| নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মহিউদ্দিন হায়দার
শব্দে আমার আশ্রয়, লেখায় আমার মুক্তি। এখানে আমি লিখি, ভেবে দেখি, আর খুঁজি মানুষের মনের গল্প।
সাদিয়া — নামটার ভেতরেই একরাশ কোমলতা, একফোঁটা নির্মলতার ছোঁয়া। কিন্তু এই মেয়েটির হাসির আড়ালে ছিল এক বিভীষিকার গল্প, এক নিষ্ঠুর দ্বিচারিতা, যা শেষে কেড়ে নেয় দুইটা তরতাজা প্রাণ।
সপ্তম শ্রেণী থেকে রোমেলের সাথে প্রেম। তখনকার প্রেম ছিল সরল, স্কুলড্রেসে লুকানো চিঠির মতো নিঃস্বার্থ। রোমেল তাকে ভালোবাসতো নিঃশেষ হয়ে। বড়লোকের ছেলে, দামি ঘড়ি, দামি বাইক— সবকিছুই ছিল তার। কিন্তু সাদিয়ার কাছে ওসব নয়, দরকার ছিল মনোযোগ, যত্ন, একটু প্রশ্রয়।
সময় বয়ে গেলো, স্কুল থেকে কলেজে উঠলো তারা। আর এই কলেজ জীবনের প্রথম বর্ষেই সাদিয়ার জীবনে ঢুকে পড়লো নতুন একটা নাম — হাবীব। তৃতীয় বর্ষের মেধাবী ছাত্র, চোখে স্বপ্ন, মুখে বিনয়। গ্রামীণ মধ্যবিত্ত ঘর, কিন্তু মনের দিক দিয়ে ছিল রাজা। কারো দিকে তাকিয়ে কথা বললে মনে হতো সে মানুষ নয়, কোনো দার্শনিক— পৃথিবীর কোলাহল থেকে আলাদা এক আত্মা।
সাদিয়া বুঝতেই পারেনি কখন তার চোখের দৃষ্টি হাবীবের দিকে আটকে গেছে। রোমেলের কাছে শরীরী ঘনিষ্ঠতা থাকলেও, হাবীবের দিকে তার মন ছুটে যেতো প্রতিদিন। হাবীব জানতো না, কিন্তু সাদিয়ার মনের ভেতরে সে হয়ে উঠেছিল এক নীরব ঝড়।
রোমেল তা টের পেয়েছিল। ভালোবাসা মানুষকে করে তোলে ঈর্ষাপরায়ণ। রোমেল বলেছিল,
“হাবীবের কাছ থেকে দূরে থাকো, সাদিয়া। ও তোমার জন্য নয়।”
সাদিয়া মাথা নিচু করে বলেছিল, “তুমি বুঝবে না রোমেল… ওর চোখে আমি নিজেকে দেখি।”
রোমেলের চোখে তখন লাল আগুন জ্বলে উঠেছিল। সে জানতো না এই ‘নিজেকে দেখা’র মানে হয়তো তার জীবনটাই কেড়ে নেবে।
পরদিন, এক ভয়ংকর বিকেল। হাবীব টিউশন শেষে বাড়ি ফিরছে, বই হাতে, স্বপ্ন বুকে। রোমেল তার পথ রোধ করে দাঁড়ালো। কথায় কথায় উত্তেজনা, তারপর আচমকা ঝলসে উঠলো একটা চকচকে অস্ত্র। চুরির ধারালো ফলক কয়েক সেকেন্ডে কেটে ফেললো এক নিরপরাধ ছেলের জীবন। রক্তে ভেসে গেলো শহরের ফুটপাত, নীরব সাক্ষী হয়ে রইলো একটা গলির বাতি।
পুলিশ এল, রোমেল ধরা পড়লো, শিকলে বাঁধা হলো তার ভালোবাসা আর জীবন।
আর সাদিয়া?
সে কেঁদেছিল, কিন্তু কান্নাটা যেন সাজানো ছিল।
কয়েক মাস পর, সামাজিক মাধ্যমে দেখা গেলো তার নতুন ছবি — সাদা পোশাকে, পাশে এক আমেরিকান প্রবাসী স্বামী, পেছনে নিউইয়র্কের আকাশচুম্বী ভবন। মুখে প্রশান্তি, চোখে আত্মতৃপ্তি। যেন কিছুই ঘটেনি।
হাবীবের কবরের পাশে আজো পড়ে থাকে একটা শুকনো ফুল, হয়তো তার মায়ের হাতে রাখা।
রোমেল হয়তো ফাঁসির দড়িতে ঝুলে গেছে, চোখে এখনো সাদিয়ার মুখ ভাসছে।
আর সাদিয়া?
সে আজও আয়নায় নিজের মুখ দেখে, কিন্তু বুঝতে পারে না— তার চেহারায় লেগে আছে দুইটা নিরপরাধ প্রাণের রক্ত।
ভালোবাসা কখনো কখনো শুধু অনুভূতি নয়, তা হতে পারে এক ভয়ংকর অভিশাপও।
সাদিয়া সেই অভিশাপের নাম — এক দ্বিচারিণী, যে ভালোবাসার নাম নিয়ে হত্যা করেছে দুইটি জীবন, অথচ নিজে বেঁচে আছে বিলাসে, নির্বিকার মুখে।
২২ শে অক্টোবর, ২০২৫ রাত ১০:০৭
মহিউদ্দিন হায়দার বলেছেন: ঠিক বলেছেন—অসময়ের প্রেমই কখনো কখনো আমাদের সবচেয়ে গভীর অনুভূতি গুলোকে জাগিয়ে তোলে
২|
২২ শে অক্টোবর, ২০২৫ সকাল ১১:৪৫
জেনারেশন একাত্তর বলেছেন:
আপনি রোমেল?
২২ শে অক্টোবর, ২০২৫ রাত ১০:০৮
মহিউদ্দিন হায়দার বলেছেন: আমি কেউ ন।
৩|
২২ শে অক্টোবর, ২০২৫ দুপুর ১২:৩৪
রাজীব নুর বলেছেন: আমাদের সাথে একটা মেয়ে পড়তো। মেয়েটার নাম ছিলো সাদিয়া। সহজ সরল শান্ত একটি মেয়ে। মেয়েটাকে আমার ভালো লাগতো। মেয়েটার বাসার সামনেও আমি কয়েবার গিয়েছি। যদিও দেখা হয়নি।
আমি জানি না আজ সাদিয়া কোথায় আছে, কেমন আছে?!
২২ শে অক্টোবর, ২০২৫ রাত ১০:১২
মহিউদ্দিন হায়দার বলেছেন: আপনার অনুভূতিটা খুবই সুন্দর। মনে হয় সত্যিই সাদিয়ার মতো মানুষকে খুঁজে পাওয়া দারুণ বিরল। আশা করি কোনো এক দিনে তার ভালো খবর পাবেন, আর সেই স্মৃতিগুলো আপনাকে শান্তি দেবে।
©somewhere in net ltd.
১|
২২ শে অক্টোবর, ২০২৫ সকাল ১১:২৮
কাজী ফাতেমা ছবি বলেছেন: অসময়ের প্রেম কখনো বেপরোয়া হয়ে উঠে