকে এক্ষেত্রে ব্যবহার করছে। একসময় জঙ্গিবাদের উত্থান হিসেবে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত করা হলেও বর্তমানে এর সাথে জড়িয়ে পড়ছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ। যেখানে জড়িয়ে আছে- শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্যের নাম পর্যন্ত। আধুনিকতা যখন শিখরের চূড়ায় তখন আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত একদল বিপদগামী শিক্ষার্থী ধর্মীয় তকমা লাগিয়ে পরকালের বেহেস্ত-বাগানের জন্য মানবতার বাগানকে ভস্মিত করে দিচ্ছে। আমরা দেখেছি, গুলশান হামলার পূর্বে, ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট দেশের ৬৩ জেলায় জঙ্গি সংগঠন জামাতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) দেশজুড়ে একসাথে যে সিরিজ বোমা হামলার চালায়; তা ছিল দেশের ইতিহাসে বৃহৎ নিকৃষ্ট জঙ্গি হামলা। দেশব্যাপী সেই একের পর এক পাশবিক বোমা হামলায় তখন বিচারক, আইনজীবী, পুলিশ, সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তাসহ ৩৩ জন প্রাণ হারান। আহত হয় প্রায় চার শতাধিক লোক। আজ দেশে নিষিদ্ধ ছয় জঙ্গি সংগঠনসহ প্রায় বিশটি জঙ্গি সংগঠন সক্রিয় আছে বলে মনে করা হয়, বিভিন্ন সংস্থা থেকে। এসব বর্বরোচিত ঘটনাগুলোর সাথে জড়িত আমাদের সমাজেরই কেউ না কেউ। হয়তো সে আমাদের সন্তান, না হয় ভাই-বোন, বন্ধু, ছাত্র। আজ আমাদেরকেই দায়িত্ব নিতে হবে, আলোর পথে সুন্দরের পথে তাদেরকে ফিরে আনার জন্য। গুলশান হামলার পর সরকারও দেশব্যাপী জঙ্গিবাদ রোধে পুরোপুরি সক্রিয় রয়েছে। গত ৮ অক্টোবর গাজীপুরের দুটো এলাকায় এবং টাঙ্গাইলে পৃথক তিনটি অভিযানে সন্দেহভাজন ১১ জন জঙ্গি নিহত হয়েছে। এরপূর্বে আমরা দেখেছি গুলশানের সেনাবাহিনীর প্যারাকমান্ডোর নেতৃত্বে "অপারেশন থান্ডারবোল্ট"র সাফল্যের পাশাপাশি কল্যাণপুরের জঙ্গি আস্তানায়, নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়া গুলশান হামলার মাস্টারমাইন্ড তামিম চৌধুরীসহ তিন জঙ্গির আস্তানা ও মিরপুরের রূপনগরের তামিমের সেকেন্ড ইন কমান্ড নামে পরিচিত মেজর মুরাদের (মেজর জাহিদুল ইসলাম) আস্তানা শনাক্ত ও নির্মূল করতে সফলতা লাভ করে প্রশাসন। জঙ্গিরোধে এই অপারেশন প্রশাসন চালিয়ে যেতে হবে।
মুসলিম প্রধান দেশ, ধর্মভীরুতা, দারিদ্রতা, বেকারত্ব, সংস্কৃতি চর্চা ও ঐতিহ্য লালনে অবহেলায়ই দেশে জঙ্গিবাদ সৃষ্টির কারণ হিসেবে আখ্যায়িত করা যায়। একসময় পাড়া-মহল্লায়, গ্রাম-গঞ্জে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে- সংগীত, পুঁথিপাঠ, আবৃত্তি, নাটক ও অভিনয় প্রভৃতি নানান ধরনের চর্চা হতো; যার ভেতর দিয়ে উঠে আসতো বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাস-ঐতিহ্য। বলা যায়, শিক্ষাঙ্গনসহ সর্বত্র থেকে সংস্কৃতি চর্চার সেই ঐতিহ্য হারিয়ে গেছে।
জঙ্গিরা যে সূত্রধরে বাংলার বুকে নিজ ধর্ম কায়েম করতে চায়, সেই বাংলার ভূখণ্ড কখনই ধর্মীয় বেড়ায় আবদ্ধ ছিলনা। “আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম// আমরা আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম// গ্রামের নওজোয়ান হিন্দু মুসলমান// মিলিয়া বাউলা গান আর মুর্শিদি গাইতাম।”— বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিমের এই গানের মর্মার্থ বুঝতে ব্যর্থ আধুনিক-সমাজ। আজ বাংলাদেশের বুক থেকে জঙ্গিবাদ শিকড়সহ উপড়ে ফেলতে হবে। যার জন্য, সর্বত্র লালন করতে হবে ইতিহাস-ঐতিহ্য, চর্চা করতে হবে সংস্কৃতির। আজ যেভাবে জঙ্গি-বিরোধী সভা-সমাবেশ, মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হচ্ছে নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখতে হবে। আজ বাংলাদেশের প্রতিটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে যেমন সংস্কৃতি ও ইতিহাস-ঐতিহ্য চর্চার প্রাণ-ভূমি বানাতে হবে পাশাপাশি প্রত্যেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগ চালু করতে হবে। আজ নিজ ভাষা অবহেলাসহ অপসংস্কৃতি চর্চাও এই জঙ্গি উত্থানের জন্য দায়ী। আজ সর্বপ্রথম জঙ্গি রোধে দায়িত্ব নিতে হবে পরিবারকে। প্রত্যেক অভিভাবকের দায়িত্ব, তার সন্তানকে প্রথম তার সংস্কৃতি চর্চার পাশাপাশি ইতিহাস-ঐতিহ্যের জ্ঞানে সমৃদ্ধ করা। সর্বোচ্চ সচেতন থাকতে হবে সন্তানের প্রতি। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান, সামাজিক-সাংস্কৃতিক অঙ্গ-সংগঠনসমূহের পাশাপাশি প্রত্যেক সচেতন নাগরিককে জঙ্গিরোধে প্রতিটি পাড়া-মহল্লায়, প্রত্যন্ত অঞ্চলে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। তাহলেই প্রকৃত অর্থে জঙ্গি-রোধ সম্ভব হবে। আর মানুষে মানুষে পরিপূর্ণ হবে এই সবুজ-শ্যামল বাংলাদেশ।

লেখক : প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট। [প্রকাশিত: ভোলার কণ্ঠ, নভেম্বর ২০১৬ ও এসএনএন২৪.কম, লিংক: http://www.snn24.com/sn-3572]

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১০:৩৪

যোগী বলেছেন:
ছবিটা কার?
এই রকম ছবি কেমনে তুললি একটু শেখাবি?

০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ২:০৪

মোহা. মাসুদ বলেছেন: কবে শিখবি বল।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.