নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অন্তর মম বিকশিত করো/ অন্তরতর হে/ নির্মল করো, উজ্জ্বল করো,/ সুন্দর কর হে

মহান অতন্দ্র

কবিতার মত মেয়ে

মহান অতন্দ্র › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রবাসেঃ পর্ব ১১

০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:৪৬

পর্ব ১০

এলোমেলো ভাবনা সরাতে আমি নামাজ পড়তাম । মাঝে মাঝে লেখালেখি করতাম। এ প্রসঙ্গে আমার লেখালেখি নিয়ে একটু বলা যেতে পারে । আমার লেখা লেখির শুরু অনেক আগেই ।আমার আব্বু কবিতা লিখতেন । আমার আপুও লিখতেন । আমাদের ঘরে এত কবি থাকার কারনে কবি হিসেবে আমার সঠিক মূল্যায়ন হত না।



কেউ আমার লেখা পড়তও না । তবুও আমি দমতাম না ।সামনে যা দেখতাম তাই নিয়েই কবিতা লিখতাম ।তবে সে সব কবিতা খুব জোর করেও কাউকে পড়াতে পারতাম না । ছোট বেলায় আমার আর আপুর মাঝে খুব মারামারি হল । মারামারির কারন আমাদের মাঝে কে সেরা কবি । আমি কিছুতেই মারামারিতে আপুর সাথে পেরে উঠছিলাম না । মারামারি শেষে আপু নিজেকে সেরা কবি দাবি করল । রাগে অভিমানে আমি কবিতার খাতা ছিড়ে ফেললাম ।কলেজে উঠে আর এসব ছেলে মানুষী করিনি । আমার মাঝে ভীষণ পরিপক্কতা এল । সমস্ত পক্কতা আমি কবিতায় ঢেলে দিলাম ।



নীলক্ষেত থেকে একটা ডিকশনারি কিনেছিলাম । আমার কাজ ছিল ডিকশনারি থেকে সবচেয়ে কঠিন শব্দ খুঁজে বের করা । সেগুলো এক জায়গায় করা । তারপর একটু ছন্দের আকারে সাজিয়ে নেওয়া । আমার অনেক কবিতার অর্থ আমি নিজেই বুঝতাম না ।



আমার পাঠকরাও বুঝত না । ওরা ভাবত আমি খুব উচ্চ মার্গিয় কিছু লিখে ফেলেছি । সবাই আমার লেখার ধন্য ধন্য করত । আমিও খুব ভাব ধরে থাকতাম যেন এ অর্থ বোঝার জ্ঞান গরিমা তাদের নেই । ভার্সিটিতে আসার সময় ডিকশনারিটা হারিয়ে গেল । কঠিন শব্দের অভাবে আমি সহজ লেখা শুরু করলাম ।



আমি লিখে লিখে ফেসবুকে পোস্ট দিতাম । সুরিয়া খুব রেগে যেত । ও বলত ইংরেজিতে কেন লেখ না । ওকে বলতাম ইংরেজিতে আমার এত দখল নেই । আর মাইকেল মধুসুদন হবার ইচ্ছেও নেই । সুরিয়া মাইকেলের নাম জানত । সবচেয়ে অবাক করা ব্যাপার সে হুমায়ন আহমেদের নাম জানত । শরৎ চন্দ্রের নাম জানত । এই সুযোগে বাংলা সাহিত্যের সমৃদ্ধি নিয়ে ওর কাছে খুব ভাব নিতাম।



একটু ব্যাঙ্গ করে বলতাম,” তোমাদের হিন্দি মুভির অনেক কাহিনী কিন্তু আমাদের সাহিত্য থেকে ধার করা” । এতে সুরিয়া রাগত না । হিন্দি মুভি রসাতলে গেলেও তার কিছু যায় আসে না । সে বরং হিন্দি মুভির খোলামেলা ব্যাপারটা নিয়ে সমালোচনা করত । একসময় বুঝলাম , হিন্দি সুরিয়ার ভীষণ অপছন্দ । কোন দেশের একটি মেয়ে তার রাষ্ট্র ভাষাকে অপছন্দ করে ব্যাপারটা খুব অদ্ভুত লাগল ।



