নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পাহাড়ের প্রতিধ্বনী

মমতাজ-কলি

ভাল করে বাঁচতে চাই

মমতাজ-কলি › বিস্তারিত পোস্টঃ

জাতীয় কবির প্রতি অবহেলা কেন?

২৬ শে মে, ২০১৩ রাত ৯:৪৩

আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১১৪তম জন্মজয়ন্তী পালিত হয়েছে। ১১৪ বছর আগে ১১ই জ্যৈষ্ঠ তারিখে তিনি যেন মুক্তির বাণী নিয়ে ধুমকেতুর মতো আবির্ভূত হলেন এই পৃথিবীতে। নানা দুঃখ-কষ্ট ও দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করে তিনি জনপদের সাধারণ মানুষের আশা-আকাক্সক্ষা ও স্বপ্নের কথা উপলব্ধি করতে পেরেছেন সহজে। তিনি নিপীড়িত সাধারণ মানুষের প্রগতি চেয়ে ছেন, পিছিয়ে পড়া মজলুম মুসলমানদের জাগাতে চেয়ে ছেন, চেয়ে ছেন ইংরেজ শাসকদের হটিয়ে দিয়ে উপমহাদেশের মানুষের স্বাধীনতার ঝা-াকে উড্ডীন করতে। এসব লক্ষ্য অর্জনে তিনি কলম যুদ্ধের সাথে সাথে রাজনীতির ময়দানে অবতীর্ণ হয়ে ছেন এবং স্বধর্মের চেতনায় উজ্জীবিত থেকেও হিন্দু-মুসলিম ঐক্য সাধনে সচেষ্ট থেকেছেন। তদানীন্তন বিশ্ব পরিস্থিতিও তার দৃষ্টির সীমানায় ছিল। একজন বড় মাপের মানুষ হওয়ার কারণে তিনি এতসব বিষয়ে ভূমিকা রাখতে পেরেছেন। কর্মবীর এই মানুষটির সৃজনশীলতা ও আন্তরিকতা ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে জনপদের সব মানুষকে অভিভূত করতে সক্ষম হয়ে ছিল। তাই আজ এতদিন পরেও নজরুল আমাদের প্রিয় কবি, প্রিয় মানুষ।



তুলনামূলকভাবে কবি নজরুল বাংলাদেশের মানুষের কাছে বেশি প্রিয়। বাংলাদেশের মানুষ নজরুলকে আন্তরিকভাবে ভালোবাসে বলেই কবির ইচ্ছে অনুযায়ী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে কবিকে কবর দেয়ার ব্যবস্থা করেছে। বাংলাদেশের মানুষ প্রিয় কবিকে জাতীয় কবির মর্যাদা দিয়ে ছে। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষের মনে কবির যে ভাব-মর্যাদা তার সাথে সঙ্গতি রেখে আমাদের সরকার কিংবা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো কাক্ষত ভূমিকা পালনে সমর্থ হচ্ছে না। বিষয়টি আমাদের জাতির জন্য এক ট্রাজেডি। আমরা জানি, নজরুল ইন্সটিটিউট অধ্যাদেশ অনুযায়ী ১৯৮৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে কবির স্মৃতিবাহী রাজধানীর ধানম-ির পুরানো ২৮ নম্বর রোডের কবি ভবনে নজরুল ইন্সটিটিউট প্রতিষ্ঠা করা হয়। বিস্ময়কর প্রতিভার স্পর্শে কাজী নজরুল ইসলাম বাংলা সাহিত্যের বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে অতুলনীয় অবদান রেখেছেন, তা সর্বসাধারণের কাছে ব্যাপকভাবে তুলে ধরার জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়ে ছিল নজরুল ইন্সটিটিউট। অথচ সেই প্রতিষ্ঠানেই এখন চরম অবহেলার শিকার আমাদের জাতীয় কবি। দেশের মানুষ আশা করেছিল, জাতীয় কবির কৃতী সম্পর্কে ব্যাপক গবেষণা, তাঁর স্মৃতি রক্ষা, জীবনী প্রকাশ এবং দেশে-বিদেশে কবিকে উজ্জ্বলরূপে তুলে ধরার ব্যাপারে নজরুল ইন্সটিটিউট অব্যাহতভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো- বিভিন্ন অজুহাতে সে কার্যক্রম এখন স্তিমিত হয়ে আসছে। লোকবল সংকট এবং বাজেট না থাকাকে এর প্রধান কারণ হিসেবে বিবেচনা করছেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা। তবে এমন অভিযোগও রয়ে ছে যে, নজরুল ইন্সটিটিউটের জন্য যে বাজেট বরাদ্দ করা হয় তার বড় অংশই ব্যয় হয় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পেছনে। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়, ১৯৯৫ সালে নজরুলের ওপর গবেষণার জন্য ১৩টি বিষয়ে গবেষণাবৃত্তি চালু করা হয়। কিন্তু সে বৃত্তি এখন বন্ধ। ২০০৬ সালের ২১ শে জানুয়ারি বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন নজরুল ইন্সটিটিউটের সহযোগিতায় দেশী-বিদেশী পর্যটক আকর্ষণের জন্য নজরুলের স্মৃতি বিজড়িত স্থাপনা দেখানোর একটি প্রকল্প হাতে নিয়ে ছিল। কিন্তু প্রকল্পটি বিগত সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমান সরকারের ৪ বছর কেটে গেলেও এ প্রকল্প চালুর কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। আরো দুঃখের বিষয় হলো, নজরুল বিষয়ক গবেষণা বন্ধ করে বছরে নজরুলকে নিয়ে হাতেগোনা কয়ে কটি অনুষ্ঠান আয়ে াজনেই সীমাবদ্ধ এখন নজরুল ইন্সটিটিউটের কার্যক্রম। প্রতিবছর প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে আয়ে াজন করা হয় আন্তর্জাতিক নজরুল সম্মেলন। কিন্তু এ বছর সেই সম্মেলনের আয়ে াজন করা হয়নি। ‘ত্রৈমাসিক নজরুল ইন্সটিটিউট’ নামে বছরে ৪টি সংখ্যা প্রকাশ করার কথা প্রতিষ্ঠানটির। কিন্তু ২০১২ সালের মে মাসের পর থেকে এখন পর্যন্ত আর কোনো সংখ্যা বের করা হয়নি। একই সঙ্গে বন্ধ আছে নজরুল বিষয়ক ইংরেজি জার্নাল প্রকাশনার কাজও। লক্ষণীয় বিষয় হলো, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান হওয়া সত্ত্বেও নজরুল ইন্সটিটিউটে নেই যথাযথ সরকারি তদারকি।

