![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত উইং কমান্ডার সালাউদ্দিন চৌধুরী নিউইয়র্ক হতে প্রকাশিত উত্তর আমেরিকায় বাংলা ভাষার সর্বাধিক প্রচারিত ‘ঠিকানা’কে প্রদত্ত দীর্ঘ এক সাক্ষাতকারে সেনাবাহিনীর ক্ষুব্ধ অফিসারদের মনোভাব ব্যক্তকালে বলেছেন যে, ‘পিলখানার ঘটনা ছিলো সেনাবাহিনীর উপর শেখ হাসিনার পরিবারের হত্যাকান্ডের প্রতিশোধ’ ।
পিলখানায় বিদ্রোহের নামে মর্মন্তুদ হত্যাযজ্ঞের পর সংক্ষুব্ধ সেনা অফিসারদের মধ্যে এমন ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া পরিলক্ষিত হয়েছে। সাক্ষাতকারটি ‘পিলখানার ঘটনা ছিলো সেনাবাহিনীর উপর শেখ হাসিনার পরিবারের হত্যাকান্ডের প্রতিশোধ’চলতি সংখ্যা (১৬ আগস্ট বাজারে এসেছে) ঠিকানায় ‘পিলখানার ঘটনা ছিলো সেনাবাহিনীর ওপর বঙ্গবন্ধু পরিবারের হত্যাকান্ডের প্রতিশোধ’ শিরোনামে ফলাও করা ছাপা হয়েছে। সাক্ষাতকারে সশস্ত্র বাহিনীর ভেতরের কিছু অবস্থা এবং বহুল আলোচিত ১/১১ প্রসঙ্গে অজানা অনেক তথ্য স্থান পেয়েছে। সাক্ষাতকারে বিমান বাহিনীর সাবেক প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল ফখরুল আজমের সহকারী একান্ত সচিব অবসরপ্রাপ্ত এই উইং কমান্ডার আরো বলেছেন, ‘আমি চাকরি ছেড়ে দিয়ে সম্প্রতি ইমিগ্র্যান্ট হয়ে আমেরিকায় এসেছি। আমি স্বেচ্ছায় অবসর নিয়েছি। পিলখানার ঘটনার পর আমি ২০০৯ সালের জুনে আবেদন করেছিলাম। পিলখানায় আমাদের এতগুলো অফিসারকে অসহায়ের মত মৃত্যুবরণ করতে দেখেছি, কেউ তাদের রক্ষা করতে এগিয়ে আসেনি। আমি তো ঘটনাটা দেখেছি, মনিটর করেছি কীভাবে তিলে তিলে তারা মুত্যুর কোলে ঢলে পড়লো। চাকরিতে ধরে রাখার চেষ্টা করেছে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু আমার সিদ্ধান্তে আমি অটল ছিলাম এবং আবেদনের আড়াই বছর পর আমি অবসরে যেতে পেরেছি।’নিউইয়র্কে বসবাসরত উইং কমান্ডার সালাউদ্দিন চৌধুরীর সাক্ষাতকারটি হুবহু এখানে উপস্থাপন করা হলো।
ঠিকানা: সভারের রানা প্লাজার ঘটনায় রেশমাকে পরস্পর বিরোধী বক্তব্য সম্পর্কে আপনার অভিমত কী?
সালাউদ্দিন চৌধুরী: রেশমার ঘটনাটি পুরোটাই ধোকাবাজি। লন্ডনের মিরর এবং দেশের কিছু পত্রিকায় রেশমার ঘটনাটিকে যে সাজানো নাটক বলেছে, এটা সত্য। সাভারের রানা প্লাজায় যে দিন মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে সেই দিনই রেশমাকে উদ্ধার করা হয়। তাকে নিয়েতো নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। ১৭দিন পর তার উদ্ধার, তার পোশাক এবং অন্যান্য বিষয় সন্দেহ মুক্ত নয়। এখন আরো প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে সরকার। আর সেগুলো হচ্ছে রেশমাকে কেন ৪টি সিকিউরিটি দেয়া হয়েছে? সাংবাদিকদের সাথে কেন কথা বলতে দেয়া হচ্ছে না? তাকে কেন ওয়েস্টার্ন হোটেলে জব দেয়া হয়েছে?
ঠিকানা: ১/১১ ঘটনার কারণটা কী ছিলো?
সালাউদ্দিন: বিগত বিএনপি সরকারের কিছু ভুলভ্রান্তি হয়তো ছিলো। সেই ভুলভ্রান্তির সুযোগ নিয়ে তৎকালীন সেনা প্রধান তার উচ্চাভিলাসী স্বপ্ন চরিতার্থ করার চেষ্টা করেন। ২০০৬ সালের অক্টোবর মাসে বিএনপি সরকার যখন ক্ষমতা হস্তান্তর করলো তার আগে থেকেই আমাদের দেশের সুশীল সমাজের কিছু সদস্য এবং কিছু বুদ্ধিজীবী বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে একটি শব্দ বার বার উচ্চারণ করলো, আর সেটি হলো তৃতীয় শক্তি। একজন সামরিক অফিসার হিসাবে আমি ব্যথিত হতাম এ জন্য যে, তৃতীয় শক্তি বলতে উনারা জেনেশুনে বুঝাতে চাচ্ছে আসলে তৃতীয় শক্তিটা কী? বাংলাদেশের বাস্তবতা হচ্ছে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির বাইরে রাতারাতি কোন তৃতীয় রাজনৈতিক শক্তির উত্থান ঘটতে পারে না। এটা সময় স¦াক্ষেপ ব্যাপার। সে যাই হোক, আমি তখন বিমান বাহিনীর প্রধানের এপিএস হিসাবে কর্মরত ছিলাম। কাছে থেকে অনেক কিছু ফিসফাস শুনতাম। সন্দেহ হতো, যেহেতু সেনা প্রধানের উচ্চাভিলাসী একটা স্বপ্ন ছিলো, যেটা তার কলিগদের মধ্যে অনেকেই জানতেন। আপনারা হয়ত জানেন যে সেনা বাহিনী যদি কোন অভ্যুত্থান ঘটাতে যায় বা কিছু করতে যায় তাহলে তার মূল সাপোর্ট আসতে হবে নবম পদাতিক ডিভিশন থেকে, যেটা সাভারে অবস্থিত। সাভারের জিওসি ছিলেন তৎকালীন মেজর জেনারেল মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী। উনি বেগম খালেদা জিয়ার নিকট আত্মীয়। উনার দিকে তাকিয়ে আমরা আমাদের সন্দেহগুলোকে খুব একটা আমলে নিতাম না। কারণ উনিতো বেগম জিয়ার নিকট আত্মীয়। এটা কোনভাবেই সম্ভব না। কিন্তু ৮ জানুয়ারি ২০০৭ সালে বিমান বাহিনী প্রধানের বাসভবনের স্ট্যাডি রুমের টেবিলে জেনারেল পারভেজ মোশাররফের লেখা ” ইন দ্যা লাইন অফ ফায়ার” বইটি দেখে আমি এয়ার চীফকে জিজ্ঞেস করি – স্যার বইটা পড়েছেন? কেমন লেখা? উনি বললেন, কিছুটা পড়েছি। আর্মি চীফ জেনারেল মঈন পাঠিয়েছেন এবং অনুরোধ করেছেন পড়ার জন্য। বাইরের নানান গুজব শোনা যাচ্ছে, তাহলে কি উনি জেনারেল পারভেজ হবার স্বপ্ন দেখছেন স্যার? আমার প্রশ্ন ছিলো। তিনি প্রতি উত্তরে বললেন, ’ এমন স্বপ্ন দেখা তার জন্য ( জেনারেল মঈন) মারাত্মক ভুল হবে। কারণ এটা বাংলাদেশ। তা ছাড়া এমন পরিকল্পনা থাকলেও সেটা আমার সামনে কখনো প্রকাশ করবে না। এ ছাড়া নবম পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল মাসুদ উদ্দীন চৌধুরীর সার্পোট সে পাবে না এবং আমার তো নয়ই। তবে এ সব চিন্তা করা বা আলোচনা করা ঠিক না।’ তবুও আমার ভিতরে একটা শংকা কেন জানি উঁকিঝুঁকি মারত প্রায়।
‘পিলখানার ঘটনা ছিলো সেনাবাহিনীর উপর শেখ হাসিনার পরিবারের হত্যাকান্ডের প্রতিশোধ’ঠিকানা: বিমান বাহিনীর প্রধান তখন কে ছিলেন?