সুরিয়া ব্যাপারটা ব্যাখ্যা করল । সুরিয়া তামিল নাড়ুর মেয়ে । তামিল ছিল ভারতের সবচেয়ে প্রাচীন ও সমৃদ্ধশালী ভাষা । জ্ঞানচর্চা আর শিলপ সাহিত্যের দিক থেকে তামিলরাই ছিল সবার থেকে এগিয়ে । সবাই জানত তামিল হবে ভারতের রাষ্ট্র ভাষা । কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠতায় কিছু ভোটে তামিল পিছিয়ে পড়ে । কিন্তু তামিলরা এই ব্যাপারটা মানতে পারিনি । পুরা ভারতে মোট ত্রিশটি ভাষায় কথা বলা হয় । সবাই তাদের নিজেদের ভাষায় কথা বললে ও তারা হিন্দি শেখে , অন্যদের সাথে বলে , অফিসিয়ালি ব্যাবহার করে ।



তবে তামিল রাজ্যে ব্যাপারটা একটু উল্টো । সেখানে হিন্দি ছবি কখনও দেখানো হয় না। তামিলরা কেউ হিন্দি শেখে না। তারা হিন্দি জানেও না । এজন্য ভারতীয় আড্ডায় সুরিয়া খুব অসহায় বোধ করত । তবে শ্রীলঙ্কান একটি মেয়ে সিন্থুজা তার সাথে ওর খুব ভাব ছিল । শ্রীলঙ্কার একটি অঞ্চলে তামিল ভাষায় কথা বলা হয় । সিন্থুজা মাঝে মাঝে আমাদের বাসায় আসতো । কোন কারন ছাড়াই সবসময় সে হাসত । যেন তার জীবনের সবচেয়ে সুখের ঘটনা এই মাত্র ঘটেছে ।



তবে আমেরিকাতে হাসাহাসি করা একটা ভদ্রতা। অচেনা লোক , তারপরও হেসে হেসে গ্রিটিংস দেওয়া । আমি বরাবর ভীষণ গোমড়া মুখো লোক । তবে কাউকে দেখলেই হাসি দেওয়ার ব্যাপারটায় একসময় অভ্যস্ত হয়ে গেলাম । আমার খুব ভালও লাগত । ভেবে দেখলাম আমেরিকানরা খুব নিঃসঙ্গ । তাই গ্রিটিংস ব্যাপারটা ওরা চালু করেছে । এতে নিঃসঙ্গতা অনেকটা দুর হয়। এবং হাসির মত সহজবোধ্য , সর্বজনীন ভাষা আর একটিও বোধ হয় নেই ।



সিন্থুজা আসলে সুরিয়ার যেন সেদিন ঈদ থাকত । খুব গল্প করত ওরা । আমি একদিন ওদের গল্পের মাঝে, খুব বেফাঁস কথা বলে ফেললাম । সিন্থুজাকে বললাম , “কতমাস হল । শরীর কেমন “? সুরিয়া আমাকে থামবার ইশারা করল । সিন্থুজার আসলে একটি সিস্ট হয়েছিল ।ব্যাপারটি প্রথমে ও বুঝতে পারিনি । বাচ্চার মা হবে ভেবে খুব লাফঝাপ করে পরে ধরা পড়েছে। সুরিয়া আমাকে পুরোটা বলল, সেটা সত্যিই করুন কাহিনী।



আমেরিকাতে মানুষ সবচেয়ে বেশী অসহায় হয় অসুখ করলে । মরে যাচ্ছে জেনেও সামর্থ্যের অভাবে কিছু করতে পারে না । তবে খুব অদ্ভুত ব্যাপার আমরা মাইনাস ফোরটি সেলসিয়াস এও হেঁটেছি । কোনদিন ঠাণ্ডা লাগেনি । সাজ্জাদ অবশ্য এর ব্যাখ্যা দিল । এখানে মানুষের বসতি যেমন কম , জীবাণুর ও কম ।



