![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বাইরে মিষ্টি রোদ অফিসের জানালার ফাঁকা থেকে অনিকেতের মুখের উপর এসে পড়েছে।আর খুব বিরক্ত হয়ে ও কাজ করছে। বেলা একটা বাজে। অন্য সময়ের থেকে আজকে অফিসের পরিবেশটা খানিকটা বেশী থমথমে। গত চার পাঁচ বছরে অফিসের সবাই অনিকেতের গরম মেজাজের সাথে অভ্যস্ত হয়ে গেলেও আজকের ঘটনাটা কেউই মেনে নিতে পারছে না।অকারণে অনিকেত এত দিনের পুরোনো দারোয়ান চাচার সাথে দুঃব্যবহার করেছে।আজকাল বলতে গেলে প্রতিদিনই কাজের ছোট খাটো বিষয় নিয়ে অনিকেত সবার সাথে অশোভনীয় আচরণ করছে।মুখ বুজে সহ্য করা ছাড়া কোন উপায়ও নেই। অনিকেতের বাবা বেঁচে থাকতে অবশ্য এমনটা ছিল না।
দুপুর গড়িয়ে বিকেল। সন্ধ্যা হতে বেশী বাকি নেই।
অফিস প্রায় ফাঁকা হয়ে গিয়েছে। এখন দু একজন কর্মচারী বাদে কেউই নেই। টেলিফোনের রিং এর শব্দে অন্যমনস্ক অনিকেত যেন বাস্তবে ফিরে আসলো। খুব তাড়াহুড়া করে অফিস থেকে বের হয়ে গেল অনিকেত। হয়তো বাসায় আবার কোন সমস্যা হয়েছে। এ ধরনের সমস্যা নতুন না। গত এক বছরে এ ধরণের সমস্যা ওর কাছে পানি ভাত হয়ে গিয়েছে।
দরজার বাহিরে দাড়ানো অনিকেত। চোখে মুখে ক্লান্তির ছাপ। কলিংবেল বাজালো ও। দরজা খুলে দিলো কাজের মেয়ে।সিড়িঁ বেয়ে সোজা উপরে মায়ের রুমে গেলো ও। মিসেস চৌধুরী, অনিকেতের মা। মধ্যবয়স্ক হলেও দেখলে মনে হবে চল্লিশের কোঠায় বয়স। খুব গোছানো একজন মানুষ। আর অনিকেত তার মায়ের কার্বন কপি। বিছানার এক পাশে খুব মনোযোগের সাথে বই পড়ছিলেন। হঠাৎ অনিকেতকে দেখে বইটি পাশে রেখে ওর দিকে চিন্তিত ভঙ্গিতে চাইলেন।খুব বেশী ক্লান্ত আর বিমর্ষ লাগছে ওকে। কি হয়েছে ধারণা করতে পেরে ওর মুখটা শুকিয়ে গেছে।কৌতোহোলী দৃষ্টিতে মায়ের কাছে জানতে চাইলো কি হয়েছে? মিসেস চৌধুরী বললেন "রুশানা আবার বাসা ছেড়ে চলে গিয়েছে"
আর কোন কথা না বাড়িয়ে অনিকেত নিজের রুমে চলে আসলো।
অন্ধকার রুম। এখন পর্যন্ত রুম থেকে বের হয়নি অনিকেত। খুব সুন্দর একটা ছিমছাম বাড়ী অনিকেতদের। শহর থেকে বেশ খানিকটা বাইরে দোতলা বাড়ীটাকে হঠাৎ করে দেখলে মনে হয় কোন দূর্গ। বেশ বড় একটা বাগান আর ছোট একটা সুইমিংপুলও আছে। শৌখিন মানুষ ছিলেন চৌধুরী সাহেব। দোতলার দক্ষিণ পাশের একটি রুমে থাকে অনিকেত। সুন্দর করে সাজানো রুমের প্রতিটি জিনিস।স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের কত স্মৃতি বিস্মৃতি জড়ানো অনেক ছবি দেয়ালে বাধাঁনো। সবটুকুই এখন ফ্রেমের কাঠের আড়াঁলে হারিয়ে গিয়েছে।
আজ নিজেকে অনেকটা একা মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে সব কিছু শূণ্যতার চাদরে ঢাকা পড়ে গিয়েছে। খোলা আাকাশে আলো আধাঁরের খেলার মাঝে চাদঁটাকেও আজকে অনিকেতের কাছে দিশেহারা মনে হচ্ছে। আবার একটা সিগারেট ধরালো ও। সিগারেটের ধোয়া বাতাসে মিশে যাচ্ছে।আর সিগারেটের মাথায় জ্বলতে থাকা আগুনের ফুলকি যেন অনিকেতের হৃদয়কে পুড়িয়ে ভষ্ম করছে।
রুশানা অনিকেতের স্ত্রী। এক বছরেরও বেশী হয়ে গিয়েছে ওদের বিয়ে হয়েছে। রুশানার সাত মাসের একটি মেয়ে আছে। অনিকেতের বাবার দীর্ঘ দিনের ঘনিষ্ঠ বন্ধুর মেয়ে রুশানা।রুশানা বিদেশ থেকে পি.এইচ.ডি করে দেশে আসার পর হুট করেই ওদের বিয়ে হয়ে যায়। আসলে বলতে গেলে বিয়েটা জোরপূর্বক। অনিকেত কখনই চায়নি রুশানাকে বিয়ে করতে। বাবার দীর্ঘ দিনের সম্পর্ক রক্ষা করতে গিয়েই বিয়েটা করা।আরও একটা কারণ ছিলো। মূলত বিয়ে করার প্রধান কারণ ছিলো রুশানার অনাগত সন্তান।রুশানার সাথে একজনের দীর্ঘ দিনের সম্পর্ক ছিলো যখন ও বাহিরে পড়তে যায়। যখন ও দেশে ফিরে আসে তখন ও চারমাসের অন্তঃসত্ত্বা। আর ছেলেটিও ওকে প্রত্যাখান করে। সমাজ আর অনাগত শিশুটির কথা ভেবে ও আর না করতে পারে নি।