সালাউদ্দিন: বিমান বাহিনী প্রধান ছিলেন এয়ার ভাইস মার্শাল ফখরুল আজম। আমি ভাবতে লাগলাম দেয়ার মাস্ট বি সামথিং রং। সামরিক অফিসার হিসাবে আমি চিন্তা করলাম যে বাংলাদেশের গণতন্ত্র খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটলেও একটা গণতন্ত্র আছে। সেটা যেন বাধাগ্রস্ত না হয় কোন সামরিক অফিসারের উচ্চাভিলাসী অভিলাসের জন্য। আমি আমার মাথা থেকে এই দু:শ্চিতা ঝেড়ে ফেলতে চেয়েছি বার বার মেজর জেনারেল মাসুদ উদ্দিন চৌধুরীর কথা স্মরণ করে। কেন না তার প্রতি অবিচল আস্থা ছিলো বিএনপি সরকারের। ঘটনাটি যখন ঘটলো তখন আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা বেশ দৃঢ়তার সাথে বললেন, এটা আমাদের আন্দোলনের ফসল। আমি নিশ্চিত হলাম ১/১১ এর পিছনে আওয়ামী লীগের নীরব সমর্থন ছিলো। আমরা যদি বাংলাদেশের অতীত ইতিহাস বিশ্লেষণ করি, দেখবো যতবারই সেনা অভ্যুত্থান বা সেনা বাহিনীর হস্তক্ষেপ হয়েছে ততবারই কোন না কোন রাজনৈতিক দলের সমর্থন ছিলো। রাজনৈতিক দলের সমর্থন ছাড়া সেনা অভ্যুত্থান করা সম্ভব নয়। আমার চোখে দেখা ১/১১ ঘটার পরে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে বলা হলো যে তিনি যেন কিছু দিন দেশের বাইরে থাকেন। বিএনপির যে সমস্ত কার্যক্রমে মানুষের মনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছিলো সে ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার পরে গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরি করে একটি নির্বাচন দেয়া। এই বক্তব্যটি আমি কীভাবে জানলাম- বিমান বাহিনীর প্রধান আমাকে বললেন যে সেনা প্রধান উনাকে বলেছেন, তারা ভোটার আইডি কার্ড করবেন, পরিবেশ তৈরি করে তিন থেকে ৬ মাসের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের ব্যবস্থা করবেন। যেটা প্রথমে বিশ্বাসযোগ্য ছিলো কিন্তু পরবর্তীতে সেনা প্রধানের কর্মকান্ডে তার কথার বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়ে ফেলে। ইতিমধ্যে ২০০৭ সালের এপ্রিল মাসে বিমান বাহিনী প্রধান এভিএম ফখরুল আজম অবসরে গেলে সেনা প্রধান জেনালে মঈন যেন কিছুটা স্বস্তির নি:শ্বাস ফেললেন- কেননা উনি সেনা প্রধানের অনেক পরিকল্পনা ও কর্মকান্ডের সাথে দ্বিমত পোষণ করতেন।
‘পিলখানার ঘটনা ছিলো সেনাবাহিনীর উপর শেখ হাসিনার পরিবারের হত্যাকান্ডের প্রতিশোধ’
সেনা প্রধান ম ইউ আহমেদের কর্মকান্ডে পরিষ্কারভাবে বুঝা গেল যে পাকিস্তানের সেনা শাসক পারভেজ মোশাররফের মত তিনি দেশের শাসন ভার গ্রহণ করতে চাচ্ছেন। পারভেজ মোশাররফ কিন্তু সেই দেশের বিরোধী দলের নেতা নেওয়াজ শরিফকে প্রথমে আটক ও পরে বিদেশে পাঠিয়ে দিয়ে দেশের শাসনভার গ্রহণ করেছিলেন। আওয়ামী লীগের সভানেত্রী সেনা সমর্থিত সরকারের কথা মত দেশ ছাড়লেন। তখন কথা উঠলো বিরোধী দলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকেও দেশ ছাড়তে হবে। বেগম জিয়া কোন ভাবেই বিদেশে যেতে চাইলেন না। তিনি দেশ ত্যাগে রাজি হননি। এখানে একটি কথা বলে রাখি- সেনা প্রধানের সাথে সেনা বাহিনীর জেষ্ঠ্য কর্মকর্তারা যারা সহযোগী হিসাবে ছিলেন তাদের ২/১ জন বলেছেন বেগম খালেদা জিয়ার মধ্যে একটা আপোষহীনতা কাজ করে, তাই উনাকে কী দেশ ত্যাগে বাধ্য করানো সম্ভব হবে? ওখানে যারা ছিলেন জেনারেল আমিন, ব্রিগেডিয়ার বারীসহ অনেকেই বলেছিলেন বিএনপি এখন মনোবলের দিক থেকে দুর্বল তাদের বিগত দিনের কর্মকান্ডের কারণে। সুতরাং তাকে দেশ ত্যাগ করানো অসম্ভব কিছু না। তাকে দেশ ত্যাগে বাধ্য করা হবে। আল্টিমেটলি হয়নি। এভাবে রাজি করাতে না পেরে তারেক রহমানকে গ্রেফতার করা হয় এবং বেগম জিয়াকে নানা ধরনের ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হয়। এর পরেও বেগম খালেদা জিয়া তার সিদ্ধান্তে অটল। মাঝে মধ্যে নিম রাজি ছিলেন, আবার মনের দিক থেকে তিনি মোটেও রাজি ছিলেন না। সোজা কথা তিনি দেশ ত্যাগ করবেন না। তিনি বার বার বলতেন, বিদেশে আমার কোন ঘরবাড়ি নেই, ঠিকানা নেই, বাংলাদেশই আমার ঠিকানা। বেগম খালেদা জিয়ার এই দৃঢ় মনোভাব উচ্চাভিলাসী সেনা প্রধানের সমর্থনকারীদের জন্য বিরাট বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলো। ১/১১ যে দিন হলো সেই দিন সন্ধ্যায় আমাকে আমার বিমান বাহিনীর প্রধান তার বাসায় ডেকে পাঠালেন। তার বাসায় যে অফিস সেখানে বসে আমরা কথা বলছিলাম। আমি তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম- স্যার এটা কী ঠিক হলো? উনি প্রতিউত্তরে আমাকে বলেছিলেন- জাস্ট প্রে ফর দ্যা নেশন। তার একটু পরেই দেখলাম তার বাসার রেড টেলিফোন বাজলো। তিনি ফোন ধরলেন, সেনা বাহিনীর প্রধান ফোন করেছেন। সেনা প্রধান উনাকে বলছেন যে, স্যার আপনি একটু ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে কথা বলেন। উনাকে বলেন, উনি যেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হন। বিমান বাহিনীর প্রধান সেনা প্রধানকে বললেন ঠিক আছে আমি ফোন করবো। উনি ফোন রেখেই বললেন, ড. ইউনূসের ফোন নম্বর তার জানা নেই। আমি তখন উনার বাসার যে রিসেপশনিস্ট তাকে আমি বললাম ড. ইউনূসের ফোন নম্বর জোগাড় করে দেয়ার জন্য। আমি নম্বর নিয়ে ড. ইউনূসকে কল করলাম। উনি সরাসরি ফোন ধরলেন। আমি ফোনটি বিমান বাহিনীর প্রধানকে দিলাম। বিমান বাহিনীর প্রধান পরিস্থিতির কথা জানিয়ে তাকে দায়িত্ব নেয়ার কথা বললেন। আমি তখন কায়োমনোবাক্যে চাচ্ছিলাম যে ড. ইউনূস যেন রাজি হন। কারণ উনার সক ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মানুষ যদি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হন তাহলে সেনা প্রধানের স্বেচ্ছাচারিতা বাধাগ্রস্ত হবে এবং রাজনৈতিক পরিবেশ সৃষ্টি হবে। ড. ইউনূস বিমান বাহিনীর প্রধানকে বললেন, এয়ারচীফ, এভাবেতো দায়িত্ব নিয়ে কিছুই করা যাবে না। দেশকে যদি সুন্দর বাংলাদেশ করতে হয় তাহলে, সময়ের প্রয়োজন। আমি এই অল্প সময়ের জন্য দায়িত্ব নিতে চাই না, কিছু করা যাবে না। সুতরাং দায়িত্ব নেয়া আমার জন্য ঠিক হবে না। উনি সেনা প্রধানকে বিষয়টি জানালেন। ২০০৭ সালের জানুয়ারি মাসের ১১ তারিখে আমি যথারীতি সকাল বেলায় অফিসে গেলাম। বিমান বাহিনীর প্রধান আমাকে বললেন যে, আর্মি চীফ আমাকে কফি খাওয়ার দাওয়াত দিয়েছেন। কিছুক্ষণ পরে বললেন, সেনা প্রধানের অফিসে একজন মেহমান এসেছেন, তাই তিনি আমাকে কিছুক্ষণ পরে যেতে বলেছেন। এরপর তিনি ১০ থেকে ১০টা ৩০ মিনিটের দিকে সেনা প্রধানের অফিসে কফির দাওয়াত রক্ষার জন্য গেলেন। উনি যাবার পরে সেনা প্রধান বললেন বিদেশী মেহমান এসেছেন। সেনা প্রধান বেশ উত্তেজিত। এয়ার চীফ বললেন, কী হয়েছে? তখন সেনা প্রধান বললেন, স্যার এভাবে দেশ চলতে পারে না, এভাবে সম্ভব না। এই দেখুন জাতিসংঘের চিঠি। এয়ার চীফ জিজ্ঞেস করলেন কে দিয়ে গিয়েছে। সেনা প্রধান বললেন, বাংলাদেশে ইউএনডিপির স্থায়ী প্রতিনিধি মিস রেনেটা। ঐ চিঠির কপি আমি নিজ চোখে দেখেছি। দেখে আমার কাছে মনে হলো যে- চিঠিটা অথেনটিক না। আমি রংও হতে পারি। তবে আমার কাছে মনে হয়েছে জাতিসংঘ থেকে এ ধরনের ভাষার চিঠি প্রেরণ করা বিশ্বাসযোগ্য নয়।
ঠিকানা: চিঠির বিষয়বস্তু কী ছিলো?
সালাউদ্দিন: চিঠির বিষয়বস্তু ছিলো যে, বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে তোমরা যদি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নাও তাহলে জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের সকল সৈনিককে ফেরত পাঠানো হবে। আমার কাছে মনে হলো এটা জাতিসংঘের সদর দপ্তরের ল্যাঙগুয়েজ হতে পারে না। সেনা প্রধান যখন রেগেমেগে কথা বলছিলেন তখন বিমান বাহিনীর প্রধান জিজ্ঞেস করলেন- তাহলে তুমি কী করতে চাচ্ছ? সাথে সাথেই জেনারেল মঈন বললেন, স্যার আপনাকে বঙ্গভবন যেতে হবে। বিমান বাাহনীর প্রধান বললেন, আমরা তো এভাবে বঙ্গভবনে যেতে পারি না, রাষ্ট্রপতি কল করলে আমরা যেতে পারি। এ কথার পর পরই সেনা প্রধান বললেন, স্যার আপনাকে কল করবেন। কফি পর্ব শেষে এয়ার চীফ বিমান বাহিনী ঘাঁটি কুর্র্মিটোলা পরিদর্শণে গেলেন। কিছুক্ষণ পর তৎকালীন প্রেসিডেন্টের সামরিক সচিব মেজর জেনারেল আমিনুল করিম বিমান বাহিনী প্রধানকে ফোন করলেন। তিনি বললেন, ’স্যার আপনাকে মহামান্য রাষ্ট্রপতি আসতে বলেছেন।’ বিমান বাহিনীর প্রধান নৌ বাহিনী প্রধান এডমিরাল হাসান আলীকে তখন ফোন করলেন এবং বঙ্গভবনে যাওয়ার ব্যাপারে কিছু জানেন কি না তা জিজ্ঞেস করলেন। জনাব হাসান জানালেন স্যার আমিও এই মাত্র খবর পেয়েছি, আমিও যাচ্ছি বঙ্গভবনে। বিমান এবং নৌ বাহিনীর প্রধান বঙ্গভবনে রওয়ানা দিলেন। তারা গিয়ে দেখেন এরই মধ্যে বঙ্গভবন অকোপাইড। ওখানে ডিজিএফআইর ডিজি জেনারেল রুমির পরিবর্তে (তিনি তখন ইংল্যান্ডে), ব্রিগেডিয়ার বারী, সেনা প্রধান, লে. জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (পিএসও এফডি)। ঐখানে রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিকে উদ্দেশ্য করে সেনা প্রধান উত্তেজিতভাবে বললেন, স্যার এ সব কী হচ্ছে? এভাবে হবে না, আপনি জরুরী অবস্থা জারি করুন। এখানে একটি কথা বলে রাখা ভাল- জরুরী অবস্থা জারি করার জন্য যে বক্তব্য দেয়ার কথা সেই বক্তব্য লিখি নিয়ে যাওয়া হলো, তাও তিন কপি রেডি করে নিয়ে যাওয়া হয় তিন ধরনের। এর থেকে বুঝা যায় সেনা প্রধানের এমন পরিকল্পনা পূর্বে থেকেই ছিলো। তার এমন চিন্তা, চেতনা এবং দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাপারে অনেক দিন ধরেই কানা ঘুষা ছিলো অনেকের মাঝেই কিন্তু কেউ তা আমলে নেয়নি। তার মূল কারণ ছিলো মে. জে. মাসুদ উদ্দীন চৌধুরীর প্রতি আগাধ বিশ্বাস ও ভরসা। রাষ্ট্রপতি প্রথমে বিমান বাহিনী প্রধানকে বললেন, আপনি কী বলেন? বিমান বাহিনীর প্রধান বললেন, আপনি দুই নেত্রীকে ডেকে পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে সমস্যার সমাধান করুন। রাষ্ট্রপতি বললেন, উনারাতো আমার কথা শুনেন না, একজন আমাকে বলেন ( শেখ হাসিনা) ইয়েস উদ্দিন। তখন ব্রিগেডিয়ার বারি উত্তেজিত অবস্থায় বলতে থাকলেন, স্যার এভাবে চলতে পারে না।
ঠিকানা: সেনা প্রধান মঈন এবং বারি কেন উত্তেজিত ছিলেন?