সুরিয়ার সাথে আমার সময় বেশ ভালই কাটছিল। আমরা অনেক টিভি প্রোগ্রাম একসাথে দেখতাম । ওর হিন্দি কিছু প্রোগ্রামের ব্যাপারে আগ্রহ ছিল । আমি ওকে অনুবাদ করে বোঝাতাম ।আমি নিজেও হিন্দি ভাল বুঝি তা নয় । তবে আমাদের শব্দের সাথে অনেক মিল থাকায় আন্দাজ করা যায় । আমার কাছে সুরিয়া হিন্দি শিখতে লাগল । বাংলা কিছু শব্দ ও শিখেছিল। তবে আমাকে ও তামিল শেখাতে পারল না । তামিল আমার কাছে খুব জটিল মনে হল ।



আমার প্রফেসর ডক্টর হেলডার অন্য ভাষা শিখতে আগ্রহী ছিলেন ।আমার কাছে বললেন , ধর তোমার দেশে গেলাম , কিভাবে বাংলায় হেলো বলব ? আমি হেলোর কোন বাংলা শব্দ না পেয়ে বললাম ,” হেলো হল আসসালামু আলাইকুম” । কিন্তু এত লম্বা হেলো কিছুতেই তিনি উচ্চারণ করতে পারলেন না । তবে কিছু ভাষা তিনি শিখেছিলেন । আমাকে দেখলেই “কামান আচ ?” বলতেন। ভাষা শেখাটা আমার কাছেও একটি মজার ব্যাপার ছিল । আমি রোমানের কাছে কিছু ফ্রেঞ্চ শিখেছিলাম । যেমন “কোমোসাভা “ । অর্থ কেমন আছো ।



ভাষা শিখতে যেয়ে দেখলাম শুধু হিন্দি নয় , নেপালির সাথেও আমাদের খুব মিল । ওরাও ভাতকে ভাত , ডালকে ডাল , আলুকে আলু বলে । তবে ইন্ডিয়ানরা রুটিকে চাপাতি বলত । প্রথমদিন যখন শুনি , খুব অবাক হয়েছিলাম । সুরিয়া বলল , চাপাতি তার খুব পছন্দ । আর সে জানে কিভাবে চাপাতি বানাতে হয় ।



চাপাতি আমাদের দেশে একটি খুব মারাত্মক ধারালো অস্ত্র । খুনোখুনির কাজে এটি ভীষণ লাগে । আমি ধরে নিলাম , সুরিয়ার বাবা কামার ।পরে বুঝিয়ে বলল , চাপাতি মানে রুটি । সুরিয়া খুব দোসা বানাত । ময়দাটা ফারমেন্ট করে অনেকটা চিতই পিঠার মত। তবে রুটির আকারে বানানো হয় । দোসা আমার খুব পছন্দের খাবার ছিল ।



সুরিয়া আমাকে একবার বলল , সে তার এক বন্ধু দম্পতিকে বাসায় দাওয়াত করবে , আমার কোন অসুবিধা আছে কিনা । আমি বললাম আপত্তি নেই । মনে হল , ভালই । এই সুযোগে আমারও ভাল মন্দ খাওয়া হবে । দাওয়াতের দিন সুরিয়া দোসা , সবজি, চাটনি আর রাইতা (সালাদ) বানাল । সাথে ইয়োগার্ট ছিল । মাছ মাংশ না পেয়ে আমি ভীষণ হতাস হলাম ।



তবে ঐ দম্পতির সাথে গল্প গুজোগে মন ভাল হয়ে গেল । আমরা চারজন কার্ড খেললাম । মেয়েটি ফরাসী । তবে তার অরিজিন ভারতে । সে তামিল অল্প অল্প বলতে পারে । হিন্দি জানে না। আমরা ইংরেজিতে কথা বলছিলাম সবাই । তাই অসুবিধা হচ্ছিলনা । আমাদের খুব ভাল সময় কাটল ।



