নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

খুব বেশি খারাপ মানুষ হওয়া সম্ভব নয়।

মহামূর্খ

ভালো একটা মানুষ হতে চাই।

মহামূর্খ › বিস্তারিত পোস্টঃ

#পতিতা

০৯ ই মে, ২০১৬ সকাল ১১:৪৮

(অতি পুরাতন ভাব, নব আবিষ্কার...)

পতিত থেকে পতিতা। আশা করি 'পতিত' শব্দটার অর্থ আমরা সকলেই জানি।
কিন্তু এটা কি জানি যে ঠিক কোন সময় থেকে এই পেশা বা প্রথাটার সূচনা হয়েছিল? আমারও জানা নাই। তবে কিছুটা অনুমান করতে পারি।

#সম্ভবত, যখন থেকে আমরা পৃথিবীতে বিবাহ প্রথাটা আনলাম তখন থেকেই হয়তো। কারন, এর আগে কোন নারীকে পতিতা হওয়ার দরকারই ছিলো না। কারন তখন প্রধান প্রয়োজনটা হয়তো জনসংখ্যা বাড়ানোই ছিলো। আর তখন হয়তো প্রতিটি নারী এবং পুরুষের গুরুত্ব এবং সম্মান সমানই ছিলো। (অনেকগুলো 'হয়তো' বললাম, কারন ওই সময় সম্পর্কে আমি খুব কমই জানি)।

কিন্তু এরপর আমরা পুরুষতান্ত্রিক সমাজের পত্তন করে কী কী করলাম তা ভালই জানি। জঙ্গলে অপর গোত্রকে পরাস্ত করে তাদের নারী এবং শিশুদের যুদ্ধলব্ধ "মাল" হিসেবে ধরে নিয়ে আসার ব্যাপারটা এখনো আমাদের মজ্জার ভেতর রয়ে গেছে। রাজা-বাদশাহ কিংবা জমিদারদের আলাদা মহল বানিয়ে উপপত্নী রাখার গল্প আমাদের সকলেরই জানা। খুব বেশিদিন আগের কথা না, যখন স্ত্রীর সাথে করে শ্বশুরবাড়ি থেকে দাসী আসতো আমার সেবা করার জন্য। যার থেকে জন্মানো সন্তানরা কি-না সারাজীবন আমার স্ত্রীর সন্তানদের গোলাম থাকতো!
অথচ এতগুলো সময় ধরে এমন বাজে ব্যাবহার করার পরেও একবারের জন্য জানতে চাইনি, তার কেমন লেগেছে বা সে কি চেয়েছিল; ঠিক যেমনটা জানতে চাইনা আজও। কেবলমাত্র ঘৃণায় নাক সিটকানো ছাড়া তার প্রতি আর কোন দায়ীত্ব পালন করিনি, আমি "সমাজ"!

পার্কের ভেতর পতিতার অশ্লীল অঙ্গভঙ্গিমা দেখে মজা নিয়েছি, কিন্তু চোখ খুলে একবারও দেখার চেষ্টা করিনি যে, এই মাঘ মাসের বাঘ পালানো শীতে তার কাঁচুলি স্পষ্ট দেখতে পাওয়ার মতো পাতলা ড্রেসটা সে কোন আনন্দে পড়ে আছে!?
হয়তো তার আগামী দিনের খাবার টাকাটা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত হয়নি। হয়তো তার অসুস্থ স্বামী কিংবা পিতার চিকিৎসার টাকা অথবা সন্তানের স্কুলের বেতন তার ৫০০০টাকার আয়ে কিছুতেই হচ্ছে না! হয়তো তার বীরপুরুষ স্বামী, একটা সন্তান জন্ম দিয়েই দায়ীত্বের ভয়ে পালিয়ে গেছে! অথবা সুখের সংসারের প্রলোভন কিংবা 'ভাল' চাকরী দেয়ার আশ্বাস দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে নিয়ে এসেছে কোন নিষ্পাপ(!) পুরুষ।
অথচ এদেরকেই পতিতা, বেশ্যা, খানকি, নটি কিংবা মাগী বলে গালি দেয়ার আগে একবারের জন্যও ভেবে দেখিনা কতখানি অসহায় অবস্থায় পড়লে একজন "মানুষ" তার সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ(আত্মসম্মান) কত সস্তায় বারবার বিক্রি করতে করতে প্রচন্ড ক্ষোভ নিয়ে আমাকে অর্থাৎ এই সমাজকে প্রতিমূহুর্তে গালি দিয়ে যাচ্ছে!