সালাউদ্দিন: এটা ছিলো সম্পূর্ণ পরিকল্পিত নাটক। সেনা প্রধান ঐ সময় ব্রিগেডিয়ার জেনারেল বারিকে ধমক দিয়ে বলেন, বারি বস। বারি সরি বললেন। ডিজিএফআই-এর ভারপ্রাপ্ত প্রধান হিসাবে বারি কথাবার্তা বলছিলেন। এই পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রপতি সবার উদ্দেশ্যে বললেন, আমাকে একটু সময় দেন আমি ভেতর থেকে একটু আসি। সেনা প্রধান এর উত্তরে বললেন, স্যার আপনি কোথাও যেতে পারবেন না। যা সিদ্ধান্ত নেবেন আপনাকে এখানে বসেই নিতে হবে। তাহলে আমি আমার স্ত্রীর সাথে একটু কথা বলে আসি? সেনা প্রধান আবারো বললেন, যা সিদ্ধান্ত নেবার আপনাকে এখনই নিতে হবে। ম্যাডামের সাথে আপনি পরে কথা বলতে পারবেন। তিন বাহিনীর প্রধান এবং রাষ্ট্রপতি হিসাবে ইয়াজ উদ্দিনকে কারো সাথে কথা বলার সুযোগ দেয়া হলো না, কেন দেয়া হলো না? রাষ্ট্রপতি জরুরী অবস্থা জারিতে সম্মত হতে বাধ্য হয়েছিলেন। রাষ্ট্রপতি জরুরী অবস্থা জারির সিদ্ধান্তের আগে আরেকটি ঘটনা ঘটলো- যেটি ছিলো হাস্যকর। জেনারেল মাসুদ অনেকটাই বঙ্গভবনের কাছে চলে এসেছিলেন। জেনারেল মঈন জানতেন উনি এখনো বঙ্গভবনের পাশেই আছেন। তিনি জেনারেল মাসুদকে ফোন করে বললেন- মাসুদ তুমি সব কিছু রেডি কর। এয়ার চীফ তখন বললেন, মঈন রিলাক্সড, এভাবে থ্রেট দেয়ার কোন অর্থ হয় না। রাষ্ট্রপতিকে ভয় প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে জেনারেল মঈনের অভিনয়।
ঠিকানা: আপনি কি ঐ সময় চীফের সাথে ছিলেন?
সালাউদ্দিন: না ঐ সময় আমি চীফের সাথে ছিলাম না, আমি উনাকে সিঅফ এবং রিসিভ করেছিলাম এয়ার হাউজে। চীফ নিজেই আমাকে এ কথাগুলো বলেছেন। এই ঘটনায় এয়ার চীফ নিজেও একটু দু:খ পেয়েছেন। কারণ তিনি ছিলেন বিএনপি সরকার কর্তৃক মনোনীত চীফ। অবশ্য সব চীফই ছিলেন বিএনপি মনোনীত।
ঠিকানা: জেনারেল মঈনও ছিলেন বিএনপি মনোনীত?
সালাউদ্দিন: জেনারেল মঈনের ছিলো ক্ষমতার উচ্চাকাঙ্খা। জেনারলে মঈন বাংলাদেশে পাকিস্তানের পারভেজ মোশাররফ হতে চেয়েছিলেন। পকিস্তানে পারভেজ মোশাররফ যেভাবে ক্ষমতায় এসেছিলেন, জেনারেল মঈনও বাংলাদেশে সেইভাবে ক্ষমতায় আসতে চেয়েছিলেন। তিনি কিং অব বাংলাদেশ হতে চেয়েছিলেন। অন্যদিকে জেনারেল মাসুদের উপর আমাদের একটা আস্থা ছিলো, অন্য কিছু নাও হতে পারে। কিন্তু এরই মধ্যে অনেকেই জেনারেল মাসুদের ব্যাক গ্রাউন্ড সম্পর্কে জানতেন। তিনি রক্ষী বাহিনীর লোক ছিলেন।
ঠিকানা: কীভাবে বুঝলেন?
সালাউদ্দিন: ভুয়া চিঠি দিয়ে পরিবেশ তৈরি করা এবং রাষ্ট্রপতিকে জরুরী অবস্থা জারিতে বাধ্য করা এবং ক্ষমতায় এসে কিংস পার্টি গঠনের অপারেশন। বিভিন্ন পার্টি থেকে জোর করে নেতাদের চোখ বেঁধে এনে হুমকি দেয়া এবং বিভিন্ন পার্টি ভেঙ্গে দেয়ার চেষ্টা করা। এগুলোর ভিডিও তো এখন সর্বত্রই রয়েছে। আমরা দেখেছি। ২০০৭ সালের জুলাই/ আগস্ট মাসে কয়েকজন সাবেক সংসদ সদস্যের সাথে ঢাকার একটি জায়গায় ব্রি. জে. বারী বৈঠকে বসেন। উদ্দেশ্য বিভিন্ন দলের নেতাদের একত্র করে একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করা। সেই মিটিং এ বগুড়ার বিএনপি দলীয় এমপি ডা. জিয়াসহ কয়েকজন উপস্থিত ছিলো। ব্রিগেডিয়ার বারি অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতাদের সাথে বৈঠক করেছেন। যেখানে কিংস পার্টি করার কথা বলতেন। বলতেন কিংস পার্টিই বাংলাদেশকে এগিয়ে নেবে। ড. জিয়া ব্রিগেডিয়ার বারিকে জিজ্ঞেস করেছিলেন- এই পার্টির প্রধান কে হবেন। এর উত্তরে ব্রিগেডিয়ার বারি বলেছিলেন সেনা প্রধান হলে কোন অসুবিধা আাছে? তিনি ড. কোরেশীসহ অনেকের সাথে যোগাযোগ এবং মিটিং করতেন নতুন রাজনৈতিক দল গড়ার লক্ষ্যে।
ঠিকানা: আপনি বলেছিলেন সেনা প্রধান এয়ার চীফকে তিনটি বই উপহার দিয়েছিলেন। এর কারণ কী?
সালাউদ্দিন: বইটা এয়ার চীফকে পড়ার জন্য দেয়া হয়েছিলো। বইটা পড়ার দুই দিন পর এয়ার চীফ আমাকে বললেন- সেনা প্রধান আমাকে এটা কেন দিলেন? আমি উত্তর দিলাম, স্যার আমিতো বুঝতে পারছি না। এরপর এয়ার চীফ আমাকে বললেন, এটা পড়ে কী এটার উপরে সে কিছু করবে কী না? আমি বললাম, স্যার এটা সন্দেহজনক।
ঠিকানা: সেনা প্রধান মঈন যেদিন বঙ্গভবনে গেলেন, সেইদিন তিনি নিশ্চিত ছিলেন যে ক্ষমতা দখল করবেন- সেটা কি বিমান এবং নৌ বাহিনীর প্রধানরা জানতেন না বলে আপনি মনে করেন?
সালাউদ্দিন: না কেউ জানতেন না। শুধু জানতেন সেনা প্রধান ও তার কিছু সহযোগী।
ঠিকানা: রাষ্ট্রপতি যখন বাইরে যেতে চাইলেন, কিন্তু সেনা প্রধান যেতে দিলেন না, তাকে কী গুলি করার হুমকি দেয়া হয়েছিলো?
সালাউদ্দিন: রাষ্ট্রপতিকে গুলি করার হুমকি দেয়া হয়নি।
ঠিকানা: তাহলে রাষ্ট্রপতিকে কীভাবে বসিয়ে রাখা হলো?
সালাউদ্দিন: রাষ্ট্রপতিকে সরাসরি বলা হলো- স্যার আপনি কোথায়ও যেতে পারবেন না। আপনাকে এখানেই ডিসিশন নিতে হবে। শুধু ফাও হুঙ্কার দিয়ে বলেছিলেন- মাসুদ তুমি কোথায়, ট্যাঙ্ক- টুং সব ঠিক আছে কি না? এটা ছিলো সেনা প্রধান মঈনের নাটক। আমি শুনেছি যে, তিনটি পরিকাল্পনা নিয়ে সেনা প্রধান ভঙ্গভবনে গিয়েছিলেন। এ ব্যর্থ হলে বি, বি ব্যর্থ হলে সি।
ঠিকানা: এ, বি সি’টা কী কী?
সালাউদ্দিন: প্রথম পরিকল্পনা ছিলো জরুরী অবস্থা দেয়ার জন্য রাষ্ট্রপতিকে বলা। তিনি জরুরী অবস্থা জারি করতে রাজি না হলে প্রেসার দিয়ে রাজি করানো, তাও কাজ না করলে এক্সস্ট্রিমওয়েতে যাওয়া।
ঠিকানা: জেনারেল মাসুদ, ব্রিগেডিয়ার বারি- এদের নিয়ে সেনা প্রধান এই কাজ করলেন কিন্তু এক সময় দেখা গেল তাদেরকেই সরিয়ে দেয়া হলো? কারণ কী?