পরদিন আমি ল্যাবে গেলাম । সুদীপ বলল , তোমার জন্য একটি সারপ্রাইজ আছে ।কি সারপ্রাইজ কিছুই বুঝলাম না । সারপ্রাইজ দেবার কথা বলে সে দেখি পিছন ঘুরিয়ে অন্য একটি নেপালি ছেলের সাথে গল্পে মশগুল । এই ছেলেটি আমাদের ল্যাবে প্রায় আসে । সে আমাদের পাশের ল্যাবে কাজ করে । মাঝে মাঝে আসে , গল্পগুজব করে চলে যায় । তবে আমার সাথে কোনদিন কথা হয়নি ।



হঠাৎ ছেলেটি ঘুরে আমার সাথে বাংলায় কথা বলা শুরু করল । একদম পরিস্কার কথা । দুই একটা শেখানো বাক্য না । কঠিন কঠিন শব্দ দিয়ে বাক্য।এরপর একদিন করিডোরে তার সাথে দেখা। আমাকে দেখে বলল , “ কি তন্দ্রা ঘুম পেয়েছে , চোখ তো ঢুলু ঢুলু ?” বাংলা সে জানতেই পারে । তাই বলে ঢুলু ঢুলু পর্যায়ের বাংলা !



ছেলেটি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছে । বাংলাদেশে কয়েক বছর থাকার কারনে বাংলাটা সে জানে । ছেলেটির সাথে কথা বললেই খুব আনন্দ হত । আমরাই শুধু বাইরে পড়তে আসি না । বাইরের ছেলেরাও আমাদের দেশে পড়তে যায় । আর কোন বিদেশির মুখে নিজের ভাষা শোনা সত্যিই খুব আনন্দের ব্যাপার । আমি আরও আনন্দ পাবার জন্য ছেলেটির সাথে চুটিয়ে গল্প করতাম । সুদীপের কোন পাত্তা ছিল না সেখানে। একদিন রেগে গিয়ে সে বলল, “তুমি কি জান, ও বিবাহিত “?



আমি বললাম জানি। ভদ্রলোকের স্ত্রীর সাথেও আমার পরিচয় হয়েছে । উনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন । ভাল বাংলা জানেন ।



আমাদের ল্যাবে সামারে রায়ান নামে একটি নতুন ছেলে জয়েন করল । আন্ডারগ্রেডে পড়ে । রায়ানের ইচ্ছা ও পাইলট হবে । তাই হাই স্কুল শেসে ও এয়ারফোর্সে যোগ দেয় । কিন্তু আমেরিকান নিয়ম অনুযায়ী পাইলট হতে হলে টেকনিক্যাল ডিগ্রি নিতে হয় । তাই এখানে ফিজিক্সে পড়ছে । রায়ান খুব সুদর্শন ছেলে ছিল । ও সাউথ ডাকোটার গভর্নরের নাতী ।



আমাদের ল্যাবের কাজ ছিল স্যাটেলাইট ইমেজ কালিব্রেশন করা।মানেটা হল স্যাটেলাইট জিনিসটা থাকে খুব উঁচুতে। আর পুরো পৃথিবী ঘুরতেও তার ৮-১৬ দিন লাগে। তাই সে কখনও ইনস্ট্যান্ট ইমেজ পাঠাতে পারে না। সে শুধু কিছু সংখ্যা পাঠায়। সেই সংখ্যাটা দিয়েই ইমেজ বানানো হয়।