আরও একটি সিগারেট ধরালো ভাবতে ভাবতে।আজ খুব ইমির কথা মনে পড়ছে। ওর মুখটা অনিকেতের চোখের সামনে ভেসে ওঠে।বাম চোখের কোণায় বিন্দু বিন্দু পানি এসে জমতে শুরু করে।কত বড় অন্যায় করেছে ও ইমির সাথে। কেমন আছে ও? ইমির তো কোন ভুল ছিলো না। ওর ও বা কি ভুল ছিলো? আজ কেনো দুজনের জীবনটা এমন এলোমেলো হয়ে গেলো। আজও মাঝেমাঝে ইমির ফেইসবুক প্রোফাইল থেকে ঘুরে আসে ও। মাঝেমাঝে বলতে মন চায় " চলো ইমি পালিয়ে যাই"
ইমি আর অনিকেতের পরিচয় কলেজ জীবন থেকে। দুজনের পরিচয় অনেক দিনের। ভালোবাসাটা হয়ে অনেক পরে। দিন যাচ্ছিলো আর দুজনে এক সাথে ভবিষ্যতের স্বপ্নের মালা বুনছিলো। অন্যান্য বন্ধুদের সাথে মাঝেমাঝে ইমিও আসতো ওদের বাসায়। ওর গোছানো রুমটাকে আবার গুছিয়ে দিত। ভালোবাসার জাল দীর্ঘ হচ্ছিলো। হঠাৎ করে কি যেন হয়ে গেলো। সব স্বপ্নগুলো সিগারেটের ধোয়ার মতো বাতাসে মিশে গেলো।
যখন অনিকেতের বিয়ে হয় ইমি তখন দেশের বাইরে।ইমি কিছুই জানতো না। অনিকেতের ভাষা ছিলো না ইমিকে বলার। কেমন যেন একটা ঘোরের মধ্যে ছিলো। ইমি যখন জানতে পারে তখন আর ও দেশে ফিরে আসে নি। হয়তো অনেক প্রশ্ন ছিলো। কিছুই জানার চেষ্টা করেনি মেয়েটি।
কয়েক মাস আগে ইমির বিয়ে হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক ব্ন্ধু বান্ধবীরা ইমির বিয়েতে গিয়েছিলো। ইমির বিয়ের ছবি দেখেছে ও। দেবীর মতো লাগছিলো ওকে। হ্যাঁ! অনিকেত ইমিকেই ভালোবাসে। ইমির চোখের কষ্টগুলো ও ভালোভাবেই অনুভব করতে পারছিলো।
কয়েকদিন পর অফিস শেষে রুশানাকে আনতে গেলো অনিকেত। কারণে অকারণে রুশানা বাবার বাড়ি চলে আসে। এবারও একই কাজ করেছে।স্বপ্ন আর বাস্তবতার অবস্থান আকাশ আর পাতালের মতো। ইমি ছিলো ওর স্বপ্ন আর রুশানা হলো ওর বাস্তবতা। ভালোবাসার জন্য না হলেও মায়ের জন্য, সমাজের দিকে তাকিয়ে হয়তো ওদের একসাথে থাকতে হবে।।হয়তো কোনদিন অনিকেত আর রুশানা একে অপরকে জানাতে চেষ্টা করবে।হয়তো অনিকেতের মধ্যে পিতৃত্ববোধ জাগ্রত করতে সহায়তা করবে।
"আমি কি শুধু আমার নিজেরটাই ভাবছি?" মনে মনে বলল ও। রুশানার চোখে মুখে যে কষ্টের স্পষ্ট ছাপ রয়েছে তা কিভাবে এড়ানো যায়। না পাওয়ার কষ্ট, নবাগত সন্তানের জন্য কষ্ট। খুব কম কথা হয় ওদের মধ্যে। মাঝেমাঝে অবশ্য অনিকেত বাচ্চাটাকে দেখতে রুশানার রুমে যায়।
মধ্য দূপুর।বাগানে বসা রুশান আর অনিকেত। শরতের দুপুর অনেক বেশী সুন্দর। হালকা মিষ্টি বাতাস এসে নাকে মুখে লাগছে। হঠাৎ করেফোনের রিং বেজে উঠলো। ফোনার ওপাশ থেকে কান্নার আওয়াজ ভেসে আসছে। নিস্তব্ধ, নিষ্পলক শূণ্য দৃষ্টিতে চেয়ে রয়েছে অনিকেত। রুশানা বারবার জিজ্ঞাস করছে। বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছে ও। কথা বলতে পারছে না। কোন কথাও শুনতে পারছে না। ইমি আর নেই। সাগরের তীরে গতকাল ওর লাশ পাওয়া গিয়েছে।ওর খুব প্রিয় ছিলো সাগর।। সাতার জানতো না ও আর এজন্য অনিকেও কখনও ওকে পানির কাছে যেতে দেয় নি। দুদিন আগে নাকি ঘুড়তে গিয়েছিলো। আকাশে মেঘ করেছে। যে কোন সময় বৃষ্টি নামবে। রুশানা একাএকা হেঁটে যাচ্ছে বাড়ির দিকে।
©somewhere in net ltd.