নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মোহা. মাসুদ

সাদামাটা এক লোকটার সম্পূর্ণ নাম- মোহাম্মদ মাসুদ।

মোহা. মাসুদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

’৫২ থেকে ’৭১ : একটি বাংলাদেশ

১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১০:২৪


’৫২ থেকে ’৭১ : একটি বাংলাদেশ
মোহাম্মদ মাসুদ

বাঙালি ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের ভেতর দিয়েই তার রাজনৈতিক বিভাজন ভুলে পশ্চিম পাকিস্তানের (বর্তমান পাকিস্তান) বিরুদ্ধে প্রথম জেগে ওঠে। নিজ স্বাধীনতা অর্জনে প্রতিবাদী সুর একত্রে ধ্বনিত করে।
তবে পাকিস্তানি-শক্তি বাঙালিদের প্রাপ্য অধিকার ও অর্জিত ক্ষমতা থেকে দীর্ঘকাল ধরে বঞ্চিত করছিল। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে বাঙালি জয়লাভ করার পরও ক্ষমতা হস্তান্তর করেনি। ১৯৫৮ সালে আইয়ুব খান সামরিক শাসন জারি করে বাঙালিকে পরাধীনতার বেড়ি পরিয়ে বাংলা ভূখণ্ডে একচেটিয়া আধিপত্য করতে চেয়েছিল । কিন্তু স্বাধীন-পাগল বাঙালি ১৯৬২ সালে শিক্ষা-আন্দোলন ও ১৯৬৬ সালে ৬ দফা নিয়ে গর্জে ওঠে। গণ-আন্দোলনে মুখে আইয়ুব খানের পতন হয়, আসে ইয়াহিয়া খান। ১৯৭০ সালের নির্বাচনেও জয়লাভ করা সত্ত্বেও ইয়াহিয়া খান ক্ষমতা দেয়নি বাঙালিকে।
১৯৭১ সালে ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানের (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) ঐতিহাসিক এক ভাষণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডাক দেন স্বাধীনতার। তাঁর তাৎপর্যময় ভাষণই স্বাধীনতার হীরকখণ্ডের আলোয় আলোকিত হয়েছে বাঙালি। প্রতিটি বাঙালি পেয়েছে আত্মমর্যাদার স্বীকৃতি। মৃত্যুকে পা’য়ে ঠেলে দিয়ে পাকিস্তানি জান্তাদের নিকট থেকে স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনার জন্য এদেশের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ সেদিন ঝাঁপিয়ে পড়েছে। বাংলার প্রতিটি প্রান্ত গর্জে উঠেছে তার অস্তিত্ব রক্ষায়, সবকিছুই ছিল উপেক্ষিত। একমাত্র স্বাধীনতার বিজয় ছাড়া।
৭ মার্চের ভাষণ পৃথিবীর সেরা ভাষণের একটি। এই ভাষণের ভেতর দিয়েই বাঙালি পেয়েছে স্বাধীনতার রক্তিম-সূর্য। ২০১৩ সালে প্রকাশিত Jakob F. Field সম্পাদিত ‘We Shall Fight on the Beaches : The Speeches that Inspired History’ শীর্ষক গ্রন্থে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণটি খ্রি. পূর্ব ৪৩১ অব্দ থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত ইতিহাস সৃষ্টিকারী ভাষণের মধ্যে একটি হিসেবে স্থান পেয়েছে। সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্যার উইনস্টন চার্চিলের ভাষণ থেকে বইটির নামকরণ করা হয়েছে।‘The struggle this time is the struggle for our Independence’ শিরোনামে বঙ্গবন্ধুর ভাষণটি ২২৩ পৃষ্ঠার বইয়ের ২০১ পৃষ্ঠায় ঠাঁই করে নিয়েছে। তাঁর জ্বালাময়ী-বিশ্বনন্দিত এই ভাষণ আজ বিশ্বের প্রায় ৫০টি ভাষায়ও অনূদিত হয়েছে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে ৭ মার্চের ভাষণ উজ্জ্বল-অর্থময়। আজ তরুণ প্রজন্মের কাছে বঙ্গবন্ধু এক আদর্শের নাম, এক অনুপ্রেরণার নাম, এক বাংলাদেশের নাম। বঙ্গবন্ধু তরুণ প্রজন্মের কাছে কোনো রাজনৈতিক বেড়াজালে আবদ্ধ নয়। তিনি দল-মত-নির্বিশেষে একটি নাম। আজ শুধু তরুণ প্রজন্মে নয়, কোনো নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলেও নয়; বঙ্গবন্ধুকে ঠাঁই দিতে হবে সর্বত্র। আজ বাঙালির জাতির জনক হিসেবে বঙ্গবন্ধুকেই গ্রহণ করতে হবে, কোনো রকম সমালোচনার উর্ধ্বে। কারণ বঙ্গবন্ধুর মতো নেতার সম্মুখ ভাগ থেকে দিকনির্দেশনা না থাকলো এই জাতি স্বাধীন-সূর্যের আলো পরখ করতে ব্যর্থ হতো।
রক্ত, কান্না, লাশ, সম্ভ্রমক্ষয়ী যুদ্ধে বাঙালি অর্জন করে স্বাধীন সূর্য। ’৫২ থেকে ’৭১ পর্যন্ত এভাবেই নানা আন্দোলনের ভেতর দিয়ে ১৬ ডিসেম্বর বিশ্বের বুকে একটি স্বাধীন সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ উদিত হয়। সন্তানহারা মা, ভাইহারা বোন, বাবাহারা সন্তানসহ স্বজনহারা প্রতিটি বেদানার্থ মুখও সেদিন জীবনের সেরা হাসিতে মেতেছিল। গায়ে মেখেছিল স্বাধীন সূর্য আলো। আজ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও শেখ মুজিবুর রহমান অনুপ্রেরণার মন্ত্র হিসেবে কাজ করছে। মুক্তিযোদ্ধের অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশসহ মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিটি অভিপ্রায়ের দিকে আমাদের সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। তাহলেই জাতির পিতা ও বীরশহিদদের প্রকৃত স্বাধীনতা রচিত হবে বাংলার বুকে।
লেখক: কলামিস্ট

[প্রকাশিত: মুক্তমত, এসএনএন২৪.কম, ১৬ ডিসেম্বর ২০১৬]
লিংক:http://www.snn24.com/sn-5064

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.