ধরা যাক স্যাটেলাইটির যন্ত্রপাতিতে কোন সমস্যার কারনে সেটি আর আগের মত কাজ করছে না। সঠিক সংখ্যা না পাঠিয়ে কিছুটা ভুল পাঠাচ্ছে । এই ভুলটা ঠিক করতে হলে, উপরে উঠে সেটি মেরামত করা দরকার । কিন্তু উপরে উঠে কে সেটি মেরামত করবে আর অত বড় মই ই বা কোথায় পাওয়া যাবে । তাই আমাদের কাজ ছিল একটি সমাধান অথবা সংখ্যা বের করা যেটি দিয়ে গুন করলে আমরা সুস্থ স্যাটেলাইটের মত ডাটা পেতে পারি ।



তবে এই ডাটা কখনও আমরা দেখতে পেতাম না । সিকুরিটির জন্য ইন্টারন্যাশনাল লোকজনকে দেখতে দেওয়া হত না । ওদের ধারনা ছিল আমাদের মধ্যে কেউ হয়ত , লাদেনের গুপ্তচর । লাদেনকে যেয়ে সব বলে দেব । হাস্যকর ব্যাপার আমাদের ল্যাবে কোন মিলিটারি ডাটা নিয়ে কাজ হত না । তবুও নিয়ম বলে কথা । এসব কাজ আমাদের করার অনুমুতি ছিল না ।



এই কাজগুলো আমেরিকানরা করতো । ওরা বসতও আমাদের থেকে অনেকটা আলাদা , একটু দুরে । যেসব ডাটা ওদের মনে হত ইন্টারন্যাশনাল কেউ দেখলে ক্ষতি নেই। সেগুলো আমরা দেখতে পেতাম ।



ইন্টারন্যাশনালদের কাজ ছিল মুলত থিওরি ডেভেলপমেন্ট নিয়ে । আমার কাজ ছিল একটি মডেল বানানো । আমার মডেলটির উদ্দেশ্য ছিল ফাঁকিবাজ চাষিদের শায়েস্তা করা ।



আমেরিকাতে জমিজমার তুলনায় চাষির সংখ্যা খুব নগণ্য । আর ফলনও হয় খুব বেশী । খেয়ে দেয়ে তারা ত্রানের জন্য কিছু বরাদ্দ রাখত । তারপরও অনেক ফসল । বাজারে ফসলের দাম ঠিক রাখতে তারা কাউকে দিতও না । তাহলে চাষিরা সঠিক দাম পাবে না। চাষের আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে ।



একারনে আমেরিকানরা বুদ্ধি বের করল । বুদ্ধি হল জাহাজ ভাড়া করে মাঝ সমুদ্রে যেয়ে সব ফসল ফেলে দেওয়া । একসময় ব্যাপারটি তাদের কাছে কিছুটা অমানবিক মনে হল । পৃথিবী শুদ্ধ লোক খেতে পায় না । আর তারা খাবার ফেলে দিচ্ছে । জাহাজ ভাড়ারও খরচ আছে ।



নতুন বুদ্ধি বের করা হল । নতুন বুদ্ধি হল , সবাইকে প্রতি বছর চাষ করতে হবে না । কেউ কেউ করবে আর বাকিরা পা দোলাবে । প্রত্যেক চাষির ইন্সুরেন্স থাকবে । পা দোলানো চাষিরা ইন্সুরেন্স থেকে টাকা পাবে ।



সব দেশেই কিছু ফাঁকিবাজ থাকে । দেখা গেল , কেউ কাজ করতে আর চায় না । সবাই পা দোলাতে চায় ।ইন্সুরেন্স এ যেয়ে বলে , বন্যা , তুষারপাত বিভিন্ন কারনে এ বছর আমি ফসল ফলাতে পারিনি ।



আসলে সে ব্যাক্তি কোন চাষাবাদই করেনি অথবা চাসের সঠিক পরিচর্যা করেনি । এজন্য ইন্সুরেন্স অফিস থেকে মনিটর করা হত , চাষিরা কাজে ফাকি দিচ্ছে কিনা । কিন্তু এত এত জমি । সব জায়গায় তো যাওয়াও সম্ভব না । তাই বুদ্ধি করা হল স্যাটেলাইটে থেকে মনিটর করা হবে ।কিন্তু অত উঁচুর জিনিষ কিভাবে এত ছোট গাছ পালা মনিটর করবে । দেখা গেল ,কারো লাগানোর কথা ধান , সে বুনো ঘাস লাগিয়ে রেখেছে ।তাই এই নিয়ে অনেক গবেষণা হত কি করে ছবি থেকে ফসলের পরিচয় ও স্বাস্থ্য সম্পর্কে জানা যায় ।