সালাউদ্দিন: এখানে একটি কথা বলে রাখা ভাল। আর সেটি হলো এই পরিকল্পনার মাস্টার মাইন্ড হচ্ছেন- মেজর জেনারেল এ কে এম আমিন। সেই ছিলো একাডেমিক্যালি জিনিয়াস আফিসার। ব্রিগেডিয়ার বারি ছিলেন ট্রিপিক্যাল ট্রু সোলজার। এত ব্রেইনওয়ার্ক ছিলো না। মূল প্লানটা ছিলো মেজর জেনারেল এ কে এম আমিনের। জেনারেল মঈন সরিয়েছিলেন জেনারেল মাসুদকে। মঈন সাহেব সরে যাবার পর মেজর জেনারেল আমিন এবং বারিরা নিজেরাই সরে গেলেন। জেনারেল মাসুদকে সরানোর কারণ হলো- পরবর্তীতে জেনারেল মঈন মেজর জেনারেল মাসুদকে নিজের জন্য হুমকি মনে করতেন।
ঠিকানা: তারেক রহমানের উপর বিভিন্ন ধরনের নির্যাতনের কথা আমরা শুনি। আসলে তার উপর কী ধরনের নির্যাতন হয়েছিলো এবং যারা নির্যাতন করেছিলো তাদের কী চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছে?
সালাউদ্দিন: তারেক রহমানকে নিয়ে যাওয়ার পরে নির্যাতন চালানো হয়েছিলো এবং সেই নির্যাতনে যেসব সদস্যরা জড়িত ছিলেন তাদের সম্পর্কে অনেকেই এখন জানেন। বিষয়টা প্রায় সবার কাছে খোলাসা হয়ে গিয়েছে। তারেক সাহেবের উপর নির্যাতনটা এতটা নেমে আসতো না যদি না বেগম খালেদা জিয়া বিদেশে চলে যেতেন শেখ হাসিনার মত। এখানে আমি একটি কথা বলে রাখতে চাই- জরুরী সরকারের পরে যে গণতন্ত্র (যেন তেন হলেও) এসেছে সেটা এসেছে একটি নীলনক্সার নির্বাচনের মাধ্যমে। এটা ছিলো একটি সাজানো নির্বাচন। বেগম খালেদা জিয়াকে তার দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিলো নির্বাচনে না যাওয়ার জন্য। তিনি তাদের কথা শুনেননি। তিনি জানতেন নির্বাচন হলে তার দল পরাজিত হবে। তারপরেও তিনি নির্বাচনে গেলেন যে কোন ধরনের একটি গণতান্ত্রিক সরকারের জন্য। তার মূল লক্ষ্য ছিলো মঈন- ফখরুদ্দীনের অগণতান্ত্রিক সরকারের পরিবর্তে গণতান্ত্রিক সরকার এবং গণতন্ত্র ফিরে আসুক। প্রতিটি নির্বাচনের আগেই সার্ভে রিপোর্ট আসে। সেই রিপোর্টে উল্লেখ করা হয় বিএনপি নির্বাচনে হারবে। ৯৫ থেকে ১০০টি আসন পেতে পারে। ঐ সময় আওয়ামী লীগ এবং বিদেশী কূটনৈতিকদের অংশগ্রহণে একটি সমঝোতা হয়। সেই সমঝোতা বৈঠকে আওয়ামী লীগ পরিষ্কার জানিয়ে দেয় বিএনপিকে ৩০টির বেশি সিট দেয়া যাবে না। যারা ঐ মিটিং এ ছিলেন, তারা এখনো আছেন, প্রমাণ করার জন্য তাদের ডেকে আনা হোক, জিজ্ঞাসাবাদ করা হোক, সব বেরিয়ে আসবে। ১/১১ এর কুশীলবরা এই সুযোগটি কাজে লাগান, তারা সুযোগ বুঝে আওয়ামী লীগ নেতাদের শর্ত জুড়ে দেন। আর তা হলো নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গিয়ে সরকার গঠন করলে তাদের নিরাপত্তা ও সম্মান সুনিশ্চিত করতে হবে। এই সমঝোতার ক্ষেত্রে কিছু বিদেশী কূটনীতিকের অংশগ্রহণ ছিলো। বিএনপিকে এত কম সংখ্যক আসনে বিজয়ী দেখার ইচ্ছে জাগ্রত হয় রাজনৈতিক আক্রোশ থেকে। ১/১১ এর কুশীলবরা মাইনাস টু ফর্মুলা বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয়ে সেইফ এক্সজিটের যখন নিশ্চয়তা পেল একটি রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে তখন তারা ২ বছরের দীর্ষ অবৈধ শাসনের অবসান ঘটিয়ে নির্বাচনের আয়োজন করলো। বেগম জিয়ার সেক্রিফাইসের কারণেই আজ দেশে গণতান্ত্রিক সরকার এবং তারেক রহমানের উপর এত নির্যাতন হতো না যদি বেগম জিয়া তাদের কথা মত শেখ হাসিনার ন্যায় বিদেশে চলে যেতেন। দেশে তাহলে হয়তো আজকে অন্যরকম পরিস্থিতি বিরাজ করতো- যদি মাইনাস টু ফর্মুলা জেনারেল মঈন বাস্তবায়ন করতে পারতেন।
ঠিকানা: ফখরুদ্দীন এবং মঈন উদ্দিন ছিলেন বেগম জিয়ার পছন্দের লোক। ফখরুদ্দীনকে ওয়াশিংটন থেকে নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর করলেন, মঈনকে কয়েকজনকে ডিঙ্গিয়ে সেনা প্রধান করলেন। তারা কেন এই কাজ করলেন?
সালাউদ্দিন: সেনা প্রধান মঈনের ছিলো ক্ষমতার লোভ। সেনা প্রধানের উচ্চাভিলাসকে পরিপূর্ণ করার জন্য অনেকগুলো এলিমেন্টস দাঁড়িয়ে যায়। সেই সাথে সেনা প্রধানের ভাই ভারতের অশোক লিলেন্টের সাথে দীর্ঘ দিন ব্যবসা করেছেন, তারও একটা প্রভাব আছে। দুর্ভাগ্য হলো- সেনা প্রধান ধরেই নিয়েছেন যে, তিনি তার লক্ষ্যে পৌঁছে গিয়েছেন। উনার চিন্তা- ধারার বাইরেও যে কিছু পরিকল্পনা মাফিক কার্যক্রম হয়েছিলো, ওটা বুঝার মত মানসিক অবস্থানে তিনি ছিলেন না। উনার পরিকল্পনা ছিলো ক্ষমতায় এসেই দুই নেত্রীকে বিদেশে পাঠিয়ে দেবেন, উনিই হবেন বাংলাদেশের কিং – এ পর্যায় পর্যন্ত এসে উনার চিন্তা ধারা থেমে গিয়েছে। শুধু মাত্র বেগম জিয়ার আপসহীনতার কারণে, কঠিন ব্যক্তিত্বের কারণে জেনারেল মঈনের পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়েছে। তাছাড়া যে যোগ্যতায় এ সব কাজে এগুনো দরকার, সেই কাজ করার মত যোগ্যতা এবং পরিকল্পনা কোনটাই জেনারেল মঈনের ছিলো না।
ঠিকানা: আশোক লেলের সাথে উনার বড় ভাই ব্যবসা করতেই পারেন, এটার সাথে ওটার সম্পর্কটা কী?
সালাউদ্দিন: প্রতিবেশী দেশের সাথে আরেকটি প্রতিবেশি দেশের সম্পর্ক থাকতে পারে কিন্তু ঐ সময়ে আমরা বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় কূটনীতিক পিনাক রঞ্জনের সাথে যে ধরনের মাখামাখি এবং যোগাযোগ দেখেছি, তা ছিলো সন্দেহজনক। আরো অনেক কূটনীতিক ছিলেন। যেমন ব্রিটিশ হাই কমিশনার আনোয়ার চৌধুরী, ইউএসএ, কানাডাসহ আরো অনেক দেশের কুটনীতিকরা ছিলেন। প্রতিবেশি দেশের হাইকমিশনারের সাথে উনার যে যোগাযোগ ছিলো এবং ইন্টারেকশন হতো তা ছিলো দৃষ্টিকটু।
ঠিকানা: ১/১১ এর আগে না পরে?
সালাউদ্দিন: আগে এবং পরেও।
ঠিকানা: ১/১১ এর আগে হলে গোয়েন্দা সংস্থা তা জানতো না? সেনা প্রধানের সাথে অন্যান্য দেশের হাই কমিশনারদের এই মাখামাখি তারা রিপোর্ট করেনি?
সালাউদ্দিন: তখন বিএনপি অলরেডি ক্ষমতা হস্তান্তর করে ফেলেছে। বিএনপির ক্ষমতা হস্তান্তরের পর পরই এটা চালু হয়েছে। এ সব সাক্ষাতকার সৌজন্য সাক্ষাতকারের নামে ডিজিএফআই’র ক্লিয়ান্সে হতো। যা প্রচলিত রীতিনীতির মাধ্যমেই করা যেতো ঐ সময় পিনাক রঞ্জনের মুভমেন্ট এবং আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের সাথে বৈঠক ছিলো আই ক্যাচিং।
ঠিকানা: সেনা প্রধান ভারত সফরে গিয়ে ৬টি ঘোড়া নিয়ে এসেছিলেন- এটা কারণ কী?
সালাউদ্দিন: ঘোড়া নিয়ে আসার ঘটনাতো অনেক পরের । ২০০৭ সালের ঘটনা। তিনি তখন ক্ষমতা দখল করেছেন। আমাদের দেশটি ভৌগলিকভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে। এই কারণে অনেকগুলো শক্তির দৃষ্টি বাংলাদেশের উপর রয়েছে। আমেরিকার আছে, ভারতের আছে, চীনের আছে। তারা তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়নের চেষ্টা করছেন। পরে দেখা গেল জেনারেল মঈন ইজ নট এ রাইট পার্সন। ড. ইউনূসের নামও এসেছিলো। তার ইচ্ছাও ছিলো। উনি সরাসরি বলেছেন তিনি দেশকে সুন্দরভাবেই সাজাতে চান, সে জন্য শর্ট নয়, লং টাইমের প্রয়োজন।
ঠিকানা: আমাদের দেশে আমরা দেখছি গোয়েন্দা সংস্থা বার বার ব্যর্থ হচ্ছে এবং গরীব মানুষের অর্থে জীবিকা নির্বাহ করে জনগণের বিরুদ্ধেই ষড়যন্ত্র করছে- এর কারণ কী?
