![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সকালে ঘর থেকে বের হয়ে অপছন্দের মানুষের মুখ দেখা মাত্রই দিনটা শুভ যাবে কি যাবে না এই অশুভ চিন্তায় শুভঙ্করের দিনটা যে খারাপ যাবে তা সহজেই অনুমেয়। অপছন্দের লোকটা সত্তর বছরের একজন বুড়ো। চেইন পান-খোর। চেইন স্মোকাররা যেমন একটা শেষ হতেই আরেকটা সিগারেট ধরায়, ঠিক তেমনি এই বুড়ো পান এক খিলি শেষ হতেই হাতে রাখা বাক্স খুলে আরেক খিলি মুখে দেয়।
প্রি-অ্যাজাম্পশন হচ্ছে যেকোন ভাল কিংবা মন্দ ভবিষ্যতের সূচনা।
ট্যাক্সির জন্য দাঁড়িয়ে শুভঙ্করের অবচেতন মন বলল ট্যাক্সি পেতে আজ বেগ পেতে হবে। চারটে ট্যাক্সি পরপর যাত্রী বোঝাই দেখে তার মন বলল, ‘জ্বি হাঁ, দিনটা মন্দই যাইবে।’
সে অগত্যা অনিচ্ছাস্বত্বেও ভিড়ের মধ্যে বাসে উঠে দাঁড়াল। ড্রাইভার একটু পরপর কড়া ব্রেক ধরলে সে প্রায় এক মহিলার উপর গিয়ে পড়ছিল। মহিলা চোখ রাঙিয়ে বিড়বিড় করে সম্ভবত গালমন্দ করল তাকে। সে মিনমিনে ভাব ধরে আড়চোখে মহিলার দিকে তাকালে মহিলা আরো রেগে যায়।
বাস থেকে গন্তব্যে নেমে ভাড়া দিতে গিয়ে দেখে তার মানিব্যাগ উধাও! গাড়িতে পকেটমার হয়ে গেছে। ভাড়া দিতে না পারায় কন্ডাক্টর অবিশ্বাসের সুরে বলল, ‘যান মাফ কইরা দিলাম।’ শুনে চড় দিতে ইচ্ছে করলেও শুভঙ্কর হাসি হাসি মুখে অফিসের দিকে ঘুরে হাঁটা দিল।
এদিকে ট্রাফিক জ্যামের কারণে যথাসময়ে উপস্থিত না হওয়ায় অফিসে বস মৃদু বকলো, ‘এভরি সেকেন্ডের টাকা কোম্পানি দিচ্ছে, আর আপনারা পনেরশ সেকেন্ড লেট করেন!’
কাজ শুরু করলে ফাইলে করল তিনটে ভুল। সে ভুল সংশোধন করতে বসে লাঞ্চের সময় প্রায় শেষের দিকে চলে এল। খেতে গিয়েও দুর্ভাগ্য তাকে ছাড় দিল না। খাবারে তার পছন্দের কোন আইটেম আর অবশিষ্ট নেই।
কয়েকজন কলিগ বিদ্রূপের সুরে হেসে বলল, ‘প্রমোশনের জন্যে তো হেব্বি খাটছেন।’
অফিস শেষে এটিএম বুথে টাকা উঠাতে গিয়ে কার্ড গেল আটকে। সে এটিএম মেশিনে ২টা লাথি মারল সজোরে।
সিকিউরিটি দরজা খুলে রাইফেল তাক করে বলল, ‘হ্যান্ডস আপ, স্যার!’
ক্লান্ত শুভঙ্কর বাসায় ফিরে টাওয়েল হাতে বাথরুমে প্রবেশ করল। গোসল করতে গিয়ে দেখে টেপে পানি নেই।
চিৎকার করে জমিদারের চৌদ্দগোষ্ঠী উদ্ধার করল সে।
সে যাইহোক, শুভ্রাকে সে কথা দিয়েছে আগামীকাল অফিস থেকে বিকেলে ছুটি নিয়ে তাকে কর্ণফুলী নদীতে নৌকা ভ্রমণে নিয়ে যাবে। এমন একটা দিন পার করবার পর সে কিছুতেই সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না আগামীকাল যাবে কিনা।
সে ভাবল কয়েন নিয়ে টস করা যাক। এরপর সে ‘হেড’ উঠলে যাবে ভেবে ‘টেল’ এবং ‘টেল’ উঠলে যাবে টস করে ‘হেড’ পেল।
সে কিছুতেই বুঝতে পারছে না কেন এমন ঘটছে। সে যা করছে তা-ই ভুল হচ্ছে। অন্যমনস্ক হয়ে কফি মগটা টেবিলে রাখতে গিয়ে মেঝেতে ফেলে দেয় সে। টুকরো টুকরো হয়ে মগটা মেঝেতে ছড়িয়ে পড়ে। সে ছড়ানো ছিটানো মগের টুকরোর দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে।
এমন অশুভ একটা দিনের পর রাতে তার ঘুম আসেনা। সে এপাশ ওপাশ করে শেষে ঘুমিয়ে পড়ে। মাঝরাতে দুঃস্বপ্ন দেখে তার ঘুম ভেঙ্গে যায়। চোখ মেলে সে দেখে তার মাথা বরাবর উপরে একটা মাকড়সা ঝুলছে।
.......................................
.......................................
ভোরবেলা কাকের বিরক্তিকর কা-কা ডাকে তার ঘুম ভাঙে। আড়মোড়া ভেঙে সে উঠে দাঁড়িয়ে প্রস্তুত হয় অফিসের জন্য। গতকালের কোন কিছুই সে আর মনে রাখতে চায়না আজ।
ঘর থেকে বের হয়েই সে যথারীতি ঐ বুড়ো লোকটাকে দেখতে পেল। বুড়ো হুইলচেয়ারে বসে পান চিবুচ্ছে।
শুভঙ্করের মাথায় শুভ বুদ্ধির উদয় হল। সে বুড়োর দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসল।
‘নাহ্, লোকটাকে অপছন্দ করার কোন কারণ নেই।’ মনে মনে ভাবল সে।
এগিয়ে গিয়ে বলল, ‘চাচা, ভাল আছেন?’
‘জ্বি, আল্লার রহমতে ভাল আছি।’ বুড়ো একগাল হেসে উত্তর দিল।
‘চাচা, দোয়া করবেন।’
এই বলে হাসিমুখে শুভঙ্কর বিদায় নেই।
দেখা যাক, আজ শুভঙ্করের দিনটা কতটা খারাপ যায়!
©somewhere in net ltd.