আমার কাজ ছিল এই গবেষণায় কিছু সাহায্য করা । আমার গবেষণার সঙ্গী ছিল রায়ান ।আমরা প্রথমে আমাদের মডেলটা একটা গ্রাস ল্যান্ডের উপর এপ্লাই করি । গ্রাস ল্যান্ড টা ছিল বেশ বড় । ৩/৪ বিঘার মত । রায়ানের কাজ ছিল সেই গ্রাস ল্যান্ডের ঘাস কাঁটা । সে প্রতি দুই সপ্তাহে একবার পুরা জমির ঘাশ কাটত । যদিও সে মোটরগাড়ি চালিত মেশিন দিয়ে কাটত । তবে কাজটি মোটেও সহজ ছিল না ।



প্রচণ্ড রোদে রায়ানের সানবার্ন হয়ে গেল । তারপর ও সে খুব নিষ্ঠার সাথে কাজ করত । একজন গভর্নের নাতী হয়ে সে ঘাস কাটত । আমাদের দেশে যেটি চিন্তাও করা যায় না । মাঝে মাঝে আমরা মাঠে যেতাম ডাটা নিতে । আমার সাথে ল্যারি , রায়ান থাকত । মাঝে মাঝে প্রফেসর এরন আসতো ।



আমেরিকার মাঠে যেয়ে আমার অদ্ভুত অভিজ্ঞতা হল । সেখানে চাষিরা প্যান্ট জামা পরে গাড়ি করে মাঠে আসে । মাঠের মাঝে পারকিং এর জায়গা আছে । হেলিকপ্টারে করে সেখানে সার কীটনাশক ছিটানো হচ্ছে ।আমার ঠিক তখন আমাদের দেশের চাষাবাদের কথা মনে হল।



রিসার্সের এর কাজে আমাকে প্রচুর গাছপালা নিয়ে পড়তে হল । চাষাদের বিভিন্ন ব্লগ ছিল । সেখানে চাষিরা বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে লিখত । আমার অনেক প্রশ্নের উত্তর আমি সেখানে পেয়েছিলাম ।এই উত্তর খোঁজার সময়টা আমার দেশের চাষীদের কথা মনে পড়ত। কোন সমস্যার সমাধান যারা খোঁজে শুধুই অভিজ্ঞতা দিয়ে । মাঠে এক হাঁটু কাদায় দাড়িয়ে তারা সার , কীটনাশক দেয় । প্যান্ট শার্ট কোনদিন হয়ত চোখেই দেখিনি । খুব শীতেও একটা গামছা জড়িয়ে জমিতে আসে । ভাবে ,একমাত্র জামাটা ময়লা করে কাজ নেই ।



তবে চাষার চেয়ে খারাপ কিছু আমাদের দেশে নেই । কারো বাবা চাষা হলে দেখেছি সে লজ্জায় বলে না । বলে জমিজমা দেখাশোনা করে ।



আমি কিছু ইনডোর প্লান্টেসন করে ছিলাম । উদ্দেশ্য সবসময় যেন ডাটা নিতে পারি । সাউথ ডাকোটা ইউনিভার্সিটির রিসার্স ফাকাল্টির ডীন আমাকে এ ব্যাপারে সাহায্য করলেন ।



প্রচণ্ড গর্ব করে বললেন , তুমি জান, আমি একজন চাষা । অনেক জমি চাষ করেছি আমি । আমার বাবা-দাদাও চাষা ছিলেন।



পরের পর্ব

মন্তব্য ২৪ টি রেটিং +৭/-০

মন্তব্য (২৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:২০

এহসান সাবির বলেছেন: চলুক....