সালাউদ্দিন: এ কথার উত্তরে বলা যায়, এগুলো অনৈতিক কাজ। একজন সাবেক সামরিক কর্মকর্তা হিসাবে আমি এটা বলতে পারি। অনেক ক্ষেত্রে বাংলাদেশে অনৈতিক কাজগুলোই নৈতিক হয়ে যায়। বাংলাদেশে ডিজিএফআই বলেন, আর্মি, নেভি, বিমান বাহিনী, বিডিআর, পুলিশ বলেন- সবাই যোগ্য এবং অত্যন্ত পারদর্শী স্ব স্ব কর্মক্ষেত্রে। যে কোন ঘটনা ঘটলে তারা ইচ্ছে করলে বের করতে পারেন। কিন্তু তাদের কাজ করতে দেয়া হয় না- এটাই হলো আমাদের দুর্ভাগ্য।
ঠিকানা: বাংলাদেশে কী আবারো সেনা অভুত্থ্যানের আশংকা আছে?
সালাউদ্দিন: বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের মানসিক দৃষ্টিভঙ্গী হলো যে সরকারই আসুক বাংলাদেশে বিএনপি যেন না আসে। বিষয়টা অত্যন্ত দু:খজনক। এটা প্রমাণিত সত্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি পুনর্বহাল না হলে আন্দোলন হবে, মারামারি হবে, জ্বালাও পোড়াও হবে, খুনো খুনি হবে- বিএনপি নির্বাচনে যাবে না। এতে করে কী কিছু হলো? আওয়ামী লীগ চাচ্ছে অন্য কোন শক্তি এসে আবার ইন্টারভেন করুক?
ঠিকানা: আওয়ামী লীগ সেফ এক্সজিট খুঁজছে?
সালাউদ্দিন: আওয়ামী লীগের সেফ এক্সিজিট হবে কিনা সে ব্যাপারে তারাও নিশ্চিত না। তারা মনে করছে এটাই সেফ এক্সজিট। এটা আমাদের জন্য আরেকটি দুর্ভাগ্য। বিএনপির বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের অভিযোগ বিএনপির জন্ম দিয়েছে সামরিক বাহিনীর লোকজন। কিন্তু এটাও সত্য যে ১৯৯১ সালের পর দেশে যখন গণতন্ত্র এলো তখন বাংলাদেশের মানুষই বিএনপিকে ভোট দিয়ে ক্ষমতায় নিয়ে এসেছে। তার মানে কী। তার মানে হচ্ছে বিএনপি জনগণের পার্টি এবং গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল।
ঠিকানা: ১/১১ এর সময় অনেক লোককে নির্যাতন করা হয়েছে- সেই সম্পর্কে আপনি কিছু জানেন কি?
সালাউদ্দিন: এক সময় না জানলেও এখনতো প্রায় সব কিছুই বেরিয়ে গিয়েছে। এগুলোর অডিও- ভিডিও রয়েছে। সেই সময় মানুষের উপর শারীরিক- মানসিক নির্যাতনতো অবশ্যই হয়েছে।
ঠিকানা: এটা কি ফেয়ার হয়েছে?
সালাউদ্দিন: না। ফেয়ার হয়নি। আইন অনুযায়ী কেউ করতে পারে না। ১/১১ এর গোটা দুই বছর সেনা সদস্যদের যে বাইরে রাখা হয়েছে এটার একটা নেগেটিভ ইমপ্যাক্ট পড়েছে। বিশেষ করে ১৯৯০ এর পর থেকে সামরিক বাহিনীর সদস্যরা তাদের নিষ্ঠা, সততা ও পরিশ্রম দিয়ে দেশে এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ঈর্ষণীয় প্রশংসা অর্জন করেছে। ১/১১ সেই সুনাম, প্রশংসা ও ভাবমূর্তি কেশ ক্ষুন্ন করেছে। যা সত্যিই দু:খজনক। কিছু কিছু সদস্য নিজেদেরকে বহুলভাবে বিতর্কিত করেছেন।
ঠিকানা: রাজনীতিবিদরা অন্যায় করেছেন, অসৎ কাজ করেছেন, দুর্নীতি করেছেন। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ১/১১ সেনা সরকার আসলো- তারা কীভাবে দুর্নীতি করেন, অসৎ কাজ করেন?
সালাউদ্দিন: রাজনীতিবিদদের মধ্যে সৎ- অসৎ, ভাল – মন্দ থাকতে পারে। রাজনীতিবিদরা অনেক সময় সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করেন, অনেক সময় দেশের চেয়ে দল এবং ব্যক্তি স্বার্থকে বড় করে দেখেন কিন্তু যা কিছুই পরিবর্তন হবে দেশে, তা রাজনীতিবিদদের মাধ্যমেই হতে হবে। এত দিন বাংলাদেশে একটি সংস্থা বিতর্কিত ছিলো না, ১/১১ এর পরে সেই সংস্থা বিতর্কিত হয়ে পড়েছে। যৌক্তিক কারণেই বিতর্কিত হয়ে গেছে।
ঠিকানা: জেনারেল মঈন যখন ক্ষমতা দখলসহ অন্যায় কাজ করছিলেন, অন্য দুই জন নেভী এবং এয়ার চীফ তাকে সহযোগিতা করলেন কেন?
সালাউদ্দিন: বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতিই হচ্ছেন সর্বাধিনায়ক, কমান্ডার ইন চীফ। তিনিই সবাইকে ডেকেছিলেন। জরুরী অবস্থা জারি করতে উনাকে যে বাধ্য করা হয়েছে সেটাতো বাংলাদেশের জনগণ তখন জানতো না। বাধ্য হয়েই তিনি বলেছিলেন যে আমি জরুরী অবস্থা জারি করলাম। উনি যদি বলেন, আমি জারুরী অবস্থা জারি করলাম তখন অন্যান্য চীফ তা মানতে বাধ্য। প্রশ্ন হলো রাষ্ট্রপতি কি তাদের স্বেচ্ছাপ্রণোদিতভাবে ডেকেছিলেন? জরুরী অবস্থা জারির সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন? এর উত্তর হচ্ছে- নো। উনাকে বাধ্য করা হয়েছে। এরপর প্রতি সপ্তাহেই সেনা সদরে পরিস্থিতির উপর বৈঠক হতো, সেই সব মিটিং এ আমার যাবার সুযোগ হতো এয়ার চীফের সাথে। ২/৩ টা মিটিং এ যাবার পরে এয়ার চীফ সেনা প্রধানকে ফোন করে বললেন, তুমি যা করছো আমার তো এ সবে থাকার কোন প্রয়োজন নেই। তখন সেনা প্রধান এয়ার চীফকে বললেন, ঠিক আছে স্যার আপনার আসার দরকার নেই। ঐ সব মিটিং এ যে সব বিষয় নিয়ে আলোচনা হতো তা আমার কাছে অন্ত:সার শূণ্য মনে হতো। শুধু একটি কথাই মনে হতো যার কাজ তাকেই মানায়। রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব রাজনীতিবিদদের, আর কারো নয়। প্রথমত তার উদ্দেশ্য ছিলো অসৎ, দ্বিতীয়ত তার সেই যোগ্যতা, ক্যারিশমেটিক ব্যক্তিত্ব ও ভাবমূর্তি ছিলো না।
১/১১ এর ঘটনার তিন মাস পরে তিনি অবসরে যান। এয়ার চীফ সেনা প্রধান জেনারেল মঈনকে বার বার বলেছিলেন- একটি ভোটার আইডি তৈরি করে তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচন দিয়ে নিজ দায়িত্বে ফিরে যেতে। একটা সময় এয়ার চীফ বুঝলেন জেনারেল মঈন তার উপদেশ আর নিতে ইচ্ছুক নন। একদিন সেনা প্রধান বলেই ফেললেন- স্যার আপনি এটা নিয়ে চিন্তা করবেন না, আমরা এটা নিয়ে কাজ করছি। এয়ার চীফতো চেষ্টা করেছেন। তিনি আর কী করতে পারেন? যুদ্ধ ঘোষণা করবেন?
ঠিকানা: জেনারেল মঈন ফেল করলেন কেন?
সালাউদ্দিন: ফেল করার কারণ হলো উনি যদি মেইন ১টা বা ২টা সমস্যার উপর ফোকাস করতেন তাহলে ভাল করতেন। উনি এক সাথে এত দায়িত্ব নিয়ে নিয়েছিলেন যা তার পক্ষে সামলানো সম্ভব হয়নি। দায়িত্বগুলোর মধ্যে ছিলো সাবেক মন্ত্রী, এমপিদের ধরা, ট্রুথ কমিশন করে তার সামনে গিয়ে সম্মানীত ব্যক্তিদের দিয়ে স্বীকার করানো আপনি চুরি করেছেন, সেটা আবার টিভিতে দেখানো হচ্ছে। এটা কী সভ্য সমাজে চলতে পারে? একটি বিশেষ সংস্থার লোকদের দিয়ে দেশের রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও শিক্ষকদের লাঞ্ছিত করে একটি সৎ ও সভ্য জাতি গড়া রাতারাতি সম্ভব নয়। জেনারেল মঈন তার অনুগত সদস্যদের দ্বারা বাংলাদেশে সৎ ব্যবসায়ীদের পৃষ্ঠপোষকতা করার প্রকল্প গ্রহণ করেন। যা বাস্তব সম্মত ছিলো না। একদিন বিমান বাহিনীর গোয়েন্দা পরিচালক আমাকে বললেন, সালাউদ্দিন তোমার পরিচিত বন্ধু- বান্ধব, আত্মীয়- স্বজন যারা সৎ ব্যবসায়ী তারা চাইলে একটি বিশেষ সংস্থা তাদেরকে বিভিন্নভাবে প্রশাসনিক সহযোগিতা দিয়ে দেশ সৎ ব্যবসায়ীর সংখ্যা বাড়াবে। আমি তাবে বললাম, স্যার পরিকল্পনাটি খুবই সুন্দর কিন্তু দ্রুত বাস্তবায়ন একেবারেই অসম্ভব।
ঠিকানা: পিলখানার ঘটনাটা কি পরিকল্পিত ঘটনা?
সালাউদ্দিন: পিলখানার ঘটনাটা সৈনিকদের মধ্যে যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছিলো তার দায়- দায়িত্ব মঈন- ফখরুদ্দীন সরকারকে নিতে হবে। মঈন- ফখরুদ্দীন সরকারের হটকারি সিদ্ধান্তের কারণেই সৈনিকদের মধ্যে ক্ষোভের জন্ম। আর এই ক্ষোভের বহি:প্রকাশ যেভাবে সৈনিকরা ঘটালো তা দমনে সমস্ত ব্যর্থতা হলো আওয়ামী লীগ সরকারের।
‘পিলখানার ঘটনা ছিলো সেনাবাহিনীর উপর শেখ হাসিনার পরিবারের হত্যাকান্ডের প্রতিশোধ’ঠিকানা: মঈন- ফখরুদ্দীনের হটকারি সিদ্ধান্তটা কী?