কিন্তু, তোমরা যা-ই বল, আমি তাঁকে সম্মান করি। যেমন সম্মান করি আমার মা-কে, আমার বোন-কে, আমার স্ত্রী-কে, আমার প্রিয়তমা কন্যা-কে। কারন কি জানো? কারন, এদের সবাইকে নিরাপদ রাখার মহান দায়ীত্ব সে নিয়ে রেখেছে। কারন, আজ যদি একটা যুদ্ধ শুরু হয় খুব অল্প সময়ের ভেতরেই কোটি নারীকে পতিতায় পরিনত হতে হবে এবং তাদের ভেতরে কেউ যে আমার পরিবারের কেউ হবে না, আজকের এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যাবস্থায় এর কোন নিশ্চয়তা আমার কাছে নাই (ref movie: Melena)।
আমার পরিবার এখনও নির্ভয়ে তাদের রাস্তায় হাঁটতে পারে কারন এই "পাতিতা-দেবী"-ই আমাদের লালসার তীর নিজেদের শরীরে নিয়ে পৃথিবীর সকল অ-পতিতা নারীদের মায়ের মতো আগলে রাখছে এবং আরেকদিকে পবিত্র "কালোপাথর"-এর মতো আমাদের সকলের পাপ নিজের ভেতর ধারন করছে।
সমাজ যদি ভার্চুয়াল পুংলিঙ্গ হয় তবে তার স্ত্রী (সমাজ থেকে বৈশিষ্ট্যগতভাবে কিছুটা ভিন্ন) কোথায় আছে, আমি দেখিয়ে দিতে পারি...

কী আশ্চর্য! যখন কেউ পেটের দায়ে অর্থের বিনিময়ে আমার অসীম ক্ষুধার কাছে নিজেকে বলি দিচ্ছে তখন সে বেশ্যা, সেটা অসভ্যতা; আর যখন পার্টিতে উন্মাতাল নৃত্যের তালে তালে নিজের স্ত্রী-কে আরেক জনের দিকে ঠেলে দিয়ে অন্যের স্ত্রী-কে নিজের বুকে টেনে নেই, সেটা বুঝি মর্দানিজম(modernism)!

ওদিকে তাদের জীবনযাত্রা কোনদিন জানতে চেয়েছি? মজা নেওয়ার জন্য হয়তো ডকুমেন্টারিগুলো কয়েকটায় কয়েকজন একটু চোখ বুলিয়ে থাকতে পারি। স্বাস্থ্য মোটাতাজা করে কাস্টমারের চোখে আকর্ষনীয় করার জন্য নাকি গরু মোটা করার ঔষধ দেয়া হয়! যত রকম বাজে রোগ হতে পারে সেগুলো নাহয় বাদই দিলাম, শরীর আর চেহারা যদি তেমন ভাল না হয় তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাদের চিকিৎসা করানোর দায়ীত্বটুকুও কেউ নিতে চায়না! তাহলে এবার ভেবে দেখো, যাদের যৌবন চলে গেছে তাদের বাকি জীবনটা কেমন কাটে (ভাবতে পারবা না। কারন, তুমি পুরুষ। তুমি তোমার পাশে একই ছাদের নিচে থাকা স্ত্রী কিংবা মা-কেই "কেবল নারী" বলে একটু(!) নিচু করে দেখো। আর এ তো পতিতা!)...!?

যা-ই হোক, এখন হয়তো আমার চেয়ে অনেক জ্ঞানী লোক, ধার্মিক নীতিবান লোক অনেক জ্ঞানের কথা আওড়াবেন যে, তারা মানুষের বাসায় কাজ করতে পারতো, গার্মেন্টসে কাজ করতে পারতো, কতো কল-কারখানা আছে... কিংবা ভিক্ষা করাও নাকি এর চেয়ে ভালো (পৃথিবীতে ঘৃণা করার জন্যও যুক্তির অভাব হয়না)...!
ভাই, আমিও একদিন ঘৃণা করতাম যখন চোখ খোলে নাই। আর আপনার কথা মেনে নিয়ে আবারও ঘৃণা করা শুরু করবো, যদি আপনি নিশ্চয়তা দিতে পারেন যে, কোন গৃহকর্তা আর কখনও গৃহপরিচারিকার উপর ঝাঁপিয়ে পড়বেনা অথবা কারখানায়ও তার সুপারভাইজারের থেকে সে নিরাপদ থাকবে।
বাবারে, যেই পৃথিবীতে অসুস্থ ভিখারিনী থেকে রাস্তার নগ্ন পাগলিনী পর্যন্ত গর্ভবতী হয়ে যেতে পারে সেই পৃথিবীতে....থাক, কত আর বলবো!? যুগে যুগে অনেকেই বলার চেষ্টা করেছে, কোন লাভ হয়নি। আর আমি তো কোন ছার!
সবশেষে ক্ষমা চাইছি সকল পতিতার কাছে, যুগে যুগে যাদের আমিই পুরুষ, আমিই সমাজ, পতিতা বানিয়েছি।


ভেবেছিলাম একটা কবিতা লিখবো। কিন্তু সে জিনিস আমাকে দিয়ে হয়না। আশা করি, যদি কেউ ভাবটুকু বুঝতে পারে তবে তারা লিখবে, যার শেষ লাইন হবে,
"হে পতিত সমাজ,
তবে কতবড় স্পর্ধা তোমার
যে, আমায় "পতিতা" বলো..!?"