বর্তমান সময়ে নজরুল ইন্সটিটিউটের কার্যক্রমে অবহেলার দৃষ্টিভঙ্গি লক্ষ্য করা গেলেও অতীতে এ ইন্সটিটিউটের মাধ্যমে বেশ কিছু ভালো কাজও হয়ে ছে। প্রতিষ্ঠানটি থেকে কবির জীবনী, সাহিত্য, সঙ্গীত ও সামগ্রিক অবদান সম্পর্কে প্রায় দেড় হাজার গ্রন্থ প্রকাশিত হয়ে ছে। ৩৭ খন্ডে প্রকাশ করা হয়েছে নজরুল সঙ্গীত স্বরলিপি। বেরিয়েছে নজরুলের জীবনভিত্তিক আলোকচিত্র সংগ্রহ ‘নজরুল অ্যালবাম’। নজরুল সঙ্গীতের গুচ্ছ-সংকলন প্রকাশ করা হয়ে ছে ১১টি সিডিতে। প্রতিষ্ঠানটির বিক্রয়-বিপণন শাখার তথ্যানুযায়ী ইন্সটিটিউট থেকে প্রকাশিত বইগুলোর চাহিদা রয়ে ছে পাঠকদের কাছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো- বইগুলোর পুনঃমুর্দ্রণ বর্তমানে বন্ধ রয়ে ছে। তাই প্রশ্ন জাগে, নজরুল ইন্সটিটিউটের কার্যক্রম কি একটি সীমিত সময়ের জন্য নির্দিষ্ট করা হয়ে ছিল? নাকি অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠানের মতো এই প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমও অব্যাহত থাকার কথা ছিল? আমরা এখনও হতাশ হতে চাই না। কারণ এবারও জাতীয় কবির ১১৪তম জন্ম-জয়ন্তীর অনুষ্ঠানে দেশের প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে বিভিন্ন মন্ত্রী, প্রতিষ্ঠান কর্মকর্তা, নজরুল-গবেষক ও বুদ্ধিজীবীদের আবেগঘন ভাষায় নজরুলের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হতে দেখেছি। বর্তমান সময়ে ও নজরুলের গুরুত্বকে স্বীকার করে তাঁর রচনা, জীবনী ও আদর্শকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ব্যাপকভাবে প্রচারের আহ্বান জানানো হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন জাগে, নজরুলের গুরুত্বকে এভাবে উচ্চারণ করার পরেও তিনি আবার অবহেলার শিকার হন কেমন করে? জাতীয় কবির ক্ষেত্রে আমাদের কথা ও কাজে মিল থাকে কি না সেটাই এখন দেখার বিষয়। প্রসঙ্গত এখানে এ কথাটিও বলে রাখা প্রয়োজন যে, জাতীয় কবিকে সম্মান প্রদর্শনে ব্যর্থ হলে- আমাদের কপালে জুটবে অসম্মানের গ্লানি।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে মে, ২০১৩ রাত ১০:১৩

নিরব বাংলাদেশী বলেছেন: শুধু নজরুলকে ই কেন অসাম্প্রদায়িকতার জন্য আজীবন চিল্লানো লাগলো? কই রবি বাবুর তো সেরকম কিছু করা লাগেনি। শুধু মুসলমানদের ই কেন অসাম্প্রদায়িকতার প্রমান দিয়ে যেতে হয়???

২| ২৬ শে মে, ২০১৩ রাত ১১:০৩

পানকৌড়ি বলেছেন: দেশের জসিম উদ্দিনকে কেউ মনে রাখেনি আর উনি তো ভারতীয় । দেশের কবিদের নিয়ে ভাবেন বিদেশী বাদ দেন ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.