সালাউদ্দিন: একজন বিডিআর সৈনিকের দায়িত্ব কী? বিডিআরের সৈনিকদের দিয়ে যখন মঈন- ফখরুদ্দীন সরকার জনপ্রিয়তা অর্জন করার জন্য জনগণকে সেবা দেয়ার নামে বিভিন্ন জায়গা চাল ডালের দোকান শুরু করলো ( অপারেশন ডাল- ভাত) তখন বিডিআর সৈনিকরা দিনরাত পরিশ্রম করে তাদের পেশাগত দায়িত্বের বাইরে গিয়ে এ কাজগুলো করেছে। এ কাজগুলো করতে গিয়ে দেখলেন এই কর্মকান্ডের সাথে তাদেরই কিছু কিছু উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা কিছু কিছু কাজ করছেন যেগুলো বিতর্কিত। যারা দিনরাত কষ্ট শিকার করে কাজ করছেন তাদের মূল্যায়ন করা হচ্ছে না। ফলে তাদের মধ্যে ক্ষোভ আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে। তাছাড়া বিডিআর সৈনিকদের বেতন- ভাতা ও অন্যান্য সুবিধা, জাতিসংঘ মিশনে নিয়োগ, নিজস্ব বাহিনীর কর্মকর্তা নিয়োগসহ কিছু দাবি- দাওয়া ছিলো যা খফরুদ্দীন- মঈন উদ্দিন এবং পরবর্তীতে আওয়ামী সরকার মোটেও আমলে নেননি। সেই ক্ষোভের যে নিষ্ঠুর- নির্মম বহি:প্রকাশ, সেটা প্রতিরোধে ব্যর্থতা এবং তার সমস্ত দায়- দায়িত্ব বর্তমান সরকারের।
ঠিকানা: আপনার কি মনে হয় যদি মিলিটারি এ্যাকশনে যেত তাহলে এত ম্যাসাকার হতো না?
সালাউদ্দিন: আমি নিজে একজন অফিসার হিসাবে বলছি- যদি মেলিটারি এ্যাকশনে যাওয়া যেত তাহলে এত ম্যাসাকার হতো না। আমি তখন সিলেটের সমশের নগরে ছিলাম কমান্ডিং অফিসার হিসাবে। সেখানে এয়ারফোর্সের নতুন ইউনিট গড়ার কাজ চলছিলো। ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ সালে ঢাকার তেজগাঁও ফেলকন হলে একটি মিটিং ছিলো। মিটিং টি ছিলো কমান্ড এন্ড ফ্লাইট সেইফটি মিটিং। ২২ ফেব্রুয়ারি তারিখে চিঠি পেয়ে আমি চলে আসলাম ঢাকায় মিটিং এ যোগ দেয়ার জন্য। আমি ২২ তারিখে আসার পরে আমার স্ত্রীকে তার এক বান্ধবী ফোন করলো। ফোন করে বললো দোস্ত লবি এসেছে। লবি মানে শহীদ কর্নেল এলাহীর স্ত্রী। তোর সাথে অনেক দিন দেখা হয় না। তুই চলে আয়। আমার স্ত্রী বললো- আমার স্বামীও এসেছে আমি তাকে নিয়ে চলে আসবো। আমরা গুলশানে আমার স্ত্রীর বান্ধবীর বাসায় যাই। সেখানে আমরা সবাই আড্ডা মারলাম। আড্ডায় কর্ণেল এলাহীর স্ত্রী বলছিলো- ২৮ তারিখ শেষ দিনে আমরা সবাই বই মেলায় যাবো। ২৫ ফেব্রুয়ারি আমরা সবাই ফেলকন হলে বসে আছি। অনুষ্ঠান শুরু হলো সকাল সাড়ে আটটায়। অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার কিছুক্ষণ পরে একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা এলেন। তিনি স্টেজে গিয়ে এয়ার ‘পিলখানার ঘটনা ছিলো সেনাবাহিনীর উপর শেখ হাসিনার পরিবারের হত্যাকান্ডের প্রতিশোধ’চীফের কানে কানে কিছু বললেন। এয়ার চীফের অবস্থা দেখে আমি বুঝতে পারলাম কোন সমস্যা হয়েছে। আমি ছিলাম কুর্মিটোলা বেইজের আন্ডারে। বেইস কমান্ডার ছিলেন এয়ার কমোডর মশিউজ্জামান সেরনিয়াবাত। উনি আমাকে বললেন, সালাউদ্দিন তুমি আমার সাথে আস। আমরা গাড়িতে যাচ্ছি। এরমধ্যে আমাদের হেলিকপ্টার পিলখানার উপর উড়ে চক্কর দিতে লাগলো বিডিআর সৈনিকদের আত্মসমর্পনের জন্য। বিডিআর সৈনিকরা হেলিকপ্টার লক্ষ্য করে গুলি চালাল। হেলিকপ্টার ব্যাক করলো। হেলিকপ্টার নর্মাল চক্কর দিচ্ছিলো, কোন বোমা বা অস্ত্র নিয়ে যায়নি। আমরা কুর্মিটোলা যাবার পথে সেরনিয়াবাত স্যার উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কি কি করণীয় সে বিষয়ে দুজন আলোচনা করছিলাম এবং উক্ত ঘাঁটির সিকিউরিটি অফিসার হিসাবে আমি আমার পূর্বের অভিজ্ঞতার আলোকে তার সাথে আলোচনা করছিলাম। আমরা সোজা চলে গেলাম রানওয়েতে। গিয়ে দেখি এরিমধ্যে আমাদের এফ-৭ ফাইটার বিমানে রকেটগুলো লাগানো হলো, আরেকটি এম আই-১৭১ হেলিকপ্টারেও রকেট লাগানো হলো। আমরা প্রস্তুত। আমি যখন আমার কমান্ডারকে বললাম, স্যার ১৯৯৫ সালে আনসার- বিডিআরের ঘটনা ঘটলো আমি তখন বেইসের সিকিউরিটি অফিসার। জেনারেল নাসিম ওয়াজ আর্মি চীফ। আলতাফ চৌধুরী এয়ার চীফ। তখন আমাদের পাইলটরা দুটো এয়ার এ- ফাইভ জঙ্গী বিমান নিয়ে শফিপুর আনসার একাডেমির উপর কিছুক্ষণ উড়েছিলো এবং নবম পদাতিক ডিভিশন গ্রাউন্ড সার্পোট দিয়েছিলো। যার ফলে অল্প সময় পরেই খবর এলো আনসার ভিডিপি বাহিনীর বিদ্রোহীরা আত্মসমর্পণ করে। আমি এবং এয়ার কমোডর জামান তখন গোলা বারুদে সজ্জিত ফাইটার এয়ার ক্র্যাপ্টের ডানার নিচে দাঁড়িয়ে আছি। ঐ দিকে উক্ত বিমানের পাইলটরাও রেড়ি। সবাই অপেক্ষারত, কেবল মাত্র একটি নির্দেশের অপেক্ষায়। চোখের সামনে অতিচেনা মুখগুলো ভাসছে আর শংকা এবং উত্তেজনায় ভেতরটা কাঁপছিলো। আমি কমান্ডারকে বেশ কয়েকবার জিজ্ঞেস করলাম, স্যার, আর কতক্ষণ? উনি বললেন, আমরা প্রস্তুত, কেবল নির্দেশের অপেক্ষায় আছি। কিন্তু হায় সেই নির্দেশ আর এলো না। যে নির্দেশ বাঁচাতে পারতো অনেকগুলো সূর্য সন্তান। এমন সময় মেজর এমরান তার ২০ থেকে ২২ জন কমান্ডো নিয়ে কুর্মিটোলার মেইন গেইটে চলে আসলো। গেইট থেকে কমান্ডারকে জানালো হলো ওরা যে আসবে আমরা তো জানি না। আমি আমার কমান্ডারকে বললাম, স্যার নির্দেশ আসতে যদি ৫ মিনিটের বেশি সময় নেয় তারা এটা মেনে নিবে না। কমান্ডারের নির্দেশে আমি তাদের শান্ত করে পাশে নিয়ে আসলাম। এরমধ্যে এয়ার চীফ জিয়াউর রহমান সাহেব আসলেন। তিনি বেস কমান্ডারকে জিজ্ঞেস করলেন, রেডি কি না। বেস কমান্ডার বললেন, স্যার আমরা পুরোপুরি রেডি। উনি বললেন, নির্দেশের জন্য অপেক্ষা কর। নির্দেশতো আর আসে না। আমরা অপেক্ষা করছি। যত বড় নিরাপত্তা বিশ্লেষক হোক বা সামরিক বিশারদ হোক, আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে বলে, আমার সহকর্মীদের ধরে ধরে হত্যা করছে, আর আমরা ওয়েট এন্ড সি পলিসিতে যাবো, এটা হতে পারে না।
ঠিকানা: ঐ সময়তো প্রধানমন্ত্রী সেনা প্রধানের সাথে কথা বলছিলেন?
