![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বেগম রোকেয়া : বাঙালির চিন্তা-চেতনায় উৎকর্ষতা
মোহাম্মদ মাসুদ
“আমরা সমাজেরই অর্ধঅঙ্গ। আমরা পড়িয়া থাকিলে সমাজ উঠিবে কিরূপে? কোন ব্যক্তির এক পা বাঁধিয়ে রাখিলে, সে খোঁড়াইয়া খোঁড়াইয়া কতদূর চলিবে? পুরুষদের স্বার্থ এবং আমাদের স্বার্থ ভিন্ন নহে-একই ”। নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার কথা এভাবেই উচ্চারিত করেন নারীসমাজের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন (১৮৮০-১৯৩২) তাঁর ‘স্ত্রী জাতির অবনতি’ প্রবন্ধে। আজ ৯ ডিসেম্বর। রোকেয়া দিবস। ১৮৮০ সালের এই দিনে রংপুর জেলার মিঠাপুকুর থানার পায়রাবন্দ গ্রামে জহীরুদ্দিন মোহাম্মদ আবু আলী হায়দার সাবের ও রাহাতুন্নেসা সাবেরা চৌধুরানীর কোল জুড়ে পৃথিবীর আলো দেখেন নারী জাগরণেরর পথিকৃৎ বেগম রোকেয়া।
তিনি বুঝার পর থেকেই অনুমান করেন পুরুষ শাসিত সমাজে নারীর অবস্থান কোথায় এবং তা কতটা অসম্মানবোধের। সে সময় নারীরা পর্দা-প্রথার আইনে ছিল আবদ্ধ; চারদেয়াল বা চার বেষ্টনীর মধ্যে। নারীদের পুরুষদের সাথে কথাবলার মধ্যেও ছিল সীমাবদ্ধতা। বাড়ির বাইরে অবাধ বিচরণে ছিল নিষেধাজ্ঞা। শিক্ষার ক্ষেত্রে- পাঠশালা বলতে ছিল বাড়ির আঙ্গিনাই; সেখানেও ছিল সীমাবদ্ধতার দেয়াল। বাড়িতেই নারীদের আরবি শিক্ষা শিক্ষিত করা হতো। আর সর্বোচ্চ উর্দু বা ফারসি ভাষা শেখানো হতো। অন্যদিকে একজন পুরুষ পরিবার থেকে শুরু করে রাষ্ট্র পর্যন্ত সর্বক্ষেত্র থেকেই সর্বোচ্চ সুবিধা ভোগ করে। এটা অবশ্য পুরুষশাসিত সমাজ বলেই সম্ভবপর ছিল। তিনি নারী শিক্ষার গুরুত্ব অনুভব করেন এভাবেই- “যে পর্যন্ত পুরুষগণ শাস্ত্রীয় বিধান অনুসারে স্ত্রীলোকদিগকে তাহাদের প্রাপ্য অধিকার দিতে স্বীকৃত না হয়, সে পর্যন্ত তাহারা স্ত্রীলোকদিগকে শিক্ষাও দিবে না। যাহারা নিজের সমাজকে উদ্ধার করিতে পারিতেছে না, তাহারা আর দেশোদ্ধার কিরূপে করিবে? ”(তথ্যসূত্র: মোস্তফা মীর, সম্পাদিত, বেগম রোকেয়া রচনাবলী, তৃতীয় মুদ্রণ, ফেব্রুয়ারি ২০১০, বর্ণায়ন, বাংলাবাজার, ঢাকা-১১০০, পৃ-২০৮)
বেগম রোকেয়া বৃহৎ জাতির এই অসঙ্গতির বিরুদ্ধে হাতে তুলে নেন কলম। একটি উন্নত জাতি গঠনে নারী-পুরুষের সমান অংশগ্রহণ জরুরি; তা না হলে অসম্ভব। তিনি তাঁর ‘স্ত্রী জাতির অবনতি’ প্রবন্ধে উল্লেখ করেন, “পুরুষের সমকক্ষতা লাভের জন্য আমাদিগকে যাহা করিতে হয়, তাহাই করিব। যদি এখন স্বাধীনভাবে জীবিকা অর্জন করিলে স্বাধীনতা লাভ হয়, তবে হাহাই করিব। আবশ্যক হইলে আমরা লেডীকেরাণী হইতে আরম্ভ করিয়া লেডীম্যাজিস্ট্রেট, লেডীব্যারিস্টার, লেডীজজ-সবই হইব! ” বেগম রোকেয়ার স্ত্রী জাতির স্বাধীনতা অর্জনে এই বলিষ্ঠ কণ্ঠই আজ নারীদের রাষ্ট্রের সম্মানিত চূড়া থেকে এভারেস্টেরর চূড়ায় নিতে উদ্বুদ্ধ করেছে। তবে এটাও সত্য- এসমাজেই আবার তনু, রাইশা ও খাদিজার মতো অনেক বালিকাকে হারিয়ে যেতে হয় পুরুষশাসিত সমাজেরই দাপটে।
স্ত্রী জাতির উন্নয়ন আজ আমাদের চোখে পড়লেও তা প্রকৃত পক্ষে কতটুকু, সবাই সেটা অনুমান করতে পারি। আজ যতটুকু উন্নয়ন বাহিরের দিক থেকে হচ্ছে তার চেয়ে বেশি প্রয়োজন মনের দিক থেকে হওয়ার। এই একটি জায়গায় যদি বাঙালি নিজেদের চিন্তা-চেতনায় উৎকর্ষসাধন করতে পারে; তবেই বাঙালি প্রকৃতপক্ষে উন্নয়নের কাঠগড়ায় পৌঁছতে পারবে। আর অন্যথায় সব ম্লান হবে এটাই স্বাভাবিক। বেগম রোকেয়া প্রকৃতপক্ষে নারীদের স্বাধীনতা, আত্মমর্যাদা চেয়েছেন বাঙালি জাতির চিন্তা-চেতনার উৎকর্ষতার জায়গা থেকেই; এটাই ছিল তাঁর লেখনী শক্তির মূল উপজীব্য দিক।
লেখক : কলামিস্ট।
[বি.দ্র: এসএনএন২৪.কম-এ প্রকাশিত। লিংক: http://www.snn24.com/sn-4425]
©somewhere in net ltd.