ভালকথা, আমি এখানে ভুলেও কাউকে কাস্টমার হয়ে তাঁদের উপকার করার জন্য উৎসাহিত করিনি। কেবল একটাই অনুরোধ, ঘৃণার দৃষ্টিতে তাকিও না।
যুগে যুগে মনীষীগন বলে গেছেন,
"পাপকে ঘৃণা কর, পাপীকে নয়।"
আবার,
"চালুনি বলে সুঁইরে, তোর পিছনে ক্যান ফুঁটা!?"


By the way, সানি লিওন হয়তো কোন সাধারণ নারীই হতো, যদি না তার কোন দর্শক থাকতো....

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই মে, ২০১৬ দুপুর ১২:২৫

ডরোথি গোমেজ বলেছেন: বিয়ে করছেন? যদি না করে থাকেন একটা পতিতা বিয়ে করে ফেলুন। একটা পতিতা তো অন্তত সংসার পাবে। সব পতিতার জন্য তো কিছু করা যাবে না।

১৮ ই আগস্ট, ২০১৬ বিকাল ৫:৪৪

মহামূর্খ বলেছেন: #ডরোথি_গোমেজ আপনার সুচিন্তিত মতামতের জন্য ধন্যবাদ। প্রথমেই স্বীকার করে নিচ্ছি, মুখে বড় বড় কথা বলা গেলেও বাস্তবে তো আমি একজন পুরুষই। আমার অস্থি-মজ্জায় যে সংস্কার মিশে আছে তা নিমেষে ধুয়ে ফেলা কঠিন। আর তার উপরে বড় কথা হচ্ছে, আমি জানি আমার ভালবাসার জোর কিছুতেই এতো তীব্র হতে পারবে না যা দিয়ে আমি তাঁর মনের এতো দিন ধরে জমা সেই দুঃসহ ঘৃণা, অবিশ্বাস আর প্রতারণার স্মৃতি মুছে তাঁকে একটা সুন্দর জীবন উপহার দিতে পারবো। আর সে-ও আমায় নিঃশঙ্কচিত্তে গ্রহন করতে পারবে না, কারণ আমার সম্মানের জায়গাটা তার সামনে উপস্থাপনের জন্য তার মনের সকল প্রশ্নের পর্যাপ্ত উত্তর দেয়ার পথ এতো সহস্রাব্দ ধরে আমিই বন্ধ করে দিয়ে এসেছি। অর্থাৎ সে-ই বা আমাকে(একজন পুরুষকে তার মনে) কেন গ্রহন করবে? কয়েক জীবন পার হয়ে গেলেও কি তার খুন হয়ে যাওয়া স্বপ্নগুলো আমি জীবিত করে দিতে পারবো?
কিন্তু, বেঁচে থাকতে যেটা করতে পারবো, তা হলো এমন একটা সমাজ তৈরি করার আপ্রাণ চেষ্টা; যেখানে মানুষ কামতাড়িত পাশবিক নির্মমতা নিয়ে আমার কন্যার উপর ঝাপিয়ে না পরে বরং তাঁকে সাথে নিয়ে প্রতিটা নিউরনের আসীম ক্ষমতায় বস্তুজগতের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কণা থেকে নিয়ে আসীম বিশ্বজগতের সীমারেখা সমান জ্ঞান অন্বেষণ করার চেষ্টায় নিজেদের ব্যস্ত রেখে পরম সত্যের মুখোমুখি হবার ইচ্ছা পোষণ করবে.। আর সেই চেষ্টায় যখন মানুষ আসলেই ব্যস্ত থাকবে তখন সেই মগজগুলো শয়তানের কারখানা হওয়ার সুযোগ পাবেনা, যেখানে এখন কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, মদ এবং মাৎসর্য রাজত্ব করে। আর সেই চেষ্টায় আমি-আপনি যদি সফল হই তবে পতিতা, উগান্ডার অভুক্ত শিশু, বিশ্বযুদ্ধ কিংবা আত্মহত্যা এসব সমস্যাগুলো কেবল ইতিহাসের পাতায়ই থাকবে।
আমি প্রসঙ্গ পরিবর্তন করিনি। উপরের লেখাগুলো এজন্যই লিখেছি যে, যা হয়ে গেছে সেগুলোর জন্য আক্ষেপ করে সময় ব্যয় না করে এগুলো 'কেন হলো' এবং কিভাবে সেগুলোর 'পুনরাবৃত্তি রোধ করা যায়' সেই বিষয়ে অল্প করে কিছু বলার জন্য।
আর হ্যা, আমি আংশিক সমাধান অপেক্ষা, সমস্যার সকল অংশের মূল কারণ অনুসন্ধান করে সামগ্রিক সমাধানেই বেশি আগ্রহী।

ধন্যবাদ।।।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.