১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:০৭

মহান অতন্দ্র বলেছেন: ধন্যবাদ এহসান সাথে থাকার জন্য ।

২| ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:৪৮

কহেন কবি কালিদাস বলেছেন: আপনার আগের লেখাগুলো পড়েছি কিন্তু মন্তব্য করা হয়নি ।আপনার লেখা অনেক সাবলীল । পরের পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম ।

ভালো থাকবেন ।

১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:০৮

মহান অতন্দ্র বলেছেন: ধন্যবাদ কালিদাস অনুপ্রেরনা মূলক মন্তব্যের জন্য । ভাল থাকুন । শুভ কামনা ।

৩| ১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ২:০৯

যুধিষ্ঠির বলেছেন: এবারের পর্বটি খুব ই মজার লাগলো। সো ফার বেস্ট ওয়ান আপু

১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৪:২৬

মহান অতন্দ্র বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ । ভালো থাকবেন ।

৪| ১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ সকাল ৯:৫৭

তুষার কাব্য বলেছেন: আমেরিকান চাষীদের গল্প বেশ মজা লাগলো পড়তে...আর মানসিকতার দিক দিয়ে তারা আমাদের মত হিনমন্যতায় ভোগেনা...সাথে আছি...চলুক...

১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৪:২৭

মহান অতন্দ্র বলেছেন: সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।

৫| ১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ সকাল ১০:০৯

অপূর্ণ রায়হান বলেছেন: ২য় ভালোলাগা ++++++++

চমৎকার আরও একটি পর্ব। চাষি ও চাষাবাদ সম্পর্কে আপনার অভিজ্ঞতা জেনে খুবই ভালো লাগলো।

ভালো থাকবেন সবসময়। আগামী পর্বের অপেক্ষায় :)

১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৪:২৮

মহান অতন্দ্র বলেছেন: ধন্যবাদ অপূর্ণ । আপনিও ভাল থাকবেন সবসময় , শুভ কামনা ।

৬| ১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৫:০৬

আমি ইহতিব বলেছেন: আপনার গবেষণার বিষয় ও আমেরিকান চাষীদের গল্প জেনে মজা লাগলো।

দেশের বাইরে যখন যাই আমারও আপনার মত অনুভূতি হয় । ওদের ভালো কিছু দেখলে নিজের দেশের জন্য আফসোস হয় খুব।

আগের পর্বটাও পড়েছি, মন্তব্য করা হয়নি।

ভালো থাকুন। পরের পর্বের অপেক্ষায় আর আপনার জীবনের সুন্দরতম দিনগুলোর গল্প জানার প্রতীক্ষায় থাকলাম।

১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ সকাল ৯:২৮

মহান অতন্দ্র বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আপু আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য । শুভ কামনা ।

৭| ১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১২:১৬

সোহানী বলেছেন: আপনার লিখা পড়তে পড়তে কখন যে হারিয়ে গেছি ......... অসম্ভব ভালো লাগলো।

সবসময় লিখে যান.... আপনার এ লিখা কখন কার উপকারে লাগবে আপনি জানেন না কিন্তু সে আপনাকে কৃতজ্ঞতা ঠিকই জানাচ্ছে। হয়তো আপনার সাথে আমার ঠিকই দেখা হবে.......

ভালো থাকুন সবসময় আর লিখতে থাকুন......

১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১:৩১

মহান অতন্দ্র বলেছেন: নিশ্চয়ই দেখা হবে । ভাল থাকুন । ধন্যবাদ ।

৮| ১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১২:২২

এহসান সাবির বলেছেন: আমার পাঠকরাও বুঝত না । ওরা ভাবত আমি খুব উচ্চ মার্গিয় কিছু লিখে ফেলেছি । B-))

“ কি তন্দ্রা ঘুম পেয়েছে , চোখ তো ঢুলু ঢুলু ?”

তন্দ্রা, নাহার......