সালাউদ্দিন: প্রধানমন্ত্রী আর্মি চীফ এবং এয়ার চীফের সাথে কথা বলেছেন, বৈঠক করেছেন, মোস্টলি আর্মি চীফ। এরই মধ্যে সেনা বাহিনীর একটি দল আক্রান্ত সেনা অফিসার এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের রক্ষার জন্য পিলখানার অতি নিকটে চলে গিয়েছিলো। তাদের ওখানে থামানো হলো। কথিত আছে- এই ঘটনার পর আর্মির অনেক ইয়ং অফিসারের চাকরি চলে যায়। তারা আলোচনা করেছেন এবং বলেছেন, এটা সেনা বাহিনীর উপরে প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের হত্যাকান্ডের প্রতিশোধ- এ রকম ভাবলে অবাক হবার কোন কারণ নেই। তারা বলেছেন, এই হত্যাকান্ড রোধ করা যেত। প্রধানমন্ত্রী তার পরিবারের হত্যাকান্ড নিয়ে সেনাবাহিনীর উপর প্রতিশোধ নিলো বলে আমাদের মনে সন্দেহ। এমন কি সেনাকুঞ্জের মিটিং এ চেয়ার ভাঙ্গার ঘটনাও ঘটে। অফিসাররা প্রচন্ড আপসেট ছিলো। নিহত কর্মকর্তাদের জানাজায় অংশগ্রহণ করতে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত ও কিছু আওয়ামী নেতৃবৃন্দ সেনানিবাস মসজিদে এলে সেনা অফিসাররা ’ ভারতীয় দালাল’ বলে তাদের দিকে তেড়ে এলে সিনিয়র অফিসারদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতির অবনতি ঘটেনি। এই ঘটনা ঘটার আগে গোয়েন্দা তথ্য ছিলো সৈনিকদের মধ্যে প্রচন্ড ক্ষোভ বিরাজ করছে। এ ক্ষোভটা এমন পর্যায়ে চলে গিয়েছিলো যে সৈনিকরা কমান্ড ভেঙ্গে তাদের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ তৎকালীন স্বরাস্ট্রমন্ত্রী এডভোকেট সাহারা খাতুনের সাথে গিয়ে গোপনে দেখা করেছিলেন। তারা লোকাল এমপি ব্যারিস্টার তাপসের সাথে দেখা করেছিলেন, শেখ সেলিম এমপির সাথে যোগাযোগ করেছিলো। তাদের ক্ষোভের কথা বলেছেন। এটাতো কমন সেন্সের ব্যাপার যে- এক দল সিপাহী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে পৌঁছে গিয়েছে চেইন অব কমান্ড ভেঙ্গে, সেটাকে এডড্রেস করা হলো না, গুরুত্ব দেয়া হলো না। এটা গুরুত্ব না দেয়া হলো প্রথম ব্যর্থতা। দ্বিতীয় ব্যর্থতা হলো- যে সকল কর্মকর্তাকে গুলি করা হলো আমি নিশ্চিত হয়ত তারা সবাই মারা যাবেন, অনেকেই কালভার্টের নিচে ছিলেন, কেউ কেউ অন্য জায়গায় ছিলেন, ২৬ তারিখ পর্যন্ত অনেকে বেঁচে ছিলেন লুকিয়ে। কেউ পায়ে গুলি খেয়েছেন, কেউ শরীরের অন্য কোথাও গুলি খেয়েছেন। তারা ব্লিডিং এ মারা যাচ্ছেন। বাংলাদেশে সামরিক বাহিনীর এত কর্মকর্তা এবং কর্মকর্তার পরিবারকে রক্ষা করার জন্য যদি আমাদেরকে সমঝোতার জন্য অপেক্ষা করতে হয়- তাহলে এ কৌশলকে আমি বলবো অবাস্তব, অপরিপক্ক এবং হটকারি কৌশল। এমন একটি নৃশংস হত্যাকান্ড যিনি বা যারা হতে দিয়েছেন তাদের স্ব স্ব পদে থাকার কোন অধিকার নেই। আর যদি বুঝে থেকেও কিছু না করে থাকে তাহলে এই নির্মম হত্যাকান্ডের জন্য তারা দায়ী।
ঠিকানা: পিলখানার হত্যাকান্ড কি সাজানো?
সালাউদ্দিন: আমি আগেই বলেছি ক্ষোভ সৃষ্টির কারণ হচ্ছে মঈন- ফখরুদ্দীন সরকার। আর ক্ষোভটার যেভাবে বহি:প্রকাশ ঘটিয়েছে তা প্রতিরোধে ব্যর্থতা হচ্ছে বর্তমান সরকারের। কারণ তারা জানতেন কী হচ্ছে। আপনাদের নিশ্চয় বড়াইবাড়ি সীমান্তের কথা মনে আছে। সীমান্তে বাংলাদেশী বিডিআর কতজন বিএসএফকে মেরে ফেলেছিলো? তখন ডিজি জেনারেল ফজলুর রহমান। এটা আওয়ামী লীগের গতবারের ক্ষমতায় থাকার সময় হয়েছিলো। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে আমাদের ‘পিলখানার ঘটনা ছিলো সেনাবাহিনীর উপর শেখ হাসিনার পরিবারের হত্যাকান্ডের প্রতিশোধ’বিডিআর যদি দুর্বল হয় তাহলে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের জন্য বিরাট এডভান্টেজ এবং তাদের জন্য বিজয়। পিলখানার ঘটনার সাথে এ ঘটনা নিয়েও মানুষের মধ্যে সন্দেহ রয়েছে। ইয়ং সামরিক সদস্যদের মধ্যে যারা চাকরি হারিয়েছেন, তাদের অভিযোগ এটা হতে দেয়া হয়েছে। এটাকে রোধ করা যেত, রোধ করা হয়নি- যখন সেনা অফিসাররা মারা যাচ্ছেন, আর প্রধানমন্ত্রী সমঝোতা বৈঠক করছেন এবং মন্ত্রীরা বলছেন এর সাথে জঙ্গী কানেকশন আছে। এর চেয়ে দুর্ভাগ্য আর কী হতে পারে আমাদের জন্য।
ঠিকানা: আমাদের রাজধানীতে সেনাবাহিনীর এতগুলো অফিসারকে মেরে চলে গেল- গোয়েন্দা সংস্থা কী করেছে?
সালাউদ্দিন: এটাতো গোয়েন্দা সংস্থার চরম ব্যর্থতা। বিডিআরের গোয়েন্দা সংস্থা এ খবরটা উদঘাটন করেছিলো। বিডিআর সদস্যরা পিলখানার ভিতরে লিফলেট ছেড়েছিলো বিডিআর কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। বিলি করার পূর্বেই তারা সেটা সংগ্রহ করেছিলো এবং কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছিলো।
ঠিকানা: এ ঘটনার কি তদন্ত রিপোর্ট বেরিয়েছে?
সালাউদ্দিন: দুটো তদন্ত পর্যদ গঠিত হয়েছে। লে. জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর নেতৃত্বে সামরিক পর্ষদ দ্বারা এই নির্মম ঘটনার তদন্ত হয়েছিলো। সেই তদন্তে যে তথ্য এবং সুপারিশ এসেছিলো তা এখনো জনসম্মুখে প্রকাশ করা হয়নি। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে আমি সংশ্লিষ্ট এক ব্যক্তির কাছে শুনেছি- এই তদন্ত রিপোর্ট নিয়ে যখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে যাওয়া হয়, উনি দেখে ক্ষোভের সাথে বলেছিলেন- ’তাহলে দোষীদের মধ্যে আমার নামটাও লিখে দেন।’
ঠিকানা: তাহলে এ রিপোর্ট আর প্রকাশ পাবে না?
সালাউদ্দিন: এখন পর্যন্ত প্রকাশ পায়নি।
ঠিকানা: এতগুলো সামরিক অফিসারকে মারা হলো। ইতিমধ্যে বিচার করা হয়েছে। কারো ২ বছরের জেল, কারো ৫ বছরের জেল, আবার কারো ৭ বছরের জেল- এটাই কী সুবিচার?
সালাউদ্দিন: এটা আগে বলি। এ বিচার যখন চলছিলো তখন অনেক আসামীই বন্দী থাকা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছেন। এই মৃত্যু স্বাভাবিক মৃত্যু নয় বলে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ তাদের রিপোর্টে উল্লেখ করেছে। তা ছাড়া আমার পরিচিত যারা মৃত্যুবরণ করেছেন, তাদের মৃত্যুও স্বাভাবিক ছিলো না। আর মৃত্যুর বদলে সামান্য জেল- তাহলে বুঝতেই পারেন বিচারের অবস্থা। এটা নিয়েও অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন।
‘পিলখানার ঘটনা ছিলো সেনাবাহিনীর উপর শেখ হাসিনার পরিবারের হত্যাকান্ডের প্রতিশোধ’ঠিকানা; এটা কারা করেছেন এবং কেন করেছেন?
সালাউদ্দিন: অনেকেই বলেন যে, কিছু সাক্ষী বন্দী অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছে। যে সাক্ষীগুলো অনেক তথ্যই দিতে পারতো। যে তথ্যে বর্তমান সরকাররে বিতর্কিত ও বিব্রত হবার ভয় ছিলো। সাক্ষীদের শারীরিক-মানসিক অসুস্থতা নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারের। যে কোন দেশেই বন্দীশালায় মানুষ মারা গেলে সেই দেশের সরকারের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হবেই। তা ছাড়া বাংলাদেশে এর সংখ্যাতো বেশি। আমি মাত্র কিছু দিন আগে বাংলাদেশ থেকে এসেছি। অনেক সরকার দেশ চালিয়েছে কিন্তু এবার আওয়ামী লীগ সরকারের দুর্নাম সারা বিশ্বব্যাপী। ঘুষ, দুর্নীতি, হত্যা, গুম- সব মিলিয়ে চরম পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে। এটা হয়েছে নেতৃত্বের ব্যর্থতার কারণে।
ঠিকানা: বিডিআর হত্যার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাড়ি দেয়াসহ যে সব প্রতিশ্রুত দিয়েছিলেন দুস্থ পরিবারকে তা কি বাস্তবায়ন করা হয়েছে?
সালাউদ্দিন: না, হয়নি। সরকার প্রধান শেখ হাসিনা তার কমিটমেন্ট রক্ষা করেননি। এখানে আমি একটি কথা বলতে চাই, আর সেটি হলো- যারা মারা গিয়েছেন তাদের মধ্যে ৩৫% অফিসারের সাথে আমি কাজ করেছি। আমি তাদের পরিবারকে জানি। তাদেরকে যথেষ্ট সুযোগ- সুবিধা দেয়া হয়েছে। তাই বলে তো সেটাকে মৃত্যুর সাথে তুলনা করা যাবে না। তাদের নগদ অর্থ দেয়া হয়েছে, তাদের জন্য এ্যাপার্টমেন্ট তৈরি করা হচ্ছে- কিন্তু সমস্যা হলো। তাদেরকে বলা হচ্ছে এ ব্যাপারে কোথাও কোন আলোচনা করা যাবে না। আমি তিনটি পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলার চেষ্টা করেছি। তারা আমাকে বলেছেন, ’ভাই এ গুলো নিয়ে আর কোন কথা বলবেন না। আমাদের যা যাবার তাতো গিয়েছে, সরকার যা সুবিধা দিচ্ছে সেটাই আমাদের সম্বল। এটা বন্ধ হোক আমরা চাই না। কোন শোক সভা বা মিছিল করা যাবে না, প্রেস কনফারেন্স করা যাবে না। এটা অলিখিত নির্দেশ।’ কিন্তু কেন?
ঠিকানা: এতদিন আমাদের দেশে অভিযোগ ছিলো সরকার সব কিছুই দলীয়করণ করার চেষ্টা করেন। এবার নতুন করে শুনা গেল সেনাবাহিনীতে দলীয়করণ করা হয়েছে। আপনার মন্তব্য কী?
সালাউদ্দিন: ১৯৯১ সালে আমাদের দেশে যখন সত্যিকারের গণতান্ত্রিক ধারা আসলো, এরপর প্রতিটি সরকার কিছু না কিছু দলীয়করণ করেছে। কিন্তু এবার এমন একটি পর্যায়ে চলে গিয়েছে যে অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করেছে তারা।
ঠিকানা: আমার রাজনৈতিক বিশ্বাস থাকতে পারে, আমি যে কোন দলের রাজনীতি করতে পারি, কিন্তু সেনা বাহিনীতে কাজ করার সকল যোগ্যতা আমার রয়েছে কিন্তু অন্যদল করার কারণে সেনা বাহিনীতে আমার কেন চাকরি হবে না?
সালাউদ্দিন: এটা আমাদের দেশের একটি গতানুগিতক ধারা। আমাদের দেশে যারা আর্মস ফোর্সে রয়েছেন তারাও কোন কোন রাজনৈতিক দলের সমর্থক হতে পারেন, নির্বাচনের সময় তারা কাউকে ভোট দিচ্ছেন। তারপরেও তাদের দুটো আইন ফলো করতে হচ্ছে।
ঠিকানা: যুদ্ধের কারণে গোলাম আজমের বিতর্কিত ভূমিকা ছিলো কিন্তু তার কর্মের জন্য কেন তার ছেলের চাকরি চলে যাবে- এটা কি ফেয়ার?
সালাউদ্দিন: না এটা কোনভাবেই ফেয়ার নয়।
‘পিলখানার ঘটনা ছিলো সেনাবাহিনীর উপর শেখ হাসিনার পরিবারের হত্যাকান্ডের প্রতিশোধ’
ঠিকানা: সেনা প্রধান নিয়োগের ক্ষেত্রে বলুন?
সালাউদ্দিন: পৃথিবীর সকল দেশেই সরকার চীফ নিয়োগ দিয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে পেশা ও যোগ্যতার পাশাপাশি পছন্দ- অপছন্দ থাকতেই পারে।
ঠিকানা: সেনা বাহিনীর আগের ইমেজ কি আছে?
সালাউদ্দিন: ১৯৯০ সাল থেকে ২০০৭ সাল- এই ১৭ বছরে আর্মি জনগণের কাছ থেকে শ্রদ্ধা, ভালবাসা রিগেইন করেছিলো, ২০০৭ সালের ঘটনার পরে তা কিছুটা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে রইলো। শুধুমাত্র জেনারেল মঈনের দুই বছরের বিতর্কিত কর্মকান্ডের জন্য।
ঠিকানা: মঈনের ব্যাপারে আপনাকে ক্ষুব্ধ মনে হচ্ছে। তার প্রতি কী আপনার কোন ব্যক্তিগত আক্রোশ আছে?
সালাউদ্দিন: আমার বন্ধুরা আমাকে বলতো- তুইতো ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে। চীফের একান্ত সচিব। তোর মন খারাপ কেন? জেনারেল মঈন যেটা করেছেন, সেটা কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না। প্রথম দিন থেকেই আমি আমার চীফকে বলেছি, ’স্যার এটা কী দেশের জন্য ভাল হলো। তিনি আমাকে বলেছিলেন, প্রে ফর দা নেশন।’ এটা আমার বিবেক।
ঠিকানা: আপনি কি চাকরি ছেড়ে দিয়ে এসেছেন?
সালাউদ্দিন: হ্যাঁ, আমি চাকরি ছেড়ে দিয়ে এসেছি। আমি স্বেচ্ছায় অবসর নিয়েছি। পিলখানার ঘটনার পর আমি ২০০৯ সালের জুনে আবেদন করেছিলাম। পিলখানায় আমাদের এতগুলো অফিসার অসহায়ের মত মৃত্যুবরণ করতে দেখেছি, কেউ তাদের রক্ষা করতে এগিয়ে আসেনি। আমি তো ঘটনাটা দেখেছি, মনিটর করেছি কীভাবে তিলে তিলে তারা মুত্যুরকোলে ঢলে পড়লো। চাকরিতে ধরে রাখার চেষ্টা করেছে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু আমার সিদ্ধান্তে আমি অটল ছিলাম এবং আবেদনের আড়াই বছর পর আমি অবসরে যেতে পেরেছি।
‘পিলখানার ঘটনা ছিলো সেনাবাহিনীর উপর শেখ হাসিনার পরিবারের হত্যাকান্ডের প্রতিশোধ’
ঠিকানা: সাধারণ মানুষের ধারণা পিলখানার ঘটনা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং জেনারেল মঈন ভালভাকে সামাল দিয়েছেন এবং অনেক জীবন রক্ষা পেয়েছে- আপনার মন্তব্য কী?
সালাউদ্দিন: এটা সাধারণ মানুষের ধারণা নয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার দলের লোকজনই এটা প্রচার করেছে। তারা বলেছে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য যুগশ্রেষ্ঠ বক্তব্য, যথাযথ পদক্ষেপ নিয়েছেন, না হলে আরো প্রাণহানি ঘটতো। আমি যেটা মনে করছি- আর্মিকে ট্রেইন করা হয়েছে টু প্রটেক্ট দেয়ার মাদারল্যান্ড, ইফ দে ক্যান নট প্রটেক্ট দেয়ার ওন ব্রাদার্স। হাও দে উইল প্রটেক্ট দেয়ার মাদারল্যান্ড? দ্বিতীয় প্রশ্ন হলো- আমাদের সকল প্রস্তুতি নেয়া, অস্ত্র হাতে কিন্তু আমরা তাদের রক্ষা করতে পারলাম না, উপরের নির্দেশ পাওয়া গেল না। গুজব আছে যে জেনারেল মঈনকে আবার এক্সটেনশন দেয়ার টোপ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যখন ঘটনা ঘটে, তখন মঈন সাহেবকে বলা হলো মঈন সাহেব আপনি কন্ট্রোল করেন, আপনার বিষয়ে আমি দেখছি। এত বড় একটা ঘটনা ঘটার পর প্রধানমন্ত্রী সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করলেন? কিন্তু কেন? যারা সেনা বাহিনীর অফিসারদের হত্যা করছে তাদের ক্ষমা করার অধিকার কী প্রধানমন্ত্রীর আছে?
ঠিকানা: আপনাকে ধন্যবাদ।
সালাউদ্দিন: ঠিকানা পরিবারকে ধন্যবাদ
সূত্র: http://mlmnews24.com/bangla/archives/4563
বি:দ্র:
কার কথা সত্য , কার কথা মিথ্যা বুঝতে পারছি না। যদি সত্য হয় তবে দেশে থাকতেই বলতে পারতেন।
২| ১৯ শে আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৩:৩০
মিঠুন_বিশ্বাস_রানা বলেছেন: শুধু এইটুকু বলব কেউ নির্দিষ্ট রাজনৈতিক মতাদর্শী হলেই যা বলবে তাই বিশ্বাস করতে হবে এবং তা প্রচার করতে হবে, তাহলে তার মতো অর্বাচীন আর কেউ নেই .......!!!!
আমার এ লেখাটা পরে দেখতে পারেন.............................
Click This Link
আর একটা কথা........ পুঞ্জীভূত ক্ষোভ থেকেই তারা বলেছিল আমরা আর্মি অফিসার চাই না আমাদের সরকার নিজস্ব অফিসার দিক না হলে বিসিএস এর মাধ্যমে পারমান্টে অফিসার দিক। তিন বছরের জন্য ভাড়া করা অফিসার চাই না। ( মূলত দাবি এটাই ছিল যা পরে মিডিয়া ও সরকার ডালভাতে নিয়ে গেছে)
১৯ শে আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৪:০৮
অন্য কথা বলেছেন: পড়ছি সবারটাই। জানুক সবাই । উম্মোচিত হোক সত্য ।
৩| ১৯ শে আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৩:৩৭
ক্যাচালবাজ বলেছেন: "বিগত বিএনপি সরকারের কিছু ভুলভ্রান্তি হয়তো ছিলো" আর পড়া গেল না, দলকানার কথা শুনে লাভ কি.......।
১৯ শে আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৩:৪৯
অন্য কথা বলেছেন: দেশে নিরপেক্ষ, সৎ লোকের অভাব।
৪| ১৯ শে আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৫:৪৮
ইসপাত কঠিন বলেছেন: সত্যের সাথে মিথ্যা মিশালে মিথ্যাটাকে খুঁজে পাওয়া কঠিন। আর মিথ্যার সাথে সত্য মেশালে সত্যটাকে খুঁজে পাওয়া কঠিন।
৫| ২১ শে আগস্ট, ২০১৩ সকাল ৮:২৩
রাজীব বলেছেন: পদাধিকার বলে আর্মি চীফ এয়ার চীফের সিনিয়র, তারপরও আর্মি চীফ এয়ার চীফকে স্যার বলছে আর এয়ার চীফ আর্মি চীফকে তুমি করে বলছে, ব্যাপারটা বুঝলাম না।
৬| ২১ শে আগস্ট, ২০১৩ সকাল ৯:৫২
ইসপাত কঠিন বলেছেন: রাজীব বলেছেন: পদাধিকার বলে আর্মি চীফ এয়ার চীফের সিনিয়র, তারপরও আর্মি চীফ এয়ার চীফকে স্যার বলছে আর এয়ার চীফ আর্মি চীফকে তুমি করে বলছে, ব্যাপারটা বুঝলাম না
সশস্ত্রবাহিনী, বিশেষ করে সেনাবাহিনী এই অলিখিত ভদ্রতা অনুশীলন করে থাকে যে পদাধিকার বলে সিনিয়র তাঁর চাকরী সময়কাল অনুযায়ী সিনিয়রকে স্যার বলে সম্বোধন করে। এক ধরনের অলিখিত হৃদ্যতা।
৭| ২১ শে আগস্ট, ২০১৩ সকাল ১০:০২
এক্সট্রাটেরেস্ট্রিয়াল স্বর্ণা বলেছেন:
'ঠিকানা' একটা জামাতী পত্রিকা।
২১ শে আগস্ট, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:২২
অন্য কথা বলেছেন: বাংলাদেশে প্রতিটি পত্রিকাই কোন না কোন দলের লেজুড়বৃত্তি করে। নিরপেক্ষ পত্রিকা পাবেন কই।
©somewhere in net ltd.
১|
১৯ শে আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৩:২১
চলতি নিয়ম বলেছেন: যাক তাইলে মলম পত্রিকাও আছে?
এতবড় পোস্ট পড়ার ধর্য্য পাইলাম না।