শেষ করলাম আপনার ১ থেকে ১১তম পর্ব....


চলুক সাথে আছি........


শুভ কামনা রইল....

১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১:৩৩

মহান অতন্দ্র বলেছেন: হুম উদ্ধার করে ফেলেছেন অনেক কিছু । অনেক ধন্যবাদ সাথে থাকার জন্য । ভাল থাকুন । শুভ কামনা রইল ।

৯| ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১:৩২

রেজওয়ানা আলী তনিমা বলেছেন: আপনার লেখা অনেক চমৎকার। এই প্রথম পড়তে এলাম আর খুবই ভালো লাগছে। পরের পর্বগুলোর অপেক্ষায় থাকলাম।

১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ সকাল ১১:০৫

মহান অতন্দ্র বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ । ভাল থাকবেন ।

১০| ২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১২:৫২

ইরফান আহমেদ বর্ষণ বলেছেন: :) চলুক.....

২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৪:৫১

মহান অতন্দ্র বলেছেন: ধন্যবাদ বর্ষণ । ভাল থাকবেন ।

১১| ২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:০০

ইমরান আশফাক বলেছেন: বেশ কয়েকটা পর্ব হয়ে গেলো আমি ট্যুরে থাকার সময়ের মধ্যে। তবে বলতে দ্বিধা নেই যে আজকের পর্ব সবদিক দিয়ে সকল পর্বকে ছাড়িয়ে গেছে।

প্রথমেই আসি দক্ষিন ভারতের ব্যাপারে, আমি ব্যাংগালোরে কয়েকমাস থাকায় বলতে পারি যে ওরা হিন্দি বিদ্বেষী, এমনকি সম্ভব হলে ওরা ভারত থেকে আলাদা হয়ে যেতে পারলে খুশী হবে। আর আমি কয়েকমাসে ওখানে ১০টির বেশী কানাড়া ভাষা শিখতে পারি নাই কারন ওদের ভাষা আমার কানে কটর মটর খটর ইল্লা মিল্লা কিল্লা ছাড়া আর কিছুই মনে হত না। এবং ওরা শক্তের ভক্ত আর নরমের যম।

আপনার রিসার্চের বিষয়টা আমার পছন্দ হয়েছে, মনে হচ্ছে সাইন্স ছেড়ে কমার্স নিয়ে পড়া ভুল হয়েছে। কি করবো বলুন আমি বুয়েট বা তৎকালীন বিআইটিতে চান্স না পেলে? মেডিক্যালে কখনও আগ্রহ করি নাই। যদিও বর্তমান পেশা নিয়ে আমি সন্তুষ্ট (ব্যবসা)।

ভালো কথা, আপনার সেই সময়ের বোধের অগম্য উচ্চমার্গীয় একটা কবিতা পোস্ট দিন না দেখি বুঝতে পারি কিনা। B:-/

পরবর্তী পর্বে যাচ্ছি এখন।

১২| ২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ৩:২৪

মহান অতন্দ্র বলেছেন: হুম আপনার ভারত অভিজ্ঞতা সুরিয়ার সাথে মিলে যাচ্ছে অনেকটা ।

আর বোধগম্যতার বয়স অনুযায়ী ক্রমবিকাশ ও পরিবর্তন ঘটে । যেটি একসময় আমার ও আমার বন্ধুদের কাছে খুব কঠিন ছিল , আজ ১০ বছর পরে সেটি হয়ত সেরকম নয়।
এ বিষয়ে একটি গল্প আছে । বললে বেশ বড় হয়ে যাবে । কোনদিন এই বিষয়ে লিখলে বলা যাবে ।

১৩| ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:১৬

অঘটনঘটনপটীয়সী বলেছেন: আমেরিকাতে হাসাহাসি করা একটা ভদ্রতা। অচেনা লোক , তারপরও হেসে হেসে গ্রিটিংস দেওয়া।

ইংল্যান্ডেও তাই।

২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ৩:১৪

মহান অতন্দ্র বলেছেন: :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.